ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 3

0
950

ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 3
Write : Sabbir Ahmed

চর মারার পর ম্যাম আরও বলল..
-তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড হবি??(ইরা)
,,
এমন থাপ্পড় খাওয়ার পর এরকম প্রস্তাব পাবো ভাবতেও পারি নি। মনে মনে ভাবছি আমি তার সাথে কেনো বন্ধুত্ব করতে যাবো! তার চাল চলন আর আমার চাল চলন রাত দিন তফাত। কিন্তু কথাটা তাকে মুখের উপর মানা করতে পারবো না যদি আবার কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে দেয়!
,,
ভয়ে ভয়েই বললাম…
-হুমম হবো (আমি)
-গুড! তুই এখন যা। না শোন শোন তোর কন্টাক্ট নাম্বার টা দিয়ে যা আমি কল করে তোকে ডেকে নিবো যেকোনো সময়
,,
ম্যাম কে মোবাইল নাম্বার টা দিয়ে আগের জায়গায় ফিরে আসলাম।
আট টায় আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। ইরা ম্যাম এর কথা অনুযায়ী তার ব্যাগ গুলো নামিয়ে দিলাম। এখন উনি আর আমি স্টেশনের বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। বাসা থেকে উনার জন্য গাড়ি পাঠানো হয়েছে। গাড়ি জ্যাম এ পড়েছে তাই অনেক লেট হচ্ছে।
,,
আমার পেট এর অবস্থা খারাপ! রাতে কিছু খাওয়া হয়নি। আবার অনেকটা বেলা হয়েছে পেটে এখনো কিছু পড়েনি। ম্যাম এর সামনে কিছু বলার ও সাহস পাচ্ছি।
কিছুসময় উনি আমি বললেন..
-তোর কি খুদা লাগছে?? (ইরা)
-জ্বি অনেক (আমি)
-তো খেয়ে আয় যা
-আর আপনি?
-আমি এখানে আছি, গাড়ি আসতে অনেক লেট হবে।
-আচ্ছা আপনি দাঁড়ান আমি যাবো আর আসবো
,,
আমি একটা দোকানে গিয়ে চা, বিস্কিটের সাথে কয়েকটা কলা খেয়ে নিলাম। দোকানদারকে টাকা দিতে যাবো তখন মনে হলো ম্যাম ও তো কিছু খায়নি। উনাকে খাওয়ার কথা বলা উচিত ছিলো। ভুলটা যেহুতু করেই ফেলেছি তাই উনার জন্য কিছু নিয়ে গেলাম।
,,
আমি কাছে গিয়ে তার দিকে খাবার গুলো এগিয়ে দিলাম। আমার দিকে উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
-এগুলা আমাকে কেনো দিচ্ছিস?? (ইরা)
-খেয়ে নিন আপনি তো রাতে কিছু খাননি (আমি)
-তুই কি ভাবিস আমাকে! আমি সকাল সকাল রাস্তায় দাঁড়িয়ে এসব খাবো! এগুলো তোদের মতো লোকজন খাবে
-স স সরি সরি ম্যাম বুঝতে পারিনি
,,
খাবার গুলো নিজের ব্যাগে ভরে নিলাম নিজ বাসায় গিয়ে খাবো।
ঘন্টা খানেক পর গাড়ি আসলো। ম্যাম কে উঠিয়ে দিয়ে আমি আমার বাসায় চলে গেলাম। আমার হাতে শুধু আজকের দিনটাই ছুটি আছে। আগামীকাল থেকে ডিউটি।
,,
বাসায় এসে সব ঠিক ঠাক করে নিলাম। দিনের বাকি সময়টুকু আর বাইরে বের হলাম না। এই শহরের গাড়ি গুলোর হর্ন আমার ভালো লাগে না। প্রচণ্ড বিরক্তিকর একটা জিনিস, শুনলেই মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।
,,
রুমের জানালা খুলে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি। গতকাল রাতের ঘটনা টা ভাবতে থাকি। কাল যদি বিয়ে টা হয়েই যেতো আজ আমি মামা শ্বশুর বাড়ি থাকতাম মানে জেলে!
কি বাঁচা টাই না বাঁচলাম।
,,
সন্ধ্যার একটু আগ দিয়ে ইরার কল পেলাম। উনি আমাকে তাদের অফিসের সামনে যেতে বলেছে। গতরাতে ফ্রেন্ড হয়েছি কথা রাখতে অবশ্যই যেতে হবে। কথায় আছে ফ্রেন্ড এর কাছে কোনো বাহানা চলে না। আমিও তাই কোনো বাহানা বা ব্যস্ততা দেখালাম না।
,,
বাইরে যাচ্ছি উনার সাথে দেখা করতে তাই একটু সাঁজতে হবে। ব্যাগ থেকে নতুন একটা ফুলহাতা গেঞ্জি বের করলাম। একটু স্মার্ট সাজার জন্যই সুন্দরীদের সামনে তো আর এমনি এমনি যাওয়া যায় না।
,,
এই প্রথম কাউকে উদ্দেশ্য করে সাজগোজ করছি। মনের মধ্যে কেমন যেন খটকা লাগছিলো। এখন খটকা দেখার সময় নেই। ঝটপট রেডি হয়ে আমার অফিসের সামনে গেলাম। ম্যামকে গিয়ে ঠিক সেখানেই পেলাম।
উনি তার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার সামনে গিয়ে ম্যাম ডেকেে সালাম দিলাম। উনি উত্তর নিলেন। আর সাথে সাথে বললেন…
-গাড়ির পেছনে বসে যা (ইরা)
-কোথায় যাবেন (আমি)
-হ্যা
-কোথায়?
-আমার বন্ধুদের সাথে তোর পরিচয় করিয়ে দেবো সেখানেই নিয়ে যাচ্ছি
,,
আমি আর কিছু বললাম না। তার গাড়ির পেছনে চেপে বসলাম। আধ ঘন্টা পর একটা রেস্টুরেন্টে এর সামনে গিয়ে ম্যাম গাড়ি থামালো। তারপর আমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। আমি তার পিছু পিছু গেলাম।
,,
উনি একটা জায়গায় গিয়ে থামলো আর কিছু ছেলে মেয়ের সাথে গিয়ে কথা বলা শুরু করলো। বুঝতে পারলাম এরাই তার ফ্রেন্ড। এবার ম্যাম আমার দিকে তাকিয়ে বলল…
-বন্ধুরা তোমাদের জন্য একটা গিফট এনেছি (ইরা)
-কিরে দোস্ত কে এটা?? (উনার একজন বান্ধবী বলল)
-আর বলিস না! এ প্রাণীকে রাজশাহীতে পেয়েছি। এ পাগলার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেছি তারপর বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। দুঃখের বিষয় হলো পাগলা আমার কথা বিশ্বাস করে হ্যা বলে দিয়েছে। তোরা বল তো এর মতো খ্যাত মানে কি বলব এইরকম একটা মানুষ আমার ফ্রেন্ড!
-অসম্ভব (বন্ধুরা সবাই)
-দেখ ভাই আমার ফ্রেন্ড দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই তোকে এখানে নিয়ে আসছি..
,,
ইরা একে একে তার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। সবাই বনেদী ঘরের ছেলেমেয়ে। ট্রেন এর কথা মনে পড়তেই লজ্জায় ঘেমে যাচ্ছি। এখন মান সম্মান যা যাওয়ার তা তো গেছে। বাকি টুকু নিয়ে এখান থেকে কেটে পড়তে পারলেই হলো।
,,
কিছুক্ষণ পর সেটাও থাকলো না। আমার পোশাক আর চেহারা নিয়ে তারা উপহাস করতে শুরু করলো। একটা ছেলে এগিয়ে এসে বলল…
-ভায়া এটা গেঞ্জি নাকি ত্যানা! কোথায় থেকে কিনেছো ভায়া?? নাকি কারও পড়ে থাকা জিনিস কুড়িয়ে নিয়েছো
-না ভাই সত্যি কিনেছি (আমি)
-ওমাহ তাই?? (একটা মেয়ে)
-হুমমম
-দেখ ছেলেটা মাথায় তেল দিয়ে আসছে
,,
সবাই হেসে উঠলো। সত্যি কথা বলতে আমি তেল দেই নি। ওরা পঁচানি দেওয়ার জন্যই বলছে। ভাবছি এখানে আর থাকা ঠিক হবে না। ম্যাম কে বললাম…
-ম্যাম আমি এখন যাই?? (আমি)
-ওলে বাবুতা এখনই না কিছু খেয়ে যাও (একটা মেয়ে বলল)
-হ্যা কিছু খেয়ে যা (ইরা)
-ঐ তোর কাছে টাকা আছে তো আবার!!
একটা ছেলে আমার পকেটে হাত দিলো। আমর দূর্ভাগ্য যে পকেটে থেকে সেই বিশ হাজার টাকা নিয়েই এসেছি। ব্যাগে রেখে আসবো মনেই ছিলো না।
,,
ছেলেটা আমার পকেট থেকে টাকাটা দেখে একটু অবাক হয়ে বলল।
-কিরে তোর কাছে এত টাকা! কুড়িয়ে পেয়েছিস কোথাও?? যাই হোক আমাদের কিছু খাওয়া (ছেলেটি)
,,
আমি আর কি মানা করবো। মান সম্মান একটু বজায় রাখতে হ্যা বললাম। তাতেই ওরা সুযোগ পেয়ে গেলো। নানারকম দামী খাবার অর্ডার করলো যেগুলো আমি চোখে দেখা তো দূরের কথা নাম ও শুনিনি।
,,
ওরা সবাই খাচ্ছে আমি দাঁড়িয়ে আছি।
একজন খেতে বলেছিলো কিন্তু আমি মানা করেছি আর বলেছি খেয়ে আসছি আমার পেট ভরা।
খাওয়া শেষে বিল তো বিশ হাজার এর উপরে এলো। আমার মাথায় ঢুকলো না সাত আটজন মিলে বিশ হাজার টাকা কিভাবে খায়! যেটা যোগাড় করতে আমার বছর খানেক সময় লেগেছিলো। খারাপ, ভালো দু ধরেনের মজাই পাচ্ছিলাম। কম খাবরে এত বিল! আর আমার পকেটের টাকা গায়েব।
,,
-ম্যাম আমি এখন যাই?? (আমি)
-হ্যাঁ যাবি তার আগে একটা কথা বলি। কখনো এরকম মফিজ মার্কা কাজ করবি না। এত সহজে কোনো বন্ধুত্ব পাওয়া যায় নাকি? জীবনে কোনো কিছুই সহজ ভাবে নিবি না (ইরা)
-জ্বি ম্যাম
-যা তাহলে…
,,
আমি রেস্টুরেন্টে এর বাইরে এসে দাঁড়ালাম। পকেটে টাকা নেই। বাসায় যাবো টাকা লাগবে। মনে মনে ঠিক করলাম ম্যাম এর কাছ থেকে কিছু টাকা চেয়ে নিবো। না হলে এই পথ যেতে যেতে মধ্য রাত হয়ে যাবে। কাল সকালে আবার অফিসে যেতে হবে।
,,
অনেকটা সময় পার হওয়ার পর ম্যাম আর তার বন্ধুরা বের হলো। আমি ম্যামকে ডাকায় সে বাকিগুলোকে বিদায় দিয়ে আমার দিকে আসলো।
-কিরে হয়েছে এখনো যাসনি কেনো?? (ইরা)
-ম্যাম আমাকে কিছু টাকা…. (পুরোটা বলার আগেই একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো)
,,
আমি আবার বললাম..
-গাড়ির ভাড়ার টাকা টা চাইছিলাম। পকেটে কোনো টাকা নেই। যেতে অনেক সময় লাগবে। কাল থেকে আবার অফিস আছে (আমি)
-তোর জন্য কি আমি টাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ফকিন্নির বাচ্চা (ইরা)
,,
কথাটা সত্যি বুকের মাঝখানে গিয়ে লাগলো। আমি আর কথা বাড়ালাম না। উনার দিকে একবার তাকিয়েই হাঁটা শুরু করলাম।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here