আমার নাম লাবণ্য । আমি অনেক বড়ো লোক বাড়ির বউ। আজকে আমার বাসর রাত। আমি বাসর ঘরে বসে আছি । অনেক সময় ধরেই । আমার শ্বশুর মশাই এই শহরের ভিতরে ধনী দের মধ্যে একজন । আর তাদের একমাত্র ছেলে নীল। অনেক আশা নিয়ে আমার শ্বশুর আমাকে এই বাড়ির বউ করেছেন । আমার বাবা তাঁর খুব ছোট বেলার বন্ধু । নীল ছোট বেলা থেকেই অনেক অসভ্য । সে তার জীবনে এমন কোনও কাজ নেই করেনি। শুধু মানুষ খুন করা ছাড়া । এক ভাবে বাবার টাকা উড়িয়েছে আর বন্ধু দের নিয়ে ফুর্তি করেছে । তার গার্লফ্রেন্ড্ বদলানো ছিল খুব সামান্য জিনিস । আমার শ্বশুর খুব বিরক্ত নিজের ছেলের উপরে ।
,,
আপনারা ভাবছেন আমি এতো কিছু জানার পর ও কেন এই বিয়ে তে রাজি হলাম !!!!
,
শুধু আমার শ্বশুর মশাই এর চোখের পানি দেখে । সে আমার কাছে অনেক আকুতি করে অনুরোধ করেছিল । তাঁর বখাটে ছেলে টাকে বিয়ে করতে ।
,,
আমিও আমার নিজের সাথে বাজি ধরেছি ওকে ঠিক পথে আনবো । আর আমার বাবার মতো শ্বশুরের মুখে হাসি ফোটাবো।
আর নীল ও এই বিয়ে তে রাজি হয়েছে শুধু বাবার সম্পত্তির জন্য । না হলে আমার শ্বশুর বলেছিলেন সব কিছু এতিম খানায় দিয়ে দেবেন ।
,,,
নীল এই মাত্র বাসর ঘরে ঢুকলো ,,,
,
ও কাছে আসতেই আমি এগিয়ে গেলাম সালাম করতে । ও বললো ,,,
,
:– আমার এই সব আদিখ্যেতা ভাল লাগে না । সব সময় আমার থেকে দুরে দুরে থাকবেন ।
,
আমি এই সব কথার জন্য আগের থেকে প্রস্তুত ছিলাম । তাই কোনও প্রতিবাদ না করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম । তাই দেখে ও রাগের সাথে বললো ,,,
,
:– আপনি অনেক ভুল করেছেন আমাকে বিয়ে করে। আমি কখনও আপনাকে মেনে নিবো না। শুধু বাবার সম্পত্তির জন্য আপনাকে বিয়ে করেছি। এক বার হাতের মুঠোয় সব পাই তাঁর পর আপনাকে ঘাড় ধরে বের করে দেব।
আর বাবার সামনে আমরা স্বাভাবিক ভাবে চলবো। না হলে আমার সব কিছু হাত ছাড়া হয়ে যাবে ।
,
:– কিন্তু আজকে আমাদের বাসর রাত !!
,
:– বাসর রাত আমি আমার গার্লফ্রেন্ড্ এর সাথে করে এসেছি।
,
আমি অবাক চোখে ওর দিকে তাকালাম । মানুষ কতো রকম হতে পারে । ও আমাকে দেখে বললো ,,,
,
:– সবে তো শুরু । আস্তে আস্তে আরো অনেক কিছু দেখতে পারবা।
,
এই বলে ও বিছানায় শুয়ে পরলো। আর আমাকে বির বির করে বললো ,,,
,
:– তুমি ওই সোফায় ঘুমিয়ে পরো। খবর দার আমার কাছে ঘেঁষবেনা।
,
এই টুকু বলেই ঘুমিয়ে গেল ।
,
আমি নিস্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি। আমি আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম । ওর পায়ের জুতো জোড়া খুলে দিলাম । ওকে ঠিক করে বালিশে শুইয়ে দিলাম । ওর শরীর থেকে মদের গন্ধ বের হচ্ছিল । তার মানে ও মদ খেয়ে এসেছে । এতো সময় মাতাল ছিল । কি অদ্ভুত সব কিছু । কিন্তু আমাকে শক্ত থাকতে হবে । না হলে একটা মানুষের কাছে আমি হেরে যাবো।
,,
,,
আমি এসে বাইরে বারান্দায় দাঁড়ালাম। দুরে ওই আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে । চাঁদের আর আমার সাথে অনেক মিল খুঁজে পেলাম । চাঁদ কোনও বিনিময় ছাড়া সবাই কে আলো দেয়। কখনও কারো কিছু আশা করে না। আজ থেকে আমার ও কোনও বিনিময় ছাড়া এই বাড়িতে থাকতে হবে । চাঁদ একা একা তো ভালই আছে । তবে আমি কেন পারবো না !!!
,,
,,
,,
দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেল । কখন সকাল হয়েছে কিছুই টের পেলাম না। রুমে গিয়ে দেখলাম নীল ছোট বাচ্চা দের মতো ঘুমিয়ে আছে । ওর ঘুমন্ত চেহারা দেখতে অনেক ভাল লাগছিল । আমি জানি না কখনও ওর কাছে আমার মর্যাদা পাব কিনা।
,,
,,
:– সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই বসে আছি । আমার শ্বাশুরি বললেন, ,,
,
– বউ মা !!! নীল অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠে । তুমি আমাদের সাথেই নাস্তা সেরে নেও ।।
,
আমার শ্বশুর বললেন ,,,
,
:– এখন থেকে আমরা সবাই এক সাথে নাস্তা করবো । যাও মা নীল কে ডেকে নিয়ে এসো ।
,,
আমি আস্তে করে রুমে গেলাম । কিন্তু কি বলে ডাকবো কিছু ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ পানির দিকে চোখ গেল । আমি ওর মাথায় পানি ঢেলে দিলাম । ও হুড়মুড় করে লাফ দিয়ে উঠে বসলো । আমাকে বললো ,,,
,
– এটা কি হলো ?
,
:– কি করবো বাবা ডেকেছে নাস্তা করতে । তাই ডাকতে এসেছি। আর আপনাকে তো টাচ করা যাবে না । তাই এই পদ্ধতি বের করলাম ।
,
– আমি কিন্তু এই সব মোটেই পছন্দ করি না। মা আসতে পারতো আমাকে ডাকতে যতোসব ।
,,
এই বলে নীল ওয়াশ রুমে ঢুকলো। আমার অনেক হাসি পাচ্ছিল । আমি মনে মনে বললাম ,, ঘুঘু দেখেছো ফাঁদ দেখোনি । আমি টাইট দেব একদম লাঠির মতো সোজা হয়ে যাবে ।
,,
,,
আমরা সবাই নাস্তা করতে লাগলাম । এমন সময় আমার শ্বশুর নীল কে বললো ,,
,
:– তোদের হানিমুন টা সেরে একবারে আমাদের সব কাজ বুঝে নে। আমি আর কতো সামলাবো । বয়স হয়েছে ।
,
:– বাবা আবার হানিমুন কেন ?
,
:– কি বলিস !!! বিয়ে করেছিস। হানিমুন করবি না।
এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো ,,,
,
:– তুমি কি বলো বউ মা ??
,
— জী বাবা !! আপনি ঠিক বলেছেন ।
,,
এই বলে আমি নীলের দিকে তাকালাম । দেখলাম ও আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে । আমি বললাম ,,
,
— নীলের যদি কোনও সমস্যা থাকে তাহলে থাক।
,
নীল অনেক টা বাধ্য হয়ে বললো ,,,
,
— না না ঠিক আছে আমি যাবো । অবশ্যই যাবো ।
,,
,,
(চলবে )
(বড়োলোকের বখাটে ছেলে) পর্ব এক
#লেখা অধরা জেরিন