ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,13 END PART
Write : Sabbir Ahmed
-ওহহ এই ব্যাপার (আমি)
-জ্বি এখন বাসায় সব চলবে(ইরা)
-সব চলবে মানে??
-বাসায় চলো, বাসায় গিয়েই বুঝবোনি? ঠিক আছে পাগল??
,,
কাজ শেষে আমরা বাসায় আসলাম। প্রতিদিন এর মতো আজ আমাকে আর একা খেতে হলো না। সবার সাথে বসে খাচ্ছি। বেশ ভয় নিয়েই টেবিলে বসে আছি। ধীরে ধীরে সবার সাথে পরিচিতি হলাম।
,,
খাওয়া শেষে ইরার বাবা আমাকে ডেকে বাইরে নিয়ে গেলেন।
-দেখো বাসার সবাই তোমাকে মেনে নিচ্ছে শুধু আমি বাদে। এর পেছনে কারন ও আছে। তুমি সামান্য একটা মানুষ কত বড় ফ্যামিলির দিকে হাত বাড়িয়েছো সেটা খেয়াল করেছো??(ইরার বাবা)
-…(আমি চুপ)
-ধরো কাল তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিলাম, তারপর আমার মেয়েকে নিয়ে উঠবে কোথায়?
-স্যার বেয়াদবি মনে না নিলে একটা কথা বলি?
-বলো
-আপনার মেয়ে বলেছে ও কাজ করে খাওয়াবে কিছুদিন। এর মাঝে আমিও কিছু একটা করে ফেলতে পারবো ওট সাহায্যে। আমরা এমনটাই ভেবেছি
-ওহহ বউ এর হাতের কামাই খাবে?
-না বন্ধুর হাতের কামাই খাবো
-মুখের উপর কথা বলছো
-আমি তো বলেই নিলাম কিছু মনে করবেন না
-ওকে দুদিন পর তোমাদের বিয়ে। সমাজের নিয়ম অনুযায়ী আমার মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে যাবে, কোথায় যাবে সেটা আমি জানি না ওকে?
-জ্বি স্যার
-কথাটা ইরাকেও জানিয়ে দিয়ো
-জ্বি
,,
ইরার বাবা আমাদের উপর বেশ রেগে আছেন। রাগাটাই স্বাভাবিক যা কাজ করেছি। বাইরে দেড়ি না করে ইরার কাছে গেলাম। গিয়ে কথা গুলো বললাম।
-এহহহ এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে! ভাবলাম মাস খানেক একটু প্রেম ট্রেম করবো। এখানে ওখানে ঘুরতে যাবো সেগুলো মনে হয় আর হবেই না। বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে
-হ্যা আগে তো বাসা ঠিক করতে হবে
-তুই ব্যাটা এত্ত টেনশন নিতেছোস কেন? তুই বাবা কে বলেছিস বন্ধুকে বিয়ে করতেছিস তাই না?
-হুমমম
-তো! তোর বন্ধু থাকতে এত টেনশন কেনো? শোন আমি একটা ফ্ল্যাট কালকের মধ্য কিনে নিবো আর হ্যা সংসার করতে অনেক কিছুর প্রয়োজন সেগুলোও কিনতে হবে
-হুমমমমম
-বিয়ের পর সংসারে তুমি আমি ফিফটি ফিফটি খরচ দিবো
-আমি এতো টাকা কই পাবো
-ওহহ হ্যাঁ তাও তো একটা কথা, আচ্ছা শোন উপায় একটা বের করেছি। আমি দিবো আশি শতাংশ আর তুই বিশ শতাংশ । আর ভালবাসা দিবি তুই নিরানব্বই শতাংশ আর আমি এক শতাংশ।
-কিহহহ! না আপনি আমাকে ভালবাসবেন না?
-যদি সংসারে ফিফটি ফিফটি খরচ দিতে পারেন ভালবাসা টাও তেমনই ভাগ হবে
-এটা কোনো কথা?
-তো??
-নিজেদের মধ্যে রাজনীতি করাটা কি ঠিক
-দেখ আন্দোলন করতে থাক কাজ হয় কি না।
-মনটা একটু নরম করেন। আপনি যদি আমাকে এক শতাংশ ভালবাসা দেন তো ভালবাসার পিপাসায় আমি তো মারা যাবো
-ঐইইই মুখে ওসব মারা যাওয়ার কথা আনবি না
-জ্বি ম্যাম
-যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে
-আচ্ছা
,,
ফ্রেশ হয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। কারন দরজা খোলা থাকলে আজ আর ঘুমাতে দিবে না। ঘুম প্রায় চলেই আসছে সেই সময় ডাকাডাকি শুরু করলো।
,,
মুখে বিরক্তি নিয়ে দরজা খুললাম।
-ঐ এখনই ঘুমাচ্ছিস কেনো? চা রেডি চল ছাদে যাবো (ইরা)
-ওকে চলেন
,,
ঘুমের বারোটা বেজে গেলো। দুজনে গিয়ে ছাদের মাঝখানে কিছু কাঠ খড়ি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে নিলাম। উনার সব কথাই শুনতে হচ্ছে। এদিকে আমার নাজেহাল অবস্থা। নিচে থেকে উপরি এতগুলো কাঠ-খড়ি আনা, তাও আবার চোখে ঘুম নিয়ে! প্রচণ্ড রকমের বিরক্ত লাগছিলো।
,,
আমি আর ইরা আগুনের খুব কাছাকাছি বসলাম। সে আমার শরীর ঘেষে বসলো। সে জগ থেকে একটা কাপে চা ঢাললো। তারপর কাপটা আমার হাতে দিয়ে বলল…
-আগে তুুমি খাও, এই পুরোটা না কিন্তু যাস্ট এক চুমুক তারপর আমি তারপর আবার তুমি খাবে (ইরা)
,,
ইরা কথাটা বলে আমার হাতের মধ্যে দিয়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলো আমি এক চুমুক খেলাম। আর তারপর উনার মুখে ধরলাম। আমি যে জায়গাটায় ঠোঁট লাগিয়েছিলাম ঠিক সেখানে সে ঠোঁট লাগিয়ে চা খেলো।
,,
খাওয়া শেষে ইরা আমার কাঁধে মাথা রাখলো।
-ঐ একটা গল্প বলো (ইরা)
-রুমে গিয়ে বলব নি (আমি)
-জ্বি না শুভ সাহেব এখানে বলেন
-কি বলব মাথায় আসছে না
-আনরোমান্টিক একটা বর। তোমার কিছু বলতে হবে না আমিই বলছি শুনো। গান বলব ভালভাবে শুনবা
-হুমমম বলো
-আমার কাছে তুমি মানে সাত রাজার ধন, আমার কাছে তুমি মানে অন্যরকম, আমার কাছে তুমি মানে আমার পোষা পাখি, দিনে রাইতে চোখ বুঝিয়া তোমায় আমি দেখি, তোমার কাছে হয়তো বন্ধু আমি কিছু না, তাই তো তোমার স্বপ্নে বন্ধু আমি আসি না…
-এই ওয়েট ওয়েট (আমি ইরাকে গানের মাঝে থামিয়ে দিলাম)
-কি হয়েছে? থামালে কেনো?
-তুমি আমার স্বপ্নে আসো তো
-আরে গাধা এটা গানের লাইনে আছে তাই বলছি, আমি তো জানি তুমি আমাকে কেমন ভালোবাসো। তুমি গানটা পারো??
-হুমমম
-ওহহ দারুন চলো একসাথে গাই
তারপর থেকে শুরু করলাম..
-আমি মানে তুমি আর তুমি মানে আমি, আমার কাছে আমার চেয়ে বন্ধু তুমি দামি… (গলা ফাঁটিয়ে দুজন গান করলাম)
,,
আমাদের আওয়াজ শুনে ছাদে ছোট বড় সবাই এসে হাজির। আমরা সবাই গোল হয়ে বসলাম। আগুনটাও বড় করা হলো। তারপর সবাই মিলে আবার গান ধরলাম। রাতটা যে এমন হবে কখনো কল্পনাও করিনি। বাসার সবাই এসেছে শুধু ইরার বাবা বাদে।
,,
আড্ডা শেষে রুমে আসলাম৷ ইরা তার রুমে গিয়ে ঘুমিয়েছে। আমি আমার রুমে শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকাল বেলা অফিসে গেলাম দুজন। আগেরদিনের মতো ডিউটি করে রাতে বাসায় ফিরলাম।
,,
এখন আমি একা রুমে থাকি না বাসার সবার সাথে আড্ডা দেই কথা বলি। দিন দিন আনন্দ গুলো বাড়ছিলো। কথায় আছে আনন্দ সুখ বেশি সময় এর জন্য নয়। সত্যি তাই, ইরার বাবা এসে আমাকে জানিয়ে দিয়ে গেলেন কাল আমাদের বিয়ে আর কালকেই আমাদের বাসা ছাড়তে হবে।
,,
আমি আর ইরা বসে বসে ভাবছি কি করা যায়।
-দোস্ত শোন (ইরা)
-বলেন (আমি)
-এত ভেবে লাভ নেই, ব্যাগ গুছিয়ে ফেল
-তাহলে আমরা কাল চলে যাচ্ছি?
-হ যাচ্ছি। অন্য কারও সাথে বিয়ে হলে তো যেতেই হতো তাই না?
-হুমমম
-তো ব্যাপার টাকে স্বাভাবিক নেওয়া দরকার না?
-হ্যা ঠিক বলেছেন
-এখানে আমার সম্পত্তির দাবি নিয়ে থাকতে পারতাম বাট ঠিক হবে না।
-ওসব ব্যাপার নিয়ে কথা না বলাই ভালো। উনাদের ভালবাসা নিয়েই আমরা বাসা থেকে চলে যাবো ওটাই আমাদের সম্পত্তি
-হুমম তো যা তোর ব্যাগ গুছিয়ে নে।
,,
রাতে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিলাম।
সকাল বেলা আমাদের বিয়ে হলো। আমার পক্ষ থেকে ইরার কাকা মুরুব্বি হলেন। বিয়ের সব কাজ শেষে খাওয়া দাওয়া শেষ। এবার আমাদের যাওয়ার পালা। আমরা রাতে প্ল্যান করেছি বিয়ে করি আর যাই করি অফিস মিস দেওয়া যাবে না। এখান থেকে অফিসে যাবো। তারপর কারও মাধ্যমে আমরা একটা বাসা ভাড়া নিবো। রাতে আমাদের বাসার হবে।
,,
ইরা সবার কাছ থেকে হাসি মুখে বিদায় নিচ্ছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে না একটু আগে ওর বিয়ে হয়েছে আর পরিবার ছেড়ে আমার সাথে চলে যাচ্ছে। আমরা বাড়ির মেইন দরজা পার হতে না হতেই ইরার বাবা আমাদের আটকিয়ে দিলো।
-কোথায় যাচ্ছো তুমি?? (ইরা বাবা ইরাকে বলল)
-কোথায় আবার বিয়ে হয়েছে এখন কি আর এরা আমার বাড়ি আছে? আমার ঠিকানা তো এখন শ্বশুর বাড়ি সেখানেই যাচ্ছি (ইরা)
-এই বাড়িটাই তো তোমার
-যতই আমার হোক, আমি তো এখানে থাকবো না
-তুমি আমার উপর রেগে আছো
-না রাগবো কেনো?
-তো চলে যাচ্ছো কেনো আমাদের ছেড়ে?
-তুমি তো যেতে বলেছো
-কোথাও যেতে হবে না, আমি শুধু তোমাদের ভালবাসা টা পরীক্ষা করে দেখালাম
,,
কথাটা বলা মাত্রই ইরা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলো। পরে আমরা দুজন জানতে পারলাম এটা তাদের একটা প্ল্যান ছিলো।
,,
কান্নাকাটি শেষে আমরা আমাদের রুমে ফিরে আসলাম। তখনই অফিসে যেতে চাইছিলাম সবাই ধরে আমাদের উপরে পাঠিয়ে দিয়েছে।
,,
যাক এখন থেকে আমি দুষ্টামি করতে পারবো। এবার উনাকে একটু দেখিয়ে দেই আমি কি পারি। ইরা শাড়ি পড়ে ছিলো। আমি তার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে এক হাত তার পেটে রাখলাম
-ঐ ঐ ঐ কি করিস তুই? (ইরা)
-কি করি মানে! বুঝো না (আমি)
-তুই ছাড়
-না ছাড়বো না
-আরে ভাই এগুলে এখনই না দেড়ি আছে, আমার কিছু কথা আছে
-কোন গুলো এখনই না
-তুই যা করছিস
-আমি তো কিছুই করছি না, বা করতে চাইছি না
-তাহলে ওখানে হাত দিয়েছিস কেনো??
-এমনি
-এমনি তাই না?
-হুমমম
,,
ইরাকে ছেড়ে দিলাম। ও বলতে শুরু করলো..
-স্যার আমাদের বিয়ে হলো, এই শুকরিয়া আদায় এর জন্য দুজন নফল নামাজ পড়বো। (ইরা)
-আচ্ছা (আমি)
-মন খারাপ হয়েছে?
-কই নাহ
-উমমম দেখতে পাচ্ছি। মনে মনে আমার সাথে ব্রেকআপ করলা নাকি?
-না না কি বলো
-বুঝি বুঝি আমি সবই বুঝি
,,
ইরা আবার আমার কাছে আসলো..
-চোখ বন্ধ করো (ইরা)
-..(আমি চোখ বন্ধ করলাম)
-যেখানে হাতটা দিয়েছিলে সেখানে হাতটা রাখো তবে এদিক সেদিকে নিয়ো না যেনো। কারন বাকি জায়গায় তোমার স্পর্শ গুলো আমি ভিন্ন ভাবে নিতে চাই
-হুমমম বুঝেছি
-ঠোঁটে চুমু দেই
-হুমম দাও
-উহুমম দিবো না
-কেনো?
-পঁচা তুমি তাই
-আমি কি করলাম?
-আমাকে আমার বাবা মার কাছে থেকে চুরি করেছো
-আচ্ছা তাহলে তাদের জিনিস ফেরতে দিয়ে আমি চলে যাই
-এই নাআআ
-কেনো?
-কারন আমি চোরের প্রেমে আহত…(দুজন মুচকি হেসে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম)
সমাপ্ত