বেদনার_রঙ_নীল পয়তাল্লিশতম পর্ব

0
381

#বেদনার_রঙ_নীল
পয়তাল্লিশতম পর্ব.
লিখা- Sidratul Muntaz

গতরাতেও আলাদা ঘরে শুয়েছে প্রণয়। তুলির সাথে একটা কথাও বলেনি। তুলিও বলেনি কারণ কথা বলতে গেলেই ঝগড়া হবে। সে ঝগড়া করতে চায় না৷ সকালে তুলির ঘুম ভাঙার আগেই প্রণয় ক্যাম্পাসে চলে গেছে। তুলির অবশ্য আজ কোচিং-এ ক্লাস ছিল। এক্সামও ছিল। তাও সে যায়নি। বিয়ের পর এবং বিশেষ করে বাচ্চাটা হারানোর পর থেকে লেখাপড়ার প্রতি একটা অনীহা এসে গেছে তুলির। সামনে মেডিকেল টেস্ট। এক্সামটা মনে হয় দেওয়া হবে না। সজ্ঞানে হোক কিংবা মনের অবচেতনে, সন্তান হারানোর জন্য তুলি নিজের লেখাপড়াকেই দায়ী মনে করে। যে কারণে আগের মতো পড়াশুনার উদ্যমটা আর সে পাচ্ছে না। এজন্যই লেখাপড়া শেষ করার আগে কখনও বিয়ে করতে চায়নি সে। সংসারে ভালো থাকতে হলে লেখাপড়া সেক্রিফাইস করতে হয়। আবার লেখাপড়ায় ভালো করতে হলে সংসার সেক্রিফাইস করতে হয়। পুরোদমে দুই জায়গায় সফলতা অসম্ভব।

দুপুরে রাইফা তুলির খোঁজ নিতে তার বাড়িতে এলো। গতকাল থেকে তুলির মনমরা লাগছে। রাইফাকে দেখে একটু ভালো বোধ হলো। রাইফা অবশ্য খুবই অবাক। তুলি পড়াশুনা নিয়ে এতো সিরিয়াস ছিল। আর এখন কথায় কথায় ক্লাস মিস দিচ্ছে। আবার বলছে মেডিকেল এক্সামও দিবে না৷ এতো কষ্ট করে এপ্লাই করল, আর এখন এক্সামই দিবে না?

রাইফা কিছুটা ঠাট্টার সুরেই বলল,” শ্বশুরবাড়ি আসতে না আসতেই পড়াশুনা ভুলে গেলি? কি ব্যাপার? হাসব্যান্ডের রোমান্সের কাছে কি এখন পড়াশুনা পানসে লাগছে?”

তুলি মুখ বেজার করে বলল,” কিসের হাসব্যান্ড আর কিসের রোমান্স? আমি তো ভুলেই গেছি যে আমার বিয়ে হয়েছে। মনে হচ্ছে কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামী আমি। জেলখানায় বন্দী আছি।”

রাইফা কিছু বুঝতে না পেরে ঠোঁট উল্টালো,” মানে কি?”

তুলি তার ব্যক্তিগত ঝামেলার কথাগুলো রাইফাকে শোনালো। কারো কাছে সব শেয়ার করতে পেরে তার স্বস্তি লাগছিল। কিন্তু রাইফা এসব শুনে অস্থির হয়ে উঠল,” প্রণয়ের এতো সাহস! এমন করছে কেন ও তোর সাথে? তাকে পগলা কুত্তা কামড়েছে নাকি? এমন ভাব যেন তুই ইচ্ছে করেই সবটা করেছিস! আরে ভিক্টিম তো তুই নিজেও। দাঁড়া, ওকে আমি এখনি ফোন করে ধুঁয়ে দিচ্ছি। আস্তা বেয়াদব!”

” প্লিজ কিছু করিস না। তারপর বলবে আমি তোকে নালিশ দিয়েছি।”

রাইফা কথা শোনার মেয়ে নয়। সে সত্যিই মোবাইল বের করে প্রণয়ের নাম্বারে ডায়াল করল। কিছুক্ষণ রিং হতেই ওই পাশ থেকে নিস্তরঙ্গ স্বর ভেসে এলো,” হ্যালো।”

” প্রণয়, এইসব কি শুনছি? ক্যান ইউ এক্সপ্লেইন?” রাইফা বজ্রকণ্ঠে প্রশ্ন করল।

” তুমি কি শুনেছো সেটা আমি কিভাবে এক্সপ্লেইন করবো? আমি তো জানিই না কি ব্যাপারে কথা বলছো!”

প্রণয়ের কণ্ঠে ঘোর বিস্ময়। রাইফা উন্মত্ত হয়ে বলল,” তুমি জানো না? আমার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে তুমি দিন-রাত মিসবিহেভ করছো আর বলছো তুমি জানো না? এমন কেন করছো? তার কি দোষ বলো? সে কিন্তু প্রথমে তোমার কাছে আসেনি। তুমিই তাকে প্রপোজ করেছিলে, তাকে পটিয়েছিলে, নিজের ইচ্ছায় তাকে বিয়ে করেছিলে আর এখন তুমিই ইগনোর করছো। মানে তোমার প্রবলেমটা কি?”

প্রণয় একটু সময় চুপ থেকে গম্ভীর স্বরে বলল,” তুমি যদি এই বিষয়ে কথা বলার জন্য ফোন দিয়ে থাকো, তাহলে আমি রাখছি।”

” রাখছি মানে? এই বিষয়ে কথা বলার জন্যই আমি তোমাকে ফোন দিয়েছি এবং তোমাকে কথা বলতেই হবে।”

” আমি এখন একটা ইম্পোর্ট্যান্ট ক্লাসে আছি।”

” তোমার ইম্পোর্ট্যান্ট ক্লাস চুলোয় যাক। জবাব না দিয়ে ফোন রাখবে না তুমি…”

রাইফার কথার মাঝেই ফট করে লাইন কাটল প্রণয়। রাইফা রেগে আগুন হয়ে আবার ফোন করতে লাগল। কিন্তু প্রণয় আর ফোন ধরল না। সে অবশ্য রাইফাকে মিথ্যা বলেছে। সে মোটেও ক্লাসে নেই। আপাতত ক্যান্টিনে বসে প্রিয়ন্তীর সাথে কফি আর মাটন চাপ খাচ্ছে। প্রণয় মোবাইল রাখতেই প্রিয়ন্তী প্রশ্ন করল,” কে ছিল?”

“কেউ না।” নির্লিপ্ত উত্তরটি দিয়েই মাটন চাপে কামড় বসালো প্রণয়। মনখারাপ থাকলেই সে এমন করে। তার কথা কমে যায়। খাওয়া-দাওয়া বেড়ে যায়।এই ব্যাপারটা প্রিয়ন্তী লক্ষ্য করেছে। যদিও প্রণয় তার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো ঝামেলা শেয়ার করে না। তাও প্রিয়ন্তী জিজ্ঞেস করল,” কি হয়েছে তোর? কোনো ঝামেলা?”

” না।”

প্রণয় না বললেও প্রিয়ন্তী খুঁচিয়ে ঠিক বের করে ফেলবে।ইদানীং সে খেয়াল করেছে প্রণয় বাড়ির থেকে বাইরেই বেশি সময় কাটাচ্ছে। অথচ তার নতুন বিয়ে হয়েছে। বাড়িতে বউ আছে। তবুও কেন বাড়ির প্রতি এতো অবহেলা প্রণয়ের? নিশ্চয়ই কোনো ঘটনা আছে! প্রিয়ন্তী বুদ্ধি করে বলল,” চল, আজ তুলির সাথে দেখা করতে তোর বাড়িতে যাবো।”

প্রণয় অকপটে বলল,” আজ না!”

” কেন?”

প্রণয় খাওয়া শেষ করে উঠতে উঠতে বলল,” কারণ আমি এখন বাড়ি যাচ্ছি না।”

” তাহলে কোথায় যাবি?”

প্রিয়ন্তী একটি টিস্যু নিয়ে প্রণয়ের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা সস মুছে দিতে দিতে প্রশ্নটি করল। প্রণয় উত্তর দেওয়ার আগেই তাদের এই দৃশ্য দেখে দূর থেকে শিষ বাজাল কেউ। প্রণয় আর প্রিয়ন্তী কৌতুহল নিয়ে তাকাল শব্দের উৎসের দিকে। আজমীর হাততালি দিতে দিতে এগিয়ে আসছে। এতোদিন ক্যাম্পাসে ছিল না সে। আর থাকলেও হয়তো প্রণয়ের সামনে পড়েনি। হঠাৎ তাকে এগিয়ে আসতে দেখেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল প্রণয়ের৷

আজমীর হাস্যরসাত্মক কণ্ঠে বলল,” বাহ, দারুণ ব্যাপার তো! আচ্ছা প্রণয়, তুই যে ক্যাম্পাসে বসে এমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রিয়ন্তীকে ডেইট করিস এটা কি তোর বাড়ির বউ জানে?”

আজমীরের কথায় শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেল প্রণয়ের। এমনিতেও তুলির মিসক্যারেজের জন্য সে আজমীরকে দায়ী মনে করে। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে হলেও আজমীরই এই ঘটনার জন্য দায়ী। সেদিন রাতে যদি তুলি আজমীরকে দেখে ভয় না পেতো হয়তো তাহলে এই অঘটন ঘটতোই না। আজমীরের মন্তব্য শুনে প্রিয়ন্তী চোখ ছোট করে তাকাল,” কি বললি তুই? প্রণয় আমাকে ডেইট করছে মানে?”

আজমীর ঠোঁট গোল করে অবাক হওয়ার ভং ধরল। তারপর বলল,” ও, এটা ডেইট না? তাহলে কি বলা যায়?”

উত্তরটা প্রণয় দিল। তবে কথায় না, শক্তহাতে আজমীরের চোয়াল বরাবর ঘুষি মেরে। প্রিয়ন্তী চমকে উঠল। আজমীরও অবশ্য থেমে থাকল না। সেও পাল্টা আঘাত করল। মুহূর্তেই ক্যান্টিনে একটি অসংলগ্ন পরিস্থিতি তৈরী হয়ে গেল। ক্যাম্পাসের ভেতরে এমন ধৃষ্টতা দেখানোর অপরাধে তাদের ডিরেক্টরের অফিসরুমে ডাক পড়ল। মাথা নিচু করে দু’জনেই ডিরেক্টরের মুখোমুখি দাঁড়ালো জবাবদিহি করতে।
___________
বিকালে রাইফা তুলিকে নিয়ে শপিং-এ এসেছে। তার ধারণা জামা আর কসমেটিক্স কিনলে তুলির মন ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু তুলির আসলে শপিং-এ কোনো আগ্রহ নেই। সে শুধু রাইফাকে খুশি করার জন্য সাথে এসেছে। রাইফা হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটি পুতুলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। পুতুলটির গায়ে সাদা আর গোলাপি মিশেলের দারুণ একটি শাড়ি। রাইফা উৎফুল্ল কণ্ঠে ডাকল,” এই তুলি, দ্যাখ! শাড়িটা জোস না?”

তুলি মনোযোগ দিয়ে দেখল৷ শাড়ি সুন্দর কিন্তু ব্লাউজের ডিজাইন একদমই যা ইচ্ছে তাই। হাতাকাটা তার উপর গলা অনেকখানি বড়। আর পেছনে তো কাপড়ই নেই। শুধু ফিতা। সে অসন্তুষ্ট গলায় বলল,” হ্যাঁ সুন্দর। কিন্তু এমন ব্লাউজ পরার চেয়ে বিনোদিনীর মতো ব্লাউজবিহীন থাকাও অনেক ভালো।”

রাইফা ফিক করে হেসে বলল,” এই শাড়িটা কিনে ফেল। তোকে ভালো মানাবে।”

” ফাজলামি করিস না। আমি পরবো এমন শাড়ি? মাথাখারাপ? এগুলো পরবে এডাল্ট ফিল্মের মডেলরা।”

রাইফা তুলির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,” একদিন একটু এডাল্ট ফিল্মের মডেল সেজে দ্যাখ। তোর ঘাড়ত্যাড়া স্বামীর মন যদি গলে!”

” এইভাবে ওর মন গলানোর কোনো শখ নেই আমার। ছিঃ।”

তুলির গাল লাল হয়ে গেছে। সে রাগী ভঙ্গিতে সামনে হাঁটতে লাগল। রাইফা হাসতে হাসতে তার পেছনে এলো।

___________
আজমীরকে ছয়মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ বছর সেমিস্টার ফাইনালও দিতে পারবে না সে৷ লেখাপড়া নিয়ে আজমীরের তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই। বরং সে তেতে আছে প্রণয়ের উপর। ক্যান্টিনে সাক্ষী হিসেবে যারা ছিল তারা সবাই প্রণয়ের পক্ষ নিয়েছে। আজমীর যে একবার প্রণয়ের এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে জেলে গিয়েছিল সেই ঘটনাও উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে আজমীরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্রণয়ের জন্য ভার্সিটির সবার সামনে তার বারংবার মান-সম্মানের জলাঞ্জলি হচ্ছে। এতো অপমান সে ভুলবে না। প্রতিশোধের নেশা এবার আজমীরের রগে রগে প্রবাহিত হচ্ছে৷ জ্বলে-পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে তার শরীর, মন, মস্তিষ্ক। তুলিকে অপহরণ করে প্রণয়কে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার যে পরিকল্পনা এতোদিন মাথায় ঘূর্পাক খাচ্ছিল এখন তা আরও ত্বরান্বিত হলো। তুলিকে চব্বিশ ঘণ্টা অনুসরণ করার জন্য সে গোয়েন্দা নিয়োগ দিয়েছিল। যার প্রধান কাজ সুযোগ পেলেই তুলিকে উঠিয়ে নেওয়া। আজমীর ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে অনেকটা কদম হেঁটে এলো। পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে ফোন করল তইমুরকে।

” হ্যালো স্যার।”

” তইমুর, কোথায় আছো তুমি?”

” ডিউটিতেই আছি স্যার। তুলনা সরকারকে ফলো করছি। ”

“একটা সাধারণ মেয়েকে কিডন্যাপ করতে এতো সময় লাগে? আমি কিন্তু আমার ধৈর্য্য আর কুলাতে পারছি না।”

তইমুর বেশ হতাশ গলায় বলল,” কি করবো স্যার? মেয়েটা তো এতোদিন বাড়ি থেকেই বের হচ্ছিল না। তাছাড়া যখনি বের হয়, তার সঙ্গে কেউ না কেউ থাকে। এখনও তার সঙ্গে আরেকটা মেয়ে আছে।”

আজমীর স্পষ্ট করে বলল,” এতোকিছু জানি না। শোনো, আজকের মধ্যেই ওকে আমার চাই। কিভাবে আনবে সেটা তুমি জানো। কিন্তু কাজটা আজকের মধ্যেই করতে হবে। গট ইট?”

” জ্বী স্যার।”

তইমুরের কণ্ঠে ফ্যাকাশে হয়ে গেল। আজমীর লাইন কাটল। তইমুর পড়ে গেল মহা মুশকিলে। আজকের মধ্যে সে কিভাবে কি করবে? তারপর তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। অনেকক্ষণ ধরে বাড়ি পাহারা দেওয়ার পর তইমুর বুঝতে পেরেছে, বাড়িতে কেউ নেই। মিষ্টি আর অজান্তাকে বের হতে দেখা গিয়েছে। রাইফা আর তুলি যে শপিংমলে গেছে সেখান থেকে ফিরতে কমপক্ষে আধঘণ্টা লাগবে।

তইমুর ঠিক করল সে বাড়ির ভেতরে ঢুকে অবস্থান নিয়ে থাকবে৷ তুলি এলেই তাকে অপহরণ করবে। রাস্তা-ঘাটে মানুষ দেখে ফেলার ভয় আছে। কিন্তু নিরিবিলি বাড়ির ভেতর কোনো ভয় নেই।

____________
শান ড্রয়িংরুমে বল খেলছে। যেদিন বাড়ি ফাঁকা থাকে সেদিন তার নিজেকে রাজা মনে হয়। ইচ্ছেমতো উল্টা-পাল্টা কান্ড করতে থাকে। সে বল খেলছে ভারী পিতলের কলসি দিয়ে। কলসির উপর নকশা করা কাপড় আর ভেতরে কাগজ মুড়িয়ে বলের আকৃতি দেওয়া হয়েছে। দূর থেকে দেখলে যে কেউ ভাববে বল। এই বল মাথায় লাগলে মানুষ মরেও যেতে পারে। তাই শানের মাথায় উন্নতমানের হেলমেট লাগানো। সে তাদের ওয়াল শোকেজটা ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলেছে। আজকে প্রণয় বাড়িতে এলে কপালে শনি আছে তা নিশ্চিত। শান মনে মনে ভাবল, প্রণয় বাড়ি ফেরার আগেই সে পালিয়ে যাবে।
বাড়িতে প্রবেশ করে তইমুরের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল। এতো ভাঙচুর কেন? ভূমিকম্প হয়েছিল নাকি? সে তো টের পায়নি!
অপরিচিত কারো পায়ের শব্দ শুনে শান সচকিত হলো। দরজা ভেতর থেকে লক তাহলে কেউ বাড়িতে ঢুকল কিভাবে? প্রণয় চলে আসেনি তো? ভয়ে শান পিতলের কলসিতে একটা লাথি মেরেই ভো দৌড়ে দিল।
তইমুর প্রবেশ করেছে পেছনের বাগানের দরজা দিয়ে। বাগানের দেয়াল বেয়ে সে ভেতরে এসেছিল৷ ছুটে আসা ভারী বলটা ঠিক তইমুরের মাথায় এসে আঘাত করল। ভয়ানক একটা আর্তচিৎকার দিয়েই মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল তইমুর। শান উপরে উঠতে নিয়ে থেমে গেল। প্রণয়ের চিৎকার তো এমন নয়। এর মানে কি অন্যকেউ এসেছে? শান কৌতুহলী হয়ে নিচে নামতেই দেখল একজন আগন্তুক আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। বেচারার মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে৷ শান ফ্রীজ থেকে বরফ আর শেলফ থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো।

_________
তুলি যা ভেবেছিল তাই হয়েছে। বাড়িতে কেউ নেই। শান একা ছিল। যথারীতি বাড়ির অবস্থা আজকে নাজেহাল। ড্রয়িংরুমটায় যেন বিস্ফোরণ ঘটে গেছে। সবকিছু লন্ড-ভন্ড করে রেখে শান নিশ্চয়ই তার ঘরে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে! রাইফা তুলিকে ড্রপ করেই চলে গেছে। তুলি শপিং ব্যাগগুলো নিজের ঘরে রেখে এসে শানের ঘরে ঢুকল। বিছানায় লম্বা হয়ে একজন শুয়ে আছে। মাথায় তার ব্যান্ডেজ। সম্ভবত লোকটি ঘুমাচ্ছে। শান তার পাশেই বসে আইপ্যাডে গেইমস খেলছিল। তুলি অবাক হয়ে বলল,” এই সাইক্লোন, উনি কে?”

শান কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,” আমি জানি না।”

” তোমার বিছানায় শুয়ে আছে আর তুমিই জানো না!”

” আমি বল খেলছিলাম। হঠাৎ এই আঙ্কেল ভেতরে চলে এলো। তার মাথায় বল লাগায় মাথা ফেটে গেছে। এজন্য আমি তাকে ব্যান্ডেজ করে উপরে নিয়ে এলাম।”

তুলি হতভম্ব কণ্ঠে বলল,” বল লাগায় মাথাই ফেটে গেল?”

শান এবার হাসল। অপরাধী ভঙ্গিতে নিজের মাথা চুলকে বলল,” আসলে… ওইটা নরমাল বল ছিল না। ”

“তাহলে কি?”

শান জিনিসটি তুলির দিকে বাড়িয়ে ধরল। তুলি বল হাতে নিয়ে চমকে উঠল। এই জিনিস কারো মাথায় লাগলে তার মরে যাওয়া উচিৎ। লোকটি যে এখনও বেঁচে আছে সেটাই অনেক। চোখ বড় করে তুলি বলল,” এইটা দিয়ে তুমি কোন আক্কেলে খেলছিলে?”

” আমার সব বল তো রেডলাইট লুকিয়ে রাখে। কি করবো?”

তুলির উপস্থিতি টের পেয়ে এতোক্ষণে চোখ মেলে তাকালো তইমুর। তুলি মুচকি হেসে বলল,” এখন আপনি কেমন বোধ করছেন?”

তুলির হাতে বলের মতো জিনিসটি দেখে তইমুরের মাথায় আবার ব্যথা শুরু হয়েছে। সে একবার শানের দিকে চেয়ে খুব কষ্টে বলল,” পানি খাবো।”

শান দৌড়ে ছুটে গেল পানি আনতে। তুলি বলটি নিচে রেখে বিছানার এক কোণে বসল। তইমুর ভাবছে, এই মুহূর্তে তুলিকে ক্লোরোফরম শুঁকিয়ে দিলে কেমন হয়? সে যেই না পকেট থেকে রুমাল বের করতে যাবে তখনি শান এসে বলল,” আঙ্কেল, আপনার পানি।”

তইমুর দ্রুত রুমালটি আবার পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল। শান কোমরে হাত গুঁজে প্রশ্ন করল,” আপনি বাড়িতে কেন এসেছিলেন সেটা কিন্তু এখনও বলেননি। কেন এসেছিলেন?”

তইমুর দ্বিধায় পড়ে গেল। কি অযূহাত দেবে? আমতা-আমতা করে বলল,” পথ ভুলে চলে এসেছি।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here