ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 5

0
876

ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 5
Write : Sabbir Ahmed

-তুই যদি কাল অফিসে তোর রান্না করা কিছু নিয়ে আসিস তো মনে রাখবি তোকে শুধু অফিস থেকে না দুনিয়া থেকেই বিদায় করে দিবো..(ইরা)
-…(আমি কিছু বলতে যাবো তখনই ম্যাম ফোন রেখে দিলো)
,,
মনে মনে ভাবছি এত আদিখ্যেতা দেখানোর কি আছে? আমি তার অফিসের সামান্য একজন পিয়ন আর এমন ব্যবহার করছে মনে হয়….নাহ ছি ছি কি সব কথা ভাবছি আমি।
,,
পরদিন সকাল সকাল উঠে আর রান্না করলাম না। সকালের নাস্তাটা বাইরে করেই অফিসে রওনা হলাম। অফিসে গিয়ে দেখি ম্যাম আগেই এসেছেন। প্রতিদিন এর মতো হাজিরা দিলাম। উনি আমাকে দেখে তেমন কিছু বললেন না, দুপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করলাম।
,,
দুপুরের খাবার সময় ম্যাম তার রুমে ডাকে। আমি জানি উনি আমার জন্য খাবার নিয়ে আসছে। খুব লজ্জা লাগছিলো। রুমের এক পাশে খাবার খাওয়ার জন্য সুন্দর একটা ব্যবস্থা ছিলো। ম্যাম আমাকে ওখানটায় বসতে বলে। আর আমার সামনা সামনি উনিও বসে যান।
,,
উনি একটা প্লেটে খাবার দিয়ে আমাকে দেয়। আরেকটা উনি নেন। আমি প্লেটে হাত দিতে পারছিলাম না। খুব ভয় কাজ করছিলো। এত বড় একজন মানুষ এর সামনে খাবার খাওয়া চাট্টিখানি কথা না তার উপর সামনে এত সুন্দরী মেয়ে বসা।
,,
ম্যাম আমার দিকে খেয়াল করে বলল..
-তুই হাত দিয়ে খাবি না খাওয়াই দিবো??(ইরা)
-জ্বি না ম্যাম। একটা কথা (আমি)
-কি??
-আমি খাবার বাইরে নিয়ে গিয়ে খাই?
-এখানে খাইতে তোর সমস্যা কোথায়
-ম্যাম সত্যি বলতে ভয় করছে
-কিহহহ ভয়! আরে ভয় কি জন্য পাচ্ছিস??
-আপনার সামনে এভাবে খাওয়া
-তো কি হয়েছে খা
-ম্যাম
-হুমম
-বাইরে যাই??
-শুভ আমি এক কথা একশ বার বলতে পারবো না
,,
আমি আর কথা বাড়ালাম না। ভয়ে ভয়েই খাওয়া শেষ করলাম। ম্যাম ছোট বাচ্চাদের মতো খাচ্ছিলেন। দেখতে বেশ মজাই লাগছিলো। ম্যাম খাওয়ার দৃশ্য টা দেখতে গিয়া তার চোখে চোখে পড়ে যায়। আমার বুকটা তখন ভয়ে ধুক করে উঠেছিলো ইশারায় বলেছিলেন কি হয়েছে? আমি মাথা নাড়িয়ে মানা করে বলি কিছু না।
,,
খাওয়া শেষে..
-তুই বাসায় যা তোর ছুটি (ইরা)
-জ্বি ম্যাম কেনো??(আমি)
-আমি দিয়েছি তাই
-বাসায় তো কোনো কাজ নেই আমার
-এত্ত কথা তোকে কে বলতে বলেছে?? যা সোজা বাসায় যাবি কোথাও যেন দেড়ি না হয়৷
,,
আমার ছুটিতে বাকি সবাই একটু অবাক হলো। আমি জানি না ম্যাম আমার কাজ গুলো কাকে দিয়ে করিয়ে নিবেন। উনি যেভাবে কাজ করেন যে কেউ দেখলে অবাক হবে।
,,
আমি বাসায় এসে বিছানায় আরাম করছি। মাথার উপর ফ্যান টার দিকে তাকিয়ে অন্য একটা ভাবনায় ছিলাম। নির্দিষ্ট কোনো ভাবনা না একদমই এলোমেলো। বাংলায় এই ভাবনাকে কি বলে বা কিভাবে ব্যাখ্যা করে আমি জানি না৷ এই জিনিসটাও ভাবতে ভাবতে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
,,
জানি না কতটা সময় ঘুমিয়েছি। হঠাৎ আমার কানে কোনো একটা শব্দে বেজে ওঠে। চোখ খুলে বুঝতে পারি ফোন বাজছে। ফোন হাতে নিয়ে আবছা চোখে দেখি ম্যাম কল করেছে। ফোন রিসিভ করলাম।
-কই তুই (ওপাশ থেকে ম্যাম)
-কই আবার আপনি তো ছুটি দিয়েছেন বাসায় আসছি (আমি)
-তুই কি ঘুমাচ্ছিস
-হ্যা
-আমি কি তোকে ঘুমানোর জন্য ছুটি দিয়েছি??
-তাহলে
-বাসায় যেতে বলেছি শুধু
-জ্বি ম্যাম আমি তো আপনার কথায় সোজা বাসায় আসছি। আর বাসায় কাজ নেই তাই একটু…
-তুই চুপ কর । শোন
-জ্বি বলেন…
-আমাদের অফিস থেকে দক্ষিণ দিকে যে লেক টা আছে তুই চিনিস?
-জ্বি ম্যাম
-তুই আয় আমি তোর জন্য অপেক্ষা করছি
-কেনো ম্যাম
-তোকে আসতে বলছি না আমি? (ধমক দিয়ে)
-জ্বি জ্বি জ্বি ম্যাম এইতো আসছি আমি
,,
এবার বুঝলাম আমাকে ছুটি দেওয়ার কারনটা কি ছিলো। আমার কাছে এটাও একটা ডিউটি। কিচ্ছু করার নেই যেতেই হবে।
,,
যেমন ছিলাম তেমনই বেড়িয়ে গেলাম। গতদিনের মতো আর সেজেগুজে বের হলাম না যদি আবার অপমান করে।
,,
পকেটে টাকা আছে তবুও হেঁটে যাচ্ছি। এই মাসের বেতন পেতে অনেক দেড়ি। তাই এমনি টাকা খরচ করা চলবে না। আমি ম্যাম এর কথা মতো সেই লেক এর পারে পৌছে যাই। এর মধ্যে ম্যাম আমাকে দুবার কল করেছিলো শুধু জেনেছিলো আমি কই আছি।
,,
লেক এর পারে যেতেই দেখলাম অনেকেই বসে আড্ডা দিচ্ছে। অনেক বাচ্চারও আসছে। আমি ম্যাম কে খুঁজছিলাম। আমাকে দেখে ম্যামই আমাকে ডাকে। আমি উনার দিকে এগিয়ে যাই৷ উনি ঘাসের উপর বসা ছিলেন। একটু দূর থেকেই মনে হচ্ছিলো কোনো কারনে মন খারাপ।
,,
আমি তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
-বস এখানে (ইরা)
আমি বসার পর…
-জ্বি ম্যাম বলেন (আমি)
-আমি বুঝলাম না দশ মিনিট এর রাস্তা এক ঘন্টা লাগে কিভাবে??
-আসলে ম্যাম কি বলব হেঁটে আসছি (কথা গুলো বলার সময় আমি একটু হাঁসছিলাম)
-তুই হেঁটে আসছিস কি জন্য?? টাকা নেই?
-আছে তবে খুবই অল্প। খরচ করলে বড়সড় বিপদে পড়তে হবে
-…(ম্যাম চুপ)
-আপনার মন খারাপ দেখছি। ম্যাম কিছু হয়েছে কি??
-তোর জন্য
-ম্যাম আমি কি করেছি??
-অনেক লেট করছিস
-জ্বি সরি
-উঠ দাঁড়িয়ে কান ধরে থাক
-ম্যাম এটা..
-আমি উঠতে বলেছি (জোড় গলায়)
,,
আমি উঠতে যাবো তখনই ম্যাম আমাকে বসতে বলে।
-পকেটে টাকা আছে তো তাই না??(ইরা)
-হ্যা আছে (আমি)
-চল আইসক্রিম খাবো
-আমার টাকা দিয়ে?
-তো?? কখনো কোনো মেয়েকে বিল দিতে দেখেছিস তুই??
-না
-তো আমার কাছ চাইবি না চল আইসক্রিম খাবো
-ম্যান ম্যাম শোনেন
-একটু মনটা নরম করেন টাকা গুলো গেলে খুব সমস্যায় পড়বো
-সেটা তো আমি জানি না তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। বেস্ট ফ্রেন্ড এর জন্য সবাই জান দিয়ে দেয় আর আমি তো তোর কাছ থেকে টাকা চাইছি জান তো না। আর সময় হলে জান টাও দিয়ে দিবি
,,
অসহায় এর মতো দাঁড়িয়ে আছি। এখন আমার পকেট এর বারোটা বাজবে। ম্যাম আর আমি আইসক্রিম খেলাম। আমাদের মধ্যে কোনো কথা হচ্ছিলো না। দুজন শুধু হাঁটছিলাম আর মাঝে মাঝে দরকার হলে উনি নিজে থেকেই কথা বলছিলেন।
,,
লেকের পাড় থেকে বের হয়ে রাস্তায় আসলাম। উনি গাড়ি নিয়ে আসছেন।
দেখে মনে হচ্ছে চলে যাবেন।
-ম্যাম তাহলে আপনি যান, আমি চলে যাই (আমি).
-এই এই কই যাস তুই?
-বাসায়
-নাহহ গাড়িতে ওঠ
-কোথায় যাবেন
-লং ড্রাইভ
-না ম্যাম আপনি যান আমি বাসায় যাই
-ব্রেকআপ যাহহ বাসায় যা বাসায় গিয়া মর
,,
ম্যাম রাগ করে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। এরকম অবস্থায় তো রেখে যাওয়া যায় না।
আমি তার দিকে একটু এগিয়ে গেলাম। আর উনি যে একটা শব্দ বলেছেন সেটার মানে জানার জন্য তাকে প্রশ্ন করবো। যদিও আমি জানি তবুও প্রশ্ন করবো যাতে উনার রাগ টা ভেঙে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে মনোযোগী হয়৷
-ম্যাম ব্রেকআপ কি?? (আমি)
-তুই জানিস না? ন্যাকামো করিস? (ইরা)
-সত্যিই জানি না
-তোর আমার যে বন্ধুত্ব আছে সেটা কাটাকাটি এটার মানেই ব্রেকআপ
-ওহহ ম্যাম আপনার মধ্যে তো এইরকম কিছু নেই
-শুভ আমি তোকে বলছি না তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড
-আপনি তো বলেছেন যে এটা মিথ্যা ছিলো
-গাড়িতে ওঠ সব বলছি
,,
কথা বাড়ালাম না। গাড়ির পেছনে দরজা খুলতে যাবো তখনই..
-ঐ হাদারাম কি করিস??(ইরা)
-বসবো না? (আমি)
-সামনে। পেছনে কেনো??
-সামনে??
-হ্যা রে গাধা উঠ
,,
গাড়িতে উঠলাম। ম্যাম ড্রাইভিং সিটে আর আমি তার পাশে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। ম্যাম এবার আমার সাথে বেশ ফ্রি ভাবে কথা বলা শুরু করলো।
-আমরা কিন্তু কুমিল্লা যাচ্ছি (ইরা)
-এ এ এত দূর কেনো? (আমি)
-আরে লং ড্রাইভ তো। আর রাগ ভাঙাতে সময় লাগবে
-কিসের রাগ?
-তুই আমার উপর রেগে আছিস আমি জানি
-আমি আপনার উপর কি জন্য রাগ করবো?
-ঐ যে রেস্টুরেন্টে সেই ঘটনার জন্য
-না ম্যাম কি যে বলেন। ঐদিন আপনারও মজা করেছেন আমিও মজা পেয়েছি
-ওরে শুভ সাহবে আমাকে কি বাচ্চা মনে হয় আপনার? এত বড় একটা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। আমার মাথায় কি এতটুকু বুদ্ধি নেই যে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা আমি বুঝবো না??

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here