ব্রেকআপ & ব্রেকআপ,Part : 7
Write : Sabbir Ahmed
-ভয়টা আমাকে নিয়ে না তোকে নিয়ে (ইরা)
-কেনো??(আমি)
-জানিনা কি হবে?? ওরা তোকে কি বলবে? আমি কিভাবে সামলাবো বুঝতে পারছি না (ইরা ভেঙে পড়লো)
,,
এই মুহুর্তে আমিই বা তাকে কি বলব বুঝতে পারছি না। ভাবছি এর সাথে থাকলেই সমস্যায় পড়তে হয়। ম্যাম বেশ টেনশনে পড়ে গেছে একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার বাইরে। ম্যাম এর অবস্থা দেখে বেশ মায়াই হচ্ছিলো, মিথ্যা বলে উনি বড় ফাঁসা ফেঁসে গেছেন। তার টেনশন কমানোর জন্য আমি তাকে ডেকে বললাম…
-ম্যাম
-বল
-আমি বলি কি এত টেনশন করে লাভ নেই। যা হবার হবে আর সত্যি টা বললে হয়তো উনারা বুঝতে পারবে
-সত্যিটাই বা কিভাবে বলব আমার তো তাদের সামনে এ নিয়ে কথা বলতে ভয়ে হাত পা কাঁপবে
-আচ্ছা ম্যাম উনাদের সাথে আমি কথা বলব
-আরে তোর সাথে উনারা তো কথাই বলবে না
-সেটা দেখা যাবে আগে তো বাসায় যাই।
,,
রাত টা কাটলো জেগে জেগেই। রাতের শেষ ভাগে যানযট কেটে গেলো। আমরা ঢাকায় ফিরলাম আর সোজা ম্যাম এর বাসার সামনে পৌঁছে গেলাম।
,,
ম্যাম আমাকে বাইরে রেখে ভেতরে গেলেন। ভেতরে তার সাথে কি হচ্ছিলো সেটা আমার কাছে অজানা। হয়তো তাকে বকা দিচ্ছে। কিছুসময় পর ম্যাম এর সাথে পুরো পরিবার আসলো। আমি তো দেখেই ভয়ে শেষ। ম্যামের বাবাকে দেখে আরও ভয় লাগছিলো, কারণ উনি তো আমাকে চেনেন।
,,
স্যার আমার কাছে এসে বললেন..
-তুই আমাদের অফিসের পিয়ন তাই না?? (স্যার)
-জ্বি স্যার (আমি)
,,
আশেপাশের সবাই হেসে উঠলো।
ইরার চাচা,তাকে ডেকে বলল..
-আরে এত মানুষ থাকতে তুই কি না একটা পিয়ন এর সাথে লং ড্রাইভে গিয়েছিলি!
,,
ইরা চুপ কারন সে এখানে কিছুই বলতে সাহস পাবে না। চুপচাপ থাকতে হবে তাকে।
-তোকে যেন অফিসে না দেখি ঠিক আছে?? (ইরার বাবা)
-জ্বি স্যার (আমি চলে আসলাম তাদের ওখান থেকে)
,,
বাইরে এসে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেললাম। যাক তেমন বকা দেয়নি। ম্যামকেও হয়তো কিছু বলেনি। নিজের বাসায় আসলাম, দুইদিন পর খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছি এখানে না থাকতে পারলে চলে যাবো।
,,
দিনটা কোনোরকমে পার করলাম। পরদিন ঘুম থেকে জাগনা পয়েছে, কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছ করছে না৷ মোবাইল টা হাতে নিলাম দেখি বিকাশ কোম্পানি থেকে ম্যাসেজ। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রেখে দিলাম।
,,
শুয়ে শুয়ে টাকার কথা ভাবছি এমন সময় মনে হলো স্ক্রিনে মনে হয় কিছু দেখছিলাম। ঝটপট মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি পঁচিশ হাজার টাকা আমার একাউন্টে কে যেন পাঠিয়েছে। আর একটা ম্যাসেজ আছে, এটা ম্যাম এর নম্বর। ম্যাসেজ সিন করে দেখতে পেলাম উনি শুধু “ব্রেকআপ” লিখে পাঠিয়েছেন।
,,
নিজে নিজেউ শিওর হলাম টাকাটা উনি পাঠিয়েছেন। হয়তো আমার প্রতি তার দয়া হয়েছে। যাক আমার একটু ভালই হলো কাজ খুঁজতে সুবিধা হবে। ম্যাম এর সাথে দেখা হলে ধন্যবাদ দিবো।
,,
আমার রুমের দরজায় কারও নক। আলসেমি ছেড়ে উঠে দরজা খুললাম। পাশের বাসার বড় ভাই এসেছে যার কাছ থেকে আমি টাকা ধার করে এনেছি।
-ভাই আমার টাকাটা খুব প্রয়োজন। তুই যেভাবে পারিস টাকা টা দে (ভাই)
-ভাই আমি তো বলেছি কয়েকদিন পর দিতে পারবো
-না ভাই আমার খুব দরকার
-আচ্ছা আপনি বাসায় যান আমি টাকা নিয়ে আসছি
,,
দরজা লাগিয়ে দিয়ে ফোন হাতে নিবো তখনই আবার দরজায় নক। কেমন যেন খুব রেগে গিয়ে দরজা টা খুলেই বলি..
-আরে ভাই বললাম তে দিয়ে আসবো, (একটু ধমকের সূরেই বলেছি)
,,
আমার এমন করে বলাটা ভুল হইছে। কারন সামনে ম্যান দাঁড়িয়ে আছে। এখন কি বলব? কিভাবে কথা কাটিয়ে নিবো? এসব ভাবতে ভাবতেই ম্যাম নিজেই প্রশ্ন করলো..
-কি সমস্যা এতো রেগে আছিস কেনো(ইরা)
-আপনি এখানে! (আমি বেশ অবাক কান তাকে এখানে এভাবে কখনো আশা করিনি)
আমার সামনে থেকে সর কুত্তা ভেতরে যাবো
,,
আমি সরে দাঁড়াতে উনি ভেতরে ঢুকলেন। তারপর আমার বিছানায় নিজের শরীর টা এলিয়ে দিলেন। -ফ্রেশ হয়ে নে..(ম্যাম)
-আজকে আবার কোথাও যাবেন নাকি? (আমি)
-আরে না তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে কথা আছে
-আচ্ছা আমি বাইরে থেকে আসছি একটু
-ওকে
,,
আমি বাইরে এসে টাকা উঠে বড় ভাই কে থামিয়ে আসি। উনি যদি আবার আসতেন আমার রুমে মেয়ে দেখে হয়তো ভিন্ন কিছু ভাবতো।
,,
রুমে এসে দেখি ম্যাম ঘুমিয়ে গেছে। আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। কাজ শেষে উনার দিকে তাকিয়ে ভাবছি এই মেয়েটার যে কি হইছে! যে বলছি তাই শুনছে।
,,
উনি চোখ খুলে বললেন।
-খাওয়া হইছে??
-না
-টাকা যা পাঠিয়ে দিলাম এখনো খাসনি কেনো?
-উঠতে তো হবে
-যা বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আয় এক সাথে খাবো
-ম্যাম আপনি এই পরিবেশে খেতে পারবেন না
-তুই পারলে আমিও পারবো
,,
কথা বাড়িয়ে লাভ এ মেয়ে আমার কথা শুনবে না৷ বাইরে গিয়ে টাকা উঠিয়ে ভাইকে দিলাম আর ম্যাম এর কথা মতো খাবার নিয়ে আসলাম। খাবার টাও সকাল সকাল বিরিয়ানি। কি নিবো ভেবে না পেয়ে এটা নিয়েই ফিরলাম।
,,
এসে দেখি ম্যাম আমার বিছানা উঠাচ্ছে..
-ম্যাম ম্যাম ছি ছি কি করেন! এবার এইটা যদি আপনার পরিবার জানে তো আমাকে মেরে ফেলবে। ভাই আপনি জান, ওহহ সরি ম্যাম আপনি চলে যান (আমি)
-চুপ থাক, খাবার এনেছিস?? (ইরা)
-জ্বি
-তোর সাথে তো ব্রেকআপ হইছে আমার তাই না?
-আমি কিভাবে জানবো?
-ঐ যে সকালে ম্যাসেজ করলাম
-ঐটা যে আপনি কি জন্য লেখেন আমি জানি না
-ব্রেকআপ হইছে তাই লিখছি
-ওহহ ভালো। আচ্ছা ম্যাম আপনি খাবার খেয়ে বাসায় চলে যান। আপনার সাথে থেকে আমার চাকরি টা গেছে জীবন টা যাক এটা আমি চাই না।
-চাকরি গেছে তো কি হয়েছে? আপনাকে তো বেতন দেওয়া হইছে
-এতটাকা কেনো দিয়েছেন?
-বিশ হাজার তোর আর বাকি টাকা তোর বেতন যদিও কিছু টাকা আছে সেটা মাস শেষে দিয়ে দিবো
-কাজ না করে টাকা আমি নিবো না
-কাজ তো তোকে দিবোই
-কি কাজ?
-আমার সাথে সময় কাটানো
-হ আমাকে তো ই পাইছেন
-ই মানে কি?
-মানে বোঝেন না? আমি কি আপনার ঐ বি এফ যে এইভাবে সময় দিবো?
-তুই আমার মুখের উপর কথা বলিস
-সরি ম্যাম
-তোর সাথে কোনো কথা নেই
-আপনি যেভাবে এসে আমার বিছানায় শুয়ে পড়লেন আমি তো বেশ ভয় পেয়েছি আর এখনও পাচ্ছি এটা যদি আপনার বাসার কেউ জানতে পারে তো আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে
-তুই পালিয়ে যাবি তাই না?
-তো পালাবো না? আমি কি জানের ভয় নেই?
-কে মারবে তোকে?
-আপনার পরিবারের সবাই মিলেই মারবে
-ভালো তো মাইর খাবি
-হুমম আপনাদের মাইর দিতে ভালই লাগে। নাহহ আমার এখানে থাকলে চলবে না এশহর ছাড়তে হবে?
-কি বললি!! (ম্যাম বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো)
-আপনার টরচরে এখান থেকে পালাতে হবে
-ওহহ তাই?
-হুমম
-এখান থেকে যাতে না পালাতে পারিস সেই ব্যবস্থা তো করতেই হয় (ম্যাম আমার দিকে এগিয়ে আসছে)
,,
একটু ভয় পেয়েই বললাম
-মারবেন নাকি?? (আমি)
-নাহহ অন্য কিছু করবো(ইরা)
-আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো আমার ভয় করে, এমনিতে কিন্তু কালকের ভয়ে এখনো ধুক ধুক করে উঠে তার উপর আপনার এই রকম চাহনি।
-আমার চোখে তুই ভয় দেখতে পাস??
-হ্যাঁ
-ওকে ওকে দেখাচ্ছি ভয়
,,
ম্যাম আমার দিকে এগোচ্ছে আর আমি পেছন দিকে যাচ্ছি। একসময় আমার পিঠ দরজায় লেগে যায়। ম্যাম ও আমার খুব কাছে চলে আসে। তার শরীর থেকে সুগন্ধী আসছে। নিশ্চয়ই দামী পারফিউম ব্যবহার করেন।
,,
সব কিছু মিলিয়ে নেশা ধরিয়ে দেওয়ার মতো একটা সুবাস। আমার বুকের ভেতরের অবস্থা খারাপ ম্যাম যে কি করবে এখন তার কিছুই টের পাচ্ছি না৷ আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখ হাঁসছে। নাহহ আমি তার চোখের ভাসা কবে থেকে বোঝা শুরু করলাম!
,,
চোখ সড়িয়ে নিলাম,
-ঐ আমার দিকে তাকা(ইরা)
-…(আবার তাকালাম। উপায় নেই তাকাতেই হবে)
-হুমম এভাবেই তাকিয়ে থাক
-চোখ দিয়ে পানি বের হবে
-হোক
-আমার খুব লজ্জা লাগছে এতটা কাছে আসলেন কেনো?
-তুই পালিয়ে যেতে পারিস তাই একটু আটকানের চেষ্টা, জানিনা এরপর থাকবি কি না চেষ্টা করে দেখতে সমস্যা কি???
-কি চেষ্টা করবেন?
,,
ইরা ম্যাম আমার নাকের সাথে নাক লাগালো। উনি মিটি মিটি হাসতেছেন।
ঐ অবস্থায়ই তিনি কথা বলা শুরু করলেন।
-মুভিতে তোর জায়গায় আমি থাকতাম আর আমার জায়গায় তুই, কিন্তু এখানে ঠিক উল্টো টা হচ্ছে (ইরা)
-…(আমি আর চোখ খুলে রাখতে পারলাম না বন্ধ করে ফেললাম। চোখ খুলে রাখার শক্তি আমার আর নেই)
-আহারে আমার বেস্টু (কথাটা বলে উনি আমার নাকে তার নাক ঘষা শুরু করলো)
চলবে