#বেসামাল_প্রেম,পর্ব_৩৪
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
আমাদের শরীরের কোনো অংশ যদি ব্লেড দিয়ে কেটে শুঁকনো মরিচের গুঁড়ো লাগানো হয়, কেমন অনুভূতি হবে? প্রতি বছর যখন রুদ্রর মা সুরভী বেগম, রুদ্রকে ফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়, রুদ্রর ঠিক ঐ অনুভূতিটাই হয়। যেন তার শরীরের কোনো অংশ কেটে মরিচের গুঁড়ো লাগিয়ে দেয় মহিলাটি। প্রতিবছর ঘটা করে স্মরণ করিয়ে দেয়, সে ঐ চরিত্রহীন নারীটির প্রথম সন্তান! যা সহ্য করতে পারে না রুদ্র। নিজের ওপর পুরোপুরিই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। যে শক্ত খোলসের আস্তরণে নিজের মনুষ্য আত্মাটিকে লুকিয়ে রাখে, তা বেরিয়ে পরে এক নিমিষে। ভেঙে চুরমার করে দেয় খোলসে আবৃত সমস্ত সত্তা। এক মানুষের একাধিক এই রূপ সহ্য করতে বেগ পেতে হয় হৈমীর৷ একদিকে ভয় অপরদিকে সম্মুখের মানুষটার কষ্ট। সব মিলিয়ে তার বাচ্চাসুলভ, নরম মনটায় আঘাত পড়ে। প্রচণ্ড আবেগান্বিত হয়ে সমস্ত ভয়কে তুচ্ছ করে, রুদ্রর নিকটে এসে বসে। আদুরে স্বরে বলে,
-” আপনি শান্ত হন, কাঁদবেন না। ”
রুদ্রর ঝাপসা দৃষ্টিতে জমে থাকা নোনাপানিগুলো এবার মুক্ত হয়ে ঝড়তে শুরু করে। তা দেখে হৈমীর মন আরো বেশি বিগলিত হয়। সহ্য করতে পারে না সে এই অশ্রুজল। কেন পারে না? উত্তর অনেক, সে তার কঠিন হৃদয়ের উগ্র মেজাজি স্বামী মানুষটাকে অনেক বেশি ভালোবাসে এখন। তাছাড়া তার মন এত বেশি সরল এবং নরম যে অচেনা কোনো মানুষকে কাঁদতে দেখলেও মনটা আঘাত পায়, হুহু করে কেঁদে ওঠে। নাটক, সিরিয়ালে কারো কান্নার অভিনয় দেখলেই যে মেয়ের চোখ দিয়ে বন্যা নামে সে কী করে সহ্য করে স্বামীর যন্ত্রণাদায়ক কান্না? সহ্য হয়নি বলেই মেঝেতে দু হাঁটু ভর করে উঁচু হলো এবং আকস্মাৎ রুদ্রর গলা জড়িয়ে ধরে অনুনয় করল,
-” প্লিজ কাঁদবেন না, আপনি কাঁদলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। এত বেশি ভালোবাসি যে আপনার কান্না দেখে আমারো কান্না পাচ্ছে। ”
হৈমীর চোখ বেয়েও অশ্রুপাত ঘটল। রুদ্র সহসা গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজের থেকে হৈমীকে সরিয়ে দিল। ছিটকে এক হাত দূরে সরে গেল হৈমী৷ হুহু করে কেঁদে দিয়ে বলল,
-” আমার ওপর রাগ করছেন কেন? আমি কী করেছি? আমিত ভালোবাসা দিতেই চাচ্ছি! ”
নিজের ক্রোধটুকু নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করল রুদ্র। হৈমীর বলা কথাটি তার মস্তিষ্কে গিয়ে আঘাত করল৷ কান দিয়ে যেন উত্তাপ বেরুচ্ছে। সত্যিই তো ওর দোষ টা কোথায়? সব তো তার কপালের দোষ। ভেবেই নিজের জন্মদাত্রী আর বড়ো চাচাকে স্মরণ হলো। সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফস্কে খুবই বিশ্রী একটা গালি দিয়ে ফেলল। যা শুনে দু’হাতে কান চেপে ধরে হৈমী উচ্চারণ করল,
– ” ছিঃ ”
এই ‘ ছিঃ ‘ ধ্বনিটুকু রুদ্রর বক্ষগহ্বরে জ্বলতে থাকা ক্রোধের আগুনে ঘি হয়ে পড়ল। বেচারির ওপর ক্ষিপ্র গতিতে এসে পড়ল রুদ্র। হৈমী পিছিয়ে যেতে গিয়ে দেয়ালের সঙ্গে হেলিয়ে পড়ল। রুদ্র দেয়ালের সঙ্গে নিজের দু-হাত দ্বারা ওর দু-হাত চেপে ধরল। ভয়ের মাত্রা এবার কম হলো হৈমীর। কিন্তু তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ল সে। রুদ্রর ক্ষুব্ধ মুখে শক্ত চাহনি ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
-” ব্যথা পাচ্ছি আমি, আমার ওপর রাগ ঝাড়ছেন কেন? আপনার কী মায়া, দায়া নেই এমন করলে আপনার সঙ্গে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। আপনার উদ্দেশ্য কী ছিল? আপনি কি রাগ ঝাড়ার জন্য বউ খুঁজছিলেন? আহ লাগছে আমার, ছাড়ুন! ”
হৈমীর কোনো কথাই কর্ণপাত করল না সে। বরং চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” ছিঃ বললে? আমাকে ছিঃ না বলে ঐ মহিলাকে ছিঃ বলো। বলো ঐ মহিলাকে ছিঃ বলো? কারণ উনি আমাদের ঠকিয়েছে, উনি আমার বাবার সংসার ভেঙেছে। এই ছিঃ টা আমার প্রপ্য নয়, এই ছিঃ টা ঐ বা”স্টা”র্ডদের প্রাপ্য! ”
চোখ, মুখ খিঁচে আবারো,
-” ছিঃ ”
বলে ফেলল হৈমী৷ মুহুর্তেই চোখ খুলে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকাল। আসলে এবারের ছিঃ টা ঝোঁকের বশে বলে ফেলেছে। কিন্তু রুদ্র সেটা বুঝল না। সে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে হৈমীকে ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। ক্রোধে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে পিছমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে বড়ো করে দম ছাড়ল। সদ্যই শাওয়ার নিয়ে আসার দরুন উদাম শরীর তার। অতিরিক্ত তেজ খাটাচ্ছে বলে মাঘ মাসের কনকনে শীতেও দেহ থেকে স্বেদজল নিঃসৃত হচ্ছে। দু-হাতে রুদ্রর শক্ত আঙুল গুলোর দাগ বসে গেছে হৈমীর। কব্জির লালচে হয়ে থাকা অংশটুকুতে দৃষ্টি বুলিয়ে ধীরেধীরে ওঠে দাঁড়াল সে৷ মনে তার ভীষণ কষ্ট। কারণ সামনের মানুষটার মনে তার জন্য একটুও মায়া নেই, ভালোবাসা নেই, আছে শুধু রাজ্যের রাগ। এই রাগ তার দোষে, অদোষেও। এই যেমন এখন তার ওপর বিনা দোষে রাগ খাটাচ্ছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে বার কয়েক ঢোক গিলল সে। কিয়ৎকাল পেরোতেই কেঁপে ওঠল রুদ্রর মুখের গমগমে আওয়াজ শুনে,
-” পাঁচ বছর বয়স থেকে মা কী জিনিস বুঝিনি। মা ছাড়া একটা সন্তান কীভাবে বেড়ে ওঠে বোঝো? একবার ফিরে যাও নিজের শৈশবে, একটিবার কল্পনা করো তোমার পাশে তোমার মা নেই। মাতৃস্নেহ হীন বেড়ে ওঠা একবার কল্পনা করো হৈমী। ”
বাক্যটুকুর সমাপ্তি দিয়ে হৈমীর দিকে ফিরে তাকাল রুদ্র। হৈমী চোখ বন্ধ করে আছে। সত্যিই কল্পনা করার চেষ্টা করছে সে। ফিরে গিয়েছে সেই ছোট্ট বেলায়। কত বছর বয়স তখন? পাঁচ বছর? সে বয়সে মাকে ছাড়া চলবে কী করে? তখন মা তাকে
অ, আ শেখিয়েছে। এরপর স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। স্কুলে ভর্তি হবার পর থেকে রোজ ভোর সকালে ঘুম ভাঙিয়ে আদর করে ব্রাশ করাত মা। রাতের শেখানো আতা গাছে তোতাপাখি ডালিম গাছে মৌ.. কবিতাটি তোতাপাখির ন্যায় শুনতে চাইত। সে যখন থেমে থেমে, ঢোক চিপে আদুরে কণ্ঠে কবিতা শোনাত মা ভীষণ খুশি হয়ে তার কপালে মিষ্টি করে চুমু খেত। গাল টিপে দিয়ে বলত,
-” আমার তোতাপাখিটা। ”
রোজ সকালে মায়ের হাতে ঘি দিয়ে গরম গরম ভাত মাখা খেত। এরপর মা নিজহাতে সাজুগুজু করিয়ে, স্কুল ড্রেস পরিয়ে স্কুলে নিয়ে যেত। রাস্তায় হাওয়াই মিঠাই দেখে বায়না করার পর মায়ের বায়না মেটানো সেসব দৃশ্যই মানসপটে ভেসে বেড়াতে লাগল হৈমীর৷ এভাবে একাধারে সবটা স্বরণ করতে করতে কিশোরী বয়সের প্রথম অধ্যায়টুকু স্মরণ হলো। প্রথমবার যখন মেন্সট্রুয়েশন হলো তখন! তখন তো মাকে ছাড়া জাস্ট কল্পনাই করা যায় না৷ কী বিষাক্ত, যন্ত্রণাদায়ক মুহুর্ত। পৃথিবী কী? মানুষ কী? কীভাবে খেতে হয়? কীভাবে পরতে হয়? সব প্রশ্নের উত্তর তো মায়ের থেকেই জেনেছে, বুঝেছে। তাহলে এই মাকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করবে কী করে? মা না থাকলে এসবের কিছুই যে হতো না। তাছাড়া একটা মেয়ের জন্য মায়ের প্রয়োজনীয়তা অনেক অনেক বেশি। নাহ সে এটা কল্পনা করতে পারবে না৷ যদি কল্পনা করতে যায় তাহলে যে নিজের পুরো অস্তিত্বটাই ভুলে যেতে হবে।
হৈমীর কল্পনায় বিভোর নিষ্পাপ মুখশ্রী দেখে রুদ্র শান্ত হলো। অপলকভাবে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল কিঞ্চিৎ। তৎক্ষনাৎ হৈমী চোখ মেলে ভয়ানক দৃষ্টিতে তাকাল। উত্তেজিত হয়ে বলল,
-” মাকে ছাড়া কল্পনা করতে পারি না। ”
ফিচেল হেসে রুদ্র বলল,
-” তুমি কল্পনাই করতে পারো না। অথচ আমরা দিব্যি বেঁচে আছি৷ কী মনে হয় এই বেঁচে থাকার স্ট্রাগল খুব সহজ? ”
থামল রুদ্র। হৈমী তাকিয়ে রইল তার পানে। সময়ের তোয়াক্কা না করে সে বলতে লাগল,
-” আমি তখন পাঁচ বছরের ছিলাম কিন্তু সূচনা, ও ছিল দু বছরের। দুধের শিশু। যে বয়সে তুমি তোমার মায়ের হাতে ভাত খেয়েছ, মায়ের বুকে ঘুমিয়েছ, সে বয়সে আমি নিজহাতে ভাত খেয়ে বোনের মুখে ফিডার তুলে দিয়েছি। রাতে কাঁদতে থাকা ছোট্ট সূচনার কান্নায় অতিষ্ঠ হয়ে দাদিন দোলনায় রেখে ঘুমিয়ে যাওয়ার পর, সারারাত জেগে ওকে সঙ্গ দিয়েছি৷ আমার সূচনা যখন পাঁচ বছরের ছোট্টটি। তখন খেলার সাথীদের অভাবে ভুগত, কেউ ওর সঙ্গে খেলতে চাইত না। ওর বয়সী অবুঝ মেয়েরা ওকে আঘাত করত মা নিয়ে যন্ত্রণাদায়ক সে অনুভূতি। একই বয়সী মেয়েরা, ছেলেরা বলত, ‘ তোর মা ভালো না, তোর সঙ্গে খেলব না ‘ ‘, তোর মা নাকি তোর চাচার সাথে পালিয়ে গেছে? ‘, ‘ মা বলেছে তোর সঙ্গে না মিশতে। ‘ এই বাচ্চাদেরও বোঝানো হয়েছিল আমরা একজন খারাপ, চরিত্রহীন মায়ের সন্তান। আমি নিজেকে সামলাতে পারতাম সূচনা পারত না। নিজেকে সহ ওকে সামলাতে হতো আমাকে। পৃথিবীটা আমাদের জন্য কতটুকু কঠিন না বুঝলেও সমাজ আমাদের জন্য কত বেশি বিষাক্ত তখন থেকেই বুঝেছি। টাকা, পয়সা, ধনসম্পদ দিয়েও পারিনি এই সমাজ নামক বিষাক্ত বাতাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে। আজ যারা সামনে মিষ্টি হেসে আড়ালে বাঁকা কথা বলে একদিন তারা সামনেও বাঁকা কথা শোনাত। আমাদের পাশে তখন কে ছিল? বাবা ? সেও তো তার যন্ত্রণা আড়াল করতে পরদেশে কাটিয়ে দিচ্ছে… বড়ো চাচি মুখ লুকিয়ে ছিল কতগুলো বছর। রাদিফ ভাই, সাদমান আজো কারো সঙ্গেই প্রানখুলে দু’দণ্ড বসতে পারি না, হাসতে পারি না। আমরা সবাই নিজেদের খোলসে আবৃত করে চলছি, হয়তো আজীবন চলতে হবে। কেন জানো? ঐ নিকৃষ্ট দু’জন অমানুষের জন্য। এরপরে ঐ বা”স্টার্ডদের গালি দিলে তুমি ছিঃ বলবে? ছিঃ? ছিঃ আমি তোমাকে বলব তোমাকে!”
হৈমীর চোখ বেয়ে নোনাপানি গড়িয়ে পড়ছিল। রুদ্রর বলা প্রতিটি ব্যথাতুর কথায় ব্যথা পেয়েছে সে৷ কিন্তু শেষ কথায় অবাক হলো। তাকে ছিঃ বলবে কেন? প্রশ্নটি করার আগেই রুদ্র তেজ দেখিয়ে তার সামনে থেকে সরে, রেডি হতে উদ্যত হলো। হৈমী চোখের পানি মুছে ওড়নায় কোণায় নাক মুছে, রুদ্রর পিছু নিল। মিনমিনে স্বরে জিজ্ঞেস করল,
-” আমাকে কেন ছিঃ বলবেন? ”
রুদ্র চোয়াল শক্ত করে আড়চোখে তাকাল। হৈমী দমে গেল। ঢোক গিলে বলল,
-” উনি খুব অন্যায় করেছেন, একদম ঠিক করেননি। কোনোদিন সামনে পেলে জিজ্ঞেস করব, কেন করেছেন এমন? কেন কষ্ট দিলেন আপনাদের? ”
হৈমীর দৃষ্টিজোড়া আবারো ঝাপসা হয়ে এলো। রুদ্র শার্ট, কোট বের করে পিছু ফিরল। জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল। হৈমী ক্ষীণ স্বরে বলল,
-” আমার শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করব। ”
-” তোমার শাশুড়ি নেই। এই ভুল যেন দ্বিতীয়বার না হয়। যেখানে আমার মা নেই সেখানে তোমার শাশুড়ি থাকার প্রশ্নই ওঠে না। ”
দম আটকে মাথা নাড়াল হৈমী। মানে সে তার কথায় সমর্থন করল। রুদ্র ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে রেডি হতে লাগল, বেশ দেরি হয়ে গেছে। হৈমী তার পিছনে দাঁড়িয়ে বলল,
-” খাবারগুলো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে বোধহয় গরম করি? একটু সময় লাগবে। ”
-” আমি খাব না। ”
আঁতকে ওঠল হৈমী। খাবে না মানে? আজ সারাদিন বাইরে থাকবে। রাতেই তো বলল নতুন ব্যবসাটার উদ্বোধন আজ। হৈমী তাড়া দিয়ে বলল,
-” না না খেয়ে যেতেই হবে। আমি তাড়াতাড়িই করব, আপনি রেডি হন। ”
হৈমী চটপট চলে গেল কিচেনে। কাজের মেয়েটা সাহায্য করল ওকে। এরপর ছুটে গেল রুমে। রুদ্র তখন রেডি প্রায়। হাতঘড়ি পরছে আর কথা বলছে ফোনে। রাদিফের ফোন, দেরি হওয়াতে বকাঝকা করছে রুদ্রকে। বুঝতে পেরে হৈমী ছুটে ডাইনিং রুমে গিয়ে ভাতে পরিমাণ অনুযায়ী তরকারি ঢেলে পুনরায় ছুটে এলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কপালের চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করে পিছনের চুলগুলো ছোট্ট ঝুঁটি করে নিল রুদ্র। হৈমী ত্বরিৎ গতিতে গিয়ে তার সামনে থাকা মোড়ার ওপর ওঠে দাঁড়াল। একহাতে খাবারের প্লেটটা ধরে অপরহাতে তরকারি দিয়ে ভাত মেখে, লোকমা বানিয়ে তার সমানে ধরল। আহ্লাদী স্বরে বলল,
-” শুভ জন্মদিন ডিয়ার হাজব্যন্ড। ছোটোবেলায় আপনাকে খাওয়িয়ে দেয়ার মানুষ ছিল না তাই বলে এখনও নেই এ ধারণা করলে ভুল হবে। এই যে আপনার বউ দিব্যি আছি৷ ”
হতভম্ব হয়ে গেল রুদ্র। হৈমীকে আপাদমস্তক দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল তার। যেভাবে মোড়ার ওপর দাঁড়িয়েছে যে কোনো সময় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই মেজাজ দেখিয়ে কিছু বলতে উদ্যত হবে তার পূর্বই হৈমী জোর পূর্বক তার মুখে ভাতের লোকমা ঢুকিয়ে দিল। আকস্মিক হেসেও দিল। বলল,
-” কী ভাবছেন এত সুন্দর করে নাগাল পেলাম কী করে? আরেহ খাটো মেয়ে বিয়ে করেছেন বলে তার বুদ্ধিটাও খাটো হবে তা ভাবলেন কী করে? বুদ্ধি খাঁটিয়ে ঠিক আপনার সমান সমান হয়ে গেছি। এই না না আপনার চেয়ে একটু লম্বাও হয়ে গেছি৷ দেখুন। ”
শেষ বাক্যটুকু বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল হৈমী। একই সঙ্গে রাগ, দুঃখ, আবার ভালোলাগার অনুভূতিতে বুক ভার হয়ে এলো রুদ্রর। কোনরকমে মুখের খাবারটুকু চিবুতে চিবুতে শান্ত স্বরে বলল,
-” পড়ে যাবে নেমে দাঁড়াও। ”
চলবে..