ব্লাক_স্টন,পর্ব_০৪

0
640

ব্লাক_স্টন,পর্ব_০৪
Writer_Shanta_islam

এটাও একটা দুঃস্বপ্ন। চোখ খুললেই স্বপ্নটা ভেঙে যাবে। আর আমি দৌড়ে যেয়ে টুসিকে জড়িয়ে ধরবো। না অভি না এভাবে ভেঙে পড়িস না৷ কিছু হবে না টুসির। এটা শুধু স্বপ্ন,,শুধুই স্বপ্ন। কিন্তু এ ভয়ানক স্বপ্ন ভাঙছে না কেনো,,, ইয়া আল্লাহ আমি যেটা ভাবছি সেটা যেনো সত্যি না হয়। অভি বার বার চোখ বন্ধ করছে যাতে সে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। কিন্তু ঘুম তো ভাঙছে না। সে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। যেখানে টুসির পুতুলটা পাওয়া গেছে,,, সেখানে আটু গেড়ে বসে অভি কান্না করছে। সব হয়েছে আমার জন্য। আমি যদি রাতে বের না হতাম তাহলে টুসি আমার পিছু নিত না। এর আগেও কয়েকবার এমন করেছিলো মেয়েটা। আমি ওকে কোথাও নিয়ে যেতাম না দেখে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার পিছু চলে আসতো। এখন আমি কি করবো? কোথায় খুজবো ওকে? বাবা মাকে কি জবাব দিব? অভি যতই ভাবছে ততোই ভেঙে পড়ছে। হঠাৎ অভির ফোনটা বেজে ওঠে। পকেট থেকে ফোনটা বের করতেই বাবার নাম্বার স্কিনে ভাসছে। হয়তো টুসিকে পাওয়া গেছে অভি তারাতাড়ি ফোনটা রিসিভ করে,,,আব্বা টুসি,,,
অভি পুরো কথা বলার আগেই অভির বাবা প্রশ্ন করে টুসিকে পেয়েছিস? অভি হয়তো অন্য কিছু শোনার জন্য আশা করেছিলো। হয়তো শুনতে চেয়েছিলো টুসিকে পেয়েছি তারাতাড়ি বাসায় চলে আয়। অভি কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিয়ে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।
যদি টুসি সত্যি আমার পিছু নিয়ে থাকে তাহলে ও আমার সাথে বিল্ডিংয়েও উঠেছে। অভি বিল্ডিংয়ের ভিতরে প্রবেশ করে। কেমন বিদঘুটে গন্ধে পুরো জাগা ভরে আছে। নিশ্বাস নেওয়াটাও কষ্টকর। আশ্চর্যের বিষয় কাল রাতে এতো কিছু ঘটে গেলো দু- দুটো মানুষের রক্ত ঝড়লো কিন্তু রক্তের বিন্দু মাত্র ছিটে ফোটা নেই। পন্ডিত মশাইকে অভি দেখেনি কিন্তু রাব্বিকে সে দেখেছে। যেখানে এসে রাব্বি বেহুশ হয়ে পড়েছিলো সেখানেও রক্তের কোনো ছিটে ফোটা ছিলো না। কিন্তু কাল রাতে রাব্বির শরীর থেকে অনেক রক্ত ঝড়েছে। অভির ভালো করেই মনে আছে রক্ত মাটিতেও পড়েছিলো। তাছাড়া দুজন মানুষ এখান থেকে গায়েব হয়েছে পন্ডিত মশাই আর ওই মেয়েটা ওদের লাশও তো দেখা যাচ্ছে না। আদো কি ওরা বেচে আছে। দেখে মনে হচ্ছে কাল রাতে এখানে কিছুই হয়নি। অভি পুরো বিল্ডিং খুজে চলেছে কিন্তু কোথাও টুসিকে পাচ্ছে না। খুজতে খুজতে একটা পর্যন্ত অভি সেখানে চলে আসে যেখানে ওই মেয়েটার সাথে দেখা হয়েছিলো আর রাব্বি মেয়েটাকে চাকু মারে। চাকু মারার পর মেয়েটার হাত থেকে রক্ত ঝড়েছিলো সেই রক্তগুলোও নেই। এই বিল্ডিং পুরোটাই রহস্যে ঘেরা। অভির মুখে আলোর মতো কিছু এসে পড়ে,,,অভি আরেকটু এগিয়ে দেখে একটা ভাঙা কালো পাথর। সূর্যের আলো এসে পড়ায় ওটা রিফ্লেক্ট করে অভির চোখে এসে পড়েছে। অভি পাথরটা উঠিয়ে নেয়। তার পাশে পড়ে ছিলো অভির সেই ক্যামেরাটা। যখন রাব্বি মেয়েটাকে এর্টাক করতে যায় তখন অভি ক্যামেরাটা ফেলে রাব্বিকে থামাতে যায়। মেয়েটার পিছু নিতে যেয়ে ক্যামেরাটার কথা মনে ছিলো না। অভি ক্যামেরা উঠিয়ে দেখে এখনো রেকর্ডিং চলছে। রেকর্ড সেভ করে অভি আবার প্রথম থেকে দেখা শুরু করে। অভি ভিডিও ফুটেজ টানতে থাকে টানতে টানতে সেই ভয়ংকর আওয়াজের সিনটা চলে আসে যেখানে অভি রাব্বিকে রেখে মেয়েটার পিছু নিয়েছিলো। ক্যামেরাটা নিচে পড়েছিলো। তাই শুধু রাব্বির পা দেখা যাচ্ছে। অন্ধকার থেকে আরো দুটো পা বের হয়ে এলো। দেখে মনে হচ্ছে কোনো মেয়ের পা। লাল শাড়ি পড়া হয়তো। রাব্বির কথাগুলো শোনা যাচ্ছে রাব্বি বলছিলো,,,তুই তুই ডাইনি আমার বন্ধুকে মেরেছিস। তোকে আজ,,,,হঠাৎ জোরে আওয়াজ শোনা গেলো। সেই লাল শাড়ি পড়া পা আর দেখা যাচ্ছে না। এর পর যা দেখলাম সাথে সাথে আমার হাত থেকে ক্যামেরাটা পড়ে গেলো। আমি ছিটকে দুকদম পিছু চলে গেলাম। এটা কি ছিলো,,,,এটা,,,এটা তো আমি কি ভুল দেখছি। এটা আসলে কি? ভয়ংকর কোনো প্রানী নাকি কোনো আত্না। মুহুর্তের মধ্যেই মানুষের পা থেকে অন্য কিছুতে রুপান্তর হলো। বুঝতে পারছি না। পুরো মুখ না দেখেও টিকটিকির মতো বড় বড় চার চারটা পা দেখা যাচ্ছে। আর সাথে ওটা কি ছিলো ওটা কি লেজ ছিলো? খুবি ভয়ংকর। চেহারাটা না জানি কত ভয়ংকর। আমি সাহস করে আবার ক্যামেরাটা নিতে যাবো এমন সময় কেও একজন আমার আগেই ক্যামেরা তুলে নেয়।
-তুমি?
– হ্যাঁ আমি।
সে আর কেও না কাল রাতের সেই মেয়েটা।
-তুমি এখনো বেচে আছো?
মেয়েটা ক্যামেরাটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে বললো,,,কাল রাতেও ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম প্রানে বাচতে চাইলে এখান থেকে চলে যাও। নাহলে আমার হাতেই তোমার মৃত্যু আছে।
মেয়েটার হাতে এখনো সেই ওর্নাটাই পেচানো। দেখে মনে হচ্ছে রক্ত জমাট বেধে আছে। এতো খারাপ অবস্থায়ও মেয়েটা হসপিটালে যায়নি অবাক না হয়ে পারছি না। এখন মনে হচ্ছে এই বিল্ডিংয়ের থেকে মেয়েটার মধ্যে বেশি রহস্য লুকিয়ে আছে। হঠাৎ মেয়েটার নজর আমার ডান হাতের দিকে যায়। মেয়েটা চোখ বড় বড় করে বললো,,,ইম্পসিবল,,,এটা হতে পারে না। তোমার হাতে,,,,,
মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে বড় ধরনের সর্ট খেয়েছে। মেয়েটা কাপা কাপা গলায় বলে উঠলো,,,,তোমার হাতে ব্লাক স্টনের অর্ধেক অংশ এলো কীভাবে?
আজব মেয়ে কি বলে আগা মাথা বুঝি না। কিন্তু এটা ঠিকি বুঝতে পারছি মেয়েটা কিছু একটা জানে কিছু একটা বললে ভুল হবে অনেক কিছুই জানে। মেয়েটা আমার হাত থেকে পাথরটা নিতে এলে আমি সড়িয়ে ফেলি।
– না না,,,এতো সহজে না। এতো সহজে এই পাথর তুমি পাবে না।
– কি বলছো ছেলে জলদি আমার স্টন আমাকে ফিরত দেও। তুমি জানোও না এটা কি জিনিস।
– হ্যাঁ আমি জানি না। কিন্তু জানতে চাই,,,,,
মেয়েটা আবারো আমার থেকে পাথরটা ছিনিয়ে নিতে আসে। বৃথা চেস্টা,,,সে এবারো ব্যর্থ হয় মাটিতে গড়িয়ে পড়ে। দেখে মনে হচ্ছে সে খুব দূর্বল,, দাড়ানোর শক্তি টুকু নেই। তবুও বাইরে থেকে শক্ত দেখানোর চেষ্টা করছে।
– কি চাও তুমি? কেনো #ব্লাক_স্টন আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো না?
– তোমার পাথর তুমি পাবে,,,তার আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে,,,,
– কি প্রশ্নের উত্তর?
– তুমি কে? কাল রাতে এখানে কি হয়েছিলো? ওই ভয়ংকর জিনিসটা কী ছিলো? আর এ পাথরের রহস্য কী যেটার জন্য তুমি তোমার প্রানের ঝুকি নিয়ে আবারো বিল্ডিংয়ে ডুকেছিলে?
– আমি তোমাকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছুক নই,,,তোমার এসবের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। তাই প্রানে বাচতে চাইলে এসব থেকে দূরে থাকো,,,
– সম্পর্ক আছে,,,আমার সম্পর্ক আছে,,কাল রাতের ঘটনায় আমার অনেক কিছুই যায় আসে,,,নিজের প্রান নয় আমি আমার বোনের প্রান বাচাতে চাই।
-কী?
– হ্যাঁ আমার বোন,,, কাল রাতে আমার সাথে আমার বোনও এখানে এসেছিলো,,,
-ওয়াট,,,,,তোমরা কি এই জায়গায়কে পার্ক মনে করেছো? যখন খুশি যে সে চলে এসছো।
– প্লিজ আমাকে সাহায্য করো,,,,আমার ছোট বোনের বয়স মাত্র সাত বছর। ও একা বেশিক্ষণ এক জায়গায় থাকতে পারে না। ওই ভয়ংকর জিনিসটা যদি টুসির কিছু করে ফেলে,,,,অভি কথাগুলো বলতে যেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে। আর সাথে সাথে ব্লাক স্টনের অর্ধেক অংশ উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
– ইম্পসিবল ব্লাক স্টন তোমাকে,,,,,
অভি করুন কন্ঠে বললো,,,,প্লিজ আমাকে সাহায্য করো। আমি জানি তুমি অনেক কিছুই জানো। আমার বোন কি এখনো বেচে আছে? নাকি ওকে,,,,,
অভি কথাটা বলতে যেয়েও থেমে যায়। বাক্যটা মুখে নিতেও অভির বাধছে। মেয়েটা অভিকে দেখে বুঝতে পারছে অভির ভিতরে কি চলছে। মেয়েটা নরম গলায় অভিকে বললো,,,
-জানো তোমার হাতে কী আছে? এটা সবার কাছে ধরা দেয় না। এটা শুধু তারাই দেখতে পারে যাদের এই স্টন বাছাই করে। তুমি ব্লাক স্টনকে দেখতে পেয়েছো এটার মানে হয়তো ব্লাক স্টনের আরো অর্ধেক অংশকে তুমি খুজতে পারবে।
অভি এবার একটু জ্বাজালো কন্ঠে বললো,,,আমি এখানে আমার বোনের কথা বলছি। যে এখনো বেচে আছে কি না জানি না। আর তুমি এই পাথর নিয়ে পড়ে আছো। হয়তো আমিই ভুল ছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো তুমি আমার কস্টটা বুঝবে,,হেল্প করতে পারবে আমার। কিন্তু যে ব্যক্তি ছোট বাচ্চার জীবনের কথা না ভেবে রুপকথার পাথরের গল্প নিয়ে পড়ে আছে তার কাছে কি হেল্প চাইবো। অভি অর্ধেক ব্লাক স্টনের টুকরোটা মেয়েটার হাতে দিয়ে হাটা শুরু করে।
-এক মিনিট দারাও,,,,এই স্টনের মাধ্যেমে তুমি তোমার বোনকে খুজতে পারবে। অভির চলমান পা দুটো থেমে যায়।
-আর ইউ মেড? আমি জানি না আমার বোন বেচে আছে কিনা আর তুমি,,,,,
-তোমার বোন বেচে আছে।
-কিহ,,,
– হ্যাঁ তোমার বোন বেচে আছে,,, আপাতত বেচে আছে। কিন্তু,,,,,,,
-কি বলতে চাইছো তুমি? আর আমার বোন বেচে আছে কি না এটা তুমি কীভাবে জানো?
– কারন রিমাসরা একটার বেশি মানুষ হজম করতে পারে না। কাল রাতে আমার চোখের সামনে ওটা পন্ডিতকে গিলেছে। এর জন্য তোমার সাথের সেই বন্ধুটা বেচে গেছে আর তোমার বোনও আপাতত বেচে আছে,,,কিন্তু কতোক্ষন বেচে থাকবে সেটা বলতে পারছি না। ফিফটি পার্সেন্ট চান্স,,,
-মানে?

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here