বেয়াইনসাব?,পর্বঃ০৩
Arshi Ayat
সারদিন অস্থিরতায় কেটেছে আহানের শুধু মাইশা কি বলবে এটা ভেবেই!বাইরে থেকে আসার পর থেকে এই পর্যন্ত শান্তিতে কিচ্ছু করতে পারছে না।খালি ভয় লাগছে।সিগারেট একটার পর একটা শেষ করছে।আর বার বার মনে মনে বলছে’আহান ইয়ার থিংক বি পজিটিভ।’
আর এদিকে জ্বর কমলেও আহানের কথাগুলো নিয়ে বেশ চিন্তিত মাইশা।কি বলবে আহান কে?সরাসরি কি না করে দিবে?হ্যাঁ এটাই তো উচিত।এছাড়া আর কোনো অপশনও নাই।এর মধ্যে আহানকে আশা দেওয়া মানে ওকে ধোকা দেওয়া।
.
.
বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর মাইশা সিদ্ধান্ত নিলো আহানকে না বলে দিবো।
—————-
মাইশা আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করে নিলো।চুল ঠিক করার পর একনজরে নিজেকে একবার দেখলো।লাল পাড়ের কালো শাড়িতে বেশ সুন্দর লাগছে মাইশাকে।সাথে গাড়ো করে টানা কাজল তো আছেই।
মাইশা বেরুতেই দেখলো আহানরা চলে এসেছে।সবাই কথাবার্তা বলছে।আহান আর আহাদ একসাথে বসে আছে।সাথে ওদের দাদি আর বাবা মা।আহাদের সামনাসামনি মিহিকে বসানো হয়েছে।আহাদ বারবারই লুকিয়ে চুরিয়ে মিহিকে দেখছে।মাইশার চোখে এটা ধরা পড়তেই ও মুচকি হাসলো।আর আহানতো মাইশার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়েই আছে।এই প্রথমবার ওর মনে হলো ভালোবাসার মানুষ সামনে আসলে অনেক বাতাস হয়।আসলেই মনে হচ্ছে ক্ষেপাটে বাতাসগুলো তার প্রেয়সীর চুলগুলোতে খেলছে।মাইশার চোখ আহানের দিকে পড়তেই দেখলো আহান বেশরমের মতো ওর দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে।মাইশা কি করবে ভেভে পেলো না।এভাবেই কি দাড়িয়ে থাকবে নাকি কেটে পড়বে।আহানের চাহনীতে মাইশার অস্বস্তি হচ্ছে তাই মাইশা আস্তে আস্তে সেখান থেকে কেটে পড়লো।মাইশা নিজের রুমে আসতেই দেখলো ওর ফোনে আহানের কল।মাইশা ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো একটা টেক্সটও আছে।আহান মাইশাকে ছাদে আসতে বলেছে।মাইশাও লোকচক্ষুর আড়ালে ছাদে চলে গেলো।গিয়ে দেখলো আহান আগেই এসে দাড়িয়ে আছে।মাইশাকে দেখে মৃদু হেসে বলল”জ্বর ছেড়েছে?”
“হ্যাঁ এখন ঠিকাছি।”
“আচ্ছা কিছু ভাবলে?”
“হ্যা।ভেবেছিলাম।আজকে সারাদিন ভেবেছি।আসলে আমি আপনার প্রপোজাল টা এক্সেপ্ট করতে পারছি না।আপনি আমার লাইফে আসার আগেই আমি অন্য একজনের বাগদত্তা।এখন আপনার জন্য আমি তাকে ধোকা দিতে পারি না।আর আমার পরিবারে সবাই আমাকে ভরসা করে। আমি তাদের ভরসা ভাঙতে পারবো না।আমি আশা করি আমি আপনাকে বোঝাতে পেরেছি।যদি আমি আপনাকে ভালোবাসতাম তবে অন্য কথা ছিলো।”
আহান কিছু বলল না।বামহাত দিয়ে চুলগুলো টানতে লাগলো।দুইমিনিট কিছু একটা ভেবে বলল”ভালোবাসবে তুমিও বেয়াইনসাব।”
এটা বলে কিউট একটা হাসি দিয়ে নিচে চলে গেলো।মাইশা আগেই জানতো আহান এতো সহজে ওর পিছু ছাড়বে না।কিন্তু এগুলো প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।কিছুতেই না!মাইশা সেখান থেকে নিচে নামতেই দেখলো সবার মিষ্টি মুখ চলছে।মাইশাকে দেখে ইশিকা ওর মুখে একটা মিষ্টি পুরে দিলো।মাইশা পুরো একটা মিষ্টি মুখে নিয়ে না গিলতে পারছে মা ফেলতে।তাই তাড়াতাড়ি করে কিচেনে গিয়ে পানি খেয়ে অনেক কষ্ট করে গিললো।
মিহির বড় ভাই মৃদুল আর বাবা মোশারফ ওদের এগিয়ে দিতে যাচ্ছে।মিহি ঘরে আসতেই তিনবোন মিলে ওর হাত ধরে টানাটানি লাগিয়ে দিলো আংটি দেখার জন্য।তিনবোন মিলে মিহিকে খোঁচা মারা শুরু করলো।মিহি তিনজনের পিঠেই ধুমধাম মারা শুরু করলো।তবুও ওর হাসছে দেখে মিহি বিরক্তি প্রকাশ করে বলল”বেশরম!সবগুলি বেশরম।এতোগুলি মার খাওয়ার পর দাত কেলাচ্ছে।”
মিহির কথা শুনে ওদের হাসি আর ভেড়ে গেলো।এবার মিহিও হেসে দিলো।বোনদের সাথে হাসতে ভালোই লাগে।চারবোনের কয়েকটা হাসির পিকও তোলা হলো।
————-
রাতের খাওয়া শেষ করে মাত্রই ইশিকা আর মাইশা রুমে আসলো।ইশিকার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে তাই ঠাস করে চিৎপটাং হয়ে গেলো।মাইশা বিরক্ত হয়ে বলল”এই ইশু, ওঠ কুত্তী।আজকে তোর মশারী টানানোর পালা।”
ইশিকা ঘুমঘুম চোখে চেয়ে বলল”আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে একটু আজকে টানিয়ে দে না।”
“জ্বি না।এই তিনদিন ধরে আমি টানাচ্ছি।আজ তুই টানাবি।”
এরপর ইশিকার আর কোনো জবাব আসে নি।মাইশা বিড়বিড় করতে করতে মশরী টানিয়ে টেবিল ল্যাম্প অফ করে ফোনটা হাতে নিতেই দেখলো আহান ফোন দিয়েছে।মাইশা রিসিভ করতেই আহান ওকে কিছু বলতে না দিয়েই বলা শুরু করলো।
“ওহে কাজলদিঘী,
আকাশ পানে চেয়ে দেখো
আখি মেলি।
ধরণীতে আজ আলোর মেলা,
আকাশ জুড়ে তারার খেলা।
ফোনের এপাশে আমি,
ওপাশে তুমি।
আমরা দুজন কাছাকাছি,
ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি”
এতক্ষণ ধরে চুপচাপ মাইশা আহানের কথা শুনলো।ওর বলা শেষ হতেই মাইশা বলল”বাহ!ভালোই তো।এক কাজ করুন অন্যকোনো মেয়েকে বলুন।আমাকে বলে লাভ নেই।”
“লাভ ক্ষতির হিসেব ভালোবাসায় নেই।”
“কবি হয়ে উঠলেন কবে থেকে?”
“যবে থেকে কবিতার দেখে মিলেছে।”
এভাবেই আরো কিছুক্ষণ দুজনেরই বকবক চললো।একটুপর মাইশাই ফোন কেটে দিলো।ফোন কাটতে না কাটতেই আবার ফোন দিলো আহান।এবার মাইশা ফোনটা সুইচ অফ করে দিয়ে সুয়ে পড়লো।
———————
একসপ্তাহ ধরে বিয়ে বলে আজ থেকেই শপিং শুরু।একটু আগেই আইরিন, মিহি আর মৃদুলের বউ রুহি।মিহির চাচি,খালারা সহ শপিংয়ে গেলো।ইশিকা আর মাইশাকেও আসতে বলল।কিন্তু দুজনই আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে ওরা যাবে না।তাই মাইশা মাথাব্যথার ঢং করলো আর ইশিকা পেট ব্যাথার।তারপর আর ওরা শপিংয়ে যায় নি।
ওরা যাওয়ার পর ইশিকা আর মাইশা বের হলো আশেপাশে একটু ঘুরাঘুরির জন্য।ওরা বের হতেই আহান এন্ট্রি নিলো।এমন ভাবে এন্ট্রি নিলো যেনো বোঝা যায় ওদের সাথে দেখা হওয়াটা কাকতালীয়।আহানকে দেখে ইশিকা খুশী হয়ে বলল”আরে বেয়াই আপনি!”
“হ্যাঁ,এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম।”
মাইশা মুখে কিছু না বললেই মনে মনে বলল’ডাহা মিথ্যা কথা।’ইশিকা জবাব দিলো”তো চলুন না তিনজনে মিলে কোথাও ঘুরে আসি।”
আহানের এই সুযোগটাই দরকার ছিলো।মাইশার দিকে একনজর তাকিয়ে বলল”হ্যা চলুন যাওয়াই যায়।”
.
.
মাইশার একদমই ইচ্ছে হয় নি।আহানকে সাথে নিতে।কিন্তু ইশিকার জন্য নিতে হলো।আহান আর ইশিকা বকবক করতে করতে হাটতে লাগলো।আর মাইশা চুপচাপ ইশিকার পাশে হাটতে লাগলো।মাইশার নিরবতা আহানের ভালো লাগছে না।কিছু একটা করতে হবে!তাই হুট করেই বলল”আরেক বেয়াইনের কি মন খারাপ?”
আহানের কথায় ইশিকা মাইশার দিকে তাকালো।মাইশাও ওদের দিকে তাকিয়ে বলল”নাহ!মন খারাপ না।”
“তাহলে চুপচাপ যে?” আহানের প্রশ্ন।
“এমনিতেই।”
আহান আর কিছু না বলে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল”ফুচকা খাবেন আপনারা?”
ইশিকা হেসে বলল”হ্যা খাওয়া যায়।ইশিকার কথায় মাইশাও সায় দিলো।
তিনজনে মিলে ফুচকা খেয়ে আরো কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বাসার দিকে রওনা হলো।
বাসার কাছাকাছি আসতেই মাইশার ফোনে একটা টেক্সট এলো।মাইশা টেক্সট ওপেন করতেই দেখলো আহান লিখছে’ কথা আছে।বাসায় যাওয়ার পর বাইরে এসো একটু।’
মাইশা টেক্সটা পড়ে আহানের দিকে তাকাতেই আহান ইশারায় রিকুয়েষ্ট করলো।মাইশা কিছু বলল না।
বাসায় যাওয়ার পর ইশিকা শাওয়ার নিতে গেলেই মাইশা বের হলো।আহান ওর জন্যই দাড়িয়েছিলো।মাইশা আসতেই ওকে একটা গোলাপ আর একটা বকুলের মালা দিয়ে বলল”তোমাকে দেওয়ার জন্য কিনেছিলাম।ইশিকার জন্য দিতে পারি নি।”
মাইশার নিতে ইচ্ছে হলো না কিন্তু এভাবে রিজেক্ট করাটাও ভালো দেখায় না তাই আহানের হাত থেকে গোলাপ আর মালাটা নিয়ে একটা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে ভেতরে চলে গেলো।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)