ভালবাসার_স্পর্শ পর্বঃ ০৪

0
711

#ভালবাসার_স্পর্শ
পর্বঃ ০৪
লেখকঃ আবির খান

মায়া হঠাৎই কান্না করতে করতে বলে,
~ আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না।

আমি এই কথা শুনে ঠাস করে সোফার উপর বসে পড়ি। হায়! হায়! এই পাগলি মেয়ে বলল কি! আবার কোন বিপদে পড়লাম! আমি কোন রকম নিজেকে সামলে মায়াকে জিজ্ঞেস করলাম,

– মানে! কি বলছেন? কেন যাবেন না আপনি? কি হয়েছে?

মায়া কান্না করতে করতে বলে,

~ আমি এখন বাসায় গেলে আমার বাবা আমাকে মেরে ফেলবে। আর সত্যি বলতে আমি ওকে খুঁজে বের করতে চাই। ওকে জিজ্ঞেস করবো ও কেন এমন করলো আমার সাথে। আপনি প্লিজ আমাকে আর ক’টা দিন থাকতে দিন। প্লিজ….

মায়া হাত জোর করে বলল। আমি ওকে জোর দিয়ে বললাম,

– দেখুন মায়া আমি এটা করতে পারবো না। আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। একটা মেয়ের সাথে এভাবে একটা ছেলে থাকতে পারে না। আর আমার মাও আসবে এক মাস পর। সো কোন ভাবেই সম্ভব না। আপনি তারচেয়ে খুলনা চলে যান। আপনি যাকে ভালবাসতেন সে কখনোই আপনার ছিল না। সো তাকে খুঁজার কোন মানেই হয় না। যে একবার চলে যায় সে আর কখনোই ফিরে আসে না। আপনি রেডি হন আমি আপনাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে আসি।

মায়া উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

~ ঠিক আছে, পাঠিয়ে দিন আমাকে। কিন্তু আমি মাঝ পথে ট্রেন থেকে লাফিয়ে জীবন দিয়ে দিব। কারণ এখন বাসায় গেলে আমাকে এমনিও মরতে হবে। তারচেয়ে নিজেই মরে যাব। চলুন…

আমি স্তব্ধ হয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছি। সে কি বলল এটা! জীবন দিয়ে দিবে! জীবন কি এতই সস্তা নাকি? আমি মায়ার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বললাম,

– ঠিক আছে ঠিক আছে, আপনি শান্ত হন। কোথাও যেতে হবে না আপনাকে। আমার পোড়া কপাল। নিজের কপালে যাকে কুড়াল মারা বলে। এখন তো আর কিছুই করতে পারবো না। আপনি যা বলবেন তাই হবে। তাও নিজের কোন ক্ষতি করবেন না প্লিজ।

মায়া মুহূর্তেই খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায়। সে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,

~ সত্যিই বলছেন তো? আমাকে আবার পাঠাতে চাইবেন না তো?

আমি রাগান্বিত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে না বললাম। সে খুব খুশি হলো। চোখ মুখ মুছে সোফায় বসে বলল,

~ আপনার বাসাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আর আপনাকেও হিহি। আপনি খুব ভালো মানুষ। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

আমিও সোফায় হেরে যাওয়া সৈনিকের মতো বসে পড়ি আর মায়ার আনন্দমাখা মুখখানা দেখতে থাকি। হায়রে মেয়ে মানুষ, তারা চাইলে কিনা পারে। কিভাবে আমাকে জিম্মি করে ফেললো মুহূর্তেই। আমি তার ব্যাগটা পাশে রেখে জিজ্ঞেস করলাম,

– কতদিন এখানে থাকতে চান আপনি? আমার মা এসব জানতে পারলে আমাকে মেরে ফেলবে। যদি নাও মারে সে আর কোন দিন আমার সাথে কথা বলবে না। এই দুনিয়াতে আমার মা ছাড়া আমার আপন আর কেউ নেই। সো বলেন কবে যাবেন আপনি?

~ আপনার মা আসার আগেই চলে যাবো আমি। ভয় নেই। শুধু ক’টা দিন একটু থাকতে দিন প্লিজ। এখন বাসায় গেলে আমার খুব ক্ষতি হবে৷

খেয়াল করলাম মায়া কথাগুলো বলার সময় খুব ভীতু আর চিন্তিত হয়ে বলছিল। বুঝলাম এখন গেলে তার সত্যিই সমস্যা হবে। আমি পুরো ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি সকাল সকাল এত কাহানী দেখে। সোফায় গা’টা এলিয়ে দিয়ে ফেড আপের মতো বসে রইলাম। মায়া আমাকে দেখে আস্তে করে অসহায় কণ্ঠে বলছে,

~ প্লিজ আপনি আমার উপর রাগ করে থাকবেন না৷ আপনার দুনিয়ায় তো আপনার আপন মা আছে। যে আপনাকে অনেক ভালবাসে। আমার দুনিয়ায় আমার আপন কেউ নেই। কেউ না৷ তাই আপনার এখানে একটু আশ্রয় নিতে চাই। তারপর সত্যিই বলছি আমি চলে যাবো। প্রমিজ৷

আমি মায়ার বাচ্চামো কথা শুনে মুচকি হাসলাম। মায়া বোধহয় তা দেখেছে। ও আবার বলে,

~ আপনার বোধহয় ক্ষুধা লেগেছে অনেক। আমি নাস্তা বেরে দিচ্ছি। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।

আমি বুঝলাম ক্ষুধা আমার না এই মহিষীনিরই লেগেছে। আমি আবার মুচকি হেসে নিজের রুমে গেলাম৷ মাকে একটা ফোন দিতে হবে৷ নাহলে সে চিন্তা করবে। আমি ফোন নিয়ে সোজা বারান্দায় গিয়ে মাকে কল দিলাম। কিছুক্ষণ রিং হতেই মা ফোন ধরলো আর বলল,

~ কিরে আবির আজ তুই এত সকালে ঘুম থেকে উঠলি? কোন সমস্যা হয়েছে বাবা?

এইরে! আসলেই তো, আমি তো কখনো এত সকালে শুক্রবার ঘুম থেকে উঠি না। এখন মাকে কি বলবো! মাকে আমি কখনোই মিথ্যা বলতে পারি না। তাই বললাম,

– না না মা কোন সমস্যা হয়নি। ভোরের কড়া আলোতে আজ ঘুমটা তাড়াতাড়ি ভেঙে গিয়েছে। তাই ভাবলাম উঠেই পড়ি। আমার কথা রাখো, তুমি কেমন আছো সেটা বলো?
~ আমি আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। তোর কণ্ঠটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে বাবা। কিছু হয়েছে?
– না না মা। ওই সকাল সকাল উঠেছি তো তাই। তুমি চিন্তা কইরো না। তুমি আরাম করে বেড়িয়ে আসো। আমি তো সারাদিন বাইরে থাকি। তুমি একা একা বসে থাকো সারাদিন। এখন ওখানে সবার সাথে আছো আনন্দ করো। আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।
~ তুই একটা বিয়ে করলে আমার আর এত দূর আসতে হতো না। আমি বউমাকে নিয়েই ভালো থাকতাম।
– এই যে শুরু হইছে। বিয়া সাদি আমার ভালো লাগে না। আর করলেও আরও পড়ে। মেয়ে মানুষরা অনেক জ্বালায় মা। (মায়ার কথা ভেবে বললাম)

মা রসিকতা করে বলল,

~ কি! আমি তোকে জ্বালাই? ঠিক আছে যা আমি আর বাসায় আসবোই না।
– আরে না না, তোমাকে বলিনি। তুমি তো মা। তোমার মতো ভালো মা আর কেউ হয় না।
~ হইছে মাকে আর পাম দিস না। ঠিক মতো থাকিস। রান্না বান্না নিজে না করে পারলে বাইরে থেকে এনে খেয়ে নিস।
– ঠিক আছে মা আর শোনো…

আমি যেই মাকে বাকি কথাটুকু বলতে যাবো ওমনি মায়া আমাকে ডাকতে ডাকতে বারান্দায় আসে৷

~ আবির মশাই এইযে আবির মশাই কই আপনি…

আমি তো পুরো নাই। জানের পানি একদম শুকিয়ে গিয়েছে। চোখ দুইটা বড়ো বড়ো করে মায়ার দিকে তাকিয়ে ওকে এক টান মেরে কাছে এনে ওর মুখ চেপে ধরি হাত দিয়ে। ও দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আমি দ্রুত মাকে বলি,

– হ্যালো হ্যালো মা.. আমার কথা কি শুনা যায়?
~ হ্যাঁ শুনতাছি তো। তোর ওখানে মেয়ালি কণ্ঠ শুনলাম মনে হয়।
– হ্যালো…হ্যালো….মা তোমার কথা আসছে না। আমি পরে কল করি?
~ ঠিক আছে। সাবধানে থাকিস।
– আচ্ছা।

বলেই দ্রুত কল কাটলাম। আজ জীবনে প্রথম মায়ের সাথে মিথ্যা বললাম। মেজাজ পুরো খারাপ হয়ে গিয়েছে আমার। মায়ার মুখ চেপে ধরেই ওকে রাগী ভাবে বলি,

– আপনি এটা কি করছেন? মা শুনে ফেলছে আপনার কণ্ঠ। এখন যদি সে সন্দেহ করে? তাহলে আমার কি হবে? এভাবে কেউ ডাকে কাউকে? হ্যাহ!

মায়া আর আমার মাঝে মাত্র কয়েক ইঞ্চির দূরত্ব। আমি রাগের জন্য খেয়াল করিনি ও আর আমি কতটা কাছে। আমার শক্ত হাত দিয়ে আমি ওর মুখটা চেপে আছি। মায়া অবাক হয়ে ওর অসম্ভব সুন্দর নয়নজোড়া দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখের পাপড়িগুলো বেশ বড়ো বড়ো। যার জন্য চোখগুলো আরও বেশি সুন্দর লাগছিল। আর ওর চোখজোড়া তো একদম মুক্তার মতো। ঝলমল করে৷ আমি রাগি ভাবে তাকালেও খুব একটা সময় লাগেনি ওর রূপে হারিয়ে যেতে। মায়ার কাছ থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছিল। এমন মিষ্টি ঘ্রাণ দুনিয়ার সবচেয়ে দামী পারফিউম থেকেও পাওয়া যাবে না। আমার রাগ নিমিষেই নাই হয়ে যায়। আমি ওর চোখের দিকে আর সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমাদের মাঝে সময়টা যেন থমকে গিয়েছে। আমার জীবনে মায়াই প্রথম মেয়ে যার এতটা কাছে আমি এসেছি। আমার অতীতে যে ছিল তাকে কোন দিন আমি স্পর্শও করিনি। কিন্তু আজ প্রথমবার এই স্নিগ্ধ সকালে আমি কোন মেয়েকে স্পর্শ করেছি। তাও তার এতটা কাছে এসে। আমার হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছিল। মায়ারও বোধহয় একই অবস্থা। খেয়াল করলাম ওর পুরো মায়াবী মুখখানায় গোলাপি আভা ধারণ করেছে। যার মানে হলো ও অনেক লজ্জা পাচ্ছে। আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি। আমার যে মায়াকে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ তা আপাতত মাথায় আসছেই না। ওর নরম মিষ্টি ঠোঁটজোড়া আমার হাতের পিছনে লুকিয়ে ছিল। আমি বেশ অনুভব করছিলাম তার স্পর্শকাতর উষ্ণতা। আস্তে আস্তে যেন আমি মায়ার মাঝে ডুবে যাচ্ছিলাম। হঠাৎই মায়া ওর চোখটা অন্যদিকে সরিয়ে ফেলে। আর সাথে সাথেই আমার ঘোর কেটে যায়। আমি ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলি। মায়া লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। আমি ওকে আস্তে করে বলি,

– সরি। এবং প্লিজ আর কখনো আমাকে এভাবে ডাকবেন না যদি আমি কলে থাকি। নাহলে সমস্যায় পড়তে হবে আমাকে।

মায়া মাথা নাড়িয়ে ইশারায় আচ্ছা বলল। আমি খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম। তাই দ্রুত ওকে ছেড়ে নাস্তা খেতে আসলাম। ওকেও আসতে বললাম। ও বলল একটু পর আসবে। আমি ডাইনিং রুমে চুপচাপ বসে আছি। একটু আগে কি হলো তা ভাবছি। এমন অনুভূতি কিংবা অনুভব আমার আগে কখনো হয়নি। বুকটা এখনো ধুকপুক ধুকপুক করছে। মায়াকে এতটা কাছ থেকে দেখে আমি কেমন জানি হয়ে গিয়েছি। কিছুক্ষণ পর সে আসে। এসে দেখে আমি তার জন্য বসে আছি। মায়া আস্তে করে বলে,

~ আপনি এখনো খাওয়া শুরু করেন নি!
– মেহমানকে রেখে একা খাওয়া যায় বলেন? আপনিও বসুন, একসাথে খেয়েনি।
~ ঠিক আছে।

আমি আর মায়া শেষমেশ খেতে বসলাম। খেতে খেতে ভাবছি, মায়াকে নিয়ে একসাথে কিভাবে এতটা দিন থাকবো। আজ প্রথম দিনেই এই অবস্থা। নাহ! আমাকে ঠিক থাকতে হবে। আমি যতটা সম্ভব ওর থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করবো। ও ওর মতো কিছুদিন থাকুক। তারপর তো চলেই যাবে৷ কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না একটা মেয়ে কিভাবে এত মিষ্টি হয়। আমার মতো মানুষকে সে তার চোখ দিয়েই কাবু করে ফেলল। মেয়ে মানুষ বড়োই আজব সৃষ্টি। তাদের গায়ে পুরুষের মতো শক্তি না থাকলেও, তাদের চেয়ে দশগুণ শক্তিশালী পুরুষকে তারা নিমিষেই বস করে ফেলতে পারে৷ হাহা। আমি এসব ভাবতে ভাবতে মুচকি হাসছিলাম। হাসতে হাসতে মায়া কিভাবে খাচ্ছে তা দেখার জন্য যেই চোখ তুলে তাকাই, ওমনি আমাদের চোখাচোখি হয়। মানে মায়া এতক্ষণ আমাকেই দেখছিল। মায়া লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে। আমি অবাক হই। এই মেয়েটা আসলেই অনেক দুষ্ট।

এরপর আমাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আমি নাস্তার প্লেট গোছাতে নিলে মায়া আমাকে বাঁধা দিয়ে বলে,

~ আপনার বাসায় ফ্রীতে কোন কাজ কর্ম না করে আমি থাকবো না। আমাকে কিছু করতে দিন। আমি রান্না বাদে বাসার বাকি সব কাজ পারি। রান্না যে একে বারেই পারিনা তা না৷ শুধু মশলাগুলো আন্দাজ করে দিতে পারিনা।
– আরে সমস্যা নেই। আপনি মেহমান, আপনাকে কাজ করতে হবে না। আপনি বরং আরাম করুন।
~ একদম না, আমি যতটুকু পারি করবো। দিন আমাকে।

বলেই আমাকে সরিয়ে দিয়ে সে সব গোছাতে শুরু করলো। আমি হল রুমে গিয়ে সোফাতে বসে সব দেখছি যে সে কিভাবে কি করছে। দেখলাম ডাইনিং টেবিলটা সুন্দর করে গুছিয়ে কিচেনে গিয়ে নাস্তার প্লেট বাটিগুলো সুন্দর করে ধুয়ে ফেললো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। সে সত্যিই আমাকে দেখিয়ে দিল। মায়া ঠিক আমার মায়ের মতো করে কাজ করে। মা যেভাবে কাজ করে সেও সেইম সেভাবে কাজ করে। তাই আমি আরও বেশি অবাক হলাম। সে কাজ শেষ করে এসে বলে ঝাড়ুটা কোথায়? আমি আবার অবাক হয়ে বললাম,

– ঝাড়ু! আপনি ঝাড়ু দিয়ে কি করবেন?
~ আপনাকে পিটাবো। বলেন কোথায়?
– কিইইই! আমি আবার কি করলাম?
~ আরে ঘর ঝাড়ু দিব।
– আরে না না লাগবে না। আমি পরে দিব নি। আপনি অনেক কিছু করেছেন। এবার গিয়ে রেস্ট নিন।

মায়া আমার দিকে ভ্রকুচকে রাগী ভাবে তাকিয়ে আছে৷ আমি ভয়ে হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলাম। সে ঝাড়ু নিয়ে আমাকে আরও একবার অবাক করে দিয়ে পুরো বাসা সুন্দর করে গুছিয়ে ঝাড়ু দিয়ে ফেলল। তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে আমার সামনে বসলো। আমি তাকে টিভির রিমোটটা হাতে দিয়ে বললাম,

– আপনি এবার টিভি দেখতে দেখতে রেস্ট নিন। আমি আর একটু ঘুমাই গিয়ে।
~ ঠিক আছে।

মায়ার হাতে রিমোট দিয়ে আমি আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। আজ আর দরজা লাগালাম না। কারণ মায়ার উপর এখন অনেকটা বিশ্বাস হচ্ছে। যদি এখনো সে কিছু করে, তাহলে সেটা আমার একান্তই কপালে লিখা ছিল। বেডে শুয়ে মনে মনে ভাবছি,

– আজকের সকালের মুহূর্তটা সত্যিই স্মরণীয় থাকবে। কিন্তু মায়া কি মনে মনে আমাকে খারাপ ভাবছে নাতো? কারণ শত হলেও তার মনে অন্য আরেকজন আছে। আমি এখনো বুঝিনা কিভাবে একটা ছেলে মায়ার মতো মেয়েকে ধোকা দিতে পারে! তার মতো সাংসারিক মেয়ে পাওয়া বিরল ব্যাপার এই যুগে৷ কিন্তু মেয়েটা রান্না পারে না কেন? তার মা ওকে শিখায় নি? পরে জিজ্ঞেস করতে হবে সবকিছু। এখন ঘুমাই।

মায়ার কথা ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুম ভাঙে জুম্মার আজান শুনে। দ্রুত উঠে পড়ি। কারণ নামাজে যেতে হবে। উঠে হাই দিতে দিতে বাইরে এসে দেখি মায়া টিভি ছেড়ে সোফাতেই খুব নিষ্পাপ ভাবে আরামে ঘুমাচ্ছে। আমি মুচকি হাসি দিয়ে টিভিটা অফ করে দিয়ে আমার রুম থেকে একটা কাঁথা এনে তার উপর দিয়ে দিলাম। সে ঘুমের মাঝেই সেটা জড়িয়ে ধরে আরও আরাম করে ঘুমাচ্ছে। আমার কেন জানি মায়ার ঘুমন্ত মুখখানা দেখতে বেশ ভালোই লাগে। অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়। কিছুক্ষণ তাকে মন ভরে দেখে মুচকি হেসে সাওয়ার নিতে চলে যাই। তারপর বের হয়ে নামাজের জন্য রেডি হয়ে বাইরে এসে দেখি সে এখনো ঘুমাচ্ছে। বোধহয় সারারাত ঘুমায় নি। তাই এখন এত কাজ করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে। আমি তাকে কোন ডিস্টার্ব না করে আস্তে করে মেইন গেইট বাইরে থেকে লক করে দিয়ে নামাজে চলে যাই। নামাজ শেষ করে অনেক বড়ো একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে মায়ার জন্য ভালো ভালো অনেক খাবার কিনেনি। তারপর সবকিছু নিয়ে বাসার দিকে আসি। দারোয়ান চাচা আমাকে দেখে বলেন,

– কি চাচা এত খাবার আনলেন যে আজ?
– চাচা আম্মা বাসায় নাইতো তাই ভাবলাম, একা একা একটু পার্টি করি।

দারোয়ান চাচা হাসতে হাসতে বললেন,

– হাহা। ঠিক আছে ঠিক আছে যান।

আমিও তার সাথে মজা করে খাবার নিয়ে লিফট দিয়ে সোজা বাসায় চলে আসি। দরজা খুলতেই দেখি মায়া সোফাতে নেই। এদিক ওদিক তাকিয়েও কোথাও পেলাম না। বুঝলাম সে আবার বারান্দায় গিয়েছে। আমি খাবার গুলো রেখে আমার রুমে গিয়ে বারান্দায় উঁকি মারতেই পুরো থ। আমি দেখি মায়া তার….

চলবে..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here