ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 6
Write : Sabbir Ahmed
-ওরে শুভ সাহেব আমাকে কি বাচ্চা মনে হয় আপনার? এত বড় একটা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। আমার মাথায় কি এতটুকু বুদ্ধি নেই যে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা আমি বুঝবো না??(ইরা)
-না বুদ্ধি তো আপনার অনেক আছে..(আমি)
-হইছে এখন শোন আমি কি বলি
-বলেন
-রাতে কি খাবি বল
-সন্ধ্যায় তো অনেক কিছু খেলাম রাতে আর কি খাবো
-না তাও কিছু শুকনো খাবার নেই। আর দুইটা পিজ্জা
-আপনার ইচ্ছা। ম্যাম ভয় করছে আমার
-কেনো??
-আপনার বাবা যদি জানে অফিসর পিয়ন কে নিয়ে ঘুরতে বের হইছেন
-কিভাবে জানবে আমি তো বলব না
-আমি যে অফিসে যাবোনা সেটা তো জানতে পারবে
-সেটা আমি দেখে নিবো তোর এত চিন্তা নেই। এখন বল আমাকে মাফ করেছিস কি না?
-আপনি তো দোষ করেননি
-তোকে যে কি করব আমি। দেখ আর রাগ করে থাকিস না ভুল করে ফেলেছি
-আমি রাগ করিনি তো
-আমি তোর চোখে মুখে রাগ দেখতেছি।
-আচ্ছা রাগ নেই আপনার উপর
-সত্যি তো??
-হ্যা সত্যি
-সত্য নাকি মিথ্যা সব টের পাবো, আমি যা বলব সেটা যদি না করিস তাহলেই বুঝবো তুই এখনো রেগে আছিস
-নাহহ কি যে বলেন, আপনার তো সব কথাই শুনি
-কত যে শুনিস আমার জানা আছে
,,
মাঝপথে আমরা গাড়ি থেকে নেমে কিছু খাবার নিলাম। দুজন বেশ কথা বলতে বলতে যাচ্ছি। ইরা ম্যাম গাড়িটা এখন বেশ ধীর গতিতে চালাচ্ছেন। আজ বেশ কুয়াশাও পড়েছে।
-এই চল বাইরে কুয়াশার বৃষ্টিতে ভিজি (ইরা)
-এই না এইটা করবেন না। বাইরে গেলেই বিপদ, সেদিনের মতো হলে অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে (আমি)
-যাবো না তো। তোর কেয়ারিং টা আমার খুব ভালো লাগে। সেটা পাওয়ার জন্যই কথাটা বললাম।
-হুমমমম
-তুই কাউকে ভালোবাসিস নাই?
-কোন ভালবাসা?
-মানে পছন্দের মানুষ বিয়ে টিয়ে করার ইচ্ছা এমন..
-এর আগেও তো বলেছি ঐরকম কেউ নেই।
-হুমমম কাউকে দেখে পছন্দ হয় না?
-নাহহ প্রায় সবার মধ্যেই ভেজাল আছে
-ভেজাল মানে?
-মানে আর কি এখন তো প্রেমের বাজার চলে। বাজার টা বেশ গরম এক একজন দশ বারোটা প্রেম করে তার উপর ওয়েটিং এ রাখে
-তুই জানিস কিভাবে
-চোখ খোলা রাখলে সবই টের পাওয়া যায়৷ ম্যাম আপনার নেই??
-কি?
-পছন্দের মানুষ
-নারে এসব পছন্দ টছন্দ আমার হয়না, আমাকে যে বুঝতে পারে তাকেই আমার পছন্দ
-ওহহহ। আপনার বাবা আপনাকে বিয়ে দিবে না??
-কি সব প্রশ্ন যে করিস বিয়ে দিবে না কেনো?? অবশ্যই দিবে
-হুমম তাদের পছন্দেই বিয়ে করবেন
-হ্যা এটাই তো স্বাভাবিক
,,
হঠাৎ করে এই মাঝ রাস্তায় জ্যাম পড়ে যায়৷ কুয়াশা বেশি হওয়ায় সব গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ম্যাম গাড়ির হেড লাইট টা অফ করলো। তারপর কোথা থেকে যেন একটা চাঁদর বের করলো।
-আপনি কি এখন ঘুমাবেন??(আমি)
-না শীত করতেছে প্রচুর গায়ের উপর দিয়ে রাখি (ইরা)
-হুমমম
,,
আমি বাইরে তাকালাম। কুয়াশায় কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। তবুও তাকিয়ে আছি ম্যাম এর দিকে তো আর তাকিয়ে থাকা যায় না। তার দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যায় না সেই জন্য তাকানোটাই বিপদ।
-কিরে তুই এরকম চুপ চাপ থাকবি?? (ইরা)
-আমি আসলে তাকিয়ে থাকতে চাইনি (ভাবনার কথা বাস্তুবে ভুলে বলে ফেললাম।)
-কিহহ! তাকিয়ে থাকতে চাস না মানে?
-না ম্যাম মানে ঐ যে আমার খুব শীত করতেছে (কথা থেকে বাঁচার জন্য বললাম)
-আগে বলবি না? আয় চাদর এর মধ্যে
-….(মনে মনে ভাবছি আরেক বিপদ)
-কি হলো আয়
-না ম্যাম ঠিক আছে শীত কমে গেছে
-ভয় পাচ্ছিস তাই না? ভয় নেই কাছে আছে। আর খুব কাছে না চাদর টা বড় তুই একটু কাছে আসলেই হয়ে যাবে
,,
একটু কাছে গেলাম। ম্যাম আমাকে চাদর এর একটা মুরি দিলো আমি সেটা আমার পাশে ঘিরে পিঠের সাথে লাগিয়ে নিলাম। এবার আমি কাঁপতেছি তবে শেটা শীতে না ভয়ে।
কাঁপুনি দেখে ম্যাম বলল…
-ওরে আল্লাহ তোর এত শীত করতেছে! (ইরা)
-এখন ঠিক হয়ে যাবে (আমি)
-আমি জানি ঠিক হবে না
,,
কথাটা বলে ম্যাম আমার খুব কাছে আসলো তবে তার শরীর এর সাথে কোনো স্পর্শ লাগেনি। অনেক চেষ্টা করে নিজের কাঁপুনি থামালাম। ম্যাম এর চোখে ঘুম ঘুম ভাব এসে গেছে।
-ম্যাম আপনি তো ঘুমাচ্ছেন (আমি)
-ক ক কই না তো (ইরা)
-আপনার কি খুব ঘুম পাচ্ছে?
-অনেক
,,
ম্যাম ধীর ধীর বেশ সুন্দরী হয়ে উঠছে। শুনেছি সুন্দরী মেয়ে ঘুমালে আরও বেশি সুন্দরী লাগে আজ সেটা সামনে থেকেই দেখলাম। আমি যদি উনার বর হতাম এখন কাছে নিয়ে বুকের মধ্যে রাখতাম। পরক্ষণেই মনে পড়লো কি সব ভাবছি আমি! ছি ছি ছি এসব কি আসছে মাথায়।
,,
ম্যাম ঘুমে আর ঠিক থাকতে পারে না। আমার খুব কাছে আসে। আমার কাঁধের উপর তার মাথা রাখার চেষ্টা করছে। এবার সব ভুলে যাই আমি। নিজে থেকেই তার দিকে এগিয়ে যাই। আর উনি তার মাথা আমার কাঁধের উপর রাখে। বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটা হচ্ছে। উনার নিশ্বাস আমার টি-শার্টে লাগার পর পরই আমার কেমন যেন একটা অনুভূতি কাজ করছে। না পারছিলাম তখন বুঝতে না পারছিলাম ভাবতে।
,,
কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর ম্যাম জাগনা পায়। আমি যেগেই আছি একটুর জন্য চোখ বন্ধ করিনি। ম্যাম উঠে দেখলো সে আমার কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ঘাড় টা দ্রুত উঠিয়ে নিয়ে বলল..
-সরি সরি আমি ঘুমের মধ্যে.. (ইরা)
-ম্যাম আমি আপনার কাছে গিয়েছি দেখছিলাম আপনি ঝিমুনি দিয়ে বার বার পড়ে যাচ্ছিলান
-হুমমম
,,
ম্যাম লজ্জা পেয়েছে। লজ্জা মাখা মুঝ নিয়েই বলল..
-রাত অনেক হয়েছে এখন যা এনেছি সব খেয়ে নেই?? (ইরা)
-জ্বি ম্যাম আপনার ইচ্ছে (আমি)
-তুই সব আমার উপর নির্ভর করিস কি জন্য? নিজে কিছু বলতে পারিস না
-জ্বি ম্যাম এখনই খাবো
-হাহ সেটা আমি বলার পর
,,
আমরা খাবার খাওয়া শুরু করলাম। হঠাৎ পুলিশ এসে নক করলো। আমরস গাড়ি থেকে নামলাম।
ইরা পুলিশ এর সাথে কথা বলছিলো..
-আপনারা কোথায় যাচ্ছেন??(পুলিশ)
-কুমিল্লা, চৌদ্দগ্রাম (ইরা)
-উনি আপনার কে হন
-বর
-উনি দূরে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ভয় পাচ্ছে নাকি??
-এই তুমি এখানে আসো
,,
মনে মনে বলছিলাম ভয় পাবো না? পুলিশ কে কি মিথ্যাটাই না বলল।
-আপনারা যে স্বামী-স্ত্রী সেটা আমি বুঝবো কিভাবে?? (পুলিশ)
-এটারও প্রমান লাগবে??(ইরা)
-হ্যা
-আমার চাচ্চু আবু সাইদ পুলিশ কমিশনার
-কি নাম বললেন?
-আবু সাইদ
-উনি তো ঢাকায় থাকেন তাই না?
-হ্যা
-আপনারা ঢাকা থেকেই আসছেন
-হ্যা ঢাকা থেকেই তো আসবো
-সাইদকে আমি চিনি উনি আমার বন্ধু। দাঁড়াও আমি এখনি ফোন করছি। তুমি আগে বলবা না। সরি মামনি
,,
ইরা তো পড়লো মহাবিপদে। তার চাচাকে যদি বলে দেয় বরকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে। তাহলে তো ইরা শেষ। এখন সে এই পুলিশ কে না করতেও পারবো না।
এদিকে তার চাচা ফোন রিসিভ করেছে। দুজন বন্ধু একে ওপরের খোঁজ নেওয়ার পর পুলিশ টা ইরার কথা বলল। ইরার চাচা বড়সড় এক ধাক্কা খেলো।
,,
পুলিশ আমাদের বিদায় জানালো। আমরা গাড়িতে গিয়ে বসলাম। ইরা তো ভয়ে শেষ। একটু পরেই ইরার ফোন বেজে উঠলো তার চাচা কল করেছে। ইরা ফোন রিসিভ করলো।
-তুমি কোথায় আছে কিভাবে আছো কার সাথে আছো আমি জানতে চাচ্ছি না। যার সাথে থাকো না কেনো তাকে কাল আমাদের বাসায় নিয়ে আসো ঠিক আছে??(চাচা)
-জ্বি চাচ্চু (ইরা)
-ওকে
,,
ইরার চাচা ফোন রেখে দেয়৷ ইরা আমাকে বলতে শুরু করলো…
-এখন কি হবে?? (ইরা)
-আপনারই তো দোষ আপনি মিথ্যা বলতে গেলেন কেনো?? (আমি)
-সত্যি বললে যদি সমস্যা করতো তাই। আর আমি আগে থেকেই ভেবে রেখেছি পথে সমস্যা হলে এগুলো বলব। কিন্তু এই হারামী পুলিশ টা যে চাচার বন্ধু কে জানতো?
-আচ্ছা টেনশন কইরেন না বাসায় গিয়ে সত্যি কথাটা বলে দিবেন হয়ে যাবে
-ভয়টা আমাকে নিয়ে না, তোকে নিয়ে
-কেনো
-জানি না কি হবে? ওরা তোকে কি বলবে? আমি কিভাবে সামলাবো বুঝতে পারছি না (ইরা ভেঙে পড়লো)
চলবে