ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 10

0
1137

ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 10
Write : Sabbir Ahmed

-এভাবে আনমনে বাইরে তাকিয়ে কি দেখেন?? (আমি)
-বাইরে কি দেখি?? (ইরা)
-হুমম
-তোকে
-আমাকে মানে??
-আরে পাগলা তুই আমার জীবনে এমন ভাবে আসলি মানে আমি ভাবতেই পারিনি তোর মতো একটা গাধা তবে ভাল মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে
-হুমম
-তবে আমার পোড়া কপাল
-কেনো?
-তুই আমাকে দেখে ভয় করিস তেমন কথা বলতে চাস না। আমি যা বলি শুধু সেটাই করিস
-আর কি করবো?
-যাই হোক সব ঠিক হয়ে যাবে, যা এখন ঘুমিয়ে পড়
-আচ্ছা গুড নাইট
-হুমম গুড নাইট
,,
পরদিন সকাল বেলা থেকে অফিস করা শুরু করলাম। ম্যাম এর সাথেই সব সময় থাকা উনি যা বলে সেগুলো শোনা এবং করা এগুলোতেই ব্যস্ত। দিনকে দিন যাচ্ছিলো আমার অবস্থা ততই ভালো হচ্ছিলো। ম্যাম এর সাথে কথা বলতে এখন আর ভয় লাগে না কোনো কিছু লাগলে সোজাসাপটা বলে দেই। এদিকে ড্রাইভিং টাও একটু একটু শিখেছি। তাদের বাসার দু-একজনের সাথে কথাও হয়েছে মোটামুটি সবকিছু স্বাভাবিক এর দিকে বলা যায়।
,,
কিন্তু এমনটা একটা দিন আসলো সেদিন আমার স্বাভাবিক মন আর ঠিক থাকলো না। ম্যাম এর বাবা ম্যাম এর বিয়ের জন্য ছেলে দেখেছে। আজ অফিসে যাওয়া হয়নি আমাদের কারন ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে। কিন্তু আমার কেমন জানি ভয় ভয় লাগছে। বার বার মনে হচ্ছে উনার বিয়ে হওয়ার কি দরকার?? এমন থাকলেও তো পারে। আমি যা ভাবছি সেটা তো ভুল বিয়ে তো হবেই।
,,
আমি আমার রুমে বসেই ছটফট করছিলাম। ম্যাম এর রুমে বার বার উঁকি দিচ্ছি উনি বেশ স্বাভাবিক ভাবেই আছেন। দেখে মনে হচ্ছে না উনি কোনো টেনশন বা ভয়ে আছেন। তাহলে আমি ভয় করছি কেনো? আমি তাকে হারানোর ভয় করছি না তো?? ছি ছি তাকে হারানোর কি আছে? সে তো আর আমার না। ম্যাম আমাকে বলেছিলো উনি আমাকে ভালবাসেন সেটা ছিলো বন্ধুত্বের। আর আমি যেটা ভাবছি সেটা তো অন্যকিছু। নাহহ নিজের মনের অজান্তেই তাকে ভালবেসে ফেললাম!
,,
এসব কখন হলো! আমি তো এইরকম কিছু ভাবিনি তার সম্পর্কে। পরক্ষণেই মনে হলো আমি তার চিন্তায় দিন পার করেছি সেখান থেকেই এই অবস্থা। নিজের রুমে আর থাকতে পারলাম না। বিছানা থেকে উঠে ম্যাম এর রুমে চলে গেলাম।
,,
ম্যাম বসে বই পড়ছেন। আমাকে দেখে বললেন..
-কিছু বলবি?? (ম্যাম)
-হুমমম (আমি)
-বল
-আপনাকে দেখতে আসছে??
-তুই তো জানিস নতুন করে প্রশ্ন করার কি আছে?
-যদি তারা আপনাকে পছন্দ করে আপনি কি রাজি হবেন??
-ছেলে যদি ভালো হয় পরিবার যদি ভালো হয় তাহলে মানা করবো কেনো?
-তাও ঠিক
-এইটা বলতে আসছিলি?
-হুমম না হুমম
-সকাল সকাল তোতলানো শুরু করেছিস। কিছু হয়েছে?
-একটা কথা বলার ছিলো
,,
ম্যাম আমার দিকে তাকিয়ে বই টা বন্ধ করে পাশে রাখলো। তারপর আমাকে তার সামনা সামনি বসতে বলল।
-তোকে দেখে মন হচ্ছে আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছিস। কিন্তু ভয় করতেছিস (ইরা)
-হ্যা ঐরকমই (আমি)
-ভয় নেই বল
-কিছু বলবেন না তো?
-আরে আমি তোর বন্ধু না? তোকে কি বলব পাগল। ভয় নেই বল
-আপনি আপনার বাবা কে বলে বিয়া টা ক্যান্সেল করে দেন
-ঐ বিয়ে তো ঠিকই হয়নি এখনই কিভাবে ক্যান্সেল করে দিবো?? আর কেনো ক্যান্সেল করবো?
-আরে আপনি চলে গেলে আমি কিভাবে থাকবো?
-ঐ কিভাবে থাকবি মানে? তুই থাকবি বাসার বাকি যারা যেভাবে আছে সেভাবে
-আপনাকে ছাড়া, আপনি তো থাকবেন না
,,
ম্যাম আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার কথা শুনে হয়তো সে অবক হয়েছে।
-তুই চাস না আমার বিয়ে হোক??(ইরা)
-তা তো চাই (আমি)
-তো?
-এই বাসায় বিয়ে করেন
-মানে?? তোর মাথা গেছে নাকি?
-আই লাভ ইউ
,,
মুখ ফসকে হোক আর যেভাবেই হোক কথাটা বলে ফেললাম। মনে মনে ভাবছিলাম বাংলায় বলব, কিন্তু মুখ থেকে ইংরেজিতেই বেড়িয়ে গেলো।
আমার কথা শুনে ম্যাম মিটিমিটি হাসতেছেন।
-তুই যা বললি ভেবে বলেছিস?? (ইরা)
-না (আমি)
-কেনো?
-ভাবার কি আছে আমার যেটা নিয়ে ভয় হয়েছে সেটার জন্য বলেছি এটা
-কি নিয়ে ভয় হয়েছে?
-আপনার চলে যাওয়া
-আমি চলে গেলে তো কি হয়েছে? তুই একটা বিয়ে করবি তার সাথে থাকবি সে তোর কেয়ার করবে
-আপনাকে লাগবে
-বাচ্চাদের মতো আবদার করতেছিস কেনো?
-জানি না
-এ এক অন্যরকম শুভ কে দেখছি, যে কখনো এভাবে আমার কাছ থেকে কিছু চায় নি
-…(আমি চুপ)
-আচ্ছা কি লাগবে? কি জন্য লাগবে? সব বুঝিয়ে বল
-আমি কিছু বোঝাতে পারবো না আপনাকে লাগবে, আর আপনাকে ভালবাসার জন্য লাগবে
,,
আমার এমন কথা শুনে ম্যাম লজ্জায় তো শেষ। অন্যদিকে তাকিয়ে হাসতেছে। হাসি থামিয়ে বলল..
-তো এখন আমাকে কি করতে হবে??(ইরা)
-আপনি বোঝেন না? (আমি)
-যতই বুঝি, কিন্তু আপনাকে বলতে হবে। কি করতে হবে বলেন?
-একবার তো বললামই যে ভালবাসি, আর আমার কাছে থাকতে হবে
-যদি বলি ভালবাসি না
-…(আমি চুপ)
-এইইই,কথার উত্তর দে
-আমি কিভাবে আটকাবো? চলে যাবেন আমিও চলে যাবো
-কোথায় যাবি??
-জানি না
-ওহহ। তো বলেন ভালবাসার বীজ কবে বপন করেছিলেন আর সেটা থেকে চারাগাছ হলো কিভাবে?
-ইরা নামের একটা পাখি আমার জমিতে এসে তার মুখ থেকে ভালবাসার বীজ টা ফেলে দিয়ে চলে যায়, আর সেই বীজ টাই…
,,
পুরোটা বলার আগেই ম্যাম হাসতে হাসতে শেষ। উনার হাসি দেখে আমার রাগ হচ্ছিলো। আমি উনাকে কিছু বোঝাতে চাচ্ছি আর উনি হেসে উড়িয়ে দিচ্ছেন৷ উনি হাসিয়ে থামিয়ে বললেন..
-হাহ আজ সকালটা অন্যরকম ভাবে শুরু হলো, এমন হাসির কথা কখনো শুনিনি
,,
উনার কথা শুনে বেশ লজ্জা পেলাম। হয়তো মনের কথাটা বলা ঠিক হয়নি। আমি তার সামনে থেকে উঠলাম আর নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। ম্যাম ডেকে বললেন..
-কই যাস? (ম্যাম)
-ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো (আমি)
-ঘুম নাকি রাগ?
-না ঘুম
-উহুমমম রাগ
-না ম্যাম ঘুমই পাচ্ছে
-আমার জানা আছে তুই এখানে এসে বস
,,
কথা শুনলে বকা দিবে। বাধ্য হয়ে আবার তার সামনা সামনি বসলাম।
-আমার আর তোর মাঝে সম্পর্ক টা কিসের??(ইরা)
-বন্ধুত্বের (আমি)
-তো আমি কি বন্ধুর কথা শুনে হাসতেও পারবো না?
-পারবেন আর হাসলেন তো
-কথার মাঝে রাগ এর সুর ভাসতেছে
-না রাগ করিনি
-আচ্ছা ভেবে দেখতো, তুই যে আমাকে ভালবাসার কথা বললি সেটা নিয়ে আমি কি কোনো উপহাস করেছি? তোর কথা শুনে হাসি পাচ্ছিলো তাই একটু হাসলাম। আর আমাকে যেটা বললি সেটার উত্তর না নিয়ে কই যাস হ্যাঁ??
-আমি ভুলে বলে ফেলছি সরি
-লাত্থি খাবি কুত্তা, ভালবাসি বল
-আপনি হাসবেন তাই বলব না। আমার ভালবাসার দাম আছে
-ওরে বাবা একটু হাসছি তাই কতো রাগ! তো শুনি আপনার ভালবাসার দাম কতো?
-সেটা আপনার না জানলেও হবে, আপনি বই পড়েন আমি গেলাম।
,,
আমি চলে যাচ্ছিলাম উনি আমার হাত ধরে ফেললেন। কেমন কান্না কান্না কণ্ঠে বললেন..
-ঐ পাগল আমি তোমার ভালবাসা নিয়ে উপহাস করিনি তো (ইরা)
-আপনি যে হাসলেন
-না পাগল
,,
ইরা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। আর অভিমানী কণ্ঠে বলল…
-প্রত্যকটা গল্পে আমি তোমাকে প্রোপজ করি। তুমি কি করো? তুমি চুপ থাকো তোমার জন্য ওয়েট করতে হয় আমার। এই গল্পেও তুমি অনেকটা লেট করেছো৷ আমার কি অপেক্ষা করে থাকতে কষ্ট হয় না?? তুমি আমার জন্য কিছুই করো না আর করতেও হবে না। শুধু ভালবাসলেই চলবে। আর হ্যাঁ রাগ দেখাও কেনো আমাকে? রাগ শুধু তোমারই আছে আমার নেই? আর কখনো যদি তোমার কথায় রাগের সুর পাই তে তখনই ব্রেকআপ……(ইরা)

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here