#বড়_ছেলে
#পার্টঃ০৩_ও_শেষ
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
১০.
“বাবার জীবনের কাহিনি গুলো ডায়েরীতে পড়ে ডায়েরিটা বন্ধ করে ফেলে আয়াত। চোখে পা*নি ট*ল*ম-ল করছে তার। বাবা ছোট থেকে এতো ক*ষ্ট করে ফুফু, চাচাদেরকে বড় করেছে আর এরাই এখন বাবাকে দাম অব্দি দেয়না!
কথাগুলো ভেবে বাবার জন্য বড় মায়া হয় তার। তখনি সিরাজ মিয়া ডাকলো,
” আায়াত…বাবা আয়াত..”
বাবার ডাকে তাড়াতাড়ি বাবার সামনে যায় আয়াত। আজ সিরাজ মিয়া দুই ছেলে সন্তানের বাবা। বোনদেরকে বিয়ে দিয়েছে। ভাইরা আজ প্রতিষ্ঠিত আর সে! ভাড়াতে সি এন জি চালায়।
“ডাকছিলেন আব্বা?”
“হ্যাঁ। তোমার দাদুকে ডেকে নিয়ে আসোতো।”
“আচ্ছা আব্বা।”
” বাবার কথায় আয়ান তার দাদি লতিফা বেগমকে ডেকে আনতে যায়। ক্ষনিক বাদে আয়াতের মা আমিনা আর দাদি লতিফা বেগম আসে।
“কি হইছে বাপ?”
” মা এই শাড়িটা তোমার৷ আর আমিনা এইটা তোমার।”
“লতিফা বেগম খুশি হয়ে শাড়িটা নেয়। আমিনা শাড়িটা যেই হাতে নিতে যাবে ঠিক তখনি,
আশা শুশুরবাড়ী থেকে এসে শাড়িটা হাতে নিয়ে নিলো। তারপর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ভাই কেমন আছো?”
“আরে আশা। ভালো আছি বইন। তুই হঠাৎ! ”
“হঠাৎই চলে আসলাম সবাইকে দেখতে। তা এই শাড়িটা কার জন্য এনেছো ভাই?”
“তোর ভাবীর জন্য।
” এই রংটা আমার অনেক ভালো লেগেছে ভাই। শাড়িটা আমি নেয়? ভাবীকে না হয় তুমি পরে একটা কিনে দিও।”
আমিনা হেসে বললো,
“আরে আশা নিয়ে নাও। তোমার ভাই আমাকে আরেকটা কিনে দিবেনি।”
সিরাজ মিয়া ই’ত’স্ত’বোধ করলো। নিজে পছন্দ করে সে আমিনার জন্য শাড়িটা এনেছিলো।
সিরাজ নিজেকে সামলে বললো,
“আম্মা আমি একটা ছোট মুদির দোকান খুলতে চাই।”
“সেতো ভালো কথা। কিন্তু…
” আম্মা মিরাজ আর আশা, আর ছোট বোন যদি কিছু টাকা….”
সিরাজ আর কিছু বলতে পারলোনা। তখনি মিরাজ আর তার বউ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললো,
“এ তুমি কি বলছো ভাই? এই মুহুর্তে এতো টাকা তোমাকে কি করে দিবো? হাত টানা*পো*ড়া*য় আছে এখন। তুমি বরং বোনদের থেকে ধার নিয়ে…”
মিরাজ কথাটা শে*ষ করতে না করতেই আশা বললো,
“এ তুমি কি বললে? মিরাজ। তুমি ভাইয়ের ভাই হয়ে দিচ্ছোনা আর আমরাতো বলে পরের ঘরের। আমরা কোত্থেকে এতো টাকা দিবো?”
সিরাজ অবাক হয়ে দেখছে ভাই বোনদেরকে। চোখ ভিজে উঠছে তার। ছেলে আয়াত অবাক হচ্ছে ফুফু,চাচার ব্যবহার দেখে। যেই ভাই এতো করলো সেই ভাইয়ের পাশে আজ তারা নেই!
লতিফা বেগম ধমকের স্বরে বললেন,
“থাম তোরা। তোদেরতো দেখছি জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। আমি কি ম*রে গেছি? অবশ্য না বেঁ*চে থাকলেই বোধহয় ভালো হতো। বৃদ্ধ বয়সে নিজের বড় ছেলের এই অবস্থা দেখার থেকে। যে ভাই তোদের জন্য এতো করলো আজ সে ভাইকে তোরা দাম অব্দি দিচ্ছিসনা? এতো স্বা*র্থ*প*র তোরা! এতো! তোরা যেহেতু আমার ছেলেকে টাকা পয়সা কিছু দিবিনা, তাহলে আমিই দিবো।”
“মানে? তুমি কি বলতে চাইছো মা?”
“তুইতো অন্যের ঘরের আশা। তোকে কে বলেছে? আমার সংসারের বিষয়ে না*ক গ*লা*তে?”
“মা…
“যতটুকু ভিটে আছে ততটুকু বি*ক্রি করে টাকা দিবো আমি সিরাজকে।”
পাশ থেকে মিরাজ বললো,
“মা তুমি এমনটা করতে পারোনা? এই বাড়ির উপর কিন্তু আমাদেরও হক আছে। আমাদের ছেলে মেয়েরও একটা ভবিষ্যৎ আছে তাইনা?”
“মা আর কথা বাড়িওনা। থাক আমি দোকান দিবোনা৷ যখন টাকা হবে তখন না হয়…এইটা বলেই সিরাজ ঘরে চলে যায়।
১১.
“কিগো? এইভাবে শুয়ে আছো যে? শ*রী*র টরির খা/রা/প লাগছে নাকি?
আমিনার কথায় সিরাজ বিছানা থেকে উঠে বসলো। হোঁট করে আমিনার হাত ধরে কেঁ/দে বললো,
” আমি পারিনি আমিনা..আমি পারিনি ভাই-বোনদের মানুষ করতে। ওদের জন্য সারাটা জীবন ব্যয় করলাম আর আজ! বাবা মা*রা যাওয়ার পর অনেকটা স্বা*র্থপ*র হলে আজ হয়তো তোমাকে আর আমার সন্তানদেরকে একটা সুন্দর জীবন দিতে পারতাম।”
______সমাপ্ত ______