ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 4
Write : Sabbir Ahmed
কথাটা সত্যি বুকের মাঝখানে গিয়ে লাগলো। আমি আর কথা বাড়ালাম না। উনার দিকে একবার তাকিয়েই হাঁটা শুরু করলাম।
,,
সেই জায়গা থেকে বাসায় যাওয়ার পুরোটা সময় শুধু রেস্টুরেন্টের ভেতরের অপমান এর কথা মনে হইছে। আজকাল মানুষ গুলো কেমন হয়েছে আরেকজনের আর্থিক অবস্থা না বুঝে তার টাকা খসানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে।
,,
টাকা গুলোর জন্য খুব মায়া হচ্ছে। ওদের কাছে হয়তো সামান্য টাকা কিন্তু আমার কাছে পাহাড় পরিমাণ।
মধ্যরাতে বাসায় ফিরলাম। কিছু শুকনা খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে আর কিছু ভাবলাম না, ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কারন কাল অফিস যেতে হবে৷
,,
পরদিন সকালবেলা উঠতে আর দেড়ি করলাম না। ফোনে এলার্ম দেওয়াই ছিলো সময়মত উঠে হাতের কাজ গুলো সেড়ে নিলাম। তারপর খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
অফিসে যাওয়ার পর যে সমস্যায় পড়লাম সেটা আমি কখনো চিন্তাও করিনি৷
,,
যেখানে স্যার মানে ইরার বাবা বসে থাকার কথা সেখানে ইরা বসে আছে। ঐ চেয়ারটাতে ইরা বসা মানে আজকের দিনটা পুরো শেষ।
,,
আমি রুমে ঢুকে তাকা সালাম করে বেড়িয়ে আসলাম। কিছুক্ষণ পর উনি নক করলেন আমি ভেতরে গিয়ে বললাম..
-জ্বি ম্যাম বলুন…(আমি)
-চার নম্বর টেবিলের আসিফ সাহেব অফিসে আসেনি। তুই একটু খোঁজ নিয়ে দেখ (ইরা)
-জ্বি ম্যাম
,,
আমি ফোন করে জানলাম উনি রাস্তায় আছেন। আমি ম্যামকে সেটা জানিয়ে দিয়ে বাইরে বসে আছি। সেই মূহুর্তে জেনারেল ম্যানেজার আমাকে ডাকলেন কফি এনে দিতে।
,,
আমি কফি নিয়ে তার রুমে গেলাম। কফির কাপ টা হাতে নিয়ে দেখলেন এবং ফেলে দিলেন। কি হয়েছে? এটা বলার সাথে সাথে উনি আমাকে চর বসিয়ে দেন। আর বলেন..
-কফির উপর মরা মাছি পড়ে আছে দেখিস না
-সরি স্যার দেখতে পাই নি (আমি)
,,
উনি আমার কলার ধরলেন৷
-আমি যদি এটা খেয়ে ফেলতাম, তারপর যদি অসুখ করতো তুই কি করতি তখন
-স্যার মাফ করে দেন দেখতে পাইনি
,,
উনি অনেক বাজে বাজে বকা দিচ্ছিলেন। অফিসের মধ্যে একটা শোরগোল বেধে গেলো। ইরা ম্যাম তার কেবিন থেকে উঠে আসলেন।
সবাই মিলে দোষটা আমাকেই দিচ্ছিলো।
,,
এখন ভয় লাগছে যে ম্যাম চরটা মেরে হয়তো বিদায় করে দিবেন। তারপর ম্যাম সবকিছু শুনলেন আমার থেকেও আর ম্যানেজারের থেকেও। সব শোনার পর যা করলেন দেখে তো আমি হতবাক…
,,
পর পর দুইটা চর বসিয়ে দিলেন ম্যানেজারের গালে।
-আমি কিছু বলার আগেই এখান থেকে বের হবেন। আর হ্যা বাকি সবাইকে বলছি এটা নিয়ে কোনো কথা হবে না। সমস্যা হইছে সমাধান করেছি। সমালোচনা করে ভালো জিনিস খারাপ বানাবে তো পাবলিক বুঝবা কতধানে কত চাল। যার যার কাজে যাও সবাই অনেক সময় নষ্ট হয়েছে।
,,
কিছুক্ষণ ঝড়ের পর অফিস স্বাভাবিক। আগের মতো কাজ চলছে। কিভাবে সব সামলে নিলেম। হুটহাট ম্যানেজার স্যাকড। সাথে দুইটা থাপ্পড় ! বিচার টা যাই করুক তাহলে আমার সাথে ওমন করলো কেনো?? ভাবতে ভাবতে কোনো উত্তর ই খুঁজে পেলাম না।
,,
লাঞ্চের সময়…
আমি বাসা থেকে রুটি নিয়ে আসছি। দুই একজনকে পানি এনে দিয়ে আমি খাওয়ার জন্য বসবো তখন ম্যাম ডাকলো। মনে মনে ভাবছি খাওয়া টাও কপালে নেই। মুখ ভাড় করেই ম্যাম এর রুমে ঢুকলাম।
-জ্বি ম্যাম কিছু বলবেন?? (আমি)
-তুই খাবার খেয়েছিস??
-জ্বি না
-বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসছিস? নাকি বাইরে গিয়ে খাবি
-বাসা থেকে এনেছি
-যা খাবার নিয়ে আমার রুমে আয়
-ম্যাম বুঝিনি
-আরে হারামী খাবার নিয়ে আমার রুমে আয়
,,
কথাটা শুনেই ভাবছিলাম আমি ঠিক শুনছি তো! ভাবনাতে আর ডুব দিলাম না। দেড়ি না করে খাবার নিয়ে আবার রুমে ঢুকলাম।
,,
ম্যাম তো দেখি দামী দামী খাবার সব টেবিলে সাজাচ্ছেন। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে বললেন…
-এসব আমার মায়ের হাতের রান্না। (ইরা)
-ম্যাম আমি বাইরে গিয়ে খাই আপনি খাওয়া শুরু করেন পানি লাগলে বলবেন (আমি)
-এই?? তোকে কি এই জন্য ডেকেছি? আচ্ছা তোর খাবারের বাটিটা আমার হাতে দে তো
-আমি তেমন কিছু আনিনি ঐ রুটি
-আমি দেখবো দে
-ম্যাম
-ঐইই
,,
ভয়েই বাটিটা উনার হাতে দিলাম। লজ্জায় তো মাথা কাটা যাওয়ার অবস্থা! বাসায় কিছু ছিলো না তারউপর টাকাও নেই। রুমে পেয়া মরিচ ছিলো সেগুলো কেটে তেল আর লবন দিয়ে মাখিয়ে নিয়ে আসছি। ম্যাম যদি সেটা দেখে তো…
,,
কথাটা ভাবতেই ভাবতেই বাটির ঢাকনা খুলেই উনি চোখ বড় বড় করে ফেলেন। খাবার টা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দেখে আবার আমার দিকে তাকালেন।
-কিরে এগুলা কি??(ইরা)
-ম্যাম আসলে রুমে কিছু ছিলো না। তারপর টাকাও নেই রুমে আটা ছিলো তো ঐটা দিয়ে আর কি একটা ব্যবস্থা করে নিয়ে আসছি। (আমি)
,,
ম্যাম আমার বাটিটা টেবিলে রাখলেন। তারপর উনি তার চেয়ারে বসে পড়লেন। আমি দাঁড়িয়ে আছি। উনি একবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন আর একবার আমার খাবারের দিকে তাকাচ্ছেন। আমি উনার সামনে এখন লজ্জাতেই মিটি মিটি হাসতেছি।
,,
উনি কিছুসময় চুপ থাকার পর মুখ খুললেন..
-এই যে এই খাবার গুলো তোর (উনার খাবার আমার দিকে এগিয়ে দিলেন)
,,
আমি টেবিলের কাছে গিয়ে হাত দিয়ে নিজের বাটিটা নিয়ে বললাম।
-আমি যেটা এনেছি সেটা না খেলে আমার পেট ভড়বে না, আর আপনার খাবার খেলে আমার পেট খারাপ হতে পারে। এত ভাল জিনিস কখনো খাওয়া হয়নি তো পেট খাবার টা সহ্য করতে নাও পারে..
,,
গতকালের রাগটা একটু দেখিয়েই রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম। নিজের খাবার খেয়ে আবার কাজে মনোযোগ। কার কি লাগছে কে কি চাচ্ছে সব দেখাশোনা করছি। দুপুরের পর ম্যাম আমাকে আর ডাকেন নি। বুঝতে পারলাম তিনিও কিছুটা বুঝতে পেরেছেন আমার কষ্টা টা।
,,
রাতে অফিস শেষ করে বাসায় ফিরলাম। পাশের বাসার পরিচিত একজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে মাছ কিনে নিয়ে এসে রান্না বসিয়ে দিলাম। তখন রাত প্রায় দশটার কাছাকাছি।
,,
চুলোয় রান্না বসাবে সেই সময় ফোন আসলো। ম্যাম ফোন করেছে নাম্বার টা সেভ করেই রেখেছি। ধরবো কি ধরবো না এমন করতে করতে রিসিভ করে সালাম দিলাম। উনি উত্তর নিয়ে বললেন..
-কি করিস?? (ইরা)
-এইতো ম্যাম কিছু না (আমি)
-খাওয়া হয়েছে
-জ্বি না
-কেনো??
-রান্না বসিয়ে দিচ্ছি মাত্র
-তো কি রান্না করবি?
-মাছ
-তোর কাছে তো টাকা নেই মাছ পেলি কোথায়?
-পাশের বাসার একটা ভাই এর কাছে থেকে ধার নিয়েছি
-হুমম এখন শোন
-জ্বি ম্যাম বলেন
-দুপুরে আমার মুখের উপর কথা বলে আমাকে লজ্জা দিয়ে তোর খাবার নিয়ে চলে গেলি ভয় করলো না??
-…(আমি চুপ হয়ে গেলাম। কি বলব উত্তরে বুঝতে পাড়ছি না)
-কিরে কথা বলিস না কি জন্য?
-ম্যাম অফিসের কোনো কথা হলে বলেন
-তুই আমার কথা ঘুরিয়ে নিস! আমি যা বলছি তার উত্তর দে
-জ্বি ম্যাম বলেন
-ওভাবে খাবার নিয়ে চলেগেলি কেনো?
-আপনার খাবার খেয়ে আমার খুদা মিটতো না
-তাই না?
-জ্বি
-আমি বুঝতে পেরেছি তুই আমার উপর রাগ দোখাচ্ছিস। সুযোগ ভালই কাজে লাগাচ্ছিস
-এখানে কিসের সুযোগ ম্যাম? আপনি আমাকে এখন মানা করে দিলে আমার সাথে তো আপনার এখনই কোনো অফিসিয়াল সম্পর্ক থাকবে না। ক্ষমতা আপনার হাতে সুযোগ ও আপনার হাতেই
-চুপপপ রান্না শেষ করে খেয়ে আমাকে কল দিবি
-ম্যাম অফিসের কোনো বিষয়ে কথা বলবেন?
-না
-তাহলে ফোন দিয়েন না আমিও দিবো না
-তোর চব্বিশ ঘন্টাই ডিউটি, আমি ফোন দেওয়ার পর সময়টুকু অফিসিয়াল ওকে?
-তাহলে বেতন বাড়িয়ে দিয়েন
-ঠিক আছে দিবো তুই অবশ্যই ফোন করবি আর হ্যা কাল অফিসে আসার সময় দুপুরের খাবার আনবি না
-কেনো ম্যাম? অফিসে না খেয়ে কাজ করতে হবে??
-তোর জন্য আমি খাবার নিয়ে যাবো
-ম্যাম ওসব খাবার টাবার বাদ দিন..আমি আমার খাবারে সন্তুষ্ট
-তুই যদি কাল অফিসে তোর রান্না করা কিছু নিয়ে আসিস তো মনে রাখবি তোকে শুধু অফিস থেকে না দুনিয়া থেকেই বিদায় করে দিবো…
-…(আমি কিছু বলতে যাবো তখনই ম্যাম ফোন রেখে দিলো)
চলবে