বেপরোয়া_ভালবাসা #পর্বঃ২২,২৩

0
2122

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ২২,২৩
#লেখনীঃ #মনা_হোসাইন
২২

নাহ আদির এই বেপরোয়া আচারন আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। নিজেকে কি ভাবে সে? যখন যা ইচ্ছা করবে? আদিবা কি তার হাতের পুতুল নাকি যে যখন তখন অ*ত্যা*চা*র করবে? এসব আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না এবার ওকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। বসে বসে এসবেই ভাবছিল আদিবা।

এদিকে আদিবাকে ওয়াশরুমে আটকে দিয়ে আদি এসে বিছানায় গা ছুঁয়াল। আর ভাবতে লাগল এত বছরেও আদিবার এতটুকুও পরিবর্তন ঘটেনি? তার এই অহেতুক জেদের জন্য আদিত্যকে জীবন থেকে ছয়টা বছর বিসর্জন দিতে হয়েছে তবুও এই মেয়ের জেদ কমেনি? কোন সাহসে গ্রামে যাওয়ার কথা ভাবতে পারল। আজ যতই আকুতি মিনতি করোক ওর নিস্তার নেই। কিছুতেই দরজা খুলবে না আদি।থাকুক সারারাত ওয়াশরুমে।আদি আদিবার উপড় রাগ ঝাড়ছিল হটাৎ ভাইয়া বলে চেঁচিয়ে উঠল আদিবা।

আকস্মিক চিৎকারে আদি চমকে উঠল। মনের মাঝে প্রশ্ন জাগল হটাৎ আদিবা এভাবে ডাকল কেন? কোন অঘটন ঘটায় নি তো। ওয়াশরুমে কিছু একটা পড়ার শব্দ হল মনে হচ্ছে।আদি দুবার গলা ছেড়ে প্রশ্ন করল

-“কি রে আদিবা এভাবে চেঁচালি কেন?

আদিবার পক্ষ থেকে উত্তর আসছে না দেখে আদি তাড়াতাড়ি উঠে বসল কারন আর যাইহোক আদিবা চুপ থাকার মেয়ে না ভাল উত্তর দিতে না পারলেও খারাপ উত্তর ঠিকি দিত আদি গিয়ে দরজা খুলে কিন্তু সাথে সাথে চোখ কপালে উঠে গেল। আদিবা মেঝেতে পড়ে আছে। আদি চিৎকার করে উঠল।

-“আদিবা কী হয়েছে তোর চোখ খোল। কথা বলছিস না কেন? আদিবা এই আদিবা কথা বল আদিবাকে ঝাঁকাতে কথা গুলো বলল আদি কিন্তু আদিবা নির্বিকার পড়ে আছে কোন সাড়াশব্দ নেই। আদির চিৎকার শুনে বাসার অন্যরা ছুটে আসল। সবার মুখে একই প্রশ্ন আদিবার কি হয়েছে।

আদি কাউকে কোন উত্তর না দিয়ে মগ ভর্তি পানি নিয়ে আদিবার চোখে মুখে পানির ঝাঁপটা দিল।
নাহ তবুও জ্ঞান ফিরছে না। আদি এবার তাড়াতাড়ি আদিবাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিল আদি মুহূর্তেই অস্থির হয়ে উঠেছে। কি থেকে কি করবে তার মাথায় ঢুকছে না। কি এমন ঘটেছে যে আদিবা সেন্সলেস হয়ে গেল। খুব বেশি ভয় পেয়েছে? আদি একহাতে আদিবার পালস চেক করছে অন্যহাতে ফোন নিয়ে কারো নাম্বার ডায়েল করছে।

এদিকে আদিবা বেহুশ থাকার নাটক টা বেশ ভালভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে তার ইচ্ছে ছিল আদি তার চিৎকার শুনে দরজা খুলে দিবে আর সে এক দৌড়ে পালাবে কিন্তু তা হল কই আদি ঢুকেই তাকে আঁখড়ে ধরেছিল তাই সুযোগ পায় নি। এখনো পাচ্ছে না কারন বাসার সবাই তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।এ তো মহা ঝামেলা হল এখান থেকে পালানোর আগে আদি যদি কোন ভাবে বুঝে যায় আদিবা অভিনয় করছে তাহলে আর রক্ষা নেই। আদি ফোনে ডায়াল করতে ব্যাস্ত সেই ফাঁকে আদিবা অরিনকে ইশারা করে বুঝাল তাকে পালাতে হেল্প করার জন্য। অরিন আদিবার ইশারা বুঝতে পারার সাথে সাথে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। সে একবার আদির দিকে দেখছে আবার আদিবাকে দেখছে। সে বেশ ভয় পাচ্ছে ধরা পড়লে আদি দুজনকেই কঠিন শাস্তি দিবে কিন্তু আদিবা তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে সাহার্য্য করেছে তাই এখন তার উচিত আদিবাকে হেল্প করা কিন্তু কিভাবে করবে?

আদি কাকে যেন ফোন দিল পরক্ষনে বলল,
-“হ্যা দোস্ত,তুই কোথায় আছিস একবার তাড়াতাড়ি বাসায় আয় তো আদিবা হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

আদিবা বুঝতে পারল কোন ডাক্তার কে ফোন করেছে বাসায় ডাক্তার আসলে সব জানাজানি হয়ে যাবে আর আদি অভিনয়ের ব্যাপারে জানতে পারলে কি যে কী শাস্তি দিবে ভেবে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।সে মনযোগ দিয়ে আদির ফোনআলাপ শুনছে আদি আবার বলল,

-“আচ্ছা সেই ভাল তুই তাহলে ক্লিনিকে থাক আমি আদিবা নিয়ে আসছি।

বলে আদি ফোন কেটে আদিবার দিকে তাকাল হাসপাতালে যেতে হবে শুনে ভয়ে আদিবার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল সে মনে মনে দোয়া করছে।

-“খোদা অরিন আপুর মাথায় একটু বুদ্ধি দাও যেন এবারের মত আমাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।প্রতিজ্ঞা করছি আর কখনো এমন করব না।

খোদা বোধহয় আদিবার ডাক শুনেছে অরিনের মুখ খুলেছে,

-“ভাইয়া বলছি কী হাসপাতালে যাওয়ার কোন দরকার নেই কিছুক্ষন পর আদিবা এমনি ঠিক হয়ে যাবে…

আদি আদিবাকে ভাল করে একবার দেখে নিয়ে বলল
-“তোকে কে বলল ভাল হয়ে যাবে?

-“না মানে ভাইয়া…

সামনে থেকে সর বলে আদিবাকে কোলে নিয়ে আদি বেরিয়ে যেতে নিল। আদিত্যের বাবা আদিবার মাও বের হল আদি আদিবাকে আস্তে করে গিয়ে আদিবাকে গাড়িতে বসিয়ে সীট ব্লেট লাগিয়ে দিল আদিবা এবারো পালানোর সুযোগ পেল না। আদি এবার তার বাবাকে বলল,

-“বাসায় যাও বাবা তোমাদের কাউকে যেতে হবে না আমি একাই নিয়ে যেতে পারব।

আদিবার মা সাথে সাথে বললেন,
-“তা কি করে আমি যাব।

-“মেয়ের জন্যে দরদ উতলে পড়ছে নাকি কাকিয়া..?

-“মানে কি বলতে চাইছিস?

-” গত ছয় বছরের কথা নাহয় বাদি দিলাম কিন্তু আজ সকালের কথা অন্তত ভুলে যাও নি নিশ্চুই?

-“এসবের মানে কী আদি?

-“ধরে নাও আদিবা গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে এক্সিডেন্ট করেছে আর তুমি এই বাসায় তাই ওর কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হবে। সকালে ক্লিনিকে যেও এখন আমি নিয়ে যায়।

আদির কথার মানে আদিবার মা বুঝতে পারলেন না।আদিবা বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিত সব স্বীকার করা উচিত? আদিবা চেয়েছিল সবটা বলে দিতে কিন্তু সাহসের পরিপক্কতার অভাবে বলতে পারল আদি ড্রাইভ করছে বেশ কিছুক্ষন পর গিয়ে সে থামল আদিবার ইচ্ছে হল কি ঘটছে একবার চোখ মেলে দেখার জন্যে কিন্ত পারল না।

আদি হটাৎ সশব্দে বলে উঠল,
-ইশ জামাটা একেবারে ভিজে গিয়েছে। শরীরের সাথে কেমন লেপ্টে আছে কি বাজে দেখাচ্ছে। আমি আগে খেয়ালেই করি নি এভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাব কী করে লোকে দেখলে কি ভাব্বে?জামাটা বদলে দিতে হবে।

কথাটা শুনে আদিবার গায়ে কাঁটা দিল
-“কী আবল তাবল বলছে এই ছেলে? সে তার জামা বদলে দিবে? কী সাংঘাতিক ব্যাপার।

আদিবার ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই পেটে আদিএ স্পর্শ পেল আদি আলতো হাতে জামাটা টেনে উপড়ে তুলছে। এই অবস্থায় কারো পক্ষে চুপ থাকা সম্ভব না আদিবাও চুপ থাকতে পারল না ছট করে আদির হাত ধরে ফেলল,

আদিও সাথে সাথে শয়তানি হাসি দিল, হাসির কারন টা আদিবার বোধগম্য হল না সে বোকা মুখ করে তাকাল।

-“যাক অভিনয়ের পালা শেষ হল তবে…?

-“মানে…?

-“তোর পালস চেক করেই বুঝেছিলাম তোর কিছু হয় নি অভিনয় করছিস।

-“বুঝেছিলেন তাহলে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন কেন?

-“হাসপাতাল..?এখানে হাসপাতাল পেলি কোথায়?তুই যেমন অভিনয় করেছিস তেমনি আমিও ডাক্তারের কথা বলে তোকে বাইরে নিয়ে এসেছি।

আদির কথা শুনে আদিবা চোখ তুলে সামনের দিকে তাকাল সাথে সাথে গাঁ শিওরে উঠল চারদিকে ঘোর অন্ধকার গাড়ির হেডলাইটের আলোতে যতটা দেখা যাচ্ছে পুরোটাই ঘন জংগল। আদিবা ভয় ভয়ে বলল,

-“ভ ভ ভাইয়া আমরা এখানে এসেছি কেন?

-“ওয়াশরুমে রাখতে চেয়েছিলাম তোর ভাল লাগে নি তাই এখন এখানে রেখে যাব এক রাত এখানে থাকলে দেখবি মাথা থেকে সব শয়তানি বুদ্ধিগুলি বিদায় নিয়েছে।

-“আ আ আপনি স স সত্যি আমাকে এখানে রেখে চলে যাবেন?

-“আমি কখনো মিথ্যা বলি? বা যা বলি তা না করে থাকি দেখেছিস।

-“আপনি যা বলেন তাই করেন জন্যই ভয় পাচ্ছি এতটা নির্দয় হবেন না প্লিজ।

-“ধর দয়া দেখালাম বিনিময়ে তুই আমায় কি দিবি..?

-“মানে..?

-“মানে তুই যদি যত্ন নিয়ে একটা লিপ কি*স করিস তাহলে তোকে ক্ষমা করে দিব।

-“আপনি কি মানুষ? এমন জঘন্য একটা প্রস্তাব দিতে মুখে আটকালো না?

-” আমি শর্ত দিয়েছি এবার তোর ইচ্ছে পূরন না করতে পারলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার আগে গাড়ি থেকে নাম।

আদিবা রাগে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল আদি আবারো বাঁকা হেসে গাড়ি ঘুরিয়ে নিল।আর জানলা দিয়ে মুখ করে বলল,

-“নজর যখন পড়েছে আমি ঠিকি করব আফসোস তুই নিজে থেকে রাজি হলে শাস্তিটা পেত হত না।

আদির কথায় গা জ্বলে উঠল আদিবার ইচ্ছে হল জুতা খুলে মারতে কিন্তু সে সুযোগ পেল না কোন সংকেত ছাড়া আদি গাড়ি হেডলাইন বন্ধ করে দিল। চারদিক কালো হয়ে গেল কোথাও কোন আলোর রেখা নেই। আদিবা প্রচন্ড ভয় পেল নিজের অজান্তেই বলে উঠল আমি রাজি ভাইয়া। আমাকে রেখে যাবেন না প্লিজ।

আদি আলো জ্বালিয়ে হেসে বলল,
-“শরু করা যাক তাইলে..?

আদিবা আর কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসল।
-“আমি আপনাকে কিস করব কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।

-“কি শর্ত?

-“আমি যতক্ষন না আপনাকে ছাড়ছি আপনিও কিস করা ছাড়তে পারবেন না।

-“আরে এত মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। অনন্ত কাল কিস করলেও ছাড়তে বলল না।

-“বেশ তাহলে কাছে আসুন।

আদি এগিয়ে আসল।

-“চোখ বন্ধ করুন

-“কিন্তু কেন?

-“তো কি তাকিয়ে তাকিয়ে চুমু খাবেন।

আদি কথা বাড়াল না চোখ বন্ধ করে নিল আদিবাও এগিয়ে এসে আলতো ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁয়াল। মুহুর্তেই আদি আদিবার মাঝে ডুব দিয়ে দিক হারাল। দিশেহারা আদিত্য আদিবার মাঝে নিজের আশ্রয় খোঁজার প্রচেষ্টা চালাল। শক্ত হাত আলগা হয়ে গেল সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে বুকের বাঁপাশ বেসামাল উঠা নামা করছে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে উঠেছে। আদিবা কখনো নিজের ইচ্ছায় এমন করতে রাজি হবে আদি কল্পনাও করতে পারে নি।

আদি যখন নিজেকে পুরোপুরি আদিবার কাছে সমর্পন করে দিয়েছে তখন হটাৎ বুঝতে পারল তার নরম ঠোঁট ভেদ করে তীক্ষ্ণ দাঁত চেপে বসছে। হ্যা আদিবা ইচ্ছে করেই আদির ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে দিয়েছে। তবে তাতে আদির কোন ভাবান্তর হল না সে এখনো শান্ত হয়ে আদিবার মাঝে ডুবে আছে কারন সে কথা দিয়েছে আদিবা যতক্ষন না তাকে ছাড়ছে সে আদিবাকে ছাড়াবে না।আদি একটু নড়ল না পর্যন্ত আদিবার মনে প্রশ্ন জাগল আদির ঠোঁট কি লোহা দিয়ে তৈরি। ব্যাথা পাচ্ছে না কেন?নাকি তার দাঁতে জোর কম। আদিবা আরও জোর প্রয়োগ করল। আদির গোলাপি ঠোঁট কেটে ফিনকি দিয়ে র*ক্ত বের হতে শুরু করল। তবে আদি এখনো চোখ খুলে নি। আদিবা অবাক হয়ে চোখ মেলে তাকাল আছে আদির দিকে। কী মায়াবী মুখখানী! বাতাসের টেউয়ে সিল্কি চুল গুলো নড়ে উঠছে। তির্যক দ্বি-ধারী তলোয়ারের মত ভ্রু দুটো আদিত্যের জোরাল ব্যাক্তিত্বের প্রতিনিধিত্ব করছে। নরম ঠোঁট দুটি আদিবার নিষ্টুরতায় লালচে হয়ে তার ব্যাথার পরিমান প্রকাশ করছে। ঠোঁটের এককোণ বেয়ে র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। শান্ত আদিত্যকে আদিবার কাছে ঘুমন্ত রাজকুমারের মত মনে হল। নিজের কর্মে নিজেকে অপরাধী মনে হলে। ভিতর আত্মা কেঁদে উঠল আদিবা দুহাত বাড়িয়ে আদিকে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়ে নিজের অজান্তেই বলে বসল।

“আমি আপনাকে বড্ড ভালবাসি” ভালবাসবেন আমায়?



চলবে…!!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ২৩
লেখনীঃ মনা হোসাইন

আদি চোখ খুলে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল,
-“কিছু বলছিলি…?

আদিবা কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারল না।
আদি কী তাহলে শুনেনি..?নাকি শুনেও না শোনার অভিনয় করছে? বিষয়টা আদিবার মাথায় ঢুকল না। আদি ঠোঁটের র*ক্ত মুছতে মুছতে বেশ শান্ত ভাবে বলল,
-“এখন তোর কি শাস্তি পাওয়া উচিত?

আদিবা এবারেও উত্তর দেওয়ার ভাষা খুঁজে পেল না সে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে দেখে আদি বাঁকা হাসল।
-“ঘটনা কী?

-“না মানে কিছু না…

-“আচ্চা চল তাহলে যাওয়া যাক। ভয় পেতে হবে না আজ কোন শাস্তি দিব না. যা করতে বলেছিলাম করছিস সে ভাল করে হোক বা খারাপ করে করেছিস তো। তোকে আগেই বলেছি এখনো বলছি তুই যদি আমার কথা শুনিস পৃথিবীর সব সুখ তোর পায়ের কাছে এনে দিব।

আদিবা আদিত্যের কথার মানে বুঝল না। আদি কি ইচ্ছে করেই প্রপোজালের ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছে?

-“ভ ভ ভাইয়া…

-‘হুম কিছু বলবি…?

আদিবা কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু কথাগুলো পেটের মাঝে ঘুরপাক খেলেও মুখে আসছে না। গলার কাছে এসে আটকে যাচ্ছে কেন যেন বলে উঠতে পারছে না। আদিকে আজ অন্যদিনের মত রাগী লাগছে না তাকে বেশ খুশি খুশি লাগছে। ড্রাইভ করতে করতে মুচকি হাসছে আদিত্য যেন যুদ্ধ জয় করে ফিরছে। এদিকে কোন কারন ছাড়াই আদিবা নার্ভাস ফিল করছে। কেমন যেন লাগছে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে সে ভয় পাচ্ছে নাকি লজ্জা পাচ্ছে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেল না।

-“আচ্ছা আদিবা ধর আজ রাতে আমরা বাসায় ফিরলাম না। সারারাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম কেমন হবে ব্যপারটা? অদ্ভুত কিন্তু এক্সাইটেড টাইপের কিছু একটা হবে তাই না?

-“কিন্তু আমরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরব কেন?

-“যুক্তিক প্রশ্ন রাস্তায় ঘুরার মত কিছু তো ঘটেনি।
আচ্ছা বাদ দে এই প্লেন ক্যান্সেল।

-“ভাইয়া আপনি একটু অদ্ভুত আচারন করছেন না?

-“করছি বুঝি..?

-“আপনি তো সবসময় আমার উপড় রেগে থাকেন আজ আমি আপনায় ব্যাথা দিলাম তবুও রাগ করলেন না..?

-“রাগ করতে ইচ্ছে হল না। জানিস আদিবা তুই দেখতে খুব মিষ্টি… আদিত্য কথা শেষ করার আগে আদিবার হিচকি উঠে গেল সে চোখ বড় বড় করে বলল।

-“ভাইয়া পানি খাব.

আদিত্য আদিবার দিকে তাকিয়ে আবারো হাসল। না তারপর স্টেয়ারিং এর পাশ থেকে পানির বোতল নিয়ে আদিবার দিকে এগিয়ে দিল। আদিবা এই আদিত্যকে চিনতে পারছে না। আদিত্যের আচারন আদিবার সুবিধার মনে হচ্ছে না অস্বাভাবিক লাগছে আর যাই হোক আদি কখনো আদিবাকে মিষ্ট বলতে পারে না।

-“কাকিয়া বলছিল তোকে নাকি কয়েকবছর ধরে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু বিয়ে হচ্ছে না ব্যাপারটা কি সত্য?

-“মা এসব বলল আপনায়..?

-“নাহ বাসায় সবাই আমার বিয়ের কথা বলছিল তখন তোর নামটাও শুনলাম। জিজ্ঞাস করায় বলল কোন এক অজানা কারনে তোর বিয়ে হচ্ছে না। কারন টা কী বলতো?

-“আমার বিয়ে না হওয়ায় আপনার খুব অসুবিধে হয়েছে মনে হচ্ছে…

-“তা তো একটু হয়েছেই..আচ্ছা বাদ দে তোর কেমন ছেলে পছন্দ বলতো দেখি খুঁজে পাওয়া যায় কিনা..

-“মজা করছেন?

-“কেন মনে হচ্ছে আমি মজা করছি.?

ভাইয়া আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। গল্প বাদ দিয়ে ড্রাইভ করুন।

আদিবা কত সংকোচ ভুলে মনের কথা বলেছিল আদি তার কথার কোন গুরুত্বই দিল না উলটে কত আবল তাবল কথা বলল দেখে আদিবার ভিষন রাগ হল।গাড়ি এসে বাসার সামনে থামতেই আদিবা হনহন করে ভিতরে চলে গেল। গিয়ে কিছুটা অবাক হল বাসার সবাই ড্রয়িং রুমে গোল সভা বসিয়েছে। এখানে বাসার প্রত্যেকেই উপস্থিত একমিনিটের জন্য আদিবার অসুস্থতার জন্য হয়ত সবাই অপেক্ষা করছে কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল পরিবারের কেউই তাকে এতগুরুত্ব দিবে না,দেওয়া সম্ভব না।সে মরল কি বাঁচল তাতে কারো কিছু যায় আসে না। তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল সাথে সাথে তার মা পথ আগলে দাঁড়াল এর মধ্যেই আদিও এসে বাসায় ঢুকল কিন্তু ঠোঁটে দাগ থাকায় সে সবার সামনে দাঁড়াতে চাইল না তাড়াতাড়ি উপড়ে চলে যেতে চাইল কিন্তু সিঁড়ির অর্ধেক আসতেই তার পা দুটি আটকে গেল। সারা শরীর যেন কেঁপে উঠল। কপালের মাঝ বরাবর রগ ফুলে উঠল সেকি ঠিক শুনেছে? আদিত্য রাগি চোখে পিছন ঘুরে তাকাল।

নিচে আদিবার মা আদিবাকে প্রশ্ন করছেন,
-“কিরে চুপ করে আছিস কেন উত্তর দে আদিবা..ছেলেটা কে?

আদিবা অবাক হয়ে বলল,
-‘তুমি কি বলছ মা আমি বুঝতে পারছি না কিসের ছেলে..?

-“এত রাতে তোকে ফোন করে কে? তোর সাথে কোন ছেলের কথা বলতে থাকতে পারে.? তাও একবার না এই নিয়ে দশবারের উপড়ে ফোন দিয়েছে। কে সে জবাব দে। এই জন্যেই তুই বিয়েতে রাজি হোস না?

-“মা কিসব বলছো?

-“কি বলব তাহলে আমায় শিখিয়ে দে.. পাঁচ বছর ধরে তুই বাসার বাইরে যাস আত্মীয়রাও পর্যন্ত তোকে চিনে না তারমধ্যে ছেলে বন্ধু আসল কোথা থেকে..?

আদিবা উত্তর দেওয়ার আগেই আদির দিকে তাকাল কারন এখানে তাকে নিয়ে কে কি ভাবছে সে নিয়ে তার কোন চিন্তা নেই তার একমাত্র চিন্তা আদিকে নিয়ে কোন ছেলে রাতের বেলার তাকে ফোন করেছে এটা আদি কিছুতেই মানবে না সে যদি আদিবার বন্ধুও হয় তবুও না।

আদিবাকে তাকাতে দেখে আদি শক্ত গলায় বলল,

-“আদিবা সেকেন্ড অপশনটা ভাল ছিল



চলবে…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here