বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ__১৮,১৯

0
1508

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?,পর্বঃ__১৮,১৯
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?
#পর্বঃ__১৮

দুপুর ১টার কাছাকাছি। একটা রিক্সা ডেকে উঠে পরে বৃষ্টি। সূর্যটা প্রায় মাথার উপর। রোদের তাপে যেনো চারদিকে চোখ মেলে থাকাটা কষ্ট কর। বৃষ্টি তাকিয়ে দেখলো রিক্সা ওয়ালা চাচার দিকে। ঘামে চুপচুপে অবস্থা তার। তবুও থেমে থাকছেন না তিনি। গলায় ঝুলে থাকা গামছাটা দিয়ে একটু পর পর মুখের ঘাম মুছে নিচ্ছে।
বৃষ্টির মনে আসছে কয়েকটা প্রশ্ন। সারা দিন রোদে পুরে এতো পরিশ্রম করে কতো টাকা আয় করে সে? চার,শ পাঁচ,শ তাও কতো জনের কতো কথা শুনতে হয় তাদের। এতের মাসিক আয় কতো? ১০ থেকে ১২ হাজারের মতো। আর কারো কারো কাছে এই টাকা এক দিনের সামান্ন রেষ্টুরেন্টের বিল। পৃথিবী টা সত্যিই অদভুত। এই রঙিন পৃথিবিতে কারো কাছে জীবন মানে বিলাসিতা, আর কারে কাছে এই জীবন মানে কোনো রকম খেয়ে পড়ে বেচে থাকা।
হু হু করে চলছে রিক্সা। কিছুক্ষন পর পৌছে গেলো কলেজের সামনে। যাক রাত আসার আগেই পৌছে গেছে সে।
কলেজ ছুটির পর প্রায় এক ঘন্টা ওখানে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। কিন্তু রাত আসার কোনো নাম গন্ধও নেই। বৃষ্টি ঠোট ফুলিয়ে গলা টেনে রাস্তার এদিক ওদিক দেখছে বার বার। সবাই চলে গেছে প্রায়।
একটু পর ছাউনির ভেতর কিছু ছেলে এসে বসলো।
ওখান থেকে একে অপরকে বলে উঠে,
– ও মাই গট, দিনে দুপুরে এই নিরিবিলি জায়গায়ও যে চাঁদের সন্ধান পাওয়া যায় জানা ছিলো না তো।
– আরে ওসব বাদ দে, মাইয়ার বডি ফিগার দেখেছিস? কে বানালো আপু?

ছেলে গুলোর এমন বাজে কমেন্টে ইচ্ছে করছে জুতা খুলে খুলে গালের উপর রক্ত জমাটের সীল বসিয়ে দিতে। কিন্তু ভয়ও করছে এখন। শুধু এক রাশ ঘৃনা নিয়ে হিজাবটা ঠিক ঠাক করে নেয় বৃষ্টি। ওদিকে রাতেরও আসার নাম গন্ধও নেই। রাগে কিছুটা হেটে একটা রিক্সা নিয়ে বাড়ি চলে যায় সে। রাত আজ আসলোনা কেনো? প্রায় দের ঘন্টা ধরে দার করিয়ে রেখেও কোনো খোজ নেই তার। আমার প্রতি কি তার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে ধিরে ধিরে?

ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয় বৃষ্টি। বিছানায় বালিশের মাঝে দু হাত রেখে তার উপর থুতনিটা রেখে উপড় হয়ে শুয়ে আছে সে। আজকের সকালটা যেনো বার বার ভেষে আসছে তার চোখে।
সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখে বর্ষা বিছানায় সুয়ে সুয়ে কাদছে। বৃষ্টি গিয়ে বসে তার কাছে। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ঘুরে তাকায় বর্ষা। বৃষ্টিকে জড়ি ধরেই হু হু করে কেদে উঠে বর্ষা।
ধিরে ধিরে তার সাথে ঘটে যাওয়া সব খুলে বলে বৃষ্টিকে। আজ শুধু অন্য মনস্ক হয়ে চুপ চাপ সব শুনে যাচ্ছে বৃষ্টি।
কথার মাঝখানে বর্ষা বলে উঠে,
– আমার একটা অনুরুধ রাখবি বোন?
মুহুর্তেই যেনো বুকটা ধুক করে উঠে বৃষ্টির।
বর্ষা আর কিছু বলতে যাবে তখনই ডাক পরে মায়ের। তার মা ডাকছে তাকে। রুমের বাইরে গিয়ে দেখে বর্ষা আসার খবর পেয়ে তার বাবা অসময়েই ফিরে এসেছে বাড়িতে। মনে হচ্ছে অনেক ক্ষেপে আছে সে। বৃষ্টির সাথে কোনো কথা না বলেই তিনি গেলেন বর্ষার রুমের দিকে। ভয়ে বুক ধুপ ধুপ করছে বৃষ্টির। এখন কি বড় কোনো গন্ডোগোল লাগতে চলছে ঘরে?
কিন্তু তার ভাবনা ভুল প্রমান করে, বর্ষার দিকে কিছুক্ষন রাগি ভাবে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায় সে। একটা সস্থির নিশ্বাস ছারে বৃষ্টি।
বৃষ্টিকে আর অনুরুধের কথাটা বলা হয়নি বর্ষার। তার বাবা বৃষ্টিকে দেখে রাগের ভাবে বলে উঠে,
– তুই আজ এখানে কেনো?
বৃষ্টি কাপা কাপা গলায় বলে উঠে,
– ম মা বলেছে আসতে।
– এসেছিস, দেখেছিস এবার চল তোকে দিয়ে আসি। আমি চাই না এখানে ইমোশনের মায়ায় পরে তোর ভবিশ্যৎ নষ্ট হোক।
তার পর কলেজ ছুটির আগে চলে যায় বৃষ্টি।
ফোনটা চার্জে দিয়ে চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে সে। চোখ খুলে দেখে প্রায় বিকেল হয়ে গেছে। তখন চৈতি এসে ডেকে নিয়ে যায় তাকে ছাদে। গিয়ে দেখে আরশিও ওখানে।
,
,
সাজের বেলায় রাঙা গুধুলির আলোয়। চেনা অচেনা মানুষটার পাশে হাটছে আরশি। যার সাথে তার বিয়ের কথা চলছে। আশে পাশে তাকিয়ে হাটতেই আরশি মুখ ফসকে বলে উঠে,
– দেখেন ওই ফুলটা কি সুন্দর। আমাকে এনে দিবেন ওটা?
– ধুর কিসব জিনিসের প্রতি ইন্টারেস্ট তোমার? সামনে চলো দোকান থেকে ভালো দেখে ফুল কিনে দিবো তোমায়।
আরশি আর কিছু না বলে চুপ চাপ হাটতে থাকে। ভাবতে থাকে ভালোবাসাটা কোথায়? পছন্দের ফুলটাকে ছুরে ফেলে দিয়ে সামনে দোকান থেকে কিনে দিবে বলা লোকটার মাঝে? নাকি তার পছন্দ হয়েছে শুনে বৃষ্টির মাঝে ছুটে গিয়ে বেড়া টপকে কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে ফুল নিয়ে এসে হাসি মুখে তার কানের পাশে গুজে দেওয়া সেই রিদের মাঝে?
প্রায় সন্ধা হয়ে আসে। ফুচকার দোকান দেখে আরশি বলে উঠে,
– চলেন ফুচকা খাই,,,,
– এসব ফুটপাতের জিনিস কেও খায়? চলো সামনে রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে নিবো।
এবারও আরশির ভাবনায় আসে রিদের সাথে সেই এক প্লেটে বসে ফুচকা ভাগাভাগি করার মুহুর্তটা।
একটু আর চোখে লোকটার দিকে তাকায় আরশি। আজব মানুষ, হবু বৌয়ের কোনো ইচ্ছারই দাম নেই তার কাছে।

সন্ধার পর বাসায় ফিরে রাত। কিন্তু আসার পর থেকেই রাতের সাথে কোনো কথা বলছেনা বৃষ্টি।
– তা মোহারানী আজ কি নিয়ে রেগেছে তা জানতে পারি?
– আপনি আজ আমায় কলেজ থেকে নিয়ে আসেন নি কেনো?
– ওহ্ আই এম রিয়েলি সরি। আসলে খুব জরুরি একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম তো তাই। আর তোমাকে তা বলার জন্য কতোবার ফোন দিলাম কিন্তু প্রতিবারই বন্ধ পেলাম।
– ফোনের চার্জ ছিলোনা তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
রাত এবার পেছন থেকে বৃষ্টির কাধে থুতনিটা রেখে বলে উঠে,
– তো ম্যাডাম এবার বলেন দেখি দোষটা কি শুধু আমার নাকি আপনারও।
– মোটেও আমার না, আমি কি জানতাম নাকি যে এমন হবে?
– ওকে ম্যাডাম সব দোষ আমার মেনে নিলাম। এবার হ্যাপি? হ্যাপি হলে চলুন আপনার এই পাখির বাসার মতো এলোমেলো হয়ে থাকা জঙ্গটাকে একটু পরিচর্যা করি।
– জঙ্গল আসলো কোথা থেকে আবার?
– আপনার চুলের কথা বলছি ম্যাডাম।
বৃষ্টি রেগে হাতের কুনুই দিয়ে একটা গুতা দেয় রাতকে।
– মোটেও না, আমার চুল এমনিতেও খুব সুন্দর আছে।
– তো পরিচর্যা না করলে কি এই সুন্দর্য আর থাকবে? চলো চলো।
বৃষ্টিকে সামনে বসিয়ে মনোযোগ সহকারে চুলে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে রাত। আর তা চোখ বন্ধ করে মুগ্ধ মনে উপভোগ করছে বৃষ্টি।

বর্ষার সাথে কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছে বৃষ্টির। বারবারই দেখা করতে বলছে বৃষ্টিকে। নানান দুশ্চিন্তার ভার যেনো অন্য মনস্ক করে তুলছে বৃষ্টিকে। মুখের হাসিটাও যেনো আগের তুলনায় কিছুটা বিলিন হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে অদ্ভুত সব ইচ্ছে জাগে। ইশ যদি জীবনের শেষটা সে কখনো আগে থেকে দেখতে পেতো তাহলে জীবন নিয়ে এতো টেনশন হতোনা তার। খুব ইচ্ছে হয় তার, এই গল্পের শেষটা একটিবার দেখতে।

গতকাল চৈতি গেছে ছুটিতে তার নিজের বাড়ি। বৃষ্টি রান্নঘরে গিয়ে রান্না করছে। রাত্রি চৌধুরিও আসে কিচেনে।
– বৌমা, তোমাকে ইদানিং কেমন গম্ভির মনে হয় কেনো? মনে হয় হাসি যেনো বিলিন হয়ে গেছে তোমার মুখ থেকে। কি হয়েছে তোমার? রাতের সাথে কোনো প্রব্লম হয়েছে?
– না মা তেমন কিছু না। সব তো ঠিকই আছে। আর এটা হয়তো আপনার মনের ভুল।
– না, তোমাকে যেনো ইদানিং একটু অন্য রকম দেখায়। তাই বললাম। মনে রেখো পৃথিবীতে সব চেয়ে বেশি আঘাত পরে সোজা জিনিসের উপরেই।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো কিছুদিন।বৃষ্টির ইয়ার ফাইনালও শেষ।
সন্ধার পর কফিরমগে চুমুক দিয়ে দোলনায় বসে রাত। আরশিকেও বসতে বললো ওখানে।
– আমার সেই বোন টার কয়দিন পর বিয়ে। বিশ্বাসই হচ্ছেনা আমার। কয়েক বছর আগেও এই বোনটার কাছ থেকে চকলেট খেয়ে নিলে ফ্লোড়ে বসে হাত পা ছোড়াছোরি করে কান্না করতো।
বলেই হো হোকরে হেসে দেয় রাত। রাগে ঠোট ফুলিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে আরশি।
রাত কফির মগে আবার চুমুক দিয়ে বলে উঠে,
– যে জন্য ডেকেছি তোকে। আমি তোকে কিছু প্রশ্ন করবো, উত্তর হবে হ্যা অথবা না।
– হুম বলো।
– রিদের সাথে কি তোর কিছু ছিলো?
– হটাৎ এই কথা বলছো কেনো ভাইয়া?
– আমি বলছি উত্তর হবে হ্যা অথবা না। রিদের সাথে কি তোর কোনো সম্পর্ক ছিলো?
– না।
– তোর প্রতি রিদের বা রিদের প্রতি তোর কারো মনে কি কোনো অনুভুতি তৈরি হয়েছিলো?
– তার কথা জানিনা। তবে আমার, না।
– রিদের চলে যাওয়ার কারনটা কি তুই?
– আমি কি করে জানবো? তাকেই জিগ্গেজ করো।
– ওহ্, আচ্ছা যা। আমার ধরনাটা হয়তো ভুল ছিলো। ভেবেছিলাম বিয়ের তো এখনো কিছুদিন বাকি। চাইলে সবই পাল্টে ফেলতে পারতাম। আর হ্যা, তোকে এভাবে বলার জন্য, সরি।

পড়ন্ত বিকেল, চারদিক টায় হালকা বাতাস বইছে। হালকা বাতাসে সামনে আশা চুক গুলো নারাচারা করছে। চুলগুলো কানের পেছনে গুজে আবার হাটতে শুরু করলো বৃষ্টি। গায়ে একটা কালো রঙের শাড়ি। হাতে কালো চুড়ি। আর পাশে থাকা রাতের গায়ে একটা কালো পান্জাবি। বৃষ্টির হাতের আঙুলের ফাক দিয়ে রাত আঙুল ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে হাটছে দুজন। আজ শুক্রবার। তাই বিকেলে বৃষ্টিকে নিয়ে ঘুরতে বের হলো রাত।
রাতের ধরে থাকা হাতটা হাটতে হাটতে দুলাচ্ছে বৃষ্টি।
হটাৎ সামনে পড়লো বর্ষা। দুজনই থমকে দাড়ায় ওখানে। বর্ষা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাত ও বৃষ্টির এক হয়ে থাকা হাতের দিকে।
রাতও আচমকাই হাতটা ছেরে দিয়ে বর্ষার দিকে তাকায়।
বর্ষার উপস্থিতিতে রাত এভাবে হাত ছেরে দেওয়ায় একটু অবাক হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি যেনো মনে মনে প্রশ্ন করে উঠলো,
– এটা কি হলো?
বৃষ্টি চোখ তুলে জিগ্গাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে।

To be continue……….

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত?
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ?

#পর্বঃ__১৯

সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষ নামক বিশ্বাস ঘাতক প্রানিটা সামনে পরতেই স্তব্দ হয়ে যায় রাত। বৃষ্টি রাগে হেটে চলে যায় সেখান থেকে।
বর্ষা দু,হাত বুকে গুজে রাতের দিকে চেয়ে বলে উঠে,
– কেমন আছো?
– ভালো। তুমি এখানে? আর একা? তোমার ওই প্রিয় মানুষ, নামটা যেনো কি ওর? কোথায় সে?
বর্ষা মাথা নিচু করে বলে উঠে,
– সরি রাত। আমি না বুঝে তোমার সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। প্লিজ রাত আমায় একটিবার ক্ষমা করা যায় না?
– ক্ষমা আমি তোমাকে অনেক আগেই করে দিয়েছি। যেদিন থেকে বুঝেছি, তুমি আমার জীবন থেকে চলে গিয়েছিলে দেখে বৃষ্টির মতো কাওকে পেয়েছি আমি।
– প্লিজ রাত, ভুল তো মানুষই করে তাই না। আর তোমার মনে আছে? আমি রোজ ভুল করতাম আর তুমি ক্ষমা করে দিতে। তার পর আবার নিজেকে সুধরে নিতাম আমি। মনে আছে তোমার রাত? একটি বার সুজুগ দাও আমায়।
– তোমার ভুল গুলো ক্ষমা করে দেওয়াই আমার সব চেয়ে বড় ভুল ছিলো। কথায় আছে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালি কনা বিন্দু বিন্দু জল, তৈরি করে মরুভুমি সাগর অতল। আর তুমি কেমন মেয়ে হ্যা? কি করে পারলে এভাবে এতো বছরের ভালোবাসাটা ভুলে যেতে? আর কিভাবেই বা চাইছো এখন নিজের আপন ছোট বোনের গুছানো সংসারটাকে নষ্ট করে দিতে? তুমি কি মানুষ? একটু বিবেক বোধ কি আছে তোমার অন্তরে? এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরও কিভাবে তুমি আমার সামনে দাড়িয়ে কথা বলার সাহস পাচ্ছো? তোমাকে আমি যতো দেখছি ততোই অবাক হচ্ছি। যেনো আমার সামনে এক বড়ু গিড়গিটি দাড়িয়ে আছে। যে মুহুর্তেই রং বদলাতে পারে। নেক্সট টাইম এসব অধিকার চাওয়া তো দুরের কথা আমার সামনে দাড়াতেও দশ বার ভেবে দেখবে আগে। আরেকটা কথা মনে রেখো। তোমাকে হারিয়ে বৃষ্টিকে পাওয়াটা আমার দুর্ভাগ্য ছিলোনা, ছিলো সৌভাগ্য। আমি সত্যিই ভাগ্যবান ওর মতো মেয়েকে পেয়ে। যে দুঃসময়কেও চুপচাপ মানিয়ে সু-সময়ে রুপান্তরিত করতে পারে।
,
,
বৃষ্টি বর্ষাকে নিয়ে কিছু জিগ্গেস করলোনা রাতকে। রাতও এই নিয়ে আর কথা তোলেনি। রাতের বেলায় রাতের ফোনে একটা ছবি পাঠায় বর্ষা। ছবিটা ছিলো তিহানের। রাত দেখতে চেয়েছিলো ছেলেটাকে। ফোন অন করে ছবিটা দেখতেই যেনো গায়ে কাটা দিয়ে উঠে রাতের। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হচ্ছে তার। ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে যায় সে। বাবা বাবা বলে কয়েকবার ডাক দিতেই রাতের পাশে গিয়ে দাড়ায় বাড়ির সবাই। রুদ্র চৌধুরি ধিরে পায়ে নিচে নেমে সোফায় বসে বলে উঠে,
– কি হলো রাতের বেলায় এমন চেচাচ্ছিস কেনো?
– বাবা আরশির বিয়ের আর কয়দিন বাকি?
– কেনো সাত দিন।
– বিয়েটা এক্ষুনি কেন্সেল করো তুমি।
– কেনো কি হয়েছে?
– আরশির সাথে যে ছেলের বিয়ে হয়েছে তার নাম তুর্জয়, রাইট?
– কি বলতে ডেকেছিস আসল কথাটা বল।
– তুর্জয়ের পরু নাম কি?
– কেনো? তুর্জয় আহমের তিহান।
রাত ফোনটা বের করি রুদ্র চৌধুরির সামনে ধরে।
ছবিটা ছিলোবিদেশে থাকতে পার্টিতে মেয়ে কোলে নিয়ে ড্রিংস করার ছবি।
– ও মাই গট।
– শুধু তাই নয়, এই ছেলেটা কে তা জানো? আমাদের বিয়ের দিন বৃষ্টির বড় বোন বর্ষাকে নিয়ে পালিয়েছিলো।

ব্যাস পরদিনই ভেঙে যায় আরশির বিয়েটা। বৃষ্টি জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন কেদেছে আরশি। জানেনা কেনো কেদেছে তবে হ্যা, বিয়েটা ভেঙে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছে আরশিই। কিন্তু কেনো খুশি হয়েছে তাও সে জানেনা। এটা কি তাহলে অদৃশ্য কোনো এক টান?
,
,
বৃষ্টিকে ডেকে নিয়ে যায় বর্ষা। বৃষ্টি ওই বাড়িতে গিয়ে দেখে সব ঠিকঠাকই আছে। শুধু বাবা নাকি এখনো কথা বলেনি বর্ষার সাথে।
বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কেদে চলছে বর্ষা।
– প্লিজ বোন আমায় ফিরিয়ে দিস না আজ। তুই বললে রাত ঠিকই বুঝবে। দেখ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর তোকে তো আমি ছোট বেলা থেকেই কতো আদর ভালোবাসা দিয়েছি। কখনো তোর কাছে কিছু চাইনি। কিন্তু এখন বেহায়ার মতো বার বার তোর কাছে অনুরুধ করছি। আমায় ফিরিয়ে দিস না বোন।
কিছু বলতে পারছেনা বৃষ্টি। বুকের ভেতরটা শুধু হু হু করে উঠছে বার বার।
ছোট বেলা থেকে কখনো বর্ষাকে এভাবে কাদতে দেখেনি বৃষ্টি। লাইফে এই প্রথম দেখছে। তাও তাকে অনুরুধ করে করে কাদছে বর্ষা। কিচ্ছু মাথায় আসছেনা বৃষ্টির। এক মুহুর্তে কি সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়?
চোখ বন্ধ করে রাখে কিছুক্ষন। বার বার চোখের সামনে ভেষে উঠে, রাতের সাথে কাটানো মগহুর্তগুলো। নিজের অজান্তেই বৃষ্টি বতে শুরু করে,
– আমি পারবোনা রাতকে ছারতে। এই কয়েক মাসে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি আমি তাকে। অনেক বেশি। তাকে আমি কিছুতেই ছারতে পারবোনা। আর তোমার জদি রাতের প্রতি এতোই ভালোবাসা থেকে থাকে, তাহলে ছেরে গিয়েছিলে কেনো এভাবে? এটাই বুঝি তোমার ভালোবাসার নমুনা? এর পর আবার অন্য ব্যটার কাওকে পেলে আবার রাতকে ছেরে যাবেনা তার কি গ্যারান্টি আছে? তোমার ওটা ভালোবাসা নয় ওটা হলো লোভ। আর আমি মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছি রাতকে। আমি ছারতে পারবোনা তাকে।
– তুই রাতকে ছারতে পারবিনা?
– না।
– তাহলে তুই আমার মরা মুখ দেখবি। তোর চোখের সামনে লাশ হয়ে সুয়ে থাকবে তোর ছোট বেলা থেকে আপু ডাকা মানুষটা। তোর কারনে লাশ হয়ে তোর সামনে পরে থাকবে সে। সহ্য করতে পারবি তখন?
এবার যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে বৃষ্টি। বর্ষা এমন কিছু বলবে তা হয়তো ভাবতেও পারেনি সে।

মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো বৃষ্টি। খেয়ে যেতে বলেছিলো তাকে। কিন্তু বৃষ্টির মনে দুঃশ্চিন্তার ভার। বর্ষা ছোট বেলা থেকেই এক ঘেয়ি একটা মেয়ে। জেদি মেয়ে ও। যা বলে তাই করে বসে। কোনো বিশ্বাস নেই এই মেয়েকে। না, কিচ্ছু মাথায় আসছেনা বৃষ্টির। একাকি রাস্তার পাশে বসে কিছুক্ষন নিরবে চোখের জল ছারলো বৃষ্টি। বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। নিজের স্বামিকে যতটা ভালোবাসে ততোটা নিজের বোনকেও বাসে সে। তার এখন কি সিদ্ধান্তে পৌছানো উচিৎ?
,
,
রুমটা গোচগাছ করে জামা গুলো ঠিক ভাবে আলমারিতে ঘুচিয়ে রাখছে বৃষ্টি। ফোন টিপতে টিপতে রুমে এসে সোফার মাঝে বসে রাত। কিন্তু বৃষ্টির মুখে কোনো কথা না শুনে ফোনটা সোফায় রেখে পেছন থেকে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,
– মন খারাপ?
– উহু
– তাহলে?
– এমনি ভালো লাগছেনা।
– শরির খারাপ?
– উহু ঠিক আছি আমি।
– তাহলে কিছু বলছোনা যে?
– ধরেন দুজন মানুষ, যাদের আপনি সমান ভাবেই ভালোবাসেন। সেখান থেকে জদি আপনাকে বলা হয় এক জন কে বেছে নিন। অন্য জন মরে যাবে তাহলে কি করবেন আপনি?
– গভির চিন্তার বিষয়।
– আচ্ছা ধরেন এমনও একটা পথ আছে যাতে করে দুজনই বেচে থাকবে তাহলে কি করবেন।
এবার উত্তর দিকে এক মুহুর্তও দেরি করলো না রাত।
– অবস্যই, এই পথটাই বেছে নিবো।
– ওহ্। আচ্ছা আপনি কি আপুকে এখনো ভালোবাসেন।
– ভালো বাসা যায় তাকে যে এটার সঠিক মর্যাদা দিতে যানে।
– উত্তরটা বললেন না।
আর কিছু না বলে হন হন করে বেড়িয়ে যায় রাত। হয়তো বর্ষার ব্যাপারে আর কিছু শুনতে চাইছেনা সে। আর উত্তর সে দিয়েই দিয়েছে।
কিন্তু সহজ সরল বৃষ্টি না বুঝে একটা দির্ঘশ্বাস ছারলো।
,
,
রাতের বেলায় রুম ঘাটতে ঘাটতে একটা পুরাতন ডায়রি পায় বৃষ্টি। অতটাও পুরান নয়। কিন্তু রাত যে ডায়রি লেখে তা তো জানা ছিলোনা।
খুলে পড়ার ইচ্ছে জাগে বৃষ্টির।
পুরু ডায়রিটায় বর্ষাকে নিয়ে নানান অনুভুতিতে ভরা। বর্ষার সাথে কাটানোর বেষ্ট দিন গুলো বন্ধি করে রেখেছে এই ডায়রিতে। দেখে হিংসে হয় বৃষ্টির কতো ভালোবাসা ছিলো তাদের মাঝে। রাত বর্ষাকে কতোটা ভালোবাসতো তা তার এই কলমে লিখা অক্ষরগুলোতেই প্রকাশ পাচ্ছে।
“” আজ এই বিকেলটা ছিলো আচ্ছন্ন ময় একটা বিকেল। তবুও স্নিদ্ধ শিতল ছোয়া বাতাসে পারি দিয়েছি তোমার সাথে দির্ঘতম এক পথ। ইশ, আজ এই বিকেলটা জদি শেষ না হতো তাহলে বোধ হয় ভালো হতো। হয়তো এখনো তোমার সাথে থাকতে পারতাম আমি। বাতাসে উড়ে পড়া চুল গুলো কপালে গুজে দিতাম আলতো করে। কিন্তু কোনো একদিন হটবো এমন এক অপুরন্ত পথ। বিকেল পেরিয়ে সন্ধা হবে, সন্ধা পেরিয়ে রাত, রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটে উঠবে রাঙা প্রভাত। তবুও এই পথ শেষ হবেনা আমাদের। এই মায়াবতি শুনছো তুমি? ঐ দিন হাটতে না চাইলেও হাটতে হবে তোমায়। আর না পারলেনা হয় কোলে তুলে নিবো। তবুও যতে হবে তোমায়। এই মায়াবতি শুনছো?””

এমন আরো অনেক অনুভুতি জমা এই ডায়রির পাতায়। শেষ পাতায় ছোট্ট একটা লিখা।
“” অনেক বেশিই ভালোবাসি তোমায়। আই উইশ, আমাদের বিচ্ছেদ যেনো শুধু মাত্র মৃত্যুতেই হয়।

To be continue………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here