বৃহন্নলার ডিভোর্স পর্ব-দুই,তিন

0
450

#ধারাবাহিকগল্প
#বৃহন্নলার ডিভোর্স
পর্ব-দুই,তিন
মাহাবুবা বিথী
দুই

রুমি আমাকে বললো,
—-আপু আপনি আমার গল্প শুনে বোর হচ্ছেন নাতো?
আমি বললাম,
—-একদম না,
ও আবারো বলা শুরু করলো।
প্রথম থেকেই আবীরদের অনেক কিছু অসঙ্গতি রুমির চোখে ধরা পড়তে লাগলো। ওরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করতে চায়নি। তখন ছিলো মে মাস।আবীরের মার কথা হচ্ছে এখন অনেক গরম। ওনারা আক্দ করিয়ে বউ উঠিয়ে নিবেন।পরে শীতকালে ডিসেম্বর মাসে উনি অনুষ্ঠান করবেন। উনার এক ভাই বিদেশে থাকেন।তখন উনিও দেশে থাকবেন। যাইহোক বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসতে লাগলো আর রুমিরও অস্বস্তি, ভীতি বাড়তে লাগলো।
ইতিমধ্যে বিয়ের কেনাকাটা শুরু হলো। রুমির মা রুমি আর আবীরকে সাথে নিয়ে শপিং এ বের হলেন। আবীরের বিয়ের পাঞ্জাবী কিনলো আট হাজার টাকায় আর পনেরো হাজার টাকায় স্যুট কিনলো। আবীরের আংটি ঘড়ি জুতো সবই কেনা হলো। রুমিও আশা করেছিলো ওর হবু শাশুড়ী ওকে সাথে নিয়ে শপিং করবেন। কিন্তু উনি তা করেননি। এই নিয়ে রুমির একটু দুঃখবোধ ছিলো। রুমির মা রুমিকে বললো,
—-এসব ছোটো খাট বিষয়ে মন খারাপ করিস না। দেখিস বিয়ের পর আবীর তোকে খুব আদরে রাখবে।
রুমি ভাবছে,
—হয়তোবা। আমার ভবিতব্যই জানে কপালের লিখন।
রুমিদের আত্মীয় স্বজন আর ছেলে পক্ষ নিয়ে দেড়শ মানুষ বিয়েতে আসবে। রুমির মা একটা রেস্টুরেন্টে বিয়ের আয়োজন করলো। সেদিন সকালে বাসায় কাবিন হবে।
অতঃপর বিয়ের দিন চলে আসলো। কাজি সাহেব কবুল পড়ালেন। রুমি কবুল বলে উপস্থিত সবাইকে মৃদু হেসে সালাম দিলো। এই মৃদু হাসাটা পরবর্তীতে রুমির জীবনে কাল হলো। এর পর আবীরের মা বিয়ের শাড়ি গয়না রুমির মার হাতে তুলে দিলো।

ওরা চলে যাওয়ার পর আত্মীয় স্বজন বিয়ের শাড়ি গয়না দেখে অবাক হলো। এতো সস্তা দামের বিয়ের শাড়ি। সর্বসাকুল্যে তিনহাজার টাকা দাম হবে।আর গয়না একভরির মতো।গলার একটা চিক সাথে কানের দুল। এর সাথে ইমিটিশনের চুড়ি। রুমির আত্মীয় স্বজন সবাই কানাঘুষা করতে লাগলো। বাপ মরা মেয়েটাকে ওর মা আস্তাকুঁড়ে ফেলছে। অথচ একটা ভালো প্রপোজাল কেউ আনেনি।সমালোচনার বেলায় সবাই এক পায়ে খাড়া। বউ সাজার টাকাও আবীর দেয়নি। যাক এর মধ্যে রুমি মায়ের কাছে টাকা নিয়ে ওর ছোটো বোন রুম্মানের সাথে পারলার থেকে বউ সেজে আসলো।রুমির বিয়ের শাড়ি গয়না দেখে রুম্মানেরও মনটা খারাপ হয়ে গেলো। রুম্মান রুমিকে বললো,
—-আপু এরা মনে হয় তোকে ঠকাবে।
রুমি বললো,
—–না জেনে কারো সম্পর্কে মন্দ কথা বলতে নেই।

রাতে রেস্টুরেন্টে বিয়ের আয়োজন শুরু হলো। রুমির কাছে কেন যেন মনে হচ্ছিলো ওরা খুব দায়সারা ভাবে ছেলের বিয়ে দিচ্ছে।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রুমি প্রথম আবীরের হাত স্পর্শ করে চমকে উঠলো। পুরুষের হাত এতো নরম তুলতুলে হয় কিভাবে? ওর হাতে কোন উষ্ণতা নেই। রুমি নিজেকে এই বলে সান্তনা দিলো বাবা মার আদুরে সন্তান তাই হয়ত এরকম।
রাত এগারটা বাজে। রুমি আবীরের সাথে শ্বশুর বাড়িতে রওয়ানা হলো। শাশুড়ী আগেই পৌছে গেছেন।বৌকে বরণ করে বাসরঘরে নিয়ে বসালেন। বাসর খাটটা খুব সাদামাটা ভাবে সাজানো হয়েছে। শাশুড়ী দুগ্লাস দুধ আর ডালিমের সরবত দিয়ে গেলো। রুমির একটু তন্দ্রা এসেছিলো। হঠাৎ দরজার ছিটকিনি লাগানোর শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।
ঘরে ঢুকেই আবীর রুমিকে বললো,
—-দেখ রুমি আমার বয়স ছত্রিশ।যৌবনের টগবগে ভাবটা এখন আর আমার মাঝে খুঁজে পাবে না। তোমারও তো বয়স কম না। তিরিশের কোটায় পৌছে গেছো। আর এটাও শুনে রাখো, আমি বাচ্চাও এই মূহুর্তে নিতে চাই না। তুমি কাপড় চেঞ্জ করে ফেলাে।
ওয়াশরুমে যাওয়ার আগে আমাকে দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দাও।
রুমি দুধের গ্লাস আবীরের হাতে দিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে অঝোর ধারায় চোখের পানি ঝরালো। তারপর ফ্রেস হয়ে এসে নামাজ পড়ে রুমি খাটের একপাশে জড়সড় হয়ে শুয়ে পড়ল।

মনে মনে রুমি ভাবল,এই রাত নিয়ে কল্পনায় কত
রোমান্টিক ছবি এঁকেছিলো।আর বাস্তবে ওর জীবনে কি ঘটে গেলো?পৃথিবীর প্রতিটা নারী সুখ আর সৌন্দর্যের বরণডালা নিয়ে একটি স্বপ্নের বাসর রাতের জন্য অপেক্ষা করে। অপেক্ষার কামনার মোহনীয় রাতটা দুঃখ ও কাঁটার যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে পার হয়ে গেলো।
পরদিন খুব ভোরে রুমির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ফজরের নামাজ পড়ে বারান্দায় বসেছিলো। আবীরদের বাসাটা কলাবাগান বশিরউদ্দিন রোডে। তখনও মহল্লাটা জেগে উঠেনি। এমনসময় পিঠে কারো হাতের আলতো স্পর্শ অনুভব করলো। রুমি তাকিয়ে দেখে পিছনে আবীর দাঁড়িয়ে আছে। আবীর রুমিকে বললো,
—-তোমার সাথে গতরাতে আমার ভালো করে কথা বলা উচিত ছিলো। ক্লান্ত থাকার কারনে সেটা সম্ভব হয়নি। তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?
রুমি বললো,
—-তুমি কি রাগ করার মতো কিছু করেছো?
আবীর বললো,
—-আসলে গতরাতটা আমাদের বাসর রাত ছিলো।সবারই বাসর রাত নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। আমি আসলে খুব ক্লান্ত ছিলাম।কি বলতে তোমাকে কি বলছি তুমি মনে কোন কষ্ট নিওনা।
রুমি মুখে কিছু বললো না তবে আবীরের apologize তে ওর কষ্টের পরিমানটা একটু কমলো। আবীর বললো,
—-চলো সবাই অপেক্ষা করছে একসাথে নাস্তা করবো।
আবীরের সাথে রুমি ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো।আবীরের বাবা মা ভাইয়ের সাথে রুমিও নাস্তা সেরে নিলো। এমন সময় আবীরের বাসার এ্যাসিসটেন্ট আবীরের মাকে বললো,
—-খালাম্মা আমার পাওনাটা বুঝিয়ে দেন।আমি তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাবো।
রুমি আবীরকে বললো,
—-উনি চলে গেলে বাসার কাজ কে করবে?
আবীরের মা বললো,
—-আমরা পাঁচজন মানুষ। নিজেদের কাজ নিজেরাই করে নিবো।
রুমি কিছু বললো না।কিন্তু মনে মনে ভাবলো সংসারে কতো কাজ থাকে। বিশেষকরে বাথরুম ধোওয়া আর ঘর মোছা।এদুটো কাজ করতে রুমির একদম ভাললাগে না। রুমির আবার ব্যাকপেইনের সমস্যা আছে।
আবীরের মা রুমিকে বললো,
—-আজকাল ভদ্রতার কোন মুল্য নেই। আমার ছেলে দেখতে যেমন সুদর্শন তেমনি অনেক ভালো একটা ছেলে।তাইতো কবুল বলার পর তােমার মুখে একগাল হাসি ছিলো। আর আমার ছেলে কিছু চায়নি বলে তোমাদের বাসা থেকে কিছুই দিলো না।
রুমি মনে মনে আহত হলো।কিন্তু আবীরের মাকে বুঝতে না দিয়ে বললো,
—-আমি নিতে চাইনি। তবে আমার বিয়েতে গিফট হিসেবে একটা খাট আলমারি আর ড্রেসিং টেবিল দেওয়া হয়েছে। আমার চাচারা দিয়েছে। আজকে মা পাঠিয়ে দিবে।
সাথে সাথে আবীরের মার গলার স্বর বদলে গেলো।
আবীরের মা বললো,
—-আমি তো জানি,তোমাদের পরিবার অনেক ভদ্রপরিবার।
রুমি শ্বশুর বাড়িতে ঢোকার পর থেকেই এবাড়ির মানুষের আচরণে বারবার আহত হতে লাগলো। তাই শাশুড়ীকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুমে চলে আসলো।
লাঞ্চের পরপর রুমিদের বাসা থেকে ফার্নিচার গুলো চলে আসলো। আবীরের বাসার সবার মুখে হাসি ধরে না।
আবীরের মামারা চারজন আর মা খালা দুবোন। ওর ছোটো মামা বিশেষ কারনে বিয়েতে যেতে পারেনি।তাই মামা মামীকে নিয়ে ঐ সময় রুমির সাথে দেখা করতে ওদের বাসায় আসলো। আবীরের মা গর্ব করে বললো,
—-তোমরা সবাই বলেছিলে আবীরকে নাকি কেউ মেয়ে দিবে না। দেখেছো আমি ঠিক আমার আবীরের জন্য বউ নিয়ে এসেছি।

আবীরের মামা মামীর মুখটা কালো হয়ে গেলো।কৌশলে আবীরের মা রুমিকে চা বানাতে কিচেনে পাঠিয়ে দিলো।কিচেন থেকে রুমি শুনতে পেলো,
আবীরের মামা আবীরের মাকে বলছে,
—-বুবু তুমি জেদের বশবর্তী হয়ে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করলে।
আবীরের মা বললো,
—-ওরা স্বেচ্ছায় ওদের মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিয়েছে।
আবীরের মামা বললো,
—-ওরা তো আবীরের বিষয়টা জানে না।
আবীরের মা রেগে গিয়ে বললো,
—-আমার সংসারের শান্তি নষ্ট না করে চা খেয়ে এখান থেকে বিদেয় হও।

চলবে

#ধারাবাহিকগল্প
#বৃহন্নলার ডিভোর্স
পর্ব-তিন
মাহাবুবা বিথী

জীবনের অনুষঙ্গ নিয়ে নাটক সিনেমা তৈরী হয়।কিন্তু কখনও জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নাটক সিনেমাকে হার মানিয়ে যায়।
পাড়াপ্রতিবেশী দুঃসম্পর্কে আত্মীয়স্বজন বউ দেখতে এসে আবীরের মাকে বলে,
—–আপা তোমার হ্যাংলা শুকনা পটকা ছেলের জন্য
নাদুস নুদুস ফর্সা বউ পেয়েছো। তোমার বুবু বউ ভাগ্য কপাল।
এই কথা শুনে আবীরের মা সগৌরবে হাসে। এরমাঝে রুমির বিবাহিত জীবনের মাসখানিক সময় পার হয়ে যায়। রুমি বুঝে ফেলে তার স্বামী আবীর শারীরিকভাবে সক্ষম পুরুষ নন। সংসার হয়তো ওর একটা হবে তবে স্বামী বলে যা বুঝায় তা ওর কপালে নেই। রুমি ওকে বুঝানোর চেষ্টা করে ওর ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। আবীর রুমির কথা মানতে চায় না। এদিকে আবীরের মা রুমির উপর দিনদিন অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রুমিকে নিয়ে এসে আবীরের মা কৌশলে কাজের খালা বিদেয় করে দিয়ে রুমির উপর সংসারের সমস্ত কাজ চাপিয়ে দেয়। তারউপর সেদিন খাবার টেবিলে রুমিকে বলে,
—–তোমার মাতো বিয়ের দিন আমার ছেলেকে আস্ত খাসি দিতে পারেনি আর তুমিতো বহাল তবিয়তে গান্ডেপিন্ডে গিলছো। যাক তুমি তো আমার ছেলের বউ। তোমার হাতীর খোরাক তো আমার ছেলেকেই বহন করতে হবে। তবে এখন খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দাও। রুমি তোমারতো বয়সও বেশী। তারউপর তুমি বেশ মোটা। তোমার তলপেট ভারী।বাচ্চা হতে সমস্যা হবে। তাই তুমি শুধু সবজি দিয়ে ভাত খাবে। তোমার জন্য আপাতত মাছ বা মাংসের বরাদ্দ নেই। আর আবীরেরও বেশী মাছ মাংস খাওয়ার দরকার নেই। ও মোটা হয়ে যাবে।বরং সাব্বিরের দরকার। ওর অনেক পরিশ্রম হয়।
রুমি ওর শাশুড়ীকে বললো,
—-আপনার ছেলেরও খাওয়া উচিত।ও শারীরিক ভাবে দুর্বল।
অমনি আবীরের মা বলে উঠলো,
—-আমার ছেলের ভালমন্দ আমি বুঝে নিবো।তুমি আমাদের মা ছেলের মাঝখানে ঢুকবে না।
বিয়ের আগে দুর্বল ছিলো না। তোমার চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে আমার ছেলে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
রুমি অপমানে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করলো। একবার রুমির মনে হলো ওর মাকে বলে দেয়া উচিত আপনার ছেলেতো শারীরিকভাবে অক্ষম।আবার আবীরের কথা ভেবে ও নিজেকে সামলে নেয়।
রুমি অবাক হয়ে আমাকে বলে,
—-আপু আমি ভাবি ওনার ছেলের সমস্যা কি উনি জানেন না? নাকি জেনেও না জানার ভাণ করেন।হয়তো ধরেই নিয়েছেন ওনার ছেলে সুস্থ হবে না সুতরাং ওকে খাইয়ে লাভ নেই। শুধুই অন্নের ধ্বংস।

আবীরের মা ওকে খাওয়ার খোঁটা দিলো অথচ এই একমাসে রুমির ওজন পাঁচ কেজি কমে গেছে। ও আমাকে বললো,
—–আপু সকালে আমাকে দুটো রুটি সাথে সবজি আর এককাপ লাল চা, দুপুরে সবজি ডাল আর ভাতও ওনার মেপে দেওয়া। মোটার উছিলায় রাতেও দুটো রুটি আর অল্প একটু সবজি। এ বাড়িতে এটাই আমার বরাদ্দ।
আমি রুমিকে জিজ্ঞাসা করি,
—-আবীর জানতো না ওর মা যে তোমার উপর টর্চার করে।
রুমি বললো,
—-ও কেমন যেন রোবটের মতো ছিলো। সময় মতো খাওয়া অফিসে যাওয়া আর ঘুমানো এই ওর কাজ ছিলো। সংসারের কোনদিকে ওর খেয়াল ছিলো না।
আমি রুমিকে বললাম,
—-তোমার স্বামী যে শারীরিকভাবে সক্ষম নয় এটা তুমি তোমার মাকে জানাওনি?
রুমি বললো,
—-আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।মা আমাকে চারভরি গয়না ছেলের পোশাক আংটি ঘড়ি খাওয়া দাওয়া সব মিলিয়ে আমার বিয়েতে দশলক্ষ টাকা খরচ করেছেন। অনেক ধার দেনা করে মা টাকাটা যোগাড় করেছেন। এখন এই বিষয়টা মাকে জানালে মা অনেক আপসেট হয়ে পড়বে। মার প্রেসার ও কিডনির সমস্যা আছে। কিছুদিন আগে বাবাকে হারিয়েছি। মা ছাড়া আমাদের কেউ নাই। এসব কারনে মাকে জানানো হয়নি। মা জানত, আমি অনেক সুখে আছি। আমিও মুখ বুজে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
আমি রুমিকে বললাম,
—-তোমার শাশুড়ীর এসব আচরণে তোমার স্বামী শ্বশুর কেউ প্রতিবাদ করতো না?
রুমি বললো,
—-আবীরতো আমাকে আগেই বলেছে ও কোনদিন ওর মার মুখের উপর কথা বলতে পারবে না। আর শ্বশুরও কিছু বলতে পারতো না কারণ এই ফ্লাটটা আমার নানা শ্বশুর আমার শাশুড়ীকে দিয়েছে। তাই শ্বশুর কিছু বললে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতো। আমার শাশুড়ী কোনদিন ওনার ছেলেদের দিয়ে কোন কাজ করাননি। বাজার করা,বিল দেওয়া,কাপড় ইস্ত্রি সংসারের এ ধরনের কাজগুলো আমার শ্বশুর করতো। আমি ঘরের যাবতীয় কাজগুলো করতাম। এমনকি ওনার হুকুম ছাড়া আমি ফ্যানও ছাড়তে পারতাম না।
আমি মনে মনে ভাবি,
এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ সমাজে ভদ্রতার মুখোশ পড়ে বেড়ায়।কিন্তু সময়ের আবর্তে তাদের বিকৃত মানসিকতার চেহারা উম্মোচিত হয়।এই ঘুণে ধরা সমাজে নারীর উপর অত্যাচার আজও হয়ে যাচ্ছে। যতই আমরা নারী জাগরণ কিংবা নারী স্বাধীনতা বলে চিৎকার করিনা কেন প্রতিটি ঘরে কান পাতলে নারীর অত্যাচারের হাহাকার শোনা যায়। এক্ষেত্রে অনেক সময় নারীরাই নারীদেরকে অত্যাচার করে।
কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত কিছু মেয়ে উশৃঙ্খল জীবন যাপন করে তাদের সংখ্যা নেহায়েৎ খুব কম।

এই উপমহাদেশে মেয়েরা বিয়ে করে না তাদেরকে বিয়ে দেওয়া হয়।অনেক বাবা মাই মেয়ে স্বাবলম্বী করতে যতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত তার থেকে বিয়ে দেওয়াটা বেশী গুরুত্ব মনে করে।
রুমিকে দেখে আমার খুব মায়া হয়।সারাদিন সংসারে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে আবার শারীরিক যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়ে রাতটুকু পার হয়ে যায়।প্রকৃতিগত ভাবে নারী পুরুষ উভয়ের শারীরিক চাহিদা থাকে। সেক্ষেত্রে নারীরা তার ভরা যৌবনের লাগাম টেনে রাখতে পারে।
আমি রুমিকে জিজ্ঞাসা করলাম,
—-তুমি কখনও আবীরের এই সমস্যার কথা তোমার শাশুড়ীকে জানাওনি?
রুমি বললো,
—-না আমার ওনাকে বলার সাহস হয়নি।তবে আকার ইঙ্গিতে আবীরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।আমার ধারণা ছিলো আবীর যদি ডাক্তার দেখাতে রাজি হয় তাহলে শাশুড়ীকে জানানোর দরকার নাই। শাশুড়ী জানলে এতে শুধু অশান্তি বাড়বে বই কমবে না। এর মাঝে আমার পিরিয়ড হলো। আমার পিরিয়ডের কথা শুনে শাশুড়ী আমার মাকে ফোন দিয়ে বললেন,
—–আপনার মেয়ের মনে হয় কোন সমস্যা আছে। ওতো কনসিভ করলো না।
আমার মা বললো,
—-কেবলতো ওদের বিয়ের একমাস হয়েছে।বাচ্চা হওয়ার সময়তো ফুরিয়ে যাচ্ছে না।
শাশুড়ী বললো,
—-আপনার মেয়ের তলপেট বেশ ভারী। বিচার বিবেচনা না করে আমার ছেলেকে চটজলদি বিয়ে দেওয়াটা ঠিক হলো না। যাক যা হবার তাতো হয়ে গেছে।দেখি নাতির মুখ দেখার ভাগ্য আমার কপালে আছে কিনা কে জানে।বেয়াইন ফোনটা রাখলাম।
আমি রুমিকে বললাম,
—-উনি যদি উনার ছেলের ত্রুটি গোপন করে তোমার সাথে বিয়ে দেয় তাহলে উনি তো একটা ক্রাইম করেছেন। তুমি যদি মেডিকেল রিপোর্ট যোগাড় করতে পারতে তাহলে উনার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতো।
রুমি বললো,
—-আপু আমার অত কিছুর দরকার ছিলো না।শুধু আবীরের কাছে ভালবাসা চেয়েছিলাম। যে ভালবাসা শুধু শরীর ছোঁয় সে ভালবাসা নয়। সেই ভালবাসাই চেয়েছিলাম যা শরীরকে ছাড়িয়ে আত্মাকে ছুঁয়ে দেয়। আমাদের যদি বাচ্চা না হতো একটা বাচ্চা দত্তক নিতাম। সাব্বিরের বিয়ে দিলেই তো ওর বাচ্চা হতো। ওই বাচ্চাই এদের নাতির সাধ মিটাতো। শুধু একটু ভালবাসার জন্য মুখ বুঝে সবটা সহ্য করতে চেয়েছি কিন্তু শেষটা আর রক্ষা করতে পারলাম না।উগড়ে দিলাম।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here