বৈধ_ধর্ষণ,পর্ব: ২,৩

0
1287

#বৈধ_ধর্ষণ,পর্ব: ২,৩
#মিমি_সুলতানা
পর্ব: ২
————-
তোমার বোন আমাকে যে শারিরীক সুখ দিতে পারেনি সেটা যদি তুমি দাও, তাহলে ওর সাথে আমি আর কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার করব না। আর এমনিতেও তোমাকে আমার ওর থেকে বেশি ভালো লাগে৷
শুনে আরোহীর পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। এটা কি শুনলো সে!
কিন্তু চোখের সামনে নিজের বোনের এমন পরিস্থিতিও মেনে নিতে পারছেনা আরোহী। সে বোনকে এতটাই বেশি ভালোবাসে যে নিজের জীবন দিয়ে দেয়ার জন্য ও সে এক সেকেন্ড ও ভাবতো না। কিন্তু এটা জীবন বা অন্যকিছুর বিষয় নয়। নিজের সম্মানের ব্যপার।কি করতে হবে আরোহী বুঝতে পারছেনা কিছুই, আরোহীর মনে হচ্ছে অনেক বড় একটা দায়িত্ব এসে পড়লো তার মাথায়। বোনের ভালো থাকা বা খারাপ থাকা নির্ভর করছে তার সিদ্ধান্তের উপর।
আমার ভাবার জন্য একটু সময় প্রয়োজন বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো আরোহী।
এদিকে দীর্ঘ ৩ ঘন্টা ধরে আমি অজ্ঞান। অনেকভাবে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ আরোহী। আমার কোনো রেসপন্স না পেয়ে ঘাবড়ে গেলো শুভও। আজকের ঘটনাটার পরে কম-বেশি সবাই জেনে গিয়েছিলো ব্যাপারটা কিন্তু আমার পাশে দাঁড়ায়নি কেউ-ই।
শুভ নিজের ছোট বোন অনুকে বলল ডাক্তারকে কল করতে।
.
ডাক্তার এসে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা ও কিছু মেডিসিন দিয়ে গেলো। মোটা অংকের টাকা দিয়ে ডাক্তারের মুখটাও বন্ধ করতে ভুলল না শুভ। এ সমাজে টাকা হলে সব কেনা যায়।
আরও এক ঘন্টা পর আমার জ্ঞান ফিরলো।
ব্যাথায় কাঁতর হয়ে আমি উঠে বসার শক্তিটাও পাচ্ছি না।তবুও আমাকে উঠতে হবে।
এখানে আমার কষ্ট বোঝার মত কেউ নেই সেটা আমি ভালো করেই জানি।আমার এই অবস্থা দেখে সবচেয়ে যে বেশি খুশি হচ্ছে সে হচ্ছে আমার বড় জা।
শুরু থেকেই আমার রুপ-গুন নিয়ে হিংসে করতো সে।আমাকে ছোট দেখানোর জন্য কম কষ্ট ও করেনি ।ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আমাকে অপদস্থ করাটা যেন তার নিত্যদিনের স্বভাবে পরিণত হয়েছিলো। এমন একটা সুযোগ যেন তার কাছে মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পাওয়ার মতো অবস্থা।
.
.
.
.
এরপরে চলে গেল দু’দিন।
আমি এখন মোটামুটি সুস্থ। এই পর্যন্ত আরোহী আমার কাছেই ছিলো।শুভ ও আর আগের মত নির্যাতন করেনি তবে আমার খেয়াল রেখেছে এমনটাও নয়।
জানিনা কোন পাপের শাস্তি আমি পাচ্ছি তবে সবকিছুর একটা শেষ আছে, আর আমি বসে আছি সেই শেষের অপেক্ষায়।
.
.
.
বিকেলে হঠাৎ করে শুভর কিছু আত্মীয় স্বজন আসলো বাসায়।তাদের আপ্যায়ন করার দায়িত্ব টা আমার উপরই এসে পড়লো।
আমি তাদের হালকা নাস্তা পরিবেশন করতে যাই কিন্তু তখনই মুখোমুখি হতে হয় আরেকটি অপ্রীতিকর অবস্থার।
আত্মীয়দের মধ্য থেকে একজন আমার কাটা ঠোঁট ও হাতের দাগের দিকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন করে বসে এসব কিসের দাগ তোমার?
শুভর সাথে কোনো ঝামেলা চলছে না-কি?
আমি কিছু বলার আগেই পাশ থেকে ননদ বলে উঠলো,
-কি আর হবে চরিত্রে দোষ থাকলে যা হয়।
এদের তো এক স্বামী দিয়ে হয় না, আরো অনেক মানুষ লাগে। গিয়েছিল বাইরের ছেলেদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে, ধরা পড়েছে তারপর ভাইয়া একটু রেগে গিয়েছিল।
এমন অবস্থায় কোন পুরুষটার মাথা ঠিক থাকে বলুন তো! যেমন কর্ম তার তেমন ফল।
আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম অনুর কথা। একটা মেয়ের সম্পর্কে আরেকটা মেয়ে কি করে এসব বলতে পারে? তার কাছে কি তার ভাইয়ের দোষ ঢাকাটাই শ্রেষ্ঠ মনে হলো! একটা মেয়ের সম্মান কি তার কাছে কিছুই নয়?
আমি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না শুধু নিরবে দু’ফোটা চোখের পানি ফেলে রুমের দিকে পা বাড়ালাম। যেতে যেতে জা-য়ের বলা কথাটাও শুনতে পেলাম, চাঁদ চাঁদ বলতেন না সবাই?দেখলেন তো চাঁদের গায়েও কলঙ্ক।
.
.
.
খুব দ্রুত আত্মীয় স্বজন ও আশেপাশের সবার মাঝে আমার নামে মিথ্যা অপবাদটা ছড়িয়ে পড়লো। আজ আমি সমাজের কাছে চরিত্রহীন,সবার কাছে তাচ্ছিল্যের পাত্রী।
দেখেছি কাল সেইসব মানুষদের চোখে আমার জন্য ঘৃণা যারা এক সময় আমাকে চাঁদের টুকরা বলতো।
তবে একটি মেয়ের চোখে আমার জন্য দেখেছিলাম সহানুভূতি।শুভর মামাতো বোন রোজা। রোজার চোখের গভীরতায় কোথাও একটা আমি দেখতে পেয়েছিলাম আমার প্রতি বিশ্বাস।
সেদিন বিকেলেই রোজা আমার রুমে আসে।
মেয়েটার চেহারার মাঝে অদ্ভুত ধরণের মায়াবী ভাব আছে। কোমর পর্যন্ত রেবন্ডিং করা চুল।
এক দেখাতেই কারো মন জয় করে নেওয়ার মত প্রত্যেকটা বৈশিষ্ট্য তার মাঝে বিদ্যবান।
চেহারা দেখেই বোঝা যায় মেয়েটা অনেক বুদ্ধিমতী।
রুমে ঢুকেই মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে আমার সাথে আলাপ শুরু করে দিলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর সাথে আমার সম্পর্কটা বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
নানারকম কথার মাঝে সময়টা বেশ তাড়াতাড়ি-ই কেটে গেল। কথার মাঝে হঠাৎ করে রোজা বলে উঠলো, তোমার শরীরের এসব দাগের পিছনে থাকা আসল কারণ টা আমি জানতে চাই।
আমি এমন একটা প্রশ্ন শুনে থমকে গেলাম।
হাসিটা যেন নিমিষেই মিইয়ে গেলো।
চারদিকে এক নিরবতা বিরাজ করছে। এই নিরবতা ভেঙে রোজা নিজেই আবার বলে উঠলো,
-আমি শুভর বোন হিসেবে নয়, তোমার বন্ধু হিসেবে জানতে চাই। ভরসা করতে পারো আমায়।জীবনে সব মানুষকে যেমন বিশ্বাস করতে নেই তেমনই একজনও বিশ্বাসযোগ্য মানুষ ও জীবনে থাকে না এমন ও নয়। তুমি না হয় আমাকে সেই মানুষটাই ভেবে নাও। কথা দিচ্ছি তুমি ঠকবে না।
আমি রোজার কথা শুনে সবকিছু শেয়ার করতে একটু ইতস্তত বোধ করলেও মনের ভিতর থেকে সাড়া পাচ্ছিলাম একে সব বলাই যায়।
আসলে আমি নিজেও হাঁপিয়ে উঠেছিলাম এই যন্ত্রণায়, হয়ত কাউকে বললেও এই কষ্টের ভারটা একটু হালকা হবে।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সবটা বলতে শুরু করলাম।
.
.
.
.
মাঝে মাঝে নিকষ কালো আঁধার দুর করার জন্য জানালার ফাঁক দিয়ে একটি জোনাকির প্রবেশই যথেষ্ট হয়ে যায় ।
ঠিক তেমনই আমার জীবনে আগমন ঘটলো রোজার।
অসহায়ত্বের এই সময়টাতে রোজা আমাকে পূর্ণভাবে সাপোর্ট করলো।
মনে হচ্ছিল হারিয়ে যাওয়া তরী টা অনেকদিন পর একটা তিড় খুঁজে পেলো।
রোজার কাছে পেয়েছিলাম আমি ভরসা।শুনেছিলাম সংগ্রাম করেও বেঁচে থাকার উৎসাহ।
শুনাতো হাজারও নারীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।
এতো কষ্টের মাঝে একটু প্রশান্তি, সেটা ছিলো রোজা।
.
.
.
.
এই কয়দিনে শুভ নানাভাবে আরোহীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করেছে।
আরোহীকে নানাভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছে, এতে আরোহী খুব অস্বস্তি বোধ করলেও জোরালো প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেনি।
কারণ আরোহী জানে সে প্রতিবাদ করলেই তার ঝড় আমার উপর বইবে।
আরোহী একটা দোটানায় ভুগতে লাগলো।না পারছে নিজের সম্মান বিলিয়ে দিতে আর না তো পারছে চোখের সামনে বোনের এই অবস্থা দেখতে।সে জানে পুলিশকে জানিয়ে বা প্রতিবাদ করে এখানে কোনো লাভ হবে না।
এ দেশের আইন ও যে টাকার সামনে মাথা নত করে।
কিন্তু আজকাল শুভর সাহসটা ও বেড়ে চলেছে। আজ সকালেও বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো আরোহী। হঠাৎ করেই শুভ পেছন থেকে এসে তার স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে বসে।
লজ্জায় আর ঘৃণায় কেঁদে দেয় সে।
ছোট্ট আরোহী এসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে যেন চোখে সর্ষেফুল দেখতে থাকে।
.
.
.

“আমি তোমাকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করবো যেভাবেই হোক।তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোমার সাথে হওয়া সবকিছু শুধু তুমি আর অত্যাচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। এর পেছনে রয়েছে আরও অনেক ষড়যন্ত্র, রয়েছে কঠিন এক সত্যি লুকিয়ে। ”
রোজার কথাগুলো শুনে আমি চমকে গেলাম।
অবাক হয়ে বললাম,
-কঠিন সত্য!
তাছাড়া এমন কি বা ষড়যন্ত্র থাকতে পারে এর পেছনে?
রোজা একটু নড়েচড়ে বসে বলতে লাগলো,
-আচ্ছা আরশী কখনো কি তোমার মনে হয়নি, এতো মেয়ে থাকতেও শুভ কেন তোমাকেই বিয়ে করলো? বিয়েটাও ৭ দিনের মধ্যে সেরে ফেললো কিন্তু কেন? এতো বড় একজন ব্যাবসায়ী শুভ, দেখতেও বেশ স্মার্ট,কতশত মেয়েরা তারজন্য পাগল অথচ সে এক দেখাতেই তোমাকে বিয়ে করবে বলে ঠিক করে ফেলবে! কেন?
তাছাড়া সে একজন শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান মানুষ। তোমার সাথে পরিচিত না হয়ে তোমার অতীত সম্পর্কে না জেনেই তোমাকে বিয়ে করে ফেললো?
ব্যাপারটা অদ্ভুত না বলো?
আচ্ছা ধরে নিলাম প্রথম দেখাতেই ও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু কেউ যদি কাউকে ভালোই বাসে তাহলে এতো ছোট কারণে তার উপর এমন পাশবিক নির্যাতন করতে পারে বলে কি তোমার মনে হয়? আমার তো মনে হয় না।
নিশ্চয়ই এর পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে যা তুমি দেখতে পাচ্ছো না বা দেখার চেষ্টা করছো না।

সত্যিই তো এভাবে তো কখনো ভেবে দেখিনি। রোজার কথাগুলো আমাকেও কিছুটা ভাবনায় ফেলে দিলো।
আমি চিন্তিত কন্ঠে রোজাকে বললাম,
-কি হতে পারে এর কারন?
তাছাড়া আমার সাথে এমন করে কি লাভ হবে তার?
-কারণটা তো জানিনা তবে শীঘ্রই আমি আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবো আশা করি।
আজকের মত শুভ রাত্রি, কাল আবার দেখা হবে নতুন কিছু প্রশ্ন আর তোমার কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়ে। তবে চিন্তা করো না, তোমাকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করে সুন্দর একটা জীবন উপহার দেওয়ার দায়িত্ব আমার।

তখনের মত রোজা চলে গেলো কিন্তু রেখে গেল এক পাহাড় প্রশ্ন। কি হতে পারে এতো সবকিছুর কারণ? রোজার সন্দেহ কি যুক্তিযুক্ত না-কি ও একটু বেশিই ভেবে ফেলেছে?
শুভর পায়ের শব্দে আমার চিন্তায় ছেদ পরলো।
অন্যদিনের মত আজও ও আমাকে খুবলে খাবে আমি জানি। ভাবতেই আবার এক রাশ ঘৃণায় আমার গা ঝাড়া দিয়ে উঠলো।
রোজা হয়তো পারবে আমাকে এই পরিস্থিতি থেকে বের করতে এমনই সুক্ষ্ম এক আশা নিয়েই আমি তৈরি হয়ে গেলাম বৈধ ধর্ষণ হওয়ার জন্য।
.
.
.
.
পরদিন সকাল।
অনেক চেঁচামেচি শুনে ঘুমটা ভেঙে গেলো।
কান্নার শব্দও আসছে কানে। কি হয়েছে বাসায়!
আরোহীর কিছু হয়নি তো!
অজানা একটা ভয়ে পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।
যন্ত্রণায় কাঁতর শরীরটাকে কষ্ট করে টেনে তুলে আমি রুমের বাইরে আসলাম।
অনেক মানুষ বাসায়, কেউ কেউ বলছে আহারে এই বয়সে এমন হওয়াটা একদমই ঠিক হয়নি।
কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
সবটা জানতে কঠিন একটা আশঙ্কা নিয়ে দৌড়ে গেলাম আরও কাছে।
কিন্তু গিয়ে যেটা দেখলাম সেটা দেখার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। চারদিকটা আমার অন্ধকার হয়ে গেলো।
ফ্যানের পাখার সাথে ঝুলে আছে রোজার নিথর দেহ!
চোখদুটো যেন এখনো কত কথা বলছে।
আমি এটা মেনে নিতে পারছি না।
আমার মাথার ভিতরে চক্কর দিয়ে উঠলো,সাথে সাথে আরোহী দৌড়ে এসে আমাকে জাপ্টে ধরলো।
.
.
.
চলবে….

#বৈধ_ধর্ষণ
#মিমি_সুলতানা
পর্ব: ৩
———————-
পরদিন সকাল।
অনেক চেঁচামেচি শুনে ঘুমটা ভেঙে গেলো।
কান্নার শব্দও আসছে কানে। কি হয়েছে বাসায়!
আরোহীর কিছু হয়নি তো!
অজানা একটা ভয়ে পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।
যন্ত্রণায় কাঁতর শরীরটাকে কষ্ট করে টেনে তুলে আমি রুমের বাইরে আসলাম।
অনেক মানুষ বাসায়, কেউ কেউ বলছে আহারে এই বয়সে এমন হওয়াটা একদমই ঠিক হয়নি।
কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।
সবটা জানতে কঠিন একটা আশঙ্কা নিয়ে দৌড়ে গেলাম আরও কাছে।
কিন্তু গিয়ে যেটা দেখলাম সেটা দেখার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। চারদিকটা আমার অন্ধকার হয়ে গেলো।
ফ্যানের পাখার সাথে ঝুলে আছে রোজার নিথর দেহ!
চোখদুটো যেন এখনো কত কথা বলছে।
আমি এটা মেনে নিতে পারছি না।
আমার মাথার ভিতরে চক্কর দিয়ে উঠলো,আরোহী দৌড়ে এসে আমাকে জাপ্টে ধরলো।

নিমিষেই যেন সবটা পাল্টে গেল।
আমাকে সবরকম বিপদ থেকে রক্ষা করবে বলে মনোবল বাড়ানো সাহসী মেয়েটাও এখন একটি লাশে পরিনত হয়ে আছে।
পুলিশ রোজার মৃতদেহটা নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আমার ঠিক কতটা কষ্ট পাওয়া উচিৎ ছিল আমি জানি না তবে এই মূহুর্তে আমি মেনে নিতে চাচ্ছি না রোজা আত্মহত্যা করেছে।
ওর মত সাহসী, বুদ্ধিমতী, একটা মেয়ে হাজার সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার ক্ষমতা রাখে, এই কয়টা দিনে অন্তত এটা আমি বুঝতে পেরেছি।
তাছাড়া ওর জীবনে কষ্টকর কোনো অধ্যায় থাকলে ও আমাকে নিশ্চয়ই সেটা শেয়ার করতো।

না! রোজা আত্মহত্যা করতে পারে না।
নিশ্চয়ই এর পিছনে অন্য কোনো রহস্য আছে।
আর সেই রহস্য টা আমি শীঘ্রই খুঁজে বের করবো।
.
.
রোজার মৃতদেহ গাড়িতে ওঠানোর মূহুর্তে হঠাৎ আমি রোজার হাতের নখের ভিতর কিছুটা শুকনো রক্ত লক্ষ্য করলাম।
ব্যাপারটায় খটকা লাগলো। রোজা তো ফাঁসি দিয়েছিলো তাহলে ওর নখের ভিতর রক্ত আসবে কোথা থেকে?
যদি ধরেও নেই শেষ মূহুর্তে ও নিজেকে বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলো তাহলে নিশ্চয়ই ওর গলায় কোনো আঁচড়ের দাগ থাকবে।
হ্যা আমাকে এটা দেখতেই হবে। ভাবা মাত্রই আমি দৌড়ে গেলাম গাড়ির কাছে। ওদের একটু থামতে বলে আমি সতর্কতার সহিত কাউকে বুঝতে না দিয়েই রোজাকে জড়িয়ে কান্নার ছলে ওর গলাটা ভালোভাবে দেখে নিলাম।
কিন্তু ওর গলায় কোনো দাগ ই পেলাম না।
এরমানে নখের ভিতর শুকিয়ে থাকা রক্তটা রোজার নয়!
আমি যা ভেবেছিলাম তাই। রোজা আত্মহত্যা করেনি ওকে খুন করা হয়েছে। যদি এটা সত্যি হয় তাহলে আমার আগে বের করতে হবে নখের ভিতর শুকিয়ে থাকা রক্তটা কার?
আমি সবার চোখ এড়িয়ে গায়ের ওড়না দিয়ে শুকনো রক্তটা সংগ্রহ করতে যাওয়ার মূহুর্তেই আমাকে আরোহী থামিয়ে দিয়ে ওখান থেকে নিয়ে আসলো। রোজার মৃতদেহটাও সবাই গাড়িতে তুলে ফেলল।
অনেকভাবে চেষ্টা করেও আমি রক্ত টা সংগ্রহ করতে পারলাম না। অপরাধী যেন হাতের মুঠো থেকে উড়ে পালালো।
.
.
.
.
রোজা যেই রুমটায় থাকতো সেই রুমটা এখন পুলিশের সংরক্ষণে।
তাই চাইলেও আমি ওই রুমে গিয়ে কোনো প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারছি না।
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এর অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
পরিচয় কয়েকদিনের হলেও ও আমার একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে উঠেছিলো। হঠাৎ করে কাছের একটা মানুষের এভাবে বিদায় কেউ ই মেনে নিতে পারে না।আমিও পারছি না তবে আমাকে শক্ত হতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে আসল অপরাধীকে।
“সবসময় মনে সাহস রেখে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাও, অন্যায়ের সাথে লড়ো অপরাধীদের শাস্তি দাও” রোজা না থাকলেও ওর এমন অনেক কথা আজ আমার পথচলার শক্তি।
যতদিন না অপরাধীকে খুঁজে বের করছি ততদিন আমার অন্য কোনো লক্ষ্য নেই।
.
.
.
অপেক্ষার অবসান ঘটলো।
১ দিন পরেই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চলে আসলো।
রিপোর্ট টি দেখেই আমি চমকে উঠলাম।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।
এটা কি করে সম্ভব!
রোজা ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো!
আমি রিপোর্ট টা ভালোভাবে ঘেটে দেখেও কোথাও সেই রক্তের কথা লেখা দেখলাম না।
রিপোর্ট এ স্পষ্ট লেখা আছে এটা সুইসাইড কেস।
সকলের ধারণা, অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় রোজা। তারপর প্রেমিক মেনে না নেওয়ায় লজ্জা ও অপমানের ভয়ে আত্মহত্যা করে সে।
কিন্তু আমি জানি সবটাই মিথ্যা।
রোজার না তো ছিলো কোনো অবৈধ সম্পর্ক, আর না তো ছিলো সে প্রেগন্যান্ট।
সবটাই সুন্দর করে সাজানো এক প্ল্যান। এই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট টাও ফেইক। কিন্তু আমার কথার সত্যতা প্রমাণ করার মত যথেষ্ট প্রমাণ আমার কাছে নেই। তাই এখন চুপ থাকাটাই আমার কাছে ঠিক মনে হলো।
তবে আমি নিজের কাছে নিজে আজ প্রতিজ্ঞা করলাম সব প্রমাণ সংগ্রহ করে রোজার নামে এই মিথ্যা অপবাদ আমি দুর করবই সাথে এসবের পিছনে যাদের হাত আছে তাঁদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি আমি নিজ হাতে দেবো।
.
.
.
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে এলো।
আমার জা,ননদ দু’জনেই ছাঁদে হাঁটতে গিয়েছে।আরোহী ঘুম আর শুভ ও বাসায় নেই। এই সুযোগটা আর মিস করতে চাইলাম না। আমি ধীরে ধীরে রোজার রুমে গেলাম। যে করেই হোক আজ একটা না একটা প্রমাণ আমাকে জোগাড় করতেই হবে।
অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও কোনো প্রমাণ পেলাম না। তবে একটা জিনিস বুঝতে পারছি, এই খুনটা একা কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়।একটা মৃতদেহ টেনে তুলে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেওয়া এটা অতোটা সহজ কাজ নয়। খুনি অবশ্যই একাধিক কিন্তু কে বা কারা করতে পারে এমন রোজার সাথে?
শুভ করেনি তো?
যেই করুক তাঁকে তো আমি খুঁজে বের করবোই।এবং সেটা খুব শীঘ্রই। এসব ভাবার মাঝেই হঠাৎ করে আমার জানালার দিকে চোখ গেলো।
চোখ পড়তেই কাউকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখলাম। তারমানে কেউ আমাকে ফলো করছিলো! খুনটা তাহলে নিশ্চিত আমাদের মধ্য থেকেই কেউ একজন করেছে?
উফ আর ভাবতে পারছি না।
আমি কোনো প্রমাণ না পেয়ে হতাশ হয়ে আর এক পাহাড় প্রশ্ন মাথায় নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
.
.
.
.
রুমে আসতেই দেখলাম বিছানার উপর শুভ বসে আছে।কিন্তু ও তো বাইরে ছিলো! তাহলে যে আমাকে ফলো করছিলো সে শুভ নয়তো?
“যদি তুমি রোজার হত্যাকারী হয়ে থাকো মিঃ শুভ তাহলে আজ থেকেই তোমার ধ্বংসের শুরুটা গুনতে থাকো” কথাগুলো মনের মধ্যেই চেপে রাখলাম তবে খুব শীঘ্রই সেই সময়টা আসবে যখন তার ধ্বংস টা আমি নিজ হাতে দেখিয়ে দেবো।
.
.
.
দূর্বল শরীরে একটু সবলতা আনতে আমি বাথরুমে ঢুকলাম শাওয়ার নিতে।দীর্ঘ সময় ধরে আজ শাওয়ার নিলাম। শরীরের ক্লান্তি কিছু টা দুর হলেও মনের ক্লান্তি টা কি এতো সহজে দুর করা যায়!
আমি বাথরুম থেকে ফিরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো শুকাতে লাগলাম।হঠাৎ আমার আমার চোখ ড্রেসিং টেবিলে চাপা রাখা একটা কাগজের দিকে আঁটকে গেলো।
হাতে নিয়ে বুঝতে পারলাম এটা একটা চিঠি।
এখানে চিঠি কে রাখবে!
আমি তাড়াতাড়ি করে চিঠি টি খুলে পড়তে শুরু করলাম।
“যেমন আছো তেমনই থাকো, বেশি উড়তে যেওনা। ভুলে যেওনা তোমার ও একটা ছোট বোন আছে,হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ বাবা আছে।কে নিশ্চয়তা দেবে যে রোজার মত তাদের সাথে কিছু হবে না! ”
চিঠিটা পরে আমার পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো।
অপরাধী জেনে গিয়েছে রোজা যে খুন হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পেরেছি। তাই তো সে আমার উপর নজর রাখছে। চিঠিটা পরে একরকম নিরুপায় হয়ে গেলাম।
ঠিকই তো আমার একটা ছোট বোন আছে।
খুনিটা তার যে কোনো ক্ষতি করবে না তার নিশ্চয়তা কি?
কিন্তু ভয় পেয়ে আমি পিছুপা হয়ে গিয়ে রোজার সাথে হওয়া অন্যায়টার কথা ভুলে যেতে পারি না।
প্রতিজ্ঞা যখন করেছি তখন বাঁধা পার করে রোজার সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছুর প্রতিশোধ আমি নেবোই।তবে এবার একটু সাবধানে সব করতে হবে।
অপরাধী ভাববে আমি ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গিয়েছি আর আমাকে তার ভাবনার সাথে তাল মিলিয়ে আগাতে হবে।
.
.
.
.
.
.
নিশ্চুপ সন্ধ্যা, তবুও প্রকৃতি যেন এই নিশ্চুপ ভাষাতেই কত কথা বলছে। প্রকৃতির চুপিসারে বলা কথা আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে অভির সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো।
সময় কত নিষ্ঠুর তাই না!
আমাকে না দেখে যে একদিন ও থাকতে পারতো না সে আজ দিনের পর দিন কথা না বলেও বেশ কাটিয়ে দিচ্ছে। চোখ থেকে দুইফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।
একটু কাশি দিয়ে হাতে দুই কাপ কফি নিয়ে বেলকনিতে আসলো আরোহী।
এক কাপ আমাকে দিয়ে কাপে চুমুক দিয়ে বলতে লাগলো:
-চোখের পানি টা মুছে ফেলো আপু।
তোমাকে কাঁদতে দেখলে আমার ভালো লাগে না।
ছোট থেকেই তোমাকে সংগ্রাম করে বড় হতে দেখেছি।যে-কোনো সমস্যা থেকে পালাতে দেখিনি। আমি জানি যত বড় সমস্যাই আসুক না কেন তুমি ঠিক সামলে নিতে পারবে।
-বাহ! আমার ছোট্ট বোনটা দেখি বড় হ’য়ে গিয়েছে। কত সুন্দর সুন্দর কথা বলতে শিখেছে।
মন খারাপ করিস না আমার কিছু হয়নি।
দু’জনের মাঝে টুকটাক কথায় বেশ কিছু সময় কেটে গেলো সাথে কফিটাও শেষ হয়ে গেলো।
কাপটা আরোহীর হাতে দেওয়ার সময় ওর হাতের দিকে তাকাতেই একটা গভীরভাবে আঁচড়ের দাগ দেখতে পেলাম।
অজানা কারণেই রোজার নখের মাঝে জমে থাকা রক্তের কথা আমার মনে পরে গেলো।
যেগুলো ঠিক এমন শক্তভাবে আঁচড়েই আসতে পারে।

.
.
.
চলবে….

লেখিকা: Mimi Sultana

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here