ব্লাক_স্টন,পর্ব_০৬
Writer_Shanta_islam
-এখনি দরজা খুলতে হবে মানে? তুমি কোন দরজার কথা বলছো?
-শুনো ছেলে তোমাকে এতো কিছু বোঝানোর সময় আমার কাছে নেই। শুধু আমি যা যা করতে বলবো ওগুলোই করবে।
-আমার নাম অভি,,
-ওকে অভি,, এখন যাও কিছু কাঠ যোগাড় করে আনো মশাল বানানোর জন্য। ততক্ষণে আমি ফাদ তৈরি করছি।
– মশাল ফাদ এগুলো দিয়ে তুমি কি করবে?
– রিমাসরা আগুনকে ভয় পায়। ফাদের মধ্যে ফেলে ওদের চারপাশে আগুন লাগিয়ে দিব। এতে কিছুক্ষন ওদের ঘায়েল করে আটকানো যাবে । কিন্তু ওরা পুরোপুরি মরবে না। মারার জন্য ব্লাক স্টন দরকার।
– শেষ একটা প্রশ্নের উত্তর চাই,,তুমি এতোকিছু কীভাবে জানো? কে তুমি? আর এসবের মধ্যে তোমার সার্থ কী?
আমার কথাশুনে মেয়েটা ভরকে গেলো,,,আমি কে,,এসব কীভাবে জানি বা এতে আমার কিসের সার্থ আছে এসব জেনে তোমার কাজ নেই। তুমি শুধু এতোটুকু জেনে রাখো বেবি রিমাসদের যেভাবেই হোক শেষ করতে হবে নাহলে অনর্থ হয়ে যাবে।
অদ্ভুত একটা মেয়ে। এর সবকিছু আমার কাছে কেমন যেনো এভনরমাল মনে হয়। এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে এই মেয়ে নিজে রিমাস কি না। বাসায় আরেকবার ফোন দিলাম টুসির খবর নিতে। বাবা বললো এখনো ওকে পাওয়া যায়নি। বাবাকে বললাম আমি টুসিকে খুজতে বের হয়েছি ওকে নিয়েই ফিরবো। ফোনের ওপাশ থেকে মার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমার সন্দেহটাই ঠিক। টুসি আমার পিছু নিয়েছিলো। যখন পুতুলটা পেলাম তখন কেনো যে মাথায় এলো না টুসি আমার পিছু নিয়েছে। টুসিটা হয়েছে একেবারে আমার মতো। সাত বছরের হলে কি হবে খুবি চনচল এক জায়গায় বেশিক্ষন থাকে না। চনচল হবে না আবার আমারি তো বোন। যখন শুনলাম টুসি বেচে আছে তখন মনে হলো এই দেহে প্রান ফিরলো। এবার থেকে টুসির সাথে আর ঝগড়া করবো না। আমার পাতের ডিমটুকু নয় আমার পুরো জীবনটুকু দিয়ে দিব। ও যা চায় আমি তাই এনে দিব। শুধু এক বার ফিরে পাই ওকে। যতবারি ছুটকিটার কথা ভাবি ততবারি বুকটা ফেটে যাচ্ছে। নিজেকে যে কীভাবে সামলে রেখেছি সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানে।
অনেকগুলো লম্বা কাঠ এনে বিল্ডিংয়ে ফিরলাম। যেয়ে দেখি মেয়েটা রশি দিয়ে গোল একটা সার্কেল বানিয়েছে তাতে কেরোসিন ডালচ্ছে।
-এই নেও কাঠ,,,আমার আওয়াজ পেয়ে মেয়েটা পিছু ফিরে তাকায়।
– হ্যাঁ এখানে দেও,,,কিন্তু কাপড় তো নেই,,
মেয়েটা দেখলাম তার পড়নের সাদা জামাটা ছিড়ার চেস্টা করছে।
-আরে কি করছো কি? জামা ছিরছো কেনো?
-মশাল বানাতে গেলে কাপড় লাগে। এতোটুকু বুদ্ধিও তোমার মাথায় নেই। আমার জীবনে তোমার মতো আনাড়ি মানুষের সাথে কাজ করিনি।
মেয়েটা মনে হয় আমাকে অপমান করলো। যাক মেয়েজাতি অপমান করলে গায়ে মাখতে নেই। আমি গেঞ্জির উপর শার্ট পরে ছিলাম। আমার পড়নের শার্টটা খুলে মেয়েটার হাত থেকে মশাল নিয়ে বললাম তোমার কাপড় ছিড়তে হবে না। আমার এই শার্টেই কাজ হয়ে যাবে। আমি শার্ট ছিরে টুকরো টুকরো করছিলাম হঠাৎ খেয়াল করলাম মেয়েটার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে।
– তোমার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে। মেয়েটা তার হাতের বাধন আরেকটু শক্ত করে বেধে আবারো রশি পাকানোতে মন দিলো। মনে হলো সে আমার কথায় পাতা দিলো না। মেয়েটা শুধু অদ্ভুত না রহস্যময়ীও বটে। কেনো জানি মেয়েটার ব্যাপারে জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। যাই হোক আমার আসল টার্গেট টুসি। যেভাবেই হোক টুসিকে খুজতে হবে। টুসিকে পেলেই এখান থেকে কেটে পরবো।
আমার মশালগুলো বানানো শেষ। আমি মেয়েটার সাথে যেয়ে ফাদ পাততে সাহায্য করতে যাই হঠাৎ মেয়েটা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে ধপাস করে ফ্লোরে পরে গেলো।
-তুমি ঠিকাছো?
-হ্যা ঠিকাছি,,কথাটা বলে সে উঠতে নিলে আবারো পড়ে যায়,,,দেখে মনে হচ্ছে তার শরীরে বেশি শক্তি নেই। এতো বড় আঘাত নিয়ে মেয়েটা কীভাবে কাজ করছে এটা দেখেই অবাক হচ্ছি। আমি তাড়াহুড়ো করে মেয়েটাকে ধরতে নিলে মেয়েটা আমাকে বাধা দিয়ে বললো,,আমি উঠতে পারবো। সে আবারো উঠতে চেষ্টা করলে পরে যায়। নাহ আমি আর পারলাম না যেয়ে ওকে দুহাতে ধরে ফেললাম।
-অনেক হয়েছে। ঠিক মতো দাড়াতে পারচ্ছো না। তবুও নিজের শরীরের প্রতি জোর খাটাচ্ছো কেনো?
মশাল বানানোর পর শার্টের কিছু ছিড়া টুকরো বেচে গিয়েছিলো। আর আমার ব্যাগে সব সময় হ্যাক্সিসল থাকে। ব্যাগ থেকে হ্যাক্সিসল বের করে ওর হাতের পেচানো ওর্নাটা খুলে আঘাতের স্থানে হ্যাক্সিসল দিয়ে পরিষ্কার করতে লাগলাম। মেয়েটা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেয়েদের ব্যাপারে আমি খুব কাচা। আজ পর্যন্ত আমার মায়ের মন বুঝতে পারলাম না এই মেয়ের চাহুনি বুঝবো কি করে। তাই তার চাহুনির দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আমি আঘাতে হ্যাক্সিসল লাগাচ্ছি। হঠাৎ মেয়েটা বললো,,,তুমি অন্য ছেলেদের থেকে খুব আলাদা। তোমার জায়গায় অন্য কোনো ছেলে হলে এমন ভয়ংকর জিনিস দেখে হয়তো এতোক্ষনে পালিয়ে যেতো। তুমি তোমার বোনকে খুব ভালোবাসো তাই না?
-না একদমি না। আমি টুসিকে একদমি ভালোবাসি না। ও না থাকলে আমার কিছু যায় আসে না। শুধু মনে হয় প্রিয় কিছু একটা হারিয়ে ফেলেছি ভিতরটা খালি খালি লাগে। ওর কিছু হলেও আমার যায় আসে না শুধু মনে হয় আমার নিজের প্রানটুকুর কিছু হয়ে যাবে। ওকে আমি একদমি ভালোবাসি না। শুধু ঝগড়া করার জন্য ওকে আমার প্রয়োজন। মাঝে মাঝে মারামারি করার জন্যও।
– হুম বুঝতে পারছি তুমি ওকে কতো ভালোবাসো। কিন্তু এতো ছোট বাচ্চা তোমার পিছু নিলো কীভাবে?
– ও আমার পিছু এসেছে এটা নতুন কিছু নয়। বাসা থেকে বের হতে না দিলে আমি মাঝে মাঝেই পাইপ বেয়ে নিচে নামতাম। টুসি এর আগেও অনেকবার আমাকে পাইপ বেয়ে নামতে দেখে ও লুকিয়ে লুকিয়ে মা বাবার চোখ ফাকি দিয়ে মেইন গেট থেকে আমার আগেই নিচে চলে যেতো। আমারি সব দোষ। আমি কখনো ওকে বাইরে নিয়ে যেতাম না। ও খুব আবদার করতো। টুসিটাকে আমি,,,,অভির কথাগুলো ভেঙে ভেঙে আসছে। ভিতর দিয়ে বের হচ্ছে না। মনে হয় এখনি কান্নায় ভেঙে পরবো।
-আমি তোমার কষ্ট বুঝতে পারছি। রবিনও তোমার মতো। ভালোবাসে ঠিকি কিন্তু ভালোবাসা প্রকাশ করে না।
-রবিন কে?
-আমার বড় ভাই। তুমি আর টুসি যথেষ্ট ক্লোজ কিন্তু রবিন আর আমি ততোটা ক্লোজ নই। বাবা মা মারা যাওয়ার পর ও এক্সপেরিমেন্ট সেন্টারকেই নিজের দুনিয়া বানিয়ে নেয়। দিন দিন আমাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। আর তারপর,,,,মেয়েটা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো বাদ দেও আমার কথা। আমাদের কাজে লেগে যেতে হবে সময় খুব কম।
মেয়েটা উঠতে চাইলে আমি ওর হাত টেনে ধরলাম,,,দাড়াও এখনো হয়নি। হাতটা বেধে দেই।
মেয়েটা এবার বাধ্য মেয়ের মতো আমার পাশে বসে পড়লো। আমি ওর হাতে টুকরো কাপড় বাধতে বাধতে প্রশ্ন করলাম- তুমি বললে তোমার ভাই এক্সপেরিমেন্ট সেন্টারে ছিলো,,,,
-আমি জানি তুমি কি জানতে চাইছো। আমি আর আমার ভাই দুজনি সাইনটেস্ট। আমার বাবা মাও সাইনটেস্ট ছিলো। তারা একটা এক্সপেরিমেন্টে মারা যান। তখন থেকেই আমরা ভাইবোন এক সাথে থেকেও এক সাথে নেই।
– নেই মানে? তোমার ভাই এখন কোথায়?
আমার কথাশুনে ওর চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। ভাবলাম হয়তো ওর ভাইও কোনো এক্সপেরিমেন্টে মারা গেছে। মেয়েটা আমার ধারনার বাইরে। কেও তাকে দেখে বলবে না এতো সুন্দরী একটা মেয়ে সাইনটেস্ট। আর এতোক্ষন আমি তার ব্যাপারে কি না কি ভাবছিলাম। এর জন্যই ইংরেজিতে একটা অনুবাদ আছে Don’t judged a book by it’s cover.
নেও হয়ে গেছে এখন আর রক্ত ঝড়বে না। কথাটা বলে উঠে যেতে নিলে মেয়ে পিছন থেকে বললো,,,তোমার বোন যেখানে আছে রবিনও এখন সেখানে আছে।
মেয়েটার কথাশুনে আমি থমকে গেলাম।
– কি তোমার ভাইও?
– হ্যাঁ আমার ভাইও ওখানে আছে। কিন্তু ওকে কোনো রিমাস ধরে নিয়ে যায়নি। ও নিজের ইচ্ছাই ওখানে আছে।
– ওয়াট?
– হ্যাঁ রবিন নিজের ইচ্ছেই ওখানে আছে। তুমি এখনো অনেক কিছু জানো না। যা জেনেছো সেটা ক্ষুদ্র। তুমি এখনো এটাই জানো না আমি কে?
মেয়েটার কথা শুনে এখন আমার ভয় করছে। আমার সন্দেহটাই কী সঠিক? এই মেয়েও কি রিমাস?
মেয়েটা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,,,আমার নাম জেনি। তুমি হয়তো ভাবতে পারো আমি এখানকার মানুষ।
– তুমি কি বলতে চাইছো তুমি এখানকার মানুষ না?
-হ্যা আমি এখানকার মানুষ না। আমার জন্ম ইতালিতে। আমি আমেরিকার গুপ্ত সাইনটেস্টদের মধ্যে একজন।
– তাহলে তুমি এখানকার ভাষা এতো ভালো ভাবে জানো কীভাবে?
– আমি ঊনচল্লিশটি দেশের ভাষা জানি। আমার ভাইও জানে। আমরা অনেক আগে থেকেই ব্লাক স্টনের উপর রিসার্চ করছিলাম। এর শক্তির উৎস খুজতে যেয়ে রিমাসদের সম্পর্কে জানতে পারি। রবিন ওখানে অনেক দিন ধরে আছে।
– অনেক দিন মানে কদিন ধরে আছে?
-প্রায় এক মাস,,,এখন তো আশা হারিয়ে ফেলেছি ও বেচে আছে কি না। এতোদিনে মনে হয় অক্সিজেন সিলেন্ডারটাও শেষ হয়ে গেছে।
-অক্সিজেন সিলেন্ডার মানে?
কিছু একটা ভেবে অভির হাত থেকে হ্যাক্সিসলের বোতলটা পরে যায়। অভির চোখ থেকে অঝড়ো অশ্রু বইতে থাকে,,,
-তার মানে টুসি,,,তুমি জানতে,,,তুমি ভালো করেই জানতে অক্সিজেন ছাড়া টুসি বাচবে না। তুমি আমাকে এই কথা কেনো বলো নি? অভি চিৎকার করে কান্না করছে আর জেনিকে প্রশ্ন করছে।
-অভি শান্ত হও,,,
অভি সামনে যা পাচ্ছে তাই ভাংচুর করছে।
-অভি প্লিজ শান্ত হও। আগে আমার কথা শুনো।
– টুসি আর বেচে নেই তাই না,,,বলো,,,টুসি আর বেচে,,,অভি কান্না করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পরে।
– অভি টুসি বেচে আছে,,,
চলবে,,,,