বেপরোয়া_ভালবাসা #পর্বঃ২৪,২৫

0
2282

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ২৪,২৫
#লিখনীঃ #মনা_হোসাইন
২৪

আদিবা হন হন করে বেরিয়ে গেল একবার ঘুরেও তাকায় নি। আদি তার চলে যাওয়ার দিকে নিশ্চুপ চেয়ে তাকিয়ে রইল। চোখ দুটো ভরে উঠছে কিন্তু আদিবাকে সে বাঁধা দেওয়ার কোন প্রয়োজনবোধ করেনি। যে মেয়েটা তার কাছ থেকে দূরে গিয়ে শান্তি খুঁজতে চাইছে, যে মেয়েটা তাকে অসহ্যকর মনে করে তার জন্য এত উতলা হওয়ার আবশ্যকতা নেই ভেবে নিজেকে শান্তনা দিল।

আদিবা আদিকে যেভাবে দোষারোপ করল আদির জায়গা অন্য কেউ থাকলে তার নিশ্চুই অনুশোচনা হত কিন্তু আদির অনুশোচনা হচ্ছে না তার কষ্ট হচ্ছে। বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে। আদির চোখ ভরে এসেছে সে সবার সামনে কাঁদতে চায় না তাই শান্ত পায়ে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।

-“আচ্ছা তবে কি আদিবা সত্যিই আমায় চায় না? আমি এতই খারাপ, আমার মত ছেলেকে কেউই পছন্দ করে না তাইনা? আমিও জানি আমাকে পছন্দ করার মত কোন কারন নেই আমার আচারন স্বাভাবিক না। কিন্তু আদিবা কেন বুঝল আমি যেমনেই হই আমার ভালবাসায় কোন খাঁদ ছিল না। মানছি আমি অন্যদের মত ভালবাসতে পারি নি আমার ভালবাসা বেপরোয়া ছিল তাই বলে ও আমায় ছেড়ে চলে যাবে? আমার কাছ থেকে পালানোর জন্য ব্যকুল হয়ে পড়বে.?

-“আচ্ছা আদিবা তোর মনে কী একটা বারের জন্যেও প্রশ্ন জাগল না আমি কেন সেদিন বাসা ছেড়েছিলাম? সামান্য বকার জন্য কেউ বাসা ছেড়ে চলে যায় ? আমি তো তোর উপড় কিংবা বাবা মায়ের উপড় কারোর উপড় রাগ করে বাসা ছাড়ি নি, ছেড়েছিলাম নিজের উপড় রাগ।আমি নিজেকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম। তোকে সেদিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখে ভিতর আত্মা কেঁপে উঠেছিল সিধান্ত নিয়েছিলাম তোর থেকে দূরে থাকব কারন আমি দেখতে পাচ্ছিলাম আমি নিজের রাগ সামলাতে ব্যার্থ হচ্ছি। মন থেকে না চাইলেও তোকে ঠিকি আঘাত করছি। তাই চেয়েছিলাম তোকে ছেড়স থাকতে নিজের যত কষ্টই হোক মেনে নিব তবুও তোর সাথে থেকে তোর উপড় অত্যা”চার করব না। ভেবেছিলাম তোর থেকে দূরে থাকলে হয়ত নিজের রাগকে বশে আনতে পারব।
শুধুমাত্র তোকে কষ্ট দিব না জন্যে নিজেকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর দিকে ঠেলে দিয়েছিলাম।
কি করব বল পৃথিবীর সবাই তো আর একরকম হয় না। সবাই যদি এক রকম হত তাহলে কি পৃথিবীতে এত খু*ন খা*রা*বি হত বল? সবাই এক হয় নারে কেউ রাগী হয় কেউ আবার কোমল আমাকে উপড়ওয়ালা এভাবেই গড়েছেন। তুই আমার অবাধ্য হলে মাথায় র*ক্ত চড়ে যায় আমি কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারিনা।আসলে তোকে আমার খুব আপন মনে হয় যাকে সবটা দিয়ে নিজের করে আগলে রাখতে চেয়েছিলাম। যে শুধু আমার হবে সারাক্ষন আমায় নিয়ে ভাব্বে তার পুরো পৃথিবী জুড়ে থাকব শুধুই আমি।আসলে আমার ভয় হত তোকে স্বাধীনতা দিলে অন্যদের সাথে মিশতে দিলে তুই যদি আমায় ছেড়ে চলে যাস?

তবে বিশ্বাস কর আদিবা এই ছয় বছরে আমি নিজেকে বদলানোর অনেক চেষ্টা করেছি, সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছি কিন্তু সবি বৃথা।কারন আমি প্রকৃতিগত ভাবেই এমবন। এত বছর পেরেও যেই তোর কাছি কাছি আসলাম সাথে সাথে আমার ছয় বছরের সাধনা বিফলে গেল আবারো সেই বেপরোয়া আদিতে ফিরে গেলাম সব যেন পাল্টে গেল মুহুর্তেই। তোর দিকে তাকানোর সাথে সাথে মনে হল তুই শুধুই আমার তোকে অন্য কারোর পাশে দেখা সম্ভব না।

কিন্তু আজ আমি সফল ছয় বছরে যা পারিনি আজ পেরেছি তুই আমার জীবন থেকে চলে যাচ্ছিস জেনেও আমি তোর বাঁধা দেইনি রাগো করিনি। কারন আমি বুঝে গেছি তোকে পাওয়ার যোগ্যত আমার নেইা নেই। তাই তোকে নিজের সাথে জড়িয়ে কষ্ট দিব না দেওয়ার মানে হয় না। তুই আজ থেকে মুক্ত আদিবা। আমি আর তোর পিছনে ছুটব না আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি আদিবা আজ থেকে তুই আমার কাছে মৃত….আমি আদিবাকে ছাড়া বাঁচতে শিখে গেছি।



রাত বারোটার ঘর ছুঁই ছুঁই আদিবা রাগে বের তো হয়ে এসেছে কিন্তু এখন যাবে কোথায়? হাতে টাকা পয়সা কিছুই নেই। আদিবা হাঁটতে হাঁটতে এসে রাস্তার পাশের বেঞ্চটায় বসল।মাথায় নানান চিন্তারা এসে ভীড় জমালো বেশ ভয়ও লাগছে এতটা সাহস দেখানো উচিত হয়নি। এখন কী করবে..? কার কাছে যাবে তেমন নিকটাত্মীয় তো কেউ নেই যার কাছে টাকা ধার পাওয়া যাবে।আদিবা বেশ চিন্তা করে পেল তার এক বান্ধবী আছে বাসা কাছেই তাই তার কাছে যাওয়া উচিত। টাকা চাওয়া না গেলেও রাত টা অন্তত কাটানো যাবে যেমন ভাবনা তেমন কাজ সে দু বাসা পেরিয়ে বান্ধবী তিন্নির বাসায় গিয়ে হাজির হল। বাসার সবাই তাকে দেখে অবাক হল।তিন্নি এগিয়ে এসে বলল,

-“আদিবা তুই এত রাতে?

-“তোর রুমে গিয়ে কথা বলি..

-“বেশ চল উপড়ে চল।

আদিবা তিন্নির ঘরে গিয়ে চেয়ার টেনে বসল।

-“আদিবা কিছু কি হয়েছে? এত রাতে তুই এখানে?

-“তিন্নি তোর যদি কোন আপত্তি না থাকলে আজ রাতটা তোর বাসায় থাকতে চাইছিলাম।

-“আমার আপত্তি তো নেই কিন্তু আদিত্য ভাইয়া এখন দেশে আছে আদিবা।

-“তো উনি দেশে আছেন বলে তুই আমায় জায়গা দিবি না? ঠিক আছে লাগবে না আমি চলে যাচ্ছি।

-“আরে তুই রেগে যাচ্ছিস কেন? জানি কোন ঝামেলা ছাড়া তুই বাসা থেকে বেরুস নি কিন্তু আদিবা তোর তো আর পাঁচজনের মত রাগ দেখানোর অধিকার নেই। বাসার কেউ কোন অন্যায় করলেও শেষ তোকেই মেনে নিতে হবে।

-‘কেন মানতে হবে আমি কি মানুষ নই?

-“অবশ্যই কিন্তু তুই আদি ভাইয়ের হবু বউ তাই তুই মানতে না চাইলে জোর করে মানাবে। আদি ভাই যদি জানতে পারে তুই এখানে উনি কি সেটা মানবেন? ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি তোর অন্যদের সাথে মিশা আদি ভাই পছন্দ করে না। অরিন আপুর এনগেইজমেন্টের দিন তোকে কেমন মাঝরাতে এসে নিয়ে গিয়েছিল?যে রাগী উনি…

-“উনার রাগে আমার আর কিছু যায় আসে না।তাছাড়া উনি জানবেন কী করে।

-“হাসালি আদিবা তুই ভুলে গেছিস ফয়সাল ভাই
আদি ভাইয়ের বন্ধু।ফয়সাল ভাই অবশ্যই বলে দিবে আর কিছুক্ষন পরে আদি ভাইয়া এসে তোকে টানতে টানতে নিয়ে চলে যাবে। ছোট বেলায় যখন খেলতে আসতি যেভাবে নিয়ে যেত ঠিক সেবাবেই
নিয়ে যাবে।

আদিবা আর তিন্নি কথা বলছে এদিকে ফয়সাল আদিত্য কে ফোন দিল ফোন তুলে আদিত্য শান্ত গলায় জবাব দিল

-“হুম বল…

-“কোথায় তুই

-“কোথায় থাকার কথা? বাসায়ই আছি।আর এটাও জানি তুই এত রাতে ফোন কেন দিয়েছিস কেন

-“জানিস তবুও বাসায় বসে আছিস?দেখ চাই মাঝরাতে এসে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে এখন নিয়ে যা।

-“না আমি আসভ না আজ রাতটা আদিবাকে তোদের ওখানে থাকতে দে।

-“এটাও সম্ভব?

-“হুন সম্ভব। আর শোন সকালে আদিবা চলে যাওয়ার সময় কিছু টাকা দিয়ে দিস।তোর হাত থেকে নিয়ে চাইবে না তিন্নিকে দিতে বলিস।

-“মানে বুঝলাম না।

-“এত মানে বুঝে তোর কাজ কি?যা বলেছি সেটা কর বলে আদি ফোন কেটে দিল।

আদিবা সারারাতে একবারো চোখ বন্ধ করতে পারেনি তাই সকাল হতে না হতেই বেরিয়ে যেতে চাইল তিন্নি এসে তালে আটকে দিয়ে কিছু টাকা দিল। আদিবা কথা বাড়ায় নি কারন রার এখন টাকার প্রয়োজন।

আদিবা এসে ট্রেনের টিকিট কাটল আর মোটামুটি পাঁচ ঘন্টা পর গ্রামের বাড়িতে পোঁছাল। নির্জন নিস্তব্ধ বাড়ি মানুষ তো দূর একটা কাক পক্ষীও নেই। পড়া বাড়ি এর চেয়ে বেশি আর কি হবে? কতবছর হয় কেউ আসে না।

আদিবা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই গা ছম ছম করে উঠল। আশে পাশে কোন বাড়ি ঘর নেই তাই পুরো বাড়িতে সে একা তবে যাই হয়ে যাক এবার আদিবা আর কোন পরাজয় মানবে না তাই কোমড় বেঁধে লেগে পড়ল কাজে।দীর্ঘদিনের অব্যবহৃত ঘরকে বসবাস যোগ্য করে তুলতে বেশ পরিশ্রম হয়েছে আদিবার তার পক্ষে আর কোন ঘর পরিষ্কার করা সম্ভব হয় নি একটাই পরিষ্কার করেছে।দেখতে দেখতে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে আদিবা এখনো খায় নি। খাবেই বা কি করে রান্না করার পরিবেশ এখনো করে উঠতে পারেনি।ঘরে না আছে চুলা আর না আছে রান্নার সামগ্রী তাই নিরুপায় হয়ে আদিবা একদিন না খেয়ে থাকার সিধান্ত নিল।

সন্ধ্যা হতে না হতেই দরজা লক করে শুয়ে পড়ল আদিবা। ঘরে আলোর তেমন ব্যবস্থা নেই একটা লাইট টিমটিম করে জ্বলছে হটাৎ দরজায় কড়া নাড়ায় ভয় পেয়ে গেল আদিবা।

-“ক ক কে ওখানে..?

উত্তর আসল না তবে আরও দুইবার কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে আসল আদিবা গিয়ে দরজা খুলতে চোখ কপালে উঠস গেল,

-“আপনি এখানে কি করছেন..?

-“দাদার বাড়িতে ঘুরতে এসেছি তাছাড়া আমি কখন কোথায় যাব তার কইফত কি তোকে দিতে হবে..

-“দেখুন ভাইয়া যথেষ্ট হয়েছে আর না আপনি এখনী এখাম থেকে যান।আর কত জ্বালাবেন আমায়?আমি রেগে যাওয়ার আগে চলে যান

বলা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য আদিবাকে সামনে থেকে তাকে সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় শুতে শুতে জবাব দিল

-“রাগ কি শুধু তোর একার আছে?আমার নেই? চুপচাপ সহ্য করছি বলে মাথায় চড়ে গেছিস তাই না? আর একবার গলা উঁচু করে কথা বলে দেখ তোকে যদি এখানে পুঁ*তে রেখে না দেই…

-“আপনি এখানে কি চান? কেন এসেছেন?

-‘তুই নিজেকে কি ভাবিস রে আদিবা..? খুব সুন্দরী? কোন এংগেল থেকে তীর কাছে নিজেক্ব সুন্দরী মনে করিস আমাকে একটু বল তো। একে তো দেখতে খারাপ, দ্বিতীয় তো পড়াশোনার নামে খবর নেই, তয় তোর বয়স ২৫ বছরে ঘর ছুঁয়েছে।এমন মেয়ের সাথে প্রেম ত দূর তাকিয়ে দেখারো ইচ্ছা আমার নেই। এখানে এসেছি বিশেষ একটি কারনে তাই প্যান প্যান করবি না।যা আমার জন্য খাবার নিয়ে।

-“আমি কেন আনব?

-“কারন না আনলে তোর হাড়গোড় একটাও আস্ত থাকবে না। এখানে কিন্তু বাড়ির বড়রা নেই যে তোকে বাঁচাবে মাইন্ড ইট
.



চলবে.।

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পার্টঃ২৫
#লেখনীঃ #মনা_হোসাইন

আদি কী করে এত খামখেয়ালি আচারন করে আদিবার মাথায় ঢুকে না। সে কি জানত না আদিবা কেন বাসা ছেড়ে এসেছে? তারপরেও কেন এখানে আসল? আদিবা কটমট করে তাকাল আদির দিকে।আদি চুইংগাম চিবাতে চিবাতে বলল,

-“কি সমস্যা..? এভাবে তাকিয়ে থাকার কারন কী?

-“আপনি এখানে এসেছেন কেন সত্যিটা বলেন তো..

-“অপেক্ষা কর। উত্তর নিজেই পেয়ে যাবি আচ্ছা আদিবা একটা কথা বল তুই আমার উপড় রাগ করে আছিস কেন? আমি বাসা ছেড়ে যাওয়ার সময় কি সবাইকে বলে গিয়েছিলাম তোর উপড় অ*ত্যা*চার করতে?

-“আমি কখন বলেছি আমি আপনার উপড় রাগ করেছি?আমি কারো উপড় রাগ করিনা। সব দোষ আমার কপালের।

-“ঠিক বলেছিস তোর কপাল সত্যিই খুব খারাপ তুই ভালবাসা পেতে জানিস না।যাইহোক এখন প্যাচাল পারা বন্ধ করে খাবার নিয়ে আয় যা…

-“আপনার কি মনে হয় আমি ম্যাজিক জানি..?এখানে আমি খাবার কোথায় পাব?

-“বারে তেজ দেখিয়ে নিজের বাড়িতে আসলি এখন তো এই বাড়ির মালিক তুই। তোর বাড়িতে বড় ভাই বেড়াতে এসেছে তুই তাকে না খায়িয়ে রাখবি?

-“আমি কী বড় ভাইকে আসতে বলেছিলাম?

-“খালি বাড়িতে যুবতী মেয়ে কি করছে খেয়াল রাখতে হবে না? আফটার অল বড় ভাই বলে কথা।বোন অঘটন ঘটিয়ে বংশের নাম ডুবাক সেটা তো হতে দেওয়া যায় না তাই না?

-“একটু আগে না বললেন আমি দেখতে খারাপ,পড়াশোনা জানি না বয়স ২৫। আমার দিকে কোন ছেলে তাকিয়েও দেখবে না তাহলে অঘটন ঘটাব কী করে?

-“ইসস তুই সত্যিই যদি দেখতে খারাপ হতি কত ভাল হত। আফসোস দুধে আলতা গায়ের রং,ঘন পাপড়িতে ঢাকা কাজল কালো চোখ কোমড় সমান চুল।তোর দিকে তাকালে মনে হয় আদর্শ বউয়ের ফুল প্যাকেজ। তাছাড়া আমার নিজেরেই তো ২৫ হয় নি তোর হবে কি করে?তোর বয়স ২১ বছর ১ মাস ১৭ দিন।জানিস ছোট থেকে প্রতিদিন তোর বয়স গুনা আমার রুটিন ছিল। এক একদিন করে গুণতাম কবে তোর ১৮ হবে ইচ্ছে ছিল তোর ১৮ হলেই তোকে বিয়ে করব সেই উদ্দেশ্যেই গুনতাম এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।কবে তোর বয়স কত হয় আমি বলতে পারি।

-“আপনি একটু চুপ করবেন?

-“তখন তিরস্কার করলাম সহ্য হল না এখন প্রশংসা করছি সেটাও সহ্য হচ্ছে না? আসলে সত্যিটা কি জানিস তখন যা বলেছিলাম সেটাও মিথ্যা ছিল এখন যা যা বললাম সেগুলোও মিথ্যে। সত্যি বলতে তোর দিকে তাকালে আমার প্রথমেই যে ইচ্ছেটা হয় সেটা হল থাপ্পড় দিয়ে গাল দুটো যদি লাল করে দিতে পারতাম ।জানিস আদিবা তোকে একদিন হাত পা বেঁধে ইচ্ছেমত মা*রার খুব ইচ্ছে আমার।

-“আপনার মত সাইকোর কাছ থেকে এর বেশি কি আশা করা যায়..? এসবেই ইচ্ছে হবে আপনার।

আদিত্য হটাৎ দৃঢ় গলায় প্রশ্ন করল,
-“আদিবা সত্যি করে বলতো তোর ভয় করছে না..

আদির প্রশ্নে ভ্রু কুচকে এল আদিবার। কি বলতে চাইছে আদিত্য বুঝার চেষ্টায় প্রশ্ন করল,

-” ভয় করবে কেন?

-“তুই তোম আমায় ভাল করে চিনিস অনুমান করতো আমি এখানে কেন এসেছি..?

আদির গলার আওয়াজ হটাৎেই ভারী হয়ে আসছে সে সিরিয়ায়া মোডে কথা বলছে কথার ধরন দেখে আদিবার মনেও খটকা লাগল।সত্যিই তো এত অপমানের পরে আদিত্য এখানে কেন আসল?

-“ক ক ক কেন এসেছেন…?

আদিবার কথা আটকে আসছে। আদিবার ভাংগা ভাংগা প্রশ্ন শুনে আদি হা হা করে হেসে উঠল। অন্ধকার রাতে জনশুন্য নির্জন বাড়িতে এই হাসি বড়ই অদ্ভুত শুনাল।

কারন ছাড়াই আদিবার কলিজা কেঁপে উঠল। হাত পা যেন কাঁপছে মনে হচ্ছে।আদিত্য হাসি থামিয়ে আবারো সিরিয়াস মোডে প্রশ্ন করল

-“আদিবা তোর জীবনের শেষ ইচ্ছে কী..?

প্রশ্নটা শুনে আদিবার গলা শুকিয়ে উঠল। আদি নিজের ব্যাকপ্যাক থেকে ছোট আকারের চকচকে ছুড়িটা বের করে তাতে হাত বুলাতে বুলাতে প্রশ্নটা করছে।সে ছুড়িতে মনোনিবেশ রেখেই বলল,

-“কি রে বল শেষ ইচ্ছে কী..?

-“আ আ আ আমার শেষ ইচ্ছে আমি বাঁচতে চাই…

বলেই আদিবা উলটো ঘুরে দৌড় দিল। আদিত্য কিছুটা বিচলিত হয়ে তাকাল। এই মেয়ে কি পা*গ*ল হয়ে গিয়েছে? অমবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে কোথায় যাচ্ছে তাও চারদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে।আদি মুখ তুলে তাকাতেই বাইরে ধপাস করে কিছু পড়ার শব্দ হল সাথে আদিবার গলা….

আদি দীর্ঘশ্বাস ফেলল,
-“হয়ে গেল…এই নাকি বড় হয়েছে..

আদি ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই সামনে আদিবাকে দেখতে পেল। সারা শরীরে কাঁদা মাখা।

-“দৌড়াদৌড়ির শখ মিটে থাকলে ঘরে আসুন।

আদিবা গোবেচারা মুখ করে জবাব দিল,
-“ভাইয়া ব্যাথা পেয়েছি।

আদি এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
-“কমনসেন্স জিনিস টা তোর না থাকলেও আমার আছে। পড়ে গেছিস মানে ব্যাথা পেয়েছিস এটাই স্বাভাবিক কিন্তু ভিজতে চাইছিলাম না তাই যেতে বলেছিলাম যাইহোক উঠ ..
বলে আদি এগিয়ে এসে আদিবাকে কোলে নিল আদিবাও আদির গলা জড়য়ে ধরল।আকাশ কেঁপে বর্ষন শুরু হল আদিবা আদির মুখের পানে তাকিয়ে আছে।
-“এই মানুষটা এত রহস্যময়ী কেন? কখন কি করে, কেন করে এর হিসেব কোনদিনি মিলাতে পারেনি আদিবা।একটু সহজ সরল হলে কি হয়?

আদি সামনের দিকে হাঁটতে বলল,
-“আচ্ছা আদিবা মানুষ হিসেবে আমি তোর কাছে কত পার্সেন্ট ভাল আর কত পার্সেন্ট খারাপ?

-“মানে..?

-“আমি কি সারাজীবন তোকে শাসনেই করেছি ভালবাসিনি কখনো..?

আদিবা চোখ নামিয়ে নিল উত্তর দিতে পারল না।আদিবাকে চুপ থাকতে দেখে বলল
-“তোর এমন কোন ইচ্ছে আছে যেটা তুই আমাকে জানিয়েছিস অথচ পূরন হয় নি?

-“ভাইয়া…

আদি এবারেও আদিবার দিকে তাকায় নি সামনের দিকে তাকিয়ে খুব সাবধানে হাঁটছে কারন উঠুনটা বড্ড পিচ্ছিল। ঘরে ঢুকে আদিবাকে নামিয়ে দিয়ে চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে এগিয়ে গিয়ে ব্যাগ খুলে টিশার্ট বের করে একটা বিছানায় রাখল।
(গল্পটি সবার আগে পেতে মনা হোসাইন পেইজটি ফলো দিতে ভুলবেন না) একটা নিজে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলল ওয়াশরুমে গিয়ে অকারনে অজ্ঞান হয়ে যা চাচ্ছি না তাই তুই এখানেই চেঞ্জ করে নে।

আদি কিছুক্ষন পর চেঞ্জ করে এসে দেখল আদিবা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।আদি কিছুটা রাগী ভাব নিয়ে বলল

-“ঘটনা কী…?সং এর মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

আদিবা উত্তর দিল না।আদিত্য আবারো বলল
-“চেঞ্জ করে দিতে হবে..?

অন্যসময় হলে এমন কথার জন্য আদিবা রাগী চোখে তাকাত কিন্তু এখন যে স্থীর চোখে তাকিয়ে আছে,

-“ভাইয়া আপনি আমায় মে*রে ফেলবেন তাই না?

আদিত্য আদিবার কথায় বেশ বড়সর ধাক্কা খেল অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,

-“হটাৎ এমন মনে হওয়ার কারন কী?

-“বাসা ছেড়ে এসেছি মানে আপনাকে ছেড়ে চলে এসেছি।আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব মানে আপনাকেও আমাকে ছাড়া থাকতে হবে। আপনার যেহেতু আমাকে ছাড়াই থাকতে হবে তাহলে আমাকে বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ…মে*রে ফেলবেন তাই না?সে জন্যেই এসেছেন।

-“বাহ আদিবা তুই তো দেখছি অসম্ভব রকমের জ্ঞানী হয়ে গেছিস। তা বুদ্ধিগুলো কার কাছ থেকে ধার নিয়েছিস বল তো…?

-“ভুল কিছু বলেছি..? ওই ছুড়িটা আমার জন্যই এনেছেন তাই না?

আদিবার কথায় আদি অবাকের উপড় অবাক হচ্ছে..সে বিছানার উপড় ছুড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

-“হ্যা তোর জন্যই এনেছি কিন্তু তোকে কা*টার জন্য আনি নি তুই সারাদিন কিছু খাসনি তাই কিছু ফল এনেছিলাম।

আদিবার মাথায় বোধহয় এই সহজ কথাগুলোও ঢুকে নি সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

-“আদিবা এতবছরেও তোর মাথায় এতটুকুও বুদ্ধি হয় নি? ইডিয়েট গেলি এখান থেকে? বুঝেছি তুই যাবি না দাঁড়া আমি চেঞ্জ করে দিচ্ছি।

বলে আদি এগিয়ে আসতে চাইল সাথে সাথে আদিবা টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে ছুটল।

-“একবার পড়ে শখ মিটেনি হারামী লাইট টা নিয়ে যা…

আদিবা তাড়াতাড়ি আদির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল ড্রেস চেঞ্জ করে যখন ফিরে আসছিল ফোন হাতে নিতেই ফোনের ওয়াল পেপারে চোখ আটকে গেল আদিবার। স্ক্রিনে জ্বল জ্বল করছে আদিত্য আর আদিবার ছোট বেলার একটা ছবি। মুহূর্তেই আদিবা সেদিনটায় ফিরে গেল। সেদিন স্কুল থেকে ফিরার সময় আদিবা এক্সিডেন্ট করতে নিয়েছিল আদিবাকে বাঁচাতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিল আদিত্য। আদিবা সেদিন সারা রাস্তা কাঁদতে কাঁদতে এসেছিল আর আদি তাকে শান্তনা দিতে দিতে। আদিবা ওয়ালপেপারে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে তখনই বাইরে থেকে আদির গলা ভেসে গেল।

-“রাতটা কি বাথরুমেই থেকে যাবি..?আমার তাতে কোন অসুবিধে নেই দরজা টা লক করে দিচ্ছি দাঁড়া।

আদিবা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসল এসে দেখল আদিত্যের মনযোগ দিয়ে আপেল কাটছে…আদিবা
এসে তার পাশে শান্ত হয়ে বসল।আদিবা বসতেই আদিত্য ব্যাস্ত গলায় বলল,

-“আদিবা দরজাটা বন্ধ করে দে তো বৃষ্টির পানি ঢুকছে…

আদিবা গেলনা সে আদির দিকে তাকিয়ে আছে…
আদিবার দিকে চোখ যেতেই আদিত্যও থমকে তাকাল।

-“কি হয়েছে আদিবা কাঁদছিস কেন? বেশি ব্যাথা পেয়েছিস? দেখি কোথায় পেয়েছিস? আদিবা উত্তর দিল না নিশব্দে তার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।

আদি সামনে থেকে ফল গুলো সরিয়ে দুহাত বাড়িয়ে আদিবাকে জড়িয়ে নিল আদিবা এবার হাওমাও করে কেঁদে উঠল।আদিত্যের ভিতরটাও যেন হা হা করে উঠল নিজের অজান্তেই আদিবার মাথায় হাত রাখল,

-“মনের মাঝে এত অভিমান জমিয়ে রেখেছিস..?এতই অন্যায় করে ফেলেছি? এভাবে আমায় শাস্তি দিস না আদিবা। তোর এই শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।

আদিবা উত্তর দিতে পারল না আদির বুকে মুখ লুকাল। আদি মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-“কাঁদিস না কান্না থামা দেখি তাকা আমার দিকে একটু কিছু খেয়ে নে..

আদিবা মুখ তুলতে চাইল না আদির টিশার্ট আঁখড়ে ধরল।আদি আর কিছু বলল না বেশ কিছুক্ষন আদি বুঝতে পারল আদিবা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গিয়েছে তাই সে আদিবাকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ল যদিও এর আগে সে আদিবার সাথে ঘুমানোর জন্য আদিবাকে বাধ্য করত কিন্তু আজ নিজে থেকেই আলাদা ঘুমাল।




সকাল হতে না হতেই পানিএ ঝটকায় ঘুম ভাংগল।
আদিবা ধরফরিয়ে উঠে বসল,

-“ক ক কী হয়েছে ভাইয়া..?

-“ছেলে মেয়ে হওয়ার মত সম্পর্কে এখনো জড়ায়নি তো..

-“আপনার মুখে কিছু আটকায় না? আমি কি বাচ্চা হওয়ার কথা বলেছি..?

-“তোর সাহস তো কম না নবাবজাদির মত ঘুমিয়েছিস আবার মুখে মুখে তর্কও করছিস।

-“এভাবে কথা বলছেন কেন?

-“রাত থেকে না খায়িয়ে রেখেছিস আবার এখন ভাব নিচ্ছিস? ভালয় ভালয় রান্না কর গিয়ে…

-“এখানে রান্নার কোন ব্যবস্থা নেই.

-“কে বলল নেই? ওই যে বাইরে রান্না ঘর আছে। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গিয়ে রান্না করবি। তাছাড়া এখন তুই বাজারেও যাবি ঘরে তো কিছুই নেই।

-“মানে কী আমি যাব কেন?

-“কারন তুই জেদ দেখিয়ে এখানে এসেছিস..আমি আসতে চাইনি..

-“তাইবলে ঘরে জলজ্যান্ত একটা ছেলে থাকতে আমক বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাজারে যাব?

-“হ্যা যাবি বকবক না করে তাড়াতাড়ি উঠ ঘরের অবস্থাও খারাপ ১০ মিনিটের মধ্যে ঘর গুছিয়ে বাজারে যাবি তারপর রান্না করবি। গ্রামে থাকার কত মজা যদি তোকে হাড়েহাড়ে না বুঝাতে পারি আমার নাম আদি না।

-“আমি বাজারেও যাব না রান্নাও করব না আপনার দরকার হলে আপনি করে যান আমি না খেয়ে থাকতে পারি।

-“তুই খাবি কি খাবিনা সেটা তোর ব্যাপার কিন্তু আমি আর কিছুক্ষনের মধ্যে খাবার না পেলে তোর কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।আমার গাঁ ঘিন ঘিন করছে এমন স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকা আমার পক্ষে থাকা সম্ভব না।

-“তাহলে চলে যান আপনাকে থাকতে বলেছে কে…

-“খুব বার বেড়েছিস না ভাল খুব ভাল। আমার যদি এমন অপরিষ্কার ঘরে থাকতে হয় তাহলে ওই যে ডোবা দেখছিস তোকে সেখান থেকে চুবিয়ে আনব।

-“জল্লাদ একটা করছি পরিষ্কার আপনি সেই ফাঁকে বাজার গিয়ে বাজার করে আনুন..

-“তুই ভাবলি কি করে আমি বাজারে যাব?

-“তাহলে কি আমি যাব।

-“হ্যা তুই যাবি..

-“আমি বাজারে গেলে কি হবে বলুন তো…?

-“কি হবে..?

-“বাজারের লোকগুলো আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবে আর বলবে চোধুরী বাড়ির মেয়ে বাজার করতে এসেছে তখন আপনার মানসম্মানের কি হবে? যান যান লক্ষি ছেলের মত বাজারটা করে আনুন কথা দিচ্ছি আপনি বাজার করে আনলে আমিও মজা করে রান্না করে আপনাকে খাওয়াব…

আদি বাঁকা হেসে বলল,
-“মনে থাকে যেন…খায়িয়ে দিবি বলেছিস…



চলবে…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here