বড়_ছেলে #পার্ট০২

0
701

#বড়_ছেলে
#পার্ট০২
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

৫.

গ্যারেজে গাড়ি ঠিক করতে করতে ঘেমে একাকার সিরাজ। রফিক চাচা এসে বললো,

“কিরে বাবা? বেশি ক’ষ্টের কাজ নাকি?”

“না চাচা। আসলে কখনো এইসব করে অভ্যাস নেইতো তাই প্রথম প্রথম ক’ষ্ট লাগছে। ঠিক হয়ে যাবে।”

৬.

মানুষের মায়া দয়া দুদিন। দুনিয়া যে কতোটা কঠিন সেইটা একমাত্র গরীব ঘরের মানুষগুলোই জানে। সিরাজ হাতে টাকা নিয়ে চালের দোকানে যায়।

“চাচা ৫ কেজি চাল দেনতো।”

“বাজান চাইল দিতাম কেমনে? তোমার বাপের থেকে আমি এহনো ৭ হাজার টেহা পায়।”

“৭ হাজার!”

“হো।”

“চাচা আমি কাজ করে করে সব টাকা পরিশোধ করে দিবো।”

হঠাৎ সিরাজের চোখ যায় দোকানের ভেতরের বাটার মাখানো রুটিগুলোর দিকে। সে এই রুটিটা খেতে ভীষণ পছন্দ করে। তার বাবা কলেজের জন্য টাকা দিলে একসাথেই ৩ টা কিনে সে খেয়ে নিতো।

“চাচা রুটি দেনতো ৪ টা।”

৫.

“কিরে সিরাজ তোরতো আজকাল দেখায় নেই। কলেজও যাসনা। আ’ড্ডা দিতেও আসিসনা কি ব্যাপার?”

“আরে আসিফ! কেমন আছিস?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকাল তোর দেখা পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া কি ব্যাপার সিরাজ?”

“জীবন বড্ড নি’ষ্ঠুর’রে। বাবা নেই, পরিবারের বড় ছেলে বলেতো এখন বাবার দায়িত্ব আমাকেই পালন করতে হবে। চাচারা একদিন দেখবে, দুদিন দেখবে, এরপর! এরপরতো সবাই কেবলমাত্র দয়াই করবে। আমি থাকতে আমার মা,ভাই-বোনকে কিভাবে মানুষের দয়া করে দেওয়া দু মুঠো ভাত খেতে দেয় বল? এখন কি আর আগের মতো চললে হবে? আমার মাথার উপর এখন কতো দায়িত্ব৷”

“পড়াশোনা?”

সিরাজ মিনমিনিয়ে হেসে বললো,

“আমার ভাই-বোনদেরকে মানুষ করাই আমার প্রধান লক্ষ। পরিবারের বড় ছেলেদেরকে শুধু নিজের কথা ভাবলে হয়নারে। ভাবতে হয় সবার কথা। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ভেবে চিনতে নিতে হয়।”

৬.

“রুটি আনছো ভাই?”

শুয়া থেকে লাফিয়ে উঠে সিরাজের কাছে গেলো তিন ভাই-বোন। সিরাজের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে যে যার মতো ভাগ করে খেয়ে নিচ্ছে। অবশেষে একটা রুটি হাতে নিয়ে যেই ছিড়তে যাবে হঠাৎ লতিফা বেগম আসলেন। সিরাজ না খেয়ে সাথে সাথে মাকে রুটি টা এগিয়ে দিয়ে বললো,

“এই নাও মা।”

“আমি খাবোনা বাবা। তুই খা।”

“আমি খেয়ে এসেছি মা।”

লতিফা বেগম নিঃসংকোচে রুটি টা নিয়ে খেতে শুরু করলেন। সিরাজ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে হাত দিয়ে চোখের পা*নি*টুকু মুছে নেয়।

৭.

“মা ভাত দাও।”

সিরাজ কথাটা বলতেই লতিফা বেগম খাবার নিয়ে যায় ছেলের কাছে। সিরাজ তারকারির দিকে তাকিয়ে দেখলো, পাতলা করে ডাউল আর পোয়া মাছ রান্না করেছে তার মা। সিরাজ হেসে বললো,

“ওমা…আমি যে বলেছিলাম পাঙ্গাশ মাছের পেটি টা আমার জন্য রাখতে রাখোনি?”

লতিফা বেগম চুপসে যান। অস্বস্তি ভাবে বললো,

“বাপরে রান্না করছিলাম কিন্তু.. মিরাজ কেঁদে পাঙ্গাশ মাছের পেটি খাওয়ার অনেক বায়না করছিলো তাই…”

সিরাজ আলতো হেসে বললো,

“আরে তাহলেতো হলোই। আসলে আমারও এখন পোয়া মাছ দেখে পাঙ্গাশ মাছের পেটি খেতে মন চাইছেনা।”

৮.

“ভাই স্কুলের বেতন দিবানা?”

আশার কথা শুনে সিরাজের মুখে চি’ন্তা’র ছাঁপ পড়ে যায়। সবকিছু সামলে নিয়ে বললো, “তুই যা আমি টাকা নিয়ে আসছি।”

আশা চলে যেতেই সিরাজ ভাবতে লাগলো,

“বলেতো দিলাম। কিন্তু এখন এ সময় টাকা পাবো কই?”

লতিফা বেগম দরজার আড়াল থেকে এইসব শুনছিলেন৷ চোখ ছলছল করছে তার। ছেলের জীবনটা অভাবের তাড়নায় ন/ষ্ট করে দিলেন তিনি।

৯.

“চাচা দুইদিনের টাকা যদি একসাথে দিয়ে দিতেন ভালো হতো।”

সিরাজ কথাটা বলতেই রফিস মিয়া কপাল কুঁচকে ফেললেন। বিরক্ত চা’পা কন্ঠে পান চি’বুতে চি’বুতে বললেন,

“কথায় আছেনা? বইতে দিলে সাব খাইতে চায়। তোমার এখন ওরকম একটা ভাব আইছে সিরাজ।”

সিরাজ খুব ল*জ্জা পেলো। কিন্তু ল’জ্জা পেলে কি আর এখন চলবে? কথাতো শুনতেই হবে। দুদিন হলোনা কাজে লাগলাম আর এখনি টাকা টাকা করছি। একটুতো বে’হা’য়া হতেই হবে।

“চাচা বোনের বেতন দিতে হবে।”

“আমি টাকা দিতে পারুম না বাজান৷ হাত পুরা খালি।”

সিরাজ রফিক মিয়ার পায়ে ধরে ফেলে। গ্যারেজের সবাই তাকিয়ে মুখ টি’পে হাসছে। সিরাজের খুব ক’ষ্ট হচ্ছে। বু’কটা ফেটে যাচ্ছে তার। এতোদিন বাপের হোটেলে খেয়েছে বলে জীবনের মানেটা বুঝেনি৷ কিন্তু আজ সে হারে হারে টের পাচ্ছে জীবন কতোটা কঠিন।

রফিক মিয়া সিরাজকে উঠিয়ে আমিরকে বললো,

“আমির একে দুদিনের টাকা একসাথে দিয়ে দেতো।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here