বৈধ_ধর্ষণ,৬,৭

0
1074

#বৈধ_ধর্ষণ,৬,৭
#মিমি_সুলতানা

পর্ব ৬
____________
.
.
-এমনিতেই ছিড়ে গিয়েছে না-কি কারো সাথে হাতাহাতি করতে গিয়ে ছিড়লো?
কথাটা শুনতেই আরোহী থতমত খেয়ে অভিযোগ আর অভিমানের নজরে আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো।
ও হয়তো এমন একটি কথার শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
-আজকাল কি হয়েছে আপু তোর?
কি সব অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্ন করিস আমাকে!
কথাটা আরোহী বেশ রেগেই বললো।তবে ওর রাগের থেকেও বেশি যেটা আমার মাথায় আসছে সেটা হলো আরোহীর মালার পুঁথি রোজার রুমে কি করে গেলো।
আমি জানি আরোহীকে প্রশ্ন করে কোনো লাভ হবে না, সবটা আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে।
-এখন আমার একটু একা থাকতে ইচ্ছা করছে। তুই তোর রুমে গেলে ভালো হতো।
বিরক্তি নিয়েই আরোহীকে কথাটা বললাম।
আরোহী অভিমান জমিয়ে রুম থেকে দ্রুত হেঁটে বের হয়ে গেলো।
.
.
.
.
.
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে শুয়ে থাকলাম।
হঠাৎ করেই চিৎকার করতে করতে আমার ননদের প্রবেশ। দরজা বন্ধ করে এসেই আমার চুল ধরে বলতে লাগলো-
-খুব সাহস বেড়েছে তাই না!
আমার ভাইয়ের মাথায় ফুলদানি ছোঁড়া!
এটা যে কতোবড় ভুল ছিলো তোর সেটা আজ বুঝবি বলেই সমস্ত শক্তি দিয়ে আমার গালে একটা থাপ্পড় দিলো। পুরো মাথাটা যেন ঝনঝন করে উঠলো। একটা থাপ্পড়েই থেমে থাকলো না সে এভাবেই এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় দিতেই লাগলো।আমার গালে অনুর হাতের ছাপ পড়ে গিয়েছে,
আমার ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে, শরীরটা রক্তবর্ণ হয়ে গিয়েছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। আমিও নিজেকে আর রক্ষা করার চেষ্টা করছি না।
জানি, একটা সময় পরে অনু নিজেই হাঁপিয়ে গিয়ে আমাকে ছেড়ে দিবে।
“পরবর্তীতে যদি এমন কিছু আমি করতে দেখেছি তাহলে তোর অবস্থাটা কি হবে সেটা আশা করি বুঝে গিয়েছিস ” কেটে টুকরো টুকরো করে কুকুরকে খাইয়ে দিব।
কথাটা বলেই আমাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে ও চলে গেলো আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে ড্রেসিং টেবিলের উপর গিয়ে পড়লাম। মাথায় আঘাত লেগে কেটেও গেলো অনেকখানি। ড্রেসিং টেবিলের আয়নার আবার আমার আগের সেই প্রতিচ্ছবি “বিধ্বস্ত প্রজাপতিটাকে” দেখতে পেলাম।
.
.
.
পুরো শরীর ব্যাথায় কাতর। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
পাশে তাকিয়ে দেখি আরোহী আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে আর কাঁদছে।
আরোহীর থেকে জানতে পারলাম আজ আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ী এসেছেন। দু’জন মিলে গ্রামে গিয়েছিলেন।
আমার শ্বশুর শাশুড়ী আমাকে প্রথমদিকে পছন্দ করলেও পরে অনুর মিথ্যা অপবাদের কারণে এখন আগের মত ভালো জানেন না। হয়ত তারা ঢুকতেই অনু বানিয়ে বানিয়ে একগাদা নালিশ করেছে আমার নামে।
আমি আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ীর সাথে কথা বলতে গেলেই শুরু হবে অপমানের আরেক নতুন অধ্যায়।
.
.
.
.
রুমে ঢুকতে গিয়ে শুভ দেখতে পেলো আরশী ঘুমিয়ে আছে আর তার হাত ধরে পাশে বসে কাঁদছে আরোহী।
আরোহীকে দূর্বল হতে দেখে পৈশাচিকতা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো শুভর। ধীরপায়ে এগিয়ে পেছন থেকে আরোহীর স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতেই চমকে গেলো আরোহী।
ও পেছন ফিরে না দেখেই বুঝতে পারছে এটা কার কাজ হতে পারে। এই বাসায় এসেছে ধরেই এমন পরিস্থিতির শিকার ওর প্রায়ই হতে হয়।
আরশীর হাত ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো ও। শুভও আরোহীর পিছু পিছু রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
.
.
.
-তোমাকে আমি বলেছিলাম তুমি চাইলেই তোমার বোনের সাথে হওয়া সবকিছু থামাতে পারো।
কিন্তু তুমি তো আমার কথা শুনলেই না। না শুনলে এমন হবে এটাইতো স্বাভাবিক। বাসা থেকে অনু ওর খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, সাথে ঔষধ দেওয়াও নিষেধ। এই অবস্থায় যদি আমি আবারও আরশীর সাথে কিছু করি সে আদৌ বেঁচে থাকবে কি-না কিংবা বেঁচে থাকলেও কিভাবে থাকবে সেটা আমি বলতে পারছি না।
আরোহীর বিছানার উপর বসেই শুভ এক নাগাড়ে কথাগুলো বলল।
জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে তখন থেকে কেঁদেই চলেছে আরোহী। প্রতিবাদ করার ভাষা তার জানা নেই।আরোহী না পারছে নিজের অসম্মান মেনে নিতে আর না তো মেনে নিতে পারছে আরশীর সাথে হওয়া অন্যায়কে। কিন্তু ওর কাছে যেটা এখন সবচেয়ে বেশি মূল্যবান সেটা হলো আরশীর জীবন। ও এতোদিনে এটা বুঝে গিয়েছে যে, শুভর মতো জানোয়ার নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য সব করতে পারে।
আরোহীর কোনো উত্তর না পেয়ে শুভ উঠে এসে আস্তে করে আরোহীর কোমড়ে হাত দিলো।আরোহীর কোনো বাঁধা না পেয়ে এতোদিনের পৈশাচিকতা আজ যেন দিগুন হয়ে উঠলো। এতোদিন ধরে মনে পুষে আসা নোংরা আকাঙ্ক্ষা আজ সফলের পথে ভাবতেই একটা নোংরা আনন্দে কেঁপে উঠলো শুভ।
বাঁধা দেওয়ার মতো কোনো শক্তি নেই আরোহীর।তার হাত আজ শিকলে বাঁধা। শুধু গাল বেয়ে অনবরত পড়ে যাচ্ছে কয়েক ফোঁটা নোনাজল।
.
.
.
.
আরোহী কে কোলে তুলে বিছানার উপর শুইয়ে দিলো শুভ। এই মূহুর্তে আরোহীর ইচ্ছে করছে জানোয়ারটাকে শেষ করে দিতে কিন্তু এমন করলে আরোহীর পরিবারের কেউ যে এদের নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পাবে না সেটাও সে ভালো করে জানে। আরোহীর মনে হচ্ছে ওর শরীরের উপর কোনো বিষাক্ত পোকা কিলবিল করে বেড়াচ্ছে। তীব্র ঘৃণায় ওর গা গুলিয়ে উঠলো তবুও কিছু বলার ক্ষমতা তার নেই।
অসহ্যকর ব্যাথায় কাতরাতে লাগলো আরোহী। রেহাই পাবার জন্য নানাভাবে অনুরোধ করতে লাগলো সে। এই যন্ত্রণা ও আর নিতে পারছে না। আরোহীর কাকুতি-মিনতি দেখে শুভর হিংস্রতার নেশা আরও বেড়ে গেলো। সে আরোহীর মুখে কাপড় ঢুকিয়ে নিজের চাহিদা পূরণ করতে লাগলো।
.
.
.
কিছুক্ষণ পরে শুভ আরোহীকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তীব্র যন্ত্রণায় আরোহীর নড়বার শক্তিটুকুও নেই। বিছানা রক্তে ভিজে আছে। নিজের এতোদিনের যত্ন করে তুলে রাখা সম্মান আজ একটা জানোয়ার খুঁটে খুঁটে শেষ করে দিলো আর সে কিছুই করতে পারলো না ভেবে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়লো আরোহী।
এই যন্ত্রণা তার বোন আরশী এতোদিন ধরে সহ্য করে আসছে ভেবেই ও শিউরে উঠলো।
.
.
.
.
দীর্ঘ সময় ওভাবেই কাটিয়ে দিলো আরোহী।
ফাহাদের সামনে ও কিভাবে যাবে?
দীর্ঘ ৬ মাসের সম্পর্ক ফাহাদের সাথে। কতশত স্বপ্ন ছিলো দুজনের। ভালোবাসায় কোনো কমতি নেই। একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু আজ যদি ফাহাদ এই ব্যাপারটা জানতে পারে তাহলে কি মেনে নেবে ওকে?
শারীরিক যন্ত্রণার থেকে মানসিক চাপ টাই যেন বেশি ভারী হয়ে উঠলো আরোহীর কাছে।
ফাহাদকে জানাবে কি জানাবে না এক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে লাগলো সে।
“আমি মিথ্যা বলা একদমই পছন্দ করি না। বা আমার কোনো আপনজন আমার থেকে কিছু লুকাক সেটাও মেনে নিতে পারি না। আমাদের সম্পর্কটাকে আমি খুব সম্মান করি, আমি চাই না সেই সম্মানটা কখনো নষ্ট হয়ে যাক। যদি কখনো সেই সম্মানটা নষ্ট হয়ে যায় ভেবে নিও ভালোবাসাটাও আর নেই। তাই বলছি সত্যি যতোই কঠিন,যত কষ্টকরই হোক না কেন আমাকে সত্যিটাই বলো আমি মানিয়ে নিতে পারবো। তবুও মিথ্যার আশ্রয় নিও না বা আমার থেকে কিছু লুকিও না”
ফাহাদের বলা কথাগুলো বারবার আরোহীর কানে বাজতে লাগলো। আরোহী সিদ্ধান্ত নিলো ফাহাদ যদি এটা শোনার পরে আমার পাশে নাও থাকে তবুও আমি ওকে সত্যিটা বলবো। সত্যি লুকিয়ে আমি কখনোই ওর সাথে ভালো থাকতে পারবো না তাই সত্যিটা জানানোর জন্য যদি ও আমাকে ছেড়েও চলে যায় তবুও সেই কষ্টটাকে আমি আপন করে নেবো।
.
.
.
কয়েকবার ফোন বাজতেই কল রিসিভ করলো ফাহাদ। ওপাশ থেকে ফাহাদের কন্ঠ-
-এতক্ষণ পরে মনে পড়লো আমার কথা!
আরোহী নিচু স্বরে সমানে কান্না করেই যাচ্ছে।
আরোহীর থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে ফাহাদ আবার বললো
-কি হয়েছে রুহী?আমাকে খুলে বলো সবটা।
আরোহীর নিরবতা বোঝার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে এই ফাহাদের মাঝে। ওর নিরবতার পেছনে লুকিয়ে থাকা কারণ ফাহাদ কিভাবে যেন নিমিষেই বুঝে যায়।
নিরবতা ভেঙে আরোহী বলতে শুরু করলো।
-তুমি বলেছিলে, সত্যি যত কঠিনই হোক না কেন আমি যেন কখনো তোমার থেকে না লুকাই। তাই আজ তোমাকে এই সত্যিটা বলার মতো দুঃসাহসটা করেছি।
“একটা মেয়ের কাছে তার সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার ভার্জিনিটি। যেটা আজ আমি হারিয়েছি, যদিও সবটাই নিজের অনিচ্ছায় বলতে গেলে এক প্রকারের ধর্ষণ, তবুও আজ আমি নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী। কারণ প্রতিটা ছেলেই চায় তার জীবনসঙ্গিনী সকল নোংরা দৃষ্টি থেকে দুরে থাকুক কিন্তু আমি তোমার সেই চাওয়াটা যত্ন করে রাখতে পারিনি ”
ধীরে ধীরে ফাহাদকে সবটা খুলে বললো আরোহী।
সবটা বলা শেষ হতেই ওপাশ থেকে কলটা কেটে গেলো। আরোহী বুঝতে পারলো ফাহাদ প্রচন্ড রেগে আছে। রেগে পরবর্তীতে ফাহাদ কি করবে সেটাও তার জানা।
তবে এই সত্যিটা জানার পর ফাহাদ সম্পর্কটা আদৌ রাখবে কি না সেটা নিয়ে গভীর চিন্তায় পরে যায় আরোহী।
.

.চলবে….

#বৈধ_ধর্ষণ
#মিমি_সুলতানা
পর্ব ৭
___________
সবটা বলা শেষ হতেই ওপাশ থেকে কলটা কেটে গেলো। আরোহী বুঝতে পারলো ফাহাদ প্রচন্ড রেগে আছে। রেগে পরবর্তীতে ফাহাদ কি করবে সেটাও তার জানা।
তবে এই সত্যিটা জানার পর ফাহাদ সম্পর্কটা আদৌ রাখবে কি না সেটা নিয়ে গভীর চিন্তায় পরে যায় আরোহী।
.
.
.
.
আরোহীর সাথে কথা বলা শেষ হতেই ফাহাদ তার বাসার দারোয়ান “সিদ্দিককে” ডেকে বললো আজ তাঁকে নিয়ে বাহিরে ঘুরতে যাবে ভালো জামাকাপড় পরে রেডি হয়ে নিতে।
সিদ্দিক আজ বেজায় খুশি। খুশিতে সে ৫ মিনিটের মধ্যেই ফাহাদের সামনে হাজির হলো।
চুরি করে ফাহাদের বডি স্প্রেটাও বার দুয়েক মেরে নিলো গায়ে।
“আমার স্প্রে দিয়েছিস তাই না!”?
জিজ্ঞেস করতেই,
সিদ্দিক সবগুলো দাঁত বের করে হেঁসে দিয়ে বললো-
-সেদিন টিভিতে দেখেছিলাম এই স্প্রে টা লাগালে না-কি অনেক মেয়ে টেয়ে পটে তাই আরকি একটু..
ফাহাদ কিছু না বলে ওকে নিয়ে বের হয়ে গেলো।
সিদ্দিক যা যা খেতে পছন্দ করে সব কিছু ওকে আজ মন ভরে খাইয়েছে ফাহাদ।
সিদ্দিক আজ বেজায় খুশি। এমন আদর সে আগে কোনদিনও পায়নি। বাসায় ফেরার পরে খুশিমনে গেটে ডিউটি করতে দাঁড়িয়ে যায় সে। কিন্তু ফাহাদ সিদ্দিকের হাত ধরে আদর করে তাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়।নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর রুমের ভেতর থেকে ভেসে আসে ভয়ানক করুণ চিৎকার। ওরে মা গো.. ওরে বাবা গো..
ভেতর থেকে ধুপ ধাপ মার আর চিৎকারের আওয়াজে পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠে।
কিছুক্ষন পর ফাহাদের রুম থেকে টলতে টলতে বের হয় সিদ্দিক। সিদ্দিক রুমে ঢুকেছিলো ফিটফাট জামাকাপড় পরে। আর বের হয়েছে ছেড়া জামাকাপড়, মাথায় অগোছালো চুল নাক থেকে গড়িয়ে পরা রক্ত নিয়ে। সিদ্দিকের
নাকের ভেতর ফাহাদ আংগুল ঢুকিয়ে কিছুক্ষন বসে ছিল। হাতের না, পায়ের।
সিদ্দিক বেচারা কেন আজ বেদম প্রহার খেলো তা সে নিজেও জানেনা। তবে সে নিজে নিজে সতর্ক হয়ে গেল, এরপর ফাহাদ ওকে আদর করে কোথাও ঘুরতে নিলে সে আর জীবনেও যাবেনা।
.
.
.
সিদ্দিককে বেদম প্রহার করে নিজের ভেতর থাকা রাগ ঝাড়ে ফাহাদ। ফাহাদের কোন কারণে রাগ হলে মাথা ঠান্ডা করার উপায় হচ্ছে সিদ্দিককে রাম ধোলাই দেয়া।
এরপর সে ঠান্ডামাথায় ফোন দেয় আরোহীকে।
কয়েকবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে কলটা রিসিভ করতেই ফাহাদ বলে ওঠে
-তোমার আপুর নাম্বারটা দাও তো।
কেন? প্রশ্নটা করতে গিয়েও থেমে যায় আরোহী।
ও জানে ফাহাদ একবারের বেশি কোনো কিছুই বলতে পছন্দ করে না, তাই আর কথা না বাড়িয়ে নাম্বারটা দিয়ে দিলো।
নাম্বার পাওয়ার সাথে সাথে কলটা কেটে দিলো ফাহাদ।
.
.
.
.
.
দিন শেষে রাত চলে এলো।
আমার জ্বরটা কমে গেলেও শরীরটা এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। কিন্তু আমার মন শরীরের এই দুর্বলতাকে মেনে নিতে চাচ্ছে না। সত্যের সন্ধানের আকাঙ্ক্ষা যেন মৌমাছির মতো পিছু করে বেড়াচ্ছে।
আজ বিকাল থেকে আরোহী আমার কাছেই আছে। কিন্তু ওর মুখটা খুব মলিন।
কি হয়েছে? প্রশ্নটা বিকেল থেকে বার বার করেও কোনো উত্তর আমি পাইনি কিন্তু ও যে কিছু একটা লুকাচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি।
এসব ভাবার মাঝেই হঠাৎ করেই ফোনের স্ক্রিনে অচেনা একটা নাম্বার ভেসে উঠলো। ইচ্ছে না থাকা সত্যেও কলটা রিসিভ করলাম। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে সুন্দর করে একটি সালাম আসলো।
সালামের উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওপাশ থেকে বলতে শুরু করলো –
-আপু আমি ফাহাদ। আমাকে হয়ত আপনি আরোহীর বন্ধু বলেই চিনেন কিন্তু এক বাহিরেও আমাদের একটা সম্পর্ক আছে আপাতত আমি এই বিষয়ে যেতে চাচ্ছি না এরথেকেও বড় একটা বিষয় আপনাকে জানাতে যাচ্ছি যেটা আপনার কাছে একদমই অজানা।
ফাহাদের কথাগুলো কেন যেন মনের গভীর পর্যন্ত কাঁপিয়ে তুলছে। মন বলছে এমন কিছু একটা আমার শুনতে হবে যেটা আমার কাছে মোটেও সুখকর হবে না তবুও “হুম বলো” বলে আমি নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে লাগলাম।
-আপনি কি জানেন আরোহী বর্তমানে কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে! অবশ্য আপনার জানার কথাও না আপনি তো নিজেই এমন পরিস্থিতির শিকার। ধীরে ধীরে সবটা খুলে বলতে লাগলো ফাহাদ।
আমি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু দু-চোখ বেয়ে টপ টপ করে অনবরত নোনাজল ঝড়ে পড়ছে। আরোহী কিছুটা আঁচ করতে পেরে উঠ চলে যেতে গেলেই আমি খপ করে ওর হাত ধরে বসলাম।
ফাহাদ কলটা কাটতেই আমি আরোহীকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম। আরোহী ও নিজেকে সামলাতে না পেরে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো।
কান্না করতে করতে হেঁচকি ওঠা ভাঙা কন্ঠ নিয়েই আরোহী বলতে লাগলো-
-এখানে এসেছি ধরেই ব্ল্যাকমেইল করে প্রায়ই আমাকে নানাভাবে হেনস্তা করেছে জানোয়ারটা। সেদিন হাতের আঁচড়ের দাগটাও ওর দেওয়া ছিলো। তোমাকে আমি এতোকিছুর মধ্যে আর নতুন করে চিন্তায় ফেলতে চাইনি তাই সেদিন এড়িয়ে গিয়েছিলাম। এমনকি আমার পুঁথির মালা টাও ওর হাতে টান লেগে ছিঁড়েছে।
সবটা শুনে আমি অকারণেই আরোহীকে সন্দেহ করেছিলাম ভেবে নিজের মধ্যে অন্যরকম একটা অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো।
আসল অপরাধী হয়ত এটাই চেয়েছিলো তাই তো সবসময় আরোহীকে দোষী ভাবার প্রমাণগুলো সাজিয়ে রেখেছিলো।
এইটুকু বোন আমার কত কিছুই না সহ্য করেছে। কিন্তু ওর সাথে শুভর করা এমন জানোয়ারের মত আচরণ আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। অনেক হয়েছে এবার এর একটা রফাদফা করার দরকার। কিন্তু আফসোস এক জায়গায় ই ওই জানোয়ারটার হাত থেকে আমি আমার বোনটাকে রক্ষা করতে পারলাম না।
.
.
.
“ঠিক ১২ টায় আমি তোমার জন্য স্টোর রুমে অপেক্ষা করবো। খুনীর বিরুদ্ধে কিছু তথ্য পেয়েছি সাথে কিছু প্রমাণ ও সংগ্রহ করেছি। মনে রেখো ঠিক রাত ১২ টা। —ইভাদ….”
কিছুক্ষণ আগেই মেসেজটি আমার ফোনে আসে। তখন থেকে যেন আমার সময় কাটছেই না।
১১ টা বাজে এখনো ১ ঘন্টা। আসল অপরাধী কে জানার জন্য আর তর সইছে না। কিন্তু আবেগে বিবেক হারালে আমার চলবে না। ভেতরের উত্তেজনাটা কাউকে বুঝতে না দিয়ে আমার উচিৎ সঠিক সময়ের অপেক্ষা করা।
.
.
.
অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই সময় টা চলেই এলো।
আজও শুভ আমার কাছে নেই সময় যেন আমাকে একটি সুবর্ণ সুযোগ দিলো। আমি সতর্কতার সহিত সবার চোখ এড়িয়ে স্টোর রুমের দিকে যেতে লাগলাম। স্টোর রুম কোথায় সেটা আমার জানা থাকলেও এদিকে কখনে আসা হয়নি। স্টোর রুমের আশেপাশের রুমগুলো একদমই ফাঁকা। চারদিকে নিশ্চুপ অন্ধকার।
একটা দরজার উপরে বড় করে স্টোর রুম লেখা দেখে আমি দরজাটা হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। আমি আস্তে করে ইভাদ বলে কয়েকবার ডাক দিলাম কিন্তু কারো সাড়াশব্দ পেলাম না।
ফোনের টর্চটা অন করে একটু সামনে আগাতেই আঠালো কিছু একটাতে পা পরে পিছলা খেয়ে আমি হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেলাম। অনুভব করলাম আমার নিচে আরো একটা অস্তিত্ব আছে।
সাথে সাথে আমার দেখা সেই ভয়ংকর স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে গেলো,সবটা যেন সেই বিভৎস স্বপ্নের মতোই হচ্ছে। অসহ্যকর সেই স্বপ্নটা চোখের সামনে সত্যি হতে দেখছি আমি। ভয়ে নড়াচড়া করার শক্তিটাও হারিয়ে ফেললাম। কষ্ট করে দুরে ছিটকে পড়া মোবাইল টা এনে পড়ে থাকা মানুষটার মুখে আলো ফেলতেই আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। নিচে পড়ে আছে ইভাদের রক্তাক্ত দেহ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ অনেকটা সময় হয়ে গিয়েছে ও মারা গিয়েছে। খুব নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে ইভাদকে।
একজনের খুনীকে খুঁজতে গিয়ে আরেকটা খুন,আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদেরই এমন নির্মম পরিণতি দেখে আমি নিজেকে আর সংযত রাখতে পারছি না ধীরে ধীরে আঁধারের কোলে ঢলে পড়লাম।
.
.
.
.
জ্ঞান ফিরতেই আমি দেখতে পেলাম আমার আশেপাশে অনেক মানুষ। পুলিশ এসেছে বেশ কয়েকজন। সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আমি গিয়ে পুলিশকে সরাসরি বলে দিলাম, ইভাদকে খুন আমি ই করেছি।
পুলিশ এসে সাথে সাথে হাতকড়া পড়ায় আমাকে।আমার মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেয়ার কারণ একটাই। শুভর অমানবিক অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া এবং নিজের বোনকেও শুভর কবল থেকে মুক্তি দেয়া।
নিজেকে আজকাল অভিশপ্ত মনে হয়। আমার সংস্পর্শে থাকা প্রত্যেকটি মানুষেরই আমার জন্য ক্ষতি হচ্ছে। নিজের বোনটাও তার সম্মান হারালো, আমার হাত ধরে আঁধারে নিমজ্জিত জীবনকে আলোর পথে আনতে চাওয়া বন্ধু রোজারও অকালে তার জানটা দিতে হলো।
সবশেষে দিশেহারা পথের সঙ্গ দিতে আশা ইভাদও এতো নৃশংসভাবে খুন হলো।
আজ যদি আমি এভাবে থাকি তাহলে না জানি আরও কত নিরপরাধী মানুষের প্রাণ যাবে।
অভিশপ্ত এই জীবনে আর কাউকে জড়ানোর সুযোগ দেবো না।
.
.
.
চলবে।
লেখিকাঃ Mimi Sultana

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here