বড়োলোকের-বখাটে-ছেলে —-পর্ব দুই

0
4009

বড়োলোকের-বখাটে-ছেলে
—-পর্ব দুই
,

নীল রুমে এসে আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো ,,,
,
– তোমার এতো সাহস হলো কি করে আমার সাথে হানিমুন করার। অনেক শখ তাই না ?
বাবার সামনে ছিল ,না হলে আজকেই তোমাকে এক চড়ে সব দাঁত ফেলা দিতাম ।
,
– আমাকে শুধু শুধু বকছেন কেন ??? আপনি বাবা কে,, না বলতে পারতেন ।
,- চুপ ,,আমার কথার উপরে কথা বলবা না। ভয় তো একটাই সম্পত্তি গুলি । একবার হাতে পেয়ে যাই।
,,
এমন সময় নীলের ফোন বেজে উঠলো । আমার দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে বারান্দায় চলে গেল । হয়তো ওর গার্লফ্রেন্ড্ ফোন করেছে । আমি রুমে বসে আছি । আমার কানে ওদের কথা অল্প অল্প ভেসে আসছিল । আমি ভাল করে বুঝতে পারছিলাম দু জনের কতো টা রোমান্টিক কথা হচ্ছে ।
,,
আমি মনে মনে ঠিক করলাম দাঁড়াও কাটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে । যদিও আমার শ্বশুর আমাকে সব কিছু করার অনুমতি দিয়েছিলেন । শুধু ছেলেকে ঠিক পথে আনার জন্যে । ও রুমে ঢুকতেই আমি ফোন কানের কাছে নিয়ে বললাম ,,,,
,
:– আমি যানি বাবু তুমি আমাকে কতো টা মিস করছো। কোনও চিন্তা করো না । আমি তাড়াতাড়ি তোমার সাথে দেখা করবো । ঠিক আছে । বায়।
,,
আমি আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম নীল হা করে তাকিয়ে আছে । আমি ওর দিকে তাকাতে ও বলে উঠলো ,,,,
,
– বাহ ,,, খুব ভাল । এক জনের স্ত্রী হয়ে এভাবে অন্য লোকের সাথে কথা বলতে লজ্জা লাগে না ।
,
– দেখুন ,, আমি এখনও স্ত্রীর মর্যাদা পাই নি।
আমি এই কথা বলতেই ও হনহন করে চলে গেল । আমি মনে মনে বললাম যাক ঔষধ কাজে লেগেছে ।
,,
ছেলে দের এই একটা ভিষন দোষ। নিজেরা যা ইচ্ছে তাই করে । কিন্তু বউ খুঁজে ফেরেশতার মতো।
,,
,,
এখন অনেক রাত। নীল এখনও বাসায় ফিরে নি। আমি কয়েক বার ফোন করেছি। বিজি পেয়েছি । আমার শ্বশুর শ্বাশুরি অনেক আগেই খেয়ে শুয়ে পড়েছেন । আমি আসার আগে শ্বাশুরি রাত জেগে অপেক্ষা করতেন । আজকে আমি জোর করে পাঠিয়েছি তাকে।আমি এখনও রাতের খাবার খাইনি। নীলের জন্য বসে আছি । এক সাথে খাব বলে । আমি যদিও জানি নীল আমাকে কখনও খেতে বলবে না। বা আমি না খেয়ে থাকলে মুখে খাবার তুলে দিবে না। আমি এই সব ভাবতে ভাবতে নীল এলো । আমি তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলে দিলাম । ও কোনও কথা না বলে রুমে চলে গেল । আমি নীল কে বললাম ,,,
,
– আপনি আসুন । আমি খাবার দিচ্ছি ।
ও বললো ,,,
,
– আমি খেয়ে এসেছি। আমার ক্ষুদা নেই ।
,,
আমি কিছু না বলে খাবার গুলি তুলে রেখে দিব এমন সময় তাকিয়ে দেখলাম আমার শ্বশুর আমার পিছনে দাড়িয়ে । আমি দেখলাম তার চোখে পানি টলমল করছে। আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম ,,,
,
– বাবা !!আপনি এতো রাতে উঠে এলেন কেন ???কিছু লাগবে আপনার ???
আমার শ্বশুর মাথায় হাত দিয়ে বললেন ,,,
,
– মা রে !!! এই বুড়ো ছেলে টার জন্য তুই তোর জীবন টাকে শেষ করে দিলি।
আমি হেসে দিয়ে বললাম ,,,
,
– আমার এই বুড়ো ছেলে টা আমার পাশে থাকলে আমার আর কোনও কিছুর দরকার নেই।
,,
সকাল বেলা ,,,
আমরা সবাই নাস্তা করছি। শুধু সকালেই নীল কে নাস্তার টেবিলে পাওয়া যায় । নীল কে শ্বশুর বললেন ,,,
,
– তোমাদের হানিমুন করার টিকিট কেটেছি কক্সবাজার । খুব সুন্দর জায়গা । তোমার মাকে নিয়ে আমি ও ওই খানে হানিমুন করতে গিয়েছিলাম ।
,,
এই বলে আমার শ্বশুর হাসতে লাগলো । হয় তো অতীতের কিছু মনে পড়ছিল ।
আমি ভাল করে বুঝতে পারছিলাম । আমার শশুড় ইচ্ছে করেই সব কিছু তাড়াহুড়ো করে করছেন ।
নীল বললো ,,,
,
– ঠিক আছে বাবা ।
,,
নীল ঘরে আসতেই আমি বললাম ,,,
,
– আমার কিছু কেনাকাটা করতে হবে ??
,
– সেই টা আমাকে বলে লাভ নেই । মা কে গিয়ে বলো ।
,
– মা বলেছে যেতে পারবে না । আজকে শরীর ঠিক নেই ।
,
– দেখ ,, আমার এই সব একদম পছন্দ না।
,
– ঠিক আছে আমি একাই যাব।
,
– আচ্ছা ঠিক আছে যাও তৈরি হয়ে নাও। কিন্তু একটা শর্ত আছে ?
,
আমি অবাক হয়ে জিগ্যেস করলাম ,,,,
,
– কি শর্ত ?
,
– তুমি আমার দুই হাত দুরে দুরে থাকবা। মনে থাকে যেন ?
,
– ঠিক আছে ।
,,
এই প্রথম আমি আর নীল বাইরে বের হলাম । কি যে ভাল লাগছে । যদি ও নীল আমার থেকে অনেক দুরে। তাতে কি সাথেই তো যাচ্ছি ।

আমি ঘুরে ঘুরে সব কেনাকাটা করছি। আর নীল দুরে দাড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছে । আর ফোনে কথা বলে যাচ্ছে । আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই । একটা মানুষ এতো কথা ফোনে বলে কি করে। ও এমন ভাব করছে আমি যেন ওর অপরিচিত ।
,,
আমি টুকটাক সবার জন্য কেনাকাটা করলাম । অনেক পছন্দ করে নীলের জন্য একটা ঘড়ি কিনলাম । মনে মনে ভাবলাম এই টা নীল কে দিলে অনেক খুশি হবে । আমার কেনাকাটা শেষ হয়েছে বুঝতে পেরে নীল বিল দিয়ে গাড়িতে উঠলো। আমি ওর থেকে কিছু টা দুরত্ব রেখে বসলাম । একটু পর আমি ঘড়ি টাকে বের করে ওর দিকে ধরলাম।
ও জিগ্যেসা দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকালো। আমি বললাম ,,,
,
– আপনার জন্য এইটা কিনলাম অনেক সুন্দর ঘড়ি ।
,
নীল কিছু না বলে চুপ করে রইলো। আমি মনে মনে খুব খুশি ।
গাড়ি আমাদের বাসার সামনে নামতেই ও গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভার চাচা কে বললো ,,,,,
,
-চাচা এই টা আপনার জন্য । এই ঘড়ি আপনার হাতেই ভাল মানাবে ।
এই বলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো ,,,,
,
– এতো সস্তা দামের ঘড়ি এই নীল পড়ে না। আর কখনও আমার জন্য এতো আদিখ্যেতা দেখাতে আসবে না। আমি তোমাকে এই বাড়ির কেউ বলে মনে করি না। আর হ্যা তোমাকে আমি মার্কেটে নিয়ে গেছি বলে ভেব না আমি তোমার প্রেম এ পড়েছি। শুধু বাবা কে খুশি করার জন্য ।

–চলবে
–লেখা অধরা জেরিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here