#ভাইরাল,পর্ব-১
#এস_এ_তানিশা_রহমান
তিশা আত্মহত্যা করেছে! সকাল ১০ টা বাজেও যখন তিশা নাস্তার টেবিলে আসলোনা, তখন তাঁর মা রেজিয়া বেগম তাকে ডাকতে গেলো। কেননা তাঁরা ঠিক ৮-৯ টার ভেতরে নাস্তা সেরে ফেলে প্রতিদিন। তিশা ক্ষুধা একদম সহ্য করতে পারে না তাই সবার আগে ওই টেবিলে এসে বসে থাকে। কিন্তু আজকে এখনো আসলো না নাস্তা করতে। রেজিয়া বেগম রুমের সামনে গিয়ে অনেক্ক্ষণ ধরে ডাকলেন তিশাকে, কিন্তু তিশার কোনো সাড়াশব্দ পেলো না। রেজিয়া বেগমের এত জোরে ডাকাডাকি দেখে নাস্তার টেবিল থেকে তিশার বাবা এবং ছোট বোন নীলিমা দৌড়ে আসলো। নীলিমা ও রহমান সাহেব ও তিশাকে ডাকতে লাগলেন। এতজনের ডাকাডাকি তেও যখন কোনো সাড়া মিললো না তখন তাদের ভয় হতে শুরু করলো।
নীলিমাকে রহমান সাহেব বললো যা তো জলদি গিয়ে তোর ভাইয়া কে ডেকে আন। নীলিমা রাফি কে ডাকতে চলে গেলো, রাফি ঘুমাচ্ছিলো এখনো এই বাসায় এই একজন আছে বেলা বারোটায় উঠে নাস্তা করে। নীলিমার ডাক শুনে উঠে বসে রাফি, জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে কেনো ডাকছে এভাবে। নীলিমার কথা শুনে রাফি তাড়াহুড়ো করে তিশার রুমের সামনে এসে বাবাকে বললো বাবা তোমরা পেছনে সরে আসো। দরজা ভেঙ্গে ভেতরে গিয়ে দেখলো তিশার লাশ, সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে তিশা! রাফি আর নীলিমা দুজনে ধরাধরি করে তিশাকে নামালো নিচে। তিশার মা রেজিয়া বেগম মেয়ের লাশ ঝুলতে দেখে ফ্লোরে বসে স্তব্ধ হয়ে গেছে। রহমান সাহেব কেঁদে কেঁদে বলছে কি এমন সমস্যা ছিলো যে এভাবে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলি।
রাফি বললো বাবা এখন এসব কথা বলো না তিশা মরতে পারে না, তোমরা বসো আমি ডাক্তারকে খবর দিচ্ছি। নীলিমা তুই মা’কে দেখ মায়ের খেয়াল রাখ। রাফি ডক্টর তানভী কে নিয়ে আসলো সাথে করে, ডক্টর চেক করে আশাহত করে বললেন She is no more তিশা আর বেঁচে নেই। রাফি তুমি তিশার কাছে থাকো আমি পুলিশকে খবর দিচ্ছি এটা পুলিশ কেইস। নীলিমা বোনের লাশ জড়িয়ে কান্না করে বলতেছে আপু তুই আমার ভরসা ছিলি, আমার এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা একমাত্র তুই ই ছিলি। আমি কোনো কাজ পারবোনা বললে তুই ইন্সপিরেশন করতি সবসময়। সে তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেলি, আপু রে এখন কে আমাকে আগলে রাখবে তোর মতোন করে। কে আমাকে ইন্সপাইর করবে এগিয়ে যেতে। আপুরে তুই ফিরে আয় কেনো এমন করলি তুই আপু। আপু তুই আমাকে রেখে মরতে পারিস না।
নীলিমা আর তিশা দুই বোন একে অপরের বিপদের সঙ্গী ছিলো, নীলিমার কোনো কষ্ট হতে দিতো না তিশা। মায়ের মতো আগলে রাখতো সবসময়। নীলিমা এবার ক্লাস টেন-এ পড়ে, আর তিশা ইন্টারমেডিয়েট পাশ করে কেবল একটি জব করতো। তিশার পরিবার বেশ স্বচ্ছল পরিবার। রহমান সাহেব চাকরির পরিসমাপ্তি করে এখন বাসায় থাকেন। বড়সড় এমাউন্ট পেয়েছেন রিটায়ার করার সময়, তিনি সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তিশার ভাই রাফি আগে জব অফিসে করলেও এখন সে বাসায় বসে কম্পিউটার এর মাধ্যমে কাজ করে ইনকাম করে ও একজন ফ্রিল্যান্সার।
কেউই বুঝতে পারছে না কি কারণে তিশা এমন করলো, এত হাসি খুশি থাকা মেয়েটা হঠাৎ কেনো এই পথ বেছে নিবে। পরিবারও বেশ ভালো কোনোরকম মানসিক সমস্যা ছিলো না, তাহলে কেনো এমন করলো এটা ভেবে সবাই অবাকের চরম পর্যায়ে। রাফি আর নীলিমা একে অপরকে জিজ্ঞেস করছে কেউ কিছু জানে কিনা। রাফি নীলিমাকে জিজ্ঞেস করলো তিশার কোনো বয়ফ্রেন্ড ছিলো কি-না, বয়ফ্রেন্ডের সাথে কোনো সমস্যা ছিলো কি-না ইত্যাদি। নীলিমা বললো না ভাইয়া আমি তো এই ব্যাপারে কিচ্ছু জানি না। আপু তো কখনো আমাকে কিচ্ছু বলেনি তাঁর বয়ফ্রেন্ড আছে কি নেই সেই বিষয়ে। রাফি বললো আচ্ছা তুই একটু ওর বান্ধবী লিজাকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর, আর তিশার ব্যাপারে ওকে জানা।
এতক্ষণে পুলিশ এসে হাজির পুলিশের এস আই জিসান রহমান সাহেবকে প্রশ্ন করছেন কি হয়েছিলো, কেনো আপনার মেয়ে আত্মহত্যা করলো। আপনার মেয়ের কি কোনো রিলেশন ছিলো, মানে কোনো প্রেমিক ছিলো। স্যার আপনি এসব কি বলছেন আমার মেয়ের এমন কোনো সম্পর্ক ছিলোনা। যদি কিছু থাকতো তাহলে আমাদের পরিবার কেউ না কেউ জানতো। আমরা না জানলেও অন্তত আমার ছোট মেয়ে নীলিমা জানতো। কারণ ওরা দু’বোন একে অপরের সঙ্গী ছিলো।
নীলিমা লিজাকে ফোন দিয়ে জানতে চাইলো তিশার কোন সম্পর্ক ছিলো কি-না, লিজা অপ্রস্তুত হয়ে ইতস্ততভাবে বললো কেনো কি হয়েছে হঠাৎ এটা জিজ্ঞেস করছে কেনো নীলিমা। নীলিমা জানালো তিশা আর নেই সে সুইসাইড করেছে। লিজা কথাটা শুনে কেঁপে উঠলো, হাত থেকে মোবাইল টা পড়ে গেলো, এদিক থেকে নীলিমা ডাকছে লিজাকে শব্দ না পেয়ে। লিজা নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বললো হ্যাঁ নীলিমা বলো শুনছি। তারপর নীলিমা আবারও জানতে চাইলো- তখন লিজা বললো হ্যাঁ ওর সঙ্গে ওর অফিস কলিগ আদনানের রিলেশন ছিলো। বাকিটা আমি আমি এসে বলছি তুমি থাকো আমি এক্ষুনি আসতেছি।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ পর্যায়ে রাফি আর রহমান সাহেব পুলিশকে যা জানে সেসব তথ্য দিলো। রেজিয়া বেগম এদিকে মেয়ের শোকে কাতর হয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে। তিশা জবের পাশাপাশি মায়ের ঔষধ খাওয়া ঠিকমতো খাবারদাবার খাচ্ছে কি-না এসব দিকে বেশ কড়া নজর রাখতো। মায়ের প্রতি তিশার এই ভালোবাসা তিশার মা’কে ডুকরে কাঁদাচ্ছে। তিশার মা মেনে নিতে পারছে না তিশা আর নেই তাদের মাঝে। তিশার মায়ের শ্বাসকষ্ট রয়েছে তিনি তিশার এই নির্মম চলে যাওয়া সহ্য করতে পারছে না। এসব ভাবতে ভাবতে তিশার মায়ের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়েছে। নীলিমা দেখতে পেয়ে জলদি শ্বাসকষ্টের ঔষধ নিয়ে এসে মা’কে দিলো।
পুলিশ তিশার লাশ নিয়ে চলে গেছে পোস্টমর্টেম করতে। তিশার ফ্রেন্ড লিজা আসলো লিজা দেখলো পুলিশ গাড়ির সামনে এম্বুলেন্স যাচ্ছে। লিজা গাড়ি থামানোর চেষ্টা করলেও তাঁরা থামেনি। লিজা দৌড়ে গিয়ে রেজিয়া বেগমের কাছে যায়, নীলিমাকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে লিজা। রাফি তড়িঘড়ি করে লিজার সামনে আসলো, এসে জিজ্ঞেস করলো তিশার বিষয়ে যা জানো আমাকে সবটা খুলে বলো। নীলিমা বললো তিশার কারো সাথে রিলেশন ছিলো তুমি জানিয়েছো বাকিটা এসে বলবে। দেরি না করে আমাকে বিস্তারিত বলো। লিজা বললো ভাইয়া আমি বেশিকিছু জানি না শুধু জানি তাঁর অফিস কলিগ আদনানের সাথে ও একটা প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ফেলেছিলো।
দুজনের মাঝে ভালো বোঝাপড়া ছিলো, তিশা তো যে কাউকে বিশ্বাস করতোনা। আদনান কে ওর ভীষণ ভালো লেগেছিলো, ছেলেটা তিশার জন্য সব করতে পারতো। তিশার মন পাওয়ার জন্য সে অনেককিছু করেছিলো। তিশা আর আদনান দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসতো। ব্যস এতটুকু এর বেশি আমি কিচ্ছু জানি না। রাফি বললো যদি দুজন দুজনকে এত ভালোবাসতো তাহলে আমার বোনটা এভাবে চলে গেলো কেনো। কি কষ্ট বুকে বয়ে চলেছিলো আমার কলিজাটা।
নীলিমা হঠাৎ করে রাফি আর লিজাকে ডাক দিলো, নীলিমার ডাক শুনে সবাই তিশার ঘরে গেলো। যেয়ে দেখলো নীলিমার হাতে একটা ডায়েরি, এটা তিশার জীবনের একটা অংশ। তিশার অভ্যাস ছিলো ডায়েরি লেখা, রোজ কি করতো কি হতো সব সে ডায়েরিতে লিখে রাখতো আগামী দিনের স্মৃতি হিসাবে। নীলিমা বললো ভাইয়া দেখ আপুর ডায়েরি তে কি লেখা। রাফি জানতোনা তিশা ডায়েরি লিখে আর প্রতিদিনের ঘটনা এখানে লিখে। নীলিমা-ই জানালো তিশা ডায়েরি লিখতো প্রতিদিন।
রাফি ডায়েরি হাতে নিলো এবং পড়তে শুরু করলো।
চলবে