বেপরোয়া_ভালবাসা #পর্বঃ১০,১১

0
2493

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ১০,১১
#লেখনীঃ Gazi pingke-All story
১০

সকাল ৬ টা বেজে ৪০ মিনিট ঘুম ভেঙেও যেন ভাংগছে না। চোখ পিটপিট করে তাকাল আদিবা সারা শরীরে কেমন অস্বস্তিকর ব্যাথা গলার দিকটা একটু বেশিই ব্যাথা করছে। আদিবা বেশ চেষ্টা করে উঠে বসল সাথে সাথেই ভিমরি খাওয়ার অবস্থা। তারপাশে আয়েশ করে ঘুমিয়ে আছে আদিত্য।

আদিত্য,আদিবার জীবনের একমাত্র শনি যে কিনা ছোট বেলা থেকেই আদিবার ঘাড়ে চড়ে আছে। আদিবা চারপাশটা ভাল করে দেখে নিল। না সে নিজের রুমে নয় আদিত্যের রুমে আছে।

ধীরে ধীরে রাতের সব ঘটনা মনে পড়তে লাগল। রাতে আদিবা নিজের রুমেই ঘুমিয়েছিল কিন্তু আদিত্য তাকে জো**র করে এই রুমে নিয়ে এসেছে তারপর যা যা করেছে সেসব ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা আদিবার নেই। আদিবা কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে গিয়েছিল।

আদিবা তাড়াতাড়ি উঠে নিজের ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু তাতে সফল হতে পারল না। আদিত্য দরজা লক করে রেখেছে। কিভাবে লক করেছে সেটা আদিবার জানা নেই শুধু এইটুকু জানে যে দরজাটা খোলার ক্ষমতা তার নেই। কিছুক্ষন চেষ্টার পর ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসল। এখন কী করবে মাথায় ঢুকছে না। সবাই জেগে যাওয়ার আগেই এখান থেকে যাওয়া উচিত সবাই যদি জানে সে আদির সাথে রাত কাটিয়েছে মানসম্মান থাকবে না।

আদিবা কোন উপায় না পেয়ে আদিকে গিয়ে ডাকল,
-“শুনতে পাচ্ছেন…??

-“…….

-“ভাইয়া শুনতে পাচ্ছেন…

আদি চোখ বন্ধ রেখেই আড়মোড়া ভেঙে জবাব দিল,
-“কি হয়েছে সাত সকালে এভাবে চেঁচামেচি করছিস কেন?

-“দরজাটা খুলে দিন..

আদি এবার চোখ খোলল
-“দরজা খুলে দিব মানে …?

-“রুমে যাব না?

-“এটা কী বন জংগল ?

-“আমি আমার রুমে যাব সেটাই বলেছি সবাই যদি জেগে যায় মুখ দেখাব কি করে..?

-“কেন মুখে আবার কী হয়েছে যে মুখ দেখাতে পারবি না…

-“আপনার কী একটুও লজ্জা নেই…? এত অভিনয় কী করে করেন?এতকিছুর পরেও কথা বলছেন..?

-“লজ্জা পাওয়ার মত কিছু করেছি বলে তো মনে পড়ছে না।

-“কী করতে বাকি রেখেছেন…?

-” যতটা করার কথা ছিল ততটা করি নি ঠোঁট, থেকে কোমড় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলাম এর বাইরে যাই নি…

-“আপনি কতটা নিচে নেমে গেছেন ভাবতে পারছেন?

-“যে মেয়ে ক্লাস নাইনে থাকতে প্রেম করতে পারে সে এখন আমাকে উপড় নিচ শিখাচ্ছে…?

-“আপনি…

-“ভুল কিছু বল্লাম? তুই এসবে অভ্যস্থ না..?

-“চুপ করুন,আপনার সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে লাগছে..

-“উচিত কথা সবারেই গায়ে লাগে।

-“আর একটাও বাজে কথা বলবেন না। দরজা খুলুন আমি যাব..

-“নিজেকে আয়নায় দেখেছিস?

-“মানে…?

-“গলায় লাভ বাইট চকচক করছে জামা আর চুলেরও নাজেহাল অবস্থা…

-“আপনি আমার ভাই ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে…কী করে পারলেন..?

-“পারলাম আর কই কান্নার জন্যে তো পুরো কোর্স কমপ্লিট হল না যাইহোক ঘৃনাই যখন করবি তাহলে এইটুকু আর বাকি থাকবে কেন বাকিটুকুও করে ফেলি…

-“আপনি চুপ করবেন?

-“আচ্ছা করলাম কিন্তু প্যান প্যান করবি না,ঘুমাম।

-“দরজাটা খুলে দিয়ে ঘুমান

আদি উত্তর দিল না। উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়ল।

-“এসবের মানে কী?কোনধরনের হেয়ালি এটা..?

-“আর একটা কথা বলবি তো থা প্প ড় মে**রে সবকটা দাঁত ফে*লে দি*ব।

-“মান সম্মান শুধু আমার যাবে না আপনারও যাবে.

-“গেলে যাবে. আমার সম্মান নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।

-” সবাইকে বলে দিব আপনি জো**র করে আমার সাথে…

-“তোর সাথে কি…? কী করেছি বল?

-“…..

-” চুপ কেন বল কি করেছি? কিছুই করি নি আমার সাথে বাড়াবাড়ি করবি তো কাল যা যা ছাড় দিয়েছি আজ দিব না.

-“আপনি এত ক্যারেক্টার লেস হবেন ভাবতেও পারিনি

-“যা যা ভাবার ভাব কিন্তু এখন ঘুমাতে দে।আমার ঘুম ভাঙবি তো তোর কপালে দুঃখ আছে

-“দরজাটা খুলুন

-“তুই ভাল কথার মেয়ে না দাঁড়া মাকে ডাকছি
বলেই আদি মা বলে গলা ছাড়ল আদিবা কি করবে ভেবে না পেয়ে তাড়াতাড়ি গিয়ে আদির মুখ চেপে ধরল।

-“পা গ ল হয়ে গেছেন? আপনি এমন ছেলে মানুষি কেন করছেন?

-“কারন ছেলে মানুষির বয়স টা তোর সাথে কাটাতে পারি নি। বলে আদি,আদিবাকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল। আদিবা নিজেকে ছাড়াতে ছ ট ফ ট করতে লাগল।

-‘উম আদিবা অনেক বাড়াবাড়ি করেছিস আর না…ঘুমাতে দে..

আদির সাথে শক্তিতে পেরে উঠল না আদিবা তাই বাধ্য হয়েই আদির সাথে শুয়ে রইল। প্রায় ঘন্টাখানিক পর আদিবার খুঁজ শুরু হল কারন সকালের নাস্তা সে বানায়। তাই সে না থাকায় নাস্তার ব্যবস্থা হয় নি তারউপড় বাসা ভর্তি লোকজন নানান রকমের কাজ।

আদিত্যের মা আদিবাকে গলা ছেড়ে ডাকছেন আদিবা শুনতে পাচ্ছে কিন্তু উত্তর দেওয়ার উপায় নেই। কেটে গেল আরও কিছুক্ষন আজ আদিবার কপালে দুঃখ আছে সেটা সে জানে।

প্রায় ৯ টার কাছাকাছি আদির ঘুম ভাংগল শুধু শুধু ভাংগে নি আদির মা দরজায় কড়া নাড়ায় ভেঙেছে।

আদি বেশ ধীরে সুস্থে উঠে বসল যেন কোন কিছুই ঘটে নি কিন্তু এদিকে ভয়ে আদিবার হাত পা কাঁপছে চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে দরজা খোলার সাথে সাথে তার দিকে ভয়ানক ঘুর্নিঝড় বয়ে আসবে সন্দেহ নেই।

আদি আদিবার দিকে তাকাল আদিবা ভিতু হরনীর মত আদির দিকে তাকিয়ে আছে,
-“এমন মুখ করে থাকার কী আছে..? দেখে মনে হচ্ছে শোক দিবস পালন করছিস। বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দে…আমি দেখছি মা কেন ডাকছে।

আদির কথাটা আদিবার পছন্দ হয়েছে। হ্যা ওয়াশরুমেই একমাত্র জায়গা যেখানে সে লুকাতে পারে তাই আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে চলে গেল।

আদি গিয়ে দরজা খুলল,
আদির মা আর জুঁই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের হাতে চায়ের ট্রে।

চা টা এগিয়ে দিয়ে রুবিনা বেগম বললেন,
-“সরি বাবা চা দিতে দেরি হয়ে গেল। আরও আগেই দিতাম কিন্তু…

-“আমি সকালে চা খাই না মা। কফি খাব।

-“ওহ আমি এখনী করে আনছি…

-” তোমার করতে হবে না মা। আদিবা হাতের কাজ টা শেষ করে বানিয়ে দিবে…

-“আদিবা দিবে..?

-“হ্যা ওয়াশরুমে আমার কাপড় ধুচ্ছে কাল ধুয়ার কথা ছিল কিন্তু ধুয় নি তাই সকালে ধুচ্ছে। কাপড় ধুয়ে কফি বানাবে।

-“ওমা তাই..? ও এখানে আর আমরা ওকে খুঁজে হয়রান হয়ে যাচ্ছিলাম।

-“কেন খোঁজাখুঁজির কি আছে? ওত ছোট বাচ্চা না যে হারিয়ে যাবে।

-“না মানে সকালে নাস্তা ও বানায় তাই..

-“অহ কিন্তু ও তো ব্যাস্ত। আজ অন্য কাউকে বলো নাস্তা বানাতে…

রুবিনা বেগম আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলেন সাথে জুঁই ও…কিছুদূর গিয়ে জুঁই বলতে শুরু করল

-“কাকিমনি কি বলতো, আমার কী মনে হয় আদি ভাইয়া এখনো আদিবাপু কে ভালবাসে আর ওকেই বিয়েই করবে…

-“অসম্ভব এ কিছুতেই হতে পারে না।

-“কিন্তু ওর হাবভাবে তো এমনটাই মনে হয়।

-” আদি অন্য যাকেই পছন্দ করোক আমরা মেনে নিব কিন্তু আদিবাকে কিছুতেই না।

-“কেন আদিবাপুকে না কেন..?

-“আদিবার জন্য আমরা অনেক বছর আদিত্যকে কাছে পাইনি আমি চাই না আবারো এমন কিছু ঘটুক। যে করেই হোক আদিবাকে আদিত্যের জীবন থেকে বিদায় করতে হবে। আমি আজকেই এর একটা বিহিত করব।

এদিকে রুবিনা বেগম চলে যাওয়ার পর আদিত্য বলল,

-“ম্যাডাম বাইরে আসতে পারেন মা চলে গেছে।

আদিবা বাইরে আসল তারপর ফ্যালফ্যাল করে তাকাল আদির দিকে।

-‘আগেই ত বলেছিলাম ভয় পাওয়ার কিছু নেই যেটা সামলাতে পারব না সেই কাজ আমি করিনা এখন নিচে যা আমার জন্য কফি নিয়ে আয়।

আদিবা কথা বাড়াল না চলে যেতে চাইল।

-“এই দাঁড়া চুল ঠিক করে গলা ঢেকে তারপর যা..আর রাতের ব্যাপারে কাউকে কিছু বলবি না।

আদিবা মাথা নাড়ল তারপর ওড়না দিয়ে ভাল করে গলা ঢেকে চুল ঠিক করে নিচে গেল। আদিবা নিচে যাবার কিছুক্ষন পরেই আদি নিচে নেমে আসল। এসেই টেবিলে বসল বাকিরাও আছে আদিবা রান্না ঘরে কফি বানাচ্ছে কাজের মহিলা আর রুবিনা বেগম নাস্তা।

রান্নাঘর আর খাবার টেবিল কাছাকাছি হওয়ার সব কথায় শোনা যায়। আদিকে দেখে আদিত্যের বাবা বললেন,

-“আদি তুমি এতদিন পর দেশে এসেছো তাই আমি চাচ্ছি একটা গেট টুগেদার আয়োজন করে সবার সাথে তোমাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে তোমার কোন আপত্তি নেই তো…??

-“নাহ আপত্তি কিসের…যা ভাল বুঝো করো কিন্তু এই দেশে থাকার আবদার করো না। আমি এখানে বেশিদিন থাকব না আবার ফিরে যাব

-“সে নাহয় পরে দেখা যাবে আপাতত আজ সন্ধ্যায় বাসায় থেকো…আর চাইলে তোমার পুরনো বন্ধুদের দাওয়াত করতে পারো।

-“আইডিয়া টা খারাপ দাও নি। আমার সবার সাথে দেখা করা উচিত। আচ্ছা তাহলে পার্টির আয়োজন করা যাক।

-“আমি সব আয়োজন করেই রেখেছি ক্যাটারিং এর লোক কিছুক্ষনের মধ্যে চলে আসবে তুমি তোমার বন্ধুদের দাওয়াত করে দাও।

-“আদি হ্যাসূচক মাথা নেড়ে খেতে শুরু করল।

খাওয়া শেষে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসল। তারপর সব পুরোনো বন্ধুদের ফোন করে দাওয়াত দিতে শুরু করল। আর আদির বাবা আত্মীয়দের দাওয়াত দিচ্ছেন এর মধ্যে আদিবা কফি নিয়ে এসে আদিত্যের সামনে রাখল।

হটাৎ করে আদিবাকে দেখে থেমে গেল। ভূত দেখার মত চমকে উঠে তাকাল আদিবার দিকে এমন একটা ভাব যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভুলটা এই মাত্র সে করে বসেছে।

-‘ক ক কী হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কোন ভুল করেছি?

-“বিরাট বড় ভুল… বলেই আদি উঠে গিয়ে বাবার সামনে দাঁড়াল।

-“বাবা পার্টি বাসায় না করে অন্য কোথাও করা যায় না..?

-“কিন্তু সবাইকে ত বাসার কথা বলে দিয়েছি।

-“আই সি…উফফ আমি কী করে ভুলে গেলাম।

-“কেন কোন সমস্যা হয়েছে…?

-” সমস্যা তো হয়েছেই। আচ্ছা হোক আমি সামলে নিতে পারব বলে আদি বাইরে চলে গেল…



চলবে…!!!

#বেপরোয়া ভালবাসা
#পর্বঃ১১
#লেখনীঃ gazi pingke hossan

বিকালের দিকে আদি বাসায় ফিরল। যেহেতু আদি সারাদিন বাসায় ছিল না তাই আদিবার দিন টা ভালই কেটেছে। আদিবা সারাদিনে আদির ঘর গোছানো থেকে শুরু করে কাপড় গোছানো সবকাজ করে রেখেছে। প্রয়োজনীয় সব জিনিস লাগেজ থেকে বের করে হাতের কাছে সাজিয়ে রেখেছে যেন বাসায় ফিরে আদিবাকে ডাকাডাকি না করে…কিন্তু কে শোনে কার কথা আদি বাসায় ঢুকে ঘরে যাওয়ার আগেই আদিবাকে ডাকতে শুরু করল।

-” আদিবা এই আদিবা

আদিবা শোনল ঠিকি কিন্তু উত্তর দিল না। আদি আবারো গলা ছাড়ল।

-“আদিবার বাচ্চা কোথায় তুই ডাকছি কথা কানে যায় না..?

আদিবা রান্না ঘরে ছিল আদির ডাকে বেশ বিরক্তি নিয়ে আদির কাছে এগিয়ে গেল,
-“কি হয়েছে কী? গরুর মত চেঁচাচ্ছেন কেন..?

-“কি বললি তুই..?

-“বাসায় আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেল.. (ফিসফিস করে)

-“সাহস বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে

-“ভদ্রভাবে কথা বলুন। বাসায় অনেক লোকজন সবাই কিভাবে তাকাচ্ছে দেখেছেন?

-“তুই এত পটর পটর করার সাহস পাচ্ছিস কোথা থেকে সেটাই বুঝতে পারছি না ?দাঁড়া আজ তোর হচ্ছে…

বলেই আদি আদিবার হাত ধরে টানতে শুরু করল।

-“কি হচ্ছে কী এসব? মান সম্মানের পুরো বারোটা বাজিয়ে ছাড়বেন দেখছি। হাত ছাড়ুন বলছি…

আদিবা চেঁচিয়ে বললেও আদির কান পর্যন্ত আদিবার কথা পৌঁছাল না।সে আদিবাকে টানতে টানতে নিজের ঘরে চলে গেল এদিকে ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সবার মাঝে জুই অরিন সাদিয়াও আছে। ওদের দেখে জুই বলে উঠল,

-“বড়চাচা শুধু শুধু এতকিছুর আয়োজন করল এতগুলো মেয়েকে দাওয়াত করে নিয়ে আসল এতে কী কোন কাজ হবে? বাজি ধরে বলতে পারি বিয়ে ত দূর ভাইয়া আদিবাপু ছাড়া কারো দিকে ফিরেও তাকাবেও না। অরিন আপু তোমার কী মনে হয়?

-“ঠিকি বলেছিস আমিও মাকে বারবার নিষেধ করেছি এভাবে মেয়েদের পরিবার সহ ডেকে এনো না । আগে ভাইয়ার সাথে কথা বলো। ভাইয়া কাউকে পছন্দ করবে না উল্টে রেগে যাবে কিন্তু কে শুনে কার কথা। মায়ের ধারনা এখান থেকে কাউকে না কাউকে ভাইয়ার ভাল লাগবেই

-“কিন্তু আমার মনে হয় ভাইয়া আদিবাপু কে ভালবাসে দেখো না একমিনিট ও আপুকে ছাড়া থাকতে পারে না।

-“ভাইয়া সবদিকে বদলে গেলেও এই একটা বিষয়ে একটুও বদলায় নি। ছোটবেলায় যেমন আদিবার জন্য বেপরোয়া ছিল এখনো তেমনি আছে।




এদিকে রুমে এসে আদি,আদিবাকে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে দিল। আদিবার ধর্য্যের সীমা পেরোল। রাগী কন্ঠে বলে উঠল,
-“আপনার সমস্যাটা কী একটু বলবেন..?

-“সমস্যা আমার নয় তোর। তাও একটা না অনেক… কয়টা শোনবি..?

-“আমার কী সমস্যা হ্যা…? এসেছেন থেকে জ্বালাচ্ছেন।আপনার এমন আচারন আর নিতে পারছি না। ভুলে যাবেন না আমি আর ছোট নেই

-“ওহ তাই নাকি…?

-“হ্যা তাই… নিজেকে সংযত করুন কারনে অকারনে এভাবে ডাকবেন না। আমরা আর ছোট নেই যে ছেলেমানুষী করব।আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি আমার থেকে দুরত্ব বজায় রাখুন.

-“তুই আমাকে সাবধান করছিস..?নিজের অবস্থান টা হয়ত ভুলে গেছিস তাই না? সমস্যা নেই আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি তুই বিনা খরচে আমাদের বাসায় থাকিস সহজ ভাষায় যেটাকে বলে আশ্রিতা। আর একজন আশ্রিতার দায়িত্ব তার মালিক কে খুশি রাখা।

আদির কথাটা হয়ত আদিবার খারাপ লেগেছে তাই গলা নিচু করে বলল,
-” কি কি করতে হবে বলুন করে দিচ্ছি। যা যা করতে হবে সব একবারে বলুন আমি সব একসাথে করে দিব তবুও একটু পর পর ডাকবেন না।

-“এখন তোর কথায় আমাকে চলতে হবে…??

-“আপনি এত ত্যাড়া কেন? একটা মানুষ এত ত্যাড়া কী করে হতে পারে ভেবে পাচ্ছি না।

-“মুখ সামলে কথা বল…বলে হাতে থাকা প্যাকেট টা ছুঁড়ে দিল আদিবার দিকে..

-‘কী এটা…?

-“শাড়ি,আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি তুই চেঞ্জ করে শাড়িটা পরে নে।

-“আমি হটাৎ শাড়ি পরতে যাব কেন?

-“গতকাল কেন পরেছিলি..?

-“আমার ইচ্ছে হয়েছিল তাই পরেছিলাম আজ পরব কেন…?

-“তোর স্মৃতি শক্তি খুবি খারাপ আদিবা। তুই হয়ত ভুলে গেছিস কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিস।আমার কথার অবাধ্য হলে কী কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় সেটাও হয়ত ভুলে গেছিস। তাই ছোট বেলার ইতিহাস মনে করিয়ে দেওয়াটা জরুরী হয়ে পড়েছে।

বলে এগিয়ে আসল আদি। আদিবার খুব কাছে এসে বসল তারপর হুট করে গলা থেকে ওড়না টা নিয়ে নিল।

আদিবা তাড়াতাড়ি সরে বসল,
-ক ক কী করতে চাইছেন…? স স সাবধান কাছে আসবেন না।

-“কেন, কাছে আসলে কী করবি..?

-“ভুলে যাবেন না আজ বাসায় অনেক লোকজন। খারাপ কিছু করতে চাইলে আ আ আমি চেঁচাতে বাধ্য হব..

আদিবার কথায় আদি ভয় পাওয়া তো দূরে থাক এমন একটা ভাব নিল যেন আদিবার কথা সে শুনতেই পায় নি। হাত বাড়িয়ে হ্যাচকা টানে আদিবাকে আবারো নিজের কাছে নিয়ে আসল…

আদিবা অসহায় কন্ঠে বলল
-“ভ ভ ভাইয়া….!!!

-“এত আস্তে কেন? চেঁচা…যতখুশি চেঁচা। সম্মান গেলে বাবার যাবে আমার তাতে কী? সবাই বলবে আহমেদ সাহেবের ছেলেটা অ*মা*নু*ষ হয়েছে।

কথা বলতে বলতে আদি ওড়না দিয়ে আদিবার হাত দুটি শক্ত করে বেঁধে নিল।

ভয়ে আদিবার চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল…আদি যেই জামায় হাত দিতে যাবে আদিবা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে উঠল
-“আ আ আমি শাড়ি পরব…

-“শাড়ি ত তোকে পরতেই হবে। তুই চাইলেও পরাব না চাইলেও পরাব। এই শাস্তি শাড়ির জন্য না আমার সাথে তর্ক করার জন্য। আচ্ছা ভয় পাচ্ছিস যখন তাহলে শাস্তির ধরন টা বদলে দেই বলে আদিত্য আদিবাকে কোলে তুলে নিল…

আদিবা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আদির দিকে।
আদি তাকে কোলে নিয়ে বাথরুমে গেল তারপর নিচে বসিয়ে দিল। হাতের বাঁধনটা খুলে ওড়না টা মুখে বেঁ*ধে দিয়ে বলল।

-“ভাবিস না তুই চেঁচাবি জন্যে মুখ বেঁ*ধে*ছি. এখন আমাকে অনুরোধ করবি তাই বেঁধে নিলাম। যত যাইহোক তোর অনুরোধ আবার ফেলতে পারি না। যাইহোক দরজায় থাক্কা থাক্কি কিংবা খোলার চেষ্টা করবি তো তার ফলাফল এর চেয়েও ভয়ানক হবে…
বলে উঠে দাঁড়াল আদি।

আদিবার বুঝতে বাকি রইল না আদিত্য কী করতে চলেছে। ছোটবেলায় কিছু হলে আদি এভাবেই তালে বাথরুমে আটকে রাখত । যতক্ষন না তার রাগ কমত অন্ধকারে বসে থাকতে হত আদিবাকে। আদিবা ছোটবেলা থেকেই অন্ধকার ভয় পায় সেই ভয় আজও কাটিয়ে উঠতে পারে নি তাই আদি উঠে দাঁড়াতেই আদিবা তাড়াতাড়ি আদির হাত আঁখরে ধরল।

আদি আখড়ে থাকা হাতের দিকে একবার দেখল তারপর আদিবার চোখের দিকে তাকাল চোখ দুটি ছল ছল করছে…

-“ভয় পেয়েছিস…??

আদিবা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।

-“একটু আগেই না বলছিলি বড় হয়ে গেছিস…

আদিবা চোখ নামিয়ে আদির হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের কান ধরার চেষ্টা করে বুঝাতে চাইল সে ক্ষমা চাইছে কিন্তু হাত কান পর্যন্ত যাওয়ার আগেই আদি একটানে আদিবাকে বুকে জড়িয়ে নিল।

-“এখনো অন্ধকারকে এত ভয় পাস..?

আদিবা জবাব দিল না শুধু মাথা তুলে তাকাল আদি কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলল,

-“চোখ মুখে পানি দে। এত ভয় পাওয়ার মত কিছু ঘটে নি আমি আছি তো…

আদি বাইরে চলে গেল আদিবা বুঝার চেষ্টা করতে লাগল আদিত্য কেন এমন করছ? সে কী বুঝতে পারছে না আদিবা আর ছোট নেই। চাইলে একটা যুবতী মেয়েকে বুকে টেনে নেওয়া যায় না। যায় না কপালে চুমু আঁকা। যাইহোক এখন দেরি করলে আদি তাকে বাথরুমে আটকে রাখবে বুঝতে পারল তাই বাধ্য হয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে শাড়িটা হাতে নিল।

লাল টকটকে শাড়ির সোনালী আচল। দেখে বেশ অবাক হল আদিবা। আদির দিকে তাকাতেই আদি বলল,

-“কোন সমস্যা..?

-“না মানে এই শাড়িটা আমার জন্য…?

-“তো অন্যজনের হলে তোকে দিতাম নাকি..?

-“নতুন বউয়ের শাড়ির মত লাগছে…আমি কখনো এত লাল শাড়ি পড়িনি।

-“আমার রুচি খা*রাপ তাই বলতে চাইছিস..

-“আ আ আমি এমন বলনি

বলেই আদিবা তাড়াতাড়ি শাড়িটা পরতে শুরু করল যদিও সে মাঝে মাঝে শাড়ি পরে কিন্তু একা একা শাড়ি পরা অনেকটাই ঝামেলার কুচি ঠিক করতে সমস্যা হচ্ছে।

আদিবার অসুবিধে হচ্ছে দেখে আদি এগিয়ে আসল। কোন কথা না বলে সোজা আদিবার পায়ের কাছে বসে কুচি ঠিক করতে শুরু করে দিল। আদিবা অবাক হল,

-“কী করছেন আপনি আমার গুরুজন উঠুন প্লিজ পায়ে হাত দিবেন না ….

-“আমি চাইনা সবার সামনে শাড়ি খুলে যাক তাই হেল্প করছি এর বেশি কিছু না।তাই পাকামি করিস না। বলে আদি শাড়ির কুচিতে মনযোগ দিল।
আদিত্য শাড়ি ঠিক করে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। আদিবা নিচু গলায় বলল,

-” আমি এখন যাই…

-“হুম যা।

আদিবা এক ছুটে বেরিয়ে গেল। কিন্তু নিচে যেতেই
আদিত্যের মা তাকে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন।

-“তোকে আমি কী বলেছিলাম আদিবা…?

-“আ আ আমি ভাইয়াকে নিষেধ করেছিলাম কাকিমনি। তুমি যা যা বলতে বলেছিলে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভাইয়া শোনার আগেও রেগে গেল শুধু বলেছিলাম আমার থেকে দূরে থাকতে তাতেই রেগে আমাকে…

-“তোকে কী..? কি করেছে হ্যা,মে*রে ফেলেছে? কই আমি তো দেখতে পারছি না কিছু করেছে, দিব্বি তো আছিস। শোন আদিবা একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি তুই আদিকে যতই নিজের কাছে টানার চেষ্টা কর না কেন আমরা তোকে কিছুতেই মেনে নিব না।এতবছর ধরে তোকে খায়িয়ে পরিয়ে মানুষ করেছি তার প্রতিদান এভাবে দিস না৷ আমাদের একমাত্র ছেলেকে তুই কেড়ে নিস না। আজ পার্টিতে আদির বউ বাচাই করব তুই আজ অন্তত ওর সাথে লেপ্টে থাকিস না।

বলে আদিবাকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে রুবিনা বেগম বেরিয়ে গেলেন। আদিবার নিজের কাছেই নিজেকে অসহায় মনে হল। কী করবে এখন সে ভাইয়ার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাইলে ভাইয়া তাকে শা*স্তি দেয় আর ভাইয়ার কথা শুনলে তার পরিবার….

আদিবা মন খারাপ করে বেরিয়ে আসল তারপর নিজমনে কাজে লেগে পড়ল। সবার সব কাজ হাতে হাতে করে দিচ্ছে…



দেখতে দেখতে পার্টির সময় হয়ে গেল
আদি একবারে রেডি হয়ে নিচে আসল। বাগানের দিকে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে তবে ঘরেও অনেক আত্মীয় আছে। আদির মা এগিয়ে এসে আদির হাত ধরলেন।
-“মাসাল্লাহ,আমার ছেলে কত বড় হয়ে গেছে.. কালো সুটে তোকে খুব সুন্দর লাগছে বাবু…

-“মা কি যে বল না…

-“হয়েছে লজ্জা পেতে হবে চল তোকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই…

-“উম মা বলছিলাম কী…

-“কি..?

-“নাহ কিছু না বলে আদি চারদিকে চোখ বুলাল তার চোখ আসলে আদিবাকে খুঁজছে।

-“আদি ওর নাম নীলা,তোর শিউলি ফুফির মেয়ে।
মায়ের কথায় ধ্যান ভাংগল আদির

-“ওহ আচ্ছা, ভাল আছেন আপু..?

আদির অদ্ভুত সম্মোধনে অবাক হলেন রুবিনা বেগম।
-“ও তোর চেয়ে অনেক ছোট আদি…

-“তাতে কী মা..?? ছোট বড় সবাইকে সম্মান করা উচিত। এক্সিউজ মি আমি একটু আসছি …

বলে আদি এগিয়ে গিয়ে অরিনের পাশে বসল,
-“অরিন আদিবা….

আদির কথা শেষ হওয়ার আগেই অরিনের পাশে বসা এক মহিলা বলে উঠলেন,

-“অরিন ওই লম্বা চুলের মেয়ে টা কেরে..?

-“কোনটা খালা..? চারদিকে তো অনেক মেয়ে

-“আরে ওই যে লাল শাড়ি পরা মেয়েটা। কি লক্ষি আর শান্ত কখন থেকে একা হাতে সব সামলাচ্ছে…

মহিলার ইশারা করা দিকে অরিনের সাথে আদিও তাকাল মহিলা আদিবার কথা জিজ্ঞাসা করছে দেখে আদির কিছুটা খটকা লাগল কিন্তু কিছু বলল না। অরিন উত্তর দিল,

-“ওহ ওটা তো আদিবা মেজো চাচার মেয়ে..

-“তাই বল…দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভদ্র ঘরের মেয়ে। আসলে তোর তিয়ান ভাইয়ার জন্য মেয়ে খুঁজছি কিনা..

কথাটা শুনামাত্র আদি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল।
কোন কিছু না ভেবে সোজা বলে উঠল,

-“ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে খালা শুধু শুধু নজর দিও না।

আদি রাগে ফুসতে ফুসতে সোজা গিয়ে আদিবার সামনে দাঁড়াল…আদির চোখে মুখে রাগ ফুটে উঠছে
আদিবা কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে প্রশ্ন করল,

-“কিছু কী হয়েছে ভাইয়া..??

-“তুই চুল খোলে রেখেছিস কেন..?

-“ম ম মানে..?

-“এখনী চুল বেঁধে আয়…

-“আ আ আসলে ভাইয়া…

-“আসলে কী…

আদিবা এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের গলার দাগ দেখিয়ে বলল,
-“চুল বাঁধলে দাগগুলো দেখা যাবে…

-“তুই এখনী আমার রুমে যাবি যতক্ষন না আমি ফিরছি রুমের বাইরে একপাও ফেলবি না…

-‘কিন্তু কেন..?

-“কইফত চাচ্ছিস..?

আদিবা মাথা নিচু করে নিল…
-“উফফ কোন বুদ্ধিতে যে আমি বাসায় পার্টির আয়োজন করলাম…? মহিলা গুলোই ছাড় দিচ্ছে না আমার বন্ধু বান্ধব গুলো তো ওকে দেখলে পাগল হয়ে যাবে (ফিসফিস করে)

-“ভাইয়া কিছু বলছেন..?

-“তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস? উপড়ে যা বলছি…
আমি বাইরে যাচ্ছি কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলবি জরুরী কাজ আছে তাই গিয়েছি।

আদিবা মাথা নাড়ল…

-“সাবধান এসে যেন না দেখি তুই ঘোরাঘুরি করছিস। যদি রুমের বাইরে বের হোস সারারাত বাথরুমে আটকে রাখব…



চলবে…!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here