,বড়োলোকের বখাটে ছেলে
পর্ব চার এবং শেষ
,
মরে যাওয়ার আগে আমার শ্বশুর সমস্ত সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন । সেইটা শুনা মাত্র নীল রেগে আগুন । আমি নীল কে বললাম ,,,
,- তোমাদের সম্পত্তির উপরে আমার কোনও লোভ নেই । তুমি চাইলে আজই সব লিখে নিতে পার।
,,
দেখতে দেখতে কয়েক দিন কেটে গেল । আমি আর নীল ঠিক করলাম আমরা কাল উকিলের কাছে যাব। একবারে সব কিছু নীলের নামে লিখে দেব। আর ডিভোর্স পেপারে সাইন করবো ।
,,
,,
সকাল বেলা ,,,
,
আজকে উকিলের কাছে আমি আর নীল যাচ্ছি । হঠাৎ করে আমি মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম । আমার শ্বাশুরি তাড়াতাড়ি করে ডাক্তার খবর দিলেন । ডাক্তার যা বললো তাঁর জন্য আমি আর নীল মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।
,,
ডাক্তার বললো আমি মা হতে চলেছি। আমি শুনে খুশি হবো না দুঃখ পাব বুঝতে পারছিলাম না। নীল কে দেখলাম দুরে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ওর মুখে খুশি নাকি দুঃখ সেই টা আমি বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু আমার শ্বাশুরি খুব খুশি হয়ে বললেন ,,,
,- কে কোথায় আছিস ??? তাড়াতাড়ি মিষ্টি আন।
শ্বাশুরির কথা শুনে আমরা দুজনেই চুপ করে রইলাম। দু দিন পর
আমি আর নীল উকিল সাহেবের চেম্বার এ বসে আছি । উকিল সাহেব সব শুনে বললেন ,,,
,- দেখুন মি : নীল । আপনার স্ত্রী গর্ভবতী । এভাবে ডিভোর্স হবে না ।
আপনার স্ত্রীর বাচ্চা হবে তারপর । আর আপনার বাবা মারা যাওয়ার আগে সব সম্পত্তি আপনার স্ত্রী কে দিয়ে গেছেন। এখন এই টা আপনার স্ত্রীর । তাকে এই বিষয় নিয়ে জোর জবরদস্তি করা যাবে না । তাহলে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো। যদি আপনার স্ত্রী খুশি মনে কাউকে লিখে দেয় তাইলে সেই টা তার ইচ্ছা ।
,
আমরা বাসায় ফিরে এলাম। নীল আমার সাথে এই নিয়ে আর একটা ও কথা বলেনি। ও মনে মনে কি ফন্দি আটছে বুঝতে পারছি না । আমার শ্বাশুরি আমাকে দেখে জিগ্যেস করলো ,,,,
,- বৌমা !! তোমরা নিশ্চয় ডাক্তার এর কাছে গিয়েছিলে ?? দেখেছো নীল কতো খুশি বাবা হচ্ছে বলে ।
,
আমি কিছু না বলে একটা হাসি দিয়ে চলে গেলাম ।
,,
রাতের বেলা ,,,
,
নীল নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে । কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই ।আমি বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম । আমি কতো রাত পার করেছি এই বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
কতো নির্ঘুম রাত !
কি করবো আমি ?? আমি কি সব কিছু নীলের নামে লিখে দেব। তাহলে তো নীল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে । আমার শ্বশুর তাহলে তো ওকেই সব লিখে দিতে পারতেন । আমাকে অনেক বিশ্বাস করে সব কিছু দিয়ে গেছেন । শুধু তার কষ্টের সম্পত্তি রক্ষা করতে । না না আমি কিছুই ওকে এখন দেব না। আগে ও বদলে ফেলুক নিজেকে তারপর । আমাকে এই নিয়ে কঠিন হতেই হবে । আর ওকে আমি এমন শিক্ষা দেব । ও প্রতিটা মূহুর্ত বুঝতে পারবে কাছের মানুষ কষ্ট দিলে কেমন লাগে । আর আমার শ্বশুরকে দেওয়া কথা রাখতেই হবে । আমি একা হলে কোনও চিন্তা ছিল না । আমার জীবনের সাথে আরেকটা জীবন জড়িয়ে পড়েছে ।
,,
,,
নীল আমাকে দু দিন পর বললো ,,,
,- কাল আমরা আর একটা উকিলের কাছে যাব। তার সাথে সব কথা ফাইনাল । তুমি শুধু সই টা করে দিলেই হবে ।
,
– আমি আর কোনও উকিলের কাছে যেতে পারবো না ।
,
নীল অবাক হয়ে বললো ,,,
,- কেন ??
,- কারণ, আমি কিছুই তোমার নামে লিখে দেব না।
,- কি বললে তুমি । তোমার এতো বড়ো সাহস ।
,
এই বলে আমার দিকে আসতে লাগলো ।
আমি বললাম ,,,
,- আমার গায়ে একবার যদি হাত তুলেছো। আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো। এই টা কক্সবাজার না। যা ইচ্ছে তাই বলবে ।
,- তোর এতো বড়ো সাহস । এখনই এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবি।
,- মি : নীল চৌধুরী ,, ভুলে যাবেন না। এই বাড়ির মালিক এখন আমি । আমি ইচ্ছে করলে আপনাকে বের করে দিতে পারি।
,,
সে দিন নীল আমার কথা শুনে হা হয়ে গেছিলো। তাই তো আর এক মূহুর্ত দেরি না করে বাইরে চলে গিয়েছিল । আমি ও অবাক হয়ে গিয়েছিলাম । আমার এতো সাহস কি করে হয়েছিল । আসলে আমাকে পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল ।
,,
আমার শ্বাশুরি চেচামিচি শুনে আমাকে বললেন কি হয়েছে । আমি তাকে সব কিছু খুলে বললাম । সে অনেক কষ্ট পেলেন । আর বললেন তাকে কেন জানালাম না।
,,
,,
দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটে গেল । নীল এখন বেশি বাইরে থাকে । আমার ওই কথা শুনার পর থেকে । মাঝে মাঝে শ্বাশুরির সাথে দেখা করে চলে যায় । আমার শ্বাশুরি কিছুই বলে না। তিনি ও চান ছেলে টা ঠিক পথে ফিরে আসুক । পৃথিবী কতোটা কঠিন সে বুঝুক।
,,
হঠাৎ একদিন আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়লাম । আমাকে ক্লিনিক এ ভর্তি করলো। আমার সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে হলো । ঠিক যেন ওর বাবার মতো। নীল কে খবর দেওয়া হলো। ও এসেছিল মেয়ে কে দেখতে । মেয়ে কে যখন ওর কোলে দেওয়া হলো তখন আমি ওর চোখে মুখে পিতৃত্বের ছায়া দেখতে পেলাম । ও পরম মমতা নিয়ে মেয়ে কে আদর করেছিল ।
,,
আমি সে দিন ওকে কিছুই বলিনি । কিন্তু ওকে বললো এমন কঠিন কথা যা ও কল্পনা ও করতে পারবে না ।
,,
আমি বাসায় ফিরে এলাম। মেয়ের সুন্দর একটা নাম রাখা হলো। নিধী। নীলের সাথে মিশিয়ে আমার শ্বাশুরি নাম রাখলেন ।
,,
এখন নীল ঘনো ঘনো বাসায় আসতে শুরু করলো। আর আমি মনে মনে এইটাই চাইছিলাম । ওর মায়া হোক মেয়ের জন্য বেশি বেশি । কিন্তু আমার সাথে কথা বলে না। আমি ওর চোখে মুখে অনুশোচনা দেখতে পাই।
,,
একদিন নীল এসেছে বুঝতে পেরে আমি নিধী কে ইচ্ছে করে কাদালাম। আমি চুপচাপ বসে বসে ওর কান্না দেখছি। নীল মেয়ের কান্না শুনে অস্ত্রির হয়ে গেল । আমি আরো ইচ্ছে করে চুপ করে রইলাম । এমন সময় নীল ছুটে এলো । আমাকে বললো ,,,
,- লাবণ্য !! কি হচ্ছে এই টা ? তুমি ওকে ইচ্ছে করে কাঁদিয়ে যাচ্ছো।
,- তাতে আপনার কি মি: নীল চৌধুরী ?
,- আমার কি মানে !! এই টা আমার সন্তান ।
,
আমি জোরে জোরে হেসে দিয়ে বললাম। ,,,,,
,- এই টা আপনার সন্তান ?
ভুলে গেছেন সেই দিনের কথা । যে দিন টা আপনার কাছে একটা ভুল ছিল । এইটা তো আপনার ভুলের ফসল । ভুলের ফসল কে ভুলে গেলেই ভাল হয়।
,- এবার চুপ করো । আমার অনেক শাস্তি হয়েছে । আমি এখন তোমাদের নিয়ে থাকতে চাই।
,- কিন্তু আমি তো চাই না। আপনার সম্পত্তি ফিরিয়ে দিয়ে আমার মেয়ে নিয়ে চলে যাবো। আর যাওয়ার আগে আপনি আপনার ডিভোর্স পেপার পেয়ে যাবেন ।
,,
আমার কথা শুনে নীলের চোখে পানি টলমল করছিল । ও কিছু না বলে চলে গেল ।
,,
কিছু দিন পর, ,,
,
নীল আসতেই আমি একটা পেপার ওর দিকে দিলাম । ও আমাকে বললো ,,,
,- কি এই টা ??
,- ডিভোর্স লেটার সই করে দেন। আমি আপনার জীবন থেকে সরে যাব। আমার মেয়ে কে নিয়ে ।
,
ও শোনা মাত্রই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বললো ,,,
,- লাবণ্য আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না। আমার যথেষ্ট শাস্তি হয়েছে । তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাউ।
আমার ও চোখের পানি তে নীলের জামা ভিজে যাচ্ছে।
তারপর ও আবার বললো ,,
,- এই দেখো তোমার দেওয়া ঘড়ি । আমি অনেক আগেই ড্রাইভার চাচার থেকে নিয়েছি। আমি তোমাদের সবাই কে নিয়ে সুখে থাকতে চাই। বলো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না ?
,
এবার আমি নীল কে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম । এক সময় যখন দু জনে একটু স্বাভাবিক হলাম । তখন নীল কে আমি বললাম ,,,
,- আমি জানতাম তুমি তোমার ভুল বুঝতে পারবে । আমি ও তোমাকে নিজের থেকে ও বেশি ভাল বাসি।
,- তাহলে কেন ডিভোর্স পেপার দিলে ???
,- ওটা একবার খুলে তো দেখবে কি আছে ।
নীল ওটা খুলে অবাক হয়ে বললো,
,– মানে ,, আজকে আমার জন্মদিন । আর তারই শুভেচ্ছা কার্ড ।
,- হুম আমার মিষ্টি বাবুর আববু।
,- আর আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বাবুর আম্মুর আজকে অনেক শাস্তি পেতে হবে ।
,,
এই বলে নীল আমাকে জড়িয়ে ধরতে এলো ,,,
আমি বললাম,
-আমাকে অনেক কাঁদিয়েছো। আগে প্রতিশোধ নেবো তারপর তোমার কথা শুনবো।
,
আমার কথা শুনে নীল চেচিয়ে উঠে বললো,
-লাবন্য ওই যে তেলাপোকা।
আমি চিৎকার দিয়ে নীলের বুকের উপরে পরলাম।
নীল হেসে দিয়ে বললো,
-এভাবে থাকো একটু ও নরবে না
এই বলেই শক্ত করে ধরলো।
আমি এবার ওর চালাকি ধরে ফেললাম।
লজ্জা পেয়ে ওর বুকে ধাড়ুম ধুড়ুম কিল দিতেই ও আরো জোরে হেসে দিল।
আমি নীলের শরীরের উষ্ণতায় ধীরে ধীরে তলিয়ে যেতে লাগলাম।
,,
(সমাপ্ত )
—লেখা অধরা জেরিন