বেদনার_রঙ_নীল অষ্টাদশ পর্ব

0
314

#বেদনার_রঙ_নীল
অষ্টাদশ পর্ব
লিখা-Sidratul Muntaz

প্রণয় কাশছে। তুলিও হিঁচকি তুলছে। দুজনেরই হঠাৎ কি যেন হয়ে গেল। প্রণয়ের কাশির পরিমাণ কমে এলেও তুলির অবস্থা খুবই খারাপ। মনে হচ্ছে এখনি বমি করে দেবে। মিষ্টি তড়িঘড়ি করে তুলিকে পানি দিল। পানিটা খেয়েই তুলি দাঁড়িয়ে গেল। প্রণয়ের যেন খুব জরুরী কোনো কাজ মনে পড়েছে এমন ভাণ করে সে এখান থেকে চলে গেল। রাইফা আর মিষ্টিও উঠে দাঁড়িয়েছে। এখন শুধু বসে আছে শান। তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি এখানে।

মিষ্টি তুলির কাঁধে হাত রেখে বলল,” তুমি কি ঠিকাছো? বসো। খাবার টা শেষ করে নাও। আর শানের কথায় কিছু মনে কোরো না।”

তারপর সে শানের দিকে চেয়ে ধমক দিল,” এই শান, এইসব কি ধরনের কথা বলিস তুই? এক্ষনি স্যরি বল তুলি আপুকে।”

শান ভ্রু কুঁচকালো। দায়সারাভাবে বলল,” আমার কি দোষ? আমি তো জাস্ট গেইস করলাম।”

” তোকে এমন উল্টা-পাল্টা গেইস করতেই বা কে বলেছে? বেয়াদব! স্যরি বল দ্রুত।”

তুলি মিষ্টির হাতের উপর হাত রেখে প্রশমিত কণ্ঠে বলল,” থাক মিষ্টি আপু। আমি কিছু মনে করিনি। এইখানে শানের কোনো দোষও নেই। ও ছোটমানুষ।”

” অবশ্যই দোষ আছে। আর ও তোমাকে স্যরিও বলবে। স্যরি বল শান?”

শান নরম কণ্ঠে বলল,” স্যরি তুলি আপু। ডোন্ট মাইন্ড প্লিজ!”

রাইফা অবাক হয়ে তাকাল। শানের কণ্ঠে ‘স্যরি’ যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য ঘটার মতো ব্যাপার। তুলি বলল, ” ইটস অলরাইট। ”

তারপর সে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল,” আপু আমি না আর খেতে পারবো না।”

” আচ্ছা কোনো সমস্যা নেই। তুমি যাও গিয়ে হাতটা ধুঁয়ে নাও। ”

তুলি হাত ধুঁতে গেলে রাইফাও তার পেছনে এলো।তুলি পানির কল ছেড়ে হাত ধুঁয়ে নিচ্ছিল। রাইফা এই ফাঁকে জিজ্ঞেস করল,” দোস্ত, শান ওই রকম কথা কেনো বলল?”

তুলি ঝাঁজ মেশানো কণ্ঠে উত্তর দিল,”আমি কি জানি? যে বলেছে তাকে জিজ্ঞেস কর।”

” সে তো আর অযথা এসব বলবে না। তার মাথায় এমন একটা ভাবনা এলো কি করে?”

” জানি না।”

” প্রণয়ও আজকে কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করছিল তাই না? আচ্ছা তুলি, প্রণয়কে তোর কেমন লাগে?”

তুলি আঁড়চোখে চেয়ে বলল,” মানে?”

” মানে সে কিন্তু খুব ভালো ছেলে। দেখতেও কত হট, না? ক্রাশ খাওয়ার মতো। তোর প্রণয়কে হট লাগে না?”

রাইফা ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তুলি ব্যাপারটাকে উল্টোভাবে বুঝল। ঈর্ষায় জ্বলে উঠল তার মন। কোমরে হাত রেখে বলল,” তোর প্রণয়ের গুণগান গাওয়া শেষ হলে এবার কি আমরা যেতে পারি?”

” তুই কি বিরক্ত হচ্ছিস?”

“হ্যাঁ। প্রচুর বিরক্ত আমি।”

তুলি এই কথা বলেই গটগট করে চলে গেল। রাইফা হাঁ করে তাকিয়ে তুলির চলে যাওয়া দেখল। সে ভেবেছিল প্রণয়ের প্রশংসা শুনলে তুলি লজ্জা পাবে। তাদের মধ্যে কিছু একটা চলছে এই ব্যাপারে রাইফা নিশ্চিত। কিন্তু এখন তুলি এমন ব্যবহার করল কেন? আর এতো রেগে যাওয়ার মতোই বা কি হলো! রাইফা বিভ্রান্ত।

প্রণয় ঘরে এসে বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল৷ তার এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে গাড়ি নিয়ে কোথাও চলে যেতে। অনেক বেশি মনখারাপ হলে কিংবা মেজাজ বেশি গরম হলে তার এরকম লাগে। এই মুহূর্তে তার মন খারাপ নাকি মেজাজ গরম সেটা নিজেও বুঝতে পারছে না সে। গাড়িটা সুস্থ থাকলে সে ঠিকই কোথাও একটা চলে যেতো এইরাতে। কিন্তু বাড়ির গাড়ি নিয়ে কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে বাড়ির মানুষ ঝামেলায় পড়বে। প্রণয় গ্যারেজ মেক্যানিকের কাছে ফোন করে অযথাই কিছুক্ষণ রাগ ঝারল।

” গাড়ি ঠিক হতে কয়দিন লাগবে?”

” এইতো স্যার, দশ-এগারো দিন।”

” এখনও দশ-এগারো দিন কেন? দশ-এগারো ঘণ্টা সময় দেওয়া হলো। এর মধ্যে সব রেডি চাই।”

” স্যার কি পাগল হয়ে গেছেন?”

” শাট আপ, আমি পাগল হয়ে গেছি মানে কি? আপনারা কি ঘোড়ার ডিমের কাজ করেন? ”

বাইরে থেকে প্রণয়ের গর্জন শুনে ভেতরে প্রবেশ করল রাইফা,” কি হয়েছে? এনিথিং রং?”

প্রণয় ফোন রেখে বলল,” নাথিং। তুমি কিছু বলবে?”

” তোমাদের মাঝে কি হয়েছে প্রণয়?”

প্রণয় বুঝেও না বোঝার ভাণ করল,” আমাদের মানে? কাদের?”

” তোমার আর তুলির কথা বলছি।”

প্রণয় অনীহা প্রকাশ করতে অন্যদিকে চাইল। গম্ভীর গলায় বলল,” এই বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না।”

” কেন? যদি কোনো প্রবলেম হয়ে থাকে তাহলে আমার সাথে শেয়ার করতে পারো। আই ক্যান হেল্প ইউ।”

প্রণয় বিরক্তি ঝরা কণ্ঠে বলল,” তোমার বেস্টফ্রেন্ডের মাথায় প্রবলেম আছে তাই না?”

রাইফা হেসে উঠল। জানতে চাইল,” কেন?”

প্রণয় ঘুরে তাকিয়ে অভিযোগের স্বরে বলল,” আমি ওকে একটুও বুঝতে পারছি না। ও কি চায়? প্রথমে আমার মনে হয়েছিল ও আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু এখন ওর আচরণে মনে হচ্ছে আমাকে সহ্যই করতে পারে না। আজকে ও একটা সিলি ম্যাটার নিয়ে আমাকে চড় মেরেছিল জানো?”

রাইফা বিস্ময়ভরা কণ্ঠে উচ্চারণ করল,” সিরিয়াসলি? ও তোমাকে চড় মারল? আই কান্ট বিলিভ! তুলি তো এতো রুড না!”

” আমি জানি না ওর কি হয়েছে। ও আমার মাথা খারাপ করে ছাড়বে।”

রাইফা প্রণয়ের কাছে গিয়ে আলতো গলায় প্রশ্ন করল,” ডু ইউ লভ হার?”

প্রণয় শান্ত চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,” এক্সট্রিমলি!”

রাইফার চোখ দু’টি আনন্দে ঝলমলিয়ে উঠল। উল্লাসে বিচলিত হয়ে বলল,” আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। ডন্ট ওরি! আমি ওর সঙ্গে কথা বলবো। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

” আমার কথা বোলো না প্লিজ। তাহলে ভুল বুঝতে পারে।”

” নো টেনশন। আমি ওকে কিছু বুঝতেই দিবো না।”

” থ্যাঙ্কিউ। ”

” মেনশট নট, ব্রাদার-ইন-ল।”

” রিসবের সাথে তো এখনও তোমার বিয়ে হয়নি রাইফা।”

প্রণয়ের মন্তব্যে খানিক থমকালো রাইফা। তারপর আরক্ত দৃষ্টিতে বলল,” উহুঁ,আমি সেটা মিন করিনি। তুলির সাথে যদি তোমার অ্যাফেয়ার হয় তাহলে তো তুমি আমার ব্রাদার-ইন-ল হবে তাই না?”

প্রণয় হাসল। রাইফা বাম চোখ টিপে বলল, ‘ বাই।’

তুলি ড্রয়িংরুমে বসেছিল রাইফার অপেক্ষায়। তাকে উপরে প্রণয়ের ঘর থেকে বের হতে দেখে তুলির মনটা ফুসঁ করে খারাপ হয়ে গেল। সে বিষণ্ণ হয়ে একাই গাড়িতে গিয়ে বসে রইল। ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলেন,” রাইফা ম্যাডাম কোথায়?”

তুলি কঠিন জবাব দিল,” আমি জানি না।”

একটু পর রাইফা গাড়িতে এসে অবাক হয়ে বলল,” তুই কোথায় ছিলি তুলি? তোকে কত খুঁজলাম আমি!”

” আমাকে খোঁজার সময় আছে তোর? তুই তো এখন অনেক ব্যস্ত!”

রাইফা তুলির অভিমানী কথার অর্থ বুঝল না। হালকা বিরক্তি নিয়ে বলল,” দিন দিন তুই কেমন যেন হয়ে যাচ্ছিস!”

তুলি মনে মনে বলল,” আমার জায়গায় থাকলে বুঝতি।”

” জানিস, প্রণয়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম৷ সে তার দুঃখের কাহিনী আমাকে শোনাচ্ছিল।”

তুলি নিজের কান দু’টো চেপে ধরে বলল,” আমি এসব শুনতে চাই না।”

” আজব, তুই এমন করছিস কেন?”

তুলি জবাব দিল না। রাইফা নিজের মতো বলে গেল,” প্রণয়ের ছোট্টবেলা থেকে বাবা-মা কেউ নেই। আন্টি তো শানকে জন্ম দিতে গিয়েই মারা গেলেন। আর আঙ্কেল মানে প্রণয়ের বাবা স্ত্রীকে এতো ভালোবাসতেন যে স্ত্রীর মৃত্যুর চল্লিশ দিনের মাঝে তিনিও চলে গেলেন ওপারে। মিষ্টি আপু, প্রণয় আর ছোট্ট শান, এই তিন ভাই-বোন মা-বাবা ছাড়া একাই বড় হচ্ছিল। যদিও বংশগতভাবে ওদের টাকা-পয়সার অভাব ছিল না। কিন্তু একজন অভিভাবকও তো লাগে। তখন অজান্তা আন্টি এলেন তাদের জীবনে। অজান্তা আন্টির একমাত্র ছেলে রিসবকে নিয়ে তিনি ছিলেন সিঙ্গেল মাদার। আবার সম্পর্কে তিনি প্রণয়ের ছোটখালা। স্বামীর সাথে তার ডিভোর্স হয়ে গেছিল। এজন্যই তিনি সব ছেড়ে প্রণয়দের বাড়িতে চলে এসেছেন। তারা সবাই অজান্তা আন্টিকে অনেক ভালোবাসে। ”

” বুঝলাম। এজন্যই তারা অজান্তা আন্টিকে ছোট মা বলে ডাকে?”

” ঠিক বলেছিস।”

” আর রিসবের কি হলো?”

রিসবের প্রসঙ্গ আসায় রাইফা খানিক অপ্রস্তুত হলো। লাজুক কণ্ঠে বলল,” সে তো ভবঘুরে। তবে বর্তমানে তার একটাই কাজ, পর্বত আরোহণ করা। শুনেছি সে খুব শীঘ্রই ঢাকা আসছে। তখন দেখা হবে।”

” ও।”

” বলছিলাম প্রণয়ের ব্যাপারে। সে কত ভালো ছেলে জানিস? ওকে তুই ভুল বুঝিস না প্লিজ৷ তোকে কিছু উদাহরণ দেই।”

” রাইফা, আমি তোর কাছে প্রণয়ের প্রশংসা শুনতে চাইছি না।”

রাইফা জেদ নিয়ে বলল,” আমি বলতে চাইছি। তাই তোকে শুনতেই হবে। আঙ্কেলের মৃত্যুর পর প্রণয় খুব ছোট ছিল। মিষ্টি আপুও কিশোরী। তাই তাদের ফ্যামিলি বিজনেস হ্যান্ডেল করার মতো কেউ ছিল না। ওই অবস্থায় অজান্তা আন্টি অফিসে বসতেন। ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। তিনি অসংখ্য লোককে অনেক মাসের বেতন না দিয়েই ছাঁটাই করেছিলেন। আসলে এমন করতে তিনি বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু প্রণয় ম্যাচিউর হওয়ার পর বুঝতে পারল ওই ইমপ্লয়িদের কাছে তার বাবা সারাজীবন অপরাধী হয়ে থাকবে। এই ভাবনাটা তার মাথায় এনেছিল প্রিয়ন্তীর বাবা। তিনিও প্রণয়দের অফিসে চাকরি করতেন। আর প্রিয়ন্তী প্রণয়ের ক্লাসমেইট ছিল। প্রণয় কি করল জানিস? সেই সব ইমপ্লয়িদের লিস্ট নিয়ে নিজস্ব ফিক্সড ডিপোজিট থেকে সবার পাওনা শোধ করে দিল। এদের মধ্যে অনেকেই ছিল যারা মারা গেছে। আবার কারো কারো হদিশ পাওয়া যায়নি। প্রণয় তারপর তার বাবার নামে একটা ফাউন্ডেশন চালু করল। যেখান থেকে অভাবী মানুষরা চাইলেই বিনা শর্তে লোন নিতে পারবে। সেই ফাউন্ডেশন এখনও আছে। তুই দেখবি?”

” আমার দেখার ইচ্ছে নেই। আর এসব সে কেন করেছে? নাম কামানোর জন্য তাই না? যেন সবাই তার বাবার নাম স্মরণ করে!”

” হ্যাঁ। এইটুকুই বা কয়জন ছেলে করে বল? বাবার মৃত্যুর পরেও বাবার সম্মান নিয়ে কেউ এতো চিন্তা করে?”

তুলি জবাব দিল না। প্রণয়ের প্রতি দূর্বলতা সে কাটাতে চায়।

রাতেও ঘুমানোর সময় রাইফা প্রণয়ের প্রসঙ্গ টেনে আনল। তুলি বিরক্ত হয়ে বারান্দায় চলে গেল। রাইফা সাথে সাথেই প্রণয়কে ফোন করল,” হ্যালো প্রণয়, জেগে আছো?”

” হ্যাঁ। কিছু কাজ ছিল।”

” এতো শব্দ কেন? তুমি কি বাইরে?”

” হুম। ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়েছিলাম।”

” তুলির ব্যাপারে কথা বলতে চাই।”

” ওকে বলো।”

” তুলিকে আমি তোমার ব্যাপারে যা বলার বলেছি। আমার মনে হয় ও তোমাকে পছন্দ করে। তুমি ওকে প্রপোজ করে দিচ্ছো না কেন?”

প্রণয় বিস্মিত কণ্ঠে বলল,” এইভাবে কিভাবে প্রপোজ করে দিবো রাইফা? ও যদি আমাকে পছন্দ করতো তাহলে আমার ফোন ফিরিয়ে দিতো না। আমাকে ওইভাবে চড় মারতো না। আমি শিউর ও আমাকে পছন্দ করে না৷ তাহলে আমি কিসের ভরসায় ওকে প্রপোজ করবো? রিজেক্ট হওয়ার জন্য?”

” বুঝেছি। তুলি আসলে তোমার ইম্পোর্ট্যান্স বুঝতে পারছে না৷ তুমি একটা কাজ করো। ওকে ইগনোর করো।”

” এটা করলে কি লাভ?”

তুলি বারান্দা থেকে বের হলো। রাইফা আর কথা বলতে পারল না। তাকে অতি দ্রুত চুপ করতে হলো। তুলি বলল,” কি ব্যাপার? কার সঙ্গে কথা বলছিস তুই?”

রাইফা মৃদু হেসে বলল,” প্রণয়।”

তুলি ফুঁসে ওঠা কণ্ঠে বলল,” ও। তাহলে তো তোর এখন প্রাইভেসী দরকার। আমি বারান্দায় চলে যাবো নাকি তুই অন্যরুমে যাবি? ”

” কি বলছিস? আমি অন্যরুমে কেন যাবো?”

” তন্বি তো ঘুমিয়ে আছে। যদি উঠে যায় তাহলে তোর প্রাইভেসী নষ্ট হবে না?”

রাইফা হাঁ করে তাকিয়ে রইল। তুলি বারান্দায় ঢুকে দরজা আটকে দিল ধপাস করে। এই ঘটনা দেখে হঠাৎ রাইফার মাথায় বুদ্ধি এলো। সে চঞ্চল কণ্ঠে বলল,” আইডিয়া পেয়েছি প্রণয়। তুলি তোমার সাথে আমাকে কথা বলতে দেখলে জেলাস করে৷ এর মানে সামথিং সামথিং। বুঝতে পারছো?”

” হ্যাঁ, পারছি।”

” তাহলে চলো, আমরা একটা প্রিটেন্ড করি।”

” সেটা কিরকম?”

” তুলির সামনে আমরা কাপল হওয়ার একটিং করবো। তুলি ভাববে আমরা রিলেশনে আছি৷ তারপর ও জেলাস করবে।”

প্রণয় বিব্রত কণ্ঠে বলল,” না, না, খুব ফিল্মি আইডিয়া এটা।”

” তবুও একবার ট্রাই করে দেখি! যদি কাজ হয়?”

তুলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখ থেকে টুপটুপ করে জল পড়ছিল৷ ওইপাশে রাইফার গুজুরগুজুর কথার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তুলি ওসব শুনতে চায় না। তবুও তার শুনতে হচ্ছে। যদিও সে কোনো কথা স্পষ্ট বুঝতে পারছে না, তবুও তার কষ্ট হচ্ছে। কারণ রাইফা যে মানুষটির সঙ্গে কথা বলছে, সে প্রণয়। তুলির আকাঙ্ক্ষিত পুরুষ।

ইদানিং শানকে পড়াতে গেলে প্রণয় খুব একটা বিরক্ত করে না তুলিকে। সে দূরেই থাকে। আর শানও আগের মতো ঝামেলা করে না। আজ-কাল সে ভদ্র বাচ্চা হয়ে গেছে। তবে কিছু সমস্যা হচ্ছে। শান আর প্রণয়ের ঘর পাশাপাশি হওয়ায় সমস্যাটা তুলির নজরে বেশি লাগছে। শানের ঘরের একটা দেয়ালে সবসময় পর্দা দেওয়া থাকে। ওই পর্দা সরালেই কাঁচের দরজা। দরজার ওই পাশে প্রণয়ের ঘর। ট্রান্সপারেন্ট দরজা দিয়ে প্রণয়ের বিচরণ খুব সহজেই লক্ষ্য করা যায়। সে হেঁটে হেঁটে কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলে। আজকে তুলি না পারতে জিজ্ঞেস করেই ফেলল,” তোমার ভাইয়া কার সঙ্গে কথা বলে সাইক্লোন?”

শান খেয়াল করে দেখল প্রণয় হাসছে। সে একটু বিভ্রান্তি নিয়ে বলল,” মেইবি গার্লফ্রেন্ড।”

তুলি রেগে বলল,” প্রত্যেকদিন এইখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে হবে কেন? তুমি তোমার ভাইয়াকে বলো সে যেন অন্যকোথাও গিয়ে তার প্রাইভেট টকিং করে৷ এখানে আমাদের পড়াশুনার ডিস্টার্ব হয়।”

শান মাথা নেড়ে বলল,” ওকে। বলছি।”

শান ট্রান্সপারেন্ট দরজা খুলে প্রণয়ের মনোযোগ আকর্ষণের উদ্দেশ্যে তালি বাজালো। কিন্তু প্রণয় ফোনে এতোই মগ্ন যে কোনোদিকে তার খেয়াল নেই। শান একটু শব্দ করে বলল,” রেডলাইট,মিস তোকে বলেছে অন্যকোথাও যেতে।”

প্রণয় অবাক হয়ে বলল,” কি ব্যাপার?”

শান আগের কথাটাই আবার বলল,” মিস তোকে বলেছে অন্যকোথাও যেতে। এখানে আমাদের ডিস্টার্ব হচ্ছে।”

প্রণয় আঁড়চোখে তুলির দিকে একবার তাকাল। তারপর ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলল,” এটা আমার ঘর। আমি যেখানে খুশি দাঁড়িয়ে কথা বলবো। তোর মিসের এতো প্রবলেম হলে তাকে বল অন্যকোথাও গিয়ে পড়াতে।”

তুলি ক্ষেপে উঠে দাঁড়ালো। বই-খাতা গুছিয়ে নিতে নিতে বলল,” চলো শান, আমরাই না হয় অন্যকোথাও গিয়ে বসি।”

তারপর প্রণয়ের দিকে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেল তুলি। শানও বের হলো। প্রণয় সন্তুষ্ট হয়ে বলল,” তোমার আইডিয়া কাজ করছে রাইফা। তুলি সত্যিই জেলাস করছে।”

রাইফা সবকিছু শুনে খুশিতে আটখানা হয়ে বলল,” আগেই বলেছিলাম! এইবার কাজ হবে।”

প্রতিদিনের মতো আজকে আর তুলিকে নিতে রাইফা এলো না। সুতরাং তুলিকে একাই বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু মিষ্টি তুলিকে একা ছাড়তে নারাজ। সে প্রণয়কে ডেকে বলল,” তুলিকে একটু পৌঁছে দে না ভাই!”

প্রণয় কিছু বলার আগেই তুলি বাঁধ সাঁধল,” সমস্যা নেই। আমি একাই চলে যেতে পারবো।”

প্রণয় এই কথা শুনে বলল,” ওকে। বেস্ট অফ লাক। ”

মিষ্টি রেগে বলল,” এইটা কি ধরণের কথা প্রণয়? ও একা কিভাবে যাবে? যা তুই ওর সাথে।”

তুলি মাথা নিচু করে অভিমানী কণ্ঠে বলল,” থাক লাগবে না মিষ্টি আপু। উনি মনে হয় ব্যস্ত।”

” একদম না। কিসের ব্যস্ততা ওর? প্রণয় তুই যা।”

প্রণয় শিষ বাজাতে বাজাতে বের হলো। তুলি মিষ্টির থেকে বিদায় নিয়ে প্রণয়ের পেছনে এলো। কেউ কোনো কথা বলছিল না। চুপচাপ দু’জন দুইপাশে বসে রইল। গাড়ি চলতে শুরু করল। দশমিনিট পর তুলি হঠাৎ খেয়াল করে বলল,” আমরা কোথায় যাচ্ছি? এটা তো বাসার রাস্তা না!”

প্রণয় নির্বিকার কণ্ঠে বলল,” হুম। আপনাকে কিডন্যাপ করবো। আমাকে চড় মারার শাস্তি।”

তুলি দুইহাতে মুখ চেপে ধরল। সে প্রণয়ের কথাটা বিশ্বাস করে সে সত্যি সত্যি আতঙ্কিত হয়ে উঠল।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here