#বেদনার_রঙ_নীল
ত্রয়োদশ পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz
বাচ্চারা মেন্যুবুক দেখতে দেখতে একের পর এক লোভনীয় খাবার নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে লাগল। রাইফা আঁড়চোখে আজমীরের পাংশুটে বর্ণের মুখটা দেখে তীব্র কণ্ঠে বলল,” আজকে যে যত খুশি খাও। মনে করো আজকে তোমাদের ঈদ।”
সবাই আনন্দে হৈহৈ করে উঠল। আবারও সবার মুখে একই ধ্বনি বাজল,” ভাইয়া ভালো, ভাইয়া সেরা!”
মেয়েদের মধ্যে একজন বলল,” ঈদের দিন তো সালামিও দেয়। আমরা সালামি পাবো না ভাইয়া?”
আজমীর এই কথা শুনে একদম উঠে দাঁড়িয়ে গেল। রাইফা তার হাত ধরে বলল,” আরে, যাচ্ছেন কোথায়? বসেন না!”
” ওয়াশরুমে যাবো।”
” ওকে।”
রাইফা হাত ছেড়ে দিল। আজমীর দ্রুত প্রণয়ের কাছে গিয়ে বলল,” দোস্ত কথা শুনে যা।”
তারপর সে প্রণয়কে নিয়েই ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল। তারা প্রস্থান করতেই রাইফা আর তুলি হাত মিলিয়ে খুব জোরে হেসে উঠল। এক পর্যায় তুলি বলল,” আচ্ছা, এখন যদি তার কাছে টাকা না থাকে তাহলে বিল কে দিবে?”
” টাকা না থাকলে টাকার ব্যবস্থা করে সে-ই বিল দিবে। নাহলে আমি ধার দেওয়ার কথা বলে মান-সম্মান পাংচার করে দিবো। তুই ভাবিস না। কিন্তু অসভ্য বেটা প্রণয়কে নিয়ে বাথরুমে গেল কেন?”
” মনে হয় দু’জন মিলে কিছু প্ল্যান করবে। ”
” আচ্ছা, প্রণয় তো আমাদের চিনতে পেরেছে। যদি আবার বলে দেয়?”
” বলবে না।”
রাইফা সন্দিহান কণ্ঠে বলল,” তবুও তুই গিয়ে দেখে আয়। বিল দেওয়ার ভয়ে ভেগেও তো যেতে পারে।”
” সত্যিই তো! আচ্ছা, আমি দেখছি।”
” হুম। বেটাকে পাহারায় রাখ। এতো কষ্ট করে মাছ ধরলাম৷ কিন্তু মাছই যদি জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যায় তাহলে লাভ আছে কোনো?”
তুলি হাসতে হাসতে উঠে গেল।
আজমীর দুশ্চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছে। অসহায় কণ্ঠে বলল,” দোস্ত কিছু একটা কর। আমার কাছে বেশি টাকা নেই। মাত্র পঁচিশশো টাকা নিয়ে বের হয়েছিলাম।”
প্রণয় মুখ কুচকে বলল,” এতো কম কেন? তোর কাছে তো অন্যদিন আরও বেশি টাকা থাকে।”
” আরে, গিফট কিনলাম। তারপর তুলির জন্য আরেকটা জিনিস কিনেছি। তোকে বলা হয়নি।”
প্রণয় প্রতিশোধ পরায়ণ কণ্ঠে বলল,” শা*লা, আমাকে না বলে আর কি কি করেছিস? ভালো হয়েছে। এখন ফাঁস।”
” বিল দিতে না পারলে মান-ইজ্জত কিচ্ছু থাকবে না। আমার দেয়ালে কপাল ঠুঁকতে মন চাইছে। কি করবো?”
প্রণয় শান্তভাবে আজমীরের কাঁধে হাত রেখে বলল,” টাকা নিয়ে এতো টেনশনের কিছু নেই। আমি আছি তো!”
” সত্যি, তুই হেল্প করবি?”
” করব না কেন? কিন্তু শর্ত আছে।”
” কি শর্ত?”
” সেটা পরে বলবো। পেন্ডিং থাক। তুই বিল নিয়ে চিন্তা করিস না।”
আজমীর প্রণয়কে জড়িয়ে ধরে বলল,” থ্যাংকস দোস্ত। বাঁচালি।”
” ছাড়, ছাড়, শা’লা! সুযোগ পেলেই সাপটা-সাপটি। কেউ দেখলে উল্টা-পাল্টা মিন করবে।”
আজমীর টয়লেটে ঢুকতে ঢুকতে বলল,” একটু ফ্রেশ হয়েই নেই। যে শক খেয়েছি, এক নাম্বার পেয়ে গেছে।”
প্রণয় খুব জোরে হাসল। তার মনটা এখন ভালো। আগের চেয়ে খুব বেশি ফুরফুরে। কারণ তুলিদের পরিকল্পনা দেখেই বোঝা যায় যে তুলি আজমীরকে পছন্দ করে না। এর চেয়ে শান্তির ব্যাপার আর কিছুতে নেই। সে বের হওয়ার সময় হঠাৎ সামনে তুলিকে দেখতে পেল। তুলি হাসছে। তার চোখের চামড়ার কুঞ্চন দেখেই হাসিটা বোঝা গেল। প্রণয় একটু অবাক হয়ে বলল,” কি ব্যাপার তুলি? আপনি এখানে কেন?”
” আপনাদের কথা শুনছিলাম। আজমীর ভাইকে হেল্প না করলেও পারতেন। আমরা তো উনাকে ট্র্যাপে ফেলতে চেয়েছিলাম।”
” সেটা আপনাদের প্ল্যান। আমাকে এতে অংশীদার করবেন না প্লিজ। আজমীর আমার বেস্টফ্রেন্ড। ওর বিপদে আমি কিভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি?”
তুলি মুচকি হেসে বলল,” ইমপ্রেসিভ! আপনার এই চিন্তাটা আমার ভালো লেগেছে।”
প্রণয় হাঁটতে হাঁটতে বলল,” শুধু কি চিন্তাটাই ভালো লেগেছে?”
” আপনি যে সব ধরতে পেরেও আজমীর ভাইকে কিছু জানাননি এটাও ভালো লেগেছে।”
” আর? ”
” আরও শুনতে চান?”
” যদি থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই শুনতে চাই।”
” আপাতত আর কিছু নেই।”
প্রণয় অভিযোগ করার মতো বলল,” কাল সারারাত আমি একজনের ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু কেউ হয়তো ভুলে গেছিল।”
তুলির মুখ মলিন হলো। অপরা*ধী কণ্ঠে কৈফিয়ৎ দেওয়ার মতো বলল,” এক্সট্রিমলি স্যরি। আসলে আমার কাছে ফোন নেই। আর ফ্রেন্ডের মোবাইল থেকে আপনাকে ফোন দিতে ইচ্ছে করেনি।”
ফোন নেই ব্যাপারটা শুনে প্রণয় একটু চমকালো। তারপর কোমল গলায় বলল,” ওহ, ইটস ওকে।”
তুলি গিয়ে রাইফার পাশে বসল। প্রণয় বিড়বিড় করে বলল,” বাট আই লভ ইউ।”
রাইফা প্রশ্ন করল,” কিরে, বলদ কই?”
” ওয়াশরুমে আছে। তিনি প্রণয়ের কাছে টাকা ধার চেয়েছেন।”
রাইফা বিরক্ত হয়ে বলল,” এইতো, জানতাম। অসভ্যটা যখন প্রণয়কে টেনে নিয়ে গেল তখনি বুঝেছি টাকা ধার চাইবে। আস্তা ফকির! প্রণয় দিতে রাজি হয়েছে?”
তুলি বিরস মুখে বলল,” ফ্রেন্ড যেহেতু, রাজি তো হবেই!”
রাইফা রাগে টেবিলে শব্দ করে বলল,” শিট, তাহলে বেটাকে চূড়ান্ত শিক্ষাটা আর দেওয়া গেল না।”
” থাক, এমনিও যথেষ্ট শিক্ষা দিয়েছিস। আর মনে হয় না কিছু করতে হবে।”
” তুই জানিস না। এই ধরণের বদমাইশ সহজে ভালো হয় না।”
আজমীর ফিরে এলো। রাইফা আর তুলি ফিসফিসানিও থেমে গেল। আজমীর ঠিক রাইফার পাশে এসে বসল। আগের মতো তাকে আর বিব্রত দেখাচ্ছে না। সে এখন নিশ্চিন্তে হাসছে। বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বলল,” সবার খাবার অর্ডার হয়েছে?”
রাইফা মৃদু হেসে বলল,” হুম। কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার চলে আসবে।”
আজমীর একটু কাছে এসে বলল,” তোমার জন্য কি অর্ডার করেছো?”
রাইফা ঢং করে বলল,” আমার তো ক্ষিদেই পাচ্ছে না। আপনাকে দেখতে দেখতে ক্ষিদেই চলে গেছে। পার্সেল নিয়ে যাই? বাসায় গিয়ে খাবো।”
” উফ, এইভাবে কথা বোলো না। বুকে ব্যথা লাগে। পার্সেলে কি কি নিবে দ্রুত সিলেক্ট করে ফেলো। ”
” আরে থাক, পরে সিলেক্ট করবো।”
” আচ্ছা।”
আজমীর রাইফার কাঁধে হাত রাখল। রাইফা মনে মনে গালি দিয়ে আলগোছে হাতটা সরিয়ে নিল। খাবার চলে আসার পর বাচ্চারা খুশিতে হাত-তালি দেওয়া শুরু করল। তাদের চোখেমুখে আনন্দ ঝলমল করছে। খুব সুন্দর একটি দৃশ্য। আজমীর ঢং করে বলল,” তোমার পাশে বসে ওদের দেখতে আমার অনেক ভালো লাগছে তুলি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। বিয়ের পর আমাদের সাতটা বাচ্চা হবে।”
রাইফার গা শিরশির করে উঠল। এমন বেহুদা কথা বলার জন্য ইচ্ছে করল পায়ের জুতো খুলে আজমীরকে সাতটা জুতোর বারি দিতে। অন্য সময় হলে সেটাই করতো সে। কিন্তু আপাতত বাচ্চাদের খাওয়া শেষ হওয়া অবধি ধৈর্য্য ধরতে হবে। রাইফার আরও পরিকল্পনা ছিল। সে ভেবেছিল সাতজন বাচ্চার পরিবারের জন্যেও পার্সেল কিনে নিবে। আর সেগুলোর বিল ধরিয়ে দিবে আজমীরের হাতে। কিন্তু এখন সেই পরিকল্পনা বাদ। কারণ এখন সে যেটাই করবে, সব প্রণয়ের উপর দিয়ে যাবে। বিল তো প্রণয়ই দিচ্ছে! আজমীর কথায় কথায় রাইফার হাত ধরতে ব্যস্ত। সে উঠে যেতে চাইলেও আজমীর উঠতে দেয় না। অন্যদিকে প্রণয় আর তুলি ব্যস্ত বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে। যারা হাত ধুঁতে পারছে না, প্রণয় তাদের স্যানিটাইজার দিল। যারা চামচ দিয়ে খেতে পারে না তাদের হাত দিয়ে খাওয়া দেখিয়ে দিল। যার যখন যেটা প্রয়োজন তাকে সেটা বেড়ে দিল। বাচ্চাদের যত্ন করে তারা খাওয়াচ্ছিল। রাইফা হঠাৎ বলল,” আচ্ছা আজমীর ভাই, আপনি এতো অপদার্থ কেন?”
আজমীর থতমত খেয়ে বলল,” মানে?”
” আপনার ফ্রেন্ড ওদিকে এতো কাজ করছে অথচ আপনি আমার সাথে লেপ্টে বসে আছেন। লজ্জা করে না আপনার?”
আজমীর আহত দৃষ্টি নিয়ে তাকাল। রাইফা বলল,” হাঁ করে তাকিয়ে থাকবেন না৷ যান, প্রণয়কে সাহায্য করুন।”
” তুমি আমাকে ভাই বলো। অথচ প্রণয়কে নাম ধরে ডাকছো কেন?”
” স্যরি, ভুলে গেছিলাম। প্রণয় ভাইকে সাহায্য করুন।”
আজমীরের একদম উঠতে ইচ্ছে করছে না। তবুও সে ভদ্র সাজার জন্য উঠল। তুলি তখন এসে রাইফার পাশে বসে গেল। রাইফা হাঁফ ছেড়ে বলল,” ইরিটেট হয়ে যাচ্ছিলাম একদম। ”
তুলি মুগ্ধদৃষ্টিতে প্রণয়কে দেখছে। বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট যে মেয়েটা ছিল, সে তার জামায় খাবার ফেলে দিয়েছে। প্রণয় সেটা মুছে দিচ্ছিল। তুলি গালে হাত রেখে বলল,” হি ইজ সো সুইট। আই লভ হিম।”
রাইফাও একই ভঙ্গিতে বলল,” মি টু।”
তুলি সেটা শুনল কিন্তু তার মাথায় তখন অন্য চিন্তা এলো না। তার সম্পূর্ণ মনোযোগ ছিল প্রণয়ের দিকে।
বাচ্চাদের খুশি করে বিদায় দেওয়া হলো। এবার রাইফা আর তুলি আজমীরের উদ্দেশ্যে একসাথে বলল,” বাই।”
আজমীর রাইফার হাতে উপহারের বড় প্যাকেটটা দিয়ে বলল,” এগুলো তোমার জন্য কিনেছিলাম।”
রাইফা বলল,” থ্যাঙ্কিউ আজমীর ভাই। কিন্তু এটা আমি নিতে পারবো না৷ এটা আপনি আমার ফ্রেন্ডকে দিন।”
” কেন?”
রাইফা এবার নিজের নিকাব খুলে ফেলল। আজমীর ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। তুলিও হাসতে হাসতে তার নিকাব খুলল। আজমীর টাশকি খেয়ে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বলল,” চিটিং। তোমরা আমার সাথে চিটিং করেছো। এসব কি? তুলি, এটা তুমি কিভাবে করতে পারলে?”
তুলি দুঃখিত হওয়ার ভাণ ধরে বলল,” কষ্ট পাবেন না আজমীর ভাই। আপনি যখন রাইফার হাত ধরে আমাকে ভুলে গেলেন তখন আমিও কষ্ট পেয়েছিলাম। হুম!”
” কিন্তু তোমরা এমন নিখুঁত অভিনয় করলে আমি চিনবো কিভাবে বলোতো? এখনও কনফিউশন লাগছে। ”
প্রণয় হাসি চেপে বলল,” আমি তো আগেই তোকে বলেছিলাম৷ হাত ছেড়ে দে। ওইটা তুলি না। কিন্তু তুই-ই তো বললি, নরম হাতের মালকিন পেলে তুলির দরকার নেই!”
তুলি চোখ বড় করে বলল,” ছিঃ আজমীর ভাই, আপনি এমন?”
আজমীর জীভ কেটে দুইপাশে মাথা নেড়ে বলল,” তওবা, তওবা। আমি এমন কিছুই বলিনি। প্রণয়, দ্যাখ মিথ্যা বলিস না ভাই।”
প্রণয় বিস্ময় নিয়ে বলল,” দারুণ পল্টিবাজ তো তুই! এখন আমি মিথ্যা বলছি?”
” হ্যাঁ বলছিস।”
আজমীর পুরোপুরি অস্বীকৃতি জানাল। সে নাকি এই কথা ভুলেও বলেনি। তুলির কাছে এসে কাতরভাবে অনুরোধ করল,” রাগ কোরো না তুলি। এমন ভুল আর হবে না। ভুলকে ভুল মনে করে মাফ করে দাও।”
তুলি মেনে নেওয়ার মতো বলল,” আচ্ছা বুঝেছি। এখন বাদ দিন।”
” তোমার জন্য কিনেছি এগুলো। প্লিজ নিয়ে যাও। তাহলে বুঝবো মাফ করেছো।”
” আমার এগুলো লাগবে না।”
” প্লিজ, নাও। আমি রিকোয়েস্ট করছি। এর মধ্যে একটা গিফট প্রণয় পছন্দ করেছিল। অন্যটা আমি নিজে কিনেছি তোমার জন্য। তোমার জরুরী জিনিস।”
প্রণয়ের নাম শুনে তুলি একবার তার দিকে তাকাল। প্রণয় চোখের ইশারায় বলল নিতে। তাই তুলি উপহারগুলো হাতে নিল। রাইফা গাড়িতে উঠে যাওয়ার আগে বলল,” বিদায় আজমীর ভাই।”
গাড়ি জোরে টান দিল। আজমীর আফসোস করে বলল,” দুইটাই জোস ছিলরে! এর মধ্যে যেকোনো একটা পটলেই হয়ে যেতো। আচ্ছা প্রণয়, তোর কি মনে হয়? তুলি পটবে? নাকি ওর ফ্রেন্ডকে ট্রাই করবো?”
প্রণয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভাবল। তারপর বলল,” শোন।”
আজমীর মনোযোগ দিয়ে তাকাল। প্রণয় তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,” তুই একটা শু*য়োর।”
” হোয়াট?”
প্রণয় হেঁটে সামনে চলে গেল। তার খুব জরুরী কাজ আছে। তুলির জন্য মোবাইল কিনতে হবে।
সন্ধ্যাবেলা রাইফা আর তুলি তন্বিকে ফোনে সারাদিনের মজার কথাগুলো বলছিল আর খুব হাসছিল। তন্বি আক্ষেপ নিয়ে বলল,” ইশ, তোরা ওখানে কত মজা করছিস। আমি থাকলে আমিও ইঞ্জয় করতে পারতাম।”
তুলি মনখারাপ করে বলল,” আহারে, চলে আয় না।”
” আসতেই তো চাই। কিন্তু উপায়ই পাচ্ছি না। ওহ তুলি, তোর জন্য একটা গুড নিউজ আছে তো।”
” কি?”
” সামির ভাই আজ বিকালে বাড়ি এসেছিল। আমাকে একটা নতুন মোবাইল আর সিমকার্ড দিয়ে গেল। তোকে দেওয়ার জন্য। তুই নাকি এই ফোন দিয়ে উনার সঙ্গে যোগাযোগ করবি।”
তুলি হাসতে হাসতে বলল,” হোয়াট আ জোক! তুই এক কাজ কর। মোবাইলটা নিয়ে কুয়ায় ফেলে দে।”
” কুয়ায় কেন ফেলবো? তুই বললে ফিরিয়ে দিবো। অবশ্য ফেরত নিবে বলে মনে হয় না।”
” তাহলে তুই নিজেই ইউজ কর। তোর ফোন তো খালি হ্যাং মারে।”
” তোর গিফট আমি কেন ইউজ করবো?”
রাইফা তখন আজমীরের উপহারগুলো খুলে দেখছিল। দুইটার মধ্যে একটা ছিল এন্ড্রয়েড। রাইফা হেসে উঠে বলল,” দ্যাখ, দ্যাখ, বলদেও তোকে ফোন গিফট করেছে।”
তুলি অবাক না হয়ে পারল না। রেগে বলল,” ওহ শিট, আগে জানলে তো আমি নিতামই না।”
তন্বি ওইপাশ থেকে জানতে চাইল,” কি হয়েছেরে?”
” আজমীর ভাইও আমাকে ফোন দিয়েছে জানিস?”
” তাই নাকি? বাবা!”
” আচ্ছা রাখছি। তোকে পরে ফোন করবো।”
তুলি মোবাইলটা হাতে নিল৷ ভালোই দামী ফোন। কিন্তু এটা সে কিছুতেই নিবে না। ঠিক করল ফেরত পাঠাবে। রাইফা হাই তুলে বলল,” মোবাইলটা সুন্দরই ছিল। তবে তুই রাখতে না চাইলে থাক। প্রণয়ের কাছে দিয়ে দিস।”
হঠাৎ কলিংবেল বাজল৷ রাইফা দরজা খুলতে গেল। তুলি এর মধ্যে দ্বিতীয় উপহারটা খুলে দেখতে লাগল। মিনিসো থেকে কেনা একটা কিউট, সুন্দর বিড়াল। তুলির খুব ভালো লাগল। এটা নিশ্চয়ই প্রণয় পছন্দ করেছিল! তাই এটা ফেরত দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে আজমীরের দেওয়া মোবাইল অবশ্যই ফেরত দিতে হবে।
রাইফা ফিরে এলো একটা পার্সেল নিয়ে। তুলি বলল,” কিরে?”
রাইফা বিস্ময় নিয়ে বলল,” তোর নামে পার্সেল এসেছে।”
এবার তুলিও অবাক হলো। দ্রুত হাতে পার্সেল খুলেই দেখল নতুন আরেকটা ফোন। রাইফা বিস্ময়ে তাঁক লেগে বলল,” ওয়াও!”
তুলি হতভম্ব! এটা আবার কে পাঠালো? মোবাইলের কভারের উপর মার্কার কলম দিয়ে লেখা একটা বার্তা ছিল,” আজকেও আমি রাত জেগে অপেক্ষায় থাকবো। শুধু একটা কলের অপেক্ষা। উপহারটা আপনাকে নিতেই হবে তুলি। কারণ এটা আপনার প্রয়োজনে না, আমি নিজের প্রয়োজনে দিয়েছি।
-প্রণয়।”
তুলি মোবাইলটা হাতে নিয়ে বোবার মতো দাঁড়িয়ে রইল। রাইফা সন্দেহী দৃষ্টিতে বলল,” প্রণয়ও তোকে ফোন গিফট করেছে? ব্যাপার কি?”
” সে আমাকে তার ফোন নাম্বার দিয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছিলাম আমার কাছে মোবাইল নেই। এজন্যই হয়তো মোবাইল কিনেই পাঠিয়ে দিয়েছে।”
রাইফা হাসতে হাসতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। গড়াগড়ি খেয়ে বলল,” এতোদিন তোর ফোনই ছিল না। আর এখন দ্যাখ, দুইটা নতুন ফোন। ওহ স্যরি, তিনটা। আরেকটা তো তন্বির কাছে আছে।”
তুলি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোনগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। এই মুহূর্তে তার কাছে ফোনের চেয়েও বড় দুশ্চিন্তা হলো, আগামীকাল শানকে পড়াতে যেতে হবে। অর্থাৎ নতুন আরেকটা দূর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
চলবে