বেবি কুইন,পর্ব_৩

0
1542

বেবি কুইন,পর্ব_৩
সুমাইয়া জাহান

তামসী আজ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলো শুধু আজ বললে ভুল হবে এই দুইদিনই ও অতিরিক্ত এক্সাইটেডের কারণে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যায়!তাই বলে এটা নয় যে তামসী দেড়িতে ঘুম থেকে উঠে!তবে অন্য দিনের তুলনায় এই দুইদিন একটু আগেই ঘুম ভাঙ্গে ওর!এমনি দিনে তো ওর মা সাড়ে ছয়টায় ডাকলে দশমিনিট বিছানায় গড়াগড়ি করে আড়মোড়া ভেঙে তারপর উঠে কিন্তু এই দুই দিন সাড়ে পাঁচ টা বাজতে না বাজতেই ঘুম থেকে উঠে পরে তামসী!কথায় আছে না অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা!ঠিক তেমনই মানুষ সাধারণ দিন গুলোতে ঘুম থেকে উঠতেই পারে না কিন্তু যখন কোনো এক্সাইটেড কিছু থাকে সেদিন সময়ের অনেক আগেই উঠে পরে।তামসীর ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

তামসীর ঘুম ভাঙ্গতেই পাশ থেকে চশমা টা তুলে চোখে পড়ে নিলো।তারপর একটা ছোট্ট করে হাই তুলে তুলে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো।বেলকনিতে অনেক গুলো নানা রঙবেরঙের ফুল গাছের টব।তামসীর নিজে হাতে লাগানো গাছ এগুলো!এগুলো কে না দেখলে যেনো তামসীর সকাল টাই শুরু হয় না।তাই প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এগুলোতে চোখ বোলাতেই হবে তার!এখানে অনেক জাতে ফুল থাকার কারনে নানা রকমের সুভাষ ভেসে আসে নাকে!সেগুলো কে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ উপভোগ করে নিয়ে লম্বা একটা শ্বাস ফেলে চোখ থেকে চশমা টা খুলে ডেসিং টেবিলের উপর চশমা টা রেখে ওয়াস রুমের দিকে পা চলে গেলো তামসী। মিনিট পনেরোর মধ্যেই শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো।

সেলোয়ার কুর্তি পরিহিত আধ ভেজা চুল নিয়ে ডেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো তামসী।চশমা টা চোখে দিয়ে তোয়ালে টা দিয়ে আবারো ভালোভাবে চুল গুলো মুছে নিলো।এরইমধ্যে ওর মা চলে আসলো ওর রুমে ওকে ঘুম থেকে ডেকে তুলতে!কিন্তু মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থার বধলে ডেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল মুছতে দেখলো মুচকি হাসি দিয়ে মেয়ের পাশে এসে তোয়ালে টায় হাত ছোঁয়ালো।

—– উঁহু মা! আমি যথেষ্ট ম্যাচিওর! নিজের কাজ নিজে ঠিক করতে পারি।

তামসীর এমন দ্বারা কথা শুনে হেঁসে দিলেন তিনি। একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বললেন,

—- হুম তবে দিনদিন একটু বেশিই ম্যাচিওর হয়ে যাচ্ছো তামসী!এটা ঠিক কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে চলা ঠিক নয় তবে এটাও কিন্তু ভালো নয়!

—– উফফ মা তুমি তো জানো আমি এমন আর এগুলো আমায় বলেও কোনো লাভ নেই তাও কেনো প্রতিদিন এগুলো বলো আমি সত্যি বুঝতে পারি না।

কথাগুলো বলতে বলতেই হাত ঘড়িটা পরে নিলো তামসী। তারপর মায়ের দিকে ঘুরে একটা মিষ্টি হাস দিয়ে বললো,

—– আমি আসছি মা! আমি বাইরে থেকে এসেই তার কাছে চলে যাবো আনান কে নিয়ে!কথাটা তাকে বলে রেখো মা!

মাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তামসী পার্স টা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।আর এদিকে তামসীর মা কিছু বলতে নিয়েও বলতে পারলেন না।একটা গভীর দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন তিনি।

—– এখন আফসোস করে কি হবে নিজের হাতেই তো মেয়েটাকে এমন জীবনে ঠেলে দিয়েছি।

কথাগুলো নিজে নিজেই আওরালেন তামসীর মা।তবে কিছু একটা মনে পরতেই মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো তার!এতোদিনের ভারী বুক টা একটু হলেও হালকা হলো তার!

_______________________

নুয়াস ঘুম থেকে উঠে একটা হাই তুলে সামনের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো!সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গতেই নিজের মুখ টা এমন দেখবে দেখবে ভাবতেও পারেনি নুয়াস!পুরো মুখে তার কালো কুচকুচে হয়ে আছে।তার তখনই নুয়াসের সেই প্রখান্ড চিৎকার! বেডের অপজিটেই ডেসিং টেবিল দরুন নুয়াসের ঘুম ভাঙ্গতেই তার কালি মাখা মুখ টা চোখে পরতে সময় লাগলো না।চিৎকার দিয়ে আয়নার দিকে এক চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে নুয়াস!এই মুহুর্তে ওর কি রিয়াকশন দেওয়া উচিৎ ও ভেবেই পাচ্ছে না।

বেবি কুইন দরজার আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে নুয়াস কে দেখছে হাসছে। যে ছয় সাত টা দাঁত গজিয়েছে তার হাসার কারণে সেগুলো বেরিয়ে আছে।হ্যাঁ এই কাজ টা তারই! সকালে যখন রিশিতা বেবি কুইন কে পিটার খাইয়ে দিয়ে চুপটি করে বসে থাকতে বলে নিচে চলে যায় তখন ঘুমে কাতর হয়ে থাকা নুয়াসকে চোখের সামনে দেখতে পেয়েই তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ভর করে।তার কপালে কালো ফোঁটা দেওয়ার জন্য আনা মোটা কাজল টা নিয়ে পুরোটা দিয়েই নুয়াসের মুখে মেখে দিয়েছে সে।যার ফলাফল নুয়াসের এখন কুচকুচে কালো মুখ!এসবই ভাবতে ভাবতে মুখ টিপে টিপে হাসতে হাসতে ছিলো বেবি কুইন! রিশিতাকে এইদিকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি দরজার সামনে থেকে সরে গেলো বেবি কুইন। দুইটা ঘর পরেরই মিসেস নাফিসার ঘর!এই মুহুর্তে ওই ঘর ছাড়া আর কোনো নিরাপদ কোনো জায়গা নেই বেবি কুইনের!সবসময়ই কোনো দুষ্টুমি করেই ওই ঘরে চলে যায়!বকা না খাওয়ার একমাত্র জায়গাই তো ওই ঘর!

রিশিতা এই মুহুর্তে অতিরিক্ত রকমের বিরক্ত হয়ে আছে।যেকোনো কাজই মাঝ পথে ছেড়ে আসা মোটেও পছন্দ করে না সে!কিন্তু নুয়াসের জন্য তাকে মাঝে মাঝেই এমন কাজ মাঝ পথে ছেড়ে আসতে হয় তাকে!আজও তার উল্টো টা হলো না।অবশেষে নিজের ঘর পর্যন্ত আসতে পারলো সে!ঘরে ঢুকেই কোনো দিকে না তাকিয়ে বলতে লাগলো,

—– কি সমস্যা তোমার!সবসময় এমন ষাঁড়ের মতো চেচাও কেনো?তুমি এমন বুড়ো দামড়া মতো লোক হয়ে যদি এমন করো তাহলে ওই ছোট্ট মেয়েটা কি শিখব……………

আর কিছু বলতে পারলো না রিশিতা নুয়াসের মুখটা চোখে পরতেই!কিছুক্ষণ ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেঁসে দিলো রিশিতা।রিশিতা তাকে এমন হাসতে দেখে নুয়াস কপটপটু রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো,

—– হাসি তো পাবেই এখন! মা মেয়ে দুইজনেই সমান একজন তার নানারকম এক্সপেরিমেন্ট করে আমার বারোটা বাজায় তো আরেক জন তার মজা নেয়! আর কি বললে মেয়ে কি শিখবে আমার থেকে!তোমার মেয়েকে শেখানোর মতো ক্ষমতা আমার আছে?শুধু আমার বলছি কেন?এই পৃথিবীতেও কেউ আছে কিনা সন্দেহ!

রিশিতা বুঝতে পারছে নুয়াস ভিষণ রেগে গেছে আর রাগানো মানুষ কে আরো রাগিয়ে দিয়ে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনার মতো ভুল রিশিতা করতে চায় না।আর এখন তো কোনোভাবেই না কারণ কিচেনে তার অনেক কাজ পরে আছে!তাই হাসি টাকে কোনোরকমে কন্ট্রোল করলো রিশিতা।

—- আচ্ছা আগে যাও ওয়াস রুমে!মুখ পরিষ্কার করে তারপর আমার মেয়ের বদনাম করো।

নুয়াস আর কোনো কথা শুনার প্রয়োজন বোধ করলো না।হনহন করে তোয়ালে টা নিয়ে ওয়াস রুমের দিকে চলে গেলো।নুয়াসের প্রতিদিনই এইরকম নানা দুষ্টুমি করতে থাকে বেবি কুইন!

_________________________

মিসেস নাফিসা বই পড়ছিলেন হঠাৎ করে দরজার দিকে তার চোখ আটকে যায়।তার অতি প্রিয় বেবি কুইন তারই দরজার সামনে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তবে তাঁরও বুঝতে বাকি নেই কোনো না কোনো দুষ্টুমি করে তবেই এসেছে এখানে।কারণ এই একটা কারণ ছাড়া এই ঘরে তার দেখে মেলে না।যাইহোক বেবি কুইন কে দেখেই খুশী হয়ে গেলো মিসেস নাফিসা।একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি!

—– আমার কুইন দিদিভাই তাড়াতাড়ি চলে এসো দিদিমার কাছে!!

এতোক্ষণ যেনো এই ডাক টারই অপেক্ষায় ছিলো বেবি কুইন! তাই ডাক টা কানে আসতে না আসতেই প্রচন্ড রকম খুশী হয়ে দৌড়ে গেলো মিসেস নাফিসার কাছে।আর সঙ্গে তার আদো আদো গলার ডাক তো আছেই।

—– ডিডি! ডিডি! ডিডি! (দিদি! দিদি! দিদি!)

বেবি কুইনের মুখে ডাক টা শুনে মন ভরে গেলো মিসেস নাফিসার!পরম আবেশে নাতনিকে বুকে জড়িয়ে নিলেন তিনি।এই বাচ্চাটার ছোঁয়া পেলে পরম শান্তি অনুভব করেন তিনি! কিন্তু আজ কি দুষ্টুমি করলো বেবি কুইন! তা জানতে খুব কৌতুহল হলো মিসেস নাফিসার!

—– তো এবার বলে ফেলতো কি দুষ্টুমি করেছে আজ বেবি কুইন!

মিসেস নাফিসার প্রশ্ন করতেই বেবি কুইন মুখ টা ফুলিয়ে ফেললো!হাত ভাজ করে অন্য দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো!এর মানে এই যে প্রশ্ন টা তার মোটেও ভালো লাগেনি।সে তো এখানে এসেছে মায়ের বকা থেকে বাঁচার জন্য! ব্যাপার টা মিসেস মিসেস নাফিসা বুঝতে পেরে হেঁসে দিলো।

—– আমার কুইন দিদিভাই রাগ করেছে! তার দিদির সাথে আর কথা বলবে না সে!কিন্তু তার দিদির তো তার সাথে কথা না বলতে পারলে একটুও ভালো লাগে না।

কথা গুলো বলে মুখ ফোলানোর ভান করলেন মিসেস নাফিসা। বেবি কুইন আড়চোখে একবার তাঁর দিকে তাকালো। এরমধ্যেই রিশিতার আগমন ঘটে এই ঘরে।রিশিতাকে দেখেই বেবি কুইন তার রাগ অভিমান কে আকালে উড়িয়ে দিয়ে ঝাপটে গিয়ে মিসেস নাফিসার কোলে কাচুমাচু হয়ে মুখ গুঁজে নিলো।

—- দিদিমার কাছে লোকালেই ছাড় পেয়ে যাবে এটা ভাবলে ভুল করছো কুইন!আমার বকার হাত থেকে আজ কেউ বাঁচাতে পারবে না।বাবার মুখে ওগুলো লাগালে কেন?

ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে উক্ত কথা গুলো বললো রিশিতা। রিশিতা আরো কিছু বলতে নিলেই মিসেস নাফিসা বাঁধা দিয়ে বলে উঠলেন,

—– থাক না রিশিতা! ছোট্টো মানুষ ভুল করে করে ফেলছে! দেখো নিজেই কেমন ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে তারউপর আবার তুমি ওকে বকা দিচ্ছো!

—– মা আপনি সব সময় ওকে বাঁচাবেন প্লীজ!আপনি জানেন আজ ও কি করেছে!নুয়াসের পুরো মুখে কাজল মেখে কালো কুচকুচে করে দিয়েছে।সেই কালি কিছুতেই উঠাতে পারছিলো না।অনেক কষ্টে কোনোরকমে কালি উঠিছি!এখনো মুখ অনেক টা কালো কালো হয়ে আছে।আজ অফিসে যাবে কি করে ও!তারপরও বলবেন ওকে ছেড়ে দিতে!

রিশিতার কথার জবাবে তৎক্ষনাৎ বলে উঠলেনন মিসেস নাফিসা,

—– এটা কি অন্যের অফিস নাকি যে একদিন অফিসে না যেতে পারলে জবাব দিহি করতে হবে!তুমি ওকে বলে দিও আজ অফিস যেতে হবে না আজ বাড়িতেই থাকুক ও বরং!

—– মা!!!!!

—– আচ্ছা আমাকে বকে দিবো কুইন কে! তাহলে হবে তো!কিন্তু তুমি ওকে কিছুতেই আর বকবে না আমার দিদিভাইকে!

রিশিতা তা হতাশ চোখে মিসেস নাফিসার দিকে তাকিয়ে আছে।সবসময়ই মিসেস নাফিসা বেবি কুইনকে এইভাবে বাঁচিয়ে নেয়!আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।

___________________

নিলয় অনেকক্ষণ ধরে ভাবছে বেবি কুইন নিয়ে কি করা যায়।ওর বাকি সঙ্গীদের কে বলেছে কিন্তু তারা কেউই ওর সঙ্গ দেয়নি উল্টো ওকেই ওরা বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিছু না করার জন্য! বেবি কুইন তো ওদের কোনো ওদের কোনো ক্ষতি করেনি ওরাই যখন ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে তখনই ওদের সাথে এমন কিছু করে।তারথেকেও বড়ো কথা ও একটা বাচ্চা আর বাচ্চারা তো দুষ্টুমি করবেই। আর ওদের তো রাখাই হয়েছে বেবি কুইনের দেখাশোনার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা নিলয় বলতে গেলে বেবি কুইনকে দেখতেই পারে না।তাই ওর কাছে বেবি কুইনের খারাপ দিক গুলোই ফুটে ওঠে এবং ভিষণ বাজে ভাবে।ও মনে করে বেবি কুইন ইচ্ছে করে ওর সাথে সবসময় এমন করে আর এখানে ওর কোনো দোষই নেই। তাই ওকে শাস্তি দিতেই হবে যে করেই হোক!

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here