ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 2
Write : Sabbir Ahmed
-ম্যাম ঐরকম হলে আমি করবো না (আমি)
-কেনো??(ইরা)
-সেটা না বলি
-ঐ সব বলতে হবে
,,
মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো। আমি বললাম…
-ম্যাম আপনার মতো সুন্দরী পেলে ভেবে দেখতে পারি
-কি বললি তুই?
-ভেবে দেখতে পারি
-তোর ভাবা লাগবে না আমার মতো কেউ তোর দিকে তাকাবেও না
-সেটা আমার জন্যই ভালো
-কেনো??
-তাহলে আর বিয়ে করা লাগবে না
-হইছে ভাই থাম এবার। চল লাইনের ঐপাশ টায় ঘুরে আসি
,,
ইরা ম্যাম যেদিকে যাচ্ছে আমিও তার পেছন পেছন ছুটছি। একবার বললাম যে বাকি রাতটুকু ঘুমিয়ে নেন। তখন আমাকে ধমক দিয়ে বলল,সে কি আমার আদেশ মেনে চলবে! পরক্ষণেই ভাবলাম তাই তো সে আমার কথা মানবে কেনো সে তো মালিক পক্ষের লোক।
,,
লাইনের অন্যপাশ টায় চলে আসলাম। এইপাশটায় ফাঁকা জায়গা নেই। কাছেই একটা গ্রাম দেখা যাচ্ছে। আর লাইন এর পাশ দিয়ে একটা রাস্তা গ্রাম এর ভেতর চলে গেছে।
-চল রাস্তাটা দিয়ে গ্রাম এর ভেতর যাই (ইরা)
-না ম্যাম এত রাতে যাওয়া ঠিক হবে না (আমি)
-আমি কি বলছি তোকে??
-জ্বী ম্যাম চলেন
,,
এই হলো মেয়ে মানুষ, ভালো মন্দ কিছুই বোঝে না। তারপর যদি এরকম ধনী ঘরের মেয়ে হয় তাদের মাথার তার দুই একটা কমই থাকে৷ এরা পুরো পৃথিবীকে নিজের মনে করে আর ভাবে সেই সবথেকে ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
,,
দুজনে অনেকটা হাঁটলাম। এখন আমরা হাঁটছি গ্রাম এর ভেতরে। পুরো গ্রাম নিস্তব্ধ। কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই শুনশান পরিবেশ। ম্যাম মাঝে মাঝে আমার সাথে কথা বলছে।
একসময় আমরা ভালই কথা বলতে শুরু করি। ম্যাম আমাকে বলল….
-তুই কি সারাজীবন এভাবেই কাটাবি??(ইরা)
-জানিনা (আমি)
-জানিস না মানে!!
-আমার ভাগ্যে কি আছে আমি কিভাবে বলব??
-হুমম তাও সবার তো অনেক ফিউচার প্ল্যান থাকে। তোর নেই?
-নাহহহ
-অদ্ভুত
-হুমম। আচ্ছা ম্যাম একটা জিনিস আমার কাছে খুব খারাপ লাগছে
-কি??
-বললে রাগ করবেন না তো!
-না বল
-স্টেশনে যখন আপনাকে দেখলাম তখন একটা জিনিস খেয়াল করেছি
-কি খেয়াল করেছিস??
-আপনার সৌন্দর্যের সাথে আপনার অাধুনিক সাজগোজ একদমই বেমানান
-কি বলিস! সবাই তো খুব প্রশংসা করে
-সবার চোখ নেই তাই।
-তো কেমন সাজলে আমাকে ভালো লাগবে??
-অতি সাধারণ
-যেমন??
-এই যে হেয়ার কালার করেছেন, এটা চুলের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। আপনার ঠোঁটে…
-এই থাম
-জ্বি ম্যাম
-তুই অন্ধকারে আমার ঠোঁট কিভাবে দেখলি
-ঐ যে বললাম না স্টেশনে দেখেছি
-ওহহ বাদ দে তোর ডায়লগ চুপচাপ হাটঁতে থাক
-জ্বি, ম্যাম আর সামনে না এগোই আমরা চলে যাই
-আরেকটু যাবো তারপর ফিরবো। পরিবেশ টা ভালই লাগছে। রাতে এভাবে গ্রামের মধ্য দিয়ে কখনো হাঁটি নি।
,,
আমরা হাঁটতে হাঁটতে আরও সামনে এগোলাম। আর হঠাৎ দু’জন লোক লাইট নিয়ে আমাদের সামনে আসলো। তাদের হাতে মাছ ধরার পলো। মাছ ধরতেই যাচ্ছে মনে হয়..
-এই তোমরা কারা এই গ্রামে আগে কখনো দেখিনি তো (একটি লোক বলল)
-আমরা আসলে এখানে কখনো আসিনি আর.. (ইরার কথা আটকে যাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে সে)
-ভাই আমি বলছি। ট্রেনে যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে মাঝ পথে দাঁড়িয়ে গেছে। আর ট্রেন থেকে নেমে আমরা একটু হাঁটতে আসছি…
-এই তোমরা থামো সব বুঝে গেছি সব৷ চলো আমাদের সাথে
-কোথায় যাবো
-কোনো কথা না চলো
,,
লোক দুটো আমাদেরকে একটা বাড়ির ভেতর নিয়ে আসলো। আমি মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছি কি যে হবে! গ্রাম এর মানুষ এসবকিছু তে বেশ সিরিয়াস। রাত করে মেয়ে নিয়ে বাইরে দেখলেই উল্টা পাল্টা ভাববে। আমাদের বেলায় ঠিক তাই হয়েছে। ইরা শুধু আমার দিকে তাকিয়ে বার বার দেখছিলো। আমিও মনে মনে বলছি দেখেন কেমন লাগে।
,,
একজন বাড়ির গিন্নি কে ডাকা শুরু করলো। বুঝলাম এটা তার নিজের বাড়ি। লোকটির বউ এসে আমাদের তাকিয়ে দেখলো তারপর তার বর করে বলল..
-এরা কারা??
-ওরা বাড়ি থেকে পালায়া আসছে। ওদের তুমি ঘরে নিয়া যাও। আমি হুজুররে ডাইকা নিয়া আসি
-ভাই ভাই হুজুররে ডেকে কি করবেন (আমি)
-বিয়া করায়া দিমু তোমাদের (লোকটি)
-ভাই ভাই শোনেন উনি আমার কিছু না আমরা পালায়া আসি নি
-উল্টা পাল্টা কথা বললে কইয়ো না চুপ থাকো। একটা মাইয়া তোমার সাথে এত রাতে ঘুরে এর মানে কি আমরা বুঝি না
-ভাই ভাই এমন কইরেন মা
-চান মিয়া তুমি ওদের ঘরে নিয়া যাও, আর বউ আমি যাইতাছি হুজুররে ডাকতে
,,
আমাদের কাছে একজন কে রেখে লোকটি অন্ধকারে হাওয়া হয়ে গেলো।
কিছু একটা ঘটতে চলছে। আমি ইরার দিকে তাকালাম দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখটা কাচুমাচু করে রেখেছে সে। দুজনে কথাও বলতে পারছি না৷
,,
সময় যাচ্ছে আর লোকজন বাড়তে শুরু করে। আমাদের দুজনকে দুইরুমে রাখা হয়েছে। আমি শুধু আল্লাহ আল্লাহ করছি। ঐদিকে ইরার কি অবস্থা হয়েছে আমি জানি না।
,,
কিছুসময় পর হুজুর আসলো। আমি তাকেও বুঝালাম। স্বস্তির কথা হলো সে বুঝেছে। কঠিন একটা সমস্যা থেকে বাঁচলাম। হুজুর টা আমাদের লাইন পর্যন্ত এগিয়ে দিলো।
,,
তারপর..
-ওয়াও কি দারুণ অভিজ্ঞতা (ইরা)
-ধুররর চুপ করেন তো এখনই তো একটা ইয়ে হয়ে যেতো (আমি)
-ইয়ে মানে কিয়ে??
-আরে বড় বাঁচা বেঁচে গেছেন
-তা তো জানি, তবে দারুণ লাগছে
-আপনি থাকেন যেখানে ইচ্ছা যান আমাকে ডাকবেন না
,,
আমি ট্রেনে উঠলাম। উনার সাথে আর দেখা করলাম না। ফজর এর আজান হলো তার কিছুক্ষণ পর আমাদের ট্রেন আবার যাত্রা শুরু করলো। আমি ঠিক আমার আগের জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছি। ইরা ম্যাম আবার আসলো।
-তুই ভালই বদমাইশ তো (ইরা)
-কি কি করছি আমি??(একটু রেগেই বললাম)
-তুই আমার উপর ঝারি দিস আমার উপর রাগ দেখাস
-তো কি করবো? আপনার মাথায় কি ব্রেইন নামক জিনিসটা আছে? থাকলেও তো মনে হয় কাজ করে না। এরকম ছেলেমানুষী করেন কি জন্য বড় হয়েছেন বোঝেন না কিছু??
-…(ম্যাম আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে)
-আমি জানি কথাটা বলার পর আমার চাকরি থাকবে না। আপনার বাবাকে কিছু বলতে হবে না৷ আমি অফিস যাবো না
,,
ম্যাম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল..
-আমি তোকে চাকরি দেইনি তোর চাকরি আমি কাটবো কেনো? এই যে আমাকে বকা দিলি মনে রাখিস এর শোধ আমি তুলবো (ইরা রাগ দেখিয়ে তার কেবিনে চলে গেলো)
,,
ম্যাম যে থ্রেট টা দিলো আমার একটুও ভয় লাগলো না৷ উনার কথা শুনে মনে হলো কোনো বাচ্চা আমাকে থ্রেট দিয়েছে। উনার কণ্ঠ টা সত্যি অসাধারণ!
শুনলে মনে হয় বার বার শুনি। নাহহ আমি আবার ভাবনাতে হারিয়ে যাচ্ছি কেনো। যাই উনার কেবিনে গিয়ে সরি বলে আসি। না হলে আমার কি করে বসবে আল্লাহ জানে।
,,
আমি তার কেবিনের ভেতর ঠুকবো তখনই কারও সাথে ধাক্কা লাগলো। তাকিয়ে দেই ম্যাম! উনি হয়তো বাইরে আসছিলেন।
-এটা কি হলো! (ম্যাম)
-সরি ম্যাম বুঝতে পারিনি (আমি)
-তুই আমার কেবিনে কি জন্য
-সরি বলতে আসছি
-সরি বললে তো কাজ হবে না আমি তোকে মাফ করবো না
,,
কিছুক্ষণ তর্ক হলো। আমি তাকে বললাম…
-আমার উপর কেউ রাগ করে থাকুক সেটা আমি চাইনা। আপনার মন যা চায় তাই করেন
,,
কথাটা বলতেই ম্যাম আমাকে অবাক করে আমার গালে দুটো চর বসিয়ে দিলো। এখন বুঝতে পারলাম ম্যাম বেশ রেগে গিয়েছিলো আমার উপর। চর টা না খেলে হয়তো বুঝতে পারতাম না৷ আমি তো ভেবেছিলাম অন্য কোনো শাস্তি দিবে হয়তো।
,,
চর মারার পর ম্যাম আরও বলল…
-তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড হবি???(ইরা)
চলবে