বেসামাল_প্রেম,পর্ব_৪২

1
1863

#বেসামাল_প্রেম,পর্ব_৪২
#জান্নাতুল_নাঈমা

পড়ন্ত বিকেল৷ সমুদ্র পাড়ে পাশাপাশি হাত ধরে দাঁড়িয়ে সূচনা, মাহের৷ সূচনার পরনে ফিকে হলুদ রঙা ফিনফিনে শাড়ি। কটিদেশ মখমলের ব্লাউজে আবৃত। মাহেরের পরনে সাদা রঙের টি-শার্ট। গোড়ালি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে জিন্স গোটানো। খালি পায়ে বালুচরে দাঁড়ানো। বালুকাবেলায় নোনাজলের ফেনিল ছাপ স্পষ্ট। থেকে থেকে
সমুদ্রের গর্জন ধেয়ে আসে কিনারে। আছড়ে পড়ে ঢেউ। পড়ন্ত বেলা বিধায় সূর্যটা পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে৷ এইতো কিছু সময়। এরপরই সূর্যাস্ত। বেলা ফুরোনোর সঙ্গে সঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়ছে৷
আকাশে পাখি আকৃতির লেজহীন ঘুড়ি চোখের আড়াল হচ্ছে। দিনভর তেজোদ্দীপ্ত সূর্যটা ম্রিয়মান সমুদ্রের জলে। ওদের আশপাশে অনেক মানুষের ঢল। সকালবেলা একসঙ্গে সূর্যদয়, সারা বিকেল প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ। এরপর পাশাপাশি হাত রেখে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দর্শন। সময়টা দারুণ উপভোগ্য ছিল সূচনা, মাহেরের জন্য৷ সূচনার ইচ্ছে করছিল না সমুদ্র পাড় থেকে ফিরে যেতে। মাহের জোরপূর্বক রিসোর্টে ফিরল। এতে সূচনা ভীষণ মন খারাপ করেছিল৷ মন ভালো হলো প্রিয়তম অর্ধাঙ্গ যখন শীতের কাপড় পরার পর পুনরায় তাকে নিয়ে সমুদ্র পাড়ে এলো৷ রাতে ডিনারের সময়টা বাদে পুরো সময়জুড়েই ওরা সমুদ্র বিলাস করল। ঘড়ির কাঁটা যখন এগারোটা বেজে ঊনষাট মিনিট ঠিক সে সময় আচমকা মাহের কোলে তুলে নিল সূচনাকে। উপস্থিত সকলের সম্মুখে, কনকনে শীতের রাতে, সমুদ্র পাড়ে প্রিয়তমাকে নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠল সে৷ এরপর সহসা বালুকায় নামিয়ে দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসল মাহের। সূচনার একটি হাত আলতো ছুঁয়ে বলল,

-” শুভ জন্মদিন ডিয়ার। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপনাকে ঘিরে বাঁচতে চাই। আই লাভ ইউ সো মাচ৷”

প্রেমময় বুলি আওড়ে সহসা হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেল। ধীরেধীরে ওঠে দাঁড়িয়ে সূচনাকে নিজের সামনে পিছমুখী হয়ে দাঁড় করাল৷ ঝটপট পকেট থেকে বের করল লকেট সহ একটি গোল্ডের নেকলেস৷ সেটি পরিয়ে দেয়ার পূর্বে লকেট ওপেন করে দেখাল একপাশে তাদের দু’জনে বিয়ের ছবি। সূচনার চোখ দুটি আনন্দাশ্রুতে ছলছল। বুকে চলছে তীব্র উত্তেজনা। অতি সুখে পাগলপ্রায় সে। হাত, পা কাঁপছে তার। ভালোবাসার ভারে শরীর ঢলে পড়তে চাইছে তার৷ নিজেকে প্রাণপ্রণে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল সে৷ মাহের সন্তর্পণে হারটা তাকে পরিয়ে দিল। আশপাশে থাকা যারা এই প্রগাঢ় প্রেমের শাক্ষি হলো সকলেই হাত তালি দিল। তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে রইল। শেষে সকলে তাদের বেস্ট উইশেষ জানিয়ে একান্তে সময় কাটাতে স্পেস দিল৷ মাহের সকলের প্রশংসা, শুভকামনা সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করল। পুরোটা সময়ই সূচনা নিশ্চুপ ছিল৷ তার এই নিশ্চুপতাকে প্রগাঢ় করতে সহসা পেছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরল সে৷ যত্নভরে গ্রীবাদেশে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বিগলিতচিত্তে অর্ধাঙ্গীর কম্পিত দেহটা পাঁজা কোল করে নিল। ধীরপায়ে এগুলো রিসোর্টের দিকে৷ সে সময়ই তার স্মরণ হলো, আজকের দিনে সূচনা তার কাছে কী চায় সেটাও জানা হয়নি। রুমে গিয়ে সর্বপ্রথম কাজ জন্মদিন উপলক্ষে বউ তার কাছে কী চায় তা গভীর মনোযোগ সহকারে জানা। যদিও তার বিশ্বাস এই মেয়েটা তেমন কিছুই চাইবে না৷ আর চাইলেও অতি সাধারণ কিছুই হয়তো চাইবে৷ কিন্তু সে খুব করে চায় এই মেয়েটা তার কাছে খুব অসাধারণ কিছু চাক। যা দিতে গিয়ে সে বারকয়েক হোঁচট খাবে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই দিতে পারবে। যা তার মনে এবং সূচনার মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল।
________
সারাদিন খুব একটা ভালো কাটেনি হৈমীর। মানসিক, শারীরিক উভয় ক্ষেত্রেই তীব্র দুর্বলতায় নেতিয়ে পড়েছে মেয়েটা। হৈমী যতই রাগ করুক, অভিমান করুক রুদ্র পাত্তা দেয়নি৷ সে তার মতো সেবা করেছে বউয়ের৷ দুপুরবেলা খেতে চায়নি বলে জোর করে খাইয়ে দিয়েছে। রাতের বেলায় যাতে কষ্ট করে রাঁধতে না হয় তাই রাতটাও বাইরের খাবার খেয়েছে দু’জন মিলে৷

ডিনার শেষে অফিসের খবরাখবর নিয়ে হৈমীর কাছে এলো রুদ্র। শতহোক পুরুষ মানুষ তো৷ গতরাতে যে সুখের ঠিকানা সে পেয়েছে সে সুখই তাকে তীব্র ভাবে আকর্ষণ করছিল। চৌম্বকের মতো টানছিল হৈমীর দিকে। আরো একবার তীব্র প্রণয়ের উত্তাল ঢেউয়ে যোগ দিতে মস্তিষ্কে আন্দোলন বেঁধে গেছে তার৷ শরীরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভূতিরা টগবগিয়ে ফুটতে শুরু করেছে৷ একবার সেগুলো দমন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে৷ অভিমানে স্তব্ধ হৈমীকে ছোঁয়ার চেষ্টা করল গভীর করে৷ কী জানি হঠাৎ কী বুঝে হৈমীও সায় দিল। দ্বিতীয় বারের মতো ঘনিষ্ঠ হতে উদ্যত হলো তার সঙ্গে। রুদ্র যখন উত্তপ্ত শ্বাস ফেলে উষ্ণ স্পর্শে তার দেহ কাঁপিয়ে তুলছিল৷ সেও সতর্কতার সঙ্গে তাকে সাড়া দিচ্ছিল৷ এক পর্যায়ে বলিষ্ঠ কাঁপা কাঁপা কাঁপা হাতটা তার পরিহিত বস্ত্র খুলতে উদ্যত হলো। পৃথিবীর আর কেউ রুদ্রকে এইরূপে হয়তো দেখেনি৷ হৈমী দেখেছে৷ রুদ্রর মতো কঠিন হৃদয়ের মানুষটারও হাত কাঁপে, গলা শুঁকিয়ে যায়। যা খুব গভীর হয়ে অনুভব করেছে শুধুই হৈমী। শুধু বুঝতে পারেনি মানুষটা ভেতরে ভেতরে তার কাছে কতটা দুর্বল। ঘন নিঃশ্বাস, বুকের ভিতর তীব্র উত্তেজনা একপাশে সরিয়ে পৈশাচিক ভাবে কিঞ্চিৎ হাসল হৈমী৷ সাহায্য করল স্বামীকে। পরনের লেডিস টি-শার্ট নিজে থেকেই খুলে দিল সে৷ রুদ্রর কী অতো কিছু খেয়াল করার বা হিসেব করার সময় তখন? সে প্রগাঢ় অনুভূতিতে ভেসে গিয়ে বউকে আদুরে স্পর্শে ভাসাতে চাইল কেবল৷ ছোট্ট নরম বক্ষ বিভাজনে উন্মত্ত ঠোঁটটা ডুবিয়ে দিল সন্তর্পণে। খুঁজে পেল ইহজন্মের সকল সুখ, সকল পূর্ণতা। গতরাতের সেই স্মরণীয় ক্ষণটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠল মুহুর্তেই৷ এক পলক তাকাল বদ্ধ চোখে, কম্পিত ঠোঁটে, বক্ষ তলে পড়ে থাকা হৈমীর পানে। রুমের ঝকঝকে বাতিটা নেভানো হয়নি। আজ আর ওঠে গিয়ে লাইট অফ করার তড় সইল না। ধীরেধীরে হাতটা নামিয়ে নিল উদর থেকে প্লাজুতে৷ অমনি খপ করে তার হাতটা চেপে ধরল হৈমী নিজের নমর হাত দ্বারা। চোখ খুলল বৈদ্যুতিক গতিতে। হাপড়ের মতো ওঠানামা করছে তার বুকটা৷ সেদিকে তাকাতেই রুদ্রর পৌরুষ চিত্ত দৃঢ় উন্মাদ হয়ে গেল৷ পুনরায় আবারো চেষ্টা করল পরিধেয় শেষ বস্ত্রটুকু খোলার৷ কিন্তু হৈমী হিংস্র বাঘিনীর মতো ওঠে বসার চেষ্টা করল৷ শক্তিতে কুলোচ্ছিল না বলে সহসা রুদ্রর বুকের পাটায় শক্ত করে কামড় বসাল৷ রুদ্র ব্যথায় আহ সূচক শব্দ করে সরে গেল, ছেড়ে দিল তাকে। গায়ের ওপর কম্বল টেনে নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়ে হৈমী মুখ খুলল,

-” একবার শর্ত ভেঙেছেন আপনি কিন্তু আমাকে ভাঙতে দেননি৷ তাই আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একবার যেই ভুল করেছি সেই ভুল দ্বিতীয় বার করব না। ”

রুদ্রর মন, মস্তিষ্ক জুড়ে ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটে যাওয়া অনুভূতি হলো৷ তার মুখের অবস্থা দেখে কম্বলের নিচে মুখ লুকিয়ে, ঠোঁট চেপে হাসল হৈমী। জোরে জোরে কতক্ষণ শ্বাস নিয়ে মাথা ঠান্ডা করল রুদ্র। আলগোছে কম্বল সরানোর চেষ্টা করল। ডাকল,

-” হৈমী, হৈমী। ”

কী নিরুপায় কণ্ঠস্বর। একমাত্র স্ত্রীর দ্বারাই বোধহয় সম্ভব স্বামীকে এভাবে চরম মাত্রার বেকায়দায় ফেলা। মনে মনে মায়াও হলো আবার আনন্দও পেল৷ মাথা তুলে দেখতে ইচ্ছে করল দা গ্রেট বেচারা রুদ্রকে৷ কিন্তু এখন মজা নেওয়ার সময় নয়। সময়টা খুবই সিরিয়াস। নিজেকে সংযত করল হৈমী। বলল,

-” আমি আপনার কোনো কথা শুনব না৷ এতে যদি আপনি জোর খাঁটিয়ে নিজের চাহিদা পূরণ করেন তাতে আমার সমস্যা নেই। শুধু সারাজীবন মনে রাখব আপনি শুধু খারাপ মানুষই না ভয়াবহ একজন ধ’র্ষ’কও! ”

-” হৈমী!!! ”

উচ্চরবে ধমকে ওঠল রুদ্র। কিঞ্চিৎ ভয় পেয়ে চুপসে গেল হৈমী৷ রুদ্রর কপালের রগ ফুলে ওঠল নিমিষেই। ক্রোধে হাত, পা কাঁপতে শুরু করল অবিরত। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে নিজের গালেই কষিয়ে এক থাপ্পড় বসাল৷ ফুঁসতে ফুঁসতে বিছানা থেকে নেমে চলে গেল রুমের বাইরে৷ দরজাটা তুমুল শব্দে লাগিয়ে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে সেখানেও এক লাত্থি বসাল। ড্রয়িং রুম থেকেও কয়েকটা জিনিস ভাঙচুর হওয়ার শব্দ পাওয়া গেল৷ ভয় হলেও নিজের জেদে অটুট থেকে এক সময় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল হৈমী৷

ড্রয়িংরুমের এক কোণে বসে সিগারেটের ধোঁয়ায় বুঁদ হয়ে পড়ে রইল রুদ্র। সারারাত নিদ্রাবিহীন কাটিয়ে দিল মানুষটা৷ দুটো চোখ রক্ত লাল। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ। যে মেয়েটাকে সে ভালোবেসে আপন করে নিতে চাইল। বউয়ের স্বীকৃতি দিল। নিজের লাইফস্টাইলে অভাবনীয় পরিবর্তন আনল। আজ সেই কিনা তাকে ধ’র্ষ’ক উপাধি দিচ্ছে? তার অধিকারকে ধ’র্ষণের সমতুল্য বলছে? ক্রোধে আবারো নিয়ন্ত্রণ হারাল সে। সহসা জ্বলন্ত সিগারেটটা চেপে ধরল বুকের মাঝখানে। দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বুঝে, জ্বলন্ত সিগারেট বুকে চেপে কাটিয়ে দিল পুরো রাত।

পৃথিবীতে এই মানুষ গুলো সবচেয়ে বেশি অসহায়। যারা নিজেকে, নিজের অনুভূতিকে বিশ্লেষণ করে বোঝাতে পারে না৷ ফলশ্রুতিতে তাদের বুকের ভিতর লালিত প্রগাঢ় অনুভূতি, সীমাহীন ভালোবাসা থেকে যায় আড়ালে আবডালে।
___________
রুমে এসে মাহের সূচনাকে জিজ্ঞেস করল,

-” জন্মদিন উপলক্ষে আপনার কী চাই সূচনা? ”

অকপটে জবাব সূচনার,

-” আমাদের সন্তানকে দ্রুত পৃথিবীতে আনতে চাই। খুব তাড়াতাড়ি আপনাকে বাবা ডাক শোনাতে চাই মাহের। আর আমি হতে চাই মা। দেবেন তো এই উপহারটা? আমার জীবনের সেরা উপহারটা কিন্তু দিতেই হবে আপনাকে। দেরি কিন্তু সহ্য হবে না। ”

বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল মাহের৷ অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলল,

-” এমন অসাধারণ উপহার কীভাবে চাইলেন আপনি? ”

মাহেরের চোখে চোখ রেখে লাজুক স্বরে সূচনা বলল,

-” অসাধারণ মানুষের কাছে সাধারণ কিছু চেয়ে আমি আর বোকামি করতে রাজি নই মাহের। ”

চলবে….
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

1 COMMENT

  1. ভালোই তো লাগতাছিলো,,,,,,, কিন্ত এতো দেরিতে দিলে কেমনে হ‌ইবো,,,,,,, তাও আবার এক পর্ব,,,,,, মন তো ভরলো না,,,,,, রেগুলার পর্ব চাই,,,,,,,, অন্তত ২টা করে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here