বেসামাল_প্রেম,১৪,১৫

0
2097

#বেসামাল_প্রেম,১৪,১৫
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৪

একমাস পর আপন শহরে ফিরল রুদ্র। পরিচিত শহরে প্রবেশ করতেই গহীন বুকটা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠল। ইচ্ছে হলো চেনা শহরে আপন রাস্তায় দীর্ঘসময় হাঁটতে, পরিচিত বাতাস গায়ে মেখে হা করে দীর্ঘক্ষণ শ্বাস নিতে, রাস্তার ধুলাবালি গায়ে মেখে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে টাঙ্গাইল শহর পুরোটাই ঘুরে বেরানোর তাগিদও অনুভব করল।জীবনের গোলকধাঁধায় পড়ে আজ এসব প্রয়োজনকে ঠিক কতটুকু মেটাতে পারবে জানা নেই। বুকচিরে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। মেইন শহরে প্রবেশ করার পর ড্রাইভারকে বলল গাড়ি থামাতে। ড্রাইভার গাড়ি থামালে সে একটি সিগারেট ধরালো। এরপর সেলফোন বের করে কল করল ঝিনুককে। দীর্ঘদিন পর রুদ্রর ফোন পেয়ে প্রচণ্ড উল্লসিত হয়ে ফোন রিসিভ করল ঝিনুক। বলল,
-” আরেহ এতদিন পর শিষ্যকে মনে পড়ল? তো বস কী অবস্থা, আমি পনিরকে নিয়ে এখন * রেষ্টুরেন্টের সামনে আছি। যোগাযোগ করতে নিষেধ করছেন বলে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করিনাই৷ ”

ডোর খুলে নেমে দাঁড়ালো রুদ্র। সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে ডোর লাগিয়ে অত্যন্ত গম্ভীর স্বরে ড্রাইভারকে বলল,
-” গাড়ি পার্কিং করে বাড়ি চলে যা। একদিনের ছুটি দিলাম৷ ”

ড্রাইভারকে কথাটা বলার পর গম্ভীরচিত্তে ঝিনুককে জিজ্ঞেস করল,
-” কার সঙ্গে রেষ্টুরেন্টে এসেছে? ”

-” কয়েকটা মেয়ে বান্ধবী, নয়নও আছে। ”

-” তোকে দেখেছে? ”

-” না আমি দূরে আছি মাস্ক পরা। ”

-” বাইক আছে সাথে? ”

-” হু। ”

-” পনিরকে পুরান বাসস্ট্যান্ড পাঠিয়ে দে, আর তুই ওদের নজর রাখ। ”
___
রুদ্রকে নিয়ে পনির যখন রেষ্টুরেন্টের সামনে এলো। ঝিনুক বসা থেকে লাফিয়ে ওঠল। রসগোল্লার মতো
গোল গোল চোখ করে কয়েক পল তাকিয়ে আপাদমস্তক রুদ্রকে দেখতে লাগল। লম্বা, চওড়া, সুঠাম দেহখানার নতুন বেশভূষা দেখে ওষ্ঠজোড়া আপনাআপনিই ফাঁক হয়ে গেল তার। অগোছালো, রুক্ষ, শুষ্ক রুদ্রর বেশভূষায় আজ যে কী নিদারুণ যত্নের ছাপ! মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুলগুলো কী সুন্দর পরিপাটি করে আঁচড়ে পিছন দিকে ঝুঁটি করে রেখেছে। রাশভারি মুখের চোয়ালজোড়ায় ছোটো ছোটো দাঁড়িগুলোর রাজত্বের পেছনেও রুদ্রর যত্ন রয়েছে। তা স্পষ্ট। ঘন ঘন চোখের পলক ফেলল ঝিনুক৷ আরো একবার রুদ্রকে আপাদমস্তক দেখল, একি তার পরনে আজ কাবলি নেই রয়েছে খাদি পাঞ্জাবি। ছাইরঙা পাঞ্জাবির ওপরে তুর্কি কটি পরা, চেহেরার গাম্ভীর্যতায় যে কেউ ধরে নেবে বড়োসড় একজন রাজনৈতিক নেতা সে৷ ঝিনুক মৃদু চিৎকার দিয়ে বলল,
-” আরে আরে বস তো ঝাক্কাস বেশে আসছে। পুরাই নায়কসাব। ”

পনির দাঁত ক্যালিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
-” নেতা নেতা ভাব আইসা গেছে। এইবার জম্পেশ নেতাগিরি করতে পারমু আমরা। ”

রুদ্র চোখ গরম করে তাকাল। নেতাগিরি তার রক্তে থাকলেও এসবে বিন্দু আগ্রহ তার নেই। অনেক বড়ো একটি উদ্দেশ্য সফল হতে যাচ্ছে তার। আশি ভাগ হয়ে গেছে আর বিশ ভাগ হলেই নিজের জীবনের গল্প নিজেই তৈরি করবে, পাল্টে দেবে তার অভিশপ্ত ভবিতব্যকে। রুদ্রর চোখ গরম দেখে পনির থেমে গেল। ঝিনুক তৎপর হয়ে ইশারা করল রেষ্টুরেন্টের ভিতরে। রুদ্র গাম্ভীর্যতা বজায় রেখেই বলল,
-” পনির বাইরের থাক, ঝিনুক আয় আমার সঙ্গে। ”

পছন্দের মেনু অর্ডার করে গল্প এবং সেলফি তোলায় মশগুল ছিল হৈমী। রুদ্র রেষ্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম হৈমীদের টেবিলেই তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিজোড়া নিক্ষেপ করল। কয়েক পল তাকিয়ে রইল স্থির চোখে। ঝিনুক বাম পাশের একটি টেবিল ইশারা করে বলল,
-” এই টেবিল ফাঁকা আছে বস, এখানে আসুন। ”

ছোট্ট শ্বাস ছাড়ল রুদ্র। ঝিনুকের দেখানো টেবিলের সামনে গিয়ে চেয়ার টেনে অতিসন্তর্পণে বসেও পড়ল। তার আয়েশি ভঙ্গিতে পায়ের ওপর পা তুলে বসা এবং শান্ত, গভীর দৃষ্টিজোড়া নির্দিষ্ট একটি মানুষকে দেখতে থাকার বিষয়টি ছিল ঠিক চোখ ধাঁধানো, মনমাতানো৷ তাই তো ডানপাশের টেবিলে বসে থাকা কাপলদের মধ্য থেকে সুন্দরী রমণীটি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল রুদ্রর পানে। রমণীর বয়ফ্রেন্ড তার বাহুতে গুঁতো দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” কী হ্যাংলামো আমার দিকে তাকাও!”
..
খাওয়া, দাওয়ার পালা শেষ করে বান্ধবীদের সঙ্গে ওঠে দাঁড়ালো হৈমী। ধীরপায়ে এগুতে এগুতে বান্ধবীদের বলল,
-” তোরা তো সব একদিকে যাবি। আমার আবার ভাবিদের বাড়ি যেতে হবে। ক’দিন থাকতেও হবে ওখানে। ভাবি এত জোর করল না গেলে আবার রাগ করবে। জানিস ভাইয়া কক্সবাজার গেছে। তার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র স্যাররা জোর করে নিয়ে গেছে৷ অথচ বিয়ের পর ভাইয়া হানিমুনেই যায়নি। ভাবির মন খারাপ হয় না বল? মন খারাপ করেই বাপের বাড়ি চলে গেছে। ভাইয়া বলে গেছে আমি যদি ওখানে গিয়ে থাকি তাহলে ভাবির কম মন খারাপ হবে৷ কারণ আমি তো হরেকরকমের কথা বলে বলে মানুষকে হাসিয়ে দিতে পারি। ”

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো শেষ করে রুদ্রকে পাশ কাটিয়ে এক পা বাড়িয়েও আবার পিছন দিকে ফেরত এলো৷ নয়ন আকস্মাৎ তার বাহু খামচে ধরে ফিসফিস করে বলল,
-” এই রুদ্র ভাই! ”

হৈমী সহ বাকি বান্ধবীরাও থতমত খেয়ে গেল। কারণ এরা সবাই রুদ্রকে চেনে। পাশাপাশি হৈমীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনাই জানে। হৈমীর অবস্থা তো নাজেহাল হয়ে গেল৷ একদিকে ভয়ে ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরাতে লাগল, অপর দিকে চোখজোড়া আশ্চর্যান্বিত হয়ে আগাগোড়া রুদ্রকে দেখল। একটু কী ক্রাশ খেলো? উহুম আপাতত বোঝা গেল না৷ রুদ্রও ক্ষণকাল হৈমী সহ বান্ধবীদের থমকানো রূপ দেখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। প্রচণ্ড গম্ভীর হয়ে মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল সে৷ তার অপজিটে বসা ঝিনুক বোকার মতো হাসছে তাও হৈমীদের দিকে তাকিয়ে। হৈমী কী করবে কিচ্ছু ভেবে না পেয়ে জোর পূর্বক মুখে হাসি টেনে আনল। আত্মীয়তার সম্পর্ককে স্মরণ করে, ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করল,
-” বেয়াই মশায় আপনি এখানে? কেমন আছেন? ”

এক পলক তাকিয়ে পুনরায় ফোনে দৃষ্টি রাখল রুদ্র। অপমানে মুখ থমথমে হয়ে গেল হৈমীর। ঝিনুক বলল,
-” ভাবি বস একটু আগেই ঢাকা থেকে ফিরেছে। টায়ার্ড তো তাই কথা বলতে পারছে না। ”

চোখ কটমট করে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে হৈমী বলল,
-” এমনভাবে বলছেন মনে হয় সূদুর আমেরিকা থেকে আপনার বস ফিরেছে? আর ভাবি, কে ভাবি? আপনার কোন গুষ্টির ভাইয়ের বউ আমি হু? ”

ক্রোধান্বিত হয়ে ঝিনুককে কথাগুলো বলাতে রুদ্র চোখ গরম করে একবার তাকাল হৈমীর দিকে। ব্যস নিমিষেই বান্ধবী সহ নিজেকে লোপাট করে ফেলল হৈমী।

রেষ্টুরেন্ট থেকে বেরোনোর পর সকলে দম ছাড়ল। নয়ন বাদে প্রত্যেকেই একডাকে ছিঃ ছিঃ করে ওঠল,
-” ছিঃ ছিঃ কী অপমান! এমন আত্মীয় শত্রুপক্ষেরও না হোক। ইস হৈমী, কী অপমান হলিরে। থাক মন খারাপ করিস না৷ এরপর আর আগ বাড়িয়ে ঐ লোকের সাথে কথা বলতেও যাস না। ”

তীব্র অপমানে ফুলেফেঁপে উঠা বুক নিয়ে শেখ বাড়িতে পা রাখল হৈমী। শুনেছিল রুদ্র ঢাকাতে তাই ক’দিন থাকতে এসেছিল এ বাড়িতে৷ কিন্তু রুদ্র তো ফিরে এলো, বাড়িতেও নিশ্চয়ই আসবে? নাহ তার আর এ বাড়ি তে ক’দিন থাকা হবে না৷ ভাবির সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করেই বরং চলে যাবে। নানারকম চিন্তার মাঝে একটি চিন্তা একটু বেশিই গাঢ় হলো। সেটি হচ্ছে, রুদ্র কেন তার থেকে ওভাবে মুখ ফিরিয়ে নিল? মুখ ফিরিয়ে তো তার নেয়ার কথা ছিল। অথচ মুখ ফিরিয়ে নিল ঐ ব্যাটা খাটাশ দ্যা গ্রেট গুন্ডা রুদ্র! এই অবিচার কীভাবে সইবে সে?
____
সূচনার মন খুব একটা ভালো নেই। সেদিন রাতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিল টের পায়নি৷ সকালে ওঠতে দেরি হওয়াতে মাহেরের সঙ্গেও দেখা হয়নি। মাহের নিজ হাতে সেদিন সকালের খাবার তৈরি করে খেয়ে ভার্সিটিতে গেছে। ঘুম ভাঙার পর মাহেরের ম্যাসেজ পেয়েছিল লিখা ছিল,
-” খাবার রেডি আছে ওঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিন। আজ দ্রুত ফিরব আমি। ”

সূচনা কথা রাখেনি। মাহেরের তৈরি করা খাবার খায়নি৷ কারণ তার মনে কী চলছে, কী আছে কোনকিছুই আঁচ করতে পারেনি সে৷ অদৃশ্য এক অপরাধবোধে সকালেই বাবার বাড়িতে চলে এসেছে। বাড়ি ফিরে মাহের তাকে পায়নি। ফোন করে যখন জানতে পারলো সে বাবার বাসায় রাগও করেনি। বরং সূচনা যেভাবে, যেখানে থেকে কমফোর্ট ফিল করে সেখানে থাকলেই সে স্বস্তি বোধ করবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু সূচনার এই চলে যাওয়াটা তার মা বোন অন্যভাবে নিতে পারে। ভাবতে পারে নতুন বউ হুটহাট কেন বাপের বাড়ি চলে যায়? তার কী স্বামী, সংসারে মন নেই? এরূপ ভাবনা যেন মা বোনের মাঝে না আসে তাই তাদের বলা হলো, কদিন পর সে কক্সবাজার যাবে ঘুরতে৷ সূচনাকে নিয়ে যেতে পারবে না। তাই তার মন কিছুটা খারাপ। সে মন খারাপ ভালো করার জন্যই মাহের নিজে তাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়েছে। কক্সবাজার যাওয়ার আগে সূচনার সঙ্গে দেখা করেও গেছে। বলে গেছে ফিরে এসে তাকে সারপ্রাইজ দেবে৷ কিন্তু সে সারপ্রাইজ কী? ভেবে পায়নি সূচনা।

হৈমীর আগমনে সূচনা খুশিই হলো। কিন্তু যখন হৈমী জানালো বিকালের দিকে চলে যাবে মন খারাপ করে ফেলল। তার মন খারাপ দেখে হৈমীর মনও কেমন কেমন হয়ে গেল। সূচনা নম্র ভাবে জোরাজোরি করল। শাশুড়িকে ফোন করে জানালো হৈমীর চলে যাওয়ার খবর। খবর শুনে রেগে গেলেন হামিদা৷ হৈমীর সঙ্গে কথা বলে বকাঝকা করলেন অনেকক্ষণ। শেষে থাকতে বাধ্য হলো হৈমী। তবে মনের ভিতর রুদ্র নামক উইপোকা খুচুরখুচুর করতেই থাকল।

হৈমী এই খুচুরখুচুর পেটের ভিতর বা মনের ভিতর কোথাওই চেপে রাখতে পারলো না। সূচনাকে বলেই ফেলল তার চলে যাবার কারণ। ইতিপূর্বে রুদ্র হৈমীর সঙ্গে ঠিক কী ঘটনা ঘটিয়েছে সে বিষয়ে সঠিকভাবে অবগত নয় সূচনা। তবুও তার রগচটা ভাইটার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থেকেই অনেক কিছু ধরে নিল। যার ফলে হৈমীর এই ভয় টুকুতে অবাক হলো না। বরং তার ভয় দূর করতে রুদ্র সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা বদলাতে বলল,
-” তুমি ভয় পেয়ো না হৈমী। ভাইয়া তোমাকে আর কিছুই বলবে না৷ ”

চট করে হৈমী জিজ্ঞেস করল,
-” কে বলল উনি বলেছেন? ”

সূচনা তাকে আশ্বস্ত করে সেদিনের সেই ঘটনাটি বলল। সবটা শুনে হৈমীর বুকের ভিতর উত্তেজনায় উলোটপালোট ধরল। বিস্মিত হয়ে বলল,
-” উনি আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে গিয়েছিল! ”

সূচনা মন খারাপ করে বলল,
-” হ্যাঁ তোমার ভাইয়া আর মা সে প্রপোজাল ফিরিয়ে দিয়েছে। এরপরই তো ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হলো। তারপর মাহের যখন এ বাড়িতে এলো ভাইয়াকে অনেক কিছু বুঝিয়েছে। সেদিন থেকেই তো কেমন পালটে গেল ভাইয়া। আজ ঢাকা থেকে এসেছে, বাড়িতেও আসবে। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, বিশ্বাস রাখো ও তোমাকে কিছুই বলবে না। কথা বলবে কিনা সেটাও সন্দেহ। আমার ভাইটা অন্যরকম হৈমী। ঝোঁকের মাথায় হয়তো ভুলভাল কাজ করেছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু একবার যখন ওর মধ্যে বোঝ এসেছে। তখন ওকে ওর ঝোঁক বা আবেগ কোনোটাই টলাতে পারবে না। ”

চোখ পিটপিট করে অবাক সুরে হৈমী বলল,
-” আসলেই! ”

সূচনা মৃদু হাসলো, মাথা দুলিয়ে বলল,
-” হ্যাঁ গো তুমি জানো ঢাকা গিয়ে আমাদের থেমে যাওয়া একটি ব্যবসার দায়িত্ব ভাইয়া নিয়েছে।করোনার জন্য উঠতি ঐ শাড়ির কারখানার কাজটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই কাজটা এবার ভাইয়া নিজে ধরেছে। লাইসেন্স হয়ে গেলেই সামন বছর থেকে পুরোদমে চলবে এই কারখানা। ”

রুদ্রকে নিয়ে আরো অনেক গল্পই করল সূচনা। হৈমী সেসব মন দিয়ে শুনলো। সবশেষে সে বুঝতে পারলো তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার কারণটিকেও। বিরবির করে আওড়ালো,
-” তার মানে অতিরিক্ত আবেগের জন্যই উনি আমার সাথে ওসব করেছিল। ছিঃ যেমন মানুষ তার তেমন আবেগ। ”

একসাথে ডিনার করবে বলে অপেক্ষা করছিল সূচনা। তাই ন’টার দিকেই বাড়ি ফিরল রুদ্র। কাজের মেয়েটা সূচনাকে রান্নায় হেল্প করে ডাইনিং টেবিলে সবটা গুছিয়েও দিল। দাদিন বেড়াতে গেছেন ছোটো ছেলের বাসায়৷ তাই বাড়ির পরিবেশ তেমন রমরমা নয়৷ যদিও হৈমী আসার পর কিছুটা প্রাণ এসেছে। রুদ্র খেতে আসার পর সূচনার খেয়াল হলো হৈমীকে ডাকা হয়নি৷ সে রুমে পড়ছে। তাই কাজের মেয়েটাকে বলল হৈমীকে ডেকে আনতে। হৈমীকে যখন বলা হলো ডিনার রেডি নিচে যেতে বলা হয়েছে। খিদের তাড়নায় বই, কলম বিছানায় ছুঁড়ে স্লিপার পায়ে দ্রুত নিচে নেমে এলো। ড্রয়িং রুম পেরিয়ে ডায়নিং রুমে প্রবেশ করেই বড়ো ধরনের ঝটকা খেল। সুগঠিত, পেশিবহুল শরীরে নেভী ব্লু রঙের টি-শার্ট পরিহিত রুদ্র ডায়নিং টেবিলের পূর্বপাশে দেখতেই আহত হলো তার দৃষ্টিজোড়া। নিমিষেই চোখ নামিয়ে নিজের দিকে তাকাল। হালকা গোলাপি রঙের লেডিস টি- শার্ট পরিহিত নিজের ছোট্ট কিশোরী দেহখানি দেখে লজ্জায় দু’কান কাটা গেল! ত্বরিতগতিতে পিছমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে ছুটে গেল দোতলার সূচনার ঘরটায়। ধাতুপাত করে একটি ওড়না গলায় এবং বুকে জড়িয়ে আবারও ডায়নিংয়ে চলে এলো। সূচনা ঈষৎ হেসে বলল,
-” এসো। ”

রুদ্র নির্বিকার ভঙ্গিতে খাবার খাচ্ছে। অথচ কিছুক্ষণ পূর্বে হৈমীর দিকে কেমন করে তাকিয়েছিল। একবার তাকিয়ে অবশ্য চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তার ঐ চাহনিকে অনুসরণ করেই তো হৈমীর খেয়াল হয়েছে, সে একজন যুবক পুরুষের সামনে ওড়না ব্যতীত এসে বিরাট বড়ো ভুল করেছে!

প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়ে হড়বড় করে খাবার খেল হৈমী। এরই মধ্যে দু’বার খাবার গলায় আঁটকে কাশি ওঠেছে৷ তার এহেন অবস্থা দেখে বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে একবার পানি এগিয়ে দিয়েছে রুদ্র। এ দৃশ্য দেখে সূচনা গোপনে একটুখানি হেসেছেও। খাওয়া-দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে সূচনা কিছু খাবার ফ্রিজে রাখতে ওঠল। রুদ্র খাওয়া শেষ করে চলে যেতে উদ্যত হয়েছে এমন সময় আকস্মাৎ হৈমী ঠাস করে মেঝেতে আছাড় খেয়ে পড়ে গেল! ঘটনাটি বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল সূচনা এবং রুদ্রর। সূচনা ছুটে এসে ধরল হৈমীকে। রুদ্র থমকানো দৃষ্টিতে একবার হৈমীকে দেখে নিল। এরপর এগিয়ে গিয়ে চেয়ারের পায়া থেকে হৈমীর ওড়না বের করে আনল। বিরক্ত মুখে চোখ লাল করে তাকাল হৈমীর দিকে। কিন্তু বলল সূচনাকে,
-” হোয়াট ইজ হার প্রবলেম? জাস্ট ডেম ইট! ”

ওড়নাটা হৈমীর দিকে ছুঁড়ে হনহনিয়ে চলে গেল রুদ্র। ঠোঁট ফুলিয়ে হৈমী বলল,
-” উনি ব্যবসার জন্য ঢাকা গিয়েছিল নাকি একঝাঁক ইংরেজি শিখতে গিয়েছিল? আছাড় খেয়েছি বেশ করেছি তাতে উনার কোন পাকা ধানে মই পড়েছে। যেই না ঢংয়ের ছিঁড়ি! ”

বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল রুদ্র। হৈমীর কথাগুলো শুনে গভীর দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রহস্যময় এক হাসি দিল। বিরবির করে আওড়ালো,
-” মিস ডার্লিং নাও ইউ উইল স্টেপ ইন্টু অ্যা ট্রেপ! ”

চলব…

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১৫
আপনাদের জীবনে কি মন ভালো করার মতোন মেডিসিন আছে? যার জীবনে মন ভালো করার মেডিসিন আছে তার জীবনটা কিন্তু সত্যি ভীষণ সুন্দর এবং রঙিন হয়৷ হৈমীর জীবনে মন ভালো করার মতো মেডিসিন আছে, তার নাম টিশা৷ এই টিশা কিন্তু শুধু হৈমীর জীবনেরই মেডিসিন নয় এই টিশা আরো অনেকের জীবনেরই মন ভালো করার মেডিসিন। তবে এই মেডিসিনটাকে একান্তই নিজের করে পেয়েছে শুধুমাত্র রউফ। টিশার স্বামী, হৈমীর দুলাভাই। সে যাইহোক আজ যে হৈমীর ভীষণ মন খারাপের দিন। এই মন খারাপটা অবশ্য গত দু’দিন থেকেই হচ্ছে। যার ফলে সে পড়াতে মন বসাতে পারছে না, কলেজে যেতেও মন সায় দিচ্ছে না। আর না সূচনার সঙ্গে মন থেকে হাসিখুশি হয়ে মিশতে পারছে৷ তার এই মন খারাপের রহস্যটা কি জানেন? মি. রুদ্র শেখ। তার ভাবির ভাই, তার বেয়াইসাহেব। আজ দিয়ে শেখ বাড়িতে তিন দিন হলো তার। সেই যে প্রথম দিন আছাড় খাওয়ার পর রুদ্রসাহেব তার দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে গেল, এরপর আর সামনে আসেনি। মূলত সমস্যাটা শুরু হলো এখান থেকেই। মেয়েরা ছেলেদের এটিটিউড দেখাতে যতটা পছন্দ করে। ঠিক ততটাই অপছন্দ করে ছেলেদের এটিটিউড দেখতে। আর হৈমী সে তো বরাবরই অ্যাটেশন সিকার। যে লোকটা ক’দিন এত পাগলামি করল তার জন্য কী সব বিশ্রী আচরণ সে কিনা হুট করে এত এভয়েড করছে তাকে! লোকটা একটু বেশিই অহংকারী হয়ে গেল না? তার মতো মেয়েকে পাত্তা টাত্তা দিতে একেবারেই যে ভুলে গেল। এটা কী ঠিক? সেই যে প্রথম দেখার পর থেকে কী সব ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল! এরপর তুলে নিয়ে বিয়ে করার মতলবও আঁটলো। কত কাণ্ডই তো ঘটালো। একটা এক্সিডেন্ট, এরপর বিয়ের প্রপোজাল থেকে রিজেক্ট, সবে মিলে লোকটা মারাত্মক এটিটিউডের ভাণ্ডার খুলে বসল। সহ্য হয় এসব? একেবারেই হয় না। মনটা আজ ভীষণ খারাপ, ভয়াবহ রকমের খারাপ। সেই মন খারাপ নিয়েই কানে ইয়ারফোন গুঁজে স্যাড সং শুনতে শুনতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল। সূচনা তখন রুমের ঝুলবারান্দায় মাহেরের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল। তাই হৈমী রুম ছেড়ে বেরিয়ে দোতলার বারান্দার একপাশে যে বেতের চেয়ার টেবিল রয়েছে সেখানে গিয়ে আরাম করে বসল৷ গান শুনায় এতই বিভোর ছিল যে নিচে তাকাতে সময় নিল ঘন্টাখানেক। ঘন্টাখানেক পর যখন আকস্মাৎ নিচের দিকে নজর পড়ল। বুকের অতি গোপন কুটিরে কেমন করে যেন ধক করে ওঠল! একি রুদ্র যে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে কফি খাচ্ছে! কাঁপা হাতে দ্রুত গান অফ করে বারকয়েক ঢোক গিলল হৈমী। নিজেকে কিছুটা আড়াল করে পিটপিট চোখে তাকিয়ে দেখতে লাগল রুদ্রর ভাবগতিক । এরপর লম্বা করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। ওঠে দাঁড়য়ে মোবাইলটা পরিহিত লেডিস শার্টের পকেটে রেখে ধীরপায়ে বারান্দায় পায়চারি করল কতক্ষণ। বিরবির করে বলল,
-” একটু বেশিই ঢং দেখাচ্ছে মনে হচ্ছে, তিনি কি হোম মিনিস্টার! বয়সে বড়ো বলে সহ্য করছি নয়তো এক থাপ্পড়ে দাঁত ফেলে দিতাম, বেয়াদব। বাড়িতে আত্মীয় এলে যে মিলেমিশে থাকতে হয় সই শিক্ষাই নেই! ”

মনে ভিতর রাগটা ক্রমাগতই বাড়তে লাগল। ইচ্ছে করল নিচে গিয়ে লোকটার মাথা ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু এসব তো করা যাবে না৷ পাছে কেস টেস ঠুকে দেয়? নিজেকে সামলানোও কঠিন হয়ে পড়ল। শেষ পর্যন্ত সলিউশন খুঁজতে ফোন করল টিশাকে। টিশা ফোন রিসিভ করেই বলল,
-” কিরে এখন ফোন দিলি ঘুমাসনি? আমি মিষ্টি খাচ্ছি দুটো খেয়েছি, আর একটা খাব। এর বেশি খাব না। ওজন বেড়ে গেছেরে বিয়ের সময় ছিলাম পয়তাল্লিশ এখন ঊনষাট। বাবুর ওজন আড়াই কেজি৷ এই জানিস আজকাল পেটটা নিচের দিকে কেমন ভারি ভারি লাগে। বাবু এত নড়াচড়া করে। আমার কি মনে হয় জানিস দীর্ঘদিন এক জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে থাকতে ওর ভীষণ বিরক্ত লাগছে।”

-” তা তো লাগবেই তুই এক সেকেণ্ড কোথাও বসে থাকতে পারিস না আর তো ছানাটা কত মাস এক জায়গায় পড়ে আছে ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক! এবার আসল কথা শোন, আজ আমার খুব মন খারাপ। ”

-” সেকি! মন খারাপ কেন রে? তোর বেয়াই তো আর এখন তোকে চুম্মা টুম্মা দেয় না৷ তাহলে মন খারাপ কেন? ”

-” আর বলিস না দুঃখের কথা বেয়াই যে গিরগিটির মত রঙ বদলাইছে তা তো বলিইনি। ”

হৈমী টিশাকে পুরো কাহিনী খুলে বলার পর টিশা খুব সিরিয়াস হয়ে বলল,
-” সবই বুঝলাম, তোর সমস্যাটাও বুঝলাম। ”

-” আমার সমস্যা, আমার আবার কী সমস্যা। আমার কোনো সমস্যা নেই। শুধু রাগ লাগছে যে এই লোকটা এসব করে আমাকে অপমানও করছে। ”

-” শোন তুই যে প্রেমে টেমে পড়ে গেছিস টের পেয়েছিস। অবশ্য না পাওয়ারই কথা তোর তো অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু এই টিশার আছে। শোন, চারটা প্রেম করে একটা বিয়ে করেছি। পেটে বাচ্চা নিয়ে সারাদিন টইটই করে ঘুরে বেড়াই, পকপক করে কথা বলি, ক’দিন পর আম্মা ডাক শুনব, তোকে খালা ডাক শুনাবো, জামাইকে আব্বা ডাকের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। এই টিশার বয়স যাইহোক অভিজ্ঞতা কিন্তু কম নেই। ”

-” তুই কী বোঝাতে চাচ্ছিস দেশে, বিদেশে শতশত হিরো টাইপ ছেলে রেখে আমি বাংলাদেশের ডিপজল, মিশা, ইন্ডিয়ান ভিলেন, চুল ঝুঁটি করা পাগলা বাবা টাইপ ছেলের প্রেমে পড়ব! যে কিনা আবেগের তাড়নায় একা পেয়ে অর্ধেক বাসর সেরে ফেলে ছিঃ ছিঃ বইন। আমার রুচি সম্পর্কে তোর এমন ধারণা। লজ্জিত হলাম ভীষণ লজ্জিত। ”

-” তোর লজ্জা ধুয়ে তুই পানি খা। আমার মুখ থেকে সত্যি ছাড়া মিথ্যা বের হয় না। তা তুই খুব ভালো করেই জানিস। আর প্রেম টেমের ব্যাপারে আমি যে পিএইচডি করা এতেও সন্দেহ নেই। আমার রগচটা জামাই যে কিনা দু-চোখে আমাকে সহ্য করতে পারতো না, বিয়ে করল মায়ের চাপে পড়ে, সে জামাইকে বশে এনেছি শুধু প্রেম, ভালোবাসা দিয়ে। এমন বশ করেছি যে এখন দিন রাত প্রেমে হাবুডুবু খেতে খেতে অস্থির সে। ”

একদমে কথাগুলো বলে ঢোক গিলল টিশা। এরপর হৈমীকে কিছু বলতে না দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-” রুদ্র বেয়াই এখন কী করছে রে? তখন বললি ঢং ধরে কফি খাচ্ছে, শেষ হয়নি? ”

দম ছাড়ল হৈমী। রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আহত সুরে বলল,
-” এখন কী করছে জানিস? ”

-” কী? ”

-” উনার ডান পা টি টেবিলের ওপর রাখা, সে ডান পায়ের ওপর আবার বাম পা তুলে রাখছে। ঘাড়টা সোফার মাথায় এলিয়ে চরম শান্তিতে সিগারেট খাচ্ছে। ভাবটা এমন যে সিগারেট না অমৃত খাচ্ছে। ”

-” আহা কতদিন সিগারেটের গন্ধ নেয়া হয় না। তোর দুলাভাই বাবু আসার পর থেকে সিগারেট বাদ দিছেরে। সিগারেট টা আমার জোশ লাগতো। ও যখন সিগারেট খেতো আমি কত তৃপ্তি নিয়ে শুঁকতাম। যাক সে কথা তোর এখন কেমন ফিলিংস হচ্ছে রে? একটা গান ভাইরাল হয়েছে শুনেছিস?
ছেলে তোর গোলাপ গোলাপ ঠোঁটে
যখন বিড়ির ধোয়া উঠে
সেই ধোয়া দেখিতে বড়ই ভাল্লাগে। ”

নিজে বলে নিজেই খিলখিল করে হেসে ওঠল। অথচ আজ টিশা মন ভালো করতে পারলো না হৈমীর। নিজের ব্যর্থতা টের পেয়ে টিশার জেদ হলো খুব। কেন হৈমীর মন ভালো হলো না? তার স্বামী যে বলে তার কাছে মন ভালো করার মতো জাদু আছে সেসব কথা কি মিথ্যা? উহুম তার স্বামী মিথ্যা বলতেই পারে না। যদি বলেও থাকে তাহলে সে মিথ্যাকে সত্যি করার ক্ষমতা তার আছে। তাই প্রচণ্ড সিরিয়াস হয়ে হৈমীকে বলল,
-” আমি তোকে একটা কাজ দিব পারবি? ”

-” মন ভালো হওয়ার মতো কাজ? ”

-” ইয়েস সিস্টার। ”

-” তাহলে পারব। ”

-” ভয় পাবি না তো? ”

-” তুই কি আমাকে ভীতু টাইপ মেয়ে ভাবতে শুরু করলি নাকি? ”

ঠোঁট টিপে হেসে টিশা বলল,
-” শোন রুদ্র ভাই সিগারেট খাচ্ছে তুই এখন নিচে যাবি গিয়ে ইউটিউবে ঢুকবি, এরপর ভাইরাল গানটা প্লে করে টি টেবিলের সামনে রেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবি৷ রুদ্র ভাই যে ধরনের মানুষ নিশ্চয়ই বিরক্ত হবে, রেগে যাবে? চোখ গরম করে গাল দু’টো শক্ত করে তাকাবে? তুই তখন ফুড়ুৎ করে ফোনটা নিয়ে সূচনা ভাবির রুমে চলে আসবি। একেবারে সেভ এন্ড চিল। কী পারবি তো? ”

ভীষণ উত্তেজিত হয়ে মুখে হাত চেপে হেসে ওঠল হৈমী। বলল,
-” পারব না মানে? উনাকে একটু জ্বালাতেই তো মন আনচান করছে। ”

ফোন কেটে দিল টিশা। মনে মনে বলল,
-” তুমি যে মনে মনে তার সামনে যেতে চাচ্ছো , তার কাছাকাছি থাকতে চাচ্ছো তা কী আর আমি বুঝিনা চান্দু? আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে খুব শিঘ্রই তোমাদের মাখামাখি প্রেম হবে। যাই বাবা আমার জামাইটার বোধ হয় পড়া শেষ এবার ঘরে যাই। ”
____
টিশার আদেশ মতো হৈমী যখন গানটা প্লে করল।
“ছেলে তোর গোলাপ গোলাপ ঠোঁটে
যখন বিড়ির ধোয়া উঠে
সেই ধোয়া দেখিতে বড়ই ভাল্লাগে। ”

লিরিক শুনে রুদ্র সত্যি সত্যি বিরক্তিতে চোখ, মুখ কুঁচকে হৈমীর দিকে তাকাল। হৈমীর কেন জানি সাহস হলো না সামনে থাকতে। তাই চটপটে পায়ে চলে গেল রান্না ঘরে গিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে পুনরায় ফেরত এলো। রুদ্র সিগারেট শেষ করে হৈমীর ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে হৈমীর দিকে তাকাল। বলল,
-” প্রপোজ করছো? ইউ নো হোয়াট সেধে দেয়া জিনিস আমি নিই না। ”

দু’ঠোঁট ফাঁক হয়ে গেল হৈমীর৷ সহসা তর্জনী উঁচিয়ে বলল,
-” আমি আপনাকে প্রপোজ করতে আসব আমি? প্রপোজ করার মতো কী আছে আপনার? আমি এসেছিলাম জাস্ট আপনাকে জ্বালিয়ে নিজের মনকে শান্ত করতে। ”

নিঃশব্দে ওঠে দাঁড়াল রুদ্র। ব্ল্যাক ট্রাউজার, ব্ল্যাক টি-শার্ট পরিহিত পেশিবহুল, সুঠাম দেহটি আজকে ভীষণ অভিলাষ পূর্ণ লাগছে। যেই অভিলাষী দৃশ্য হৈমীর অন্তঃকোণ শুঁকিয়ে চৈত্রের খরা সৃষ্টি করল। সেই খরায় এক ফোঁটা বৃষ্টির আশায় মাত্র একটিবার ঢোক গিলল সে। কেঁপে ওঠল দু’পায়ের পাতা, উঁচিয়ে রাখা তর্জনী। রুদ্র সন্তর্পণে হাত বাড়িয়ে সে তর্জনী নিজের মুঠোয় করে নিল। দু-চোখ শক্ত করে বুজে ঠোঁট কাঁপিয়ে হৈমী বলল,
-” আমি কিছু বলিনি, আমি কিছু করিনি। ”

প্রগাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বক্র হাসিতে ঠোঁটজোড়া চঞ্চল হলো রুদ্রর। মাথা নিচু করে হৈমীর গোলগাল ছোট্ট মুখের সম্মুখে ঠোঁটজোড়া নিয়ে সিগারেটের গন্ধযুক্ত উত্তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ল। নিমিষেই হৈমীর বক্ষঃস্থলের ওঠানামা বেগতিক ভাবে বেড়ে গেল। শক্ত কাঠের ন্যায় চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইল সে। রুদ্র তার বেসামাল চিত্তকে আরো বেশি বেসামাল করে দিতে পুনরায় উত্তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
-” আমাকে জ্বালাতে এলে নিজেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সুইটহার্ট! ”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here