বেবি কুইন,সূচনা পর্ব

0
3347

বেবি কুইন,সূচনা পর্ব
সুমাইয়া জাহান

— এই ধর ধর ধর ধর ধর……………..

চারিদিক থেকে শুধু এই একটাই শব্দ মুখরিত হচ্ছে । কিন্তু যার জন্য হচ্ছে সে যেন এতে আরো বেশি আনন্দ পাচ্ছে। তাই সে খিলখিল করে হাসতে হাসতে সে তার মতো করে দৌড়াতেই ব্যস্ত। সে যেন আজ পন করে নিয়েছে কিছুতেই ধরা দিবে না।এটা যেন তার অতি প্রিয় এক দারুণ মজার খেলা।তার মতে এই খেলার প্রতিদ্বন্দ্বী চারিপাশে থাকা লোক গুলোই!এটা অবশ্য নতুন নয় প্রতিদিনের নিত্য খেলা তার!
এদিকে সবাই গোল হয়ে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরার চেষ্টা করছে তাকে।আজ করেই হোক ধরতেই হবে এটা আজ তাঁরাও পন করে নিয়েছে!সবাই যখন তাকে একেবারে ঘিরে ফেললো সবার মুখেই তখন রাজ্য জয় করার হাসি।এই ধরতে যাবে যাবে অবস্থা ঠিক তখনই,

—– ভ্যায়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়য়া!!!!!

চিৎকার করে উঠলো সে!পরমুহূর্তেই সব হাসি মুখ গুলোতেই ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো।ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা কন্ঠ স্বর ভেসে আসলো!

—– বেবি কুইন! কি হয়েছে আমার বেবি কুইনের!

ব্যস এইটারই পয় পাচ্ছিলো এতোক্ষণ সবাই! সবাই কাচুমাচু করে সারি বদ্ধভাবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে পরলো।তারা সরে যেতেই তাদের আড়ালে থাকা সে দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরলো মিসেস নাফিসাকে!তার কান্নার মাত্রা আরো বেড়ে গেলো।মিসেস নাফিসাকে ঝাপটে ধরে সে একাধারে কেঁদেই যাচ্ছে! মিসেস নাফিসা তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

—– বেবি কুইনের কি হয়েছে?কেন কাঁদছে বেবি কুইন! দুষ্টরা মেরেছে?বকেছে?বেবি কুইনের দিদিমা এখনো আছে!এখুনি ওদেরও বকে দিবে দিদিমা!

তারপর তাকে কোলে নিয়ে উঠে দাড়িয়ে সামনের সারি বদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো মিসেস নাফিসা।এতেই যেন সবার ভয়ে কাঁপুনি উঠতে বাধ্য!আস্তে আস্তে ধাপ ফেলে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কপালে ভাজ ফেলে ওদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলার আগেই ওদের মধ্যে একজন প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলো,

—– আসলে মেডাম ছোটো মেডামই বলছিলো তার কাছে নিয়ে যেতে সকাল থেকে কিছু খায়নি তো!তাই এখন খাওয়াবেন ছোটো মেডাম তার কথা মতোই আমরা ধরতে এসেছিলাম।মেডাম এবারের মতো ক্ষমা করে দেন আর কখনো এমন হবে না।চাকরি টা শেষ হয়ে গেলে ভাতে মারা যাবো আমরা!একটু দয়া করেন মেডাম!

সেই লোকটার বলার সাথে সাথেই সবাই সাহস করে একে একে আকুতি মিনতি করতে লাগলো চাকরি থেকে বের না করার জন্য! ওদের কথা শুনার পর মিসেস নাফিসা বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকলেন। সবাই তো এখন মনে মনে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছে।কারণ সবাই জানে এর শান্তি একটাই!

—- আচ্ছা বেবি কুইন বলো তো ওদের এখন কি শাস্তি দেওয়া যায়?আমি যেটা ভাবছি তুমিও কি সেটাই ভাবছো?

মিসেস নাফিসার কোলে থাকা বাচ্চা টা কথাটা শুনেই খিলখিল করে হেঁসে দিলো।যেন বুঝিয়ে দিলো সেও তাই ভাবছে।মিসেস নাফিসার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো।এইদিকে সবার ভয়টাও একটু কমলো।কারণ তাদের আর বুঝতে বাকি নেই আজ তারা মরতে মরতে বেঁচে গেছে।মানে চাকরি টা এবারের মতো বেঁচে গেলো।ভেবেই সবাই একটা স্বস্তির শ্বাস ফেললো।কিন্তু সেই স্বস্তি টা বেশিক্ষণ সইলো না তাদের মিসেস নাফিসার বলা কথা শুনে!

—– আজ সারাদিন মানে শুধু বারো ঘন্টা পায়ে হাঁটতে পারবে না হাঁটু ভর দিয়ে বেবি কুইনের গোড়া হয়ে থাকতে হবে।

—– কিহহহহহহহহ!!

সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো।তখনই সেই স্থানে আরো এক জোড়া পায়ের আবির্ভাব হলো।সবার চিৎকারে বেড়িয়ে এসেছে রিশিতা।তবে তারও বুঝতে বাকি নেই এখানে কি হচ্ছে। খাবার বাটি হাতে নিয়েই এসে চলে এসেছে।সেই সকাল থেকেই নিশিতা এই বাটি হাতে পুরো বাড়ি চক্কর দিয়েছে বেশ কয়েক বার কিন্তু মেয়েকে এক দানা খাবারও খাওয়াতে পারেনি।এইটুকু মেয়ে সে কিনা এমন নাজেহাল অবস্থা করে দিয়েছে কি অবস্থা ভিষণ ক্লান্ত হয়ে গেছে রিশিতা সকাল খেকে মেয়ের পিছনে ছুটতে ছুটতে তাই বাধ্য হয়ে স্টাফ দের দিয়ে মেয়েকে ধরে আনতে বলেছে।কিন্তু মিসেস নাফিসা যে আজ বাড়ি চলে আসবেন বিন্দু মাত্র বুঝতে পারেনি৷ রিশিতা তাহলে কখনোই বলতো না রিশিতা।এখন রিশিতারই খুব খারাপ লাগছে স্টাফ গুলোর জন্য!

সবার পরিচয় টা সেরে নেই রিশিতা আর নুয়াস এর একমাত্র কন্যা বেবি কুইন।বর্তামনে যার বয়স দেড় বছর!রিশিতা আর নুয়াস এর বিয়ের প্রায় ছয় বছর পর বেবি কুইনের জন্ম তাই সবারই অতি আদরের।বিশেষ করে মিসেস নাফিসা মানে বেবি কুইনের দাদিমার তো কলিজা!মিসেস নাফিসা খুব শান্ত শিষ্ট মানুষ কিন্তু বেবি কুইনের কোনো ব্যাপারে অগ্নি মূর্তি ধারণ করতে দুবার ভাবেন না তিনি।কারো জন্য যদি বেবি কুইনের কোনো রকম অযত্ন হয় তাহলে তার সাথে সাথেই চাকরি আউট আর না হলে উক্ত শাস্তির মতো নানারকম কিছু না কিছু করেন তিনি।এই একটা ব্যাপারে কাউকে ছাড়েন না তিনি!

রিশিতা ছয় বছর পর মা হতে পেরে ভিষণ ছিলো। কিন্তু তার অবস্থা এখন খুব দরুন বেবি কুইনের জ্বালায় তার এখন খুব খারাপ অবস্থা। তবে যেমনই হোক না কেন মেয়েকে ভিষণ ভালোবাসে রিশিতা।তবে তার ধারণা ছোটো থেকেই একটু কড়ার মধ্যে রাখলে বেবি কুইনের দুষ্টুমি গুলো হয়তো বড়ো হতে হতে কমবে।তাই একটু শাসনের মধ্যে রাখার চেষ্টা করে।কিন্তু পারে আর কই!মিসেস নাফিসার জন্য সামান্য জোর গলায়ও কথা বলতে পারে না বেবি কুইনের সাথে!

নুয়াস সে তো সব সময়ই বেবি কুইনের থেকে একশো হাত দুরে থাকার চেষ্টা করে।যা অভিজ্ঞতা হয়েছে সেবার! সেইদিন ছিলো বেবি কুইনের জন্মের কিছু মুহুর্তে পরের কথা।দীর্ঘ ছয় বছর পর প্রথম বাবা হতে পেরে ভিষণ আনন্দ দিলো সেইদিন নুয়াস!হসপিটালে রিশিতার কেবিন ঢুকেছিলো নুয়াস সঙ্গে তার বেশ কয়েকজন বিজনেস পাটনার্ররাও ছিলো।তারা অবশ্য বেশ ভালো বন্ধুও ছিলো নুয়াসের! এতো বছর পর বন্ধুর মেয়ে হয়েছে শুনে সবাই এসেছে দেখতে।রিশিতা তখন একটু অসুস্থই ছিলো।তাই ও বেডে শুয়েছিলো পাশের একটা দোলনাতে বেবি কুইন কে রাখা হয়েছিলো।নুয়াস কে দেখেই একজন নার্স এসে বেবি কুইন কে দোলনা থেকে দুলে একটা চওড়া হাসি ফুটিয়ে বললো,

—- কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার নুয়াস!আপনি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন।

কথাটা বলে বাচ্চা টাকে নুয়াসের কোলে দিলো।কিন্তু নুয়াসের আর কোলে নেওয়া হয়ে উঠলো না মেয়েকে তার আগেই তার ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেলো। ভিজিয়ে দিয়েছে নুয়াসকে যদিও বা তোয়ালে পেঁচানো ছিলো বাচ্চা টা তাও ফাক দিয়ে পরে নুয়াসের পুরো শার্ট ভিজিয়ে দিয়েছে।একে জীবনে কোনোদিন বাচ্চা কোলে নেইনি নুয়াস তার উপর আবার এসব!নুয়াসের অবস্থা খুব করুন! ওর এই অবস্থা দেখে বন্ধুরা হু হা করে হাসিতে ফেটে পরলো।নার্স মেয়েটাও মুখ টিপে টিপে হাসছে।নুয়াস পারে না তখন মাটিতে মিশে যায়।এই তো ছিলো শুধু নমুনা তারপর আরেক দিনের ঘটনা ওইদিন ছিলো বেবি কুইনের উপলক্ষে একটা বিশাল আয়োজন করে অনুষ্ঠানের দিন।সব গেস্টরা তখন বেবি কুইনকে দেখতে প্রায় ওকে গিরেই দাঁড়িয়ে ছিলো।রিশিতার কি যেন নিজের রুমে রেখে এসেছে সেটা মনে পড়তেই তাড়াহুড়ো করে নুয়াসের কোলে বেবি কুইনকে দিয়ে নিজের রুমের দিকে ছুট লাগলো।নুয়াস হাসপাতালের ঘটনাটার পর থেকে বেবি কুইন কে আর কোলে নেই নি আজ প্রথম নিলো।সবই ঠিক ছিলো কিন্তু হঠাৎ করে নুয়াসের নাকে একটা বাজে গন্ধ ভেসে এলো!আসলে এবার নুয়াসের কোলে মহা সর্বনাশা কান্ড করে ফেলছে বেবি কুইন! মানে এক৷ নাম্বার দুই নাম্বার সব একসাথে করে ফেলছে সে!সেই দুই দিনের ছোট্ট বেবি কুইনের মুখে তখন দুষ্ট হাসি ফুটে উঠলো তখন!কে যানে ওই ছোট্ট বাচ্চা কি বুঝে এমন হাসছে!বেবি কুইনের মুখে হাসি থাকলে বাবা মানে নুয়াসের যাচ্ছেতাই যাচ্ছেতাই অবস্থা!সবাই গোলগাল চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাসিতে ফেটে পরলো।কোনোভাবে নুয়াস সেখান থেকে চলে আসে।সেদিনের পর থেকে টানা একমাস আর নুয়াস বেবি কুইনের দারে কাছেও যায়নি।ছয় মাস পর ভাবলো তখন ছোটো ছিলো তাই ওইরকম করেছে।যতোহোক একটা মাত্র মেয়ে এভাবে দূরে দূর কয়দিন থাকা যায় তাই ও আবারও কোলে নিলো বেবি কুইন কে। তবে বেবি কুইন প্রতিবারের মতো এইবারও তার কাজ করতে ভুললো না।সে আগের মতোই তা কাজ করে দিলো।এইরকম যতোবারই নুয়াস বেবি কুইনকে কোলে নিয়েছে ততোবারই সে একই কাজ করেছে।কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই কাজ টা শুধু নুয়াস কোলে নিলেই করে আর কারো কোলেই এমন টা করে না বেবি কুইন। দরুন নুয়াস এখন এক প্রাকার ভয়ই পায় বেবি কুইন কে!এড়িয়েই চলার চেষ্টা করে বেবি কুইনের থেকে!

তবে বেবি কুইন সবার সাথে দুষ্টুমি করলেও দিদিমা মানে মিসেস নাফিসার সামনে একদম শান্ত শিষ্ট ভদ্র মানুষ হয়ে থাকে।তখন তার থেকে শান্ত মানুষ এই পৃথিবীতে আর দুটো নেই। বাকি পরিচয় টা গল্প পড়তে পড়তেই নাহয় পাবেন।

এখন আসা যাক গল্পে!বেবি কুইন তো এখন মহা খুশি দশ বারো টা গোড়া তার সামনে!খিলখিল করে হাসতে হাসতেই একটা গোড়ার পিঠে চড়ে বসলো বেবি কুইন! নানা রকম ভাবে খেলতে লাগলো ওদের সাথে কখনো চুল টান দিচ্ছে তো কখনো কান টান দিচ্ছে ওদের!নানারকম দুষ্টুমি করছে বেবি কুইন! তবে এখন দিদিমা সামনে নেই বেবি কুইনের!নাহলে কখনো করতো না এমন!

—– তল তল তল তল (চল চল চল চল)

দুই এক বাক্য বলতে পারে ও। সেগুলোই প্রয়োগ করছে ওদের উপর!

চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here