ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,পর্ব-১
Write : Sabbir Ahmed
রাত এগারোটা ছুঁইছুঁই। রাজশাহী স্টেশনে বসে আছি। চাকরি সূত্রে ঢাকা যাচ্ছি। দুইদিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসছিলাম। অনেক বড় একটা আশা নিয়ে নিজ গ্রামে এসেছি আর এখন খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি। যেটা হাড়িয়ে ফেলেছি সেইটা বলতেই আমার খুব লজ্জা হচ্ছে।
আমার মা তার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে অনেক বছর আগে বিশ হাজার টাকা নিয়েছিলো। তার বিনিময়ে মামা আমাদের একটা জমি দখলে নেয়। অভাব এর কারনে টাকাটা পরিশোধ করতে পারিনি। তাই আর জমি ছাড়ানো হলো না। একসময় মা চলে গেলো, উনার চিকিৎসা করতে আমাদের বাড়িটা বিক্রি করা হয়। জমি বলতে মামা যতটুকু নিয়েছে ঐটুকু থাকে।
,,
মাঝখানে অনেকটা বছর পার হওয়ার পর আসছিলাম বিশ হাজার টাকা নিয়ে জমি টা ছাড়িয়ে নিয়ে নিজ গ্রামে থাকবো কিন্তু মামা দিতে নারাজ। আমিও আর জোর করিনি। হাসিমুখে চলে আসি আমার যেহেতু কোনো সাপোর্ট নেই তাই মামার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করা বৃথা।
,,
এখন স্টেশনে বসে ভাবছি ঢাকায় গিয়ে সেই একই কাজ করতে হবে। সেই পিয়ন এর চাকরি তাতে কিছু বেতন খাওয়া খরচা চলে। একা মানুষ খরচ কম হওয়ায় কিছু টাকা জমাতে পেরেছি। আর সেইটা নিয়ে বুকে আশাও বেঁধে ছিলাম যে গ্রামে থাকবো। সেটা তো আর হলো না এক বস্তা হতাশা নিয়ে শহুরে জীবনে ফিরছি। আর চাকরির কথা কি বলব এইস এস সি এর সার্টিফিকেট আছে আর এদিকে কিছুদিন ডিগ্রি ও পড়েছিলাম তারপর পারিবারিক অভাব এর কারনে লেখাপড়ার দরজা সেখানেই বন্ধ৷ তবে একটা পড়া এখনো চালু রয়েছে সেটা হলো মানুষকে পড়া, মানুষকে বোঝা। এই সাবজেক্ট পাশ মার্ক তোলাই বেশ কঠিন। বিচিত্র রকম মানুষ সব এই পৃথিবীতে যাদের চেনা খুবই দুষ্কর।
,,
আমি কথাগুলো ভাবছিলাম আমার সামনে বসে থাকা কিছু মানুষের দিকে তাকিয়ে। তারা অনেকটা দূরেছিলো তাই তাদের চেহারা আবছা দেখছিলাম। আর তখনই খেয়া করলাম কেউ একজন আমার দিকে এগিয়ে আসছে আবছা আবছা ভাবেই মনে হচ্ছিলো ইয়াং কোনো মেয়ে।
,,
মেয়েটা এসে আমার সামনে দাড়ালো। এবার আমার চোখের আবছা ভাবটা ছাড়লো। আমি এক পলক মেয়েটাকে দেখে নিলাম। বাহহ মেয়েটাতো বেশ সুন্দরী! শুধু সুন্দরী বললে কম হবে একটু বেশি সুন্দরী। তবে তার আধুনিক ড্রেস এর সাথে তার সৌন্দর্যের কোনো ম্যাচ করছে না। আমি আবার ভাবনাতে চলে গেলাম হঠাৎ…
-এই এই কি সমস্যা আপনার (মেয়েটা ধমক দিলো)
,,
ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে স্বাভাবিক ভাবেই বললমা…
-কোনো সমস্যা নেই তো (আমি)
-আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে ছিলেন যে! পছন্দ হইছে??
,,
প্রশ্ন শুনে তো গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। একে তো মেয়ে তারপর উপর এত সুন্দরী মেয়ে আর অদ্ভুত প্রশ্ন। আমি আমতা আমতা করে বলেই ফেললাম..
-ন ন না (আমি)
-কি না?? (মেয়েটি)
-পছন্দ হয়নি
-তো তাকিয়েছিলেন কেনো
-আমার ফেস টা হয়তো ঐদিকে ছিলো কিন্তু দৃষ্টি অন্যদিকে দিয়েছিলাম
-ন্যাকা। মুখের উপর বলে পছন্দ হয়নি। কি নাম আপনার??
-শুভ
-আমি ইরা। আর আপনাকে চেনা চেনা লাগছে তাই নাম টা জিজ্ঞাস করলাম
-ওহহ
,,
তারপর ইরা নামের মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার কাজের স্থান মানে আমি যে কোম্পানি তে পিয়ন হিসেবে চাকরি করি তার কথা বলল।
-আপনি কি সেই অফিসের পিয়ন??(ইরা)
-জ্বি জ্বি (আমি)
-ওহহ আমার বাবা ঐ কোম্পানির মালিক আর আমার বাবার অফিসেই চাকরি করেন। বাবার অফিসে আমি অনেক যাই আপনি তো চা কফি এনে দেন। আমি আপনাকে চিনেছি। আপনি আমাকে চিনতে পারেননি কেনো?
-আমি আপনার দিকে তাকাইনি। আর আমি মেয়েদের দিকে কম তাকাই
-ওরে সুফি। শোনেন আপনি তাকান তবে বেশি ভাবনায় থাকেন তাই আমাকে কখনো খেয়াল করেননি।
-জ্বি এটাও হতে পারে
-আমিও হিতাহিত জ্ঞান বুদ্ধি হাড়িয়ে ফেলেছি তোকে আপনি করে বলছি কেনো তুই তো পিয়ন। আচ্ছা শোন
-জ্বি ম্যাম বলেন
-তুই তো সাধারণ বগিতে যাবি?
-জ্বি ম্যাম
-আমি কেবিনে যাবো। তুই আমার ব্যাগ দুটো একটু উঠাই দিবি তারপর তোর আসনে গিয়ে বসবি ঠিক আছে?
-জ্বি ম্যাম ঠিক আছে।
-রাগ করিস না কুলি পাচ্ছি না। আর তোকে পেয়েছি আর কাকে লাগে চেনা মানুষ তো
-জ্বি ম্যাম
-এত জ্বি ম্যাম জ্বি ম্যাম করিস কেনো??
-জ্বি না হ্যা ম্যাম ঠিক আছে আমি ব্যাগ উঠাই দিবো
-ওকে ওকে
,,
মালিক এর মেয়ে, যথেষ্ট সম্মান দিতে হবে৷ আর যা বলবে সেটা তো করতেই হবে না হলে আমার চাকরি তখনই গায়েব। এসব ভেবে লাভ নেই আর ভাবনাতে হাড়িয়ে গেলে চলবে না এক্টিভ থাকতে হবে।
,,
ট্রেন ঢাকা থেকেই আসলো। আধ ঘন্টা পর ইঞ্জিন ঘুরিয়ে আবার ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হবে। আমি ইরা ম্যাম এর ব্যাগ দুটো তার কেবিনে দিয়ে আসলাম। বকশিস সরূপ তিনি আমাকে পঞ্চাশ টাকা দিলেন। কোনো দিধা না করেই টাকাটা নিলাম। কারন আমার আগে থেকে অভ্যাস আছে।
,,
টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম ইরা ম্যাম আবার ডাকলো…
-এই শোন শোন (ইরা)
-জ্বি ম্যাম বলেন (আমি)
-নামার সময় আবার তুই আসবি ঠিক আছে??
-আচ্ছা
-আবার ঘুমিয়ে যাস না কিন্তু
-না ম্যাম ঘুমাবো না
-ওকে যা
,,
আমি আমার বগিতে গিয়ে উঠলাম। টিকেট সংগ্রহ করতে আমি অনেক দেড়ি করে ফেলেছি তাই সিট হয়নি৷ পুরো রাস্তাটা দাঁড়িয়ে যেতে হবে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম অনেক সিট ফাঁকা। সামনের দুই একটা স্টেশন পর এসব সিট আর ফাঁকা থাকবে না। তাই মনে মনে ঠিক করলাম সিটে বসবো না দাঁড়িয়েই যাবো।
,,
ট্রেন ছাড়লো আমি দরজায় দাড়িয়ে আছি। ঠান্ডা হাওয়া আমার শরীর টাতে লাগছে। আমি ভাবনায় আবার ডুব দিলাম ভাবতে লাগলাম পুরোনো দিনের কথা। মাঝে মাঝে নিজের ভবিষ্যৎ এর কথাও ভাবলাম তাতে যা ফলাফল পেলাম সেটা শূন্য। কারন ভেতরে খুব হতাশা কাজ করছিলো।
,,
অর্ধেক পথ আসতেই স্টেশন ছাড়াই ট্রেন টা থেমে যায়। যান্ত্রিক কোনো ত্রুটি হয়েছে হয়তো। বিশ মিনিট পার হবার পর খবর পেলাম ভোরের আগে ট্রেন এখান থেকে এক চুল নড়বে না আর এখন রাত একটা বাজে। একেকজন একেক কথা বলছে। কেউ বলছে লাইনে সমস্যা, কেউ বলছে ইঞ্জিনে। আমি ঐসব কথা থেকে কান ফিরিয়ে নিয়ে নিজের ভাবনাতে আবার মন দিলাম।
,,
হঠাৎই..
-এই শুভ
পেছনে তাকিয়ে দেখি ম্যাম দাঁড়িয়ে।
-জ্বি ম্যাম বলেন (আমি)
-তুই উঠ
-ম্যাম কিছু লাগবে??
-না, আমি একটু ট্রেন থেকে নামবো
-ম্যাম বাইরে নামা ঠিক হবে না। যে অন্ধকার এর মধ্যে কি বিপদ লুকিয়ে আছে কে যানে??
-কিসের বিপদ?
-বাইরে সাপ বিচ্ছু অনেক কিছু থাকতে পারে
-কিচ্ছু নেই চল নিচে নামবো
,,
এই হলো আলালের ঘরের দুলালি মন যা চায় সেটাই করবে। ম্যামকে নিয়ে ট্রেন থেকে নামলাম। নেমে দেখি অনেকেই নিচে দাঁড়িয়েছে। কেউ বাসায় ফোন করে সমস্যার কথা বলছে আবার কেউ সিগারেট টানছে।
ম্যাম আমার সাথে কথা বলা শুরু করলো….
,,
-দেখ জায়গা টা অনেক সুন্দর তাই না?? (ইরা)
-অন্ধকারে তেমন কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না(আমি)
-চোখ না মন দিয়ে দেখতে হয়
-তবে ম্যাম আকাশ টা বেশ সুন্দর লাগছে। অনুজ্জ্বল তারা গুলো দেখা যাচ্ছে
-আমি তো অনুজ্জ্বল অন্যকিছু দেখতে পাচ্ছি
-কি ম্যাম??
-এই যে দেখ একটা টি-স্টল চল যাই
-এখন ওখানে গিয়ে কি হবে?
-চা খাবো চল চল বেশ মজা হবে। শীত এর মধ্যে এত রাতে বাইরে চা খাওয়ার মজাটাই আলাদা।
,,
আমি তো আর মানা করতে পারবো না। মানা করলেই বকা দিবে। কেনো যে এর সাথে দেখা হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে বাকি রাতটায় বেশ প্যারায় রাখবে।
,,
টি-স্টল এর কাছে পৌঁছাতে দেখি কিছু যাত্রী এখানে আগেই এসেছে। এই দোকান টার আশে পাশে আর একটা দোকান ও নেই৷ হাতে চা নিয়ে আমি দোকানি কে বললাম…
– চাচা এমন একটা জায়গায় দোকান দিয়েছেন কি মনে করে??(আমি)
-বাবা সে অনেক কাহিনী। বাজারে দলাদলি চলে। আমার লোকজন না থাকায় ওখানে দোকান টা নেওয়া হয়নি। রাগের মাথায় নিজের জায়গাতেই দোকান টা দিয়ে বসি
-বাহহ বেশ করেছেন। তা চলে কেমন??
-আলহামদুলিল্লাহ ভালই চলে
-হুমম একটা কথা বলি রাগ করে এখানে দোকান দিয়ে ভালই করেছেন। এর জন্য আপনার হাতের চা খেতে পারলাম
,,
আরও কিছুক্ষণ কথা হলো। বিলটা আমি দেই। ম্যাম আর আমি চলে আসি। উনার সাথে আড্ডা দিতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু মালিক পক্ষের লোক আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা বেয়াদবি হবে। আমি কিছু বলছি না চুপচাপ তার পেছন পেছন হাঁটছি।
,,
আমার চুপ থাকা দেখে ম্যাম হয়তো কিছু একটা ভেবেছে। আমাকে বলল..
-কিরে কথা বলতে পারিস না? দোকানির সাথে তো বেশ জমিয়ে কথা বললি এখন চুপ কেনো??(ইরা)
-ম্যাম কি বলব?(শুভ)
-সেটা কি আমাকে বলে দিতে হবে? দোকানি কি তোকে কিছু বলেছিলো?
-না
-তো কিছু বল সারা রাত তো এভাবে চুপ থাকতে পারবো না
-হুমম। আপনি রাজশাহী তে কোথায় আসছিলেন
-আর বলিস না আমার একটা বান্ধবীর বিয়ে হলো। বিয়েতে আসছিলাম
-ওহহহ
-তুই বিয়ে করেছিস?
-না ম্যাম
-কেনো?
-কাকে বিয়ে করবো?
-কাকে করবি মানে! দেশে কি মেয়ের অভাব পড়ছে
-আসলে সেটা না
-তো কি??
-আমার পরিবার নেই। আমার বিয়ে করে করা একটু সমস্যা
-তো সমস্যার কি আছে দেশে অনেক মেয়ে আছে যাদের পরিবার নেই তাদের মধ্যে একজনকে বিয়ে করবি
-ম্যাম ঐরকম হলেও আমি করবো না।
-কেনো?
-সেটা না বলি
-ঐ সব বলতে হবে আমাকে….
চলবে