বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ__১৬,১৭

0
1137

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ__১৬,১৭
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__১৬

ফোনে তীব্র গতিতে বেড়ে চলছে মেয়েটার কান্নার গতি। স্তব্ধ হয়ে আছে রাত। সেই চেনা কন্ঠস্বর অচেনা পরিচয়ে রাতের কানে বেজে উঠতেই চোখের কোনে পানি জমে গেলো তার। কিছু বলছেনা সে, শুধু বর্ষার কান্নার শব্দ গুলো কানে আসছে তার।
বর্ষা চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
– কেমন আছো রাত।
রাত গম্ভির গলায় উত্তর দেয়,
– বেচে আছি।
– এভাবে কেনো বলছো তুমি?
– হ্যা আছি ভালোই আছি। তোমার কি খবর? আশা করি হাসবেন্ট নিয়ে সুখেই আছো। দোয়া করি চলতি পথে বেঈমান গুলোও সুখে থাকুক।
আবারও কন্নায় ভেঙে পড়ে বর্ষা। মাঝে মাঝে হিচকি তুলে কাদছে সে।
রাত আবারও ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– অজথা কান্নার অভিনয় করে লাভ নেই। ইনজয় করো, আমার থেকেও বেটার কাওকে পেয়েছো ইনজয় করো সময়টা।
বৃষ্টি এবার কাদতে কাদতে বলে উঠে,
– সেদিন বাসা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর, তিহানদের বাসায় উঠেছিলাম। কেও ছিলোনা তাদের বাসায়। শুধু আমি আর তিহান। একা একটা একটা ছেলে ও একটা মেয়ে তাও আবার এই রাতে, নিজেকে আমি সেইভ ভাবিনি তখন। কিন্তু তিহানের চরিত্রে আমি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য দেখিনি। সেদিন মনে হয়েছিলো এই তিহানকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। তার পরদিব তিহানের সাথে চলে গেলাম ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে। ভালোই কাটছিলো দিন। খুব শিগ্রই বিয়ের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। তিহানের ওখানকার এক বান্ধবির জম্মদিন পার্টতে গিয়েছিলাম। পার্টি শেষে সবাই চলে যাচ্ছে।আমি তখন তিহানকে বাইরে দাড় করিয়ে একটু ওয়াশ রুমে যাই। বের হয়ে দেখি তিহান সেখানে নেই। একটু হেটে উপরে যেতেই দেখি একটা রুম থেকে অদ্ভুদ শব্দ কানে আসছে। অতি ব্যাস্ততায় হয়তো দরজাটা লাগাতে ভুলে গিয়েছিলো। দরজা খুলে ভেতরে যেতেই দেখি তিহান ও তার বান্ধবি টা। এতটুকু বলেই হু হু করে কেদে দিলো বর্ষা। তার পর ওখানে এক বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয় আমার। তার হেল্পে আমি তিহানের থেকে মুক্তি পাই। কারন তিহান আমায় ভালোবাসেনি। চিট করেছে আমার সাথে।
রাত গম্ভির গলায় বলে উঠে,
– এসব কথা আমায় বলছো কেনো? আমি কি শুনতে চেয়েছি তোমার কাছে?
বর্ষা এখনো কাদছে,
রাত বলে উঠে,
– ওকে রাখলাম আমি, তোমার সাথে কথা বলে সময়টুকু নষ্ট করতে চাইনা আমি।
– রাত আমি আবার তোমার জীবনে………..
বাকিটা বলার আগেই ফোন কেটে দেয় রাত। হয়তো কথাটা শুনতে পায়নি সে।
রাত ফোনটা রেখে বিছানায় গিয়ে বসে দু,পা প্লোড়ে ছড়ানো। একটা অস্থিকর ভাব নিয়ে দু, হাত দিয়ে কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো পেছনের দিকে নিয়ে আবার ছেরে দিলো সে। ছোট চুল গুলো পুনরায় আবার সামনে চলে আসে। রাতের চোখে পানি। যেই বর্ষাকে সে সব সময় চাইতো কষ্ট থেকে আগলে রাখতে আর সেই বর্ষাই আজ এতোটা কষ্টে আছে। যাই হোক সবই তার নিজের ভুলের প্রশ্চিত্ব।
বৃষ্টি রুমে আসতেই ঝটপট চোখের পানি মুছে ওয়াশ রুমে চলে যায় রাত। চোখে পানি ছিটিয়ে আবার বেড়িয়ে আসে সে। বৃষ্ট তখন ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে বিছানায়? রাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলেউঠে,
– আপনি কাদছিলেন?
– ক কই না তো।
– আপনার মনটাকে মাঝে মাঝে এমন বিষন্ন দেখতে একধম ভালো লাগেনা। একটু হাসি খুশু থাকেন না প্লিজ।
কথাটা রাতের খুব কাছাকাছি গিয়ে বলে উঠে বৃষ্টি।
রাত এবার তারাহুরা করে নিচে চলে যেতেই বৃষ্টি পেছন থেকে হাতটা ধরে বলে উঠে,
– আপুর সাথে কথা হয়েছে তাই না? কল লপস্টে দেখলাম একটু আগে আপুর নাম্বারটা থেকে কল এসেছে আর তা রিসিভও হয়েছে। কি বলেছে আপু?
– না এমনি কেমন আছে এসব আর কি।
– একটা প্রশ্ন করবো?
রাত এবার ঘুরেবৃষ্টির দু গালেহাত রেখে মিষ্টি করে হেসে বলে উঠে,
– কি?
– আপু জদি কখনো ফিরে আশে তাহলে কি আমায় দুড়ে ঠেলে দিবেন?
,
,
,
একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে আরশি ও তার বাবার পছন্দের ছেলেটা। গতকাল দেশে এসেছে সে। আরশির সাথে আজ দেখা করতে এসেছে এই রেস্টুরেন্টে। রিদও আরশিকে ফলো করতে করতে এসেছে এখানে। রেষ্টুরেন্টের অপর মাথায় মাস্ক পড়ে মাথায় একটা কেপ দিয়ে বসে আছে রিদ।
আরি ও লোকটা খুব হেসে হেসেই কথা বলছে। তা কেনো জানি সহ্য হচ্ছেনা রিদের। ইচ্ছে করছে এখনি উঠে আরশিকে ভুবন কাপানো দু,টা চর দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ছেলেটাকে বলতে,
– আরশি ইজ মাই লাইফ।
কিন্তু তা করলোনা সে। উঠে চলে গেলো সেখান থেকে।

রাতের বেলায় ছাদে দাড়িয়ে আছে রিদ। আরশি রিদের পাশে এসে দাড়ায়।
– ভাইয়া ডেকেছিলে?
– হুম, আজ ছেলেটাকে কেমন লাগলো?
– ভালোই তো ছিলো। খারাপ না।
– আমার থেকেও ভালো? দেখতে শুনতে ভালো হলে প্যামিলি ব্যাগ রাউন্ড, ছেলের ভালো পজিশন থাকলেই কি সে ফার্পেক্ট হয়ে যায়?
– মানে?
– তার মাঝে এমন কি আছে যা আমার মাঝে নেই? কিন্তু আমার মাঝে যা আছে তা ওই ছেলেটার মাঝে নেই। আর তা হলো কাওকে এক তরফা ভালোবাসা। হয়তো তার মাঝেও সেটা আছে। কিন্তু আমর থেকে কেও তোকে কখনোই বেশি ভালোবাসতে পারবেনা। একটা ছেলে কাওকে কতোটা ভালোবাসলে ফ্যামিলি ছেরে হাজার মাইল দুরে বছরের পর বছর একা পরে থাকে? কখনো ভেবে দেখেছিস একটা ছেলে একটা মেয়েকে কতোটা ভালো বাসলে তার জীবনের বাজি ধরতেও দিধা বোধ করেনা। যেমনটা আমি করেছিলাম তুই যখন ক্লাস নাইনে ছিলি। চাইলে সেদিন তোকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে আমি সরে যেতে পারতাম। কিন্তু সেদিন আমি নিজের মরনকে যতটা ভয় করিনি তার চেয়ে বেশি ভয় ছিলো তোকে হারিয়ে ফেলার। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে সেদিন তোকে বাচিয়ে দির্ঘ এক মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করেছি ওই হসপিটালে। আমি সত্যিই ব্যর্থ। ভুল কাওকে এতোটা বেশি ভালোবেসেছি বলে। আমি আজ তোর কাছ থেকে জাস্ট একটা কথাই শুনতে চাই। তুই কি আমায় ভালোবাসিস নাকি আমি আমার ধারনাটাই ভুল ছিলো?
– রিদ ভাই আমি কখনোই তোমার এসব কথায় সিরিয়াস ছিলাম না। আমি ভাবতায় হয়তো তুমি আমায় নিয়ে মজা করতে। আর তোমাকে আমি যাষ্ট ভাইয়ের মতোই দেখতাম। কখনো ওসব কোনো অনুভুতি তোমার জন্য সৃষ্টি হয়নি আমার। তুমি আমার সাথে মজা করতে আমিও তোমার সাথে মজা করতাম, যাস্ট এতটুকুই। আর তুমি আমাকে সব সময় সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিতে তাই আমিও তোমায় মাঝে মাঝে সারপ্রাইজ দিতাম। কিন্তু কেনো তুমি এটাকে এতো এগিয়ে নিতে চাইছো? কেনো আমার তোমাকে ভালোই বাসতে হবে? কেনো তোমাকে আমার বয়ফ্রেন্ডই হতে হবে? হোয়াই? আর তুমি আমার জন্য অনেক করেছো এটা আমি শিকার করছি তাই বলে এভাবে বেহায়ার মতো ওসবের বিনিময় ভালোবাসা চাইছো।
– ভালোবাসাকে কোনো কিছু দিয়ে বিনিময় করা যায় না আরশি।আর আমি বেহায়া, তোকে হারানোর ভয়ে আমি বেহায়া হয়ে গেছি আজ। প্লিজ আরশি এমন করিস না আমার সাথে। প্রতিদিনের মতো বলনা যে এটাও কোনো মজা ছিলো।
– দেখো রিদ ভাই, অন্য কোনো ছেলে হলে এখন থাপ্পর দিয়ে সব দাত ফেলে দিতাম। তুমি দেখে এখনো সম্মান দিয়েই কথা বলছি আমি। নেক্সট টাইম এসব নিয়ে বাড়ির কারো সাথে কোনো কথাই বলবে না তুমি। তাহলে কিন্তু আমিও ভুলে যাবো যে তুমি আমার কাজিন হও এবং আমার থেকে বড়।

পরদিন সকালে বাড়ি চলে যায় রিদ। এই বাড়িতে আর এক মুহুর্তও থাকতে ইচ্ছে করছে না তার। যতক্ষন এ বাড়িতে থাকছে ততোক্ষনই বুকের ভেতরটা শুধু খাঁ খাঁ করে উঠছে।
এভাবেই কেটে গেলো আরো দুদিন। মনে তীব্র কষ্ট রাত ভর চাপা কান্নায় দুইটা দিন পার হয়ে গেছে রিদের।
রাতে বৃষ্টির বাবাকে ফোন দেয় রিদ। জানায় পরদিন বিকেলে তার ফ্লাইট। বাবা মায়ের কাছে চলে যাচ্ছে অস্ট্রিলিয়া।
– কি অদ্ভুদ কথাবার্তা। আগামি মাসে আরশির বিয়ে আর তুই কাল চলে যাচ্ছিস এটা কোনো কথা?
– বাবা মাকে ছেরে অনেক বছরই তো এখানে পড়ে আছি। এবার আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা তাদের ছারা। আমার বিদায় বেলায় আশা করি তোমরা সকলেই থাকবে।

এই নিয়ে রাতের সাথেও কথা হয় রিদের। পরদিন রিদের সাথে চলে গেলো সবাই এয়ার্পোর্টে। রাত, রুদ্র চৌধুরি, রাত্রি চৌধুরি, আরশি, বৃষ্টি সবাই আসছে।
এয়ার্পোর্টে দাড়িয়ে আছে সবাই। রিদ যেনো আজ কিছুতেই ভিতরে জেতে চাইছেনা আজ। আর একটু আর একটু বলতে বলতে অনেক্ষন কাটিয়ে দিলো তাদের সাথে। এতোটা বছর যেখানে ছিলো, যাদের কাছে বার বার ছুটে আসতো, যাকে এক তরফা ভালো বেসে গিয়েছিলো তাদের সবাই এখানে উপস্থিত। এক মাত্র আপন বলতে এরা ছারা আর কেও ছিলোনা এখানে। আজ সেই আপন লোকদের ফেলেই চলে যাচ্ছে অনেক দুরে।
একটু পর ইমিগ্রেশন ক্রস করে ভেতরে চলে যাবে সে। চোখের জল টপ টপ করে গড়িয়ে পরছে রিদের গাল বেয়ে। রুদ্র চৌধুরিকে জড়িয়ে ধরে সে,
– অনেক দিন তো আপনাদের সাথে ছিলাম আঙ্কেল। আপনারাই ছিলেন আমার আপন বলতে সব। এখানে বেশির ভাগ সময়ই কাটিয়েছি আপনাদের সাথে। জদি কখনো আমার ব্যাবহারে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে প্লিজ। নিজের ছেলে ভেবে মাপ করে দিবেন।
রুদ্র চৌধুরিও কিছু বলছেনা শুধু রিদকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি মুছে নিচ্ছে। রাত্রি চৌধুরিও গিয়ে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো রিদকে। রুদ্র চৌধুরি ও রাত্রি চৌধুরির মাঝখানে রিদ। চোখের পানি গড়িয়ে পরছে অঝরে।
রাতকে জড়িয়েই হুহু করে কেদে দিলো রিদ। কারন রাত শুধু রাত ভাই ছিলোনা এক জন ভালো বন্ধুও। প্রায় পাচ মিনিট ধরে রাতকে জড়িয়ে ধরে কাদছে রিদ। ছারার আগে ফিস ফিস করে শুধু একটাই কথা বলেছে।
“বর্ষাকে হারানোটা তোর আফসোস নয়। বৃষ্টির মতো মেয়েকে হারিয়ে ফেললে এটাই হবে তোর জীবনের সব চেয়ে বড় আফসোস। ওর মতো একটা মেয়ের সাথেই তুই সুখি হবি জীবনে। দুজন দুজনের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখিস চির কাল। স্বামী স্ত্রির বন্ধন একটা পবিত্র বন্ধন। এর মাঝে কখনো অন্য কোনো অপবিত্রটতাকে স্থান দিসনা।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চোখের জন মুছে ইমিগ্রশন ক্রশ করে ভিতরে চলে গেলো রিদ। তবুও বার বার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে সবাইকে আবার দেখার জন্য। সবাইকে ছেরে যাওয়ার কষ্ট যেনো বুকের মাঝে খাঁ খাঁ করছে আজ। আরশির দিকে তাকাতেই চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে তার। তবুও নিজেকে সমলে আরশির দিকে তাকিয়ে কান্না ভেজা মুখে একটা হাসির রেখা টানে রিদ। যেনো ইশারায় বলে উঠে,
“” ভালো থাকিস।

To be continue…….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

#পর্বঃ__১৭

রিদকে বিদায় দিয়ে সবাই চলে আসে বাড়ি। রিদ প্রায় সময়ই এই বাড়িতে ছিলো। খুব হাঁসি খুশিই ছিলো সে। কিন্তু হটাৎ এমন কেনো করলো তা সবারই অজানা। রাত সেই আসার পর থেকেই বিষন্ন মনে বসে আছে ঘরে। সেই ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে দুজন। একসাথে কতোই না সময় পার করেছে তারা। বারান্দায় চেয়ারে বসে মস্ত বড় চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে আছে রাত।
একটু পর আরশি আসলো ওখানে। কিছুক্ষন রাতের সামনে দাড়িয়ে আছে কোনো কথা নেই মুখে।
রাত নিরবতা ভেঙে বলে উঠে,
– কি রে কিছু বলবি?
মাথা নাড়িয়ে “না”সুচক সম্মতি জানিয়ে আবার চলে গেলো আরশি।
রাত আবার বসে রইলো আগের মতো।
রাতের খাবার খেয়ে সোফায় একটু গা এলিয়ে বসে আছে সবাই। রুদ্র চৌধুরি উঠে নিজের রুমে চলে গেলো একটু আগে।
রাত্রি চৌধুরির মুখে চিন্তার ভাজ। রিদ ঠিকঠাক মতো পৌছাতে পারবে কি না?
– রিদ কি তোকে কিছু বলে গেছে?
গম্ভির গলায় রাতের দিকে চেয়ে প্রশ্ন ছুরে দেয় রাত্রি চৌধুরি।
– না মা, আমায় তেমন কিছু বলে নি। রিদ তার বেশির ভাগ কথাই আমার সাথে শেয়ার করতো। কিন্তু হটাৎ কেনো চলে যাচ্ছে তা অনেকবার জিঙ্গেস করলেও কিছু বললো না সে। বললো, মামা মামির কথা নাকি মনে পরছে খুব। তাই চলে গেলো।
– কেমন আছে কি করছে, ঠিকঠাক মতো পৌছাতে পরছে কিনা তাও জানিনা।
– টেনশন করোনা, সে পৌছালেই ফোন দিবে।
– আচ্ছা, ছেকা টেকা খায়নি তো আবার?
– আমি যতদুর জানি রিদের কোনো মেয়ে বন্ধুও ছিলো না। বাকিটা কে জানে। হয়তো আমার থেকে লুকাতেও পারে। কিন্তু এমন কোনো বিষয় নিয়ে আমার সন্দেহ হয়নি কোনো দিন।
– আমার বাবার বংশে একটাই মাত্র ছেলে। কোনো অসুবিধা না হলেই হয়। পৌছালে আমায় একটু জানাস, টেনশানে মাথাটা ধরে আসছে তোরা থাক তাহলে। আমার আবার না ঘুমালে ব্যাথা বাড়তেই থাকবে।
রাত্রি চৌধুরি সোফায় ভর করে উঠতেই বৃষ্টি গিয়ে এক হাত কাধে তুলে নিয়ে বলে,
– বেশি ব্যাথা করছে মা? চলেন আপনাকে রুমে দিয়ে আসি।
না আমি ঠিক আছি যেতে পারবো, তুমি এখানে আড্ডা দাও।
– না পারবেন না, আর মায়ের মুখের উপর মেয়েদের এতো কথা বলতে নেই। চলেন তো।
রাত্রি চৌধুরি কিছুক্ষন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মুখে একটা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,
– আচ্ছা মা, আপনার কথাই চিরধার্য।
,
,
সকালে ঘুমের মাঝে হাতটা টেনে কেও তোলার চেষ্টা করছে রাতকে। কিন্তু আফসোস একটুও উঠাতে পারছেনা তাকে। এর আগে অনেক্ষন ধরে ডেকে না তুলতে পেরে এবার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিয়েছিলো বৃষ্টি। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।
হাপ ছেরে বিছানার এক পাশে ধপাস করে বসে পরে বৃষ্টি।
“এভাবে মরার মতো কেও ঘুমায়? কানের কাছে বোম মারলেও মনে হয়না এই ঘুম ভাঙবে। ইচ্ছে করছে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি।
এবার পাশে থাকা বালিশটা নিয়ে জোড়ে জোড়ে কয়েকটা বারি দিলো রাতকে। তবুও রাতের কোনো সারা শব্দ নেই।
এবার একটু ঘাবরে যায় বৃষ্টি। বুকের বা-পাশটায় মাথাটা রেখে কান পেতে শুনতে থাকে হৃদপিন্ডের শব্দ।
বৃষ্টির ইচ্ছে ছিলো ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু তা আর হলোনা। ইন্টারে উঠেই গ্রুপ চেন্জ করেছিলো সে। ওসব বিজ্ঞান তার মাথায় ঢুকবেনা। এর চেয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়ে থাকাই ভালো। পড়ার চাপও কম।
কিন্তু এই মুহুর্তে ডাক্তারি করার একটা চান্স পেয়ে গেছে বৃষ্টি।
হাত ধরে পাল্স চেক করে, না সব ঠিকঠাক। কয়েকদিন আগে মুভিতে দেখেছে হিরোর কোনো এক কারনে জ্ঞান ফিরছেনা। হিরোইন তখন বুকের উপর দু,হাত দিয়ে চাপ দিচ্ছে। তার পর ঠোটে ঠোট রেখে কি যেনো করলো, কিছুক্ষন পর লাফিয়ে উঠে গেলো হিরো।
বৃষ্টি রাতের পেটের উপর উঠে বসলো। হাত দিয়ে বুকে হালকা করে চাপ দিচ্ছে। পদ্ধতির দ্বিতীয় ধাপ প্রয়োগ করতে কিছুটা লজ্জা গ্রাস করে নেয় তাকে। তবুও সে দেরি না করে রাতের ঠোটে ঠোট রাখে বৃষ্টি। কিছুক্ষন পর ছেরে দিয়ে দেখে রাতের এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। এবার জেনো সত্যিই ভয় গ্রাস করে নিয়েছে বৃষ্টিকে। কান্নার ভাব চলে আশে মুখে।
মুহুর্তেই যেনো খিক খিক করে হেসে উঠে রাত। যানো অনেক্ষন ধরে হাসিটা থামিয়ে রেখেছে সে। রাগের চরম পর্যায়ে নিচের ঠোটটা দাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ বড় বড় পরে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। পেটের উপর বসা অবস্থায় এলোপাথারি কিল ঘুষি দিতে থাকে রাতের বুকে। রাত হাসতে হাসতে বৃষ্টির হাত দুটি ধরে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় তাকে। ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
– তোমার কাছ থেকে আদর পেতে হলে তো দেখছি রোজ রোজই নতুন নতুন এক্টিন করতে হবে। কিছুক্ষন আগে যভাবে বুকের উপর মাথা রেখে হৃদপিন্ডির আওয়াজ শুনছিলে ওভাবে আর কিছুক্ষন সুয়ে থাকোনা প্লিজ। অনুভুতিটা ছিলো অতুলনিয়।

নাস্তা সেরে অফিসে চলে যাচ্ছে রাত। বৃষ্টিকে কলেজে নামিয়ে দিবে যাওয়ার পথে। বর্ষা শেষ হতে চললো প্রায়। দু,এক মাস পর পরতে থাকবে হার কাপানো শীত।
সকাল থেকেই আকাশটায় মেঘলা মেঘলা ভাব। হলকা শিতক বাতাস বইছে। আকাশটা ঘিরে ফেললো মেঘ।
পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠে,
– আজ কলেজে যাবোনা আমি।
– কেনো?
– ইচ্ছে করছেনা আজ। ধরে নিন এটা একটা অনুরুধ, প্লিজ।
– তো কি করবে?
কোনো নির্জন রাস্তায় নিয়ে চলুন না।

গাড়ি এসে ব্রেক চাপলো একটা নির্জন রাস্তায়। রাতের ফোন টা বাজছে। দেখে মামির নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।
– হ্যালো মামি, আসসালামু’আলাইকুম।
– ধুর বেটা আমি রিদ। তোর মামি হলাম কবে?
– ও তুই। পৌছেছিস ঠিক মতো? কোনো সমস্যা হয়নি তো?
– না তেমন সমস্যা হয়নি। এইতো মাত্র এয়ার্পোট থেকে বের হলাম। তাই আম্মুর ফোন থেকেই তোকে ফোন দিলাম।
রিদ ও মামা মামির সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রাখে রাত। দেখে পাশে বৃষ্টি নেই। সামনে তাকাতেই দেখে বৃষ্টির তালে তালে নাচছে সে। রাত মুখ দিয়ে একটা “চ” সুচক শব্দ করে গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টির দিকে হাটা ধরে। বৃষ্টি দৌড়ে এগিয়ে এসে রাতের হাত দু,টি ধরে ঘুরছে আর হাসছে। ঘুরতে ঘুরতে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাতের বুকের উপর ঢলে পরে সে।
– এই বৃষ্টিতে ভিজে তো এর আগেও একবার জ্বর বাধিয়েছিলে। এখন আবার শখ উঠছে নাকি?
– হুম। অসুখ হওয়া মানেই আপনার থেকে এক্সট্রা কেয়ার পাওয়া। ওফ কি যে ভালো লাগছে।
– ওরে বাদর, এবার কেয়ার নয়। তোমার মতো বাদরের লেজ ধরে মাথায় তুলে আছার দিবো।
– সমস্যা নেই, আমার কোনো ভয় নেই, কারন আমার লেজও নেই।
বলেই রাতকে ছেরে বৃষ্টির তালে তালে নাচতে থাকে বৃষ্টি। রাত বলে উঠে,
– গাড়িতে উঠো বলছি।
– না, আমি ভিজবো আজ, আপনার ভালো না লাগলে আপনি চলে যান। তবুও আজ এই বৃষ্টি ছেরে কোথাও যাচ্ছিনা আমি।
রাত এবার আর কিছু না বলে বৃষ্টির কাছে এসেই কোলে তুলে নেয় তাকে। হাটতে থাকে গাড়ির দিকে। বৃষ্টির হাতপা ছোরাছুরি। তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে আজ এখান থেকে কোথাও যাবেনা।

বারান্দায় বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। আজ এি বৃষ্টি দেখে মনে পরে গেলো, পুরুনো এক সৃতির কথা।
রাত না থাকায় রিদ যায় আরশিকে স্কুল থেকে আনতে। আসার পথে, সে কি তুমুল বৃষ্টি। রাস্তার পাশে একটা জায়গায় ফুলের চাষ করা হয়। সেখানে ফুল গুলো গোল খাচ্ছে বৃষ্ট ফোটায়। ফুল দেখে লাফিয়ে উঠে আরশি। তখন আরো ছোট ছিলো। রিদকে বলে উঠে, ভাইয়া আমায় ওই ফুলটা এনে দাও না। রিদ গাড়ি থামিয়ে চলে যায় সেখানে। ভিজতে ভিজতে আরশির জন্য নিয়ে আসে ফুলটা। আরশি মুখ কুচকে বলে উঠে,
– এটা না তো, ওই লালটার কথা বলছি।
রিদ আবার চলে যায়। লাল ফুলটা ছিড়ে পিরে আসতেই দেখে দুইটা কুকুর তাড়া করে আসছে তার দিকে। দৌড়াতে দৌড়াতে কয়বার পড়ছে তার হিসেব নেই। কোনো মতো কুকুর গুলোর হাত থেকে বেচে গাড়িতে এসে বসে রিদ। ভয়ে শরিরটা কাপছে তার। কুকুর গুলো এসে গাড়ির পাশে লাফাতে থাকে। গ্লাস থাকায় ভেতরে আসতে পারছেনা। আরশি ভয়ে চিৎকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে রিদকে। রিদও কাপা হাতে এক হাত দিয়ে আরশিকে জড়িয়ে অপর হাত দিয়ে ড্রাইবিং করে চলে গেল সেখান থেকে।

ভাবতে ভাবতেই মায়ের ডাক পেয়ে উঠে চলে যায় আরশি। রিদের সাথে কটানো মুহুর্তগুলো কেনো বার বার মনে পরছে নিজেও জানেনা সে। হয়তো দুরুত্ব বেরে গেছে বলে।

কেটে গলো আরো কয়েকদিন।
সকালে মা আজ কেনো হটাৎ বাড়ি যেতে বলছে নিজেও যানেনা সে। আবার একা। বৃষ্টিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলো রাত। বৃষ্টি ভাবলো কলেজের সময়টাতে তার খোজ নেওয়ার তেমন কেও নেই। এই সময়টায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবার চলে আসতে পারবে সে। কলেজে না ঢুকে। একটা গাড়ি করে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেলো বৃষ্টি। কলেজ ছুটির আগেই আবার এখানে চলে আসবে সে। তাহলে কারো কাছে আর কৈফিয়ত দিতে হবেনা। বাড়ির সামনে গিয়ে ভাড়া মিটিয়ে ঘরের দিকে হাটা ধরে বৃষ্টি। কলিং বেল বাজাতেই দরজা খোলে বৃষ্টির মা।
– এসেছিস? আর কেও এসেছে?
– না মা, আমি কলেজ থেকে এসেছি, কেও জানেনা।
– আচ্ছা বস।
– এমন ইমার্জেন্সি ডাকার কারন কি মা?
– তোর রুমে যা, বুঝতে পারবি ডাকার কারনটা।
বৃষ্টি ঠোট ফুলিয়ে কিছু না বুঝার মতো করে হাটা ধরে রুমের দিকে।
ভেতরে প্রবেশ করতেই যেনো অবাকের চরম সীমানায় সে। মুহুর্তেই একটা ঝাকুনি দিয়ে উঠে সারা শরির।
কারন বিছানায়হাত পা গুটিয়ে বসে আছে বর্ষা। যার কারনে বৃষ্টির জীবনের মোড়টা পুরাই পালটে গিয়েছিলো।

To be continue……..

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here