ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি,অন্তিম পর্ব
তাসনিম_জাহান_রিয়া
আরনিয়া আর দৌড়াতে পারছে না তার পেটে তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে। আরনিয়া পিছনে তাকিয়ে দেখে ছেলে দুটো তার কাছেই চলে এসেছে। আরনিয়া পিছনের বিপদকে খেয়াল করতে গিয়ে সামনের বিপদই খেয়াল করেনি। একটা গাড়ি এসে আরনিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় রাস্তার পাশে। আরনিয়ার মাথা গিয়ে পড়ে পাথরের ওপর।
বর্তমানে
স্পর্শকের বুকে মাথা রেখে ফুফিয়ে কাঁদছে আরনিয়া।
স্পর্শক আমাদের সন্তান।
একটু পরেই দেখতে পাবে।
তার মানে আমাদের সন্তান বেঁচে আছে।
হুম।
কিন্তু ঐ দিন আমরা কী করে বেঁচে গেলাম?
তোমার তো মনে আছে তুমি এক্সিডেন্ট করেছিলে।
হুম।
ঐ দিন আমার মিটিংটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় এবং আমাদের ডিলটা ফাইনাল হয়ে যায়। আমি তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার জন্য বের হই। বাসার কাছাকাছি আসতেই মনে পড়ে তুমি বলেছিলে তেঁতুলের আচার নিয়ে যেতে। তাই আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে দোকান থেকে আচার কিনি। আচার কিনা শেষে যখন গাড়িতে উঠতে যাব তখনি দেখি একটু দূরে অনেকগুলো একসাথে মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কৌতূহল বশত একটু এগিয়ে যায়। তখন একজনের কাছ থেকে জানতে পারি একটা মেয়ে এক্সিডেন্ট করছে। এক্সিডেন্ট কেইস বলে কেউ সাহায্য করেছে না। মেয়েটা নাকি সন্তান সম্ভবা। হুট করেই তোমার কথাটা আমার মাথায় আসে আজ যদি এই মেয়েটার জায়গায় তুমি থাকতে। এটা ভাবতেই আমার ভিতরে মুচর দিয়ে ওঠে। আমি দ্রুত এগিয়ে যায় মেয়েটাকে সাহায্য করার জন্য। মেয়েটাকে দেখে আমার পৃথিবী থমকে যায়। কারণ মেয়েটি তুমি ছিলে। আমি তোমাকে কোলে নিয়ে দৌড়ে গাড়িতে নিয়ে আসে। আমি দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে আর তোমাকে ডাকতে থাকি। কিন্তু তুমি কোনো রেসপন্স করো নি। হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পর পরই তোমাকে অপারেশন থ্রিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। ডক্টর বলেছিলো তোমার কন্ডিশন সিরিয়াস। আমি অনেক ভেঙে পড়ি কিন্তু আমাকে শান্তনা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না আমার পাশে। তিন ঘন্টা পর একটা নার্স তোয়ালে মোড়ানো একটা পিচ্চি বাবুকে আমার কোলে তুলে দেয়। নার্স আমাকে কংগ্রেস জানিয়ে বলে আমার ছেলে হয়েছে। বাবুকে কোলে নিয়ে আমার ভীষণ ভয় করছিলো যদি হাত থেকে পড়ে যায়। আল্লাহর অসীম রহমতে ঐ দিন তোমরা দুজনেই সুস্থ হয়ে গেছিলে। ডক্টর বলেছিলে তিন চার ঘন্টার মাঝে তোমার ঙ্গান ফিরে আসবে। আমার মাথায় হঠাৎ করেই একটা প্রশ্ন উদয় হই। তুমি রাস্তায় একা কী করছিলে? আর তুমি এক্সিডেন্টই বা কীভাবে করলে? আমি বাসায় ফোন দেই। কিন্তু কেউ ফোন ধরে না। আমি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যায়। বাসার সামনে কোনো গার্ড না দেখে আমার মনে ভয়ে জেগে ওঠে। আমি দ্রুত বাসার ভিতরে প্রবেশ করি কিন্তু কাউকে দেখতে পাই না। ড্রয়িংরুম জুড়ে শুধু রক্ত আর রক্ত। রক্ত দেখে আমার ভিতর মোচর দিয়ে ওঠে। আমি সবাইকে ডাকি কিন্তু কেউ সারা দেয় না। একটু এগিয়ে দেখি করিম কাকা পড়ে আছে। বুঝতে পারি করিম কাকা সেন্সলেস হয়ে গেছে। উনার চোখে মুখে পানি দিতেই সেন্স ফিরে এসেছিলো। উনাকে জিঙ্গেস করতেই উনি সব বলেন। মম, ডেড আর মিষ্টি মাকে মেরে ফেলেছে আর তাদের নিয়ে গেছে ব্রিজ থেকে ফেলে দেওয়ার জন্য। আমার মনে পড়ে তুমি হসপিটালে একা আছো আর তোমার বিপদের আশংকা আছে। আমি আবার হসপিটালে চলে আসি। আমি যেটা ভাবছিলাম ঠিক সেটাই হলো এহসান খানের লোকেরা তোমাকে তুলে নিয়ে যায়। ডক্টর বলেছিলো তোমার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলে তাই যে যেটা বলেছে সেটাই বিশ্বাস করে নিয়েছো। ডক্টরা তোমাকে আটকানোর চেষ্টা করে তুমি কারো কথা না শুনেই চলে যায়। এহসান খান তোমার সাথে আমাদের ছেলেকেও তুলে নিয়ে যেতো যদি জানতো আমাদের সন্তান হয়েছে। আমি আমাদের সন্তানকে নিয়ে যায় এবং নিজের মতো করে বড় করতে থাকি। আর এতোদিনে নিজেকে প্রিপেয়ার করতে থাকি এহসান খানের সাথে লড়াই করার জন্য। এতদিনে এহসান খান তোমাকে ড্রাগস এডিক্টেড বানিয়ে ফেলে। একদিন হুট করে পরিকল্পনা করে তোমার সাথে দেখা করি।
( তারপর থেকে তো আপনারা জানেনই)
স্পর্শক আমি ঐ লোকটাকে নিজের হাতে শাস্তি দিতে চাই।
অবশ্যই দিবে। আগে তুমি সুস্থ হও তারপর ।
আমি ঐ লোকটাকে এখনি শাস্তি দিতে চাই। এহসান খানকে আমি দুই ঘন্টার মাঝে আমার সামনে দেখতে চাই।
স্পর্শক তার লোকদের ফোন করে বলে,
এহসান খানকে এক ঘন্টার মাঝে আমার সামনে দেখতে চাই।
স্পর্শক আমাদের ছেলের নাম কী? আর ও এখন কোথায়?
আমাদের ছেলের নাম স্পন্দন আর ও
তোমাদের সন্তান এখানে।
অনু একটা ছেলেকে নিয়ে কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আরনিয়া স্পর্শকের দিকে তাকিয়ে আছে। স্পর্শক ইশারায় বুঝায় এটাই তাদের সন্তান। আরনিয়া দুই হাত মেলে ধরে ছেলেটি দৌড়ে এসে দুই হাতে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে আরনিয়াকে।
মাম্মা জানো এতোদিন আমি তোমাকে কত মিস করেছি? পাপাকে কত বলেছি তোমাকে নিয়ে আসতে কিন্তু পাপা বলেছিলো তুমি নাকি আমার ওপর রাগ করেছো তাই আসবে না।
আরনিয়া চোখ রাঙিয়ে স্পর্শকের দিকে তাকায়। স্পর্শক মাথা চুলকে একটা বেক্কল মার্কা হাসি দেয়। অনু বুঝতে পারছে এখনি কোনো ঝড় শুরু হয়ে যেতে পারে তাই পরস্থিতি সামালানোর জন্য বলে,
আরু তুই আমাকে আর স্পর্শককে কী করে ভুল বুঝলি? তুই ভাবলি কী করে স্পর্শক আমাকে লিপ কিস করছে? আমি স্পর্শকের ফোন কেড়ে নিয়ে আমার পিছনে লুকিয়ে ফেলেছিলাম। স্পর্শক ফোন নেওয়ার জন্য আমার দিকে ঝুঁকে গিয়েছিল। তুই ভাবলি স্পর্শক আমাকে কিস করছে আর এমন হাদারাম মার্কা সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিলি।
আমার তো তখন স্মৃতি ছিল না। তাই তোমাদের ভুল বুঝেছি। তুমি আসার পর থেকে স্পর্শক আর আগের মতো খেয়াল রাখে না। রাতে তোমাকে স্পর্শক বলছিল আমি সুস্থ হয়ে গেলে আমাকে ডিবোর্স দিয়ে দেবে। ঐ দিন রাতে স্পর্শক আমার সাথে ঘুমায়নি। পরের দিন আমাকে না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এসব থেকেই ভুল বুঝা শুরু হয়। যখন তোমাদের কিসিং সিন দেখি আমার দুনিয়া থমকে যায়। মাথায় একটা কথাই ঘুরছিলো স্পর্শক আমাকে ভালোবাসে না। আমাকে ডিবোর্স দিয়ে দিবে। আমার বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয় না। তাই এমন ডিসিশন নেই। ( ঠোঁট উল্টে)
স্পর্শক আর অনু দুজনই আরনিয়ার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। স্পর্শক মাথায় হাত দিয়ে বলে,
এই মেয়ে কীসের মাঝে কী লাগিয়ে দিয়েছে। আমি অনু আর প্রান্তে ভাইয়ার ডিবোর্সের কথা বলছিলাম। আর এই মেয়ে ভেবেছে আমি তাকে ডিবোর্স দিবো। ঐ দিন রাতে আমি অনেক রাত পর্যন্ত জেগে কাজ করেছিলাম তাই তোমার সাথে ঘুমায়নি। সকালে প্রান্ত ভাইয়া আর্জেন্ট দেখা করতে বলে তাই তোমাকে বলে যেতে পারি নি।
ডিবোর্স কেনো হবে?
এখন আর হবে না। প্রান্ত ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চেয়েছে । তাই অনু প্রান্ত ভাইয়ার কাছে ফিরে যাবে।
তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দেও।
ক্ষমা চাইতে হবে না। তোরা তিনজন সময় কাটা আমি গেলাম।
আচ্ছা।
স্পর্শকের ফোন বেজে ওঠে। স্পর্শক ফোন রিসিভ করে জানতে পারে এহসান খানের গাড়িটা ব্রেক ফেইল করে খাদে পড়ে গেছে। পুলিশ ধারণা করছে এহসান খান আর বেঁচে নেই। স্পর্শক আরনিয়াকে বললে আরনিয়া তৃপ্তির হাসি হাসে।
অনু চলে যায়। স্পন্দন আরনিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
মাম্মা তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো?
না।
সত্যি।
হুম।
স্পর্শক গাল ফুলিয়ে বলে,
আম দুধে মিশে গেলো আমি আঁটি হয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছি।
স্পন্দন আর আরনিয়া দুজন গিয়ে স্পর্শককে জড়িয়ে ধরে।
_____________❤সমাপ্ত❤____________