বেদনার_রঙ_নীল,২৮,২৯

0
351

#বেদনার_রঙ_নীল,২৮,২৯
আঠাশতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz

রাইফা খুব দ্রুত মেঝে থেকে উঠে বিছানায় বসে গেল। কোলবালিশ জায়গামতো রেখে চুল আর গায়ের কাপর সব ঠিক করতে উঠে-পরে লাগল। এমনভাবে থাকতে হবে যেন তাকে দেখে বোঝা না যায় যে সে ঘুমিয়ে ছিল।

রিসব ভেতরে ঢুকে রাইফাকে দেখে যারপরনাই বিস্মিত হলো।

” আরে, তুমি এখানে কি করছো?”

রাইফা আমতা-আমতা করতে লাগল। কত সাহস নিয়ে এসেছিল সে এখানে। ভেবেছিল ওরনাটা রিসবের মুখের সামনে ধরে চনমনে কণ্ঠে প্রশ্ন করবে,” এই মিস্টার রুড, আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাই না? খবরদার মিথ্যা বলবেন না! ভালো না বাসলে আমার ওরনা আপনার আলমারিতে কি করে?”

কিন্তু রিসব সামনে এসে দাঁড়ানোর পর রাইফা উপলব্ধি করেছে যে সে এসব কিছুই বলতে পারবে না৷ কারণ তার এতো সাহস নেই। এই মানুষটির সামনে এলেই সব স্বাভাবিক ব্যাপার অস্বাভাবিক হয়ে যায়। রাইফা আর নিজের মধ্যে থাকে না। লজ্জাবতীর গাছের মতো লুটিয়ে পড়ে অচিরেই।

রিসব এখনও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়। রাইফা বসা থেকে উঠে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে অকপটে মিথ্যা বলল,” মিষ্টি আপুর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। বাসায় শান আর তার বন্ধুরা ছাড়া কেউ ছিল না৷ তাই আমি এখানে অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…”

কথা শেষ করে রাইফা হাসার চেষ্টা করল। রিসব তার হাসিতে তাল মিলালো না। গম্ভীরমুখে এগিয়ে গেল আলমারির দিকে। তার কাঁধে ঝুলছিল ব্যাডমিন্টনের ব্যাট। সে এগুলো আলমারিতে তুলে রাখছে। তারপর তোয়ালে বের করল। রাইফার দিকে চেয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,” তুমি কি আমাকে কিছু বলবে?”

অন্য সময় হলে রাইফা বলতে পারতো। কিন্তু এই মুহূর্তে রিসবের মেজাজ ঠিক লাগছে না। তাই ভালোবাসা বাসির বিষয়ে কথা বলার প্রশ্নই আসে না৷ রাইফা খুব ইতস্ততবোধ করছিল। রিসব তার উত্তরের অপেক্ষাও করল না। সে গোসলের উদ্দেশ্যে বাথরুমে ঢুকে যেতে নিলেই রাইফা শ্বাস আটকে বলল,” আপনি কি আমার উপর এখনও রেগে আছেন?”

প্রশ্নটা শুনে রিসব থামল। রাইফার বুকে তখন সে কি তোলপাড়! ধুপধাপ কিছু ছুটে চলার আওয়াজ হচ্ছে। রিসব পেছনে তাকিয়ে বলল,” অপেক্ষা করো। এসে কথা বলবো।”

তারপর সে বাথরুমের দরজাটা আটকে দিল। রাইফা মুখে হাত চেপে ধপ করে বসে পড়ল বিছানায়। এক ঘণ্টা ধরে দৌড়ালেও হার্টবীট এতো দ্রুত হবে না। যতটা দ্রুত এখন হচ্ছে! রাইফা নিজেকে ধাতস্থ করতেই পারছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত না রিসব বাথরুম থেকে বের হচ্ছে ততক্ষণ রাইফার এই হার্টবীটের উর্ধগতি কমবে বলে মনে হয় না।

___________

তুলির মেজাজ তিরিক্ষ রূপ ধারণ করল। কিছুটা শব্দ করেই বলল,” থামবেন আপনি? এটা হাসির কোনো কথা না।”

প্রণয় মুখে হাত দিয়ে নিশ্চুপ হলো। তুলি অন্যদিকে চেয়ে কিছু একটা বলতে নিলেই খেয়াল করল প্রণয় এখনও মুখে হাত রেখে চাপা শব্দে হাসছে। তুলি রেগে তাকালেই সেই হাসির মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেল। উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে তুলি কপালে হাত ঠেঁকিয়ে হতাশ ভঙ্গিতে বলল,” আপনার সমস্যা কি? কেন এতো হাসছেন?”

প্রণয় অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে জবাব দিল,” মার খাওয়ার সময় প্রিয়ন্তীর অবস্থা কল্পনা করেই আমার হাসি পাচ্ছে। শোনো তুলি, প্রিয়ু যদি মেয়ে না হয়ে বাই চান্স ছেলে হতো তাহলে অনেক আগেই ওকে মেরে আমি হসপিটালে পাঠাতাম। কিন্তু সেই কাজটা তুমিই করে দিলে। ও মাই গড! আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। মানে সত্যি নাকি স্বপ্ন? আচ্ছা বেহুশ হলো কিভাবে ও? ক্লোরোফরম দিয়েছিলে নাকি?”

তুলি প্রণয়ের এইসব কথা শুনে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারল না। তারও হাসি পেয়ে যাচ্ছে। একটু পর তাদের হাসি কমে এলে তুলি বলল,” ক্লোরোফরম দেইনি। আমাদের প্ল্যান ছিল তাকে কয়েকটা চড় মেরে পালিয়ে যাবো। তারপর আলো নেভানো থাকবে তাই সে কিছু বুঝবে না। কিন্তু বেহুশ হয়ে যাবে এটা চিন্তাও করিনি।”

” এর মানে ও নিজেই বেহুশ হয়েছে?” প্রণয় বিস্মিত হলো এবং কিছুটা সিরিয়াস। তুলি অপরাধী কণ্ঠে বলল,” না, না, মার খেয়ে বেহুশ হয়নি। আমার মনে হয় ভয় পেয়েই বেহুশ হয়ে গেছিল। আর আমরা এতোটাও জোরে মারিনি যে একেবারে বেহুশ বানিয়ে ফেলবো। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল তাকে একটু ভয় দেখানো। একটু টাইট দেওয়া।”

প্রণয় আবার হেসে উঠল। তুলি মাথা নিচু করে বিরস কণ্ঠে বলল,” তারপর বাথরুম থেকে বের হয়েই রিসব ভাইয়ের কাছে ধরা পড়ে গেছি।”

” তাই? কিভাবে?”

” জানি না। উনি কোত্থেকে যে এলেন! রাইফা কি করেছিল শুনবেন? কেউ যেন আমাদের আইডেন্টিফাই করতে না পারে সেজন্য মাস্ক, সানগ্লাস, ওরনা, এসব কিনে ডাকাতের মতো সেজেছিল, মানে আমরা দু’জনেই সেজেছিলাম৷ কিন্তু বাথরুম থেকে বের হয়েই সে সব খুলে ফেলেছে। রিসব ভাইয়া তাকে দেখেই অবাক। পরে বিষয়টা আমরা কাটিয়ে দিয়েছিলাম। তাও রিসব ভাইয়া বুঝে ফেলেছেন। তারপর রাইফাকে আড়ালে মিয়ে জেরা করেছেন।”

” উমম..বোঝারই কথা! রাইফা কি কি করতে পারে তা সব রিসবের মুখস্ত।”

তুলি অবাক হয়ে বলল,” তাই?”

” হুম। রিসব রাইফাকে ভালো করেই চেনে।”

” আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলুন তো? রিসব ভাইয়া কি রাইফাকে ভালোবাসেন?”

প্রণয় দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল,” তুমি কেন জানতে চাও এটা?”

তুলি কাতর গলায় অনুরোধ জানাল,” প্লিজ বলুন! রাইফার জন্য আমার খুব টেনশন হয়।”

প্রণয় জবাব দেওয়ার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। দুষ্ট হাসি বজায় রেখে বলল,” বলতে পারি। কিন্তু এর আগে আমারও যে একটা প্রশ্নের উত্তর চাই!”

তুলির মুখ আরক্ত হলো। সে প্রণয়ের চোখ দেখেই আঁচ করতে পারছে যে প্রণয় কি জিজ্ঞেস করবে এখন! তুলি লাজুক গলায় বলল,” আপনি আবার কি প্রশ্নের উত্তর চান? আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।”

তুলি বিপরীত দিকে মাথা ঘুরালো। প্রণয় তার কাছে এসে হালকা গলায় বলল,” তোমার কাছে উত্তর আছে।”

তুলি চট করে এদিকে তাকাতেই প্রণয়ের গালের সাথে তার গাল ঘঁষা খেল। লজ্জায় পড়িমরি অবস্থা হলো তুলির। প্রণয় এতো কাছে চলে আসবে সে ভাবেনি। মানুষ দেখলে কি মনে করবে? দ্রুত উঠে দাঁড়ালো সে। সামনে এগোতে নিলেই প্রণয় হাত টেনে ধরল। তুলির মনে হলো কেউ তার কলিজা ধরেই টান মেরেছে যেন। সে হাত ছাড়ানোর জন্য অস্ফুট স্বরে বলল,” প্লিজ!”

প্রণয় তীব্র গলায় বলল,” আগে উত্তর।”

” আমি এভাবে বলতে চাই না।”

” তাহলে কিভাবে বলতে চাও?”

তুলি চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,” আপনার গাড়ি কোথায়? সেখানে চলুন।”

প্রণয় চোখ বড় করে তাকাল,” গাড়ির ভেতরে ঢুকে বলবে? মানে..”

প্রণয় আর কিছু বলার আগেই তুলি ঘুঁষি মারল তার পেটে। আৎকে উঠল প্রণয়। তুলি আছড়ে আছড়ে পা ফেলে চলে যেতে লাগল রাগী গতিতে। প্রণয় দৌড়ে তার পেছনে এসে বলল,” স্যরি, স্যরি, আই সুয়্যার আমি নেগেটিভ কিছু মিন করিনি। আচ্ছা চলো গাড়িতেই যাই।”

প্রণয় হাত ধরতে এলেই তুলি কড়া গলায় বলল,” খবরদার আমাকে ধরবেন না।”

প্রণয় কিছুটা তেজ নিয়ে বলল,” আচ্ছা, ধরবো না।” এই কথাটা বলেই সে দায়সারাভাবে সামনে হাঁটতে লাগল৷ তুলি মাথা মুড়িয়ে তার পেছন পেছন গেল।

____
বাড়িতে কেউ নেই। তন্বি শুধু একা। সূচি কলেজে গেছেন। আর রাইফা-তুলি কোচিং-এ। তন্বি বসে পড়াশুনা করছিল। আগামীকালই তার কোচিং-এ পরীক্ষা আছে। মাঝে ক্ষিদে পাওয়ায় সে রান্নাঘরে ঢুকল কিছু বানাতে। ঘরে নুডলস আছে। রান্না করার জন্য সবজি কাটতে বসল। তখনি কলিংবেল বাজল। তন্বি ঘড়ি দেখে ভাবল তুলিরা চলে এসেছে। তাই লুকিং গ্লাসে না তাকিয়েই দরজা খুলল এবং আকস্মিক হতভম্ব হলো। সামির দাঁড়িয়ে আছে দরজায়। হাসিমুখে বলল,” কি খবর? ”

তন্বি চোখ বড় করে আওড়াল,” সামির ভাই! আপনি হঠাৎ কোনো খবর না দিয়ে চলে এলেন?”

সামির ভেতরে প্রবেশ করল। তার হাত ভরা জিনিস। মিষ্টি, দই, আইসক্রিম এনে হুলুস্থুল অবস্থা। তন্বির মাথায় কিছু ঢুকছে না। সামির চারপাশের নীরবতা লক্ষ্য করে বলল,” বাসায় কেউ নেই নাকি?”

” না। সবাই কাজে ব্যস্ত। তুলিরা কোচিং-এ। একটু পরেই চলে আসবে।”

” ও আচ্ছা।”

সামির সোফায় এসে বসল। তন্বির মাথায় প্রশ্ন ভো ভো করছে। কিন্তু সে সব প্রশ্ন অন্যপাশে রেখে জরুরী গলায় বলল,” চা খাবেন নাকি সামির ভাই?”

” নিশ্চয়ই খাবো। আনো চা!”

তন্বি চায়ের সাথে দই আর মিষ্টি পরিবেশন করল। সামির চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল,” আমি কেম হঠাৎ এসে গেলাম জানতে চাইলে না যে?”

তন্বি মসৃণ গলায় বলল,” এটা আবার জানতে চাইবো কেন? আপনি আমাদের বড়ভাই না? তাই নিশ্চয়ই আমাদের দেখতে এসেছেন!”

সামির তন্বির উত্তর শুনে সন্তুষ্ট হাসি দিয়ে বলল ” হ্যাঁ তা অবশ্যই। কিন্তু আরেকটা কারণও আছে।”

” কি কারণ?”

” আজমীরকে যে পুলিশে ধরেছে এই ঘটনা তো জানো?”

তন্বির মাত্র মনে পড়ল। সে সিরিয়াস হয়ে বলল,” ও। হ্যাঁ! আজমীর ভাই তো প্রণয় ভাইকে..”

তন্বি কথা শেষ করতে পারল না। তার আগেই সামির বলল,” সেই ঝামেলা মিটাতেই এসেছি।”

” কি করবেন?” তন্বি একটু ভয় পেল। সামির সহজ হেসে বলল,” উকিল ঠিক করতে হবে। জামিনের ব্যবস্থা করবো না? সেজন্য আর কি! এর আগে প্রণয় ছেলেটার সঙ্গে একটু দেখা করবো। তার অবস্থা কি বেশি খারাপ?”

” না, না, প্রণয় ভাই ভালো আছে।”

” যাক, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কি তার বাসার ঠিকানা আমাকে দিতে পারবে?”

” তুলি আসুক। সে তো রোজই ওই বাড়িতে যায়। আজ আপনাকেও নিয়ে যাবে।”

_____

গাড়িতে এসে চুপচাপ বসে আছে প্রণয় আর তুলি।দু’জনেই রাগী দৃষ্টিতে একে-অন্যের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিল। তুলি হঠাৎ বলল, ” আপনি আমার সঙ্গে প্রেম করতে চান কেন?”

” হোয়াট? এটা কেমন প্রশ্ন?” প্রণয় অবাক। তুলি চিকন হাসি দিয়ে বলল,” এটা জরুরী প্রশ্ন। আগে উত্তর দিন।”

প্রণয় ধৈর্য্য ধরে দীর্ঘশ্বাস গোপন করল। তারপর কোমল দৃষ্টিতে চেয়ে মিষ্টি গলায় বলল,” কারণ আই লভ ইউ।”

তুলি থতমত খেল। সে ঘাঁয়েল হয়ে যাচ্ছে কেন? সামান্য ‘ আই লভ ইউ’ শুনেই ঘাঁয়েল হওয়া চলবে না। পরে যদি পস্তাতে হয়? সে কঠিনভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দ্বিতীয় প্রশ্ন করল,” কেন আমাকে ভালোবাসেন? কোনো ভ্যালিড রিজন?”

প্রণয় যেন মহা চিন্তায় পড়ে গেল। আকাশ-পাতাল ভেবে বলল,” মেইবি আমি তোমার কোম্পানি খুব ইঞ্জয় করি। তুমি সাথে থাকলে আমার সবকিছু কালারফুল মনে হয়। আনন্দিত অনুভব হয়। মর্ণিং এর সানশাইন যেমন সুন্দর আমার কাছে তোমার উপস্থিতিও তেমনই সুন্দর।”

তুলি জড়ানো গলায় বলল,” এসব লিটেরেসি টাইপ কথা বলে আপনি আমাকে গলাতে পারবেন না। আমি অন্যদের মতো না।”

” জানি। তুমি হাইব্রিড,ওয়ান পিস। এজন্যই তো তোমাকে আমার পছন্দ।”

” আচ্ছা তাই নাকি? আমার একটা শর্ত আছে।”

” কি বিষয়ে শর্ত?”

তুলি ইতস্তত করে বলল,” আমি যখন আপনার মতো অনেক টাকার মালিক হয়ে যাবো, তখন আমরা প্রেম করবো।”

” মানে?”হতভম্ব হয়ে গেল প্রণয়। তুলি হাসিমুখে বলল,” হ্যাঁ। এটাই আমি আপনার কাছে চাই। সময়। আমার মতে, প্রেম করা উচিৎ সমানে সমানে। ভালো তো যে কাউকে বাসা যায়। কিন্তু প্রেম, বিয়ে এসবের জন্য স্ট্যাটাস অনেক ইম্পোর্ট্যান্ট। আমি ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে এক্সেপ্ট করতে পারবো না যতক্ষণ না আপনার সমান হচ্ছি।”

প্রণয় হকচকিয়ে বলল,” ওয়েট, ওয়েট, তুমি কি বলছো এসব? আমার মাথায় ঢুকছে না।”

” খুবই সহজ। আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

” কি?” প্রণয়ের চোখে খুশির ঝিলিক। তুলি তাকে শান্ত করে বলল,” হ্যাঁ ভালোবাসি কিন্তু ভালোবাসলেই প্রেম করতে হবে, বিয়ে করতে হবে এমন নিয়মে আমি বিশ্বাস করি না। ভালোবাসাটা মনের ব্যাপার। কিন্তু প্রেম, বিয়ে এসব সামাজিক ব্যাপার। মানুষ ভাববে আপনি বড়লোক তাই আমি আপনার গলায় ঝুলে পড়েছি। এসব শুনে আমি প্রেম করতে পারবো না।”

প্রণয় হেসে ফেলল ফিক করে। তুলি চোখ বড় করে তাকাল। প্রণয় বলল,” মানুষ কি বলবে না বলবে এইটা চিন্তা করে তুমি নিজের লাইফের ডিসিশন কেন নিবে তুলি? এটা খুবই অদ্ভুত চিন্তা তোমার।”

” একদমই অদ্ভুত না। এটা আমার এইম। আমার স্বপ্ন। আমি যাকে বিয়ে করবো সে আমার থেকে বড় হতে পারবে না। সমাজে আমাদের দু’জনের স্ট্যাটাস থাকবে সমানে-সমান। তাই আমি যতদিন অবধি আপনার সমান হতে না পারছি ততদিন প্রেমও করবো না, বিয়েও করবো না। গট ইট? আমার কথা শেষ। এখন আমি যাই।”

” তুলি…”

” প্লিজ আমাকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবেন না। আমি যা বলার বলে দিয়েছি। এখন আমি গেলাম।”

” কিন্তু আমাকে একটা নির্দিষ্ট টাইম তো দাও! কতদিন ওয়েট করতে হবে?”

” আমি নিজেও জানি না। আমার ভাগ্যের উপর ডিপেন্ড করছে। দোয়া করবেন যেন খুব দ্রুত বড়লোক হয়ে যেতে পারি। যখন আপনার মতো আমিও সমান সম্পত্তির মালিক হবো তখনি আমি আপনার প্রপোজ্যাল এক্সেপ্ট করবো। এর আগে প্লিজ ডন্ট ডিস্টার্ব মি। পড়াশুনা করতে দিন আমাকে।”

তুলি দ্রুত বের হয়ে গেল। প্রণয়ের মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ভনভন করে ঘুরছে। সে নিজের সম্পত্তির হিসাব কষতে লাগল। প্রণয়দের সমান সম্পত্তি যদি তুলি উপার্জন করতে যায় তাহলে আগে প্রণয়ের বাপ, তারপর দাদা তারপর বড়দাদা, সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে হবে। এতো এতো টাকা উপার্জন করতে যুগের পর যুগ কেটে যাবে। ততদিনে হয়তো প্রণয় মরে ভূত হয়ে যাবে!

চলবে

#বেদনার_রঙ_নীল
উনত্রিশতম পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz

হালকা একটা স্নিগ্ধ সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে সারা ঘর জুড়ে। রাইফা মোহিত হচ্ছে সেই সুগন্ধে ক্ষণে ক্ষণে। রিসব তার সামনে বসে কফি পরিবেশন করায় ব্যস্ত। এই মানুষটির কফি খাওয়া নিয়ে এতো ফেসিনেশন, যা রাইফার অনেক ভালো লাগে। আসলে মানুষটির সবকিছুই তো রাইফার ভালো লাগে! তবে তার লজ্জাও লাগছে। নিজের চোখ দু’টোকে মনে হচ্ছে চৌম্বক আর রিসবকে মনে হচ্ছে লোহা। কিছুতেই সে চোখ সরাতে পারছে না! রিসব কি ভাববে এমন ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকলে?

রাইফার দিকে কফি বাড়িয়ে রিসব বলল,” মিষ্টি আপু মায়ের সাথে নরসিংদী গেছে। আজকে নাও ফিরতে পারে।”

রাইফা একটু অবাক হয়ে তাকাল। তারপর কফিটা নিয়ে চুমুক দিতে দিতে প্রশ্ন করল,” এই কথা আমাকে কেন বলছেন? মিষ্টি আপু না এলে আমাকে কি কোনো কাজ করতে হবে? রান্না করতে হবে?”

রিসব মৃদু হেসে ফেলল। তারপর বলল,” তোমাকে এই কথা বললাম কারণ তুমি প্রথমে বলেছিলে মিষ্টি আপুর কাছে এসেছো! তাই জানালাম যে মিষ্টি আপু নেই।”

রাইফা জীভ কাটল। লজ্জায় অপ্রস্তুত হয়ে বলল,” স্যরি। মিথ্যা বলেছিলাম।”

তারপর দ্রুত নিচের দিকে তাকিয়ে গেল সে। তার কান গরম হয়ে গেছে। রিসব হাসিমুখে বলল,” আমি জানি তুমি মিথ্যা বলেছো।”

” কিভাবে জানেন?” রাইফার গলা শুকিয়ে গেলো এবার।

” মিষ্টি আপুর সঙ্গে দেখা করতে এসে আমার ঘরে বসে আছো, ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত না?”

রাইফা লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা মুড়লো। অস্বস্তিতে শরীর কাটা দিচ্ছে আবারও। রিসব কেন সব বুঝে যায়? আজ পর্যন্ত এই মানুষটির সাথে সে কখনও মিথ্যা বলে পার পায়নি। রাইফা যেন মানুষটির কাছে ‘খোলা বই’ এর মতো। সে রাইফার দিকে চাইলেই চোখের পলকে সব বুঝতে পেরে যায়। সে এটাও জানে যে রাইফা তাকে কত ভালোবাসে! তার জন্য কত পাগল রাইফা! কিন্তু কখনও পাত্তা দিল না তো!

” আপনি আমার উপর কয়দিন রেগে থাকবেন এভাবে?” খুব অসহায়ের মতো প্রশ্নটা করে বসল রাইফা৷ রিসব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল এবং উত্তরে বলল,” আমি তোমার উপর রেগে নেই, রাইফা! কেন রেগে থাকবো?”

” তাহলে আগের মতো আমার সাথে হেসে কথা বলছেন না কেন? প্রিয়ন্তী আপুর ঘটনাটার পর থেকেই এমন করছেন আপনি।” রাইফা অভিযোগ জানিয়ে মুখ গোমরা করে তাকিয়ে রইল।

রিসব বোঝানোর মতো বলল,” তুমি যেটা করেছো সেটা অন্যায়। আমি জানি তুমি একটু পাগলাটে কিন্তু তাই বলে কারো সাথে অন্যায় করতে পারো না। এসব আমি তোমার থেকে এক্সপেক্ট করিনি। আমি শকড! কাউকে ধরে পেটানো কোনো ভালো কাজ না। তুমি ভেবেছো কেউ তোমাকে চিনতে পারবে না। কিন্তু তুমি নিজে তো নিজেকে চিনেছো! একবারও কি নিজের কাছে অন্যায় মনে হয়নি? এই কাজটা তুমি কি করে করলে?”

রাইফার চোখে অশ্রু টলমল করছে। রিসব আঙুল উঠিয়ে বলল,” দেখো, কাঁদবে না!”

রাইফা নিজেকে ধাতস্থ করল। তীব্র অভিমান নিয়ে আওড়ালো,” কাঁদবো কেন? একদম কাঁদছি না আমি।”

রিসব গম্ভীর মুখে বলল,” হুম।”

রাইফা নরম কণ্ঠে আগের মতো আবারও বলল,” স্যরি। কিন্তু আমার প্রিয়ন্তী আপুর উপর অনেক রাগ হচ্ছিল। আমি রাগের মাথায় এটা করেছি। কিন্তু তার ক্ষতি করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না, বিশ্বাস করুন! আমি শুধু তাকে একটু ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম। আর তুলিও তো আমাকে সাহায্য করেছে!”

রিসব হঠাৎ অন্য প্রসঙ্গ টেনে আনল,” একটা প্রশ্ন করি তোমাকে?”

” কি প্রশ্ন?”

রিসব কৌতুহলবশত জানতে চাইল,” তুলি আর প্রণয়ের মধ্যে কি সম্পর্ক? ”

” প্রণয় তুলিকে ভালোবাসে..”

” আর তুলি? সেও কি ভালোবাসে?”

রাইফা বিভ্রান্তি নিয়ে বলল,” তুলির ব্যাপারে আমি শিওর না।”

” হুম…” রিসব যেন একটা জটিল ভাবনায় ডুবে গেল। রাইফা একটু রেগে বলল,” এসব আপনি কেন জানতে চাইছেন? আমরা কি বিষয়ে কথা বলছিলাম?”

” কি বিষয়?”

রাইফা নাকের জল আর চোখের জল মুছে বলল,” আপনি কি করলে আমাকে ক্ষমা করবেন?”

” আমি তোমাকে ক্ষমা করার কেউ না। তুমি নিজের কাছে ক্ষমা চাও।”

রিসবের জায়গায় অন্যকেউ থাকলে রাইফা এই মুহূর্তে কাঁচের কফির কাপ ভেঙে ফেলতো। তার এতোই রাগ হচ্ছে! তার চেয়েও বেশি হচ্ছে কষ্ট। প্রিয়ন্তীকে সে এতো অপছন্দ করে, অথচ প্রিয়ন্তীর জন্যই রিসব তার সাথে শক্তভাবে কথা বলছে। এটা কি মেনে নেওয়া যায়? এই মানুষটির সামনে কোনোপ্রকার ধৃষ্টতা সে করতে পারবে না। তাই ব্যাগ নিয়ে চলে যাওয়ার সময় তীক্ষ্ণ গলায় বলল,” আমি একটা কাজে আপনার কাছে এসেছিলাম। যা আপনার জন্য না হলেও আমার জন্য খুবই জরুরী। এই কাজটি না করতে পারলে হয়তো মরেও শান্তি পেতাম না। এজন্যই বুঝি আল্লাহ আমাকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন!”

রাইফার চোখে ভেসে উঠল আবার সেই ট্রাক এক্সিডেন্টের ঘটনাটি৷ রিসব কি সেই ঘটনার কথা জানে? আরেকটু হলেই যে রাইফা দুনিয়া থেকে চলে যেতো এই কথা শুনলে কি সে একটুও বিচলিত হবে না? নাকি তার কিছুই যায়-আসবে না? রাইফার মনের অবস্থা নিয়েও তো তার কিছুই যায়-আসে না। সে কখনও বুঝেনি। রাইফা কেন প্রিয়ন্তীকে আঘাত করেছে, সেটাও বুঝেনি। সে কি কোনোদিন বুঝবে না? নাকি বুঝতেই চায় না?

রিসব ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকাল। রাইফা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। রিসব প্রশ্ন করল ভ্রু কুচকে,” কি বলতে এসেছিলে? আচ্ছা, বলে যাও।”

” থাক। আপনার শুনতে হবে না।”

এই কথা বলেই সে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। রিসব তাকে ডাকল না কেন? সে আর কখনও এই মানুষটির সামনে যাবে না, ধ্যাত!

______
তুলি রিকশা থেকে নামল। যথারীতি প্রণয়ও তাকে অনুসরণ করতে করতে এসেছে৷ সে দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়ে ডাকল,” তুলি দাঁড়াও।”

তুলির দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে না। সে এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে যাওয়ার সময় প্রণয় হাত বাড়িয়ে তাকে থামাল। গেইটের দারোয়ান আগ্রহ নিয়ে এদিকে দেখছে। তুলি ক্ষীপ্ত কণ্ঠে বলল,” কি ব্যাপার? আপনি কেন সিন ক্রিয়েট করছেন?”

” তোমাকে আমার কথা শুনতে হবে।”

” আমাদের কথা শেষ হয়ে গেছে। আমার যা বলার ছিল আমি বলে এসেছি। দেখা হবে বিজয়ের দিন!”

তুলির ঠোঁটে ঝকঝকে হাসি ফুটল। যেন সে নিশ্চিত, একদিন তার বিজয় হবেই! প্রণয় চোয়াল শক্ত করে নিজেকে ধাতস্থ রেখে বলল,” এটা সম্ভব না৷ আমরা বুড়ো হয়ে কবরে চলে যাবো তখন কি আমাদের নাতি-নাতনিরা বিয়ে করবে?”

তুলি কপাল কুচকে বলল,” কি বলছেন আপনি এসব? আপনার কি আমার উপর বিশ্বাস নেই? আমার কি কোনো যোগ্যতা নেই?”

” অবশ্যই আছে। কিন্তু এটা খুবই অদ্ভুত। বোঝার চেষ্টা করো, প্লিজ, প্লিজ!”

প্রণয় হাতজোড় করল৷ তুলি অনড় হয়ে বলল,” যা বলেছি তাই। অপেক্ষা করতে পারলে করুন নাহলে আপনি প্রিয়ন্তীর কাছে চলে যান৷ তাকে বিয়ে করে সুখে থাকুন৷ আর আমাকে বিয়েতে দাওয়াত করবেন অবশ্যই।”

তুলি এই কথা বলে চলে যেতে নিলেই প্রণয় তার হাতের বাহু টেনে ধরল। ব্যস্ত হয়ে বলল,” এই দাঁড়াও, দাঁড়াও। এখানে প্রিয়ন্তী কোথা থেকে এলো?”

তুলি আশেপাশে তাকিয়ে বলল,” আমার হাত ছাড়ুন।”

প্রণয় হাত ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তারপর প্রশ্ন করল আবারও, ” প্রিয়ন্তীর কথা কেন বললে?”

” কারণ আমার মনে হয় প্রিয়ন্তী আপনাকে ভালোবাসে!”

” প্রিয়ন্তী জাহান্নামে যাক। আমাদের মধ্যে কথা হচ্ছে। তুমি ওকে টেনে আনবে কেন এখানে?”

” আমাদের মধ্যে কথা শেষ। সমান না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করছি না আমি।”

প্রণয় আপাতত মেনে নিয়ে বলল,” আচ্ছা৷ আমি না হয় বিয়ের জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবো। কিন্তু প্রেম করতে অসুবিধা কোথায়?”

তুলি কানের পিঠে চুল গুজে বলল,” যেই প্রেমে বিয়ের গ্যারান্টি নেই সেই প্রেম করে লাভ কি বলুন? আগে আমার ফিউচার গ্যারান্টেড হোক, তাহলেই প্রেম করবো। বিয়ের শপথ নিয়ে তারপর হবে প্রেম। আমি যেনো-তেনো প্রেম করতে রাজি না।”

প্রণয় মাথা চেপে ধরে বলল,” অদ্ভুত মেয়ে তুমি একটা! পাগল বানিয়ে ছাড়বে নাকি আমাকে?”

তুলি হাসতে হাসতে বাড়িতে ঢুকে গেল। প্রণয় চেঁচিয়ে বলল,” তোমার মত না বদলানো পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো।”

” এই মত কখনোই বদলাবে না। তাই অপেক্ষা করে লাভ নেই।” তুলি লিফটে উঠে গেল। প্রণয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল,” তাহলে অপেক্ষা করবো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। কি আর করার? তোমাকে না পেলে তো এমনিও মরতে হবে। তার চেয়ে তোমাকে পাওয়ার আশা নিয়ে জীবিত থাকাই ভালো। অন্তত আশা তো থাকল! ”

কলিংবেল বাজতেই তন্বি চঞ্চল কণ্ঠে বলল,” ওইতো, তুলিরা এসে গেছে।”

সামির হাসল। দরজা খুলতে উঠে গেল তন্বি। তুলি ভেতরে প্রবেশ করলেই সে বলল,” রাইফা আসেনি?”

তুলি অবাক হয়ে তাকাল,” মানে কি? রাইফা বাসায় নেই?”

” নাতো! ওর কোচিং ছিল না আজ?”

” ও তো কোচিং-এ যায়নি। ওর নাকি ঘুম আসছিল! তাই আমি ভাবলাম বাসায় চলে আসবে কিন্তু আসেনি?”

” একদম আসেনি।”

তুলি চিন্তিত হয়ে উঠল। এই মেয়েটা এমন করে কেন? খানিক অস্থিরতা নিয়ে বলল,” মোবাইল দে তন্বি। রাইফাকে ফোন করতে হবে।”

তন্বি নিচু গলায় বলল,” সামির ভাই এসেছে।”

” কি?”

তুলি ড্রয়িংরুমে এগিয়ে এলো। সামির সোফায় বসে আছে। আশ্চর্য হয়ে সামান্য হাসল তুলি।

” আরে সামির ভাই, কি খবর?”

” খবর ভালো না। আজমীরকে পুলিশ ধরেছে। আমি কিভাবে ভালো থাকি বলো?”

তুলির চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল আজমীরের কথা মনে হতেই। সে খিটমিটে মেজাজে বলল,” আপনার ভাই যা করেছে তাতে ওর ফাঁসি হলেও আমার আফসোস লাগবে না!”

” এভাবে বলছো কেন তুলি?”

তুলি হাতের ব্যাগ ছুঁড়ে সোফায় ফেলে চিৎকার করল,” তো আর কিভাবে বলবো? আপনি জানেন আপনার ভাই প্রণয়ের সাথে কি করেছে? প্রণয় মরেও যেতে পারতো!”

” জানি। আমি সবই জানি। সেজন্য আমি প্রণয়ের কাছে ক্ষমা চাইবো।”

তুলি তাচ্ছিল্য হাসল। তারপর তন্বির দিকে একবার তাকিয়ে সোজা ঘরে ঢুকে গেল। সামির নিরাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখল। তন্বি সামিরের পাশে বসে বলল,” কিছু মনে করবেন না সামির ভাই।”

সামির আফসোস করে বলল,” আজমীর খুব খারাপ একটা কাজ করেছে। কিন্তু কি করবো? শত হলেও ভাই হয়। তাকে তো এইভাবে ফেলে দিতে পারি না।”

তন্বি প্রশান্ত কণ্ঠে বলল,” আমি আপনাকে প্রণয় ভাইয়ের বাড়িতে নিয়ে যাবো৷ আমি চিনি ওই বাড়ি। কিচ্ছু চিন্তা করবেন না।”

______

তুলি ঘরে ঢুকে তার ডায়েরী হাতে নিল। তন্বি ঢাকায় আসার সময় তুলির সব প্রিয় জিনিস সঙ্গে এনেছিল। এই ডায়েরীটাও তুলির একান্ত প্রিয় জিনিসগুলোর একটি। সে ডায়রীর চিহ্নিত জায়গাটি খুলে সাদা কাগজে লিখল,” আমি বড়লোক হওয়ার পর আজমীর ভাইকে খু*/ন করবো।”

তারপর অন্য পৃষ্ঠায় লিখল,” প্রণয়কে বিয়ে করবো যদি ততদিন সে অপেক্ষায় থাকে। আর যদি সে আমার অপেক্ষায় না থাকে, তাহলে আমি কোনোদিন বিয়েই করবো না।”

এই লেখাটা লেখার সময় তুলির চোখ থেকে টুপ করে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। অশ্রুর ছাপ লেগে রইল সাদা কাগজে। তুলি ডায়রী বন্ধ করে গোসলে ঢুকল। তার ক্ষিদেও পেয়েছে খুব। মনখারাপ থাকলে বেশি বেশি ক্ষিদে পায় কেন?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here