ভালবাসার_এপিঠ_ওপিঠ পর্বঃ ০৩
লেখকঃ আবির খান
৭.
সকাল ৭ টা বাজে। নিহান সাওয়ার নিয়ে রেডি হচ্ছে এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য। তাসনিন এবং সামিরা ওদের পার্সোনাল এয়ারক্রাফটে বাংলাদেশে আসছে। নিহান একটা নরমাল টি-শার্ট এর উপর ডেনিম জ্যাকেট আর ডার্ক কালারের ক্ল্যাসিক প্যান্ট পরেছে। সবসময়ের মতো অনেক বেশী হ্যান্ডসাম লাগছে ওকে৷ ও রেডি হয়ে ওর ফোনটা হাতে নিয়ে একটা কল দেয়।
– হ্যালো স্যার..
– এয়ারপোর্টের কোন জায়গা যেন বাদ না যায়। আর স্নাইপারদের বলেছে তো তাদের নির্দিষ্ট পজিশনে থাকতে?
– জি স্যার অল ওকে। আপনি আসতে পারেন।
– ওকে।
নিহান ফোনটা পকেটে রেখে রোলেক্সের ঘড়িটা হাতে নিয়ে রুম ত্যাগ করে। নিচে আসতেই রায়হান সাহেব আর হাসানের সাথে দেখা হয়। নিহান দাঁড়াতেই রায়হান সাহেব ওর কাছে এসে ওকে বলে,
– এরকম হ্যান্ডসাম ছেলে আমি খুব কম দেখেছি হাসান। তোমার ছেলেটা কোটিতে একটা।
– জি স্যার। (হাসি দিয়ে)
– আঙ্কেল লজ্জা দিবেন না।
– হাহা। আচ্ছা আচ্ছা। তাহলে যাও বাবা৷ সাবধানে ওদের নিয়ে এসো।
– ওকে।
– বাবা সাবধানে যাস।
– আচ্ছা।
নিহান ঘড়িটা হাতে পরে বাসার বাইরে চলে আসে৷ এরপর ওর নিজের বিএমডব্লিউ এস ক্লাস বুলেট প্রুফ গাড়িতে উঠে পড়ে। তারপর রওনা হয় এয়ারপোর্টের দিকে। ওর সামনে দুইটা আর পিছনে একটা গাড়ি আছে৷ এগুলো ওর প্রোটেকশনের জন্য। আধা ঘণ্টার মধ্যে ওরা এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায়৷ এয়ারপোর্টে ঢুকতেই নিহান খবর পায় যে তাসনিন আর সামিরার এয়ারক্রাফট ল্যান্ড করেছে। ওরা চারটা গাড়ি নিয়ে সোজা এয়ারক্রাফটের কাছে চলে যায়। গাড়িগুলো থামতেই বাকি তিনটা গাড়ি থেকে বডিগার্ড বের হয়ে বন্দুক হাতে নিহানের গাড়ির আশেপাশে দাঁড়িয়ে আছে। আর নিহান ওর গাড়ির ভিতর বসে আছে। নিহান সংকেত দিতেই তাসনিন আর সামিরা এয়ারক্রাফট থেকে বেড়িয়ে আসে। নিহানের বডিগার্ড নিহানের জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয়। ও পুরো হিরোদের মতো করে গাড়ি থেকে বের হয়। তাসনিন আর সামিরা হা করে তাকিয়ে আছে নিহানকে দেখে। আবার সাথে এতগুলো বডিগার্ড। সামিরা বলেই ফেলে তাসনিনকে,
~ আপু ভি আই পি কি আমরা নাকি উনি? ঠিক বুঝতে পারছি না৷
~ আমিও। (রাগী ভাব নিয়ে)
দুই বোনই নিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে থাকা সানগ্লাসটা নামিয়ে বুকে ঝুলিয়ে তাসনিন আর সামিরার কাছে আসে নিহান৷ এসে বলে,
– ওয়েলকাম টু বাংলাদেশ। রায়হান আঙ্কেল আপনাদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আসুন।
~ হুম। (তাসনিন)
নিহানের বডিগার্ড তাসনিন আর সামিরার জন্য নিহানের গাড়ির দরজা খুলে দেয়। তাসনিন পিছনে বসলেও সামিরা সামনে বসে পড়ে। নিহানের বডিগার্ড বলে উঠে,
– ম্যাম প্লিজ পিছনে বসুন। সামনে বসাটা আপনার জন্য সেইফ হবে না।
~ না আমার সামনে বসতে ভালো লাগে। আর ভয় কিসের আপনাদের এই খারুজ বস আছে না।
~ সামিরা পিছনে এসে বস। ওনার সাথে বসার কোন প্রয়োজন নেই। (তাসনিন)
~ না আমি এখানেই বসবো।
বডিগার্ড অসহায় ভাবে নিহানের দিকে তাকায়৷ নিহান ইশারায় থাক বলে। এরপর ও গাড়িতে উঠে পড়ে। সাথে ওর বডিগার্ডরাও। এবার সবার লাস্টের গাড়িটা ওদের। বাকি তিনটা গাড়ি ওদের সামনে যাচ্ছে। নিহান গাড়ি চালাচ্ছে। সামিরা আড় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ আর তাসনিন পিছনে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎই নিহান বলে উঠে,
– জি বাবা আমরা মাঝ পথে। আর ২০ মিনিট লাগবে৷
নিহান ওর বাবা মানে হাসানের সাথে এয়ারপডে কথা বলছিল। সামিরা একটু চমকে গিয়েছিল। ও নিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ তা মি.খারুজ আপনার নাম কি?
– নিহান আহমেদ।
~ ওওও…তাহলে আপনি সেই নিহান। হাসান আঙ্কেলের ছেলে?
– হুম।
~ ভালো।
তাসনিন পিছনে বসে সামিরা আর নিহানের কথা শুনছে। ওর খুব রাগ হচ্ছে সামিরার উপর। মেয়েটা বেশি কথা বলে। এটা ভাবতে না ভাবতেই সামিরা আবার বলে উঠে,
~ সাফিয়া আন্টি আপনাকে অনেক মিস করে। আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছে আমাদের।
– ওহ!
আবার নিরবতা। নিহান বাড়তি কোন কথা বলছে না দেখে সামিরার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। ও মনে মনে বলছে,
~ কেমন লোক উনি! আমার মতো সুন্দরী প্রিন্সেসের দিকে একবারও তাকাচ্ছে না কথা বলছে না। আর আমেরিকার ছেলেরা আমার জন্য পাগল। আর এই খারুজটা পাত্তাই দিচ্ছে না৷ দাঁড়াও তোমার খবর আছে। মিস সামিরাকে পাত্তা না দেওয়া তাই না। জাস্ট ওয়েট।
সামিরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎই বলে উঠে,
~ আচ্ছা মি. খারুজ আপনার কয়টা জিএফ আছে?
সামিরার আচমকা এই প্রশ্নে নিহান হার্ড ব্রেক কসে৷ তাসনিনসহ সামিরা ভয় পেয়ে যায়। তাসনিন পিছন থেকে সামিরাকে ঝাড়ি দিয়ে বলে,
~ সামিরা এসব কি! তুই কে আর সে কে ভুলে গিয়েছিস? এধরণের অবান্তর প্রশ্ন কেন করছিস?
~ আরে নরমাল একটা প্রশ্ন করেছি। এত রিয়েক্ট এর কি আছে৷
~ চুপ করে বসে থাক। ওনাকে ঠিক মতো গাড়ি চালাতে দে। নাহলে…
~ ওকেএএএ।
সামিরা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। নিহান আবার গাড়ি চালাতে শুরু করে। এদিকে সামিরা ঝাড়ি খেয়ে রাগী ভাবে নিহানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ফলে নিহানের খুব অস্বস্তি লাগছে। ও আড় চোখে একবার সামিরার দিকে তাকায়। দেখে রাগী ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে। নিহান সামনে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে আস্তে করে বলে,
– আমার কোন জিএফ নেই। এগুলোর সময় আমার নেই।
সামিরা মিটমিট করে হাসে। আর তাসনিন নিহানের কথা শুনে মুখ ভেংচি কেটে বসে থাকে। দুইবোনের কারবার দেখে নিহান মনে মনে বলে,
– সামনে যে কি আছে কে জানে৷
এদিকে তাসনিন পিছনে বসে মনে মনে বলে,
~ এহ! কি ভাব! মনে হয় কোন রাজার ছেলে। ফালতু একটা লোক। আমাদেরটা খেয়ে পরে আবার আমাদেরই ভাব দেখায়৷ উফফ! ডিজগাস্টিং।
দেখতে দেখতে ওরা বাসায় চলে আসে। নিহান গাড়ি থামাতেই বডিগার্ডরা এসে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। তাসনিন আর সামিরা নেমে পড়ে৷ রায়হান সাহেব মেয়েদের কাছে গিয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে। কিছুটা ইমোশনাল হয়ে পড়েন তিনি। সাথে মেয়েরাও। হাসান বলে উঠে,
– আমাদের সবার প্রিয় প্রিন্সেসদের স্বাগত জানাচ্ছি।
~ থ্যাঙ্কিউ আঙ্কেল। (দুইজনই বলল হাসি দিয়ে)
– মা আসতে কোন সমস্যা হয় নি তো?
~ না বাবা কোন সমস্যা হয়নি। ওই যে খারুজ উনি আর ওনার সাঙ্গপাঙ্গ ছিল না কোন সমস্যা হয় নি। (সামিরা)
সামিরার কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। রায়হান সাহেব হাসতে হাসতে বলে,
– নিহান ওর নাম। তোমাদের হাসান আঙ্কেলের ছেলে। আমার সব কাজ এখন ওই সামলায়। আর এখন থেকে তোমাদের দেখে রাখার সব দায়িত্ব ওর।
~ বাবা আমরা বড়ো হয়েছি। ওনাকে দেখতে হবে না আমাদের। আমরা আমাদের খেয়াল রাখতে পারি। (তাসনিন)
– শুরু হইছে.. (রায়হান সাহেব)
– আচ্ছা আচ্ছা প্রিন্সেস যা বলবে তাই হবে। (হাসান)
– আঙ্কেল ভিতরে যাওয়া উচিৎ আমাদের। বাইরে বেশী থাকাটা ভালো হবে না৷
– হ্যাঁ হ্যাঁ। মামনীরা ভিতরে চলো।
৮.
রায়হান সাহেবের সাথে তাসনিন আর সামিরা ভিতরে যায়৷ হাসান নিহানের কাছে এসে বলল,
– কেমন লাগলো আমাদের প্রিন্সেসদের?
– পুরোই ঝাল মরিচ বাবা। এদের সামলাতে কষ্ট হবে।
– হাহা। ওরা এমনই কিন্তু ওদের মনটা অনেক ভালো আমাদের স্যারের মতো। আচ্ছা কেউ কি ধরা পড়েছে?
– হুম৷ দুইজন। বাট ক্লিয়ার।
– যাক। কাদের লোক ছিল কিছু জানিস?
– জানোই তো কার।
– বাবা সাবধানে। স্যারের জান কিন্তু এই দুইজনের মধ্যে।এদের কিছু হলে স্যার শেষ।
– চিন্তা করো না৷ সব ঠিক থাকবে।
– আচ্ছা। চল ভিতরে যাই।
– হুম৷
নিহান ভিতরে আসলে তাসনিন আর সামিরার সাথে চোখাচোখি হয়৷ নিহান বলে উঠে,
– আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।
বলেই ও উপরে ওর রুমে চলে যায়। তাসনিন ভ্রুকুচকে তাকিয়ে থাকে। আর সামিরা মিটমিট করে হাসতে থাকে। নিহান ওর রুমে এসে জামা কাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়৷ আধা ঘণ্টা পর সাওয়ার শেষ করে যেই ওয়াশরুম থেকে বের হয়, ওমনি ও দেখে সামিরা ওর রুমে বসে আছে। নিহানে পরনে শুধু একটা প্যান্ট আর হাতে তোয়ালে। যেটা দিয়ে ও মাথা মুছছে। এদিকে নিহানকে খালি গায়ে দেখে সামিরা হা করে তাকিয়ে আছে৷ নিহান কি করবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎই…
চলবে..?
সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।
আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া হবে৷