বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ__১৪,১৫

0
1032

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ__১৪,১৫
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__১৪

– আপনি এর আগে এই খারাপ ভিডিওটি দেখেছেন? রাতের দিকে বরাবর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কথাটা বলে উঠে বৃষ্টি।
প্রতি উত্তরে কিছু বললো না রাত। শুধু মুখে একটা হাসির রেখা টানলো।
মুখটা যেনো আবারও নিমেশেই মলিন হয়ে গেলো বৃষ্টির। সেখান থেকে উঠে চলে যেতেই রাত পুনরায় হাত ধরে টেনে কোলে বসিয়ে নেয় তাকে। বৃষ্টির মুখটা শুধু মলিন নয় অনেকটা অভিমানও ভর করেছে তার মাঝে। কিন্তু কেনো? তাদের মাঝে তো কোনো ভালোবাসাই নেই। তাহলে রাগ, অভিমান, অভিমান ভাঙানোর ব্যাস্ততা এগুলো কোন সম্পর্কের অংশ? এই সম্পর্কের কি কখনো একটা নাম হবে না? এটা কি চিরকালই থেকে যাবে একটা নাম হিন সম্পর্ক?
আচ্ছা রাতও কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে? নাকি এটা শুধু মাত্র তার দায়িত্ব ভেবেই পালন করছে রাত?
রাতের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে বারান্দায় চলে যায় বৃষ্টি।
ফুটফুটে চাদের আলোয় মেতে উঠেছে চার পাশ। তবুও যেন প্রাকৃতির সব অংশ ই স্তব্দ হয়ে আছে। বাতাস হিনা নিঝুম হয়ে আছে প্রকৃতি।
রাত গিয়ে দাড়ায় বৃষ্টির পাশে।
– কাল এই সময়টায় প্রকৃতি ছিলো একেবারে অন্ধকার। আকাশে মস্তবড় চাঁদের দেখা মিলেনি গত কাল। কেনো যানো?
বৃষ্টি আগ্রহ দৃষ্টিতে বলে উঠে,
– কেনো?
রাত এবার বরাবর বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
– হয়তো তুমি ছিলে না বলে প্রকৃতিতে ও নেমে এসেছে আধার। আর সেই কিরণ শুন্যতার অবসন ঘটলো আজ তুমি ফিরে এসেছো বলে, সব অভিমান ভুলে গিয়ে প্রকৃতিতে ছরিয়ে দিচ্ছে সুন্দর্যতার এক অপূর্ব বাহার।
– আপনি কি জানেন, যে এক খন্ড কালোমেঘ এসেও এই কিরণ ঢেকে ফেলতে পারে। তখন কি প্রকৃতি সুন্দর্য শুন্যতায় ভুগবে না?
রাত কিছুটা ভেবে বলে,
– না, প্রকৃতি সেটা দুই হাতে সরিয়ে দিয়ে সকল আধারের মাঝে পুনরায় আলো ফিরিয়ে আনবে। আর ওই চাঁদটা হলে তুমি, আমি না হয় প্রকৃতি হয়েই তোমার এই চাঁদপরীর ছড়ানো আলো উপভোগ করে যাবো।
– তাহলে কি আপনি চান আমাদের মাঝে দুরুত্ব বেরে যাক?
– এমন মনে হওয়ার কারন?
– এইযে আমাদের সম্পর্কটা চাঁদ আর প্রকৃতির সাথে তুলনা করলেন। চাঁদ কিন্তু প্রকৃতির মাঝে সারা বছর আলো ছরায় না, মাঝে মাঝে হারিয়ে গিয়ে দিয়ে যায় আমাবস্যা।
– দুরুত্বই তো গুরুত্ব বাড়ায়। থেকে যায় মনে একটা অদৃশ্য টান। খা খা করে মনের মাঝে জ্বলে উঠা এক উত্তেজিত শুন্যতা।
– তাহলে আমি ভেবে নিবো কি, যে গত কালও চাঁদ হিনা এই মানব প্রকৃতি শুন্যতায় খাঁ খাঁ করছিলো।
রাত কোনো সংকোচ ছারাই উত্তর দেয়,
– হয় তো।
– তাহলে প্রকৃতি আর চাদের মাঝে এতো দুরুত্ব কেনো তারা কি সত্যি কারের চাঁদ আর প্রকৃতির মতো এক হবেনা কখনো?
রাত এবার বৃষ্টির চোখে চোখ রেখে বরাবর দৃষ্টি স্থির করে বলে উঠে,
– আজ এই চাঁদের মতো করে এই ব্যর্থ প্রকৃতিকে কি আপন করে নিবে তুমি? ছরিয়ে দিবে কি তার মাঝে ভালোবাসার আলো?
বৃষ্টি ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। রাত মুখের কোনে একটা হাসি ফুটিয়ে কোলে তুলে নেয় বৃষ্টিকে। মুহুর্তেই যেনো বৃষ্টির সমস্ত শরির জুরে একটা শিতল শিহরণ বয়ে গেলো।
কিছুক্ষন ওভাবে স্থির থেকে সেও জড়িয়ে ধরলো রাতের গলাটা। চেয়ে আছে একে অপরের মুখের দিকে। সুচনা হলো একটি নতুন ভালোবাসার রাত।
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে যায় আরশি। জেদ করেছে আজ সকলের জন্য নাস্তটা সে নিজেই তৈরি করবে। নামাজ শেষ করে কিচেনে চলে গেলো সে। মা কেও পাঠিয়ে দিয়েছে এখান থেকে। আরশি সব কিছু করছে আর চৈতি হাই তুলতে তুলতে আরশিকে সাহায্য করছে। কিছুক্ষন পর কলিং ব্যাল এর শব্দ কানে এলো।
এতো ভোরে আবার কে এসেছে? আরশি বলে উঠে, — চৈতি দেখো তো মনে হয় দুধ ওয়ালা এসেছে।
– আচ্ছা আপা দেখতাছি।

দরজা খুলতেই রিদ হন হন করে ঢুকে পরে ঘরে।
– আরে রিদ ভাই আপনে? আর এতো সকালে?
– কেনো আসতে মানা নাকি? কি করছিলে?
– ওই তো ভাইয়া, নাস্তা বানাচ্ছিলাম আমি ও আরশি আপা মিলে।
– কিহ্, আরশি? তাহলে তো আগে তাকেই দেখতে হচ্ছে। ঠিকঠাক মতো বানাতে পারে কিনা? নাকি আবার সবাইকে ডায়রিয়া রুগি বানিয়ে ছারবে?
বৃষ্টির পেছনে গিয়ে ডান কানের পাশে ফু দেয় রিদ। বৃষ্টি ডান দিকে ফিরতেই বাম কানের পাশে ফু দেয় সে। বৃষ্টি বাম দিকে ফিরে আবার ডান কানে ফু। বৃষ্টি এবার হাতে বেলুনিটা নিয়ে পেছন ফিরে তাকায়। দেখে রিদ তার দিকে চেয়ে দাত কেলিয়ে হাসছে।
– রিদ ভাই তুমি এতো সকালে এখানে কি করো?
– কেনো আমার ফুফির বাড়ি আমি আসবো না কি তুই আসবি?
– তো কি এমন দরকার পরলো যে এতো সকাল সকাল আসতে হলো?
– সত্যি বলবো।
– মিথ্যে বললে, বেলুনি দিয়ে মাথায় মারবো।
– তোকে দেখতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তাই চলে এলাম।
পাশ থেকে খিক খিক করে হেসে উঠে চৈতি। চৈতির হাসিতে যেনো অপ্রস্তুত হয়ে গেলো বৃষ্টি। কিছু বলতে চেয়েও বলার মতো কিছু খুজে পেলোনা সে। হাপ ছেরে বলে উঠে,
– চৈতি এখান থেকে যাও তো।
– জ্বি আপা মনি আপনি আপনি না কইলেও আমি চলে যািতাম। বলে আবারও হেসে উঠে চৈতি। সেখান থেকে চলে গেলো সে।
রিদ বুকে হাত গুজে বলে উঠে,
– কার সাথে ঝগড়া হয়েছে আজ?
– ঝগড়া হবে কেনো। আর তুমি এমন ভাবে বলছো যাতে আমি ঝগড়াটে?
– তুই করো সাথে ঝগড়া না করলে এভাবে সবার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছিস কেনো?
– আমি আবার কি করলাম?
– তোর টই খাবার খেয়ে নিশ্চই আজ সবাই জগিংয়ে নেমে যাবে। আর রাস্তা হবে রুম টু ওয়াশরুম। তো এটা কি নিরিহ মানুষদের উপর একটা অত্যচার নয়?
এবার যেনো এক রাশ রাগ এসে বাসা বাধলো বৃষ্টির মনে। ইচ্ছে করছে বেলুনিটা দিয়ে এক বারি দিয়ে মাথা টা দু,ভাগ করে ফেলতে।
– দেখি সর, আমিই করছি, দেখা যাবে তুই আবার হাতে তেল ফেলে পুড়ে ফেলেছিস। পরে আবার আমাকে লোকের কাছে শুনতে হবে, বৌয়ের হাত পোড়া।
এবার যেনো রাগটা আরো বেড়ে গেলো আরশির। অনেক কিছু বলতে চেয়েও কিছুই মুখ দিয়ে বের হচ্ছেনা না। হাফ ছেরে বলে উঠে,
– বাবা তুই এখান থেকে সর। তোর সাথে কথা বললে আমার মাথা জিম ঝিম করবে। ড্রাংনিং রুমে গিয়ে বস। আমি আজ একটু স্পেশাল করেই তোর জন্য খাবার বানাবো। তবুও এখান থেকে যা বাবা যা।
রিদ তখন পরটা ভাজছে। ভাজতে ভাজতে বে উঠে, শেয়ারিং মানেই এক্সট্রা কেয়ার। জানিস না তুই? আর আমি আমার শশুরের মেয়ের কেয়ার করবো না তো কার কেয়ার করবো বল?
বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগেই বৃষ্টির মা প্রবেশ করলো সেখানে।
– আরে রিদ কখন আসলি তুই?
– এইতো ফুফি একটু আগে। আর বলোনা ফুফি। সকাল বেলায় তোমাদের বাড়িতে এসেছি বলে এভাবে অপমান হবো ভাবতেও পারিনি। আগে জানলে কখনোই তোমাদের না জানিয়ে আসতাম না। আসলে এই বাড়িতে আমার কোনো মুল্যই নেই।
– কেনো কে অপমান করলো তোকে। কার এতো বড় সাহস যে আমার একটা মাত্র ভাইপোকে অপমান করবে? আর এই বাড়িতে সকাল ভোর এগুলো কি? যখন খুশি তখন আসবি। তোকে কে কি বলেছে? তার নামটা বল একবার।
– আর কে বলবে ফুফি? ঘরে ঢুকতেই আরশি মেডাম বলে উঠে, এতো সকালে এই বাড়িতে কি? আর আমার নাকি সভাব খারাপ হয়ে যাচ্ছে যখন তখন এসে পড়ি। ফুফির বাড়িতে আসতে হলেও নাকি আগে অনুমতি নিয়ে তার পর আসতে হবে। এখন তুমিই বলো ফুফি এতো অপমানের পর এই বাড়িয়ে থাকা যায়? এতটুকুতে শেষ নয় ফুফি, আমাকে এখানে ডেকে এনে বলে, সবার জন্য নাস্তা বানাতে। কোনো কাজ না করে নাকি অন্য ধংস করা আমার সভাব। আরো কতো কি বললো। আর তুমিই ভাবো, যেই আমি কখনো রান্না ঘরে আসিনা। সেই আমি আজ রান্না করছি। তাহলে ভেবেই দেখো কতখানি অপমান সহ্য করতে হয়েছে আমাকে।
আরশি যেনো বাকরুদ্ধ, চোখ দু,টি মারবেলের মতো বড় করে আছে, গালটা বানিয়ে রেখেছে এক মস্ত বড় গুহা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে সে। আরশির মা পাশ থেকে বলে উঠে,
– তুই যেমন আমার মেয়ে তেমনি সেও আমার ছেলে। আর এই তোর নিজ হাতে রান্না করে সকলকে খাওয়ানোর নমুনা?
– মা বিশ্বাস করো, এই খাচ্চর টা সব বানিয়ে বানিয়ে বলছে। এই খাচ্চরকে আমি এসব কিচ্ছু বলিনি।
– দেখলে ফুফি, তোমার সামনে আমাকে খাচ্চর বলে অপমান। এগুলো ভাবা যায়, তুমিই বলো।
আরশির মা রিদের হাত ধরে বলে উঠে,
– চলতো এখান থেকে। আজ থেকে তুই কয়েকদিন এখানে জমিয়ে খাবি শুধু আর সব রান্না করবে আরশি নিজের হাতে। আর এটাই ওর শাস্তি।
এবার নিজের চুল নিজে ছিরে ফেলতে ইচ্ছে করছে আরশির। কি সুন্দরে শুকনো মাথায় একটা গেম খেলে দিলো খচ্চরটা। এখন আমাকে ওর কাজের বেটি হতে হবে। ছুটাচ্ছি তোর ভোজন দাড়া।
,
,
নাস্তা শেষে বৃষ্টিকে নিয়ে অফিসে চলে গেলো রাত। তৃষ্নাকে আগেই ফোন দিয়ে অফিসে আসতে বলেছে রাত। যদিও সেদিনই চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলো তৃষ্নাকে। তবুও আজ ডাকলো বৃষ্টির সাথে সত্যিটা দেখাতে।

গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে তৃষ্না। রাত অনেক গুলো কথা শুনিয়েছে এতোক্ষন। বৃষ্টির ইচ্ছে করছিলো সেও তৃষ্নার ডান গালো আরেকটা বসিয়ে দিতে।
রাত এক হাতে বৃষ্টিকে কাছে টেনে নিলো। বৃষ্টির কাধে এক হাত রেখে শক্ত করে মিশিয়ে রেখেছে তার সাথে। আজ আর রাতের স্পর্শে অবাক হয়নি বৃষ্টি। এর চাইতেও গভির স্পর্শের শিহরণে শিহরিত হয়েছে সে রাতের ভালোবাসায়।

সকালে নাস্তা করার পর শুধু রুমে আর ওয়াশ রুমে দৌড়া দৌড়ি করছে রিদ। কেনো এমন করছে?
সবার জন্য চা বানানোর সময় মায়ের দৃষ্টির আড়ালে রিদের চা টা একটু স্পেশাল ভাবেই বানায় আরশি। আর সেই স্পেশাল চা খেয়ে রিদের এই অবস্থা।
রিদ সকাল থেকে রুম থেকে বের হয়নি। রুম আর বাতরুমটাই তার এখন সব। বাইরে গেলেও আবার লোক লজ্জার ভয়। আসলে ফাদে পরলে বাঘও বিড়াল। রিদ ওয়াশ রুম থেকে বেড়িয়ে টেটে হাত দিয়ে দিয়ে রুমে পায়চারি করছে। আবার চাপতেই দৌড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে যায় সে। কিছুক্ষন পর বেড় হতেই খেয়াল করে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই আরশি বলে উঠে,
– ওখানেই থাকো তুমি। বের হওয়ার কি দরকার? বের হয়েতো আবার ওখানেই দোড় দিবে। এক কাজ করো ওখানেই থেকে যাও তুমি। খাবার দাবার লাগলে আমাকে বলবে কিন্তু। আমার তো আবার তোমাকে নিজ হাতে রান্না করে দিতে হবে।
– দরজা খোল আরশি। আমার মাথাটা কিন্তু চরম খারাপ হচ্ছে।
– এই খবরদার একধম আমার সাথে সাউড করবে না তাহলে আজ সারাদিন এখানেই থাকতে হবে।
– প্লিজ দরজাটা খোল। সোনা বোন আমার, লক্ষি বোন থুক্কু বউ আমার দরজাটা খোল। সেলাইন খেয়ে সুয়ে পরবো আমি। শরিরটা ক্লান্ত হযে গেছে আমার। একটু বিশ্রামের দরকার। প্লিজ দরজাটা খোল আরশি।
– ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ো। মায়ের আদেশ অনুযায়ি না হয় আমি বরং তোমার জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করি। পেরা নিও না ভাইয়া চিল।

To be continue………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

#পর্বঃ__১৫

বাতরুমে অনেক্ষন ধরে আটকে আছে রিদ। বার বার দরজা থাপড়াচ্ছে সে। বাইরে বুকে দু হাত গুজে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে আরশি। আরশি আজ কঠোর হয়ে আছে। বেটা সারা দিন আমার পেছনে পড়ে থাকিস। জ্বালিয়ে শেষ করিস আমায়। আজ ভালোভাবেই জব্দ করেছি তোকে। বাহ্ সকালে কি সুন্দরে আমাকে তার চাকরানী বানিয়ে ফেলেছিলো। এবার বুঝ আরশির পেছনে লাগার ফল কেমন।
আজ বেটাকে ভালোভাবে শিক্ষা দিতে হবে। যাতে সব শেষে বলে উঠে। আরশি আর তোর সাথে কোনো ফাজলামি করবোনা। ছেরে দে মা কেদে বাচি।

রিদ বিছানায় সুয়ে আছে। আজ বেচারার অবস্থা ছিলো নাজেহাল। রাত্রি চৌধুরি আরশিকে ডেকে বলে উঠে,
– এই আরশি, রিদের জন্য এক গ্লাস সেলাইন বানিয়ে আনতো।
কথাটা শুনা মাত্রই রিদ বলে উঠে,
– এই ফুফি না না না, আমি এখন পুরাপুরি সুস্থ আছি। তাকে দিয়ে আমার খেদমত করালে পরে দেখা যাবে এর চাইতেও করুন অবস্থা করে ছারবে।
– এর চাইতেও করুন অবস্থা করে ছারবে মানে? আরশি কি তোর সাথে কিছু করেছে?
কথাটা একটু রাগি ভাব নিয়ে বলে উঠে রাত্রি চৌধুরি।
আরশির দিকে তাকিয়ে একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে বলে উঠে,
– না না ফুফি সে কিছু করেনি। এমনিই সে যে পরিমান বাদর। তাই কথার কথা বললাম আরকি। আর সে তো সারাজীবনই খেদমত করবে এখন বিয়ের আগে এতো কষ্ট করিও না ওকে দিয়ে।
রাত্রি চৌধুরি একটু ভ্রু যুগল কুচকে বলে উঠে,
– সারা জীবন খেদমদ করবে মানে?
মুহুর্তেই বিষম উঠে গেলো রিদের। আমতা আমতা করে বলে উঠে,
– না না ফুফি আমি এভাবে বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি যে, আরশিতো বিয়ের পর তার শশুর বাড়ির মানুষের খেদমত করতে করতে পেরেশান হয়ে যাবে। তাই বিয়ের আগে তাকে দিয়ে কোনো কাজ করিও না এটাই বলছি আমি।
– ও তাই বল।
পাশ থেকে আরশি বলে উঠে,
– বাদ দাও মা, রিদ ভাইয়ের এমনিতেই মাথার তার দু,একটা ছিরে গেছে। আর এখন এই অবস্থা। তাই মনে হয় আবোল তাবোল বকছে।
রিদ দাত মুখ খিচে বলে উঠে,
– দেখলে ফুফি। বাদরের বাদর তোমার সামনে আমায় কিভাবে অপমান করছে।
– হ্যা আমি সত্যিটা বলতেই তা অপমানিত হয়ে গেলে। আর জানো মা, রাত ভাইয়া তো রিদ ভাইয়ের অবস্থার কথা সুনে হাসতে হাসতে শেষ। ভাবিও একই ভাবে লুতুপুতু খাচ্ছে। ভাইয়া ভাবিকে কলেজ থেকে নিয়ে বাড়ি চলে আসছে এখন। ভাগ্যিস আমি কলেজে জাইনি আজ নাহলে কত সুন্দর একটা মুহুর্ত মিস করে ফেলতাম।
রিদ দাত খিটখিটে বির বির করে বলে উঠে, তুমি যে আজ কেনো কলেজে যাওনি তা তো আমিই ভালো জানি।

রাতে লুডু খেলতে বসলো তারা চার জন। রাত ও রিদ একটু আগে বাইরে থেকে এসেছে। আর আসতেই টেনে নিয়ে লুডু খেলার আসর জমায় বৃষ্টি ও আরশি। একটা মাঝারি সাইজের বোর্ডেই খেলতে বসছে তারা। আরশিই বললো বোর্ডে খেলবে। ফোনে খেললে তো আর ধাপ্পা মারা যাবেনা। আরশি ও বৃষ্টি মিলে এক টিম। রাত ও রিদ মিলে এক টিম।
খেলা শুরু হওয়ার কয়েক মিনিটের মাথায় রাত খেয়াল করলো আরশি ও বৃষ্টির গুটি পাকা ঘরে। রাত খটমটিয়ে বলে উঠে,
– এই জন্যই তোদের মতো চোরের সাথে খেলতে চাই না। তোদের গুটি পাকা ঘরে গেলো কিভাবে?
আরশি সহজ ভাবেই বলে উঠে,
– আরে আজব, সব ঘর ঘুরেই তো ঢুকলো।
– তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তোদের ছয় উঠলো তিন টা নাকি চারটা। তাহলে তোদের দুজনের সাতটা গুটি মাঠে দৌড়া দৌড়ি করছে কিভাবে।
রিদও পাশ থেকে তাল মিলিয়ে বলে উঠে,
– হুম তাই তো।
আরশি রিদের দিকে চেয়ে চোখ রাঙিয়ে একটা মুচকি হাসি দিতেই, রিদ একটা ঢোগ গিলে বলে উঠে,
– না রাত ঠিকই তো আছে। ওদের উঠেছে তাই উঠিয়েছে। এতো কথা না বলে খেলনা।
– ঠিক আছে মানে। আমি নিশ্চিত ওরা চুরি করে খেলছে। আর তুই কি আমার টিমের প্লেয়ার নাকি ওদের দলের? হটাৎ ওদের হয়ে দালালি করছিস কেনো?
পাশে বসে তাদের ঝগড়া দেখে পিট পিট করে হাসছে বৃষ্টি।

রাতের খাবার খেতে আসলো সবাই। রিদের প্লেটে খাবার তুলে দিতেই সে বলে উঠে,
– খাবার কে রেধেছে ফুফি?
,
,
কেটে গেলো একদিন।
কলেজ ছুটিতে রাতের জন্য অপেক্ষা করছে বৃষ্টি। ইদানিং ছিটুর পর বৃষ্টিকে বাসায় নিয়ে আসে রাতই। আরশিকে কিছুটা দুর থেকে তুলতে হয়, দুজনের কলেজ আলাদা।
ওখানে দাড়িয়ে থাকতেই দেখা হয় রাতের বন্ধু রাফির সাথে।
– আরে ভাবি কেমন আছেন?
বৃষ্টি আশ পাশে তাকিয়ে বলে উঠে,
– ভাবি কাকে বলছেন ভাইয়া?
– কেনো আপনাকে? রাতের বৌ তো আমার ভাবিই হবে তাইনা?
– কিন্তু আমি তো ওর কাজিন হই। সেদিন বললো না আপনাকে?
– রাত আমাকে আপনাদের সম্পর্কে সব বলেছে। এবং আপনি যে তার স্ত্রী সেটাও বলেছে। যদিও আমি বাইরে থাকতে তেমন একটা যোগাযোগ হতোনা তার সাথে। কিন্তু রাতের মুখে যা শুনলাম তাতে আমারো খুব খারাপ লেগেছে। এতো বছরের প্রেমও এভাবে ধোকা দিলো তাকে। রাত হয়তো এখনো ভুলতে পারেনি তাকে। কারণ বর্ষার কথা উঠতেই তার চোখে মুখে দেখেছি আমি কান্নার ছাপ। এতো বছর ধরে গড়ে তোলা ভালোবাসার পাত্রটা হুট করে খালি হয়ে যাওয়াতে হয়তো একটু বেশিই আঘাত পেয়েছে সে। তো যাই হোক। আপনিই এখন তার সব, খেয়াল রাখবেন তার। দোয়া করি অনেক সুখি হোন আপনারা। আর হ্যা, আমি কয়েকদিন পর আবার চলে যাচ্ছি। দুই মাসের ছুটিতে এসেছিলাম মাত্র। দোয়া করবেন আমার জন্য।

রাতকে এ ব্যাপারে কিছু বলেনি বৃষ্টি। কিন্তু মনে তার চিন্তার ভাজ। রাত কি এখনো আপুকে সত্যিই ভুলতে পারেনি? তাহলে রাফি ভাইয়া যে বললো, আপুর কথা মনে উঠতেই তার চোখে এখনো পানি দেখতে পায়। তাহলে আপুকে কি এখনো ভালোবাসে বাত? আপু যদি ওই লোকটার কাছে পতারনার শিকার হয়ে আবার ফিরে আসে তাহলে কি আমায় দুরে ঠেলে দিবে রাত?

বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়ার খেলা চলছে। সন্ধার পর সবাই দল বেধে বসলো টিভি দেখতে। রুদ্র চৌধুরি এদিকটায় একটু অদ্ভুত মানুষ। যখন বাংলাদেশের খেলা চলবে তখন তার সাথে দল বেধে সবাইকে দেখতে হবে। কারণ তার কথা হলো দল বেধে খেলা দেখতে আলাদা একটা মজা।
অনেক্ষন টিভির সামনে বসে খেলা দেখাটা একটা আজাইরা কাজ ছারা কিছুই না, বানি তে আরশি চৌধুরি। তাই সে বার বার হাই তুলে সোফায় ঢলে পড়ছে। তার ভাবনা হয়তো এমন ঘুমের ভান ধরলে রুদ্র চৌধুরি তাকে রুমে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু না এমনটা কিছুই হলো না। রুদ্র চৌধুরি বলে উঠে,
– ঘুম আসলে চোখে পানি ছিটিয়ে আয়। দল বেধে খেলা দেখায় কতো মজা তা জানিস?
তোদের একটা গল্প বলি। আমার ছোট বেলার গল্প। আমি তখন থাকতাম গ্রামে। এবং ওটাই ছিলো আমার জন্মস্থান ও বাসস্থান। তখন আমরা বন্ধু বান্ধবরা এমন খেলা চললে দল বেধে চলে যেতাম খেলা দেখতে। গ্রামে কয়েকটা দোকান ছিলো। ওখানে মাত্র একটা দোকানেই টিভি ছিলো। সব বন্ধুরা গিয়ে উঠতাম ওই দোকানেই। এই জন্য তোর দাদার হাতে কতো মার খেয়েছি তার হিসেব নেই। এক দিন তো রাস্তার পাশের একট বাশের বেত কেটে। দোকান থেকে পিটাতে পিটাতে বাড়ি গিয়ে নিয়েছিলো সন্ধা বেলায়। পড়তে না বসে খেলা দেখতে চলে গিয়েছিলাম তাই। ওইদিন খুব বেশিই মেরেছিলো। তার পর থেকে এসব আড্ডবাজি বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মন দেই। গ্রামে আমাদের অনেক ভিটে ছিলো। যেগুলো পরিত্যাক্ত হয়ে পরে থাকতো বেশির ভাগ। বড় হয়ে পড়া লেখা শেষ করে ওসব জমি গুলো বেচে, শহরে এসে ব্যাবসায় জড়িয়ে পরি। আর আজ এই পর্যন্ত। এই খেলা দেখার জন্য কম মার খাইনি। বাবার প্রতি তখন খুব রাগ হতো। এক দু,বার বাড়ি থিকে পালিয়ে গিয়ে কোথাও জায়গা না পেয়ে আবার ফিরে এসেছি। কিন্তু হারিয়ে ফেলার পর এখন বুঝি বাবা কি জিনিস। যে বাবা মারের পরও আমায় ভালোবেসেবুকে জড়িয়ে বলতেন, আড্ডাবাজি করা ভালো না বাবা। কথায় আছে না, লেখাপড়া করে যে গাড়ি গোড়ায় চড়ে সে। কিন্তু আজ বাড়ি গাড়ি সবই আছে নেই শুধু সেই বাবা-মা। এতটুকু বলেই চোখের কোনে জমে থাকা জল গুলো মুছে নেয় রুদ্র চৌধিরি। রাত গিয়ে তার পাশে বসে,
– ধুর বাবা, কে বলেছে তোমার বাবা নেই, এই যে আমি আছি।
রুদ্র চৌধুরি হেসে বলে উঠে,
– হুম আমার এখন বাবা তুই থাকলেও মা কিন্তু দুইটা। এই যে, আরশি ও বৃষ্টি এখন এরাই আমার মা আর তুই বাবা।
পাশ থেকে রিদ বলে উঠে,
– তার মানে আমি তোমাদের কেও না?
– ধুর পাগল কেও না কিরে, তুই তো আমার এক মাত্র আঙ্কেল। সবাই জদি বাবা হয় তাহলে আঙ্কেল হবে কে তুই বল।

– আরশির জন্য একটা ভালো সম্বোন্ধ এসেছে। আমার বন্ধুর ছেলে। নিজেদের বিজনেস আছে আর ছেলে বাইরে সেটেল।
এতো হাসি ঠাট্টার মাঝে রুদ্র চৌধুরির মুখে এমন কথা শুনে বুকটা ধুক করে উঠে রিদের। আরশিও যেনো অবাকের চরম সীমানায়।
রাত্রি চৌধুরি বলে উঠে,
– মেয়েটার আগে পড়া লোখা শেষ হোক তার পর এসব নিয়ে ভাবি আমরা।
– পড়া লেখা তারা বিয়ের পর করাবে। আর ওর তো এখন আইন অনুযায়ি বিয়ের বয়সও হয়ে গেছে। আর আমাদের দাদি/নানি এদের বিয়ে হয়েছিলো ১২-১৩ বছরের মধ্যে। দু,দিন পর দেশে আসছে ছেলে।

রাতের বেলায় সকলে ঘুমের ঘরে বিভোর। ছাদে হাটাহাটি করছে রিদ। মনে রয়েছে চরম উত্তেজনা। সন্ধায় রুদ্র চৌধুরির বলা কথা গুলো দু, কান জুরে বাজছে তার। আরশির বিয়ে তাও আবার অন্য ছেলের সাথে, ইম্পসিবল। যার জন্য এতো কিছু করলাম। বাবা মাকে ছেরে দেশে পরে আছি যার জন্য, তাকেই কিনা চোখের সামনে অন্য কারো হয়ে যাতে দেখবো, এটা মোটেও আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। কিভাবে বলবো সবাইকে আমার মনের কথা? কিভাবে বলবো যে আরশিকে আমি চাই তাকে ছারা আমি শুন্য। না কিচ্ছু মাথায় আসছেনা আমার, সুধু এতটুকু মাথায় আসছে, তাকে ছারা আমি কিছুতেই ভালো থাকতে পারবোনা। কারন তার খুনসুটি, পাগলামি, জ্বালাতন এগুলোতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এসব ভুলে আমি অন্য কাওকেই নিজের জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবোনা। কিছুতেই না।

সকালে ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে নাস্তা বানাতে চলে গেলো বৃষ্টি। রাতকে ডেকে দিতে আসলো সে। কারণ তার অফিসে যেতে হবে। রাতের পাশে বসে মিষ্টি শুরে ডাক দিলো বৃষ্টি। রাতের কোনো হুস নেই সেদিকে। বৃষ্টি এবার দু হাত দিয়ে নেরে নেরে বলে উঠে,
– উঠবেন নাকি পানি ঢেলে দিবো?
– রাত ঘুমু ঘুমু চোখে বলে উঠে, পানি কেনো ঢালবে? আদর করতে যানোনা?
রাতের কথায় হা হয়ে গেলো বৃষ্টির গাল। রাত আঙুল দিয়ে গালে দেখিয়ে দেয়, এখানে আদর করো।
বৃষ্টি লাজুক ভঙ্গিতে বলে উঠে,
– আমি পারবো না।
– তাহলে আমিও উঠবো না।
– তাহলে ঘুমান আপনি আমি গেলাম।
– আচ্ছা যাও, আমায় একটু ঘুমাতে দাও।
সাত পাঁচ ভেবে বৃষ্টি নিচু হয়ে রাতের গালে একটু গভির ভাবে চুমু দিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। রাত হা হয়ে রইলো। কারন সে হয়তো ভাবেনি বৃষ্টির মতো লাজুক মেয়ে নিজে তার গালে এভাবে চুমু একে দিবে।

ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে রাত। টাওয়াল দিয়ে মুখটা মুখে নিলো সে। তখনি চোখ পরে বিছানায় থাকা বৃষ্টির ফোনটা বাজছে। রাত কয়েক বার বৃষ্টিকে ডাক দিলেও শুনতে পায়নি বৃষ্টি। রাত ফোনটা হাতে তুলে দেখে বাংলাদেশি নাম্বার। রিসিভ করে কানে তুলে নিলো রাত।
ওপাস থেকে ভেষে আসে একটা মেয়েলি কন্ঠ। রাত চিনতে না পেরে বলে উঠে,
– কে বলছেন?
রাতের কন্ঠ বেজে উঠতেই নিশ্চুপ হয়ে গেলো ওপাস। একটু একটু কান্নার শব্দ আসছে ওপাশ থেকে। বুঝাই যাচ্ছে যে মেয়েটা ফোন দিয়েছে সে কাদছে। কিন্তু কে এই মেয়ে?
– হ্যালো কে বলছেন?
ওপাশ থেকে মেয়েটা একটু কেদে বলে উঠে,
– রাত……..
– হুম, আপনার পরিচয়টা দিবেন প্লিজ?
-রাত……
ওপাশ থেকে কান্নার গতি আরো বারছে।
– আরে বলুন না আপনি কে? নাহলে ফোন রাখছি আমি।
– রাত, রাত, রাত……..
এবার নিস্তব্দ হয়ে গেলো রাতও। এবার আর কন্ঠটা চিনতে অসুবিধা হলোনা তার। তার চোখের কোনেও ধিরে ধিরে জমে যাচ্ছে জল।

To be continue……….

~~ ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here