বৃহন্নলার ডিভোর্স পর্ব-চার,পাঁচ

0
378

#ধারাবাহিকগল্প
#বৃহন্নলার ডিভোর্স
পর্ব-চার,পাঁচ
মাহাবুবা বিথী
চার

রুমির ঠিক মতো খাওয়া বিশ্রাম না হওয়ায় একদিন মাথা ঘুরে পড়ে গেলো। ওই দিন ছুটির দিন। আবীর বাসায় ছিলো।রুমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।সেন্স আসার পর আবীরের মা আবীরকে বললো,
—ওকে বাপের বাড়ি রেখে আয়। ওর অসুখের পিছনে টাকা খরচ করার মতো সস্তা টাকা আমার নেই।
আবীরও মার কথামতো রুমিকে রেডী হতে বললো। ওদের অবহেলায় রুমির খুব কান্না পাচ্ছিলো। রুমি আবীরের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,এই কিনা ওর স্বামী। সারাটা জীবন এর সাথে রুমি কিভাবে কাটাবে? এই ভাবনায় রুমি শিউরে উঠলো। অগত্যা
আবীরের সাথে রুমি ওর বাপের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।
রুমি আমাকে বললো,
—আপু মানুষ যে এতটা নীচ হতে পারে তা আমার শাশুড়ীকে না দেখলে আমি বুঝতে পারতাম না। আমি সেটেল ম্যারেজে করতে চেয়েছিলাম।কারণ আমার অনেক বান্ধবীকে দেখেছি বিয়ের আগের প্রেমিক বিয়ের পরে তথাকথিত স্বামী হয়ে যায় নয়ত ভিলেন হয়। প্রেমিক আর কেউ থাকে না।তাই আমি বিয়ের পরে প্রেম করতে চেয়েছিলাম।অথচ আমার কপালে এই লেখা ছিলো।
—আপু আমি জীবনের এই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে বুঝেছি,পৃথিবীতে ভালভাবে বাঁচতে গেলে স্বামীর ভালবাসা নয়, আর্থিক স্বাধীনতা বড় বেশী প্রয়োজন।কারণ বিপদে পড়লে ভালবাসা নয় টাকার দরকার সবচেয়ে বেশী হয়।
মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকে গেলে ভীষণরকম কষ্ট অনুভব হয় আর নিজেকে বোকা নির্বোধ মনে হয়।

আমি ওর কষ্টগুলিকে হালকা করার জন্য বললাম,
—-তুমি বিষয়টা এভাবে না দেখে অন্যভাবেও দেখতে পারো। ওরা আসলে তোমার যোগ্য ছিলো না তাই তোমাকে মুল্যায়ন করার মতো সামর্থ ওদের নাই।

তারপর আবীর রুমিকে মায়ের কাছে নিয়ে যায়। রুমির মা রুমিকে দেখে চমকে উঠে বলে,
—-তোর শরীর এতো শুকিয়ে গেছে কেন?
রুমি কিছু বলার আগেই আবীর বলে,
—-আম্মা রুমি ইদানিং ডায়েট শুরু করেছে
রুমি মাকে আর কিছু বলেনি। কারণ মাকে ওর জীবনের কষ্টের কথাগুলো জানাতে চায়নি।
সেদিন দুপুরে মায়ের কাছে রুমি আর আবীর লাঞ্চ করে। হঠাৎ যাওয়াতে আয়োজনটা সাদামাটা ছিলো। ওর মা বাজার করার সময় পায়নি। মুরগীর মাংস সবজি ডাল ইলিশ মাছ ভাজি এই দিয়ে রুমি আর আবীর দুপুরের লাঞ্চটা করে নেয়। রুমির মা এতোদিন পর মেয়ে জামাইকে কাছে পেয়ে খুব খুশী হয়ে ছিলো।রুমির মা আবীরকে বলে,
—বাবা আবীর, আজকের রাতটা থেকে যাও। তুমি এতোদিন পরে আসলে রাতে একটু পোলাও রান্না করবো।
আবীর বললো,
—-মার কাছে অনুমতি নেওয়া হয়নি।
রুমির মা বললো,
—-ফোন করে বলে দাও যে তুমি আজ রাতটা এখানেই থাকবে।
আবীর বললো,
—-সেটা সম্ভব নয়।
রুমি ওর মাকে বললো,
—ও যখন থাকতে চাইছে না তুমি ওকে জোর করো না। কেন আমি আসলাম এতে তুমি খুশী না।
আবীর সেদিন চলে গেলো। রুমিকে পেয়ে ওর মা বোন অনেক খুশী। রুমির মা ওকে বললো,
—-হ্যারে রুমি, তোকে কে বেশী আদর করে। তোর শ্বশুর না শাশুড়ী।
রুমিও মনের দুঃখ মনে চেপে বলে,
—-দুজনেই আমাকে খুব আদর করে।
মা রুমিকে বলে,
—-আর আবীর তোকে যত্ন নেয়।
রুমিও মাকে বলে
—-ও একটু মা ভক্ত ছেলে। তবে আমার খুব খেয়াল রাখে। ডায়েট করি বলে আমার উপর মাঝে মাঝে রেগে যায়।
রুম্মান রুমিকে বলে,
—-আপু তুই আমাদের কাছে কোনকিছু লুকোচ্ছিস নাতো?
রুমির মা রেগে গিয়ে বলে,
—-দেখ রুম্মান, কোন অলুক্ষণে কথা বলিস না।
ওতো নিজ মুখেই বলছে ও খুব ভাল আছে।
রুমির মা রুমিকে আবারো জিজ্ঞাসা করলো,
—–হ্যারে রুমি তোর ব্যাকপেইনের সমস্যাটা আছে। তোর শাশুড়ী তো বেশ শক্ত সামর্থ। তোকে মনে হয় খুব বেশী কাজ করতে হয় না।
রুমি বলে,
—-হ্যা,শাশুড়ী আমাকে খুব বেশী কাজ করতে দেন না।
আসলে সত্যিটা রুমি মাকে বলতে পারলো না। শ্বশুর বাড়িতে ঘর মোছা বাথরুম ধোয়া থেকে শুরু করে সবকাজই ওকে করতে হয়। আর রাতে সারাশরীরে ব্যাথায় ছটফট করে কেটে যায়। ওর বিয়ে নিয়ে ওর মায়ের এখনও আত্মীয় স্বজনের কাছে লোন রয়েছে। কবে যে শোধ হবে ও জানে না। আর এক বিয়ে নিয়ে মিডিয়া সেন্টার থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজন সবার কাছে এতো কথা শুনতে হয়েছে, নানা রকম অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে যে ও নিজেই চাচ্ছিলো একটু মানিয়ে নিতে। আর পাশাপাশি চাকরির চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছিলো।
মিরপুর এক নাম্বারে একটু গলির ভিতরে জোনাকী রোডে তিনকাঠা জমির উপরে রুমিদের একতলা বাড়ি। বিয়ের আগে রুমি আর রুম্মান একরুমেই থাকতো। আজ তিনমাস পর দুইবোন একসাথে শুয়েছে। রুম্মানের রুমিকে দেখে কেমন সন্দেহ হয়।
রুম্মান রুমিকে জিজ্ঞাসা করে,
—-আপু তুই সুখীতো?
রুমিও কথা ঘুরিয়ে উত্তর দেয়,
—-রুম্মান সুখ কাকে বলে জানিস? জানিস না। কারণ সুখ আপেক্ষিক।কোটি টাকার মাঝেও সুখের সন্ধান পাওয়া যায় না আবার অভাবের সংসারে সুখের নিবাস গড়ে তোলা যায়। অনেকে বলে ত্যাগের মাঝে কোন সুখ নেই। কেউ আবার ত্যাগের মাঝে পরিপূর্ণ সুখ খুঁজে পায় যদি ভালবাসার সঠিক মানুষটাকে সঙ্গে পায়। আমার কথা থাক। এখন তোর কথা বল। খুব ভালকরে লেখাপড়া কর। তুই তো এখন থার্ডইয়ারে। ইন্জিনিয়ারিং পাশ করে বের হতে আর এক বছর লাগবে। চাকরি পেয়ে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর বিয়ে করবি।
রুমি একসময় বুঝতে পারে রুম্মান ঘুমিয়ে পড়েছে। বিয়ের পর থেকেই রুমির চোখের ঘুম হারিয়ে গেছে।

রুমি ভাবছে যে জায়গাটা নিজের নয় সেখানে জোর করে থাকতে গেলে নিজেকেই ছোটো করতে হয়। ওর এই জীবন থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাবে ও কোনকিছু বুঝে উঠতে পারছে না। এই কয়দিনে ও এইটুকু বুঝে গেছে আবীরের ভালবাসা ওর কপালে জুটবে না। ভালবাসা এমন একটা অনুভব সবসময় ওর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। আবীর আসলে একটা মেরুদন্ডহীন প্রাণী।

আধোঘুম আধো জাগরণে কোনরকমে রাতটা পার করে রুমি। রুমির মা ও রুম্মান দুজনেই খেয়াল করে রুমি কেন যেন সারাদিন আনমনা হয়ে থাকে। গভীর ভাবনায় ডুবে থাকে। তাই রুম্মান মাকে বলে,
—-আম্মু জারার আম্মু বলছিলো আপুকে নিয়ে ওদের বাসায় বেড়াতে যেতে। জারা মেসেজ পাঠিয়েছে।
রুমির মা অমত করে না। রুম্মান রুমিকে নিয়ে বিকালে জারাদের বাসায় বেড়াতে যায়।
জারা হচ্ছে রুম্মানের স্কুল ফ্রেন্ড।ওদের দুই পরিবারের বেশ আসা যাওয়া ছিলো। জারার আম্মুর ইচ্ছা ছিলো ওনার ছেলের বউ করে রুমিকে ঘরে তুলবে। জারার ভাই ইন্টার কমপ্লিট করে জার্মানিতে পড়তে চলে যায়। জারাদের আর্থিক অবস্থা রুমিদের থেকে অনেক ভাল। এই কারনে রুমির মার একটু অমত ছিলো। ওদিকে জারার ভাই এক বিদেশীনিকে বিয়ে করে। যার ফলে দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠল না।
রুম্মান রুমিকে নিয়ে জারাদের বাসায় পৌঁছে যায়। জারার মা রুমিকে দেখে অনেক খুশী হয়। অবাক হয়ে রুমিকে জিজ্ঞাসা করে,
—–তুমি এতো শুকিয়েছ কেন?
রুমি বলে,
—ডায়েট করছি তো তাই একটু শুকিয়েছি।
জারার মা বলে,
—-বেশী ডায়েট করোনা অসুস্থ হয়ে যাবে। সাংসারিক কিছু কথা বলে জারার মা ওদের গল্প করতে বলে কিচেনে চলে যায়।
জারার ভাই রায়হান ও কদিন আগে আমেরিকা থেকে ছুটিতে বাংলাদেশে এসেছে। ওদের দুই পরিবারের আগেই জানাশোনা ছিলো। এতোদিন পর রুমিকে দেখে রায়হান চোখ ফেরাতে পারে না। রায়হান ভাবে মেয়েটার এতো সৌন্দর্যের মাঝেও কোথায় যেন বেদনার ছায়া লুকিয়ে আছে। রুমিরও রায়হানকে আগেও ভাল লাগতো এখনও ভাল লাগে। ওরা দুজনে বেশ আড্ডা দেয়। তারপর খাবার টেবিলে জারাদের বাসায় পাস্তা খেতে গিয়ে রুমি হঠাৎ বিষম খায়। রায়হান চটজলদি গ্লাসে পানি এগিয়ে দেয়। রুমির খুব ভাল লাগে। অথচ আবীরের কাছ থেকে এই সামান্য কেয়ারিং টুকু ও কখনও পায়নি। যাক অনেকদিন পর রুমি খুব সুন্দর একটা সময় পার করে।
ওদিকে আবীরের মা সাতদিন ধরে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠে। বিনা বেতনে পাওয়া কাজের মেয়ে হাতছাড়া করতে উনারও মন চায় না। বসে থেকে কুটকচাল করে সময় কাটাতে উনার ভালই লাগে। অতঃপর রুমির মাকে ফোন দেয়।
—–হ্যালো বেয়াইন কেমন আছেন। আমার রুমি মা কেমন আছে। আপনার বেয়াইতো ওকে চোখে হারায়। আমারও ঘর খালি খালি লাগে। ওকে এখন পাঠিয়ে দিলে হয় না।
রুমির মা আনন্দে গদগদ হয়। মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে এতো আদর পায়। খুশীতে আবীরের মাকে বলে,
—-ওতো এখন আপনাদের বাড়ির মেয়ে। আপনি যখন বলছেন দুএকদিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দিবো।

রুমি আর রুম্মান আনন্দের আতিশয্যে বাড়ি ফিরে আসে। এমন সময় রুমির মা রুমিকে বলে,
—-তোর শাশুড়ী ফোন দিয়েছিল। মারে তোকে ওরা খুব ভালবাসে। তাই আর থাকতে পারছে না। তোকে যেতে বলেছে।
মায়ের কথা শুনে রুমির পূর্নিমার আলোর মতো ঝলকানো চেহারাটা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেলো।

চলবে

#ধারাবাহিকগল্প
#বৃহন্নলার ডিভোর্স
পর্ব-পাঁচ
মাহাবুবা বিথী

রুমির শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার কথা শুনে রুম্মানেরও মন খারাপ হয়ে গেলো। এই কয়দিন আপুর সাথে খুব সুন্দর সময় কেটেছে। বাড়িটা আবার খালি হয়ে যাবে। রুম্মান ভেবেছিলো, আসিফের কথাটা এবার আপুকে জানিয়ে দিবে আর ওর সাথে পরিচয়টাও করিয়ে দিবে। ওদের পাশ করে বের হতে আর বছর খানিক লাগবে। আসিফ বলেছিলো,পাশ করার সাথে সাথে বিয়ে করে ফেলবে।
এদিকে রুমির মা একটা জিনিস খেয়াল করলেন।আবীর এই কয়দিনে রুমিকে ফোন দেয়নি। ওদের নতুন বিয়ে হয়েছে দিনের মধ্যে কতবার ফোন দেওয়ার কথা। উনার টেনশন হচ্ছে। অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন সব ঠিক আছেতো।
আবীরকে তো ফোন দিতে দেখলাম না।
উনি রুমিকে জিজ্ঞাসা করলেন,
—-রুমি তোর সাথে কি আবীরের ঝগড়া হয়েছে?
রুমি বলে,
—-কেন মা?
ওর মা বলে,
—ওকে তো ফোন দিতে দেখলাম না।
রুমি বলে,
—মেসেঞ্জারে কথা হয় তাই ফোন দেয় না।
রুমির মা নিশ্চিন্ত হয়।আসলে উনার পরিবারে মাথার উপরে ছাদ নাই তাই খুব চিন্তা হয়। রুমির মা রুমিকে বললো,
—আজতো ছুটির দিন।শুক্রবার। আবীরতো বাসায় আছে। ওকে আসতে বল।দুপুরে খেয়ে তোকে নিয়ে যাবে।
রুমি জানে,আবীর আসবে না তাই মাকে বলে,
—-মা,ওর অনেক ব্যস্ততা আছে।আমি একাই চলে যাবো। আর ওকে ডাকলে তোমাকে আবার বাজারে যেতে হবে, রান্নাও করতে হবে। তোমার শরীরের উপর অনেক চাপ যাবে। এসব ঝামেলার দরকার নেই। মা তোমাকে সুস্থ থাকতে হবে।তুমি ছাড়া আমাদের তো কেউ নাই।
রুমির মা আর কথা বাড়ালেন না। কিন্তু মনের মাঝে একটা অস্বস্তি রয়ে গেলো।
যাইহোক প্রচন্ড মনখারাপ নিয়ে রুমি বিকালের দিকে রুম্মানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে রওয়ানা হলো।
রুম্মান রুমিকে বলে,
—-আপু আর কটাদিন থেকে গেলে পারতে।
রুমি বলে,
—-কটা দিন না আমি চিরজীবন তোদের সাথে থাকতে চাই।
রুম্মান বলে,
—-আপু তোমার কি মন বেশী খারাপ?
রুমি নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
—- আমার মন নিয়ে তোকে গবেষণা করতে হবে না। আমি এই কয়দিন খেয়াল করেছি তোর মোবাইলে টুংটাং করে সারারাত মেসেজ আসে। আমি পাশে শুয়ে থাকি বলে হয়ত তুই রিপ্লাই দিস না। তবে নিজের অভিজ্ঞতায় বলি আগে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করবি তারপর বিয়ের কথা ভাববি। বিয়ের আগে সবার চোখে একটা রঙ্গিন জীবনের ঠুলী পড়ানো থাকে। কিন্তু বিয়ের পর হঠাৎ ধেয়ে আসা সাইক্লোনে ওই ঠুলী উড়ে যায়। মানুষ তখন চরম বাস্তবতার জালে আটকা পড়ে ছটফট করে। আর সেখান থেকে উদ্ধার হতে অর্থের প্রয়োজন হয়। আর অর্থ থাকলে জীবনটাও অনেক সুন্দর হয়। অর্থ দিয়ে অবস্থার প্রেক্ষিতে অনেক সময় ভালবাসাও কেনা যায়।
রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকে। মাগরিবের সময় পার হয়ে যায়।
রুমিকে ওর শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে রুম্মানও তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যায়। রুমিও রুম্মানকে বাসায় আসার জন্য জোর করেনি। রুমি জানে, ওকে আজ হয়ত অনেক কিছুর মুখেমুখি হতে হবে তাই এইসব নোংরা মূহুর্তগুলো রুম্মানের সামনে রুমি প্রকাশ করতে চায় না।
তবে আজ নিজের মনকে শক্ত করে লড়াই করার মানসিকতা নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসেছে। কারণ মানুষ শক্তের ভক্ত নরমের যম। ও সহ্য করে বলে দিন দিন ওরা অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। আর ওরা ভেবে নিয়েছে রুমিকে যতটা কষ্ট দিবে ও ততটাই সহ্য করে নিবে। এতে শুধু ওর নিজের অবমুল্যায়ন হয়েছে। তাই এখন থেকে ওর উপর কোন অন্যায় ও আর সহ্য করবে না।
রুমি ডোর বেলটা বাজালো।ওর শাশুড়ী দরজা খুলে বললো,
—–নবাবজাদীর আসার তাহলে সময় হয়েছে। তা বাপের বাড়ি থেকে খালি হাতে আসা হয়েছে।
রুমি বলে,
—আপনার ছেলেই বা কোথাকার রাজপুত্তুর যে তারজন্য আমার নজরানা আনতে হবে।
ওর শাশুড়ী চিৎকার দিয়ে আবীরকে ডেকে বলে,
—-দেখ বোবার মুখে কথা ফুটেছে। মুখে মুখে কেমন তর্ক করছে।
আবীর বলে,
—–যেমন মা তার তেমন মেয়ে।
রুমি আবীরের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে,
—-আমার মাকে এখানে টেনে আনবে না। কারণ আমার মাকে যদি তুমি অপমান কর তাহলে তোমার মাকে অপমান করতে আমি এক মূহুর্ত ভাববো না।
আবীর বলে,
—-কেন বলব না। তোমার মা যখন আমাকে অসম্মান করলো তখন তোমার মুখ দিয়ে কথা বের হলো না।
রুমি বলে,
—-অসম্ভব, আমার মা তোমাকে কোন অপমান করেনি। এমন মিথ্যা কথা বলো না।আল্লাহপাক নারাজ হবেন।
আবীর বলে,
—- নতুন জামাই আসলে তাকে সমাদর করে খাওয়াতে হয়। তোমার মাতো সেটা করেনি। তখন আমি অপমানিত হইনি।
রুমি বলে,
—-মা তোমাকে থাকতে বলেছিলো। তুমি রাজি হওনি। শুধু শুধু মাকে দোষারোপ করবে না।
আবীর বললো,
—-ঘুরে এসে সবার সাথে বরং ভাল ব্যবহার করবে সেটা না করে তুমি স্বেচ্ছাচারিতা করছো।
রুমি বলে,
—-প্রতিবাদ করাটাকে যদি তোমাদের কাছে স্বেচ্ছাচারিতা মনে হয় তবে আমি তাই করছি। কারণ তোমাদের অত্যাচারে আমার পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে। আমি যত সহ্য করেছি তোমাদের অত্যাচারের মাত্রা ততই বেড়ে গিয়েছে। এখন ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করা ছাড়া আমার কাছে আর কোন অপশন নেই। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে প্রতিটা মানুষের স্বেচ্ছাচারিতা করার অধিকার রয়েছে।
এমন সময় রুমির শ্বশুর বলে,
—ওর মা একটা কয়েনবাজ মহিলা। ছলচাতুরী করে একটা বাঁজা মেয়েকে তোর গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। ওদের নাকি টাকা নেই। যার ছেলে বিদেশে থাকে তার আবার টাকার অভাব হয়।
রুমি অবাক হয়ে ভাবে,শাশুড়ী এই কয়দিনে শ্বশুরের মাথা ভালই ওয়াশ করেছে। রুমিও তাই কথায় ঝাঁঝ মেখে বলে,
—-কে আসলে সত্যিকারের বাঁজা ডাক্তারের কাছে পরীক্ষা করলে জানা যাবে। চলেন আমি এখুনি ডাক্তারের কাছে যাবো। আর আপনারা আপনার ছেলের অসুস্থতা লুকিয়ে বিয়ে দিয়ে আমার সাথে ক্রাইম করেছেন।
ওর কথা শুনে আবীরের মার অবস্থা এমন হলো যেন জোঁকের মুখে চুন পড়লো। পুরো পল্টি খেলো আবীরের মা।তারপর
আবীরের বাবাকে বললো,
—-তুমি এভাবে আমার বৌমাকে অপমান করতে পারো না। ওর বয়স কম। রক্ত গরম তাই একটু উল্টা পাল্টা বলে ফেলেছে। কিন্তু ও আমার ঘরের লক্ষী। ওর অসম্মান মানে আমার অসম্মান। যাও বৌমা ফ্রেস হয়ে একটু চা বানাও।
রুমি খেয়াল করলো,
—-আবীরের লম্ফ জম্ফ ও হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো।
রুমিরও মনটা একটু খারাপ হলো। ও ভাবছে ও হয়ত একটু বেশীই বলে ফেলেছে। আবীর হয়ত ওর কথায় কষ্ট পেয়েছে।
রুমি ফ্রেস হয়ে কিচেনে গিয়ে সবার জন্য চা বানালো। এমন সময় সাব্বির অফিস থেকে চলে আসলো।রুমি সাব্বিরকে চা খেতে ডাকলো। কিন্তু সাব্বির সাড়া না দেওয়ায় ও চা নিয়ে সাব্বিরের রুমের দিকে যাচ্ছিলো। এমন সময় আবীরের মা বললো,
—- আমাকে দাও আমি চা টা সাব্বিরের রুমে দিয়ে আসি।
রুমি বুঝতে পারলো না সাব্বির কেন ওকে এড়িয়ে চলছে?

রুমি আমাকে বললো,

—–আপু জানেন এই পৃথিবীতে আসলে মুখোশধারী মানুষদের চেনা খুব মুশকিল। কারণ এরা গিরগিটির মতো প্রতিমূহুর্তে রং বদলায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here