#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ১৪,১৫
#লিখনীঃ Gazi pingke-All story
১৪
কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাংগল আদিবার। চোখ মেলে তাকাতেই বুঝতে পারল আদি বেশ যত্ন নিয়ে তাকে আগলে রেখেছে। রাতে আদি জোর করে তাকে নিয়ে এসেছিল তারপর তার সাথে যা যা করেছে তার জন্য আদিবার এখন রাগ করার কথা, ভয়াবহ ধরনের রাগ কিন্তু তার রাগ হচ্ছে না, কেন হচ্ছে না ? নিজেকে বার কয়েক প্রশ্ন করেও উত্তর খুঁজে পেল না আদিবা বরং হুট করে লক্ষ্য করল তার কোন রকম খারাপ লাগা কাজ করছে না বরং আদির সাথে মিশে থাকতে ইচ্ছে করছে। আদিবা,আদির বুক থেকে মুখ তুলে তাকাল, ঘন পাঁপড়িতে ঢাকা চোখ দুটিতে যেন রাজ্যের ঘুম এসে জমা হয়েছে। গভীর ঘুমে আছন্ন আদিকে ভীষন শান্ত আর মায়াবী লাগছে। আদিবা আস্তে করে উঠে বসল,ইচ্ছে হল আদির সিল্কি চুলে একবার হাত বুলিয়ে দিতে কিন্তু সাহসের পরিপক্কতার অভাবে পেরে উঠল না। আদিবা বেশ কিছুক্ষন আদির দিকে তাকিয়ে রইল চোখ ফিরাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আদিকে সে জন্মলগ্ন থেকে দেখছে কই কখনো তো এত ভাল লাগে নি। সবসময় ভয় আর জড়তাই থাকত আজ হটাৎ মনে হচ্ছে এই মানুষটার প্রতি তার এক প্রকার আসক্তি আছে।
আদিবা আদির দিকেই তাকিয়ে আছে হটাৎ ঘড়িতে ঢং করে শব্দ হল আদিবার ধ্যান ভাংগল।
তাড়াতাড়ি এ ঘর থেকে বের হওয়া দরকার,কেউ তাকে এই রুমে দেখলে বিরাট কান্ড ঘটে যাবে। কিন্তু আদিবার যেতে ইচ্ছে করছে না। মনের বিরুদ্ধেই বিছানা ছাড়ে উঠল তারপর পায়ের কাছ থেকে গায়ের চাঁদর টেনে সযত্নে আদির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসল।
সারাবাড়িতে পিনপতন নীরবতা কেউ উঠেনি। আদিবা নিজে থেকেই রান্না ঘরে গেল যদিও সে কখনো নিজে রান্না করে না।সে শুধু সব কাজ এগিয়ে দেয় রান্না করে আদির মা তবে আজ তার রান্না করতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে আদির পছন্দের সব রান্না করতে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ আদিবা রান্না শুরু করে দিল । খিচুড়ি সাথে ইলিশ ভাজা আর গরুর মাংস সাথে ক্ষীর পায়েস।
ধীরে ধীরে বাড়ি সরগরম হয়ে উঠল সবাই জাগতে শুরু করেছে আদিবার রান্নাও প্রায় শেষ। সে টেবিলে খাবার দিতে দিতে জুইকে বলল সবাইকে ডেকে আনতে সবাই এসে টেবিলে বসল কিন্তু যার জন্য এত আয়োজন সেই আসছে না। আদির মাও এখনো আসেন নি। আদিবা এবার অস্থির হয়ে বলল
-“অরিন আপু যাও না ভাইয়া আর কাকিমনিকে একটু ডেকে নিয়ে এসো।
অরিন একটু হেসে বলল,
-“ঘটনা তো সুবিধের মনে হচ্ছে না কাহিনি কী হুম…?
-“উফ আপু তুমি যে কি বলো না কিসের আবার ঘটনা।
-“বুঝেছি বুঝেছি আর লজ্জা পেতে হবে না ফিসফিসিয়ে বলে অরিন আদিকে ডাকতে চলে গেল
আদি আর তার মা একসাথেই এসে টেবিলে বসল এত সকালে ঘুম থেকে তুলায় আদি বেশ রাগ করেছে সে অরিন কে ধমকাতে ধমকাতে নিয়ে এসেছে। আদি টেবিলে বসে রুক্ষ কন্ঠে বলল
-“আজকে ডেকেছো ডেকেছো তবে আর কোনদিন এত সকালে আমাকে আর ডাকবে না। আমি এত সকালে উঠি না যাইহোক কী রান্না হয়েছে তাড়াতাড়ি দাও খেয়ে ঘুমাম।
আদি বলতে দেরি হলেও আদিবার দিতে দেরি হয় নি সে প্লেট এগিয়ে দিল। প্লেটে চোখ রেখে আদির মুখে হাসি ফুটে উঠল সে আদিবার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসল তারপর খাওয়ায় মনযোগ দিল আদির মা খাবার সামনে পেয়ে বলে উঠলেন,
-“বাহ আদিবা তারমানে তোর মা তোকে সব বলে দিয়েছে..?
আদিবা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল
-“কি কথা কাকিমনি..?
-“এই যে আজ তোকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। সে জন্যই রান্না করেছিস তাইনা?
কথাটা শুনে আদিবা যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক বোধহয় আদিত্য হয়েছে। কথাটা কানে পৌঁছার সাথে সাথেই আদি খাওয়া বন্ধ করে আদিবার দিকে হিংস্র চোখে তাকাল। আর কিছু না বলে খাবার ছেড়ে উঠে গেল। উপস্থিত সবাই বুঝতে পেরেছে আদি কেন রাগ করেছে কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না আদির মায়ের। তিনি যেকরেই হোক আদিবাকে এ বাসা থেকে বিদায় করতে চান।
আদিবা অসহায় চোখে আদির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল আর বুঝার চেষ্টা করল এটাই তার জীবনের নিয়তি কিনা।কেন তার সাথে বার বার এমন হয়? ভাল কিছু করতে গিয়েও ফেঁসে যায়। আদি সবসময় তাকে ভুল বুঝে। আজও বুঝল অথচ রান্না সে আদির জন্য করেছিল বরপক্ষের জন্য না। একে একে সবাই খাওয়া শেষ করে চলে যেতে লাগল আদির মা আদিবার কাছে এগিয়ে এসে কড়া গলায় বললেন,
-“আদিবা কোন রকমের ন্যাকামি বা ঝামেলা করবি না কিছুক্ষন পর তোর ফুফির ছেলে তোকে দেখতে আসবে গতকাল পার্টিতে দেখে তোকে পছন্দ করেছে।
-“কিন্তু কাকিমনি..?
-“আর কত জ্বালাবি আমাদের এবার অন্তত মুক্তি দে…
আদিবা আর কিছু বলতে পারল না চুপ করে রইল। সে বিয়ে করতে চায় না কিন্তু কিছু বলার সাহসো তার নেই।
কিছুক্ষনের মধ্যেই পাত্রপক্ষ চলে আসল। আদিবা অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের সামনে গিয়ে বসল। সব ঠিক ঠিকই আছে আদি এর মধ্যে একবারো নিচে আসেনি ঝামেলাও করেনি এমনকি আদিবাকেও নিজের ঘরে ডাকেনি।
তবে পুরো বাসায় একটা ঘুমট ভাব আদিবা চুপচাপ সাথে অন্যরাও কারন বাসার সবাই মোটামুটি আদির রাগ সম্পর্কে জানে আর সে যে আদিবাকে ভালবাসে এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
আদিবাকে শাড়ি পরিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে বসানো হয়েছে। আদিবার মন খারাপ লাগছে, কেন লাগছে নিজেকে প্রশ্ন করতেই মন উত্তর দিল সে অন্য একজনকে ভালবাসে? এই বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব না কিন্তু কাকে ভালবাসে? ভাইয়াকে..? এবার আর ভিতর থেকে উত্তর আসল না। আদিবার ভিতরে এক অস্থিরতা কাজ করছে।
-“আচ্ছা ভাইয়া কী আমায় ভালবাসে? যদি ভালইবাসবে তাহলে কেন নিচে আসছেনা?এসে কেন বলছে না তিনি আমায় ভালবাসেন আমায় বিয়ে করতে চান? তবে কি ভালবাসে না..? না না তা হতে পারে না ভাল না বাসলে রাতে আমার সাথে এমন করল কেন? ভাল না বাসলে কি কাউকে এত কাছে টানা যায়..? আমার সারা শরীরে এখনো ভাইয়ার দেওয়া চিহ্ন বিরাজ করছে…
আদিবা যখন এসব ভাবছিল তখন হটাৎ করেই ঝড়ের বেগে নিচে নেমে আসল আদি আর কাউকে কিছু না বলে পাত্রপক্ষের সামনে থেকে আদিবাকে টেনে নিয়ে বাইরের দিকে পা বাড়াল ব্যাপারটা এতই তাড়াতাড়ি ঘটল যে সবাই শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইল কেউ কিছু বলার সুযোগ পেল না।
যদিও আদিবা এতক্ষন বাঁধা দেয়নি কিন্তু বাসায় বাইরে এসে তার টনক নড়ল প্রশ্ন করল,
-“ভাইয়া কী করছেন? আমাকে এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
-“জাহান্নামে কোন অসুবিধা..?
-“হাতটা ছাড়ুন ভাইয়া বাসার সবাই হয়ত খারাপ ভাবছে।
-“ভাবুক তুই কোন সাহসে শাড়ি পরেছিস সেটা বল..
-“কাল তো আপনিই বলছিলেন শাড়ি পরতে..
-“পরে অন্য ছেলেকে দেখাতে বলেছিলাম?
“” শাড়ি পড়লেও সমস্যা না পরলেও সমস্যা তাহলে আমি পরবটা কী?
“”” তুই কিছুই পরবি না।
“”” কিহ…??
“”” ঠিকি শুনেছিস তোর কোন জামা কাপড়েই পরার দরকার নেই।
-“আপনক এসব কী বলছেন।
-“আমি কখন কী বলি আর কী চাই সেটা আমি নিজেই জানি না বাদ দে এখন চল।
“কোথায় যাব..??
“গেলেই দেখতে পাবি..
কথা না বাড়িয়ে ভাইয়ার পিছন পিছন পোষা বিড়ালের মত মাথা নিচু করে হাঁটতে লাগলাম।ভাইয়া ড্রাইভ করছে আদিবা পাশের সীটে বসে আছে।
‘”” ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি..
ভাইয়া বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,
-অনুমান কর দেখি,তবে ভাল কোন কাজে যাচ্ছিস না এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারিস। খুব শখ না বিয়ে করার.?
“”” ভ ভ ভাইয়ায়া আপনি এসব কি বলছেন…??
“”” আবারো সেই একি ভুল আট বছরেও তোর শিক্ষা হয় নি? তবে চিন্তা করিস না এবার শিক্ষা হবে
“” ভাইয়া আপনি আমায় ভুল বুঝছেন..
-” হুম ভুলেই বুঝেছিলাম তানাহলে আবার সুযোগ দেই।
-“ভাইয়া মাথা ঠান্ডা করুন তাছাড়া আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না।
“”” আমি সব পারি।
“”” আমাকে মা*রা*র জন্য নিয়ে যাচ্ছেন তাই না? তবে একটা কথা কান খুলে শুনে নিন আমাকে মা*রলে আমি আর চুপ থাকব না বাসার সবাইকে সব বলে দিব। সেই সাথে রাতে আমার সাথে কি কি করেছেন সেটাও বলব।
“”” বাসায় ফিরতে পারলে তো বলবি…
আদিবা এত করে বলার পরেও আদির কোন পরিবর্তন হল না সে একমনে ড্রাইভ করছে। হুট করেই আদিবার আট বছর আগের সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল। সামন্য ভুলের জন্য সেদিন আদি তাকে হাত পা বেঁ*ধে মে*রেছিল তারপর সারারাত ছাদে ফেলে রেখেছিল আজও সেই রট টা ভুলতে পারেনি আদিবা আজকেও সেই ঘটনার বিপরীত হবে না আদিবা জানে আদি আজ তাকে খুব মা*রবে। আদিবা এবার ভয়ে কেঁদেই ফেলল
“”” আ আ আ….
“”” আজব ত কাঁদছিস কেন..??
“”” তো কি করব আপনি আমায় মে*রে ফেলতে চাইছেন।
“”” শুধু তো চেয়েছি মে*রে ত ফেলি নি এখনো তাই আপাতর চুপচাপ বসে থাক যখন মা*রব তখন কাঁদিস।
দেখতে দেখতে গাড়িটা যেন কোন গুহার ভিতরে ঢুকে গেল। চোখ বুলিয়ে বুঝা গেল না এটা সত্যি কারের গুহা না চারদিকে মাথা উঁচু কাশ ফুলের গাছ সাড়ি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার মাঝখানে সরু একটা রাস্তা কোন জনমানবের চিহ্ন নেই কারন ফুল গাছে কোন ফুল নেই কারন এটা কাশফুলের সিজন না। ফুলের সিজন হলে হয়ত দলে দলে লোকজন থাকত কিন্তু এখন নেই।
“”” ভ ভ ভাইয়া….
“”” আচ্ছা আদিবা তোকে যদি এই জংগলে মে*রে মাটি চাপা দিয়ে দেই কেমন হবে ব্যাপার টা…??
আদির কথা শুনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আদিবার। আদির কোন বিশ্বাস নেই ও যা খুশি করে ফেলতে পারে।
“”” ভাইয়া বিশ্বাস করুন আমি এই বিয়ের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। কাকিমনি যা বলেছে শুধু সায় দিয়েছি।
“”” সায় দিয়েছিস এটাই বা কম কিসে? তোকে বলেছিলাম না আমার পারমিশনের বাইরে এক পা যেতে পারবি না তাহলে এত সাহস হল কি করে অন্য ছেলের সামনে বউ সেজে বসিস?
“”” আ আ আমার কথাটা একটু শোনোবেন প্লিজ
।
।
চলবে..!!!
#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ১৫
#লিখনীঃ Gazi pingke-All story
-” সিনেমা টা এখানে না করে হোটেলে করলে ভাল হত না…?? পার্কে তো বাচ্চারাও আসে।
হঠাৎ আদির কন্ঠ শুনে চমকে উঠল আদিবা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না। এখন ক্লাস টাইম আর পৃথিবী উল্টে গেলেও আদিত্য কখনো ক্লাস মিস দেয় না তাহলে এখন সে পার্কে কী করছে? আদিত্যকে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল আদিবা। আজ আর রক্ষে নেই। এমনিতেও আদিত্য যেভাবে আদিবাকে শাসন করে এই বিষয় টা আদিত্য কিছুতেই মেনে নিবে না।
আসলে আদিবার কারো সাথে বন্ধুত্ব করার অনুমতি নেই আর সেটা যদি কোন ছেলের সাথে হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। আদিবা এতক্ষন যার সাথে বসে ছিল সেই ছেলেটি আদিবার চেয়ে বয়েসে বড় এমনকি আদিত্যের চেয়েও বড়। কিন্তু তাতে কি আদিত্য কোন কিছু পরোয়া করার ছেলে নয় সে এগিয়ে এসে দুজনের মুখোমুখি দাঁড়াল।
ভয়ে আদিবার হাত পা কাঁপছে। আদিকে কি করে ম্যানেজ করবে মাথায় ঢুকছে না।আদি,আদিবার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-“আমাদের পার্কে ছেলে মেয়ে একসাথে বসা যায় না আপনারা জানতেন না..?
আদিবা আমতা আমতা করে বলল,
-“ভ ভ ভাইয়া আমি…..
-“আমি আপনার সাথে কথা বলছি না ম্যাডাম। আপনি বাসায় যান আমরা ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলব।
আদিত্যের কথা শুনে আদিবা তাকিয়ে দেখল আদি একা আসেনি সাথে তার বেশ কয়েকজন বন্ধুও আছে। আদিবা বুঝতে পারল খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে আর সেটা আটকানোর ক্ষমতা তার নেই।
আদিবার অবস্থা দেখে পাশের ছেলেটি বলল,
-“পার্ক তো কারোর একার না তাই না? পার্কে যে কেউ আসতে পারে।
-“আসতে বাঁধা নেই কিন্তু ছেলে মেয়ে একসাথে বসে ঢং করাতে নিষেধ আছে।
-“নিষেধ করলেই শুনতে হবে?
-“হ্যা হবে কারন পার্কটা আমাদের এলাকার তাই এখানে কী রুলস থাকবে সেটা আমরাই ঠিক করব।
-“মাস্তানি হচ্ছে…? এখনো দুধের হাত পড়েনি আর মাস্তানি করছো…?
বলেই আদিত্যের কলার টেনে ধরল ছেলেটি।
এমন কান্ডে আদিত্য সহ বাকিরা সবাই জ্বলে উঠল। আদিবা কি করবে বুঝতে না পেরে তাড়াতাড়ি এগিয়ে বলল,
-“নীলয় ভাইয়া ছাড়ুন প্লিজ। কী করছেন এসব?
নীলয় ছাড়ার আগে আদিত্য নিজেই কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
চেহারাটা মনে রাখলাম আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে বলে আদিত্য সেখান থেকে চলে গেল।
সাথে সাথে আদিবা বলল,
-“আমি এখন যাই নীলয় ভাইয়া।
নীলয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদিবা তাড়াতাড়ি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিছুদূর আসার পরেই রাস্তায় আদিত্যের সাথে দেখা হল সেদিন বাসায় ফিরে আদিত্য খুব মে*রেছিল আদিবাকে।
পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে হতেই গা সিওরে উঠল আদিবার এর মধ্যেই নির্জন এক জায়গায় এসে গাড়ি থামল,
-“গাড়ি থেকে নাম..
-“ভ ভ ভাইয়া আমি মানে…
“” নামবি নাকি টেনে নামাতে হবে…
গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়াল আদিবা। জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর চারদিকে সবুজ অরন্য তার পাশেই বয়ে চলেছে ছোট নদী মনে হচ্ছে যেন ছবির ফ্রেমে আঁকা কোন ছবি। কিন্তু এসব দেখে নয়ন ধন্য করার সুযোগ নেই আদিবার কারন তার পাশে চোখ গরম করে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য।
ভয়ে ভয়ে আদির দিকে তাকাল আদিবা, উদ্দেশ্য আদির মনের মরিগতি বুঝার চেষ্টা। আদিকে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদি বলে উঠল,
“”” ঠিক হয়ে দাঁড়া তো কয়েকটা ছবি তুলি।
আদির কথায় অবাক হল আদিবা এখন তার ছবি তুলতে ইচ্ছে করছে? কি অদ্ভুত এই তো শাস্তি দিতে চেয়েছিল?এখন ছবি তুলবে..?
“””ছবি দিয়ে কি হবে ভাইয়া…??
“”” তুই মরার পর সবাই ছবি দেখে স্মৃতিচারন করবে তাই তুলে রাখব।
“”” আপনি সত্যি সত্যি আমাকে মে*রে ফেলবেন…
“”” সন্দেহ আছে..??এত কথা না বলে সুন্দর করে দাঁড়া।
বলতে বলতে আদিবাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে শুরু করল। এদিকে আদিবার বেশ ভয় লাগছে কিছুক্ষন পরেই সে মা*রা যাবে ভেবেই কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কান্না করতে পারছে না।
-“আচ্ছা আমি যদি পালিয়ে যাই কেমন হবে ব্যাপারটা? কিন্তু পালিয়ে যাব কোথায়? আমি ত এখানে কিছুই চিনি না হারিয়ে যাব নাতো. সে যাই হোক মরে যাওয়ার চেয়ে হারিয়ে যাওয়া অনেক ভাল। যেমন ভাবনা তেমন কাজ আদি ক্যামেরায় মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখছে এটাই সুযোগ চোখের পলকেই সরু রাস্তা ধরে কাশবনের ভিতরে পা বাড়াল আদিবা। আদি যেন তাকে দেখতে না পায় তাই চোখ বন্ধ করে দিল এক ছুট আর পিছনে তাকায় নি। যেভাবেই হোক পালাতে হবে এখন এটাই তার একমাত্র লক্ষ্য।
ছুটে এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। যাক আদি তার পিছনে আসে নি দেখে স্বস্তি পেল। নিচে বসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিল কিন্তু যখন উঠে দাঁড়াল অবাক হয়ে গেল,
-“একি আমি কোথায় চলে এসেছি চারদিকে ত শুধু কাশবন সরু রাস্তাটাই বা কোথায় উধাও হয়ে গেল?
চারদিকে চোখ বুলিয়ে গাঁ সিওরে উঠল এখান থেকে বেরুনোর কোন রাস্তা দেখা যাচ্ছেনা সবদিকে মাথাসমান কাশবন। আদিবা কিছুক্ষন এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে বুঝতে পারল বেরুনোর কোন রাস্তা নেই। এখান থেকে বের হওয়া অসম্ভব।
-“এখন আমি কি করব ভাইয়াকে ডাকব? কিন্তু ও তো আমাকে মে*রে ফেলবে একে ত পাত্রপক্ষের সামনে গিয়েছি এখন আবার পালিয়েছি আজ আর রক্ষা নেই।
যদিও আদিবা আদিত্যকে ডাকতে চায় না কিন্তু এখান থেকে বের হওয়া জরুরী তাই বাধ্য হয়ে আদিকে ডাকতে লাগল কিন্তু আদির কোন সাড়াশব্দ নেই,
-“তারমানে কী আমি হারিয়ে গিয়েছি?
আদিবার খুব কান্না পাচ্ছে এবার। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না কেঁদে দিল। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে বেরুনোর অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু রাস্তা খুঁজে পাই নি মাথাটা ধরে আসছে।
আদিবা মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পড়ল তখনী হটাৎ কারো গলা শুনে চমকে উঠল সে,
-এত সহজে শখ মিটে গেল? কাঁদছিস কেন যা আরো একটু ছুটাছুটি করে আয়।
আদির কন্ঠ শুনে যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেল আদিবা। আর কিছু না ভেবে দৌড়ে গিয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরল। আদি কিছুটা অবাক হল আদিবা তাকে নিজে থেকে কখনো জড়িয়ে ধরবে এটা যেন তার ভাবনার বাইরে ছিল।
আদি শান্ত হাতে আদিবার মাথায় হাত রেখে বলল,
-“ভয় পেয়েছিস..?
আদির কথায় বাস্তবে ফিরল আদিবা তাড়াতাড়ি আদিকে ছেড়ে দিয়ে ইতস্তত হয়ে বলল,
-“ভাইয়া আ আ আমি মানে…
-“এমন একটা থাপ্পড় মারব সব কটা দাঁত পড়ে যাবে কি ভেবেছিলি? তুই দৌড়ে আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারবি?
“””ভুল হয়ে গিয়েছে সরি…
“”” কিসের সরি যা না যা… এবার যা তুই কতদূর যেতে পারিস দেখি।
“”” বলেছি তো ভুল হয়ে গিয়েছে আর কখনো এমন করব না…চলুন বাসায় যাই প্লিজ।
“”” আমি রাস্তা চিনি কে বলল? আমি এই রাস্তা চিনি না তোর পিছন পিছন চলে এসেছি…
-“এখন কী হবে তাহলে…!!
-“একা একা যাবি নাহলে এখানে বসে কাঁদতে থাক।
বলেই আদি হাঁটা দিল, সাথে সাথে আদিবা কেঁদে উঠল।
।
।
।
চলবে…!!!