ব্লাক স্টন,পর্ব_০১
Writer_Shanta_islam
রাত বারোটার পর সাদিয়া কল দিয়ে বললো জান বাসা ফাকা আছে জলদি চলে এসো। এই সুযোগটার অপেক্ষায় ছিলাম। যত তারাতাড়ি সম্ভব রেডি হয়ে সাদিয়ার পাঠানো এড্রেসে চলে আসি। কলিং বেল দিতেই আমার গার্লফ্রেন্ড দরজা খুলে দেয়। সাদিয়াকে দেখে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। লাল রঙের স্লিপলেস শাড়ি আর ঠোঁটে গাড়ো লিপস্টিক উফ দেখতে যা লাগছে না।
-এতো দেরি করলে কেনো? ভিতরে আসো!
সাদিয়ার কথায় হুস ফিরলো। ভিতরে ডুকতেই কেমন বিদগুটে গন্ধ নাকে লাগলো। সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম গন্ধ কীসের? সাদিয়া বললো,, কই কোনো গন্ধ তো পাচ্ছিনা। আমারি ভুল হবে হয়তো ঠান্ডার কারণে এমনটা হচ্ছে। ব্যাপারটা এভয়েট করলাম। সাদিয়াকে টান দিয়ে জাপটে ধরতেই সাদিয়া কানের কাছে এসে একটা কামুড় দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,,,রুমে চলো এমন মনে হচ্ছে আমি কোনো ঘোরে আছি। ওর সৌন্দর্যের মোহে পড়ে গেছি। আমি সাদিয়ার পিছু পিছু রুমে চলে গেলাম। ও আমাকে বেডে ধাক্কা দিয়ে বললো অপেক্ষা করো এখনি আসছি। সাদিয়ার কথাশুনে আরো এক্সাইটেড হয়ে গেলাম,,আমি প্যান্ট খুলে রেডি হচ্ছি এমন সময় রাব্বির কল আসলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রাব্বি প্রশ্ন করছে,,,কিরে মামা তুই কই? তোকে না পেয়ে তোর বাবা তো আমাকে কল করে যাচ্ছে। সবাই ফোনের উপর ফোন করছে তোর নাম্বার বিজি দেখাচ্ছে কেনো?
– থাম মামা থাম,,,খুশির সংবাদ আছে। সাদিয়ার বাসায় আসছি। আজ রাত এখানেই থাকবো,,,বাসায় তুই মেনেজ করে নে।
– সাদিয়া মানে কোন সাদিয়া? এক সপ্তাহ আগে যেই অনলাইন রিলেশনে গেছিলি সেই সাদিয়া?
– হ্যাঁ মামা,,,তোদের এখানেই বাসা। মেয়েটা কিন্তু জোস।
-আমাদের এখানে কোথায়?
-তোদের বাসার উত্তর দিকে যেই গল্লিটা আছে ওটার ডান সাইডের বিল্ডিংটা।
– কি বলিস ভাই তুই ওই বিল্ডিংয়ে কি করছিস। জলদি বের হ।
-দূর বেটা এ সুযোগ হাত ছাড়া করে কে?
-ভাই তিন বছর আগে সাদিয়া নামে একটা মেয়ে ওই বিল্ডিং থেকে লাফ দিয়ে মারা গেছে। সেদিন থেকে ওখানে কেও যায় না।
– দেখ রাব্বি মজা করবি না। সব সময় মজা ভালো লাগে না।
– ভাই এতো রাতে আমি তোর সাথে মজা করছি না। আমি সিরিয়াস তুই জলদি বের হ। রাব্বির কথাশুনে ভিতরে কিছুটা ভয় ডুকে গেলো কানে হালকা ব্যাথা লাগছিলো। গরম পানির মতো কিছু অনুভব করলাম কান থেকে ফোনটা নামাতেই দেখি ফোনের স্ক্রিনে রক্ত ভরা। কানে হাত দিতেই রক্ত বেয়ে পড়ছে। মুহুর্তের মধ্যেই রুমের চারোদিকের চিত্র কেমন পাল্টে গেলো,,কালো গুটগুটে অন্ধকারে রুমটা ভরে গেলো। পিছন থেকে সাদিয়ার কন্ঠ ভেসে এলো,,চলো জান শুরু করে দেই। রীতিমতো আমার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেছে ওপাশ থেকে রাব্বি হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছে। আমি কাপতে কাপতে গাড়টা বাকাতেই দেখলাম সাদিয়ার রুপটা পাল্টে গেছে। একটা ছুরি হাতে নিয়ে ভয়ংকর ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করবো তার উপায় নেই পা দুটো বরফের মতো জমে গেছে। দোয়া দুরুত যা মনে ছিলো মুহূর্তের মধ্যেই সব ভুলে গেছি। এটাই হয়তো আমার শেষ সময়।।
এর জন্যই হয়তো মানুষ বলে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু!
,
,
আবারো ওই বিল্ডিংএ লাস পাওয়া গেছে। কি একটা অবস্থা,,,এভাবে জোয়ান জোয়ান ছেলেরা মরতে থাকলে এই এলাকায় আর একটা ছেলেও আস্তো থাকবে না। হ্যা গো অভির বাবা যত তারাতাড়ি সম্ভব এই বাড়িটা ছাড়ার ব্যবস্থা করো। এভাবে ভয়ে ভয়ে আর কয়দিন থাকবো?
ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই মায়ের ভুতুড়ে লেকচার শুরু। কফিটা হাতে নিয়ে যেই কাপে চুমুক লাগাবো ঠিক তখনি পুলিশের গাড়ির শব্দ পেলাম। ব্যাপারটা তখনি কনফার্ম হলো যে মা একেবারে মিথ্যে বলছে না। কাপটা রেখে রুমে ছুটে এসে শার্ট খুজতে লাগলাম। আশ্চর্য একটা শার্টও খুজে পাচ্ছি না। বুঝতে বাকি রইলো না শার্টগুলোর গায়েব হওয়ার পিছনে যে আমার মা রমনীর হাত আছে।
-মা মা মা ওমা এতোবার ডাকছি তার কোনো সারা পাচ্ছি না। দৌড়ে ডাইনিংয়ে যেয়ে দেখি মা আব্বাকে চা দিচ্ছে। আব্বা চায়ে চুমুক দিতে না দিতেই গরগর করে মুখের সবটুকু চা ফেলে বললো,,,
– এ কী রকেয়া চা এতো তেতো কেনো? চায়ে চিনি দেওনি?
– না দেইনি,,এ সপ্তাহে ডায়বেটিসটা যে বেরেছে সে খেয়াল আছে।
– কী মুসকিল এর জন্য কি চা খাবো না?
– খেতে মানা করেছে কে? খাও না খাও খেয়ে একেবারে মরে যাও।
আব্বা চায়ের কাপটা রেখে প্রতিবাদি গলায় বললো,,,
-থামো থামো লাগবে না তোমার চা,,,চায়ের বদলে একটু পানি দিও পারলে পানির সাথে বিষ মিশিয়ে দিও।
বাবা বরাবরি চা খোর মানুষ,,চা না খেতে পারলে তার মাথা ঠিক থাকে না। এদের বিশ্বযুদ্ধ এভাবে চলতে থাকলে লাশটা বোধ হয় দেখতে পারবো না। তাই ঝগড়ার মাঝখানে বিরতি টেনে বললাম আমার শার্ট-প্যান্ট কই?
আমার কথা শুনে আব্বা আম্মা দুজনেই বুঝলো আমি কেনো শার্ট চাইছি,,,,আব্বা এমনি নরম মনের মানুষ হলেও সিরিয়াস সময় গলা ভারি করে কথা বলে। আব্বা কিছুটা ভারি গলায় বললো,,,আজ তুমি রুম থেকে বের হবে না। যাও পড়তে বসো।
আমার টাইমিংটাই খারাপ ছিলো। অনেকবার অনুরোধ করা শর্তেও বাইরে বের হওয়ার অনুমতি পেলাম না। কিছু করার নেই হতাশ হয়ে রুমে এসে পড়ার টেবিলে বসলাম। এমনিতেই মনটা ভালো না তার উপর গ্রামার বইটা চোখে পড়ে গেলো। বিরক্তকর! মাথাটা ধরে যাচ্ছে। গ্রামার বইটা সাইডে রাখতেই তার নিচে ছোট একটা বই খুজে পেলাম,,স্যার নিকলেডের দ্যা কিলার লেডি বইটা। আমার ডিটেকটিভ টাইপের বই খুব পছন্দ। ছোটবেলা থেকে এসব জিনিস পড়তেই ভালো লাগতো। ডিটেকটিভিটির পোকা মাথায় চরে ক্লাস ফাইভ থেকে। নাদিয়ার বাবার সাথে ওদের কাজের বুয়া জমিলার ইটিসপিটিস টাইপের সম্পর্ক ছিলো সেটা সলভ করা আমার জীবনের প্রথম কেস ছিলো। অবশ্য এ নিয়ে আমাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছিলো।
স্যার নিকলেডের এই বইটার একটা লিখা আমার খুব ভালো লেগেছিলো “যখন দেখবে সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে তখন নিজেই নিজের পথ তৈরি করে নিবে”
নাহ এভাবে বসে থাকা যাবে না। স্যার নিকলেডের নাম নিয়ে পড়নের ময়লা গেঞ্জিটা আর হাফ প্যান্ট পড়েই বারান্দার পাইপ দিয়ে নামা শুরু করলাম। একটা প্রবাদ বাক্য শুনেছিলাম অভ্যাস ভয়ানক জিনিস,,বাক্যটা যে বলেছে সে বুদ্ধিমান বটে। ডিটেকটিভিটির বদ অভ্যাসের জন্য কি কি করতে হচ্ছে। পাইপ দিয়ে নামার সময় পোচ করে কিছু ছিড়ার আওয়াজ পেলাম। এই যা প্যান্টটা ছিড়লো নাকি। নাহ এসব ভেবে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। ওই অবস্থায় দৌড়ে ডেট স্পটের জায়গায় গেলাম। অনেক মানুষ ভিড় হয়ে দাড়িয়ে আছে,,এমনিতে তো এই জায়গায় মানুষ আসে না। আজ মনে হচ্ছে মাছের বাজার মেলেছে। পুলিশ সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ছেলেটার লাশ এ্যাম্বুলেন্সে উঠানো হচ্ছে। ভাগিস সঠিক সময় আসতে পেরেছি। নাহলে লাশটা দেখা হতো না। ভির কাটিয়ে লাশের সামনে যেতেই দেখলাম লাশটার বাজে অবস্থা। শরীরে বড় বড় নকের আচরে ভরা। এমন মনে হচ্ছে শরীর থেকে শুধু রক্তটুকু শুসে নেওয়া জন্য ধসতা ধসতি হয়েছে। ইস ক্যামেরাটা কেনো যে নিয়ে আসলাম না। বেশিক্ষণ দেখতে পারলাম না। তারাহুরো করেই লাশটা সরিয়ে নেওয়া হলো। বিল্ডিংটায় ডুকতে চাইলাম কিন্তু তার আগেই পুলিশ ডেট স্পটে সিল মেরে দিয়েছে। নাহ ভিতরে না ডুকা পর্যন্ত কিছুই ক্লিয়ার হবে না। রীতিমতো লোকমুখে ছড়িয়ে গেছে সাদিয়ার ভুত আবার আরেকটা ছেলেকে খেয়েছে। এই নিয়ে চার মাসে তিনটা ছেলে মারা গেলো। প্রত্যেকের মৃত্যু একি ভাবে হয়েছে। আমরা এই এলাকায় এসেছি পাচ মাস হবে হয়তো। এমন পেচিলা ঘটনা আমার জীবনে এই প্রথম দেখলাম।
(গল্পের অন্যান্য অংশ খুজে না পেলে প্রোফাইলে দেখবেন।)
,
,
বাসায় ফিরে গোসলের জন্য ডুকবো তখনি মা পিছন থেকে বলে উঠলো,,,কিরে তোর প্যান্ট ছিরা কেনো? মার কথায় পিছন দিকে তাকিয়ে দেখি প্যান্ট অনেক খানি ছিড়ে গেছে। এমন সময় আমার ক্রাশের এন্ট্রি হলো বাটি হাতে নিয়ে। হায় সর্বনাশ আজি ক্রাশকে বাসায় আসতে হলো,,,নিশ্চয়ই চিনি নিতে এসেছে। নাবিলা আমার পিছন দিকে তাকিয়ে মুখে হাত রেখে মুচকি হাসছে। তারাহুরোয় তখন যে প্যান্টটা ছিরে ছিলো সে কথা মাথা থেকে একে বারে উরে গেছিলো। সারা রাস্তা আমি এভাবে হেটে এসেছি। নাওযুবিল্লাহ এখানে আর থাকা যাবে না। দৌড়ে রুমে চলে এলাম। সেই তখন যে রুমে ডুকেছি এরপর আর রুম থেকে বের হয়নি। বার বার লাশটার চেহারা চোখে চোখে ভাসছে। নাহ এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশের পুলিশদের ভরসা নেই। এদের আশায় বসে থাকলে আরো কতজন ছেলে মারা যাবে কে জানে। সিদ্ধান্ত নিলাম আজ রাত একটায় বের হবো। যেই ভাবা সেই কাজ,,,যাওয়ার জন্য ব্যাগের মধ্যে ক্যামেরা সহ যাবতীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম। মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,,,প্রশ্নের উত্তর খুজতে খুজতে কখন যে চোখ লেগে এলো,,হঠাৎ আমার দরজায় কড়া নরার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো,,তখন চোখ মেলে দেখি ১.৩০,,এই সময় কে আসবে? দরজাটা খুলতেই রুমের ভিতর থেকে অভি বলে কেও ডাক দিলো। আশ্চর্য রুমের দরজা লাগানো ছিলো এখন আবার রুমের ভিতর থেকে কে ডাকছে! আবারো কানে একি সুরে ভেসে এলো “অভি” এবার বেলকুনি থেকে শব্দটা আসছে। আস্তে আস্তে গুটি গুটি পায়ে বেলকুনির সামনে যেতেই দেখলাম সাদা শাড়ি পড়ে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে,,কাপা কাপা কন্ঠে প্রশ্ন করলাম- কে? কে ওখানে?
চলবে,,,,,