বেদনার_রঙ_নীল ষোড়শ পর্ব

0
332

#বেদনার_রঙ_নীল
ষোড়শ পর্ব
লিখা- Sidratul Muntaz

সামির আর আজমীরের হতভম্ব দৃষ্টি উপেক্ষা করে তুলি প্রণয়ের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল,” আপনি আমাকে ভালোবাসেন তো? বলুন?”

প্রণয় মৃদু চালে মাথা নাড়ল। তুলি শাসনের সুরে বলল,” মুখ দিয়ে কথা বলতে কি সমস্যা? স্পষ্ট করে মুখ দিয়ে বলুন।”

প্রণয় হাসল। অতুলনীয় সুন্দর হাসি। তারপর ভারী আদুরে কণ্ঠে বলল,” আই লভ ইউ।”

তুলির শরীর জুড়ে বয়ে গেল লজ্জা রাঙা স্রোত। আরক্ত হলো মুখ। এক পশলা শীতল কুয়াশা বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ল হৃদয়ে। সে দাম্ভিক দৃষ্টি নিয়ে তাকাল আজমীর আর সামিরের দিকে। সামির ঠোঁট দিয়ে জীভ ভিজিয়ে প্রশ্ন করল ত্বরিতে,” কিন্তু কে এই ছেলে?”

আজমীরের গালে যেন চপোটাঘাত পড়েছে এমনভাবে সে উচ্চারণ করল,” আমার বন্ধু হয়। প্রণয়।”

সামির আরও বিস্মিত হয়ে বলল,” তোর বন্ধুর সাথে তুলির সম্পর্ক কিভাবে হলো?”

আজমীর ন্যাতানো কণ্ঠে স্বগতোক্তি করল,” ঘরের শত্রু মীরজাফর!”

তারপর দরাজ গলায় বলল,” শা*লা, তোকে দিয়ে তুলিকে বিয়ে থেকে ভাগিয়ে এনেছিলাম কি এই দিন দেখার জন্য? এর চেয়ে তুলি যদি আমার ভাবী হতো তাও ভালো ছিল।”

সামির হঠাৎ সটান করে চড় মারল আজমীরের গালে। ভ্যাবাচেকা খেয়ে চোখ বড় করে তাকাল আজমীর।

” ভাইয়া? তুমি আমাকে মারলে?”

” তুই তুলিকে ভাগিয়ে এনেছিস? তাহলে তো তুই-ই ঘরের শত্রু বিভীষণ! হারা*মজাদা! জানিস গ্রামে কত সম্মানহানি হয়েছে বাবার? তোর মতো কুলা*ঙ্গার ভাই থাকার চেয়ে না থাকা ভালো। আমি এখনি আব্বাকে ফোন করে সব জানাচ্ছি।”

আজমীর বিপর্যস্ত হয়ে বলল,” না ভাইয়া প্লিজ, বাবাকে এগুলো বোলো না। বাবা জানলে মেরে ফেলবে আমাকে।”

” এসব তোর আগে ভাবা উচিৎ ছিল। এখন আমি তোর একটা কথাও শুনবো না।”

দুই ভাইয়ের তর্কাতর্কি চলছে। প্রণয় তুলির দিকে তাকিয়ে বলল,” আমরা এখানে থেকে আর কি করবো? চলুন যাই।”

তুলি মুচকি হেসে মাথা নাড়ল,” চলুন।”

তারা দু’জন গাড়িতে উঠে বসল। তুলি সিটে গা এলিয়ে বলল,” থ্যাঙ্কিউ। আপনি আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন।”

প্রণয় হতভম্ব হওয়ার চেষ্টা করে জানতে চাইল,” ওইসব কি আপনি শুধু বাঁচার জন্যই বলেছেন?”

তুলি সহজ হেসে বলল,” অফকোর্স! আপনি কি ভাবলেন? সত্যি?”

প্রণয় নিভে গেল। আমতা-আমতা করে মিথ্যাটাই বলল,” না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম। সেজন্যই তো আপনাকে সাহায্য করেছি!”

তুলির হালকা মনখারাপ হলো। প্রণয়ের কণ্ঠে ‘আই লভ ইউ’ শুনে তার মনে হয়েছিল সে বুঝি পৃথিবী পেয়ে গেছে। কিন্তু এখন সবটাই স্বপ্ন।

তুলি স্বাভাবিক সুরে বলল,” সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।”

প্রণয় গাড়ি চালু করল। স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে জিজ্ঞেস করল,” আপনি কি বাসায় যাচ্ছেন?”

” হ্যাঁ। তবে আপনার বাড়িতে। টিউশন আছে।”

” শানকে পড়ানোর রিস্ক তাহলে নিয়েই ফেললেন?”

” হু। আন্টি এতো সুন্দর করে রিকোয়েস্ট করেছে যে নিষেধ করতে পারিনি।”

” ও। তাহলে শুধু আন্টির রিকোয়েস্টেই রাজি হয়েছেন?”

প্রণয়ের কণ্ঠ থেকে কি অভিমান ঝরল? তুলি হাসিমুখে বলল,” না। আপনি তো আমার অনেক হেল্প করেছেন। তাই ভাবলাম আমিও আপনার একটা হেল্প করি। শানকে পড়িয়ে উপকারের ঋণ শোধ করি।”

“ঋণ শোধ করে দায়সারা হতে চান?”

” সারাজীবন ঋণগ্রস্ত হয়ে বসে থাকবো নাকি?

” হুম। তাও ঠিক।” প্রণয় আর কিছু বলল না। তুলি বলল,” আপনি কিন্তু ভালোই অভিনয় করতে পারেন। ওদের সামনে যখন ‘আই লভ ইউ’ বললেন, একদম রিয়েল মনে হয়েছিল।”

” আপনারটাও রিয়েল লেগেছিল। আপনি তাহলে আমার চেয়েও ভালো অভিনেত্রী।”

তুলি হেসে ফেলে জিজ্ঞেস করল,” বান্দরবান থেকে কখন ফিরলেন?”

” এইতো কিছুক্ষণ আগে৷ এখন ডিরেক্ট বাসায় যাচ্ছি।”

শানের ঘরটা একদম নিরিবিলি৷ সে বসে আছে চেয়ারে। এতো শান্তরূপে কোনো মানুষ বসে থাকতে পারে? অবশ্য শানকে দেখলে মনে হবে সে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ শান্ত ছেলে। কেউ ঘুণাক্ষরেও ধারণা করতে পারবে না যে এই শান্ত ছেলে কতবড় অশান্ত কর্মকান্ড ঘটাতে পারে। তুলি বলল,” এই সাইক্লোন, এদিকে তাকাও।”

শান তাকাল। তুলি আন্তরিক ভঙ্গিতে হেসে বলল,” কেমন আছো?”

” ভালো। ”

” তোমাকে আমি কি নামে ডেকেছি সেটা কি তুমি নোটিশ করেছো?”

শান মাথা নাড়ল। তুলি বলল,” নামটা কি তোমার পছন্দ হয়েছে?”

শান এবারও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। তুলি অবাক হয়ে বলল,” সত্যি? এমন একটা নাম তোমার পছন্দ হলো কেন?”

” কারণ আজকে আমি খুব হ্যাপি। আমার সবকিছুই ভালো লাগছে। একটা গুড নিউজ পেয়েছি।”

” তাই নাকি? গুডনিউজটা কি আমার সাথে শেয়ার করা যায়?”

শান হেসে জবাব দিল,” একদম না।”

তুলির মুখ চুপসে গেল। গুমোট কণ্ঠে বলল,” ওকে। না চাইলে থাক। আজকে কোন সাবজেক্ট পড়তে চাইছো বলো। ম্যাথ নাকি সাইন্স?”

” আমি বলবো না।”

” কেন?”

” কারণ আমার পড়তেই ইচ্ছে করছে না।”

তুলি ক্লান্ত ভঙ্গিতে গাল হাত রেখে বলল,” তাহলে তুমি কি করতে চাও?”

শান হঠাৎ চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়ালো। তারপর সেখান থেকে লাফিয়ে সানসেটে উঠে গেল। আকস্মিক ধাক্কায় কয়েকটি ভারী জিনিস হুড়মুড়িয়ে টেবিলের উপর পড়ল। তুলি দ্রুত দুইহাতে নিজের মাথা চেপে ধরেছে। তারপর ভীত সন্ত্রস্ত কণ্ঠে বলল,” এসব কি শান? তুমি কি ভাঙচুর ছাড়া কোনো কাজ করতে পারো না?”

টেবিলে হাত রাখতেই কিছু একটা নড়ে উঠল। তুলি লক্ষ্য করল জিনিসটি সাপের মতো। সে আৎকে উঠে বলল,” এটা কি?”

শান উপর থেকে জবাব দিলো,” এনাকোন্ডা!”

তুলি প্রায় ছিটকে উঠে দাঁড়ালো। সাপটিও লাফিয়ে তার পায়ের কাছে পড়ল। তুলি খুব ঘাবড়ে গেল। সে একটা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। সাপটা তখনও তার পেছনে আসছে। পাশের ঘরটিই ছিল প্রণয়ের। তুলি দ্রুত সেখানে ঢুকে পড়ল। প্রণয় মাত্র গোসল সেরে বের হয়েছে। তুলিকে দেখে চমকে বলল,” আপনি এখানে কি করছেন?”

প্রণয়ের ভরাট কণ্ঠ শুনে পেছনে তাকাল তুলি। কেবল একটি তোয়ালে কোমর পর্যন্ত জড়ানো প্রণয়ের। এছাড়া পুরো শরীর অনাবৃত। তুলি কিছুক্ষণ তাঁক লেগে চেয়ে থেকে দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নিল। প্রণয় প্রশ্ন করল,” কিছু বলবেন?”

তুলি দুইহাতে চোখ ঢেকে মাথা নাড়ল। প্রণয় হাত ভাঁজ করে বলল,” কি?”

তুলি আড়ষ্ট কণ্ঠে অনুরোধ করল,” আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? কিছু একটা পরুন আগে!”

প্রণয় একবার নিজের দিকে চেয়ে বলল,” আমি তো ন্যাকেড না। আপনি এতো লজ্জা পাচ্ছেন কেন?”

” আমার লজ্জা আছে তাই আমি লজ্জা পাচ্ছি।”

” কাপর আমি পরিনি আর লজ্জা উনি পাচ্ছেন। অদ্ভুত! ”

তুলি আরেকবার বাইরে তাকাল। প্রণয় ততক্ষণে টি-শার্ট পরে ফেলল। তারপর তুলির কাছে এসে জানতে চাইল,” কি হয়েছে? গ্রীনলাইট কিছু করেছে আবার?”

” হ্যাঁ। ওর কাছে একটা বড় সাপ আছে। সেই সাপ দিয়ে ও আমাকে ধাঁওয়া করাচ্ছে।”

প্রণয়ের যেন কথাটা বিশ্বাস হলো না। চোখমুখ কুচকে বলল,” সাপ কিভাবে আসবে?”

” আমি সত্যি বলছি। সাপটির গায়ে ডোরাকাটা দাগ।”

প্রণয় ঘরের বাইরে গিয়ে সাপটি খুঁজে আনল। সুতো দিয়ে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে সাপটিকে। প্রণয় সুতো ছিঁড়ে ফেলল। তারপর হাসতে হাসতে বলল,” এটা একটা রাবারের সাপ। এটা দেখে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? রিডিকিউলাস!”

তুলি সাপটা হাতে নিয়ে চমকে গেল। প্রণয়ের হাসির সামনে নিজেকে আহম্মক বলে বোধ হলো। প্রণয় রসিকতার সুরে বলল,” এমন কলিজা নিয়ে আপনি বেঁচে আছেন কিভাবে মিস তুলি?”

তুলি যারপরনাই রেগে তাকাল। সাপটি উঠিয়ে বলল,” এইরকম একটা জিনিস দেখলে কে না ভয় পাবে?”

” যারা বোকা তারাই ভয় পাবে।”

প্রণয় হেসেই যাচ্ছিল৷ তুলি বলল,” আপনি একটা অসহ্য!”

বেরিয়ে আসতে নিলেই প্রণয় হাত টেনে ধরল তুলির। তুলি প্রসারিত দৃষ্টিতে তাকাল। প্রণয় একটু কাছে এসে বলল,” ভীতু আর বোকা মেয়েদের আমার ভালো লাগে। তারা খুব কিউট হয়। একদম আপনার মতো। ”

তুলি কথাটি শুনে চোখ ছোট করে তাকাল। হালকা লজ্জাও মিশল গালে। প্রণয় এখনও হাসছে কিন্তু তার এবারের হাসিটা অন্যরকম। তুলি কিছু বলার আগেই প্রণয় টুপ করে চুমু দিল তার গালে। খুব আলতোভাবে৷ তুলি হকচকিয়ে গালে হাত রাখল। ব্যাপারটা তার হজম হলো না ঠিক। কয়েক মুহূর্ত তারা একে-অপরের দিকে তাকিয়েই রইল। হঠাৎ হাত তালির আওয়াজ পেয়ে দু’জনেই সামনে তাকাল। শান তাদের দেখছে অবাক হয়ে৷ হাত তালিও সে-ই বাজাচ্ছে। তুলি ভীষণ লজ্জায় দৌড়ে সেখান থেকে চলে এলো।

রাইফা আজকে অজান্তার জন্য খিচুরি রান্না করে এনেছিল। সেই খিচুরি খেয়ে অজান্তা মুগ্ধ৷ প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তুলি তাদের আড্ডায় গিয়ে বসল। মিষ্টি তাকে দেখে বলল,” পড়াশুনা শেষ? নাকি আজকেও শান দুষ্টুমি করেছে?”

তুলি ধৈর্য্যশীলের মতো বলল,” আমি ওকে শীঘ্রই বাঘে আনবো।”

রাইফা থাম্বস আপ দেখিয়ে বলল,” গুড কনফিডেন্স।”

অজান্তা বললেন,” তুমি একটু খিচুরি খাও তুলি৷ তোমার বান্ধবী বানিয়েছে।”

” আমি বাসায় খেয়েছি আন্টি।”

রাইফা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” আমার শানের সাথে একটু দরকার ছিল। আমি কথা বলে আসছি।”

অজান্তা বললেন,” ঠিকাছে যাও।”

রাইফা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই মিষ্টি আনন্দিত স্বরে উচ্চারণ করল,” এবার তাহলে শুভকাজ সেরে ফেলা উচিৎ ছোটমা। আমাদের রাইফা কিন্তু বড় হয়ে গেছে। কত ভালো রান্না শিখেছে দেখেছো!”

অজান্তা হাসিমুখে বললেন,” সেটাই তো দেখছি।”

তুলি একটু বিভ্রান্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করল,” কোন শুভকাজ?”

মিষ্টি অকপটে বলল,” আমার ভাইয়ের সাথে রাইফার বিয়ের কথা বলছিলাম।”

তুলির মাথায় যেন গোটা আকাশ ভেঙে পড়ল। মুখের রঙ হয়ে গেল ফ্যাকাশে। অজান্তা দুশ্চিন্তা নিয়ে বললেন,” কিন্তু তোর ভাই কি রাজি হবে?”

মিষ্টি কড়াভাবে বলল,” রাজি এবার করাতেই হবে ছোটমা। রাইফার মতো ভালো মেয়ে ভাইয়ের জন্য আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।”

” সেটা তো আমি জানি। রাইফা খুবই ভালো। কিন্তু তবুও আমার খটকা লাগে। তোর ভাইয়ের ব্যাপারে কিছুই নিশ্চিন্ত হয়ে বলা যায় না।”

তুলির কথাগুলো শুনে মাথা ধরে যাচ্ছিল। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” আমি একটু যাই। রাইফা কোথায় গেল দেখে আসি।”

মিষ্টি বলল,” যাও।”

তুলি হাঁটতেই পারছিল না। কোনমতে সে ঘর থেকে বের হলো। রাইফা শানের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকিঝুঁকি মারছে। আজকে সে যেকোনো মূল্যে ফোন নাম্বার চুরি করেই ছাড়বে। শানকে হাত করার একটা বুদ্ধিও এঁটে রেখেছে। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলল,” এইটা খুঁজছো?”

রাইফা চমকে প্রায় থতমত খেয়ে তাকাল। প্রণয় দাঁড়িয়ে। তার হাতে শানের ডায়েরী। রাইফার চোখমুখ লজ্জায় ছোট হয়ে গেল। প্রণয় রাইফার হাতে ডায়েরীটা তুলে দিয়ে বলল,” নাও। এখানে সব নাম্বার আছে। কিন্তু আমার মনে হয় না একটা নাম্বারেও রিসবকে পাবে। সে যেখানে থাকে সেখানে কোনো নেটওয়ার্ক নেই রাইফা।”

রাইফা মনখারাপ করে বলল,” তার খবর কিভাবে পাও তোমরা?”

” গতরাতে ওর সাথে কথা হয়েছিল আমার। বান্দরবান ওর সঙ্গে দেখা করতেই গিয়েছিলাম।”

রাইফা উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইল,” কেমন আছে ও?”

” ভালো আছে। আর খুব শীঘ্রই ঢাকা আসবে।”

রাইফার দৃষ্টি ঝলমলিয়ে উঠল। খুশিতে চোখ দিয়ে টুপ করে পড়ল একফোঁটা জল। প্রণয় মুচকি হেসে বলল,” কেঁদো না প্লিজ।”

সে এক আঙুল দিয়ে রাইফার চোখের জলটা মুছল। দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখে থমকে গেল তুলি। তাদের কথা-বার্তা শোনার আগ্রহ নিয়ে সে এগিয়ে এলো কয়েক পা। প্রণয় বলল,” ছোটমা বিয়ের কথা ভাবছেন। জানো সেটা? এবার মনে হয় তোমার সাথে বিয়েটা হয়েই যাবে।”

রাইফা হেসে দিল। সে ভাবল প্রণয় বুঝি মজা করছে। অকারণেই বলল,” আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি প্রণয়। সেটা কি তুমি জানো?”

” আমিও তোমাকে অনেক পছন্দ করি। এজন্যই তো বিয়েতে সবাইকে রাজি করিয়েছি।”

তুলি এই কথা শোনার পর আর দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পেল না। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে লাগল৷ রাইফা বলল,” সবাইকে রাজি করিয়েছো মানে? আসল মানুষটিকেও তো রাজি হতে হবে। আর আমার ধারণা সে রাজি হবে না। কারণ সে আমাকে ভালোই বাসে না।”

” সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে রাইফা। এজন্যই নিজের বিপজ্জনক জীবনের সাথে তোমাকে জড়াতে চায় না।”

” সে হয়তো জানে না, আমি অলরেডি জড়িয়ে গেছি। এমনভাবে জড়িয়ে গেছি যে চাইলেও আর সেখান থেকে বের হতে পারবো না। এবার সে কয়দিনের জন্য ফিরছে?”

প্রণয় হেসে বলল,” তুমি শুনলে অনেক খুশি হবে যে এইবার সে একমাসের জন্য ফিরছে।”

রাইফা যেন বিশ্বাস করতে পারল না। মুখে হাত ঠেঁকিয়ে অতি আনন্দের সাথে বলল,” সত্যি?”

” হুম। কিন্তু এর আগে তার টার্গেট তাজিংডং জয় করা।”

রাইফার মুখের হাসি উধাও হয়ে গেল এবার। দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধল মনে। আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা করল, রিসব যেন তার লক্ষ্যে সফল হয় আর খুব দ্রুত ফিরে আসে!

তুলি সোফায় বসে আছে মাথায় হাত ঠেঁকিয়ে। তার মাথায় হাজারো ভাবনা ঘুর্পাক খাচ্ছে। সত্যি কি সে অনেক বোকা? প্রণয়কে নিয়ে সে কিসের ভিত্তিতে স্বপ্ন দেখেছিল? তার কি আছে যে প্রণয় তাকে ভালোবাসবে?বরং প্রণয়ের জন্য রাইফাই তো ঠিক। সমাজে তাদের স্ট্যাটাস সমান৷ রাইফার গর্ব করার মতো মা-বাবা আছে। এদিকে তুলির কি আছে?উফ, চারদিকে এতো আলো, তুলির কিছুই সহ্য হচ্ছে না। মনে হয় লাইট নিভিয়ে একটু শুয়ে থাকতে পারলে ভালো লাগতো। আচ্ছা, এতোদিন কি প্রণয় তার সঙ্গে ফ্লার্ট করেছে? ওইযে বলেছিল টাইমপাস! আজকের চুমুটাও কি তাহলে টাইমপাসের অংশ? নিজেকে খুব ছোট মনে হলো তুলির৷ দুঃখে আর অপমানে চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছে। তুলি চোখের পানি মুছেও কুল পাচ্ছে না। হাতের ফোনটির দিকে একবার তাকাল সে। এই ফোন প্রণয় কেন দিল তাকে? এইটা বুঝি তার দয়ার দান!ভালোই তো, রাইফা দয়া করে বাড়িতে থাকতে দিচ্ছে। প্রণয় দয়া করে ফোন কিনে দিচ্ছে। তুলি তো সবার দয়ার পাত্রী হয়ে গেল। সে তো ভুলেই গেছিল নিজের অবস্থান৷ একটা অনাথ মেয়ে সে। ছোটবেলা থেকে মামার দয়ায় মানুষ হয়েছে। এখন বান্ধবীর দয়ায় ঢাকায় থাকছে। তার জীবনটা কি মানুষের দয়া নিতে নিতেই শেষ হয়ে যাবে? তুলি সিদ্ধান্ত নিল সে আর এইভাবে থাকবে না। প্রণয়ের ফোনটা তাকে ফিরিয়ে দিবে। আর রাইফাদের বাড়ি থেকেও চলে যাবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here