ভদ্র_ছেলের_আজব_বউ শেষ_পর্ব

0
3412

ভদ্র_ছেলের_আজব_বউ শেষ_পর্ব
#জান্নাতুল_মাওয়া

.
-জামাই এতো তারাতারি করে কোথায় যাচ্ছিলি?
রেহান আবারো তাকায় ইরার দিকে
– ( সত্যি কি চোখের ভ্রম নাকি সত্যি)
তুমি এখানে কেনো?
– তুই কোথায় চলে যাচ্ছিলি। দাদী বলেছে জামাইকে চোখে চোখে রাখবি। কখন আবার কোন দিক দিয়ে উড়াল দেয় টেরও পাবি না। তাই তো আমি চলে আসলাম। আচ্ছা জামাই তুই পাখির মতো উড়তে পাড়িস।
– চুপ একদম চুপ। এখনি বাড়ি যাও।
-এএএএ আমাকে বকা দেস কেনো?
-একদম চুপ। ন্যাকা কান্না বন্ধ করো।
.
ইরা সাথে সাথে চুপ হয়ে যায়।
রেহান নিজেকে কনট্রোল করে শান্ত স্বরে ইরাকে বলে,,
– দেখো লক্ষিটি আমার কোন ড্রেস তো তোমাদের বাড়িতে নাই তাই যাচ্ছি। আমি আবার আসবো। তুমি বাড়ি চলে যাও।
– না আমি তোর সাথে যাবো।
– আচ্ছা আমি একটু পর আসবো। তুমি এখন চলে যাও।
ইরা মাথা নেড়ে না জবাব দেয়।
– তোমার মা চিন্তা করবে তো।
– আমি বলে আসছি।
রেহান আর কোন উপায় না পেয়ে ড্রাইভ করে বাসায় চলে আসে।
.
-কি রে ভাইয়া তোরা চলে আসলি যে?
.
রেহান কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়।
-ভাবী কিছু কি হইছে?
-জানিস ওই জামাইটা আম্মুর কাছে কিছু না বলে চলে এসেছে।
-কি বলো? কেনো?
-জানি না।
.
বুশরা সবটা বুঝতে পেরে…..
-আচ্ছা তুমি তোমার মাকে ফোনে বলে দাও।
– আমি তো বলে আসছি।
– মন খারাপ হচ্ছে?
– হুমমমম।
– আচ্ছা মন খারাপ করো না আমরা আছি তো। এখন খাবে চল।
বুশরা ইরাকে নিয়ে খেতে চলে যায়।
.
ইরা সারা দিন মন খারাপ করে কাটিয়ে দেয়।
-কতো ইচ্ছে ছিলো ভার্সিটি গিয়ে একটু ঘুরে আসবে। কতো মানুষের সাথে দেখা করা বাকি ছিলো। দেখা করা আর হলো না। ইশ স্যারদের সাথেও তো দেখা করার বাকি ছিলো। ওপপপ। এএএএ এখন আমি কি করবো। জামাই ও জামাই,,,
.
রাতে সবাই খেয়ে শুয়ে পরে। ইরা আর রেহান দুজনে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
রেহানের শরীরের ওপর ভারী অনুভব হওয়ায় ঘুম ভেঙ্গে যায়। ভয় পেয়ে সজোরে দিল এক ধাক্কা। তখনি….
-ও আম্মু গো।
.

রেহান সাথে সাথে ওঠে বসে টেবিল লেম্ফটা জ্বালিয়ে দেয়। সামনে তাকাতেই দেখে ইরা খাটের পাশে মাটিতে কোমর ধরে বসে আছে।
-এই ভাবে বসে আছো কেনো?
-তুই আমাকে ফেলে দিয়েছিস কেনো?
-তুমি আমার শরীরের ওপর ওঠছিলা কেনো? আমি তো ভেবেছিলাম কি জানি? বলো কেনো ওঠছিলা?
-আমি তো তোর এই পাশে শুতে এসেছিলাম।
-কেনো? ওই পাশে কি হয়েছে?
-কি যেন একটা এসে আমরা পায়ে কামর দিয়েছিল তাই তো ভয় পেয়ে আমি।
-তুমি ওই দিক দিয়ে আসতে পারো নাই।
-আমার ভয় লাগছিলো।
-ঠিকাছে ওঠো এখন।
রেহানের হাত ধরে ইরা ওঠে বসে। রেহান লাইট অফ করে ইরাকে টেনে এনে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
.
সকালে ইরা ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেস হয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।
.
একটু পর রেহানের ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম ভাঙ্গতেই ফ্রেস হয়ে ছাদে চলে যায়। সকালের পরিবেশটা উপভোগ করার জন্য।
.
ছাদে অনেকক্ষণ থাকার পর চলে আসতে যাবে তখনি নিচের দিকে নজর চলে যায়।
-এটা ইরা না?
ও মাই গড! এই মেয়ে এইবার আমার মান সম্মান নিয়া টানাটানি শুরু করে দিয়েছে। ওপ এইবার মনে হয় মইরা যাইতে হবে। কিন্তু এত সকাল এত বাচ্চা কোথা থেকে আনলো। না জানি এদের মা বাবা বাচ্চা আনার দায়ে মামলা না দিয়ে বসে। তাহলে আমি শেষ। ও কি এখনো বাচ্চা? বাচ্চাদের সাথে খেলতে যায়। দাড়াও খেলাচ্ছি তোমায়।
.
রেহান ছাদ থেকে নেমে বাইরে চলে যায়। ইরা খেলতে গিয়ে একটু পিছনে আসতে নিলেই কারো সাথে ধাক্কা খায়।
-কে রে?
.
পিছনে ফিরতেই দেখে রেহান দাড়িয়ে আছে।
-জামাই তুইও খেলবি আমাদের সাথে?
-খেলাচ্ছি তোমায় খেলা চল।
– তুই একটু ভালো না।
রেহান আর কিছু না বলে ইরাকে একরকম টেনে বাড়ি নিয়ে যায়।
– এই তুই ওকে ওভাবে টানছিস কেনো।
– দেখোনা একটু ভালো না জামাই।
– হ্যা ভাবি তোমার জামাইটা একদম পঁচা।
– তুই চুপ থাক।
– হা হা হা।
– ইরা মা যাও নাস্তা সেড়ে রেডি হয়ে আসো। আমরা সবাই মিলে মার্কেটে যাবো।
– না আমি যাবো না।
– না মা ও যাওয়ার দরকার নাই।তোমরাই যাও।
ইরা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে যেই বাহিরে যাওয়ার জন্য দৌড় দিবে তখনি রেহান ইরার হাত টেনে ধরে। তারপর ইরাকে রুমে নিয়ে যায়।


রেহানের মা বুশরা আর রেহানের বিয়ের পর যারা বুশরার বিয়ের অপেক্ষায় থেকে গেছে সবাই মিলে মার্কেটে যায়। বিয়ের মার্কেট বলে কথা।
বাড়ি একদম ফাঁকা।
কলিংবেল বাজতেই রেহান খুলতে যায় ।খুলে দেখে তার পুরু ফ্রেন্ডস ক্লাব তার সামনে দাঁড়িয়ে।
– আরে তোরা আয় ভিতরে আয়।
এরপর সবাই মিলে অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়। আড্ডা দেওয়ার এক পর্যায়ে রেহানের এক বন্ধু বলে
– আজ কিন্তু ভাবীর হাতের রান্না মানে লান্সটা এখানেই করব।
বাকি সবাই তার সাথে সমস্বরে তাল মিলায়।
– আমি তো রান্না করতে পারি না কিন্তু বিরিয়ানি রান্না পারি।
– সেটাই করো ভাবি।
ইরা তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘরে যায়। সব কিছু আয়োজন করে চুলোয় রান্না বসায়। ওখানে তো বলে আসলাম এখন কি করে রান্না করি। যা হবার হবে। আচ্ছা মসলা কি কি দিবো। ইরা সব গুলো মসলা সামনে নিয়ে বসে আছে।
জামাইকে গিয়ে জিঙ্গেস করে আসি বিরিয়ানিতে কি কি মসলা দেয়। না না যাবোনা। আমি কি পারি না নাকি। এরপর ইরা গরম মসলা আদা রসুন বিরিয়ানির মসলা সব একসাথে ঢেলে দেয়। রান্না শেষে সবাইকে ডেকে এনে খেতে দেয়।
– আহা কি সুঘ্রান। তাড়াতাড়ি দাও।
বিরিয়ানির মসলা দেওয়াতে ঘ্রানটায় জ্বিবে জল চলে আসলেও খেতে গিয়ে কেউ আর তা মুখে থেকে পেটে চালান করতে পারছে না।
এতখন সবাই আগ্রহ নিয়ে খেতে বসলেও এখন আবার সবাই কাজের আগ্রহ নিয়ে উঠে চলে যায়।
এরপর সবাই রেহানের রুমে চলে যায়। ইরা রেহানের রুমে যেতে চাইলে তাকে ঢুকতে দেয় না। ইরা কাঁদতে অন্য রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

ইরার যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন দেখে চারপাশে অনেক রঙের লাইটিং করা। ভালোভাবে ওঠে বসে দেখে লাইটিং এর সাথে বেলুন আর তার সব পছন্দের সব ফুল দিয়ে রুমটা সাজানো। ইরা মুহূর্তে ওঠে খুশিতে লাফাতে থাকে।
– হ্যাপি বার্থডে ইরাবতী।
ইরা পিছনে তাকিয়ে রেহানকে জড়িয়ে ধরে বলে thanks.
– তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই তার আগে কেকটা কাটো আসো।
রেহান আর ইরা কেক কাটে।
– রেহান ইরার সামনে হাঁটু ঘেড়ে বসে পকেট থেকে একটা বক্স বের করে ইরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে এটা তোমার জন্য আমরা দেওয়া জন্মদিনের উপহার ।
ইরা গিপ্ট বক্স হাতে নিয়ে জবাব দেয় থ্যাক্স।
রেহান দাঁড়িয়ে ইরাকে বুকে টেনে নেয়। তারপর মনে মনে ভাবতে থাকতে,,,
– তোমাকে ঠিক এইভাবে আমার বুকে সারাজনম আগলে রাখবো। কিচ্ছুটি হতে দিবো না। শুধু তোমার একটুখানি ভালোবাসা পেলেই চলবে। তাড়াহুড়ো প্রয়োজন নেই আস্তে ধিরে বাসলেই চলবে। ইরা।
– হুমমম।
– ভালোবাসো?
– বলবো না!
– বলো না!
– না বাসি না তো।
– আমি জানি বাসো, বলো না গো।
– হুম অনেক ভালোবাসি।
রেহান ইরাকে বুক থেকে সড়িয়ে,,,
– এইভাবে না।
– জামাই আমি তোকে না এত্তগুলা ভালোবাসি। বাচ্চামি ভাবটা আইছে না শরীরে এইবার।
– জ্বী ম্যাম আইছে।
– তুই আমাকে ভালোবাসিস না। এএএএএ,,,
– আরে আরে বাসি তো। অনেক ভালোবাসি আমার লক্ষি বউটাকে।
– আচ্ছা ইরা একটা কথা বলি।
– হুমম ।
– এখন তো তুমি আট দশটা মেয়ের মতোই স্বাভাবিক। তাহলে এরকম পাগলামি করো কেনো।
– আমার ভালো লাগে। জানো মাঝে মাঝে শৈশবটা হারিয়ে নিজেকে নিজেকে খুব একা মনে হতো। তাই চেয়েছিলাম বড় হয়েও শৈশবটাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে। কিন্তু ভাবিনি আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। এখন আর ওসব সমাজ মেনে নিবে না। ওসব এখন সবার কাছে পাগলামি ছাড়া কিছু মনে হবে না
– আচ্ছা নিজেকে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক করে নাও। তবে পুরুপুরি না কিন্তু।
– হুম।
– রাগ করছ।
– ওহো।
– ভালোবাসিতো। রেহান আরো জোরে জড়িয়ে ধরে ইরাকে। যেনো মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই কোথাও চলে যাবে ইরা।

(সমাপ্ত)

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য। এইটা আমার লেখা প্রথম গল্প ছিলো। তাই ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। চেষ্টা করেছি শেষ অব্দি ভালোভাবে লেখার জন্য। হয় তো পারি নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here