ভালবাসার_এপিঠ_ওপিঠ পর্বঃ ০২| রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প

0
6707

ভালবাসার_এপিঠ_ওপিঠ পর্বঃ ০২
লেখকঃ আবির খান

5
নিহান এখন হাসানের সাথে গাড়িতে করে ওর নতুন ঠিকানায় যাচ্ছে৷ একটা নতুন জীবন শুরু হবে আজ থেকে ওর৷ ওর নিজের মাকে হারানোর পর দীর্ঘ ছয়টি বছর ও নির্যাতিত হয়েছে। এতদিন মুখ বুঝে সব কষ্ট সহ্য করেছে। কিন্তু আজ থেকে সেসব কষ্টের সমাপ্তি হবে৷ নিহান ওর নতুন জীবনের সাথে একজন বাবা খুঁজে পেয়েছে। ও হাসানের দিকে তাকায়। হাসানও গাড়ি চালাতে চালাতে নিহানের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়৷ নিহানও হেসে দেয়। ও সামনে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে, জীবন কতটা অদ্ভুত! আসল বাবা ওকে ঠায় দেয় নি, দেয় নি একমুঠ ভালবাসা। কিন্তু মায়ের দোয়া আর ভালবাসায় হয়তো এই নতুন বাবাকে ও খুঁজে পেয়েছে। নিহান মনে মনে ঠিক করে, ওর এই বাবা ওকে যা বলবে, যা শিখাবে সব ও মানবে৷ নিজের জীবন দিয়ে হলেও ও তা মানবে৷ নিহান সামনে তাকিয়েই আস্তে করে বলে,

– বাবা তুমি আমাকে জীবনের যে লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছো আমি সেই লক্ষ্যে সবসময় অনড় থাকবো।

হাসান খুব খুশী হয়। তার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

– সাব্বাশ বাবা৷ আমি এটাই শুনতে চেয়েছিলাম। আমি তোকে এমন ভাবে বড়ো করবো যাতে তোকে কখনো কেউ হারাতে না পারে। তুই হবি আমাদের সবচেয়ে বড়ো শক্তি।

হাসানের সাথে কথা বলতে বলতে নিহান ওর নতুন ঠিকানা মানে রায়হান সাহেবের বাসায় চলে আসে। বিশাল বড়ো রাজকীয় গেইটের সামনে ওরা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। দুজন লোক এসে হাসানের আইডি চেক করে তারপর ওদের ভিতরে ঢুকতে দেয়। হাসান গাড়ি নিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকছে। নিহান গাড়ির জানালা দিয়ে দেখছে। বিশাল বড়ো জায়গা জুড়ে বাড়িটা। আশেপাশে বডিগার্ডে ভরা। সবাই ব্ল্যাক স্যুট পরা আর সবার হাতেই বিদেশি অস্ত্র। নিহান কিছুটা ভয় পায়। হাসান পাশ থেকে বলে উঠে,

– এগুলো তোমার আমার আর স্যারের সুরক্ষার জন্যই। ভয় নেই বাবা৷

এরপর হাসান গাড়ি থামায়৷ নিহান আর হাসান একসাথে গাড়ি থেকে নামে৷ নিহান গাড়ি থেকে নেমে দেখে, বিশাল বড়ো একটা বাড়ি। একদম আধুনিক ডিজাইনের বাড়ি। নিহানের অবাক হয়ে বাড়িটা দেখছে। ডুপ্লেক্স বাড়ি এটা৷ কিন্তু অনেক বড়ো। বাড়িটার মোট তিনটা অংশ রয়েছে। পুরো এড়িয়া জুড়ে হাই সিকিউরিটি সিস্টেম। হাসান সাহেব বলে উঠেন,

– নিহান আজ থেকে এটা তোমার নতুন বাসা। তুমি আজ থেকে এখানেই থাকবে এবং এখানেই বড়ো হবে৷
– সত্যি? (অবাক হয়ে)
– হ্যাঁ বাবা। একদম সত্যি। আসো ভিতরে যাবে।

নিহান হাসানের সাথে ভিতরে যায়৷ বাসার ভিতরে ঢুকে ও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। এ যেন রাজপ্রাসাদ। হাসান বলে,

– যা যা দেখছো সব বাইরের দেশ থেকে আনানো। আমাদের স্যার তার মেয়েদের জন্য এই রাজপ্রাসাদ বানিয়েছেন। যাতে তাদের কোন কষ্ট না হয়। এই পুরো এড়িয়াটার মূল্য ৫০০ কোটি টাকা।
– আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবি নি এরকম একটা জীবন আমি পাবো৷
– বাবা একটা কথা মনে রাখবে, জীবন মানেই দমকা হাওয়া। সে হাওয়ায় কখন কি পরিবর্তন আনে তা কেই জানে না।
– আমার জীবনের দমকা হাওয়া আপনি। আমার নতুন বাবা৷

হাসান নিহানের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে আর বলে,

– এই সবকিছু তোমাকে দেখে রাখতে হবে৷ তাই নিজেকে সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে৷ দুর্বল সৈনিক হলে কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি জীবন হারাবে৷ এটা আরামে জীবন হলেও এখানে প্রতিমুহূর্তে জীবন নিয়ে লড়াই করতে হয়৷ কারণ আমাদের শত্রু অনেক। তাই নিজেকে শক্ত করো, নিজের আবেগ যেন কখনো নিজেকে দুর্বল না করে সেভাবে নিজেকে বড়ো করো। আজ থেকে এটাই তোমার কাজ৷ তোমাকে একজন সফল সৈনিক হতে হবে৷ নিহান দ্যা ওয়ান ম্যান আর্মি।
– ইনশাআল্লাহ বাবা৷ আমি পারবো।

হাসান নিহানকে ছেড়ে ওর দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

– তাহলে তুমি তোমার রুমে যাও। আমার একটু কাজ আছে।
– আচ্ছা।
– স্যার আমার সাথে আসুন৷

একজন সার্ভেন্ট এসে নিহানকে নিয়ে যায় ওর রুমে। নিহান চলে গেলে হাসান কাকে যেন কল দেয়। আর বলে,

– নিহান বাসায় চলে এসেছে। আমাদেরকে আর কেউ থামাতে পারবে না৷ এবার ওর ধ্বংস নিশ্চিত। আমার নিহান ওকে ধ্বংস করবে৷ তুমি কালই চলে এসো। ওর ট্রেনিং কাল থেকেই শুরু হবে৷ সাথে পড়াশোনাও।
– ওকে স্যার।

হাসান ফোন রেখে মনে মনে বলে,

– শুধু আর কয়েকটা বছর। আমার নিহান বড়ো হলে ওর ধ্বংস নিশ্চিত।

৬.
সেদিনের পর থেকে নিহানকে ওয়ান ম্যান আর্মি বানাতে লেগে পড়ে হাসান৷ ওকে দেশের সবচেয়ে বড়ো স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ও পড়াশোনা শুরু করে। পাশাপাশি ওকে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং করানো হয় ওয়ান ম্যান আর্মি বানানোর জন্য। আর ওর পার্সোনাল ট্রেনার হলো, মি. রবার্ট। যিনি একসময় আমেরিকার এফবিআইতে ছিলেন। তার অধীনে ছিলো অনেক আর্মি। সে অবসরপ্রাপ্ত হওয়ায় তাকে স্পেশাল ভাবে নিহানের জন্য গোপন ভাবে দেশে আনা হয়েছে। তার দেওয়া স্পেশাল ট্রেনিং রপ্ত করছে নিহান৷ এভাবে আস্তে আস্তে সময় যেতে থাকে। দীর্ঘ দশ বছর চলে গিয়েছে। নিহান এখন অনেক বড়ো হয়েছে। ওর স্কুল এবং কলেজ, ভার্সিটি সব শেষ হয়েছে৷ অনেক ম্যাচিউর হয়ে গিয়েছে এখন ও। অনেকটা গম্ভীর ভাব ওর চোখেমুখে। মি. রবার্টের দেওয়া ট্রেনিং করে করে ও এখন ওয়ান ম্যান আর্মিতে রূপান্তর হয়েছে। জিম আর হার্ড ট্রেনিং করে ওর পুরো শরীর লোহার মতো হয়ে গিয়েছে সাথে মনটাও। এমন কোন বিদেশি অস্ত্র নেই যা ও চালাতে পারে না৷ নিহান এখন রায়হান সাহেবের ব্যবসাও সামলাচ্ছে। বলতে গেলে রায়হান সাহেবের এখন সবচেয়ে বড়ো ভরসা নিহান। রায়হান সাহেব আর হাসান মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে নিহানকে ট্রেনিং করতে দেখে। তারা দুজনই খুব খুশী। আজ সকালে রায়হান সাহেব হাসানকে বলেন,

– হাসান তুমি দেখিয়ে দিয়েছো। তুমি যা চেয়েছিলে তোমার ছেলে তাই হয়েছে। সবাই ওর প্রশংসা করে।
– স্যার ও হলো আমার সবচেয়ে বড়ো অস্ত্র। আমাদের সবার ঢাল।
– হাসান তাহলে কি আমার মেয়েদের এবার আসার সময় হয়েছে?
– জি স্যার হয়েছে।
– হাসান এই দিনটার অপেক্ষায়ই আমি ছিলাম। আমার আদরের মেয়ে দুটো আমার চোখের সামনে থাকবে৷ আর আমার কোন ভয় থাকবে না৷
– স্যার নিহান থাকতে প্রিন্সেসদের কিচ্ছু হবে না।
– জানি আমি। তুমি আমার মেয়েদের আসার ব্যবস্থা করো হাসান।
– ওকে স্যার।

রায়হান সাহেবের সাথে কথা হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তার দুই মেয়েকে দেশে আনার ব্যবস্থা করে ফেলে হাসান। কাল সকাল ৮ টায় ওদের ফ্লাইট ল্যান্ড করবে৷ হাসান রাতে নিহানের কাছে গিয়ে বলে,

– নিহান ঘুমিয়েছিস?
– না বাবা বলো।
– কালকে কারা আসছে জানিসই তো। তুই কি যেতে পারবি তাদের আনতে?
– অবশ্যই বাবা৷
– শোন বাবা, আমি এতদিন আমাদের প্রিন্সেসদের সম্পর্কে কিছু বলি নি। তবে এখন যেহেতু তারা আসছে, তোকে সবটা বলা যায়। স্যারের বড়ো মেয়ের নাম হলো, তাসনিন খান আর ছোট মেয়ের নাম হলো, সামিরা খান।তাসনিন আর সামিরার বয়সের গ্যাপ মাত্র এক বছর। ওরা দুজনই আঠারোতে পারা দিয়েছে। সামিরা কখনো ওর মাকে দেখেনি। আমার স্ত্রী মানে তোর মা’ই ওদের বড়ো করেছে। আর একটা কথা আছে ওদের নিয়ে, তবে সেটা এখন বলবো না সময় হলেই বলবো। তাই তোর দায়িত্ব এখন শুধু একটাই, ওদেরকে সেইফ রাখা। সেটা যেভাবে হোক।
– বাবা মা আসবে না?
– নারে৷ তাকে ওখানেই থাকতে হবে৷ কারণ ওখানের কারবার তোর মা দেখছে৷ সে আসলে সমস্যা হবে৷
– ওহ। আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না বাবা৷ আমি আমার জীবনের লক্ষ্য ভুলি নি৷ তোমাদের প্রিন্সেসরা সবসময় সেইফ থাকবে।
– গুড বয়। তাহলে কাল সকাল চলে যাস এয়ারপোর্টে।
– ওকে বাবা৷

চলবে..?

সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।

আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া হবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here