বেয়াইনসাব?,পর্বঃ০৪
Arshi Ayat
তিনদিন ধরে মাইশা আহানকে ফেসবুক,ফোন,হোয়াটসঅ্যাপ সব জায়গা থেকে ব্লক করে রেখেছে।ইভেন বিভিন্ন বাহানা দিয়ে এড়িয়ে চলছে।আহান বারবার চেষ্টা করছে কথা বলতে কিন্তু মাইশার দিক থেকে কোনো রেসপন্স নেই।হঠাৎ এইভাবে চুপ হয়ে যাওয়ার কারণ আহান বুঝতে পারছে না।হঠাৎ কি হলো!যাইহোক মাইশার সাথে কথাবলা জরুরী হয়ে উঠেছে।আজ যেভাবেই হোক মাইশার সাথে কথা বলবেই।
.
.
বিছানার ওপর বসে হাটুতে মুখ গুজে আছে মাইশা।মনে শান্তি নেই মাইশার।আজ তিনদিন ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে কাদছে মাইশা।যাতে কেউ বুঝতে না পারে।কাদার ফলে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।কেউ জিগ্যেস করলো ঠান্ডার কথা বলে ব্যাপারটা ধামাচাপ দিয়ে রাখে।কিন্তু মনটা কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না।সবাই কতো আনন্দ করছে কিন্তু ওর শুধু কান্না পাচ্ছে।
হঠাৎ কারো হাত মাথার ওপর পড়তেই মাইশা মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো ইশিকা দাড়িয়ে আছে।ইশিকাকে দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে মাইশা বললো”কিছু বলবি?”
“আচ্ছা তুই কি কিছু নিয়ে আপসেট?”
“না তো।” মাইশা মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলল।
“মিথ্যা বলিস না।আমি আজকে তিনদিন ধরে দেখছি তুই মুখটা পেচার মতো করে রেখেছিস।কাহিনী কি?”
“তুই একটু বেশিই ভাবছিস।আমার কিছুই হয় নি।”
“আচ্ছা ইভান ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
“না রে।তুই ভাগ।শুধু শুধু ফালতু বকছিস।”
“আচ্ছা আজকে তো আপুর গায়ে হলুদ কি পরবি লেহেঙ্গা নাকি শাড়ি?”
“লেহেঙা পরা যায়।”
“সবাই শাড়ি পড়বে আর তুই লেহেঙ্গা পরবি।কেমন যেনো লাগবে।”
“কিন্তু আমার তো হলুদ শাড়ি নাই।”
“সমস্যা নাই মৃদুল ভাইয়াকে আমি বলে দিয়েছি।”
“যাক তাহলে তো হলোই।”
“চল একটু বের হই।”
মাইশারও বের হতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আহানের কথা ভেবে আর যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।যদি রাস্তায় দেখা হয় তখন!এমনিতেই ওর জন্যই মন খারাপ।তিনদিন আগে যখন মাইশা আহানের থেকে ফুল গুলো নিয়েছিলো তখন তাদের অজান্তেই ছাদ থেকে মাইশার ছোট মামি জিনিসটা দেখে ফেলেছে।পরে বাসায় যাওয়ার পর মাইশাকে অনেক গালমন্দ করে।এইজন্যই মূলত মাইশার মন খারাপ।আর এই কারণেই আহানকে ব্লক করেছে।তাই এখন আর ওর সামনে পড়তে চাইছে না।তাই আর বের হলো না।ইশিকা একাই বের হলো।
—————–
মিহিকে স্টেজে বসানো হয়েছে।চারপাশে ওর বান্ধবীরা আর কাজিনরা বসেছে।মাইশার পানির পিপাসা পাওয়ায় ও ঘরে চলে গেলো।পানি খেয়ে বাইরে আসতেই দেখলো আহাদ,আহান আর আহাদের বন্ধুরাও এসেছে।মাইশা আহানকে দেখে আর বাগানে গেলো না নিজের রুমে এসে বসে রইলো।
.
.
এদিকে আহান চারপাশে চোখ বুলিয়ে মাইশাকে খুজছে কিন্তু ওর দেখা নাই।কিন্তু মাইশার সাথে আজ কথা বলতে হবেই।তাই আহান ইশিকার কাছে গিয়ে বলল”মাইশা কোথায়?”
আহানের হঠাৎ এমন ভাবে মাইশার খোজটা কেমন যেনো লাগলো ইশিকার কাছে।তবে ব্যাপারটাকে গুরুত্ব না দিয়ে ইশিকা বলল”হয়তো ঘরে গেছে।চলে আসবে।”
“ওহ” বলে আহান অন্যদিকে চলে গেলো।ইশিকার উত্তর শুনে আহান স্পষ্ট বুঝতে পারলো হয়তো মাইশাকে আহানকে দেখে ফেলেছে তাই আসতে চাইছে না।কিন্তু এখন করবে টা কি!এদিকে আহাদ আর ওর বন্ধুরা সবার সাথে কথা বলে এখন চলে যাবে।সাথে আহানকেও যেতে হবে।কিন্তু আহানের মোটেও যেতে ইচ্ছে করছে না।তবুও না গেলেও সমস্যা তাই ক্ষুণ্ণ মন নিয়ে চলে গেলো।আহান যেতেই মাইশা বেরিয়ে এলো।এতক্ষণ ধরে মাইশা এটাই চাইছিলো।আহান চলে যেতেই মাইশা হাফ ছেড়ে বাচলো।
—————-
একটু পরই বরযাত্রী আসবে।মিহিকে ঘিরে সব কাজিন আর ফ্রেন্ডরা বসে আছে।মাইশা মনে মনে ভয় পাচ্ছে! আজকে আহানের থেকে কিভাবে বাচবে?আজতো ওর সামনে পড়তেই হবে।আর ও যে ছেলে এতো সহজে ছাড়বে না শিউর!কিন্তু কি করা যায় এটা ভেবেই মাইশার ঘাম ছুটছে।কি করবে সে?
মাইশা ভাবতে ভাবতেই বরযাত্রী চলে এসেছে।মাইশার হাত পা কাঁপছে হঠাৎ!কি করবে সে ভেবে পাচ্ছে না।হঠাৎ মনে হলো আস্তে আস্তে ছাদে গিয়ে ছাদের দরজা অফ করে বসে থাকবে।যেইভাবা সেই কাজ।ছাদে গিয়ে ছাদের দরজা লক করে পিছনে ঘুরতেই দেখলো আহান বাকা একটা হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে।মাইশা চলে যেতে নিলেই আহান দ্রুত এসে ওকে আটকে দিয়ে বলল”কি সমস্যা তোমার?ইগ্নোর করছো কেনো?”
“কোনো সমস্যা না।আর আমি আপনাকে ইগনোর করছি না।আমাকে যেতে দিন।”
“না দিলে কি করবে?”
মাইশা রেগে বলল”সবাইকে ডাকবো।”
“ডাকো।আই ডোন্ট কেয়ার।ডাকলে আমারই লাভ হবে।যা বলার আমি বলে দেবো।”
আহানের কথা শুনে মাইশা চুপ হয়ে গেলো।আহান মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল”যাও যাও ডাকো সবাইকে।”
“কি বলবেন বলুন।আমাকে যেতে হবে।”
“আমি বলবো না।তুমি বলবে।বলো কি হয়েছে তোমার?আমাকে সব জায়গা থেকে ব্লক করছো কেনো?”
“এমনিতেই।আমি কাকে ব্লক করবো না করবো এটা আমার বিষয়।আপনাকে আমি কৈফিয়ত দিবো না।”
আহানের রাগ উঠছে প্রচুর।তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল”কৈফিয়ত আমাকেই দিবো।আর কাউকে না।”
“কখনো না।ছাড়ুন হাত।”
“না,ব্লক খোলো এখনি।আর কখনো আমাকে ব্লক করবা না।”
“খুলবো না।”
আহান রেগে মাইশার গাল চেপে ধরে বলল”বোনের বিয়েটা হোক চাও?যদি চাও তবে ব্লকটা ভালোয় ভালোয় খুলে দিও।নয়তো বিয়ে ভাঙতে আমার সময় লাগবে না।”
এটা বলে আহান ওর গাল ছেড়ে দিলো।মাইশা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো।আর আহান মনে মনে বলল’আমি চাই নি এটা করতে তুমি বাধ্য করলে।’
——————
আহাদ আর মিহির বিয়ে মিটে গেছে একসপ্তাহ আগেই।এখন সবাই আবার নিজেদের ব্যস্ত জীবনে পৌঁছে গেছে।
সেদিনের পর থেকে মাইশা আর কখনো আহানকে ব্লক করে নি।তার কারণ একটাই।ও কথায় কথায় ব্ল্যাকমেইল করে।সেই ভয়ে ই মাইশা কিছু বলে না।
দুইমাস চলে গেছে এভাবেই।এই দুইমাসে আহানের পাগলামি বেড়েছে।আর মাইশাও মেনে নিচ্ছে।কারণ ইদানীং মাইশারও আহানের পাগলামি গুলো ভালো লাগে।এদিকে প্রতিদিন ইভানের সাথেও কথা হয়।
মাঝেমধ্যে মাইশার নিজেকে প্রচুর অপরাধী লাগে।মনে হয় দুটো ছেলেকেও ধোকা দিচ্ছে।কিন্তু মাইশা কিছুই করতে পারছে না।মনটা সবসময় খারাপ হয়ে থাকে।
——————–
চোখেমুখে সূর্যের আলো পড়তেই আহান ঘুম থেকে উঠে বসলো।তারপর বেডসাইড থেকে ফোনটা নিয়ে মাইশাকে কল দিলো।কিন্তু একি ফোন বন্ধ বলছে।কয়েকবার ফোন করার পরও একই অবস্থা।আহান দ্রুত অনলাইনে গিয়ে দেখলো মাইশার আইডি ডিয়েক্টিভ!আহান মিহিকে কল দিলো।
“হ্যালো ভাবি।”
“হ্যাঁ বলো।”
“মাইশা কোথায়?”
হঠাৎ মাইশার কথা জিগ্যেস করায় মিহির কেমন যেনো লাগলো।মিহি সন্দিহান গলায় বলল”কেনো বলোতো?”
“আরে মাইশার কাছে আমার এসাইনমেন্ট টা ছিলো।ওকে করতে দিয়েছিলাম।কিন্তু এখন ফোনই বন্ধ।”আহান কোনোমতে কথা ঘুরিয়ে ফেললো।
“ও,,তাই বলো।মাইশাতো গাইবান্ধা গেছে।”
“কেনো?”
“ওর হবু বর এসেছে।এবারই বিয়ে হবে।সেইজন্য।”
আহানের মাথা ঘুরছে!এইসব শুনে।আর কিছু বলতে পারলো না।ফোনটা কেটে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো।সবশেষ!সবশেষে!
আহানের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।হঠাৎ ফোনে কল আসতেই আহান দেখলো ইভানের কল।আহান চোখ মুছে রিসিভ করতেই ইভান বলল”দোস্ত!বাইরে আয়।তোর বাসার নিচে আছি।”
“বাসায় আয়।”
“আরে এখন আসমু না।এখন তুই আর আমি একটু ঘুরমু।কতোদিন পর দেখা হবে।”
“আচ্ছা আসছি।”
আহান ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখলো ইভান দাড়িয়ে আছে।দুইবন্ধু একজন আরেকজন কে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর দুজনই ভার্সিটির দিকে গেলো।কারণ ওখানেই সব বন্ধুদের সাথে দেখা হবে।যেতে যেতে ইভান বলল”দোস্ত তোর ভাবি কে দেখবি?”
“দেখা।” আহান কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে বলল।
ইভান ফোন বের করে একটা ছবি আহানের সামনে দিলো।
চলবে….