#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৩৯
#লেখনীঃ মনা হোসাইন
-“আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না। আপনার যা ইচ্ছে আপনি করতে পারেন না। মা,চাচা-চাচী তোমরা কেউ কিছু বলবে না…?
আদিবার কথায় আহমেদ সাহেব বল্লেন,
-“আদি তুই বাড়াবাড়ি করছিস সবকিছুর একটা লিমিট থাকে। তোর যা ইচ্ছা করতে পারিস না।
-“ঠিকি তো বাবা এমন করিস না। আদিবা যদি অন্যায় করে থাকে ক্ষমা করে দে।ওর হয়ে আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি।
আদি মনযোগ দিয়ে আদিবার মায়ের কথা শুনছিল। কথা শেষ হলে শান্ত গলায় বলল,
-“আমার বউকে আমি কোথায় নিয়ে যাব তার সিধান্ত অন্য কেউ নিতে পারে না কাকিয়া। কারো সম্মতি বা দ্বিমতে কিছুই যায় আসে না।তোমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখন তার উপড় তোমার কোন অধিকার নেই।
-“আদি তুই মিথ্যা বলে সঁই নিয়েছিস এই বিয়ের কোন ভিত্তি নেই।তুই অন্যায় করছিস..
-“তাই নাকি তাহলে সেটা প্রমাণ করো। যাও পুলিশ কেস করো। আদিবা তুই কী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবি? ঝটপট কবুল বলে নিজের স্বামীকে মেনে নে তাহলেই তো সব মিটে যায়। শুধু শুধু আমাকে রাগাস না।শেষবারের মত জিজ্ঞাসা করছি তুই কী বিয়েটা করবি নাকি না?
যদিও আদিবা বিয়েতে রাজি ছিল না কিন্তু আদির পীড়াপীড়ীতে বিয়ে করতে বাধ্য হল। দেখতে দেখতে রাত ঘনিয়ে এসেছে আদি রেডি হচ্ছে।
-“মা কিছু একটা করো প্লিজ ভাইয়াকে তো চিনো উনি আমাকে….
আদিবার কথা শেষ হওয়ার আগেই পিছন থেকে আদি বলে উঠল,
-“অনেক ভালবাসবে ভাইয়া তোকে অনেক ভালবাসবে..তবে ভাইয়া নয় শব্দটা বর হবে..
আদির গলা শুনে পিছনে ঘুরে তাকাল আদিবা সে একদম রেডি..এগিয়ে এসে বলল
-“চল আদিবা সময় হয়ে গিয়েছে…
-“আমি যাব না
-“সেই এক গান…কখন থেকে একই কথা বলে যাচ্ছিস তোর কী মনে হয় আমার সিধান্ত বদলাবে?২ মিনিট সময় দিচ্ছি চেঞ্জ কর বিয়ের ড্রেসে এত জার্নি করতে পারবি না…
।
।
।
আদিবা যাবে না মানে যাবে না কিন্তু আদিও ত্যাড়া কম না আদিবাকে এক প্রকার টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাসার সবাই বাঁধা দিলেও আদি শুনেনি বলেছে আপত্তি থাকলে যেন পুলিশ ফাইল করে। যা সিধান্ত নেয়ার কোর্ট নিবে…
গাড়িতে বসে আদিবা একমনে কেঁদে যাচ্ছে.আদি তাতে বিরক্ত হচ্ছে…
-“হয়েছে অনেকে কেঁদেছিস এবার বন্ধ কর। যা হচ্ছে, হতে দে ভাগ্যের উপড় কারো হাত নেই। যা হয় ভালর জন্যই হয়।
-“কত যে ভাল হচ্ছে তাত আমি জানি।আপনার মত মানুষের সাথে থাকাটা কতটা ভয়ংকর সেটা আমার চেয়ে ভাল কে জানে…
আদিবার কথা হা হা করে হেসে উঠল
-“আমি বাঘ বা ভাল্লুক নই তাই এত চিন্তা করার কিছু নেই যাইহোক রাস্তায় একদম সিনক্রিয়েট করবি না । রাস্তায় যদি তুই সিনক্রিয়েট করিস আমি কিন্তু গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হব।
আদিবা সারা রাস্তা কেঁদেছে কয়েকজন জিজ্ঞাসাও করেছে কেন কাঁদছে আদি সবাইকে বলেছে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে তাই কেঁদেছে।
দেখতে দেখতে তারা গন্তব্যে পৌঁছল।
-“উফফ আদিবা ঘ্যান ঘ্যান টা এবার বন্ধ করবি..?এতক্ষন ধরে মানুষ কাঁদতে পারে তোকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। ভাগ্যিস রাস্তায় ঘুমিয়েছিলি তানাহলে সারারাতেই কাঁদতি মনে হয়। আচ্ছা তুই আসলে কি কারনে কাঁদছিস বলতো..? তোর পরিবারের জন্য? যারা কিনা তোর কথা কোনদিনো ভাবে নি নাকি দেশের জন্য যেখানে তুই ঘরবন্দি ছিলি।
আদির কথায় আদিবা চোখ তুলে তাকাল।
-“এভাবে তাকানোর কিছু নেই। ওয়েলকাম হোম ভিতরে আসুন।
আদিবা ঘরে ঢুকে মোটামুটি অবাক হল। ঝকঝকে বাড়ি। দরজা দিয়ে ঢুকতেই হাতের বাঁদিকে সিঁড়ি। আদি তরতর করে উপড়ে উঠে যাচ্ছে আদিবাও তার পিছু নিয়েছে। আদি গিয়ে ঘরের দরজা খোলে দিল। ধুসর রং এর ঘরটার একপাশে বিশাল কাঁচের জানলা তার দিক পাশেই বিছানা। বিছানার মাথার দিকের দেয়ালে বড় করে টাঙানো আদিবার ছবি।
ছবিটার দেখে আদিবা চোখ সরু করে সন্দেহের চোখে তাকাল আদির দিকে…
আদি,আদিবাকে পাত্তা না দিয়ে কাবার্ড থেকে কাপড় বের করতে করতে বলল,
-“এত অবাক হওয়ার তো কিছু নেই। আমার ঘরে আমার বউয়ের ছবি থাকতেই পারে…
-“আপনার বউ মানে..?
-“বউ মানে কী সেটা তো লাইট অফ করে বুঝাতে হবে।
-“হেয়ালি বন্ধ করুন এই ছবিটা আপনি কোথায় পেলেন এত বছরে কোনদিন তো খোঁজ নেন নি আমার তাহলে ছবি পেলেন কোথায়…?
আদি বাঁকা হাসল,উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল আদিবা বোকার মত তাকিয়ে রইল।
কিছুক্ষন পর আদি ফিরে এসে বলল,
-“যা চেঞ্জ করে নে। ব্যাগপত্র যেহেতু আনিস নি আপাতত আমার জামা কাপড় পরে নে। রেস্ট নিয়ে তারপর শপিং এ যাব এখন ক্লান্ত লাগছে। এ জন্যেই বলেছিলাম ব্যাগ টা অন্তত নিয়ে আয়…
-“আপনার আচারন রহস্যজনক লাগছে…
-“আপাতত রহস্য ভেদের চেষ্টা না করে যেটা বললাম সেটা কর…
আদি বরাবরের মতই জোর করে আদিবাকে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিল।
আদিবা ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখল ঘর ফাঁকা আদি নেই সে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিচে নামল আর অবাক হল কারন আদি রান্না ঘরে।আদিবা নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে কি ঠিক দেখছে? আদি রান্না করছে?
আদিবা এগিয়ে গিয়ে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়াল,
-“আপনি রান্না করছেন..?
আদিবার প্রশ্নে একটুও বিচলিত হল না আদি। সে যেন জানত এই সময় আদিবার এই প্রশ্নটাই করার কথা।আদি রান্নায় মনযোগ রেখেই জবাব দিল
-“এখানে হেল্পিং হ্যান্ড পাওয়া যায় না। নিজের কাজ নিজেকেই করতে হয় তাছাড়া মা মানে আমার পালিত মা বেশির ভাগ সময় দেশে থাকে তাই আমার কাজ আমাকে করতে হয়। আমার বাইরের খাবার তেমন পছন্দ না।
-“সরুন আমি করে দিচ্ছি…
-“দরকার নেই. আমি বউ নিয়ে এসেছি কাজের মেয়ে না।
-” হঠাৎ আচারন বদলের কারন কী..?
আদি এবার কড়া চোখে তাকাল আদিবা বুঝল তাকে রাগানো টা উচিত হবে না।তাই কথা না বাড়িয়ে পিছন ঘুরে হাঁটা দিল।
-“দরজা থেকে সামনের বাগান পর্যন্ত আপনার সীমানা এর বাইরে যাবেন না।
আদিবা ঘুরে তাকাল,
-“মানে…?
-“মানে এখানকার কিছুই তো আপনি চিনেন না তাই বেরিয়ে গিয়ে আমাকে বিপদে ফেলবেন না।
যাইহোক খাবার বানানো শেষ খেয়ে তারপর যান।
আদি প্লেটে খাবার নিয়ে টেবিলে রাখল।আদিবা কথা না বাড়িয়ে খাবার মুখে দিতে দিতে বলল
-“আপনি বলেছিলেন আমাকে শাস্তি দিতে নিয়ে আসছেন। এখন এত যত্ন করছেন ব্যাপারটা বোধগম্য হচ্ছে না।
আদি বরাবরের মতই খাবারে মনযোগ রেখে বলল
-“আমার মন গহীনে আজীবন বন্দি করে রাখব এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কী হতে পারে?
-“কী বলতে চাইছেন আপনি আমায় ভালবেসে বিয়ে করেছেন?
-“হয়ত না তবে তোর প্রতি আমার বিশেষ ধরনের আকর্ষন আছে।আর সেটা উপওয়ালা প্রদত্ত আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি তোকে ছাড়ার পারিনি।
-“মানে..?
-“আমি আমার বাসার কারো খোঁজ না রাখলেও তোর খোঁজ রেখেছিলাম। ফয়সালের কাছে তোর ব্যাপারে জানতে চাইতাম।
-“ফয়সাল…?
-“তোর বান্ধবী তিন্নির ভাই,আমাদের পাশেই বাসা।
শোবার ঘরের ছবিটা ফয়সালের কাছ থেকেই নেয়া।
-“এতই যখন খোঁজ রাখার ইচ্ছে ছিল বাসায় ফিরলেন না কেন?
-“আমি খোঁজ রাখতে চাইনি কিন্তু নিজেকে আটকাতে পারতাম না তাই মাঝে মাঝে খোঁজ নিতাম।চেষ্টা করেছিলাম তোকে ভোলার তাই বাসার সাথে যোগাযোগ রাখিনি এমনকি তিন্নিকেও সরাসরি কোনদিন জিজ্ঞাসা করিনি যদি ও তোকে বলে দেয়…আমি তোর খোঁজ রাখার ইচ্ছায় খোঁজ রাখিনি। কেমন আছিস কী করছিস টুকটাক খোঁজ নিতাম। কেন নিতাম এই উত্তর টা আমি নিজেও মিলাতে পারিনি
-“আপনি কী জানেন আপনি একজন সাইকোপ্যাথ?
-“হয়ত…তানাহলে কী একটা মেয়ের জন্য নিজের পরিবার ছেড়ে দিতে পারতাম? আসলে আমি তোকে অন্য কারো পাশে মানতে পারতাম না তাই সরে এসেছিলাম কিন্তু পুরোপুরি ছাড়তে পারিনি তাই খোঁজ নিতাম।
-“তা কি কি খোঁজ রেখেছিলেন আমার?
-“ফয়সাল ছেলে মানুষ তার উপড় তোর সাথে তেমন পরিচয় নেই তাই এত খোঁজ তো জানত না টুকটাক তিন্নির কাছে যতটা শুনত সেটাই বলত।আমি জানতাম তুই নিলয়কে ভালবাসিস তাই তোকে ঘৃনা করতাম।
-“এখন তো সত্যিটা জানেন তাহলে এখন ঘৃনা করেন কেন?
-“ঘৃনা করলে বিয়ে করতাম না..তবে একজন আমায় ভালবাসে না আমাকে বিয়ে করতে চায় না জেনেও তাকে জোর করে, নাটক করে বিয়ে করাটা সত্যিই লজ্জাজনক।কিন্তু আমার কাছে আর কোন অপশন নেই আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারব না।
-“আপনি.?..
-” আমার খাওয়া শেষ একটু বাইরে যাব আশা করছি দিনের বেলায় একা থাকতে ভয় পাবি না।
আদি উঠে যেতে যেতে বলল,
-“চুলটা মুছা হয়নি,পানি পড়ছে ভাল করে মুছে নিস নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে…
।
।
।
চলবে…!!!