#বেসামাল_প্রেম,পর্ব_৩৮
#জান্নাতুল_নাঈমা
দু’দিন পর সূচনার তেইশ তম জন্মদিন। তাই রুদ্রর সঙ্গে মাহের পরিকল্পনা করেই ঢাকাতে এসেছে। বিয়ের পর বউয়ের প্রথম জন্মদিন। বিশেষ ভাবে এ দিনটাকে উদযাপন করতে চায় মাহের। সূচনার খুব ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি ভ্রমণ উপযোগী স্থানে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু সেই ইচ্ছেটা পূরণ হয়নি রুদ্রর জন্য৷ বোনের প্রতি অতিরিক্ত পসেসিভনেস থাকার কারণে দু একটা জায়গা ব্যতীত কোথাওই যেতে দেয়নি রুদ্র। সে বার রুদ্র কাজিন ব্রাদার্সদের নিয়ে কক্সবাজার ঘুরে এলো। সূচনা কত অনুরোধ করল তাকে নিয়ে যেতে। রুদ্র রাজি হয়নি। সেই যে মেয়েটা মন খারাপ করল সেই মন খারাপ এখনো ভালো হয়নি। তাই তো সে বারের পর আর কখনো ভাইয়ের কাছে আবদার করেনি কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবার। অভিমানী বোনের অভিমান ঠিক টের পেয়েছে রুদ্র। তাই এ বছর বোনের জন্মদিন উপলক্ষে আকাশপথে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বোন, বোন জামাইকে তার তরফ থেকে গিফট বলা চলে। মাহের যদিও এতে নারাজ ছিল পরবর্তীতে স্বাভাবিক হয়েছে। শত হোক ভাইয়ের ভালোবাসা থেকে তো বউটাকে বঞ্চিত করতে পারে না। আগামীকাল বিকেল পাঁচটা পাঁচ মিনিটে তাদের চারজনের ফ্লাইট। এ ব্যাপারে শুধু রুদ্র, মাহের আর হৈমী জানে৷ সূচনা জানবে আগামীকাল ঠিক পাঁচটা পাঁচ মিনিটে৷ তার আগ পর্যন্ত শুধু বিষয়টা কৌশলে গোপন রাখার পালা। রুদ্র হৈমীর মতো পেট পাতলা মানুষটাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত রয়েছে। তাই সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখছে৷ মুখ ফস্কে একবার যদি বলে দেয় তাহলে পুরো পরিকল্পনাটাই বরবাদ হয়ে যাবে। লাঞ্চ শেষে সূচনা কিছু ভেজা কাপড় শুকাতে ছাদে যাচ্ছিল সঙ্গে হৈমী। রুদ্র রুম থেকে হৈমীকে সূচনার সঙ্গে দরজা পর্যন্ত যেতে দেখেই হাঁক ছেড়ে ডাকল,
– ” হৈমী, অ্যাঁই হৈমী আমার ওয়ালেট কোথায়? ”
সহসা রুদ্রের এমন কাণ্ডে রীতিমতো ওরা দুজনই অবাক হলো। হৈমী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সূচনার দিকে তাকাল। সূচনা মুচকি হেসে বলল,
-” যাও ভাইয়ার ওয়ালেট খুঁজো গিয়ে। ”
-” বা রে, আমি উনার ওয়ালেট কোথায় পাবো। উনার জিনিস আমি রাখি নাকি। ”
-” ডাকছে যখন যাও না দু’জন মিলে একসঙ্গে খুঁজে বের করো। আমি এগুলো ছাদে মেলে দিয়েই আসছি। ”
একটু সুযোগ মিলেছিল ছাদে যাওয়ার খাটাশ লোকটার জন্য আর যাওয়া হলো না৷ চোখেমুখে তীব্র রাগ ফুটিয়ে রুমে এলো হৈমী। এক প্রকার চিৎকার দিয়েই বলল,
-” আপনার সমস্যা কী? আপনার ওয়ালেট কোথায় আমি জানব কী করে? ”
প্যান্টের পকেটে ওয়ালেট ঢুকিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল রুদ্র। হৈমী হতভম্ব হয়ে গেল তার কাণ্ড দেখে৷ রাগে, দুঃখে মাথার সবগুলো চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করল৷ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে এগিয়ে এসে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
-” এটা কী হলো! ওয়ালেট হাতে নিয়ে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছেন, হৈমী আমার ওয়ালেট কোথায়? আপনি এত খারাপ কেন। ”
ভ্রু কুঁচকে দৃঢ় পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল রুদ্র। অল্প আওয়াজ তুলে দরজা লক করে পুনরায় ফিরে তাকাল হৈমীর দিকে। হৈমীর ইচ্ছে করল রুদ্রর পেছনে বাঁধা ছোট্ট ঝুঁটিটা মুঠো ধরে আস্ত রুদ্রর শরীরটাকে একশটা আছাড় দিতে৷ কিন্তু সেই ইচ্ছে ইহজন্মে পূরণ হবার নয় বলে ব্যর্থ শ্বাস ফেলল। রুদ্র ধীরপায়ে তার দিকে এগিয়ে এসে রাশভারি স্বরে জিজ্ঞেস করল,
– ” মানুষ কীভাবে ষাঁড়ের মতো চেঁচায়? স্পিক আউট !
শেষ শব্দ দু’টো ধমকেই বলল। ফলশ্রুতিতে কেঁপে ওঠল হৈমী৷ কাঁপা গলায় বলল,
– ” অকারণে আমাকে চেঁচিয়ে ডেকেছেন। তাই রাগ করে বলেছি। ”
কী ইনোসেন্ট উত্তর। এরপরও কি রেগে থাকা যায়? যায় না, তাই রুদ্রও আর রাগ করল না৷ সে অকারণ ডাকটাকে কারণে পরিণত করার জন্য বেশ আয়েশ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিল৷ হৈমীর দিকে গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে হাত উঁচিয়ে কাছে ডাকল৷
-” কাছে এসো মাথাটা টিপে দাও। ঘুমাব কিছুক্ষণ। ”
অবাধ্যতা করতে পারল না হৈমী। কেমন শান্ত হয়ে চলে এলো রুদ্রর শিয়রে৷ ছোটো ছোটো নরম তুলতুলে হাত দিয়ে মাথা টিপে দিতে শুরু করল। আরামে চোখ বুজে এলো রুদ্রর। প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
-” পরীক্ষার সময় খুব কাছাকাছি। কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসার পর আর সময় নষ্ট করা যাবে না। মনে থাকবে? ”
অল্প আওয়াজে উত্তর দিল হৈমী,
– ” থাকবে৷ ”
মৃদু হাসল রুদ্র। সহসা বলে ওঠল,
-” শার্টের বোতাম খোলো। ”
-” হুহ। ”
চমকে ওঠল হৈমী। আমতা আমতা করে বলল,
-” মানে! ”
-” আরে বাবা বাংলাই তো বললাম শার্টের বোতাম খোলো। ”
অধর উল্টে চোখ দু’টো ছোটো করে তাকাল মেয়েটা। রুদ্র সহসা চোখ মেলে কঠিন স্বরে আদেশ করল,
-” শার্টের বোতাম গুলো খুলে দাও কুইক। ”
ছোটো ছোটো চোখে তাকিয়ে রুদ্রর বলিষ্ঠ হাত দু’টো দেখে নিল হৈমী। মনে মনে বলল,
-” নিজের এত বড়ো বড়ো হাত থাকতে আমার মাসুম হাতগুলোকে লোকটা শুধু শুধু পরিশ্রম করায়। ”
ধীরেধীরে সবগুলো বোতাম খোলার পর রুদ্রর শরীর থেকে অদ্ভুত এক ঘ্রাণ ভেসে এলো। আচমকাই নাক টেনে ঘ্রাণটুকু গাঢ় ভাবে শুষে নিল হৈমী। রুদ্র সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে সেন্ডো গেঞ্জিটা নিজেই খুলে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ল৷ হৈমী বিস্মিত হয়ে কিঞ্চিৎ সরে বসল৷ লজ্জায় গাল দু’টো লালে লাল হতে লাগল তার। নিঃশ্বাস হয়ে ওঠল ভারী৷ শুকনো গলায় ঢোক গিলতে লাগল ক্ষণে ক্ষণে। প্রচণ্ড আড়ষ্টতায় ভুগতে লাগল আকস্মাৎ। অকপটে রুদ্র বলল,
– ” শরীর টিপে দাও। ”
আবারো চমকাল হৈমী। চিন্তান্বিত দৃষ্টিতে কয়েক পল তাকিয়ে রইল পেশিবহুল দেহটার দিকে। বুকের ভিতর কেমন কেমন অনুভূতি হচ্ছে তার। ধক ধক শব্দে মন মাতোয়ারা হয়ে ওঠছে। পুরো শরীরটা অসুস্থ অসুস্থ লাগছে৷ চোখ দু’টোতে ভর করছে রাজ্যের ঘুম। এমন ঠেকছে কেন তার? রুদ্রর পেশি বহুল উন্মুক্ত পিঠটা দেখে তার এমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে কেন? হাই তুলতে তুলতে কাঁধে আলতো করে হাত রাখল সে। মৃদুভাবে কাঁধ টিপতে শুরু করলে রুদ্র বলল,
-” শরীরে কী জোর নেই? জোর আনো হাতে। শরীর ব্যথা করছে, ব্যথা কমিয়ে দাও। বউ যখন হয়েছে বরের শরীরের সব অসুখ সারাতে হবে তোমায়। ”
হৃদয়টায় টনটন করে ওঠল হৈমীর৷ হাতের জোর বাড়তে গিয়েও সহসা হাত অবশ হয়ে এলো। এতক্ষণের মুখে ছড়ানো লজ্জাটুকু সারা অঙ্গে মেখে একাকার হয়ে গেল৷ না পেরে ওঠে যেতে উদ্যত হলো সে। টের পেয়ে সহসা হেঁচকা টান দিয়ে বিছানায় শুইয়ে ফেলল ওকে রুদ্র। ত্বরিতগতিতে উপর দিয়ে কম্বল টেনে নিজেদের ঢেকেও ফেলল। হৈমী ছটফট করার চেষ্টা করতেই রুদ্র ওর ঠোঁটজোড়া আঙুলের সাহায্যে চেপে ধরে ভরাট স্বরে বলল,
-” কাজ দিয়েছি পারোনি তাই অকাজ করার সাহসও দেখাবে না। চুপচাপ একঘন্টা ঘুমাবে আমার সঙ্গে। ”
নিমিষেই শান্ত হলো হৈমী৷ রুদ্র ঠোঁটে চেপে রাখা আঙুলটি সরাতেই সে বলল,
-” আমি ঘুমাব না। ”
-” তাহলে আমাকে ঘুমাতে সাহায্য করো। ”
বলতে বলতেই পুরো হৈমীটাকে নিজের দ্বারা আবদ্ধ করে নিল। ছোট্ট দেহটার থরথর কম্পন অনুভব করল নিগূঢ় ভাবে। হৃদয় জুড়ে ছুঁয়ে গেল সুখের উষ্ণ হাওয়া। আবেশে চোখ বুজে হৈমীর ছোট্ট বুকে মাথা রাখল সে। ঠোঁট নাড়িয়ে উচ্চারণ করল,
-” যতক্ষণ ঘুমাব ততক্ষণ নড়াচড়া করবে না। ”
রুদ্রর মুখের উষ্ণ নিঃস্বাস বক্ষ বিভাজনে পড়তেই নড়েচড়ে ওঠল হৈমী। রুদ্র তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। সে ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
-” আমার সুরসুরি লাগছে এভাবে থাকতে পারছি না। দম আটকেও আসছে। ”
বিরক্তি প্রকাশ করে রুদ্র বলল,
-” উমহ যা ইচ্ছে লাগুক, যা ইচ্ছে আটকাক আমি ছাড়ছি না। এভাবে থাকার অভ্যাস করো মাই জান। ”
রুদ্রের মুখে এমন আদুরে কথা শুনে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মাথাটাও এবার বনবন করতে লাগল হৈমীর৷ কী সাংঘাতিক কাণ্ড হচ্ছে!
______________
সন্ধ্যার পর সূচনা মাহেরকে জানালো সে বাইরে যাবে। টুকটাক কেনাকাটা করে ফুচকা খেয়ে তবেই ফিরবে। মাহের মনে মনে চিন্তা করছিল ব্যাগপত্র গোছাবে কখন। এরপর মনস্থির করে ফেলল সূচনা ঘুমানোর পরই সব গোছাবে। আপাতত রুদ্রর সঙ্গে টুকটাক জরুরি কথা বলতে হবে। এরই মধ্যে সূচনার আবদার এসে পড়ল। সে তার কথা জানিয়ে তৈরি হতে শুরু করেছে। মাহের দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বলল,
-” সূচনা আমরা কাল বাইরে যাই? ”
আয়না থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে মাহেরে দিকে তাকাল সূচনা। কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই মাহের বলল,
-” শরীরটা ভালো লাগছে না আজ। ”
আঁতকে ওঠে এগিয়ে এলো সে। ব্যস্ত গলায় শুধালো,
-” ভালো লাগছে না মানে কী হয়েছে আপনার? ”
কথাটা বলতে বলতেই চট করে মাহেরের কপালে হাত রাখল। তাপমাত্রা স্বাভাবিক দেখে নিয়ে বলল,
-” কেমন লাগছে বলুন প্লিজ। ”
– ” আপনি অস্থির হচ্ছেন কেন তেমন কিছুই নয়। প্লিজ শান্ত হন। ”
সূচনার মুখ জুড়ে মেঘের ঘনঘটা। মাহেরের কিঞ্চিৎ খারাপ লাগল কিন্তু এই খারাপ লাগা, এই মেঘ যখন কেটে যাবে তখন তাদের থেকে সুখী বোধহয় পৃথিবীর আর কেউ হবে না৷ এটা ভেবেই প্রলম্বিত নিঃশ্বাসও ছাড়ল। ধীরেসুস্থে সূচনাকে নিজের পাশে বসিয়ে ওর চিবুকে আলতো ছুঁয়ে বলল,
-” আজ বাসাতেই আপনার হাতে বানানো কিছু খাই?”
-” কী খাবেন বলুন আমি করে আনছি। ”
-” আপনার যা খুশি একটা করুন, হৈমীকে বলুন সাহায্য করতে। ”
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল সূচনা বলল,
-” আপনি আরাম করুন। আমি যাচ্ছি। ”
সূচনা রান্নাঘরে যাওয়ার পূর্বে হৈমীকে দু’বার ডাকল। রুদ্রর ঘুমটা তখনি ছেড়ে যায়। দেখতে পায় হৈমী তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। তা দেখে ওকে ছেড়ে পাশের বালিশে মাথা রাখে বলে,
-” সূচনা ডাকছে, চোখে, মুখে পানি ছিটিয়ে ওর কাছে যাও। ”
_________
ড্রয়িংরুমে বসে রুদ্রর সঙ্গে কথা বলছিল মাহের। আগামীকালের আলোচনা শেষ করে হঠাৎই মাহের বলল,
-” হৈমীর পরীক্ষা তো অতি নিকটে। মা বলছিল পরীক্ষাটা আমাদের বাড়ি থেকে দিক। এরপর ছোটোখাটো আয়োজন করেই না হয় ওকে আপনাদের বাড়ি পাঠানো হবে। শুনেছি আপনার দাদিরও তাই ইচ্ছে। বাবার সঙ্গেও গতকাল কথা হয়েছে উনি আপনাকেও নিশ্চয়ই বলেছেন। ”
মাহেরের কথায় রুদ্র গম্ভীর হয়ে গেল। বলল,
-” আমি বাবাকে না বলে দিয়েছি। ”
মাহের জানত বিষয়টা। কারণ শশুরের সঙ্গে গতরাতে এ বিষয়ে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে তার৷ সে যে এ বিষয়ে অবগত তা রুদ্রকে বুঝতে না দিয়ে বলল,
-” দেখুন প্রতিটা সন্তান নিয়ে বাবা, মায়ের সপ্ন থাকে। হৈমীকে নিয়েও আমার মায়ের স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নটা পুরোপুরি দুঃস্বপ্ন হোক আমি চাই না। আপনারও বোন আছে আশা করি আপনি আমার জায়গাটা বুঝবেন। ”
সূচনাকে ইঙ্গিত করতেই রুদ্রর জেদ ভেঙে গুঁড়িয়ে গেল। দ্বিধান্বিত হয়ে বসে রইল সে। টের পেয়ে মাহের সম্পূর্ণ আস্থার সঙ্গে বলল,
-” আমরা সবাই এখন এই সম্পর্কটাকে মেনে নিয়েছি। বিয়ের পর এতগুলো দিন একসাথে রয়েছেন আপনারা। তাই সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা বাঁধ্য৷ শুধু পরিবারের দিকে তাকিয়ে হৈমীর দিকে তাকিয়ে হলেও রাজি হয়ে যান। আমি এবং সূচনা দু’জনই চাই হৈমী আমাদের সঙ্গে ফিরে যাক। পরীক্ষা শেষে দু পরিবারের সন্তুষ্টি নিয়ে নতুন জীবন শুরু করুক। ”
মাহেরকে সরাসরি আর না করতে পারল না রুদ্র। শুধু বলল,
-” আমার সিদ্ধান্ত পরে জানাব। ”
মাহের বলল,
-” আশা করি হ্যাঁ বোধক সিদ্ধান্ত হবে। ”
…
সাত সকালে হঠাৎই রুদ্র সিদ্ধান্ত নিল সে কক্সবাজার যাবে না। সে যাবে না মানে হৈমীও যেতে পারবে না। এ ব্যাপারে মাহের প্রথমে বিচলিত হলেও রুদ্রর সঙ্গে একান্তে কথা বলার পর শান্ত হলো। রুদ্রর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টও হলো সে। পূর্ণ বিশ্বাস রেখে বোনকে বোঝানোর দায়িত্ব রুদ্রর ওপরই ছেড়ে দিল। দুপুর পরই সূচনাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে। সূচনা যতবার জিজ্ঞেস করল কোথায় যাচ্ছে। মাহের ততবারই উত্তর দিল,
-” কোনো প্রশ্ন নয় দু ঘন্টার জন্য কোনো প্রশ্ন করবেন না। দু ঘন্টা পর যতখুশি প্রশ্ন করবেন। এই দুঘন্টা চুপচাপ আমাকে অনুসরণ করুন, আমি যা বলি তাই শুনুন। ”
ওরা বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই হৈমী রুমের দরজা আঁটকে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। আজ রুদ্রর ওপর ক্ষোভটা তার আকাশ ছুঁয়েছে। দরজার বাইরে থেকে অনেক ডাকাডাকি করেও হৈমীকে দিয়ে দরজা খোলাতে পারল না। শেষে ডুপ্লিকেট চাবির সহায়তায় লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করল সে। দেখতে পেল বিধ্বস্ত মুখে মেঝেতে বসে আছে হৈমী। অস্থির হয়ে সে এগিয়ে এলো, চট করে পাঁজা কোলে তুলে নিল ছোট্ট দেহটাকে। বলল,
-” আরে বাবা বাচ্চাদের মতো কাঁদছ কেন? আমার কথাটা শোনো কান্না থামাও, আমি তোমাকে পুরো বিষয়টা বলছি। কেন হঠাৎ যাওয়া ক্যানসেল করেছি সেটা শোনো। কক্সবাজার যাওয়া ক্যানসেল করলেও একদিনের ছুটিও ক্যানসেল করিনি, সব তোমাকে…”
আর কোনো কথা বলার সুযোগ পেল না রুদ্র। তীব্র ক্রোধের বশীভূত হয়ে, হিংস্র বাঘিনীর মতো তাকে আক্রমণ করে বসল হৈমী। দু’হাতে অসংখ্য কিল, ঘুষি দিল বুক পাটাতে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে গলা ভেঙে ফেলল প্রায়। শেষ পর্যায়ে সামনের দু পাটি দাঁত দিয়ে সজোরে কামড় বসালো রুদ্রর বুকের বা’পাশে। ব্যথায় অকুলান হয়ে ওর ছোট্ট শরীরটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলতে বাধ্য হলো রুদ্র। ত্বরিতগতিতে টিশার্ট খুলে বিস্মিত হলো সে। গলগলিয়ে রক্ত ঝড়ছে বুক থেকে। উফফ কী যন্ত্রণা! বিস্মিত হয়ে তাকাল হৈমীর ক্রোধান্বিত মুখের দিকেও৷ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
– ” আমার সঙ্গে ফাইট করবে? খুব ইচ্ছে আমার সঙ্গে ফাইট করার? ওকে ফাইন, প্রস্তুত হও তবে। ”
বুকে হাত চেপে চিকিৎসা বাক্স নিয়ে রুম ত্যাগ করল রুদ্র। মানাতে চেয়েছিল হৈমীকে। কিন্তু সুযোগ দিল না হৈমী নিজেই। তাই বাধ্য হয়ে সমঝোতা না করেই দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি একাই নিয়ে ফেলল।
চলবে…