ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি,পর্ব:১০,পর্ব:১১ (রহস্য উন্মোচন ১)
তাসনিম_জাহান_রিয়া
পর্ব:১০
আরনিয়া চোখে পানি টলমল করছে। স্পর্শক কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরনিয়া কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুম থেকে চলে যায়। স্পর্শক ও আরনিয়ার পিছনে যায়। স্পর্শক বাইরে বের হওয়ার আগেই আরনিয়া গেইট দিয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায়। আরনিয়া দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তায় চলে আসে পিছন থেকে একটা ট্রাক এসে আরনিয়াকে ধাক্কা মারে। আরনিয়া ছিটকে গিয়ে স্পর্শকের পায়ের কাছে পড়ে।
স্পর্শকের পৃথিবী থমকে যায়। আরনিয়া স্পর্শকের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। সাদা উড়নাটা আরনিয়ার রক্তে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আরনিয়া শরীর রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে। স্পর্শক ধপ করে আরনিয়ার পাশে বসে পড়ে। স্পর্শক যেনো অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছে। স্পর্শক রাস্তায় পড়ে থাকা আরনিয়ার নিস্তেজ দেহের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরু এই আরু কথা বলো। এই আরু তুমি আমার সাথে কথা বলবে না। আমার ওপর তোমার এতো অভিমান যে আমার সাথে কথা বলবে না।
স্পর্শক আমাদের এখন আরনিয়াকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়া উচিত।
আমার আরু কোথাও যাবে না। আমার আরু আমার সাথে থাকবে।
দেখ স্পর্শক এখন পাগলামি করিস না। এখন আরনিয়াকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়া উচিত। নাহলে আরনিয়ার বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে।
আমার আরুর কিচ্ছু হবে না।
স্পর্শক আরনিয়াকে কোলে তুলে নেয়। এর মাঝে এ্যাম্বোলেন্স চলে আসে অনু ফোন করেছিল।
__________________
স্পর্শক হসপিটালের করিডরে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই আরনিয়াকে অপারেশন থ্রিয়েটারে নেওয়া হয়ছে। অনু এসে স্পর্শকের কাধে হাত রাখে। স্পর্শক অনুর হাত মুঠো করে করে কেঁদে দেয়।
অনু আমি আমার আরুর খেয়াল রাখতে পারলাম না। ও আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে গেলো।
অপারেশন থ্রিয়েটারে থেকে একটা নার্স বের হলো। স্পর্শক দৌড়ে নার্সটার কাছে গেলো।
আমার ওয়াইফ কেমন আছে?
আপনার ওয়াইফের অবস্থা সিরিয়াস। বাঁচার চান্স খুবই কম। আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছি বাকিটা আল্লাহর হাতে।
কথাটা শোনার সাথে সাথেই স্পর্শক সেন্সলেস হয়ে পড়ে যেতে নিলে অনু ধরে ফেলে। কয়েকটা ওয়ার্ড বয় স্পর্শককে ধরে কেবিনে নিয়ে যায়। ডক্টর অনুর কথায় স্পর্শককে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেয়।
তিন ঘন্টা পর
স্পর্শকের ঘুম ভাঙে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারে সে একটা কেবিনে আছে। আরনিয়ার কথা মাথায় আসতেই। স্পর্শক তারাহুরা করে বেড থেকে নেমে রুম থেকে বের হতে যাবে তার আগেই কারোর সাথে ধাক্কা লাগে। তাকিয়ে দেখে অনু।
অনু আমার আরু কোথায়? এখন কেমন আছে? অপারেশন শেষ হয়ে গেছে? কী হলো? কথা বলছিস না কেনো?
তুই আমাকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিস? নিজেই তো বকবক করে যাচ্ছিস। আর এতোগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দিবো।
অনুর বাচ্চা এতো কথা না বলে আমি যা জিঙ্গেস করছি তার উত্তর দে।
আরনিয়া অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। আরনিয়ার আর কোনো বিপদ নেই এখন মোটামুটি সুস্থ আছে। কেবিনে দেওয়া হয়ছে। কিছুক্ষণের মাঝে ঙ্গান ফিরে আসবে। তুই তো আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। এখন কেমন লাগছে তোর?
স্পর্শক অনুর কথা পাত্তা না দিয়ে পা বাড়ায় আরনিয়ার কেবিনের দিকে। কেবিনের দরজা ঠেলে কেবিনে প্রবেশ করে স্পর্শক।রুমে প্রবেশ করতেই আরনিয়াকে দেখে স্পর্শকের বুকটা ধক করে ওঠে। আরনিয়ার হাতে, পায়ে,
মাথায় ব্যান্ডেজ করা। স্পর্শক আরনিয়ার পাশে ধপ করে বসে পড়ে। আরনিয়ার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।
আরু তুমি কী করে তোমার স্পর্শককে ভুল বুঝতে পারলে? তুমি জানো না তোমার স্পর্শক অন্য কোনো মেয়েকে স্পর্শ তো অনেক দূরের কথা তার আরু ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসার কথাও কল্পনা করতে পারে না। আর অনুকে আমি নিজের বোন ছাড়া অন্য কিছু ভাবি না।
স্পর্শকের চোখ থেকে অঝর দ্বারায় পানি পড়ছে। স্পর্শক চোখ বন্ধ করে আরনিয়ার হাতে কয়েকটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। গালে কারো হাতে স্পর্শ পেয়ে স্পর্শক চোখ খুলে। আরনিয়া তার দিকে ডেব ডেব করে তাকিয়ে আছে। স্পর্শক আরনিয়ার দিকে তাকাতেই আরনিয়া ফিক করে হেসে দেয়। স্পর্শক আরনিয়ার হাসি দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। ইশারায় জিঙ্গেস করে কী?
কাঁদলে তোমাকে বাচ্চাদের মতো লাগে।
কথাটা বলে আরনিয়া আবার হেসে দেয়। স্পর্শক বুঝতে পারছে আরনিয়ার হাসতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তবু তাকে হাসানোর জন্য হাসছে। স্পর্শক আরনিয়ার হাতটাকে আরো শক্ত করে মুঠোয় নিয়ে নেয়।
আরু তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো আজকে আমার জন্য তোমার এই অবস্থা।
ছি ছি স্পর্শক তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাইছো কেনো? ভুল তো আমি করেছি। ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে আর অনু আপুকে জড়িয়ে কী সব ভাবছিলাম? আমার বুঝা উচিত ছিল আমার স্পর্শক আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারে না।
এই সব কথা বাদ দাও। এখন বলো তুমি কী খাবে?
তোমাকে। মানে চকলেট, আইসক্রিম আর ফুচকা খাবো।
স্পর্শক আরনিয়া মুখে এসব খাবারের নাম শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায়ে। সে তো জানতো এই আরু এসব পছন্দ করে না যে করতো সে তো হারিয়ে গেছে। আর কোনোদিন ফিরে পাবে নাকি তা জানে না স্পর্শক।
আমার মামুনিটা কেমন আছে।
থমথমে পুরুষালি কন্ঠ শুনে দুজনেই বাকা চোখে দরজার দিকে তাকায়। এহসান খানকে দেখেই আরনিয়ার চোখে ধপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এহসান খান ভিতরে আসতে চাইলে বাধা দেয় আরনিয়া।
তুমি এক পাও কেবিনের ভিতরে রাখবে না।
কেনো মামুনি?
বলতে বলতে কয়েক পা এগিয়ে আসে এহসান খান। আরনিয়া স্পর্শককে উদ্দেশ্য করে বলে,
স্পর্শক এই লোকটাকে চলে যেতে বলো আমি এই লোকটাকে সহ্য করতে পারছি না। স্পর্শক এই লোকটাকে চলে যেতে বলো।
স্পর্শক এহসান খানকে চলে যেতে কী বলবে? তার তো মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না। স্পর্শক তো এখনো অবাকের রেশই কাটিয়ে উঠতে পারছে না। যে মেয়ে তার বাবা অন্ত প্রাণ সেই নাকি তার বাবাকে সহ্য করতে পারছে না।
চলবে……..
#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:১১ (রহস্য উন্মোচন ১)
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
স্পর্শক এই লোকটাকে চলে যেতে বলো আমি এই লোকটাকে সহ্য করতে পারছি না। স্পর্শক এই লোকটাকে চলে যেতে বলো।
স্পর্শক এহসান খানকে চলে যেতে কী বলবে? তার তো মুখ দিয়ে কথাই বের হচ্ছে না। স্পর্শক তো এখনো অবাকের রেশই কাটিয়ে উঠতে পারছে না। যে মেয়ে তার বাবা অন্ত প্রাণ সেই নাকি তার বাবাকে সহ্য করতে পারছে না। স্পর্শক নিজেকে সামলে নিয়ে এহসান খানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
মি. খান আপনি এখান থেকে চলে যান।
না আমি আমার মেয়ের সাথে কথা না বলে যাবো না। আমি জানি আমার আরু সোনা আমার ওপর অভিমান করেছে। তাই আমার সাথে কথা বলতে চাইছে না। আরু মামুনি পাপার সাথে এতো অভিমান করলে চলে। তুমি যে আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো তাতে আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।
স্পর্শক এই লোকটাকে এসব ন্যাকামো বন্ধ করতে বলো আর এখান থেকে চলে যেতে বলো।
আপনি কী এখান থেকে যাবেন নাকি আমাকে অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে? ( কঠিন সুরে )
আরু মামুনি এই সয়তানটা কী তোমাকে কোনো কিছু নিয়ে ভয় দেখিয়ে এসব বলতে বাধ্য করেছে? ভয়ের কিছু নেই আমাকে বলতে পারো। স্পর্শক তোমার বা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
স্পর্শক তুমি এই লোকটাকে এক্ষুনি এই কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে বলো। নাহলে কিন্তু আমি এখান থেকে চলে যাবো।
আরনিয়া বেড থেকে উঠতে গেলেই স্পর্শক ধরে শুইয়ে দেয় আরনিয়াকে। স্পর্শক কয়েকটা গার্ড ডেকে এহসান খানকে গাড় ধাক্কা দিয়ে কেবিন থেকে বের করে দেয়। এহসান খান রেগে হাতে থাকা বুকেটা ছুড়ে ফেলে দেয়। তারপর হনহনিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে যায়। স্পর্শক এখনো হা করে আরনিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
মুখ অফ করো নাহলে মশা ঢুকে যাবে।
আরনিয়ার কথায় স্পর্শক থতমত খেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি নিজের মুখ বন্ধ করে ফেলে।
আরু তুমি তোমার বাবার সাথে এমন বিহেইভ করলে কেনো?
উনি বাবা না বাবা নামের কলঙ্ক। উনি কারো বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।
এসব কী বলছো তুমি?
স্পর্শক আমার সবকিছু মনে পড়ে গেছে?
সত্যি??
হুম।
স্পর্শক আরনিয়াকে শোয়া অবস্থাই জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ আরনিয়া ফুফিয়ে কেঁদে দেয়। আরনিয়ার কান্নার শব্দ শুনে স্পর্শক ব্যস্ত হয়ে যায়।
আরু কী হয়ছে তোমার? কাঁদছো কেনো? কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমায় বলো।
স্পর্শক পাপা কী করে পারলো আমার মাম্মা, বাবাই ( স্পর্শকের বাবা ) আর মামুনিকে ( স্পর্শকের মা ) খুন করতে? এখনো তাদের চিৎকার আমার কানে ভেসে আসে । এখনো মনে হচ্ছে তারা বলছে, আরু মা পালিয়ে যা নাহলে এই লোকটা তোকে মেরে ফেলবে। আরু মা তুই স্পর্শকের কাছে চলে যা। স্পর্শক থাকতে কেউ তোর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। চোখের সামনে তাদের মরতে দেখেছি। তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। কি কষ্ট ছিল সেই মৃত্যু যন্ত্রনা।
আরু এহসান খান তোমার পাপা না।
কী বলছো এসব?
যা বলছি সত্যি এহসান খান তোমার মামা।
এটা কী করে সম্ভব? আমি ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি উনি আমার বাবা আর আজকে তুমি হঠাৎ করে বলছো উনি আমার মামা।
এতোদিনেও তুমি খেয়াল করোনি উনার পদবী খান আর আমাদের পদবী আহম্মেদ।
সবকিছু আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি আমাকে সব ক্লিয়ার করে বলো। উনি যদি আমার মামায় হন তাহলে আমাকে কেনো মারতে চাইলেন নিজের বোনকে কী করে মেরে ফেললেন।
মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে। জানো আরুপাখি এই পৃথিবীর কিছু মানুষ বড্ড নিষ্টুর। তাদের কাছে অর্থের বাইরে সবকিছু মুল্যহীন। অর্থের কাছে সম্পর্কগুলোও মুল্যহীন। তেমনি তোমার মামাও একজন অর্থ লোভী মানুষ। টাকার নেশায় পড়ে নিজের বোনকে খুন করছেন নিজের ভাইকে খুন করেছেন এমনকি নিজের বাবাকেও খুন করতে চেয়েছিলেন।
এভাবে ঘুরিয়ে পেচিয়ে না বলে তুমি সবকিছু ক্লিয়ার করে বলো।
আজকে তোমাকে সবকিছু খোলে বলবো। সবকিছুর সূচনা হয়েছিল আজ থেকে ২০ বছর আগে। এহসান খান মানে তোমার বড় মামা সম্পত্তির জন্য তোমার নানাকে খাবার সাথে বিষ মিশিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন তোমার ছোট মামির জন্য।তোমার ছোট মামি এহসান খানকে খাবারে বিষ দিতে দেখে ফেলেন। তিনি গিয়ে বাড়ির সবাইকে বলে দেন এ কথা। তোমার নানা রেগে এহসান খানকে অনেক বাজে কথা বলে অপমান করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং উনাকে ত্যাজ্য পুত্র করে দেন। তখন তিনি আমাদের বাসায় মিষ্টি মা মানে তোমার মার কাছে আসেন। তোমার মা বরাবরই বড় ভাই পাগল ছিলেন। উনার কাছে পুরো দুনিয়া একদিকে উনার ভাই আরেকদিকে। এতোটাই বিশ্বাস করতেন। উনার মতে উনার বড় ভাই কোনো অন্যায় কাজ করতেই পারেন নাম। এহসান খান এসে তোমার নানা আর ছোট মামার নামে মিথ্যা কথা বলেন মিষ্টি মার কাছে আর উনি বিশ্বাস করে ফেলেন।
তারপর কি হয়ছিল?
মিষ্টি মা এহসান খানকে বিশ্বাস করে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেন।
২০ বছর আগে
বোন বাবা তো আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন এখন আমি কোথায় থাকবো?
তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই আজ থেকে তুমি এই আহম্মেদ বিলাতে আমার কাছে থাকবে।
এ হয় না বোন নিজের ছোট বোনের শ্বশুরবাড়িতে বড় ভাই হয়ে কী করে থাকবো।
মিসেস রেশমি আহম্মেদ ( স্পর্শকের মা ) এগিয়ে এসে বলেন,
কেনো হয় না এহসান ভাই? আপনি আমাদের নিজের লোক ভাবতে পারছেন নাহ।
ছিঃ ছিঃ বোন এসব কী বলছো? তোমরাই তো আমার নিজের লোক। ( এহসান খান একটু নাটক করে বললেন)
পলা ( আরনিয়ার মা) এহসান ভাই আজ থেকে এখানেই থাকবেন তুই রহিমাকে ( স্পর্শকদের বাসার কাজের লোক) গেস্ট রুম পরিষ্কার করতে বল।
চলবে……..