বেপরোয়া_ভালবাসা,২০,২১

0
2123

#বেপরোয়া_ভালবাসা,২০,২১
#লিখনীঃ মনা হোসাইন
#পর্বঃ২০

সকাল গড়িয়ে বিকাল নেমেছে,আদি বাসায় নেই বন্ধুদের সাথে বেড়িয়েছে। এই ফাঁকে আদিবা নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিচ্ছে।যদিও তার মা কয়েকবার বাঁধা দিয়েছেন, বলেছিলেন আদি যেহেতু বিয়ের ব্যাপারে অমত করেনি তাই এখন আদিবাকে যেতে হবে না কিন্তু আদিবা এক কথার মানুষ । মাঝে মাঝে অদ্ভুত রকমের জেদ চেপে বসে তার মাথায়। নিজে যেটা ঠিক করে সেটাই করে।

আদি বিদেশে চলে যাওয়ার পর তাকে দোষারোপ করে একবার বলা হয়েছিল পড়াশোনা করানো হবে না। সেই যে আদিবা বেঁকে বসেছিল মাধ্যমিক পেরিয়ে আর কলেজের চৌকাঠ মারায় নি।এমন কি বাসার বাইরে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিল। আদিবা এতটাই ঘরকোণে হয়ে যায় যে অনেক আত্নীয়রা তাকে চিনে না পর্যন্ত। আদিবা প্রচন্ড রকমের ইন্ট্রোভার্ট। রাগ,মন খারাপ কিংবা আনন্দ কারো সাথে শেয়ার করেনা।সবার কাছ থেকে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নিয়েছে। আজ যখন তাকে বলা হয়েছে গ্রামে যেতে হবে মানে সে যাবেই কেউ আটকাতে পারবে না।

সন্ধ্যায় ট্রেন কিন্তু ততক্ষনে আদি হয়ত বাসায় চলে আসবে আর তখন তার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হবে না কারন এই একটা মানুষের সাথে আদিবা জেদ দেখাতে পারে না। দেখাবেই বা কি করে আদি যে আদিবার চেয়েও বড় জেদি। আদিবা রাগ দেখিয়ে গ্রামে যেতে চাচ্ছে শুনলে সে তাকে গ্রামের বদলে একেবারে পরপারে পাঠিয়ে দিতে দুবার ভাব্বে না।তাই আদি ফিরার আগেই বেরিয়ে যেতে হবে যেমন ভাবনা তেমন কাজ, আদিবা বিকেলেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসল।নিজের মায়ের প্রতি একরাশ বিরক্তি নিয়ে স্টেশনে পোঁছাল কিন্তু স্টেশনে এসে
বিপত্তি ঘটল বহুবছর ধরে আদিবা বাইরের পরিবেশে সাথে বিছিন্ন । তাই স্টেশনে এত লোকজন দেখে কিছুটা ভরকে গেল তাছাড়া কোথায় টিকিট কাটতে হবে এই ব্যাপারেও তার কোন ধারনা নেই। আদিবা চারদিকে তাকিয়ে একজনের কাছে জিজ্ঞাস করল। লোকটি কাউন্টার দেখিয়ে দিল কিন্তু কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন আদিবা বাধ্য হয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড়াল তবে এত লোকজন দেখে তার অস্বস্তি হচ্ছে। তার পিছনে একজন এসে লাইনে দাঁড়াতেই গাঁ ছমছম করে উঠল আদিবার তারউপড় হটাৎ ধাক্কায় লাইনে থাকা একজনের সাথে গাঁ লাগতে শিওরে উঠল সে, গাঁয়ে কাঁটা দিল। না আর যাই হোক এখানে দাঁড়িয়ে থাকা তারপক্ষে সম্ভব নক। আদিবা কোন কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি লাইন থেকে বেরিয়ে এসে নিচে বসে পড়ল। আজ নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে তার সামান্য টিকিটও সে কাটতে পারে না?আদিবা চোখ ফেটে কান্না পাচ্ছে। নিচে বসে নিজের অসহায়ত্বকে বরণ করছিল ঠিক তখনী কেউ একজন বলে উঠল,

-“আমি হেল্প করে দিব?

আদিবা চমকে তাকাল সাথে সাথে ভিমরি খাওয়ার যোগার হল,

-“আ আদি ভাইয়া আপনি এখানে…?

-“অরিন ফোন করে বলল, আমি বাসায় ফিরে আসায় তোর নাকি অসুবিধে হচ্ছে সেকারনে গ্রামে চলে যাচ্ছিস তাই ভাবলাম ভাই হিসেবে তোকে বিদায় জানানো উচিত।তাই আসলাম আরকি…

আদিবা প্রচন্ড রকমের অবাক হয়ে বলল,
-“আ আ আপু এসব বলেছে?

-“মিথ্যে বলেছে নাকি?

-“আপনি আসায় আমার অসুবিধে হবে কেন?

-“সে আমি কী করে বলব? অসুবিধা যে হচ্ছে সেটা তো তোর চলে যাওয়ায় প্রমান করছে। যাইহোক যুক্তি তর্ক করতে ইচ্ছে করছে না। যা গিয়ে বেঞ্চে বস আমি তোর জন্য টিকিট কেটে আনছি।

আদির আচারনে আদিবা অবাক হল। এতবড় কথা শুনেও সে আদিবাকে শাস্তি না দিয়ে সাহায্য করছে? কিন্তু কেন এর পিছনে উদ্দেশ্যটা কী? আদি যে এত শান্ত থাকার ছেলে না সেটা আদিবার চেয়ে ভাল কে জানে? যদিও আদি তাকে খারাপ কিছু বলে নি কিন্তু ভয়ে আদিবার বুক ধুঁকপুক করছে।

আদিবা তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখল আদি লাইনে না দাঁড়িয়ে সোজা কান্টারের ভিতরে ঢুকে গিয়েছে আর চোখের পলকেই বেরিয়েও আসল। আদিবা ততক্ষনে উঠে বেঞ্চে বসেছে আদিও এসে আদিবার পাশে বসে পড়ল।

-“কিরে মুখটা এমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে কেন?

-“ভ ভ ভাইয়া…

-“ভয় পাচ্ছিস মনে হচ্ছে?

-“আসলে…

-” কোন কাজ করার আগে ভাবতে হয় কী করছি এর ফলাফল কি হতে পারে। কাজটা করে ফেলার পর আর ভেবে লাভ কী..?

-“আমি আপনার ব্যাপারে কিছু বলিনি বিশ্বাস করুন..

-“বললেই বা কী? মনের কথা বলার অধিকার সবার আছে তোর ও আছে ভয় পাচ্ছিস কেন?

-“আ আ আমি আসলে…

-“এক শব্দ বলতে তিনবার আটকে যাচ্ছিস পুরো বাক্য শেষ করতে গিয়ে হয়ত হার্ট অ্যাটাক করে বসবি তারচেয়ে চুপচাপ বসে থাক। ট্রেন এখনী চলে আসবে।দুটো টিকিট কেটে দিয়েছি যাতে অন্য কারো সাথে বসতে নাহয়।

-“আ আমি প প পানি খাব ভাইয়া…

আদিবার দিকে তাকিয়ে আদি বাঁকা হাসল হাসিতে রহস্য লুকিয়ে আছে সন্দেহ নেই কিন্তু মুখে কিছু বলছে না তাই আদিবা কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।

-“বস নিয়ে আসছি বলে আদি চলে গেল। আদিবা ভয় পাচ্ছে কিন্তু কেন পাচ্ছে সেটা সে নিজেও জানে না।

আদি এসে পানি দিতেই আদিবা ঢকঢক করে বোতল খালি করল।আদির চোখে মুখে রহস্যের ছাপ। দেখতে দেখতে ট্রেন এসে স্টেশনে থামল আদিবা একবার আদির মুখের দিকে দেখছে আবার ট্রেনের দিকে দেখছে। আদিবার অবস্থা দেখে আদি মুচকি হেসে বলল,

-“ট্রেন তোর জন্য দাঁড়িয়ে থকবে না যা উঠে পড় গিয়ে। চলন্ত ট্রেনে উঠতে গিয়ে ট্রেনে কাঁটা পড়লে ব্যাপারটা খারাপ হবে..তুই যে একটা মাথামোটা সেটা এখানে প্রমাণ করার কিছু নেই।

আদিবা এবারেও কিছু বলল না সে যাচ্ছে না দেখে আদি নিজেই আদিবার হাত ধরে ট্রেনে তুলে দিল তারপর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে বলল,

-“সাবধানে যাস…

বলতে বলতে ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠল আদি নেমে গেল। ট্রেন চলতে শুরু করল। আদি আদিবাকে বিদায় দিল, সহজ বিদায়। তার মাঝে আদিবাকে আটকানোর কোন প্রচেষ্টা নেই , নেই প্রিয়জন হারানোর ব্যাকুলতাও। আদিবা জানলার বাইরে মুখ বের করে তাকাল তার খুব বলতে ইচ্ছে করছে আমি যেতে চাইনি ভাইয়া …কিন্তু বলতে আর পারল কই ট্রেন চলতে চলতে আদির দৃষ্টি সীমা পেরিয়ে আসল আদিবা এখনো বাইরে তাকিয়ে আছে। ভিষন মন খারাপ করছে তার। সবসময় তার সাথেই কেন এমন হয়? আদির সাথে তার ভুল বুঝাবুঝি কি নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে থাকবে সারাজীবন?সে গ্রামে যাওয়ার পর হয়ত সত্যি সত্যি আদির বিয়ে হয়ে যাবে তবে কী কোনদিন আদিকে বলা হয়ে উঠবে না আদিবা তাকে ভালবাসত। ভাবতে ভাবতে চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল। মন খারাপের সন্ধ্যা নেমে আসল আদিবার কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।চোখটা একটু লেগেছে হটাৎ ট্রেনের ঝকঝক শব্দ থেমে গেল আদিবা চোখ মেলে তাকাল বুঝতে পারল ট্রেন ইঞ্জিন পরিবর্তন করছে ছাড়তে দেরি হবে যাত্রীরা স্টেশনে নেমে যে যার মত সময় কাটাচ্ছে কেউ জিনিসপত্র কিনছে কেউ খাবার খাচ্ছে। আদিবার নামা উচিত নাকি উচিত না বুঝে উঠতে পারল না তাই নামল না।

প্রায় আধঘন্টা পর ট্রেনে হুইসেল বাজল যাত্রীরা সবাই উঠতে শুরু করেছে তখন কেউ একজন আদিবার হাত ধরে টানতে শুরু করল ভীড়ের মধ্যে আদিবাকে তার মুখ দেখতে পেল না কিন্তু মুহূর্তেই নিজেকে ট্রেনের বাইরে আবিষ্কার করল ট্রেন তাকে রেখেই চলে যাচ্ছে দেখে আদিবা ভয়ে চুপসে গেল। সে ট্রেনের দিকে দেখতে দেখতে বলল

-“কে আপনি?আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,হাতটা ছাড়ুন বলছি

ছেলেটা অতিদ্রুত বেগে হাঁটছে আদিবার কথাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।আদিবা তার সাথে তাল সামলাতে পারছে না। আদিবা আবার বল

-“ছাড়ুন আমাকে, আমি কিন্তু চেঁচাব..

ছেলেটা সোজাসাপটা জবাব দিল,
-“স্টেশনে যারা আছে সবাই ইতিমধ্যে দেখতে পাচ্ছে আমি একজন কে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছি তাই চেঁচালেও যা না চেঁচালেও তাই। কারো এগিয়ে আসার হলে এমনি আসবে..

-“এসবের মানে কী…?

ছেলেটা থমকে দাঁড়াল আদিবার দিকে ঘুরে বলল

-“আমার পারমিশন ছাড়া তুই গ্রামে যাওয়ার সিধান্ত নিস কোন সাহসে?

আদিকে দেখে আদিবার দেহে যেন প্রাণ ফিরে পেল শান্ত হয়ে বলল

-“ভাইয়া আপনি…??উফ আর একটু হলে ভয়ে আত্মাটা বেরিয়ে যেত..কত ভয় পেয়েছিলাম জানেন?

বলে আদিবা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগল।
আদি রাগী চোখে তাকিয়ে আছে দেখে আদিবা ভয় পাওয়ার কথা কিন্তু সে ভয় পাচ্ছে না কারন তার আনন্দ হচ্ছে। আদি তাকে নিতে এসেছে ভেবেই ভাল লাগছে।আদিবার চোখে মুখে খুশির রেখা ফুটে উঠেছে।

-“কিরে এখানে হাসির মত কোন ঘটনা ঘটেছে?ইডিয়েটের মত হাসছিস কেন?

-“আমাকে যেতে দিবেন না এটা স্টেশনে বললেই তো হত এতদূরে আসার কি দরকার ছিল? তখন নিষেধ করলেই তো আসতাম না।

-“সেটা যদি তুই বুঝতি তাহলে তো কাজেই হত।

-“মানে..?

-“সামনে দেখ তাহলেই বুঝতে পারবি।

আদিবা তাকিয়ে দেখল স্টেশন পেরিয়ে তারা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। আদিবা এদিক ওদিক দেখে বোকা মুখ করে বলল,

-“কি দেখব ভাইয়া?

-“মাইল স্কেল দেখতে বলেছি যাইহোক তোর মত মাথামোটা সেটা বুঝবে না তাই বুঝিয়ে বলছি এখান থেকে গ্রামের বাড়ি ১৮০ কিলোমিটার আর বাসা ৬০ কিমি এখন তুই চিন্তা করে সিধান্ত নে তুই কোথায় যাবি।

-“আপনি না বললেন বাসায় যেতে..

-“হুম তবে তবে যেখানেই যাস না কেন হেঁটে হেঁটে যেতে হবে।

আদির কথায় আদিবা অবাক হল
-“এটা কেমন মজা?

-“মজা? আমি কি জোকার নাকি যে মজা করব?

-“তাহলে এসব কী বলছেন?

-“বাংলা বুঝিস না? তুই যা ইচ্ছে তাই করবি আর আমি বসে বসে দেখব এমনটাই ভেবেছিলি…?নিজেকে কী ভাবিস তুই? আজ যদি তোর জেদ ভাঙতে না পারি আমার নাম আদি না। বাসায় কী যেন বলেছিস আমার জন্য তোর থাকতে অসুবিধে হচ্ছে তাই না? একবার বাসায় চল অসুবিধা কত প্রকার আর কী কী সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাবি।

-“আমি বাসায় যাব না। কি করবেন আপনি জোর করে নিয়ে যাবেন?

-“একদমি না রাস্তা দুদিকেই খোলা তোর যেদিকে খুশি যেতে পারিস তবে রাতের বেলায় একা একা যাওয়াটা কী ঠিক হবে?দেখ,ভাই হিসেবে আমার ত একটা দায়িত্ব আছে তাই না?আমি যেহেতু বাসায় ফিরব তাই এইটুকু উপকার করতেই পারি মানে তুই যদি এদিকে যাস আমি সারা রাস্তা তোকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাব আর ওদিকে গেলে শেওড়া গাছের জ্বিন তোকে পাহারা দিতে দিতে নিয়ে যাবে তার উপড়ে রাস্তার ছেলেরা তো আছেই এবার তোর ইচ্ছা।

-“ভাইয়া…

-“ফ্লার্ট করে কোন লাভ নেই।

বলতে বলতে আদি গিয়ে বাইকে উঠে বসল আদিবা দৌড়ে গিয়ে বলল,

-“ভ ভ ভাইয়া আমার ভুল হয়েছে। আপনাকে না বলে আসা আমার উচিত হয় নি। আমাকে একা রেখে যাবেন না প্লিজ আমাকে নিয়ে যান।
আমি আপনার সাথে যাব…

-“এই তো সাবাস মেয়ে চল হাঁটা শুরু কর তাহলে…

-“হেঁটে যাব..?

-“অবশ্যই।

-“কিন্তু কেন আপনার সাথে তো বাইক আছে।

-“তাতে কী এটা তোর শাস্তি। আমার কথা নড়চড় হয় না। হেঁটে যাবি বলেছি মানে হেঁটেই যাবি।

-“এত দূরে হেঁটে হেঁটে কি করে যাব?এটা কি সম্ভব.

-“মানুষ সাঁতরে মাইলের পর মেইল পাড়ি দিয়ে দেয় আর তুই হেঁটে যেতে পারবি না?

-“ভাইয়া…

-“কথায় আছে ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বুক কাঁপল না? আমি জানতে পারলে তোর পা দুটি যে ভেঙে গুড়িয়ে দিব জানতি নাকি ছোটবেলার ইতিহায়া ভুলে গেছিস? আ… দি…বা বহুত উড়াউড়ি করেছো তুমি এবার পাঁখা দুটো ছাঁটার সময় হয়েছে।

বলে আদি বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল।

-“ভাইয়া আমায় রেখে যেও না প্লিজ..আমার অন্ধকার ভয় লাগে দাঁড়াও প্লিজ…আর কখনো তোমার অবাধ্য হব না। এবারের মত ক্ষমা করে দাও দয়া করো প্লিজ ভাইয়া।

কে শুনে কার কথা আদিবার কথায় আদি থামল না



চলবে…!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ২১
লেখনীঃ #মনা_হোসাইন

আদি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে থামল। সাথে সাথে আদিবা ছুটে গিয়ে আদির সামনে দাঁড়াল। নেহাৎ কম জায়গা নয় তারউপড় আদিকে থামতে দেখে রাস্তাটুকু রীতিমত দৌড়ে এসেছে আদিবা এসেই হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,

-“অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া..আমি জানতাম আপনি আমায় রেখে যাবেন না।

আদি নির্বিকার জবাব দিল,
-“তো আমি কখন বলেছিলাম আমি তোকে রেখে চলে যাব? আমি আগেই বলেছি তুই যদি বাসার রাস্তায় আসিস আমি সারা রাস্তা তোকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাব।

-“তাহলে চলে আসলেন কেন? কত ভয় পেয়েছিলাম জানেন?

-“ভয়ের কিছু নেই আমি তোকে রেখে যাব না। তবে আমি যেহেতু বাইকে যাব তুই আমার সাথে তাল মিলাতে পারবি না তাই প্রতিবারেই আমি কিছু দূর গিয়ে দাঁড়াব তুই আবার আমার পর্যন্ত গেলে আমি আরও একটু এগিয়ে গিয়ে থামব এবং তোর জন্য অপেক্ষা করব।

-“মানে কী?

-“চিন্তার কোন কারন নে আমি এত দূরেও যাব না ঠিক ততটাও দূরে থামব যেখান থেকে তোকে দেখা যাবে,চোখের আড়াল করব না তাই একদম ভয় পাস না। একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারিস আজ যাই ঘটে যাক রাস্তায় যত সমস্যাই হোক না কেন আমি সারা পৃথিবীর সাথে যু*দ্ধ করে হলেও তোকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে বাসা পর্যন্ত নিয়ে যাব। এই শাস্তিটা না দিতে পারলে আমার আত্মা শান্তি পাবে না।

-“আপনি কী মানুষ? একটা মেয়েকে ৬০ কিলোমিটার রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাবেন তাও বড় মুখ করে বলছেন লজ্জা করছে না?

-” নাহ তো একটুও করছে না। যে নিজেই নিজের পরিচয় ভুলে যায় সেই পরিচয় আমার মনে রাখার কী দায় পড়েছে? তোর মাঝে মেয়ের কোন লক্ষন আছে? মেয়ে থাকবে শান্ত শিষ্ট,দেখলেই শান্তি লাগবে, শান্তমনে ঘর সংসার সামলাবে, ঘরে বসে চিন্তা করবে ভবিষ্যতে বাচ্চা কাচ্চার কি নাম রাখবে তা না করে সে কেন সন্ধ্যা বেলা ব্যাগ হাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়বে? তাও একা একা? এতদূরের রাস্তায় যখন যা খুশি ঘটতে পারে সেসব নিয়ে কেন ভয় পাবে না?

আদির কথায় আদিবা অবাক লাগছে নাকি রাগ উঠছে নিজেই বুঝে উঠতে পারল না।বিরক্তি নিয়ে বলল

-“তার মানে বিয়ের আগেই আমার বসে বসে বাচ্চার নাম ঠিক করা উচিত ছিল?

-“এক্সাক্টলি,জামাই কি পছন্দ করে আর কি পছন্দ করে না, সে মেয়ে বাবু চায় নাকি ছেলে বাবু? কয়টা বাচ্চা নিবে সেসব নিয়ে ভাবা উচিত ছিল।

-“বাহ আমি মনে হচ্ছে আগে থেকেই জেনে বসে আছি আমার জামাই কে হবে…তার ইচ্ছে অনিচ্ছার ব্যাপারে চিন্তা করব।

-“জানবি না কেন? এত কেয়ারলেস হলে তো চলবে না।

-“আপনি কি জানেন আপনার মানুষিক ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন…

-“নাহ,তবে এটা জানি তোর মাথায় বুদ্ধি কিছুটা বাড়ানো দরকার।বুদ্ধি থাকলে আমি কি বলেছি বলার আগেই বুঝে ফেলতি যাইহোক এমনিতেই যেতে যেতে সকাল হয়ে যাবে আর এমন গল্প করতে থাকলে হয়ত কালকেও পৌঁছাতে পারবি না।

বলতে বলতে আদি আবারো বাইকে স্টার্ট দিল। আদিবা এবার কিছু বলল না কারন সে জানে কিছু বলে লাভ নেই। আদি এ জীবনে কোনদিনি তার কথা শুনে নি।প্রায় এক ঘন্টা ধরে আদিবা হাঁটছে আর মনে মনে আদির চোদ্দগুষ্টিকে গালি দিচ্ছে।

-“আমি যদি এর প্রতিশোধ না তুলতে পারি আমার নাম আদিবা নয়। অনেক হয়েছে আর না. এসব আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না. কিন্তু এখন বাসায় ফিরব কী করে? এমন কিছু করতে হবে যাতে ভাইয়া নিজেই আমাকে নিয়ে যায়। কিন্তু কি করব?

ভাবতে ভাবতে গিয়ে আদির কাছে দাঁড়াল। হাঁটতে হাঁটতে আদিবার বেহাল দশা।সে আদির কাছে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ল সাথে সাথে আদি বলল,

-“উঠ,সামনে বাজার আছে আমি চাই না তুই বাজারের সবাইকে রুপ দেখিয়ে দেখিয়ে যা তাই এখন আপাতত আমার সাথে নিয়ে যাব। বাজার পেরিয়ে নামিয়ে দিব।

আদির কথায় রাগে গাঁ জ্বলে উঠল আদিবার কিন্তু অবশেষে সুযোগ এসেছে এই সুযোগ কোনভাবে মিস করা যাবে না। তাই ঝগড়া না করে আদির পিছনে উঠে বসল আদিবা। আদি নিজমনে ড্রাইভ করে এসে বাজার পেরিয়ে থামল সাথে সাথে আদিবা পিছন থেকে আদিত্যকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরল। এক মিনিটের জন্যে আদি থমকে গেল পরমুহুর্তে আবার নিজেকে সামলে নিয়ে ধমক দিয়ে বলল,

-“এসব কি ধরনের অসভ্যতা?

আদিবা ঠোঁট নাচিয়ে বলল,
-“কোনটা অসভ্যতা?

-“বেহায়া মেয়ে কোথাকার আবার প্রশ্ন করছিস? জড়িয়ে ধরেছিস কেন সাহসে? ছাড় বলছি।

-“কেন? ছাড়ব কেন আপনি যদি ভাই হয়ে বোনের সাথে এত বেপরোয়া আচারন করতে পারেন তাহলে আমি এইটুকু বেপরোয়া হতে দোষ কোথায়?

-“তুই কি বলছিস কোন ধারনা আছে তোর?

-“আলবাত আছে। ভুলে যাবেন না আপনার রক্ত আর আমার রক্ত সেইম আপনি যা করতে পারেন আমিও তাই করতে পারি।

-“তোর দেখছি চরিত্রে সমস্যা আছে।

-“আমি কখন বললাম আমার চরিত্র ভাল..? সেদিন তো আপনি নিজেই বলেছিলেন আমার চরিত্র ভাল না তাহলে আজ হটাৎ ভাল হয়ে যাবে কী করে?

-‘তোর তো সাহস কম না আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস…নাম বলছি নাহলে একধাক্কায় নিচে ফেলে দিব।

-“ফেলুন দেখি কেমন পারেন বলে আদিবক আরও একটু জড়িয়ে ধরল আদিকে।

-“এতো আচ্ছা ঝামেলা হল দেখছি।এই তোর লজ্জা করছে না?

-“উম আসছে লজ্জা ওয়ালা। যে ছেলে বিয়ের আগে নিজের বোনের গলায় মুখ ডোবাতে পারে তার মুখে সভ্যতার বুলি মানায় না বুঝেছেন?

-“আদিবার বাচ্চা আমি কিন্তু তোকে..?

-“কি করবেন মা*রবেন? আমার হাত নেই বুঝি?

-“তুই দেখছি সব সীমা পেরিয়ে গেছিস।আজ একবার বাসায় ফিরি তারপর তোর হবে।

-“কচু হবে আমার…এত ফালতু কথা না বলে বাইক স্টার্ট দিন তো…

আদি আর কিছু না বলে ড্রাইভ শুরু করল আদিবা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে যাতে আদি তাকে কোনভাবে ফেলে দিতে না পারে। উপড়ে উপড়ে রাগ দেখালেও আদি ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছে। আদিবা তার সাথে মিশে আছে ভাবতেই ভাল লাগা কাজ করছে। দেখতে দেখতে বাসায় পৌঁছাল তারা। বাইক থামিয়ে ধমক দিয়ে বলল,

-“এবার তো ছাড়বি নাকি?

আদিবা ছেড়ে দিয়ে নিচে নেমে দাঁড়াতেই আদি রাগি চোখে তাকাল আদিবার দিকে তাতে আদিবার বয়ে গেছে সে মুখে ভেংচি কেটে গিয়ে কলিংবেল চাপল।
আদিবা ভালমতই দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু দরজা খোলার সাথে সাথে মুহুর্তেই যেন সব বদলে গেল আদি এসে আদিবাকে টেনে ভিতরে গিয়ে সোফায় ছুঁড়ে ফেলে আদিবা অবাক হয়ে তাকাল সাথে সাথে আদি চেঁচেয়ি উঠল

-“সাহস হল কী করে বাসা থেকে বের হওয়ার?

আদি আর আদিবাকে একসাথে বাসায় ঢুকতে দেখে সবাই ভূত দেখার মত চমকাল।আদিবার ফিরে আসাটা কেউ ভালভাবে নেয় নি কিন্তু আদির রাগের মাঝে কিছু বলার সুযোগ পেল না কেউ।

-“সবাই একটা কথা কান খুলে শুনে নাও আজ আদিবার খাওয়া বন্ধ এমনকি একফোঁটা পানিও আর আজকের পর ও বাসার বাইরে তো দূর,আমার পারমিশন ছাড়া নিজের রুম থেকে বের হলে আমি পা ভেঙে দিব যেন আর কোনদিন হাঁটতে না পারে

-“আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন কিসব আবল তাবল বলছেন?

-“ওহ আমি আবল তাবল বলছি? রাস্তায় যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটত তার দায় কে নিত?

-“আমার লাইফ আমার ইচ্ছেয় চলবে। আমি কোথায় যাব কখন যাব আপনাকে কইফত দিতে হবে কেন?

-“তাই নাকি তুই তাহলে সত্যি সত্যি মুখে মুখে তর্ক শিখে গেছিস? আচ্ছা সমস্যা নেই তোর চাপা কি করে বন্ধ করতে হয় আমার ভাল করেজ জানা আছে।বলে আদি,আদিবার হাত ধরে টানতে লাগল। আদিবার সাথে সাথে বাসার অন্যরাও অবাক হয়ে তাকাল কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারল না।

আদি আদিবাকে টানতে টানতে নিয়ে আবারো ওয়াশরুমে ছুড়ে ফেলে দিল এবার আদিবা ব্যাথা পেয়েছে তাই রাগী চোখে তাকাল আদির দিকে।

-“কী হয়েছে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন?

-“তুই আজ সারা রাত এখানেই থাকবি এটা তোর শাস্তি…

-“কেন আমি কি করেছি..?

-“বসে বসে চিন্তা কর..

বলে আদি দরজা লাগিয়ে দিল সাথে সাথে আদিবা চেঁচিয়ে উঠল,

-“দরজাটা খুলুন এর ফল কিন্তু ভাল হবে না বলে দিচ্ছি। আমি আপনার সব কথা মানব এর কোন মানে নেই।

-“গলা নিচে আমি এখন ঘুমাম একটাও টু শব্দ যদি করিস এখানেই পুঁতে রেখে দিব।

-“নিজেকে ভাবেন টা কী হ্যা…?

-“ভাবাভাবির কিছু নেই আমি তোর জীবনের মালিক।এই জীবনে আমার হাত থেকে তোর রক্ষা নেই। তোর জীবনে সেটাই ঘটবে যেটা আমি বলব।

-“রাক্ষস একটা…

-“কি বললি তুই…?

-“বলেছি বেশ করেছি আজ যদি আমাকে শাস্তি দেন আগামীকাল আপনার সাথে যা ঘটবে তার জন্য আমাকে দায়ী করবেন না বলে দিলাম।

আদিবার কথা শেষে হওয়ার আগেই ওয়াশরুমের লাইট অফ হয়ে গেল। সাথে সাথে আদিবার মুখও বন্ধ হয়ে গেল।

-“কিরে চুপ হয়ে গেলি কেন চেঁচা এখন যত খুশি চেঁচা…

-“আ আ আমি.. অ অ অ অ…অন্ধকার ভয় পাই আ আ আ আপনি জানেন ত ত ত বুও…

-“আহা হা ময়না পাখিটা আমার। তোমার জন্য আমার তো অনেক দরদ উতলে পড়ে তাই? ভয় পাচ্ছো শুনে মজনু হয়ে সাত সাগর তেরো নদী পেরিয়ে দরজা খুলতে যাব তাই না? তুই মরলি কি বাঁচলি তাতে আমার কী?

-“আ আ আ আপনি একটা অ অ অমানুষ…

-“এখানো মুখে মুখে কথা বলে যাচ্ছিস…?সাহস তো কম না…

-“দরজাটা খুলুন প্লিজ…

-“লক্ষি মেয়ের মত ক্ষমা চা আর বল আর কখনো আমার অবাধ্য হবি না আমি যা বলব তাই করবি যদি বলার ধরন টা পছন্দ তাহলে দরজা খুলে দিব…

আদিবা উপায় না পেয়ে তাই করল,

-“ক্ষমা করে দিন ভাইয়া আর কখনো তর্ক করব না।

আদিবা ক্ষমা চাওয়ার পরেও আদি দরজা খুলছে না দেখে আদিবা আবার বলল

-“কি হল খুলছেন না কেন? ক্ষমা চাইলাম তো।

-“বলার ধরন পছন্দ হয় নি তাই খুলব না। মিষ্টি করে বলতে পারিস নি।

-“আমি আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছি আপনার কোনদিন বিয়ে হবে না…

-” বিয়ে ছাড়া বাচ্চা নিতে আমার তো কোন অসুবিধে নেই যদি তোর না থাকে…

-“ক ক কী বলছেন এসব…?

-“যা শুনেছিস তাই বলেছি….এবার চেঁচামেচি বন্ধ কর তানাহলে সত্যি সত্যি গলা টি*পে দিব।




চলবে…!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here